alt

সারাদেশ

পাসপোর্ট অফিসে ২০০ দালাল ! অতিষ্ঠ গ্রাহক

প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ : রোববার, ২৬ জুন ২০২২

চরম ভোগান্তিতে মুন্সীগঞ্জের ই-পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বর্তমান সেবা দিতে না পারার সঙ্কটেরও অভিযোগ রয়েছে। কিছু অসাধু অফিসের লোকজনের কারণে মুন্সীগঞ্জের ই-পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা লোকদের চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। এক পাসপোর্ট দালাল জানান, ২০০ দালাল রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের স্টাফদের। এডির মাধ্যমে কোন পাসপোর্ট করি না। পিয়ন, দাড়োয়ান থেকে শুরু করে সকলেই এই দালালদের সাথে জড়িত।

যে সকল দালালদের মাধ্যমে ১০টি করে পাসপোর্ট জমা দেয়া হয়। সবচেয়ে বেশি পাসপোর্ট জমা নেয়া হয় শরীফ প্লাজার দু’জন দালাল থেকে। স্টেডিয়াম মার্কেটে, কলেজপাড়া মার্কেটের প্রত্যেকটি কম্পিউটার দোকান থেকে ১০টি করে পাসপোর্ট নেয়া হয়। সাবেক কাউন্সিলরও এই কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানান বিভিন্ন দালাল। জেলাখানা রোড, শিশুপার্কের সামনে, কোর্ট চত্বরের সামনে, কলেজপাড়ার প্রত্যেকটি কম্পিউটারের দোকান, সচিব, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণও পাসপোর্টের দালালি করে থাকেন।

টংগীবাড়ি এক সংবাদিক জানান, পাসপোর্ট আবেদনের ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে এডির সামনে হাজির হলে তিনি দেখেন আবেদনটি অনলাইনেই নেই। গায়েব হয়ে গেছে। কারণ এই ফাইলটি দাললের মাধ্যমে জমা দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে এডি যখন বললো এটা অনলাইনে দিয়ে দেয়ার জন্য তখন সেটি অনলাইনে ভাসলো এবং পুলিশ ভেরিফেকশনের জন্য সেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই সাংবাদিক।

দালালদের বিভিন্ন সাংকেতিক চিনহ ব্যবহার করা হয়। যে সাংকেতিক চিনহের বিষয়ে অফিসের দারোয়ান থেকে শুরু সকল কর্মকর্তাই ওয়াকিবহাল। ওই চিহ্ন দেখলে কোন সমস্যা নেই। ফাইল ছেড়ে দেবেন এবং পরবর্তীতে এই ফাইলগুলোর টাকা বুঝে নেবেন রাতের যে কোন সময়। বিকাশের মাধ্যমেও লেন দেন হওয়ার খবর রয়েছে। একটি সংকেতিক চিহ্ন হলো চউই, মর্ডান কম্পিউটার, মা কম্পিউটার। যাদের ভিজিটিং কার্ডে লিখা অনলাইনে ই-পাসপোর্ট, গজচ পাসপোর্ট আবেদন করা হয়। এমনকি চালান ফরমেও একটি সিল দেয়া হয় আইটি সেন্টার নামের। এই সিলের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পাসপোর্ট ফাইল জমা দেয়া হয়। এই দালাল শ্রীনগর উপজেলার পাসপোর্টসহ যে কোন এলাকার পাসপোর্ট করিয়ে দেন।

নামের বানান ভুল, নামের আগে মোহাম্মদ, মো. মোহা. ইত্যাদি, বয়স সমস্যা, বয়স সংশোধন সমস্যা, জন্ম সন, নতুন জন্ম সন ইত্যাদি, এমআরপি পাসপোর্টের জন্ম সন আর নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনকৃত জন্ম সন এক না হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে নামের বানান, জন্ম সন, ঠিকানা ইত্যাদি পাসপোর্ট প্রদানের প্রধান অন্তরায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু অফিসার একেকটি পাসপোর্ট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোট অংকের টাকা। টাকা না দিলে সংশোধনের কোন পাসপোর্টই দেয়া হয় না। ১০,২০,৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র।

দালাল চক্রের মাধ্যমে যদি সংশোধনের জন্য ই-পাসপোর্ট আবেদন করা হয় তবে সেই পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়া সম্ভব। যদি দালাল চক্রের মাধ্যম ছাড়া আবেদন করা হয় সেটার মধ্যে অনেক ভুল ধরিয়ে আবেদন বাতিল করা হয় এবং ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এমনকি পাসপোর্ট প্রত্যাশি আবেদন করার পরে এক বছরেও পুলিশ ভ্যারিকেশনে পাঠানো হয় না।

সেবাটিকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার আশা ও চেষ্টার পরিণতি আজকের এই ভোগান্তি। সরকারের সেই আশা করাটা ছিল অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ। এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্ট সেবায় উত্তরণের জন্য যে প্রযুক্তিগত দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য জনবল প্রয়োজন, সে বিষয়টি তারা ভুলে গিয়েছিলেন। বলা যায়, এ নিয়ে তাদের কোনো চিন্তাই ছিল না। দক্ষ জনবলের অভাবে এখন ই-পাসপোর্ট পাওয়া হয়ে উঠেছে এক ভোগান্তির নাম।

সর্বোচ্চ ২১ দিনের মধ্যেই ভোগান্তি ছাড়া নাগরিকরা এ পাসপোর্ট পাবেন। অথচ সে আশাবাদ আজ গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। এখন ই-পাসপোর্ট পেতে অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীদের। নিয়ম মেনে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট বিতরণ করতে পারছে না ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পাসপোর্ট সংশোধন করতে গিয়েও দীর্ঘ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকের বিদেশযাত্রাও বাতিল হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য রোগী ও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক কাজে দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। পাসপোর্ট না থাকায় বিপাকে পড়েছেন হজ ও ওমরা গমনেচ্ছুরাও’।

পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতিমুক্ত ও টাউট-বাটপাড়মুক্ত করার যে কথা আমরা শুনি, তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো যেত- যদি দালালচক্রের অদৃশ্য হাত সক্রিয় না থাকত। উঁচুস্তরের কর্মকর্তারা যথেষ্ট সেবাদানে কর্মব্যস্ত। কিন্তু নিম্নস্তরের (করণিক স্তর) লোকজন সেবা দিতে গড়িমসি, ঢিলেমি, ফাইল না পাওয়া অথবা ফাইল গায়েব, হারিয়ে ফেলা, কিছু পাওয়ার আকাঙ্খায় বেহুদা বিভিন্ন কাগজপত্র চেয়ে বিব্রত করে তাদের সেবাদানে অনীহাকেই প্রমাণ করে।

এক দালাল নাম না বলা শর্তে জানান, আমাদের দালালির ভাগ আমরাই অফিসে যার যার অফিস বসকে দিয়ে থািক । এই পাসর্পোট আফিসের এডি ছাড়া দারোয়ান হতে শুরু করে সকল স্টাফই দালাল লালন পালন করে থাকেন। যেমন ৫৭৭৮ (ডেলিভারি টোকেন) জরুরী মানি রিসিভ ভুল করে অফিস স্টাফ আবার অফিস বন্ধের সময় এসে আমরা দালালরাই ঠিক করার জন্য বলেছি। আমাদের ছাড়া অফিস টাকা কামাতে পারে না ।

মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম জানান, দালালদের মাধ্যমে ফাইল জমা দেয় না কেউ। তবে অফিসের স্টাফরা যদি সেবা গ্রহিতার সঙ্গে অন্যায় করে থাকে তবে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকার একজন সাংবাদিককে বারংবার তিনি অফিসে এসে তার সাথে দেখা করে যেতে বলেন।

মুন্সীগঞ্জের সকল সাংবাদিকদের চোখে দুলো দিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে যাচ্ছে পাসপোর্ট অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টির দ্রুত তদন্ত করে ২০০ দালালের বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে এমনটিই আশা করেন ভুক্তভোগী সেবা নিতে আসা সকল গ্রাহক।

ছবি

হাসপাতালে হিট ষ্ট্রোকে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, ৫ দিনে ২২ জনের মৃত্যু

ছবি

লালমনিরহাটে হিট স্ট্রোকে অটোচালকের মৃত্যু

ছবি

গাজীপুরে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ শুরু

ছবি

পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি যুবক নিহত

ছবি

গাজীপুরে ফ্ল্যাট থেকে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ উদ্ধার

