alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

পিকে কেলেংকারির নতুন তথ্য

ব্যাংক এশিয়ার একটি শাখায় পাওয়া গেছে ঘুষের ২২৭ কোটি টাকার হিসাব

সুবিধাভোগীরা আতঙ্কে

সাইফ বাবলু : শুক্রবার, ২০ মে ২০২২

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ করিয়ে দিতে শুধু প্রভাবই খাটাননি পাশাপাশি প্রত্যেক ঋণের বিপরীতে আলাদা করে কমিশনও (ঘুষ) নিয়েছেন। ঘুষের এসব টাকা বাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখার নিজের ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন বেতটের টাকা দেখিয়ে। আর্থিক কেলেংকারির ঘটনায় অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন এসব তথ্য পেয়েছে।

দুদকের ভাষ্য, নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঋণ পাইয়ে দিতে যে পরিমাণ কমিশন নিয়েছেন তার একটি হিসাব পেয়েছে দুদক। ব্যাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখায় পিকের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে পর্যালোচনা করে ২২৭ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এদিকে পিকে সিন্ডিকেটের সুবিধাভোগীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ভারত থেকে পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে পুলিশ সদর দপ্তরও দুদকের টিম ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সুবিধাভোগীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মিলবে বলে মনে করছে দুদক। দুদকের ভাষ্য, পিকে সিন্ডিকেটের সুবিধাভোগীদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চালানো হবে।

দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে নামে-বেনামে ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে পিকে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠান পিকে হালদারের আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে তৈরি করেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ঋণের অধিকাংশ পিকে নিলেও আবার ঋণের জন্য আদালা করেও ঘুষ নিয়েছেন। ঘুষ হিসেবে নেয়া টাকা পাচার করেছেন নাকি দেশে বিনিয়োগ করেছেন তা খতিয়ে দেখছে দুদক।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকে হালদার ও তার সিন্ডিকেটের যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মামলার পর পরই আত্মগোপনে ছিল। তাদের ধরতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়েছে। পিকে হালদারকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে দুদক তখন বেশি মনোযোগী ছিল। এখন পিকে হালদার যেহেতু ধরা পড়েছে এবং দেশে ফিরিয়ে আনার পক্রিয়া শুরু হয়েছে এখন সুবিধাভোগীদের গ্রেপ্তারে দুদক অভিযান শুরু করবে। এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুবিধাভোগীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে দুদক।

দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার জানান, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পাইয়ে দেয়ার জন্য ২২৭ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে সে বিষয়ে মানিন্ডারিং আইনে তার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হতে পারে। দুদক ইতোমধ্যে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা শুরু করেছে। এ বিষয়ে নতুন করে মামলা হতে পারে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকে ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত দায়ের হওয়া ৩৭ মামলায় আসামির সংখ্যা ৮০ জনের মতো হলেও এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩ জন। বাকি আসামিরা এখনও দেশেই বহাল তবিয়তে রয়েছে। দুদকের করা এসব মামলায় একজন সাবেক উপসচিবও রয়েছেন যিনি এফএএস ফাইন্যান্সের পরিচালক পদে ছিলেন। ওই সচিবের মতো অনেক প্রভাবশালী আসামিও রয়েছেন যারা গ্রেপ্তার এড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে নানাভাবে দেন-দরবার শুরু করেছে। কেউ কেউ দেশের বাইরেও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এসব বিষয়ে সর্তক অবস্থানে রয়েছে দুদক। পিকে সিন্ডিকটের যেসব সদস্যরা ৩৭ মামলায় আসামি হয়েছেন তাদের ওপর নজরদারি রয়েছে দুদকের।

সূত্র জানিয়েছে, পিকে হালদার ভারতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ একাধিক দেশেও টাকা পাচার করেছেন। এসব টাকায় তিনি দেশের বাইরে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। দেশের বাইরে ভারতে এ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ভারতের আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা। অনুসন্ধান করলে বাকি টাকা পিকে কোথায় কিভাবে বিনিয়োগ করেছেন তা বেরিয়ে আসবে।

