বাগানের গাছ থেকে ভোক্তার ব্যাগে পৌছতে কয়েক দফায় বাড়ে লেবুর দাম। প্রতিবারই প্রতিটি লেবুতে ২-৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ে। লেবুর দেশ মৌলভীবাজারে হাত বদলে ৫ টাকার লেবু স্থান ভেদে ভোক্তারা কিনছে ১০ থেকে ২০ টাকায়।
মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজারের কাচা মালের ব্যবসায়ি ফজলুর রহমান আজ রোববার সংবাদকে বলেন, মাঝারি সাইজের লেবু ৪০-৬০ টাকা হালি বিক্রি করছেন। এসব লেবু গড়ে প্রতি ১০০টি ৮০০ টাকা দরে শ্রীমঙ্গলের আড়ৎ থেকে কিনেন মৌলভীবাজারের আড়ৎদাররা আর বিক্রি করেন ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে। খুরচা বাজারে এ লেবুকে তিন ভাগে বিক্রেতারা ভাগ করেন। এগুলো ৪০-৬০ টাকা হালি বিক্রি করেন। এরমধ্যে থেকে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের লেবুগুলো কখনো কখনো ৮০ টাকা হালিও বিক্রি হয়। এ অবস্থা চললে রমজানের প্রথম সপ্তাহের শেষে এসে।
একজন লেবু ব্যবসায় জানান, বাগান থেকে লেবু কিনলে নিজে গাছ থেকে পেরে আনতে হয়। তখন মাঝারি আকারের প্রতিটি লেবুর দাম পড়ে ৪-৫ টাকা। সাথে আছে পরিবহন খরচ। পাইকারি বাজার থেকে কিনতে প্রতি লেবুর দাম পরে ১০-১২ টাকা। খুরচা বাজারে বিক্রিতে দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ আছে। তাই এই একই লেবু ক্রেতাদের কাছে ১৫-২৫ টাকা চাওয়া হয়। বিক্রি হয় ১০-২০ টার মধ্যে।
মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজারের বেশ কয়েকজন কাচা মালের ব্যবসায়ি বলেছেন, রমজানের ২ দিন আগ থেকে লেবুর দাম বাড়তে শুরু করে। তবে ২ রমজান থেকেই লেবুর দাম কমতির দিকে। আকার ভেদে মাঝারি লেবুতে প্রতি হালিতে ১৫-২০ টাকা এবং বড় আকারে অন্তত ৩০ টাকা দাম কমেছে। বড় আকারের লেবু রমজানের শুরুতে ১২০ টাকা হালি বিক্রি হলেও এখন ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
নরসিংদি থেকে এনে ভ্যানে করে জারা লেবু বিক্রি করেন এমন একজন ব্যবসায়ি জানান, তিনি ১০০ লেবু ২৫০০ টাকা দিয়ে কিনে এনে দুটি আকারে বিভক্ত করে প্রতি হালি ছোটগুলো ১২০- ১৪০ টাকা এবং বড়গুলো ১৫০-২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
শুস্ক মৌসুম, সাথে রমজান মাস। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশী থাকায় দাম বেশি। রমজানের পুর থেকে লেবুর দাম বেড়েছে অন্তত ৫০-৬০ শতাংশ- এমন দাবি আড়ৎ মালিকদের। কিন্ত লেবু চাষিরা দায়ি করছেন মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটকে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবছর মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ১হাজার ৭২৪ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের আড়তদারদের সুত্রে জানাগেছে, রের ৩ ধরনের লেবু থাকে। বড়, ছোট ও মাঝারি। রমজানের আগে প্রতি হাজার লেবু ৫-৭ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু রমজানের পর এ দাম ৮-১০ হাজার টাকায় উঠেছে। অবশ্য এখন দাম কমার দিকে।
লেবু ব্যবসায়িদের মতে, দাম বৃদ্ধির কারণ শুস্ক মৌসুমে ফলন কম থাকায় বাজারে সরজরাহ কম, কিন্তু চাহিদা সারাদেশেই রমজানের সময় বেশী থাকে। ফলে পাইকারি ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোহিতার সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি বাজারে।
উপজেলা শহর শ্রীমঙ্গলের পাইকারি আড়ৎ থেকে জেলা শহর মৌলভীবাজারে নিয়মিতই লেবু আসে খুরচা ও আড়তের মাধ্যমে। গতকাল রবিবার পশ্চিমবাজারে বাজার করার কালে আমিন উদ্দিন নামে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের ১ সপ্তাহ আগে যে লেবু ৩০-৪০ টাকা হালি কিনেছেন এখন তার দাম আকার ভেদে ৫০-৮০ কিংবা ১০০ টাকা। বিক্রেতারা দরদাম করলে বিরক্ত হয় - এ অভিযোগ এই ক্রেতার।