ছবি

প্রিলি পরীক্ষায় ৩ লাখ ৩৮ হাজার প্রার্থী বসেছে পরীক্ষায়

ছবি

মায়ানমার ফেরতঃ কারাগারে দুপুরে এক বেলা খাবার, সারাদিন ব্যস্ত ভারি কাজে

ছবি

বারিতে জাতীয় শুদ্ধাচার কৌশল শীর্ষক প্রশিক্ষণ

ছবি

গাজীপুরের কোনাবাড়ী জোনাল অফিসে পাওয়ার ট্রান্সফরমারে আগুন

ছবি

গাজীপুরে মরে যাচ্ছে মুরগি

ছবি

মেহেরপুরে মানব পাচারের দায়ে একজনের যাবজ্জীবন জেল

ছবি

দাবদাহে গলে যাচ্ছে শরীয়তপুর-চাঁদপুর সড়কের পিচ

ছবি

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরের কার্যালয়ে তালা

ছবি

হরিরামপুরে পূর্ব শত্রতার জেরে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন

ছবি

তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা, মেয়াদ আরও বাড়লো

হিটস্ট্রোকে ৪ জনের মৃত্যু

ছবি

ঈদযাত্রা : মোটরসাইকেলের দুর্ঘটনা ৫১ শতাংশ, সাড়ে ৪২ শতাংশ নিহত

ছবি

১৫ শ্রমিক নিয়ে সাজেকের খাদে ট্রাক, নিহত ৯

ছবি

রাজধানীতে প্রাইভেটকারের ধাক্কায় ভ্যানচালক নিহত

ছবি

থানচি, রুমা ও রোয়াংছড়ি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত

ছবি

বাসের ধাক্কায় চুয়েট শিক্ষার্থীর মৃত্যু নরসিংদীর বাড়িতে কান্নার রোল

ছবি

অপহরণ ও মারধরের শিকার দেলোয়ার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সিংড়া উপজেলার চেয়ারম্যান

ছবি

রাজশাহীতে বৃষ্টি নামাতে বিয়ের পিঁড়িতে দুই ব্যঙ

ছবি

রংপুরে সাজাপ্রাপ্ত দুই যুবদল নেতাকে কারাগাওে পাঠানোর নির্দেশে বিক্ষোভ

ছবি

আনসার সদস্যের ‘আত্মহত্যা’র কারণ অনুসন্ধানে পুলিশ

ছবি

পরিবার পাবে ১০ লাখ টাকা চুয়েটের দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ, আল্টিমেটাম

তিস্তাসহ ৫৪ অভিন্ন নদীর ন্যায্য হিস্যা দাবিতে বাসদের লং মার্চ

ছবি

লালমনিরহাটে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন হাজার হাজার মুসল্লি

ছবি

অসহায় পরিবারের নিরুপায় নির্মমতা! চুরি ঠেকাতে ৩ বছর শেকল বন্দি কিশোর

ছবি

ছাত্র হত্যায় যুবকের ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

হোটেলে আটকে রেখে কিশোর ধর্ষণ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

ছবি

ক্যাসিনোকাণ্ডের সেই সেলিম প্রধানের মনোনয়নপত্র বাতিল

ভৌতিক বিলের খপ্পর চট্টগ্রামে মিটার-সংযোগবিহীন গ্রাহকের বিদ্যুৎ বিল প্রায় ৭ লাখ টাকা

ছবি

এবারের ঈদযাত্রায় সড়কে ঝরেছে ৩৬৭ জনের প্রাণ

ছবি

চুয়েটের ২ শিক্ষার্থীকে চাপা দেওয়া বাসের চালক গ্রেপ্তার

ছবি

মাদারীপুরে এক্সপ্রেসওয়েতে বাস উল্টে নিহত ১, আহত ১০

tab

সারাদেশ

পাসপোর্ট অফিসে ২০০ দালাল ! অতিষ্ঠ গ্রাহক

প্রতিনিধি, মুন্সীগঞ্জ

রোববার, ২৬ জুন ২০২২

চরম ভোগান্তিতে মুন্সীগঞ্জের ই-পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা সাধারণ মানুষ। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের বর্তমান সেবা দিতে না পারার সঙ্কটেরও অভিযোগ রয়েছে। কিছু অসাধু অফিসের লোকজনের কারণে মুন্সীগঞ্জের ই-পাসপোর্ট সেবা নিতে আসা লোকদের চরম ভোগান্তিতে পরতে হচ্ছে। এক পাসপোর্ট দালাল জানান, ২০০ দালাল রয়েছে পাসপোর্ট অফিসের স্টাফদের। এডির মাধ্যমে কোন পাসপোর্ট করি না। পিয়ন, দাড়োয়ান থেকে শুরু করে সকলেই এই দালালদের সাথে জড়িত।