পিকের কাছ থেকে যারা সুবিধা নিয়েছেন

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, পিকে হালদার শেয়ার কিনে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে বসান নাহিদা রুনাইকে। এ কাজে তার খরচ হয়েছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর অবন্তিকা বড়ালকে ৮০০ কোটি টাকা খরচ করে পিপলস লিজিংয়ে বসান। সুস্মিতা সাহাকে দিয়েছেন ১০০ কোটি টাকা বেশি ঋণ, পাপিয়া ব্যার্নাজী দিয়ে ৩০০ কোটি টাকা এবং মমতাজকে দিয়েছেন ৩০০ কোটি টাকা। দুই প্রেমিকাকে দুই লিজিংয়ের দায়িত্বে দিতে খরচ করেন দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর তিন বান্ধবীকে দিয়েছেন ৭০০ কোটি টাকা।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, পিকে হালদার ত্রিভুজ প্রেমে মগ্ন ছিলেন। তিনি দুই বান্ধবীকে নিয়ে ৬০ বার বিদেশ ভ্রমণে করেছেন। এর মধ্যে বান্ধবী নাহিদা রুনাইকে নিয়ে গেছেন ২২ বার। পিকে হালদার নাহিদা রুনাইকে দিয়েছেন ২০ কোটি টাকা। অবন্তিকা বড়ালকে দিয়েছেন ধানমন্ডিতে ৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট। অনন্দিতা মৃধাকে দিয়েছেন উত্তরাতে ৪০ কোটি টাকা মূল্যের বাণিজ্যিক ভবন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার মেয়ে অনন্দিতা মৃধাকে রাজধানীর উত্তরায় ৪০ কোটি টাকার ৯ তলা ভবন কিনে দিয়েছেন। সুস্মিতা সাহা নামের এক নারীর প্রতিষ্ঠানে ১০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছেন। পাপিয়া বানার্জী নামের এক নারীর প্রতিষ্ঠানে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ, মমতাজ বানার্জী নামের আরেক নারীর বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে একইভাবে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, সন্দীপ কর্পোরেশন এর মালিক স্বপন কুমার মিস্ত্রি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৫৫ কোটি টাকা একইভাবে এফএএস লিজিং থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। উইনলেট ইন্টারন্যাশাল লি.র মালিক অনিন্দিতা মৃধা (সুকুমার মৃধার মেয়ে); সুকুমার সাহা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৬৯ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। গ্রিনলাইন ডেভলপমেন্ট লি.র চেয়ারম্যান মো. দেলওয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলন কুমার দাশ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৬৫ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। মেসার্স বর্ণর মালিক অঙ্গন মোহন রায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৬৭ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং ও রিলায়েন্স থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। রহমান কেমিক্যালসের মালিক উজ্জ্বল কুমার নন্দী এমডি রাজীর সোম, স্বপন কুমার মিন্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, কাজী মমরেজ মাহমুদ- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৫৫ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং ও রিলায়েন্স থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মালিক উজ্জ্বল কুমার নন্দী, অমিতাভ অধিকারী, কাজী মমরেজ মাহমুদ, মো. ইকবাল সাইদ, অরুন কুমার কুন্ডু ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৩০ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং ও রিলায়েন্স থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এবং সিমটেক্স টেক্টাইল লি.র মালিক মো. সিদ্দিকুর রহমান, মাহফুজা রহমান বেবী, ইনসান আলী শেখ, হাফিজা খানম ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ১২২ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং ও রিলায়েন্স থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। এছাড়া আলিফ এসেস্ট ম্যানেজম্যান্টের নামে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ফাস ক্যাপিটাল ম্যানজমেন্টের নামে ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটি লি.র নামে ২০৬ কোটি টাকা, পিএফআই সিকিউরিটির নামে ৭৭ কোটি ৬ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্সের নামে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, সিগমা ক্যাপিটালের নামে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা নিয়ম ভহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানী টিম প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করে এখন পর্যন্ত ৮৪ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত ৮৩ ব্যক্তির প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের মাধ্যমে ফ্রিজ করেছে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে কোন অভিযেুক্ত ব্যক্তি যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ৬৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। পিকে হালদার ঋণ কেলেংকারির ঘটনা অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান টিম এখন পর্যন্ত ১৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। রিমান্ডে তারা অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১১ জন আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