জেলার অন্যতম পাইকারি হাট শ্রীমঙ্গল নতুন বাজারে লেবু আড়ৎদারতের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এক ঠেলা গাড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৮০০ লেবু থাকে। এগুলো তিনটি ক্যাটাগরির হয়।
শ্রীমঙ্গলের বিষামনির মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, রমজানের শুরুর দিনে এক ঠেলা লেবু (৮০০) বিক্রি করেছেন ৮ হাজার ৬০০ টাকায়। একটি লেবুর দাম পড়েছে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। রমজানের এক সপ্তাহ আগে এই সমপরিমাণ লেবু বিক্রি করেছেন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন লেবুর মৌসুম না থাকায় ফলন কম। যে লেবু পাওয়া যায়, তাতে রস কম। চাহিদার চেয়ে জোগান কম, এ জন্য দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলে এক মাসের মধ্যে লেবুর ফলন বৃদ্ধি পাবে। জোগান বাড়লে দামও কমে যাবে।
শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়ার লেবুচাষি জনক দেববর্মা বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লেবুর উৎপাদন একেবারে কম। কিন্তু চাহিদা বেশি। কমবেশি সব বাগানেরই একই অবস্থা। গত দুই বছর লেবুর ভালো দাম মিলেনি। এ জন্য বাগানের যতœ কম করা হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে তিনি বড় আকারের ৮০০ লেবু ১২ টাকা ১২০০ টাকা প্রতি ১০০ হিসাবে বিক্রি করেছেন।
কৃষি বিভাগ, লেবুচাষি, ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর ভরা মৌসুম হচ্ছে বর্ষাকাল। তখন প্রচুর লেবু ফলে এবং বাজারে সরবরাহ বেশী থাকে। ফলে দামও কম থাকে। কিন্তু লোকসান গুনে লেবু চাষিরা। শুস্ক মৌসুমে দাম বেশী হলে কিছুটা লাভের মুখ দেখেন বিক্রেতারা। তবে চাষিদের চেয়ে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা বেশী লাভ করেন।
রোববার, ১৭ মার্চ ২০২৪
বাগানের গাছ থেকে ভোক্তার ব্যাগে পৌছতে কয়েক দফায় বাড়ে লেবুর দাম। প্রতিবারই প্রতিটি লেবুতে ২-৫ টাকা পর্যন্ত দাম বাড়ে। লেবুর দেশ মৌলভীবাজারে হাত বদলে ৫ টাকার লেবু স্থান ভেদে ভোক্তারা কিনছে ১০ থেকে ২০ টাকায়।
মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজারের কাচা মালের ব্যবসায়ি ফজলুর রহমান আজ রোববার সংবাদকে বলেন, মাঝারি সাইজের লেবু ৪০-৬০ টাকা হালি বিক্রি করছেন। এসব লেবু গড়ে প্রতি ১০০টি ৮০০ টাকা দরে শ্রীমঙ্গলের আড়ৎ থেকে কিনেন মৌলভীবাজারের আড়ৎদাররা আর বিক্রি করেন ১০০০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা দরে। খুরচা বাজারে এ লেবুকে তিন ভাগে বিক্রেতারা ভাগ করেন। এগুলো ৪০-৬০ টাকা হালি বিক্রি করেন। এরমধ্যে থেকে অপেক্ষাকৃত বড় আকারের লেবুগুলো কখনো কখনো ৮০ টাকা হালিও বিক্রি হয়। এ অবস্থা চললে রমজানের প্রথম সপ্তাহের শেষে এসে।
একজন লেবু ব্যবসায় জানান, বাগান থেকে লেবু কিনলে নিজে গাছ থেকে পেরে আনতে হয়। তখন মাঝারি আকারের প্রতিটি লেবুর দাম পড়ে ৪-৫ টাকা। সাথে আছে পরিবহন খরচ। পাইকারি বাজার থেকে কিনতে প্রতি লেবুর দাম পরে ১০-১২ টাকা। খুরচা বাজারে বিক্রিতে দোকান ভাড়াসহ অন্যান্য খরচ আছে। তাই এই একই লেবু ক্রেতাদের কাছে ১৫-২৫ টাকা চাওয়া হয়। বিক্রি হয় ১০-২০ টার মধ্যে।
মৌলভীবাজারের পশ্চিম বাজারের বেশ কয়েকজন কাচা মালের ব্যবসায়ি বলেছেন, রমজানের ২ দিন আগ থেকে লেবুর দাম বাড়তে শুরু করে। তবে ২ রমজান থেকেই লেবুর দাম কমতির দিকে। আকার ভেদে মাঝারি লেবুতে প্রতি হালিতে ১৫-২০ টাকা এবং বড় আকারে অন্তত ৩০ টাকা দাম কমেছে। বড় আকারের লেবু রমজানের শুরুতে ১২০ টাকা হালি বিক্রি হলেও এখন ৮০-৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে।