যে সকল দালালদের মাধ্যমে ১০টি করে পাসপোর্ট জমা দেয়া হয়। সবচেয়ে বেশি পাসপোর্ট জমা নেয়া হয় শরীফ প্লাজার দু’জন দালাল থেকে। স্টেডিয়াম মার্কেটে, কলেজপাড়া মার্কেটের প্রত্যেকটি কম্পিউটার দোকান থেকে ১০টি করে পাসপোর্ট নেয়া হয়। সাবেক কাউন্সিলরও এই কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িত বলে জানান বিভিন্ন দালাল। জেলাখানা রোড, শিশুপার্কের সামনে, কোর্ট চত্বরের সামনে, কলেজপাড়ার প্রত্যেকটি কম্পিউটারের দোকান, সচিব, ইউনিয়ন পরিষদের সচিবগণও পাসপোর্টের দালালি করে থাকেন।

টংগীবাড়ি এক সংবাদিক জানান, পাসপোর্ট আবেদনের ডেলিভারি স্লিপ নিয়ে এডির সামনে হাজির হলে তিনি দেখেন আবেদনটি অনলাইনেই নেই। গায়েব হয়ে গেছে। কারণ এই ফাইলটি দাললের মাধ্যমে জমা দেয়া হয়নি। পরবর্তীতে এডি যখন বললো এটা অনলাইনে দিয়ে দেয়ার জন্য তখন সেটি অনলাইনে ভাসলো এবং পুলিশ ভেরিফেকশনের জন্য সেন্ড করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওই সাংবাদিক।

দালালদের বিভিন্ন সাংকেতিক চিনহ ব্যবহার করা হয়। যে সাংকেতিক চিনহের বিষয়ে অফিসের দারোয়ান থেকে শুরু সকল কর্মকর্তাই ওয়াকিবহাল। ওই চিহ্ন দেখলে কোন সমস্যা নেই। ফাইল ছেড়ে দেবেন এবং পরবর্তীতে এই ফাইলগুলোর টাকা বুঝে নেবেন রাতের যে কোন সময়। বিকাশের মাধ্যমেও লেন দেন হওয়ার খবর রয়েছে। একটি সংকেতিক চিহ্ন হলো চউই, মর্ডান কম্পিউটার, মা কম্পিউটার। যাদের ভিজিটিং কার্ডে লিখা অনলাইনে ই-পাসপোর্ট, গজচ পাসপোর্ট আবেদন করা হয়। এমনকি চালান ফরমেও একটি সিল দেয়া হয় আইটি সেন্টার নামের। এই সিলের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি পাসপোর্ট ফাইল জমা দেয়া হয়। এই দালাল শ্রীনগর উপজেলার পাসপোর্টসহ যে কোন এলাকার পাসপোর্ট করিয়ে দেন।

নামের বানান ভুল, নামের আগে মোহাম্মদ, মো. মোহা. ইত্যাদি, বয়স সমস্যা, বয়স সংশোধন সমস্যা, জন্ম সন, নতুন জন্ম সন ইত্যাদি, এমআরপি পাসপোর্টের জন্ম সন আর নতুন ই-পাসপোর্টের জন্য আবেদনকৃত জন্ম সন এক না হওয়া, জাতীয় পরিচয়পত্রের সঙ্গে নামের বানান, জন্ম সন, ঠিকানা ইত্যাদি পাসপোর্ট প্রদানের প্রধান অন্তরায়। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে এক শ্রেণীর অসাধু অফিসার একেকটি পাসপোর্ট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে মোট অংকের টাকা। টাকা না দিলে সংশোধনের কোন পাসপোর্টই দেয়া হয় না। ১০,২০,৩০ হাজার থেকে শুরু করে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিচ্ছে দালাল চক্র।

দালাল চক্রের মাধ্যমে যদি সংশোধনের জন্য ই-পাসপোর্ট আবেদন করা হয় তবে সেই পাসপোর্ট দ্রুত পাওয়া সম্ভব। যদি দালাল চক্রের মাধ্যম ছাড়া আবেদন করা হয় সেটার মধ্যে অনেক ভুল ধরিয়ে আবেদন বাতিল করা হয় এবং ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এমনকি পাসপোর্ট প্রত্যাশি আবেদন করার পরে এক বছরেও পুলিশ ভ্যারিকেশনে পাঠানো হয় না।

