alt

উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্বব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনবেন ডনাল্ড ট্রাম্প?

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

: শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪
image

ডনাল্ড ট্রাম্প

আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসনের চলমান বিভিন্ন নীতি-কৌশল, অর্থনৈতিক কর্মসূচি, বিদেশনীতি, বৈশ্বিক বাণিজ্য ইত্যাদির প্রতি ভোটারদের আস্থা-অনাস্থার চিত্র দৃশ্যমান হয়। ফ্লোরিডায় ওয়েস্ট পাম বিচে উল্লসিত সমর্থকদের সামনে এসে ভোটের সর্বশেষ খবরাখবরের অপেক্ষা না করেই ট্রাম্প নিজেকে নিজেই ‘প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা করেন; যদিও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়নি, প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট তখনও ট্রাম্পের ঝুলিতে পড়েনি। বিজয়ের বক্তৃতা দেয়ার প্রস্তুতি ছিল কমালা হ্যারিসেরও, তার বিজয়বার্তা শোনার জন্য তার সমর্থকরা জড়োও হয়েছিল, কিন্তু পরাজয়ের আভাস পেয়ে ওয়াচ পার্টি ছেড়েছেন ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা, কমলা হ্যারিসও জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোন বক্তব্য রাখবেন না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশ্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। চার বছর আগে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করেছিলেন। ট্রাম্প ওই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আনেন। শুধু তাই নয়, ডনাল্ড ট্রাম্পের কয়েক হাজার সমর্থক দেশটির কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের ভেতরে ঢুকে তা-ব চালায়, সহিংসতায় চারজন বেসামরিক ব্যক্তি ছাড়াও একজন পুলিশ অফিসার নিহত হন। যখন ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ হয় তখন নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয়কে অনুমোদন দেয়ার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত কংগ্রেসের কমিটিকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতলে ক্যাপিটল হিলে আক্রমণকারীদের প্রদত্ত শাস্তি তিনি মওকুফ করে দেবেন বলে ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

ডনাল্ড ট্রাম্পকে অনেকে উদ্ভট চরিত্রের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি পেশিবলে সবকিছুর সমাধান করতে চান। বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য তাকে পাগলাটে, দিকভ্রান্ত, বর্ণবাদী, আদর্শহীন একজন অযোগ্য রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেছে মিডিয়া। ইসরায়েলের প্রতি তার মাত্রাতিরিক্ত পক্ষপাতিত্বের কারণে পৃথিবীর মুসলিম সমাজ তার প্রতি ক্ষেপা। ক্ষেপা ছিল বলেই চার বছর আগে প্রায় সব মুসলমান জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের পরাজয় কামনা করেছিল। আমেরিকার মুসলমানদের ধারণা ছিল, জো বাইডেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সদয় হবেন, কিন্তু তা হলো না। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, ক্ষমতার পালাবদল হলেও পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন হয় না।

২০২৩ সনের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা সীমান্ত দেয়াল ভেঙে ইসরায়েলি গ্রাম কিবুৎযিম, সামরিক চৌকি ও নোভা মিউজিক উৎসব তছনছ করে ১২০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলা পর গাজা উপত্যকায় প্রতিশোধমূলক ও সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে ইসরায়েল এ পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এছাড়া ইসরায়েলের বছরব্যাপী আক্রমণে হাজার হাজার গাজাবাসী আহত, ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত এবং গাজা উপত্যকার দুই-তৃতীয়াংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামাসের পক্ষে ইরান ব্যতীত কোনো দেশ প্রত্যক্ষ সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। ইরান-সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি, সিরিয়া ও ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হামাসের পক্ষে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে ভয়াবহ বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান শুরু করে। ইয়েমেন, ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর আমেরিকার বিমান হামলা থাকায় ইসরায়েল হামাস এবং হিজবুল্লাহর ওপর তাদের সর্বশক্তি নিয়োজিত করার সুযোগ পেয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকা ইরাক ও সিরিয়ার ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে।

জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাউকে জিততে দেয়া যাবে না। আমেরিকা থেকে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের এয়ার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে, প্রতি মুহূর্তে বিমানে অস্ত্র আসছে। যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের সবগুলো প্রচেষ্টা আমেরিকা ভেটো দিয়ে ব্যর্থ করে দিয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে জো বাইডেনের আন্তরিক ইচ্ছা না থাকায় জাতিসংঘও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। এই অসহায়ত্বের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদ সেকেলে, অন্যায্য ও অকার্যকর একটি ব্যবস্থা। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধে ব্যর্থতা সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে’। যুদ্ধ বন্ধে জো বাইডেনের দৃশ্যমান সমর্থন না থাকায় আন্তর্জাতিক আদালতও যুদ্ধ বন্ধের স্পষ্ট ও নির্দেশনামূলক রায় দিতে পারেনি। ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শর্তহীন সমর্থন থাকায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বেপরোয়া আচরণ করার সাহস করছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধই হতো না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধও তিনি থামাতে পারবেন বলে বহু আগে ঘোষণা দিয়েছেন।

শুধু ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নয়, জো বাইডেনের আমলেই সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। জো বাইডেনের প্ররোচনায় সংঘটিত ইউক্রেন-রাশিয়ার প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় গরিব দেশগুলো দেউলিয়া হচ্ছে, কিংবা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ছে। এখন মনে হয়, জো বাইডেনের তুলনায় ডনাল্ড ট্রাম্প তার আগের টার্মে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে গেছেন। তিনি পৃথিবীর কোথাও নতুন করে যুদ্ধ বাঁধাননি, বরং যুদ্ধের নিষ্পত্তি ঘটিয়েছেন। তিনি ইরাক এবং আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য সরিয়ে নিয়েছেন, লিবিয়ায় হস্তক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এমনকি ন্যাটো থেকে আমেরিকাকে বের করে আনার কথাও তিনি কয়েকবার বলেছিলেন, ইউরোপে সৈন্যসংখ্যাও কমিয়েছিলেন। মার্কিন জনগণ মনে হচ্ছে যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রিপাবলিকান দলের ডনাল্ড ট্রাম্পকে এবার ভোট দিয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব মানুষ চায় এই মুহূর্তেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অবসান হোক, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চাচ্ছেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হোক, যাতে তেল আর অস্ত্র বিক্রি করে তিনি আমেরিকার অর্থনীতিতে গতি আনতে পারেন। ইউক্রেনকে জোগান দেয়া অস্ত্র নিশ্চয়ই অনুদান নয়, ঋণ হিসেবেই গণ্য হবে।

ডনাল্ড ট্রাম্প চীন এবং ইরানকে একঘরে করার চেষ্টা আগেও করেছেন, এবারও করবেন বলে মনে হয়ে। অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীকে তিনি বিতাড়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমেরিকাকে শ্রেষ্ঠ করার ব্যাপারে তার মহান ব্রতের কথা আগেও বলেছেন, এবারের নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও উল্লেখ করেছেন। এটা দেশাত্মবোধ নয়, হিটলারের মতো অহঙ্কার। পৃথিবীর ১৯৩টি দেশ নিয়ে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি, আমেরিকার সঙ্গে প্রকাশ্যে বাকবিত-া করতে গিয়ে পৃথিবীর বহু দেশের শাসক ক্ষমতা হারিয়েছে, লিবিয়ার মুয়াম্মের গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে জীবন দিতে হয়েছে, পানামার শাসক মানুয়েল নরিয়েগা এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জেলে যেতে হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকার ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন বলে তিনি প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন। এসব ঘটনার কোনটাই ট্রাম্পের শাসনামলে হয়নি। গত টার্মে বাংলাদেশ নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের কোনো মাথাব্যথা ছিল বলে মনে হয়নি। কিন্তু এবার নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে কথা বলেছেন। এই বক্তব্য ভোট সংগ্রহের কৌশলও হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট দল ও দলের নেতাদের দহরম-মহরম একটু বেশি এবং সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা দিয়ে তিনি ও তার অন্তর্র্বর্তী সরকার আমেরিকা, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন মিত্র দেশ এবং আমেরিকার প্রভাবে পরিচালিত জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর শর্তহীন সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছেন। অনেকের ধারণা, ট্রাম্পের সঙ্গে ইউনূসের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক নেই। এছাড়া জো বাইডেনের আমলের বড় বড় কর্মকর্তাদের পরিবর্তন হলে অন্তর্র্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ককেরও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের মতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভালো সম্পর্ক থাকায় নির্বাচনের ফলাফলে দুদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং লেখক মাইকেল কুগেলম্যান ভিন্নমত পোষণ করে উল্লেখ করেন যে, অতীতে মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন প্রসঙ্গে ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বিরূপ সমালোচনা সম্পর্কের উন্নয়নে প্রতিবন্ধক হতে পারে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আরেকটি ধারণা হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডনাল্ড ট্রাম্প তা উল্লেখও করেছেন, তার মতে নরেন্দ্র মোদি একজন ‘চমৎকার মানুষ’। চীনকে চাপে রাখার জন্য ট্রাম্প তার বিগত শাসনামলেও ভারতকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভারতের নীতি ও বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এবারও তাই হলে ভারত ট্রাম্পের মৌন সম্মতিতে প্রয়োজনে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কূটনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করবে। তারপরও অমোঘ সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে এমন কোনো পরিবর্তন হবে না, যার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক আমূল পরিবর্তন আসবে। ট্রাম্পের বিজয়ে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থকদের একটু বেশি খুশি মনে হলো। নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিএনপিও খুশি হয়েছিল, কিন্তু পরে সেই খুশি আর থাকেনি। কারণ ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। তবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ট্রলে দেখা গেল, চূড়ান্ত ফলাফল আসার আগেই যে দুজন প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তারা হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]