নরসিংদি থেকে এনে ভ্যানে করে জারা লেবু বিক্রি করেন এমন একজন ব্যবসায়ি জানান, তিনি ১০০ লেবু ২৫০০ টাকা দিয়ে কিনে এনে দুটি আকারে বিভক্ত করে প্রতি হালি ছোটগুলো ১২০- ১৪০ টাকা এবং বড়গুলো ১৫০-২০০ টাকা দরে বিক্রি করেন।
শুস্ক মৌসুম, সাথে রমজান মাস। সরবরাহের চেয়ে চাহিদা বেশী থাকায় দাম বেশি। রমজানের পুর থেকে লেবুর দাম বেড়েছে অন্তত ৫০-৬০ শতাংশ- এমন দাবি আড়ৎ মালিকদের। কিন্ত লেবু চাষিরা দায়ি করছেন মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটকে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, এবছর মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় ১হাজার ৭২৪ হেক্টর জমিতে লেবুর চাষ হয়েছে।
শ্রীমঙ্গলের আড়তদারদের সুত্রে জানাগেছে, রের ৩ ধরনের লেবু থাকে। বড়, ছোট ও মাঝারি। রমজানের আগে প্রতি হাজার লেবু ৫-৭ হাজার টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু রমজানের পর এ দাম ৮-১০ হাজার টাকায় উঠেছে। অবশ্য এখন দাম কমার দিকে।
লেবু ব্যবসায়িদের মতে, দাম বৃদ্ধির কারণ শুস্ক মৌসুমে ফলন কম থাকায় বাজারে সরজরাহ কম, কিন্তু চাহিদা সারাদেশেই রমজানের সময় বেশী থাকে। ফলে পাইকারি ক্রেতাদের মধ্যে এক ধরণের প্রতিযোহিতার সৃষ্টি হয়। এর প্রভাব পড়ছে পাইকারি বাজারে।
উপজেলা শহর শ্রীমঙ্গলের পাইকারি আড়ৎ থেকে জেলা শহর মৌলভীবাজারে নিয়মিতই লেবু আসে খুরচা ও আড়তের মাধ্যমে। গতকাল রবিবার পশ্চিমবাজারে বাজার করার কালে আমিন উদ্দিন নামে একজন ক্রেতা বলেন, রমজানের ১ সপ্তাহ আগে যে লেবু ৩০-৪০ টাকা হালি কিনেছেন এখন তার দাম আকার ভেদে ৫০-৮০ কিংবা ১০০ টাকা। বিক্রেতারা দরদাম করলে বিরক্ত হয় - এ অভিযোগ এই ক্রেতার।
জেলার অন্যতম পাইকারি হাট শ্রীমঙ্গল নতুন বাজারে লেবু আড়ৎদারতের সাথে কথা বলে জানাগেছে, এক ঠেলা গাড়িতে ছোট-বড় মিলিয়ে ৮০০ লেবু থাকে। এগুলো তিনটি ক্যাটাগরির হয়।
শ্রীমঙ্গলের বিষামনির মো. বিল্লাল মিয়া বলেন, রমজানের শুরুর দিনে এক ঠেলা লেবু (৮০০) বিক্রি করেছেন ৮ হাজার ৬০০ টাকায়। একটি লেবুর দাম পড়েছে ১০ টাকা ৭৫ পয়সা। রমজানের এক সপ্তাহ আগে এই সমপরিমাণ লেবু বিক্রি করেছেন তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকায়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজারের উপপরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন, এখন লেবুর মৌসুম না থাকায় ফলন কম। যে লেবু পাওয়া যায়, তাতে রস কম। চাহিদার চেয়ে জোগান কম, এ জন্য দাম বেড়ে গেছে। বৃষ্টি শুরু হলে এক মাসের মধ্যে লেবুর ফলন বৃদ্ধি পাবে। জোগান বাড়লে দামও কমে যাবে।
শ্রীমঙ্গলের ডলুছড়ার লেবুচাষি জনক দেববর্মা বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর লেবুর উৎপাদন একেবারে কম। কিন্তু চাহিদা বেশি। কমবেশি সব বাগানেরই একই অবস্থা। গত দুই বছর লেবুর ভালো দাম মিলেনি। এ জন্য বাগানের যতœ কম করা হয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে তিনি বড় আকারের ৮০০ লেবু ১২ টাকা ১২০০ টাকা প্রতি ১০০ হিসাবে বিক্রি করেছেন।
কৃষি বিভাগ, লেবুচাষি, ক্রেতা-বিক্রেতা ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লেবুর ভরা মৌসুম হচ্ছে বর্ষাকাল। তখন প্রচুর লেবু ফলে এবং বাজারে সরবরাহ বেশী থাকে। ফলে দামও কম থাকে। কিন্তু লোকসান গুনে লেবু চাষিরা। শুস্ক মৌসুমে দাম বেশী হলে কিছুটা লাভের মুখ দেখেন বিক্রেতারা। তবে চাষিদের চেয়ে মধ্যস্বত্ব ভোগীরা বেশী লাভ করেন।