ফরিদগঞ্জে মাকে জবাই করে হত্যা করলো ছেলে

সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলেসহ কারাগারে ৩

প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

মেয়েকে ধর্ষণের অপরাধে জন্মদাতা পিতার মৃত্যুদণ্ড

ছবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের এক সদস্য গ্রেপ্তার

অর্থপাচার: সকল আসামিকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা

ছবি

ডিবিতে ডাকা হয়েছে কারিগরি বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যানকে

সখীপুরে র‍্যাবের অভিযানে ইয়াবা গাঁজাসহ গ্রেফতার দুই

রাবিতে শহীদ কামারুজ্জামান হল নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগে দুদকের অভিযান

ছবি

ড. ইউনূসকে ২৩ মে পর্যন্ত জামিন

ছবি

তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ছিনতাই ও চুরি হওয়া ফোন সেট উদ্ধার

মতলবে ব্যাংকের নৈশপ্রহরী খুনের রহস্য উন্মোচন,মূল আসামী সহ ৩ জন গ্রেফতার

ছবি

লঞ্চে বোরকা পরে ছিনতাই করতেন তারা

বন্ধুর সহায়তায় প্রবাসীর স্ত্রীকে খুন করে ঘরের মালামাল লুট করে আপন ভাই

গাজীপুরে ৩জন ভুয়া ডিবি পুলিশ আটক

ছবি

আইন অমান্য করে ইটভাটা পরিচালনা, সংবাদ প্রকাশের পর অভিযান, ৩ লাখ টাকা জরিমানা

ছবি

দুদকের মামলায় সাবেক এমপি কাদের খানের চার বছরের দন্ড

গাজীপুরে পুত্রকে কুপিয়ে হত্যা, পিতা আটক

ছবি

এবার ভরদুপুরে থানচির দুই ব্যাংকে ডাকাতি

সিলেটে ‘ধর্ষক’ স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাকে গ্রপ্তার করেছে র‌্যাব

ছবি

ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট গ্রহণ

ছবি

শেকলে বেঁধে তরুণীকে গণধর্ষণ, রিমান্ডে ৪ আসামি

মুন্সীগঞ্জে ডালিম হ.ত্যা মামলার ৬ আসামি জেলহাজতে

ছবি

শিকলে বেঁধে ২৫ দিন ধরে তরুণীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ

ছবি

গেন্ডারিয়ায় ৯৮৩ পিস ভয়াবহ মাদক বুপ্রেনরফিনসহ গ্রেপ্তার কারবারি

ছবি

সিলেটে তরুণীকে আটকে রেখে দিনের পর দিন ধর্ষণ অধরা স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতাসহ অভিযুক্তরা

নারায়ণগঞ্জে প্রেমিকাকে ধর্ষণ ও হত্যা, ৩ জনের যাবজ্জীবন

ছবি

স্ত্রী-শাশুড়িসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে ‘জল্লাদ’ শাহজাহানের প্রতারণার মামলা

ছবি

মিতু হত্যা মামলায় সাক্ষ্য দিচ্ছেন দুই ম্যাজিস্ট্রেটসহ ৫ জন

ছবি

দুই বছরের দণ্ড ২৭ বছর পর বাতিল, রায়ের কপি যাচ্ছে সব আদালতে

ছবি

মানিকদির জমি দখল নাজিমের দৌরাত্ম্য থামছেই না, আতঙ্কে এলাকাবাসী

ছবি

পুলিশের সোর্স হত্যা মামলার পলাতক ২ আসামি গ্রেপ্তার

ছবি

বড় মনিরের বিরুদ্ধে এবার ঢাকায় কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ

ছবি

রামুর কচ্ছপিয়ায় ছুরিকাঘাতে ছায়া হত্যার ঘটনায় আটক দুই

ছবি

মহেশখালীর সিরিয়াল কিলার আজরাইল গ্রেফতার

ছবি

মুন্সীগঞ্জে পাইপগান-ফেন্সিডিলসহ দু’জন আটক

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

পিকে কেলেংকারির নতুন তথ্য

ব্যাংক এশিয়ার একটি শাখায় পাওয়া গেছে ঘুষের ২২৭ কোটি টাকার হিসাব

সুবিধাভোগীরা আতঙ্কে

সাইফ বাবলু

শুক্রবার, ২০ মে ২০২২

এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের সাবেক এমডি প্রশান্ত কুমার হালদার (পিকে হালদার) আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের নামে ঋণ করিয়ে দিতে শুধু প্রভাবই খাটাননি পাশাপাশি প্রত্যেক ঋণের বিপরীতে আলাদা করে কমিশনও (ঘুষ) নিয়েছেন। ঘুষের এসব টাকা বাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখার নিজের ব্যাংক হিসাবে জমা করেছেন বেতটের টাকা দেখিয়ে। আর্থিক কেলেংকারির ঘটনায় অনুসন্ধান করতে গিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন এসব তথ্য পেয়েছে।

দুদকের ভাষ্য, নিজের নিয়ন্ত্রণাধীন প্রতিষ্ঠানের নামে এবং বিভিন্ন ব্যক্তিকে ঋণ পাইয়ে দিতে যে পরিমাণ কমিশন নিয়েছেন তার একটি হিসাব পেয়েছে দুদক। ব্যাংক এশিয়ার ধানমন্ডি শাখায় পিকের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে পর্যালোচনা করে ২২৭ কোটি টাকা ঘুষ নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এদিকে পিকে সিন্ডিকেটের সুবিধাভোগীদের মধ্যে চরম আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ভারত থেকে পিকে হালদারকে দেশে ফেরাতে পুলিশ সদর দপ্তরও দুদকের টিম ভারতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। পিকে হালদারকে দেশে ফিরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সুবিধাভোগীদের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য মিলবে বলে মনে করছে দুদক। দুদকের ভাষ্য, পিকে সিন্ডিকেটের সুবিধাভোগীদের গ্রেপ্তারেও অভিযান চালানো হবে।

দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, চার আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাতে নামে-বেনামে ৪০টি প্রতিষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে পিকে হালদার। এসব প্রতিষ্ঠান পিকে হালদারের আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী এবং সিন্ডিকেটের সদস্যদের দিয়ে তৈরি করেছেন। ওই প্রতিষ্ঠানের নামে নেয়া ঋণের অধিকাংশ পিকে নিলেও আবার ঋণের জন্য আদালা করেও ঘুষ নিয়েছেন। ঘুষ হিসেবে নেয়া টাকা পাচার করেছেন নাকি দেশে বিনিয়োগ করেছেন তা খতিয়ে দেখছে দুদক।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকে হালদার ও তার সিন্ডিকেটের যাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তাদের মধ্যে অধিকাংশ মামলার পর পরই আত্মগোপনে ছিল। তাদের ধরতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়েছে। পিকে হালদারকে দেশে ফেরত আনার বিষয়ে দুদক তখন বেশি মনোযোগী ছিল। এখন পিকে হালদার যেহেতু ধরা পড়েছে এবং দেশে ফিরিয়ে আনার পক্রিয়া শুরু হয়েছে এখন সুবিধাভোগীদের গ্রেপ্তারে দুদক অভিযান শুরু করবে। এ বিষয়ে কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সুবিধাভোগীদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবে দুদক।

দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার জানান, বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে তার নিয়ন্ত্রণাধীন যেসব প্রতিষ্ঠানকে ঋণ পাইয়ে দেয়ার জন্য ২২৭ কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছে সে বিষয়ে মানিন্ডারিং আইনে তার বিরুদ্ধে পৃথক মামলা হতে পারে। দুদক ইতোমধ্যে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা শুরু করেছে। এ বিষয়ে নতুন করে মামলা হতে পারে।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকে ও তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত দায়ের হওয়া ৩৭ মামলায় আসামির সংখ্যা ৮০ জনের মতো হলেও এ পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৩ জন। বাকি আসামিরা এখনও দেশেই বহাল তবিয়তে রয়েছে। দুদকের করা এসব মামলায় একজন সাবেক উপসচিবও রয়েছেন যিনি এফএএস ফাইন্যান্সের পরিচালক পদে ছিলেন। ওই সচিবের মতো অনেক প্রভাবশালী আসামিও রয়েছেন যারা গ্রেপ্তার এড়াতে নানাভাবে চেষ্টা করছেন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সিন্ডিকেটের সদস্যদের মধ্যে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। অনেকেই গ্রেপ্তার এড়াতে নানাভাবে দেন-দরবার শুরু করেছে। কেউ কেউ দেশের বাইরেও পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এসব বিষয়ে সর্তক অবস্থানে রয়েছে দুদক। পিকে সিন্ডিকটের যেসব সদস্যরা ৩৭ মামলায় আসামি হয়েছেন তাদের ওপর নজরদারি রয়েছে দুদকের।

সূত্র জানিয়েছে, পিকে হালদার ভারতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাচার করেছেন। এছাড়া সিঙ্গাপুর, কানাডাসহ একাধিক দেশেও টাকা পাচার করেছেন। এসব টাকায় তিনি দেশের বাইরে বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খুলে বসেন। দেশের বাইরে ভারতে এ পর্যন্ত ১৫০ কোটি টাকার সম্পদ পাওয়ার কথা জানিয়েছে ভারতের আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা। অনুসন্ধান করলে বাকি টাকা পিকে কোথায় কিভাবে বিনিয়োগ করেছেন তা বেরিয়ে আসবে।

পিকের কাছ থেকে যারা সুবিধা নিয়েছেন

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, পিকে হালদার শেয়ার কিনে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ে বসান নাহিদা রুনাইকে। এ কাজে তার খরচ হয়েছে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর অবন্তিকা বড়ালকে ৮০০ কোটি টাকা খরচ করে পিপলস লিজিংয়ে বসান। সুস্মিতা সাহাকে দিয়েছেন ১০০ কোটি টাকা বেশি ঋণ, পাপিয়া ব্যার্নাজী দিয়ে ৩০০ কোটি টাকা এবং মমতাজকে দিয়েছেন ৩০০ কোটি টাকা। দুই প্রেমিকাকে দুই লিজিংয়ের দায়িত্বে দিতে খরচ করেন দুই হাজার ৩০০ কোটি টাকা। আর তিন বান্ধবীকে দিয়েছেন ৭০০ কোটি টাকা।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্র বলছে, পিকে হালদার ত্রিভুজ প্রেমে মগ্ন ছিলেন। তিনি দুই বান্ধবীকে নিয়ে ৬০ বার বিদেশ ভ্রমণে করেছেন। এর মধ্যে বান্ধবী নাহিদা রুনাইকে নিয়ে গেছেন ২২ বার। পিকে হালদার নাহিদা রুনাইকে দিয়েছেন ২০ কোটি টাকা। অবন্তিকা বড়ালকে দিয়েছেন ধানমন্ডিতে ৫ কোটি টাকার ফ্ল্যাট। অনন্দিতা মৃধাকে দিয়েছেন উত্তরাতে ৪০ কোটি টাকা মূল্যের বাণিজ্যিক ভবন।