নবজাগরণ : সত্যিই কি জাতি জেগেছে?

গ্রামভিত্তিক কর্মসংস্থানে জোর দিতে হবে

ছবি

কে যাস রে ভাটির গাঙ বাইয়া

লটারিতে ভর্তি : কবে দূর হবে সরকারি স্কুলগুলোর ‘করোনা মহামারী’?

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য নীতি খুব একটা পরিবর্তন হবে কি

অবমূল্যায়ন, মুদ্রাস্ফীতি, মূল্যস্ফীতি এবং প্রাসঙ্গিক কিছু চিন্তা

মুজিব কি কেবলই ছবি

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে কঠোর নজরদারি প্রয়োজন

আধিপত্যের রাজনীতি আর ঢালাও মামলা

বিচারের আগে মিডিয়া ট্রায়াল

ছবি

ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে মার্কিন-মধ্যপ্রাচ্য সম্পর্ক

শাসনব্যবস্থার যে সংস্কার না করলেই নয়

প্রকৃতির বৈরী আচরণ এবং আমাদের প্রস্তুতি

নবান্ন এবং বিশেষ কিছু ধানের কথা

নিজের পায়ে দাঁড়াও

দলীয় লেজুড়বৃত্তির ছাত্ররাজনীতি বন্ধে করণীয় কী

রঙ্গব্যঙ্গ : ভুল সবই ভুল

লালন ফকির : শোষিত-বঞ্চিত মানুষের কণ্ঠস্বর

বিশ্ব ডায়াবেটিস দিবস

ঘরছাড়া করা হয়েছে মুংলু বেসরাকে, দেশে কী তিনি থাকতে পারবেন?

ছবি

জলবায়ু সম্মেলনে সমাধানের আলো দেখতে চাই

ফার্মাসিউটিক্যাল প্যাকেজিংয়ে গ্লাস ব্যবহারের সুবিধা

ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে চাই সচেতনতা

হৃদয়ে বাংলাদেশ

এত রক্ত এত অশ্রু, তাও কি স্বর্গ হবে না কেনা!

নদ-নদী দূষণমুক্ত রাখতে হবে

বিব্রত হই, বিব্রত নই

ছবি

ট্রাম্পের বিজয় ও কিছু প্রশ্ন

পোশাক শিল্পের সংকট

রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করা নিয়ে কিছু কথা

ফুসফুসের ক্যান্সার ও জনসচেতনতা

বেলাই বিল : জীববৈচিত্র্যের এক আধার

ছাত্র রাজনীতি ও দলীয় লেজুড়বৃত্তি : কোন পথে হাঁটবে শিক্ষার্থীরা?

রাজনৈতিক সংস্কৃতির সংস্কার জরুরি

নদী কখনো একা মরে না

রম্যগদ্য : দারিদ্র্য নয়, শিল্পকলা জাদুঘরে...

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বিশ্বব্যবস্থায় কী পরিবর্তন আনবেন ডনাল্ড ট্রাম্প?

