শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা শুধূমাত্র পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের একটি বড় দায়িত্ব হলো নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন এবং সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইস্যুতে সজাগ থাকা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অতীতে শিক্ষার্থীরা জাতীয় জীবনের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অবদান রেখেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনÑএসব ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজ ছিল সামনের কাতারে। এই ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের সেই প্রভাবশালী ভূমিকা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। দলীয় রাজনীতির বেড়াজালে বন্দি ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত স্বার্থ ও অধিকার নিয়ে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের তাদের স্বাভাবিক ভূমিকা ও শক্তিতে ফেরাতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন মূলত শিক্ষার্থীদের শক্তি ও নেতৃত্বের মঞ্চ। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব নেতৃত্ব বাছাই করতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার অভ্যাস গড়ে তোলে এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা হয়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্রের মৌলিক ধারণা শিখতে পারে। নেতৃত্ব বাছাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং দলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে তাদের বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চায় কাজে আসে।
ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উপস্থাপন ও সমাধানের জন্য একটি সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের কেবল রাজনৈতিক চর্চার মঞ্চ নয়, বরং সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনারও সুযোগ দেয়। শিক্ষার্থীরা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে জড়িত থেকে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
অপরদিকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার প্রভাব অনেক সূদুরপ্রসারী ক্ষতি বয়ে আনে। বাংলাদেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চায় ফিরিয়ে আনবে। তারা নিজেদের প্রতিনিধিত্ব নিজেরাই নির্বাচন করতে পারবে, যা তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া তৈরি করবে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণের সুযোগ পাবে। এটি দলীয় স্বার্থের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত চাহিদা ও সমস্যার সমাধানে কাজ করবে। ছাত্র সংসদ একটি সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে পরিচালিত হলে সহিংসতা কমে আসবে। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হলে ক্ষমতার লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন নারীদের নেতৃত্বের সুযোগ করে দিতে পারে। এতে নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা ও কর্ম পরিধি বৃদ্ধি পাবে। একটা শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে ছাত্র সংসদের তুলনা নেই। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া যেমন হল দখলমুক্তকরণ, আবাসন সমস্যার সমাধান এবং ক্লাস ও পরীক্ষার সময়সূচি নিশ্চিত করার বিষয়ে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আশিক খান
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বুধবার, ০৮ জানুয়ারী ২০২৫
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের ভূমিকা শুধূমাত্র পড়াশোনার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তাদের একটি বড় দায়িত্ব হলো নেতৃত্বের গুণাবলী অর্জন এবং সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইস্যুতে সজাগ থাকা। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অতীতে শিক্ষার্থীরা জাতীয় জীবনের প্রায় প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ আন্দোলনে অবদান রেখেছে। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, এবং স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনÑএসব ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজ ছিল সামনের কাতারে। এই ঐতিহাসিক ভূমিকা পালনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন একসময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করত।
কিন্তু বিগত কয়েক দশক ধরে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা তাদের সেই প্রভাবশালী ভূমিকা থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। দলীয় রাজনীতির বেড়াজালে বন্দি ছাত্র সংগঠনগুলো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত স্বার্থ ও অধিকার নিয়ে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছে। তাই শিক্ষার্থীদের তাদের স্বাভাবিক ভূমিকা ও শক্তিতে ফেরাতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এখন সময়ের দাবি।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন মূলত শিক্ষার্থীদের শক্তি ও নেতৃত্বের মঞ্চ। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব নেতৃত্ব বাছাই করতে পারে। এটি শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চার অভ্যাস গড়ে তোলে এবং ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরির একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের চর্চা হয়। ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা গণতন্ত্রের মৌলিক ধারণা শিখতে পারে। নেতৃত্ব বাছাই, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং দলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণের অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে তাদের বৃহত্তর রাজনৈতিক ও সামাজিক চর্চায় কাজে আসে।
ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের কণ্ঠস্বরের প্রতিনিধিত্ব করে। এটি শিক্ষার্থীদের দাবি-দাওয়া উপস্থাপন ও সমাধানের জন্য একটি সংগঠিত প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করে। এছাড়াও ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের কেবল রাজনৈতিক চর্চার মঞ্চ নয়, বরং সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনারও সুযোগ দেয়। শিক্ষার্থীরা উন্নয়নমূলক কর্মকা-ে জড়িত থেকে দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে।
অপরদিকে ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ার প্রভাব অনেক সূদুরপ্রসারী ক্ষতি বয়ে আনে। বাংলাদেশে ছাত্র সংসদ নির্বাচন বন্ধ থাকার কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
ছাত্র সংসদ নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক চর্চায় ফিরিয়ে আনবে। তারা নিজেদের প্রতিনিধিত্ব নিজেরাই নির্বাচন করতে পারবে, যা তাদের মধ্যে গণতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধা ও বোঝাপড়া তৈরি করবে। শিক্ষার্থীরা তাদের নিজস্ব স্বার্থ সংরক্ষণের সুযোগ পাবে। এটি দলীয় স্বার্থের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের প্রকৃত চাহিদা ও সমস্যার সমাধানে কাজ করবে। ছাত্র সংসদ একটি সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্য দিয়ে পরিচালিত হলে সহিংসতা কমে আসবে। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতৃত্ব নির্ধারণ করা হলে ক্ষমতার লড়াইয়ের প্রয়োজনীয়তা কমে যাবে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো ছাত্র সংসদ নির্বাচন নারীদের নেতৃত্বের সুযোগ করে দিতে পারে। এতে নারী শিক্ষার্থীদের ক্ষমতা ও কর্ম পরিধি বৃদ্ধি পাবে। একটা শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলতে ছাত্র সংসদের তুলনা নেই। শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি-দাওয়া যেমন হল দখলমুক্তকরণ, আবাসন সমস্যার সমাধান এবং ক্লাস ও পরীক্ষার সময়সূচি নিশ্চিত করার বিষয়ে সরাসরি অংশগ্রহণ করতে পারবে।
আশিক খান
শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়