নিউইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জোহরান মামদানি
যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নগরী নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। মামদানীর এ জয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর একটি বড় ধাক্কা খেলেন। মামদানি হচ্ছেন প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম মেয়র। শুধু তাই নয়, এক শতাব্দীর মধ্যে মামদানি হচ্ছেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ মেয়র।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে গত ৩০ বছরের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি
এক শতাব্দীর মধ্যে মামদানি হচ্ছেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ মেয়র
ডেমোক্রেট প্রার্থী মামদানি গতকালের,(০৫ নভেম্বর ২০২৫) নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি হারিয়েছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে, যাকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন দিয়েছিলেন। নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা ট্রাম্প কোনোভাবেই চাননি মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে আগেই হুমকি দিয়েছেন, তার মতো লোক নির্বাচিত হলে তিনি নিউইয়র্ক শহরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন। মামদানিকে অবৈধ অভিবাসী বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
এবারের নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর অঙ্গীকার করেছেন মামদানি। তরুণসহ সব বয়সী ভোটারের মধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন। যার প্রতিফলন দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে। নিউইয়র্কের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়াই করছিলেন। তবে গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার ভোর ৫টা) আনুমানিক ১৭ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে শহরের নির্বাচন বোর্ড। গত ৩০ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি। ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ১৯ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী রুডি জুলিয়ানি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ডেভিড ডিনকিনসকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবারের নির্বাচনে প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ জন আগাম ভোট দিয়েছেন, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরে এটিই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। শহরের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় একটি কেন্দ্রে ভোট দেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর মঙ্গলবার ছিল প্রথম বড় নির্বাচনের দিন। এদিন নিউইয়র্ক সিটির মেয়রসহ অনুষ্ঠিত কয়েকটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা অনেকাংশে জয়লাভ করেছেন।
এখন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। একটি বড় বিষয় অনেকের নজরে এসেছে। সেটি হলো অর্থনীতি, যা এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প গত শরৎকালে দেশের অর্থনীতি ভালো করার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটি পূরণ করতে পারেননি। এ ব্যর্থতা রিপাবলিকানদের জন্য আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গত মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটরা ভার্জিনিয়া ও নিউজার্সির গভর্নর নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। নতুন গভর্নর নির্বাচনের জন্য শুধু এ দুই অঙ্গরাজ্যে ভোট হয়েছে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ার সুপ্রিম কোর্টের তিন আসনও দখল করেছে ডেমোক্র্যাটরা। এ ছাড়া কলোরাডো থেকে মেইন পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গণভোটে নানা প্রস্তাব পাস হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প অনেকটাই ছিলেন অনুপস্থিত। তবে রিপাবলিকান প্রার্থীরা তার সঙ্গে নিজেদের ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত রেখেছেন। তারা ভেবেছিলেন, গত বছর তার বড় জয় এবারও তাদের জন্য পথ খুলে দেবে। কিন্তু ধারণা ছিল ভুল।
ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, তাদের জয় সামনের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নতুন কৌশলের পথ দেখাবে। তবে সতর্ক থাকারও প্রয়োজন। গত মঙ্গলবারের নির্বাচন শুধু কিছু নির্বাচনী অঙ্গরাজ্যেই সীমিত ছিল; যাদের অধিকাংশই নীল-অধ্যুষিত (ডেমোক্র্যাট ভোটার সংখ্যাগরিষ্ঠ) এবং সাধারণত যে দল হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভালো ফলাফল পায় না।