জিয়াউদ্দীন আহমেদ

image

ডনাল্ড ট্রাম্প

শনিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৪

আমেরিকার ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। মার্কিন রাজনীতিতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাধ্যমে মার্কিন প্রশাসনের চলমান বিভিন্ন নীতি-কৌশল, অর্থনৈতিক কর্মসূচি, বিদেশনীতি, বৈশ্বিক বাণিজ্য ইত্যাদির প্রতি ভোটারদের আস্থা-অনাস্থার চিত্র দৃশ্যমান হয়। ফ্লোরিডায় ওয়েস্ট পাম বিচে উল্লসিত সমর্থকদের সামনে এসে ভোটের সর্বশেষ খবরাখবরের অপেক্ষা না করেই ট্রাম্প নিজেকে নিজেই ‘প্রেসিডেন্ট’ ঘোষণা করেন; যদিও আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা হয়নি, প্রয়োজনীয় ২৭০ ইলেকটোরাল কলেজ ভোট তখনও ট্রাম্পের ঝুলিতে পড়েনি। বিজয়ের বক্তৃতা দেয়ার প্রস্তুতি ছিল কমালা হ্যারিসেরও, তার বিজয়বার্তা শোনার জন্য তার সমর্থকরা জড়োও হয়েছিল, কিন্তু পরাজয়ের আভাস পেয়ে ওয়াচ পার্টি ছেড়েছেন ডেমোক্র্যাট সমর্থকরা, কমলা হ্যারিসও জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোন বক্তব্য রাখবেন না।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বিশ্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রভাবশালী ব্যক্তি। চার বছর আগে অনুষ্ঠিত রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটিক দলের প্রার্থী জো বাইডেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডনাল্ড ট্রাম্পকে পরাজিত করেছিলেন। ট্রাম্প ওই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিতে অস্বীকার করেন এবং ভোট জালিয়াতির অভিযোগ আনেন। শুধু তাই নয়, ডনাল্ড ট্রাম্পের কয়েক হাজার সমর্থক দেশটির কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের ভেতরে ঢুকে তা-ব চালায়, সহিংসতায় চারজন বেসামরিক ব্যক্তি ছাড়াও একজন পুলিশ অফিসার নিহত হন। যখন ক্যাপিটল হিলে আক্রমণ হয় তখন নির্বাচিত আইনপ্রণেতারা সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের বিজয়কে অনুমোদন দেয়ার জন্য জড়ো হয়েছিলেন। ক্যাপিটল হিলে হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত কংগ্রেসের কমিটিকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প। এবারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জিতলে ক্যাপিটল হিলে আক্রমণকারীদের প্রদত্ত শাস্তি তিনি মওকুফ করে দেবেন বলে ঘোষণাও দিয়েছিলেন।

ডনাল্ড ট্রাম্পকে অনেকে উদ্ভট চরিত্রের অধিকারী বলে আখ্যায়িত করে থাকেন। তার বিরুদ্ধে অন্যতম প্রধান অভিযোগ হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়েই তিনি পেশিবলে সবকিছুর সমাধান করতে চান। বিভিন্ন সিদ্ধান্তের জন্য তাকে পাগলাটে, দিকভ্রান্ত, বর্ণবাদী, আদর্শহীন একজন অযোগ্য রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেছে মিডিয়া। ইসরায়েলের প্রতি তার মাত্রাতিরিক্ত পক্ষপাতিত্বের কারণে পৃথিবীর মুসলিম সমাজ তার প্রতি ক্ষেপা। ক্ষেপা ছিল বলেই চার বছর আগে প্রায় সব মুসলমান জো বাইডেনের প্রতিদ্বন্দ্বী ট্রাম্পের পরাজয় কামনা করেছিল। আমেরিকার মুসলমানদের ধারণা ছিল, জো বাইডেন ফিলিস্তিনিদের প্রতি সদয় হবেন, কিন্তু তা হলো না। জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতি নিয়ে প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, ক্ষমতার পালাবদল হলেও পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন হয় না।

২০২৩ সনের ৭ অক্টোবর হামাস যোদ্ধারা সীমান্ত দেয়াল ভেঙে ইসরায়েলি গ্রাম কিবুৎযিম, সামরিক চৌকি ও নোভা মিউজিক উৎসব তছনছ করে ১২০০ লোককে হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে আসে। ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের হামলা পর গাজা উপত্যকায় প্রতিশোধমূলক ও সর্বাত্মক হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসকে নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্য নিয়ে ইসরায়েল এ পর্যন্ত ৪৩ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। এছাড়া ইসরায়েলের বছরব্যাপী আক্রমণে হাজার হাজার গাজাবাসী আহত, ২০ লাখ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত এবং গাজা উপত্যকার দুই-তৃতীয়াংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামাসের পক্ষে ইরান ব্যতীত কোনো দেশ প্রত্যক্ষ সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। ইরান-সমর্থিত লেবাননের হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের হুতি, সিরিয়া ও ইরাকের সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলো হামাসের পক্ষে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। গত সেপ্টেম্বর মাসে ইসরায়েল দক্ষিণ লেবাননে ভয়াবহ বিমান হামলার পাশাপাশি স্থল অভিযান শুরু করে। ইয়েমেন, ইরাক ও সিরিয়ায় ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ওপর আমেরিকার বিমান হামলা থাকায় ইসরায়েল হামাস এবং হিজবুল্লাহর ওপর তাদের সর্বশক্তি নিয়োজিত করার সুযোগ পেয়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে আমেরিকা ইরাক ও সিরিয়ার ৮৫টি লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালিয়েছে।