সেবাটিকে আন্তর্জাতিক মানে নিয়ে যাওয়ার আশা ও চেষ্টার পরিণতি আজকের এই ভোগান্তি। সরকারের সেই আশা করাটা ছিল অবশ্যই দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে প্রথম বাংলাদেশ। এমআরপি থেকে ই-পাসপোর্ট সেবায় উত্তরণের জন্য যে প্রযুক্তিগত দক্ষ ও নির্ভরযোগ্য জনবল প্রয়োজন, সে বিষয়টি তারা ভুলে গিয়েছিলেন। বলা যায়, এ নিয়ে তাদের কোনো চিন্তাই ছিল না। দক্ষ জনবলের অভাবে এখন ই-পাসপোর্ট পাওয়া হয়ে উঠেছে এক ভোগান্তির নাম।

সর্বোচ্চ ২১ দিনের মধ্যেই ভোগান্তি ছাড়া নাগরিকরা এ পাসপোর্ট পাবেন। অথচ সে আশাবাদ আজ গুড়েবালিতে পরিণত হয়েছে। এখন ই-পাসপোর্ট পেতে অতিরিক্ত সময় লাগার কারণে নানা ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সেবাপ্রত্যাশীদের। নিয়ম মেনে নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট বিতরণ করতে পারছে না ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর কর্তৃপক্ষ। এছাড়া পাসপোর্ট সংশোধন করতে গিয়েও দীর্ঘ ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে মানুষকে। নির্ধারিত সময়ে পাসপোর্ট না পেয়ে অনেকের বিদেশযাত্রাও বাতিল হচ্ছে। চিকিৎসার জন্য রোগী ও ব্যবসায়ীরা বাণিজ্যিক কাজে দেশের বাইরে যেতে পারছেন না। পাসপোর্ট না থাকায় বিপাকে পড়েছেন হজ ও ওমরা গমনেচ্ছুরাও’।

পাসপোর্ট অফিস দুর্নীতিমুক্ত ও টাউট-বাটপাড়মুক্ত করার যে কথা আমরা শুনি, তাকে অবশ্যই সাধুবাদ জানানো যেত- যদি দালালচক্রের অদৃশ্য হাত সক্রিয় না থাকত। উঁচুস্তরের কর্মকর্তারা যথেষ্ট সেবাদানে কর্মব্যস্ত। কিন্তু নিম্নস্তরের (করণিক স্তর) লোকজন সেবা দিতে গড়িমসি, ঢিলেমি, ফাইল না পাওয়া অথবা ফাইল গায়েব, হারিয়ে ফেলা, কিছু পাওয়ার আকাঙ্খায় বেহুদা বিভিন্ন কাগজপত্র চেয়ে বিব্রত করে তাদের সেবাদানে অনীহাকেই প্রমাণ করে।

এক দালাল নাম না বলা শর্তে জানান, আমাদের দালালির ভাগ আমরাই অফিসে যার যার অফিস বসকে দিয়ে থািক । এই পাসর্পোট আফিসের এডি ছাড়া দারোয়ান হতে শুরু করে সকল স্টাফই দালাল লালন পালন করে থাকেন। যেমন ৫৭৭৮ (ডেলিভারি টোকেন) জরুরী মানি রিসিভ ভুল করে অফিস স্টাফ আবার অফিস বন্ধের সময় এসে আমরা দালালরাই ঠিক করার জন্য বলেছি। আমাদের ছাড়া অফিস টাকা কামাতে পারে না ।

মুন্সীগঞ্জ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম জানান, দালালদের মাধ্যমে ফাইল জমা দেয় না কেউ। তবে অফিসের স্টাফরা যদি সেবা গ্রহিতার সঙ্গে অন্যায় করে থাকে তবে যথাযথ আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ঢাকার একজন সাংবাদিককে বারংবার তিনি অফিসে এসে তার সাথে দেখা করে যেতে বলেন।

মুন্সীগঞ্জের সকল সাংবাদিকদের চোখে দুলো দিয়ে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করে যাচ্ছে পাসপোর্ট অফিসের সকল কর্মকর্তা ও কর্মচারী। যথাযথ কর্তৃপক্ষ বিষয়টির দ্রুত তদন্ত করে ২০০ দালালের বিষয়ে পদক্ষেপ নিবে এমনটিই আশা করেন ভুক্তভোগী সেবা নিতে আসা সকল গ্রাহক।

back to top