দুদক সূত্র জানিয়েছে, পিকের ব্যক্তিগত আইনজীবী সুকুমার মৃধার মেয়ে অনন্দিতা মৃধাকে রাজধানীর উত্তরায় ৪০ কোটি টাকার ৯ তলা ভবন কিনে দিয়েছেন। সুস্মিতা সাহা নামের এক নারীর প্রতিষ্ঠানে ১০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছেন। পাপিয়া বানার্জী নামের এক নারীর প্রতিষ্ঠানে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ, মমতাজ বানার্জী নামের আরেক নারীর বেনামি প্রতিষ্ঠানের নামে একইভাবে ৩০০ কোটি টাকার ঋণ দিয়েছেন। সূত্র জানিয়েছে, সন্দীপ কর্পোরেশন এর মালিক স্বপন কুমার মিস্ত্রি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৫৫ কোটি টাকা একইভাবে এফএএস লিজিং থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। উইনলেট ইন্টারন্যাশাল লি.র মালিক অনিন্দিতা মৃধা (সুকুমার মৃধার মেয়ে); সুকুমার সাহা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৬৯ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। গ্রিনলাইন ডেভলপমেন্ট লি.র চেয়ারম্যান মো. দেলওয়ার হোসেন, ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিলন কুমার দাশ ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৬৫ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। মেসার্স বর্ণর মালিক অঙ্গন মোহন রায় ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৬৭ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং ও রিলায়েন্স থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। রহমান কেমিক্যালসের মালিক উজ্জ্বল কুমার নন্দী এমডি রাজীর সোম, স্বপন কুমার মিন্ত্রি, অমিতাভ অধিকারী, কাজী মমরেজ মাহমুদ- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৫৫ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং ও রিলায়েন্স থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। নর্দার্ন জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির মালিক উজ্জ্বল কুমার নন্দী, অমিতাভ অধিকারী, কাজী মমরেজ মাহমুদ, মো. ইকবাল সাইদ, অরুন কুমার কুন্ডু ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ৩০ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং ও রিলায়েন্স থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। সিমটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এবং সিমটেক্স টেক্টাইল লি.র মালিক মো. সিদ্দিকুর রহমান, মাহফুজা রহমান বেবী, ইনসান আলী শেখ, হাফিজা খানম ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে নেন ১২২ কোটি টাকা। একইভাবে এফএএস লিজিং ও রিলায়েন্স থেকেও তারা একই পরিমাণ অর্থ লুট করেন। এছাড়া আলিফ এসেস্ট ম্যানেজম্যান্টের নামে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, ফাস ক্যাপিটাল ম্যানজমেন্টের নামে ৩৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং সিকিউরিটি লি.র নামে ২০৬ কোটি টাকা, পিএফআই সিকিউরিটির নামে ৭৭ কোটি ৬ লাখ টাকা, প্রাইম ফাইন্যান্সের নামে ৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা, সিগমা ক্যাপিটালের নামে ৩৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা নিয়ম ভহির্ভূতভাবে ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধান সূত্রে জানা গেছে, দুদকের অনুসন্ধানী টিম প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করে এখন পর্যন্ত ৮৪ জনের সংশ্লিষ্টতা পেয়েছে। দুর্নীতির সংশ্লিষ্টতায় এখন পর্যন্ত ৮৩ ব্যক্তির প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার সম্পদ আদালতের মাধ্যমে ফ্রিজ করেছে দুদক। অনুসন্ধান পর্যায়ে কোন অভিযেুক্ত ব্যক্তি যেন বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য ৬৪ জনের বিদেশ গমনে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়েছে। পিকে হালদার ঋণ কেলেংকারির ঘটনা অনুসন্ধান চলছে। প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষ করে ৩৬টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান টিম এখন পর্যন্ত ১৩ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে। রিমান্ডে তারা অর্থ আত্মসাৎ ও পাচার নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। যাদের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী, পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী, রাশেদুল হক, অবান্তিকা বড়াল ও নাহিদা রুনাইসহ ১১ জন আদালতে নিজেদের দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধি ৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

back to top