জো বাইডেন ঘোষণা দিয়েছেন, ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ করে কাউকে জিততে দেয়া যাবে না। আমেরিকা থেকে ইসরায়েলে অস্ত্র সরবরাহের এয়ার ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে, প্রতি মুহূর্তে বিমানে অস্ত্র আসছে। যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের সবগুলো প্রচেষ্টা আমেরিকা ভেটো দিয়ে ব্যর্থ করে দিয়েছে। যুদ্ধ বন্ধে জো বাইডেনের আন্তরিক ইচ্ছা না থাকায় জাতিসংঘও অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। এই অসহায়ত্বের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ‘নিরাপত্তা পরিষদ সেকেলে, অন্যায্য ও অকার্যকর একটি ব্যবস্থা। গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধে ব্যর্থতা সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা পরিষদের বিশ্বাসযোগ্যতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে’। যুদ্ধ বন্ধে জো বাইডেনের দৃশ্যমান সমর্থন না থাকায় আন্তর্জাতিক আদালতও যুদ্ধ বন্ধের স্পষ্ট ও নির্দেশনামূলক রায় দিতে পারেনি। ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের শর্তহীন সমর্থন থাকায় ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বেপরোয়া আচরণ করার সাহস করছেন। অন্যদিকে ট্রাম্প বলেছেন, তিনি ক্ষমতায় থাকলে ফিলিস্তিনের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধই হতো না। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধও তিনি থামাতে পারবেন বলে বহু আগে ঘোষণা দিয়েছেন।

শুধু ইসরায়েল-গাজা যুদ্ধ নয়, জো বাইডেনের আমলেই সারা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। জো বাইডেনের প্ররোচনায় সংঘটিত ইউক্রেন-রাশিয়ার প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং রাশিয়ার ওপর আরোপিত একের পর এক অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞায় গরিব দেশগুলো দেউলিয়া হচ্ছে, কিংবা দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ছে। এখন মনে হয়, জো বাইডেনের তুলনায় ডনাল্ড ট্রাম্প তার আগের টার্মে বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় একটি অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে গেছেন। তিনি পৃথিবীর কোথাও নতুন করে যুদ্ধ বাঁধাননি, বরং যুদ্ধের নিষ্পত্তি ঘটিয়েছেন। তিনি ইরাক এবং আফগানিস্তান থেকে আমেরিকান সৈন্য সরিয়ে নিয়েছেন, লিবিয়ায় হস্তক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছিলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে মুসলিম দেশগুলোর সমঝোতা প্রতিষ্ঠায় একটা উদ্যোগ নিয়েছিলেন। এমনকি ন্যাটো থেকে আমেরিকাকে বের করে আনার কথাও তিনি কয়েকবার বলেছিলেন, ইউরোপে সৈন্যসংখ্যাও কমিয়েছিলেন। মার্কিন জনগণ মনে হচ্ছে যুদ্ধ বন্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়ে রিপাবলিকান দলের ডনাল্ড ট্রাম্পকে এবার ভোট দিয়েছে। বিশ্বের প্রায় সব মানুষ চায় এই মুহূর্তেই ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের অবসান হোক, কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চাচ্ছেন যুদ্ধ প্রলম্বিত হোক, যাতে তেল আর অস্ত্র বিক্রি করে তিনি আমেরিকার অর্থনীতিতে গতি আনতে পারেন। ইউক্রেনকে জোগান দেয়া অস্ত্র নিশ্চয়ই অনুদান নয়, ঋণ হিসেবেই গণ্য হবে।

ডনাল্ড ট্রাম্প চীন এবং ইরানকে একঘরে করার চেষ্টা আগেও করেছেন, এবারও করবেন বলে মনে হয়ে। অভিবাসন নীতির ক্ষেত্রে অবৈধ অভিবাসীকে তিনি বিতাড়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। আমেরিকাকে শ্রেষ্ঠ করার ব্যাপারে তার মহান ব্রতের কথা আগেও বলেছেন, এবারের নির্বাচনী প্রচারণার সময়ও উল্লেখ করেছেন। এটা দেশাত্মবোধ নয়, হিটলারের মতো অহঙ্কার। পৃথিবীর ১৯৩টি দেশ নিয়ে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি, আমেরিকার সঙ্গে প্রকাশ্যে বাকবিত-া করতে গিয়ে পৃথিবীর বহু দেশের শাসক ক্ষমতা হারিয়েছে, লিবিয়ার মুয়াম্মের গাদ্দাফি, ইরাকের সাদ্দাম হোসেনকে জীবন দিতে হয়েছে, পানামার শাসক মানুয়েল নরিয়েগা এবং মিসরের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে জেলে যেতে হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান আমেরিকার ষড়যন্ত্রে ক্ষমতাচ্যুত হয়েছেন বলে তিনি প্রকাশ্যে অভিযোগ করেছেন। এসব ঘটনার কোনটাই ট্রাম্পের শাসনামলে হয়নি। গত টার্মে বাংলাদেশ নিয়ে ডনাল্ড ট্রাম্পের কোনো মাথাব্যথা ছিল বলে মনে হয়নি। কিন্তু এবার নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন নিয়ে কথা বলেছেন। এই বক্তব্য ভোট সংগ্রহের কৌশলও হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ধারণা, প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট দল ও দলের নেতাদের দহরম-মহরম একটু বেশি এবং সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা দিয়ে তিনি ও তার অন্তর্র্বর্তী সরকার আমেরিকা, ইউরোপ, আমেরিকার বিভিন্ন মিত্র দেশ এবং আমেরিকার প্রভাবে পরিচালিত জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর শর্তহীন সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছেন। অনেকের ধারণা, ট্রাম্পের সঙ্গে ইউনূসের অন্তরঙ্গ সম্পর্ক নেই। এছাড়া জো বাইডেনের আমলের বড় বড় কর্মকর্তাদের পরিবর্তন হলে অন্তর্র্বর্তী সরকারের সঙ্গে সম্পর্ককেরও পরিবর্তন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের মতে রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট উভয় দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভালো সম্পর্ক থাকায় নির্বাচনের ফলাফলে দুদেশের সম্পর্কে কোনো প্রভাব পড়বে না। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউলসন সেন্টারের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং লেখক মাইকেল কুগেলম্যান ভিন্নমত পোষণ করে উল্লেখ করেন যে, অতীতে মুহাম্মদ ইউনূসের বিভিন্ন প্রসঙ্গে ডনাল্ড ট্রাম্পকে নিয়ে বিরূপ সমালোচনা সম্পর্কের উন্নয়নে প্রতিবন্ধক হতে পারে।

রাজনৈতিক অঙ্গনে আরেকটি ধারণা হচ্ছে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে ডনাল্ড ট্রাম্পের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিদ্যমান এবং নির্বাচনী প্রচারণার সময় ডনাল্ড ট্রাম্প তা উল্লেখও করেছেন, তার মতে নরেন্দ্র মোদি একজন ‘চমৎকার মানুষ’। চীনকে চাপে রাখার জন্য ট্রাম্প তার বিগত শাসনামলেও ভারতকে গুরুত্ব দিয়েছেন এবং ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোর ক্ষেত্রে ভারতের নীতি ও বক্তব্যকে প্রাধান্য দিয়েছেন। এবারও তাই হলে ভারত ট্রাম্পের মৌন সম্মতিতে প্রয়োজনে বাংলাদেশের ওপর চাপ সৃষ্টি করার কূটনৈতিক ক্ষমতা অর্জন করবে। তারপরও অমোঘ সত্য হচ্ছে, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতিতে এমন কোনো পরিবর্তন হবে না, যার ফলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাৎক্ষণিক আমূল পরিবর্তন আসবে। ট্রাম্পের বিজয়ে আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের কর্মী ও সমর্থকদের একটু বেশি খুশি মনে হলো। নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বিএনপিও খুশি হয়েছিল, কিন্তু পরে সেই খুশি আর থাকেনি। কারণ ট্রাম্পের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘আমেরিকা ফার্স্ট’। তবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের ট্রলে দেখা গেল, চূড়ান্ত ফলাফল আসার আগেই যে দুজন প্রধানমন্ত্রী ডনাল্ড ট্রাম্পকে অভিনন্দন জানিয়েছেন তারা হলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু।

[লেখক : সাবেক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক]

back to top