এ ফলাফলে দেখা গেছে, দ্রুত বর্ধনশীল শহরতলী, গ্রামীণ এলাকা ও সেনাবাহিনীর ভোটার অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ডেমোক্র্যাটরা চার বছর আগের তুলনায় ভালো করেছে। ডেমোক্র্যাটরা দলের চরম-বাম নীতির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই জিতেছে। বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতা মনে করেন, মধ্যপন্থী কৌশলই তাদের দলের পুনর্জাগরণের চাবিকাঠি হতে পারে; বিশেষ করে গত বছর রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট পদে ও কংগ্রেসের উভয় কক্ষে জেতার পর।
ট্রাম্প ও তার সহকর্মীরা মূলত অভিবাসন, অপরাধ ও রক্ষণশীল সাংস্কৃতিক বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন। কিন্তু মঙ্গলবারের নির্বাচনে ভোটাররা বেশি চিন্তিত ছিলেন অর্থনীতি, চাকরি ও জীবনযাত্রার খরচ নিয়ে। এপির ভোটার জরিপ অনুসারে, নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক সিটিতে ১৭ হাজারের বেশি ভোটার বলেছেন, বর্তমান অর্থনীতিতে তারা আর এগোতে পারছেন না। ডেমোক্র্যাটরা দলের চরম-বাম নীতির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই জিতেছেন।
দুঃস্বপ্নের রাতের আশঙ্কায় ট্রাম্প আগেভাগেই মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলাফল থেকে নিজেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করেছেন। তারপরও তার নীতিগুলো ভার্জিনিয়া, নিউজার্সি ও নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ফল ঘোষণার পর ট্রাম্প তার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আজকের নির্বাচনে রিপাবলিকানরা হেরেছে দুটি কারণে - এক, ট্রাম্পের নাম ব্যালটে ছিল না; দুই, সরকার বন্ধ (শাটডাউন) ছিল।’
মঙ্গলবার রাতে মামদানির জয়ের খবর আসার সঙ্গে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নিউইয়র্কের কুইন্স, উচ্ছ্বাসের মাত্রা এতই বেশি ছিল যে সেই খবর সিএনএনও দিয়েছে। কুইন্সের জ্যামাইকায় অনেক বাংলাদেশিদের বাস, সেখানে রাতেই স্লোগান উঠতে থাকে- ‘আমার মেয়র-তোমার মেয়র, মামদানি-মামদানি’, ‘নিউইয়র্কের মেয়র, মামদানি-মামদানি’, ‘শ্রমিক শ্রেণির মেয়র, মামদানি-মামদানি’।
সিএনএন লিখেছে, রাস্তায় নেমে স্লোগানমুখর এই বাংলাদেশিদের হাতে ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জ্যামাইকার বাংলাদেশি আমেরিকানরা মামদানির জন্য।’
ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার এবং উগান্ডার শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানির ছেলে জোহরান তার ভোটের প্রচার শুরুর পর থেকে বাংলাদেশিদের সমর্থন পেয়ে আসছিলেন। তার পক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রচারে নামা বেশ সাড়া ফেলেছিল। মামদানি নিজেও বাংলায় কথা বলে তাদের মন জয় করে নেন।
মামদানির জয় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল শাখার জন্য একটি সফলতা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই জয় এল, যখন জাতীয় পর্যায়ের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
মামদানির জন্ম উগান্ডায়। তবে শিশু মামদানি বড় হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। জোহরানের বাবার নাম মাহমুদ মামদানি। তিনি ব্রিটিশ ভারতে জন্ম নেওয়া উগান্ডার শিক্ষাবিদ। তিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মামদানির মায়ের নাম মীরা নায়ার। তিনি বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা। সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন। তাঁর স্ত্রী একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিল্পী, নাম রামা দুয়াজি। তিনি টেক্সাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। পরে লেখাপড়ার জন্য রামা নিউইয়র্ক শহরে চলে আসেন। রামার বয়স ২৮ বছর। তিনি জেন-জি প্রজন্মের প্রথম নারী, যিনি নিউইয়র্কের ফার্স্ট লেডি হতে চলেছেন।
জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইন সভার তিনবারের নির্বাচিত সদস্য। একাধিক প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি মেয়র নির্বাচনের দৌড়ে আসেন। শুরুতে তাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
আগামী বছরের ১ জানুয়ারি নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন জোহরান। তিনি এমন একটি শহরের দায়িত্ব নিতে চলেছেন, যেটির চরিত্র বেশ জটিল। এখানে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন, রয়েছে বিশাল প্রশাসন, তিন লাখ পৌরকর্মী এবং এই শহর পরিচালনার বাজেট সাড়ে ১১ হাজার কোটি ডলারের বেশি।
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
নিউইয়র্ক সিটির নতুন মেয়র ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জোহরান মামদানি
বুধবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৫
যুক্তরাষ্ট্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নগরী নিউইয়র্ক সিটির ১১১তম মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি। নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমো ও রিপাবলিকান প্রার্থী কার্টিস স্লিওয়াকে পরাজিত করে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। মামদানীর এ জয়ে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর একটি বড় ধাক্কা খেলেন। মামদানি হচ্ছেন প্রথম দক্ষিণ এশীয় বংশোদ্ভূত এবং আফ্রিকায় জন্মগ্রহণকারী প্রথম মুসলিম মেয়র। শুধু তাই নয়, এক শতাব্দীর মধ্যে মামদানি হচ্ছেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ মেয়র।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে গত ৩০ বছরের মধ্যে এবারই সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি
এক শতাব্দীর মধ্যে মামদানি হচ্ছেন সবচেয়ে কনিষ্ঠ মেয়র
ডেমোক্রেট প্রার্থী মামদানি গতকালের,(০৫ নভেম্বর ২০২৫) নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তিনি হারিয়েছেন নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের সাবেক গভর্নর ও স্বতন্ত্র প্রার্থী অ্যান্ড্রু কুমোকে, যাকে খোদ যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প সমর্থন দিয়েছিলেন। নিউইয়র্কের আদি বাসিন্দা ট্রাম্প কোনোভাবেই চাননি মামদানি এই শহরের মেয়র নির্বাচিত হন। তিনি মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ আখ্যা দিয়ে আগেই হুমকি দিয়েছেন, তার মতো লোক নির্বাচিত হলে তিনি নিউইয়র্ক শহরের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তহবিল আটকে দেবেন। মামদানিকে অবৈধ অভিবাসী বলেও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প।
এবারের নির্বাচনে জীবনযাত্রার ব্যয় কমানোর অঙ্গীকার করেছেন মামদানি। তরুণসহ সব বয়সী ভোটারের মধ্যে বেশ সাড়াও পেয়েছেন। যার প্রতিফলন দেখা গেছে ভোটকেন্দ্রে। নিউইয়র্কের বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়াই করছিলেন। তবে গত সেপ্টেম্বরে নির্বাচনী দৌড় থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।
নিউইয়র্কের মেয়র নির্বাচনে স্থানীয় সময় গতকাল সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত (বাংলাদেশ সময় আজ বুধবার ভোর ৫টা) আনুমানিক ১৭ লাখ মানুষ ভোট দিয়েছেন বলে জানিয়েছে শহরের নির্বাচন বোর্ড। গত ৩০ বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ ভোটার উপস্থিতি। ১৯৯৩ সালের নির্বাচনে প্রায় ১৯ লাখ ভোটার ভোট দিয়েছিলেন। সেই নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী রুডি জুলিয়ানি ডেমোক্র্যাট প্রার্থী ডেভিড ডিনকিনসকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
এবারের নির্বাচনে প্রায় ৭ লাখ ৩৫ হাজার ৩১৭ জন আগাম ভোট দিয়েছেন, যা প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো নির্বাচনে নিউইয়র্ক শহরে এটিই সর্বোচ্চ আগাম ভোট পড়ার ঘটনা। শহরের অ্যাস্টোরিয়া এলাকায় একটি কেন্দ্রে ভোট দেন ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী জোহরান মামদানি।
প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে হোয়াইট হাউসে ফেরার পর মঙ্গলবার ছিল প্রথম বড় নির্বাচনের দিন। এদিন নিউইয়র্ক সিটির মেয়রসহ অনুষ্ঠিত কয়েকটি নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা অনেকাংশে জয়লাভ করেছেন।
এখন ডেমোক্রেটিক পার্টির ভবিষ্যৎ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। একটি বড় বিষয় অনেকের নজরে এসেছে। সেটি হলো অর্থনীতি, যা এক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ট্রাম্প গত শরৎকালে দেশের অর্থনীতি ভালো করার জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সেটি পূরণ করতে পারেননি। এ ব্যর্থতা রিপাবলিকানদের জন্য আগামী বছরের মধ্যবর্তী নির্বাচনে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে।
গত মঙ্গলবার ডেমোক্র্যাটরা ভার্জিনিয়া ও নিউজার্সির গভর্নর নির্বাচনে জয়ী হয়েছে। নতুন গভর্নর নির্বাচনের জন্য শুধু এ দুই অঙ্গরাজ্যে ভোট হয়েছে। দোদুল্যমান অঙ্গরাজ্য পেনসিলভানিয়ার সুপ্রিম কোর্টের তিন আসনও দখল করেছে ডেমোক্র্যাটরা। এ ছাড়া কলোরাডো থেকে মেইন পর্যন্ত বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে গণভোটে নানা প্রস্তাব পাস হয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারে ট্রাম্প অনেকটাই ছিলেন অনুপস্থিত। তবে রিপাবলিকান প্রার্থীরা তার সঙ্গে নিজেদের ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত রেখেছেন। তারা ভেবেছিলেন, গত বছর তার বড় জয় এবারও তাদের জন্য পথ খুলে দেবে। কিন্তু ধারণা ছিল ভুল।
ডেমোক্র্যাটরা আশা করছেন, তাদের জয় সামনের মধ্যবর্তী নির্বাচনে নতুন কৌশলের পথ দেখাবে। তবে সতর্ক থাকারও প্রয়োজন। গত মঙ্গলবারের নির্বাচন শুধু কিছু নির্বাচনী অঙ্গরাজ্যেই সীমিত ছিল; যাদের অধিকাংশই নীল-অধ্যুষিত (ডেমোক্র্যাট ভোটার সংখ্যাগরিষ্ঠ) এবং সাধারণত যে দল হোয়াইট হাউসে ক্ষমতায় থাকে, তারা মধ্যবর্তী নির্বাচনে ভালো ফলাফল পায় না।
এ ফলাফলে দেখা গেছে, দ্রুত বর্ধনশীল শহরতলী, গ্রামীণ এলাকা ও সেনাবাহিনীর ভোটার অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে ডেমোক্র্যাটরা চার বছর আগের তুলনায় ভালো করেছে। ডেমোক্র্যাটরা দলের চরম-বাম নীতির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই জিতেছে। বেশ কয়েকজন ডেমোক্র্যাট নেতা মনে করেন, মধ্যপন্থী কৌশলই তাদের দলের পুনর্জাগরণের চাবিকাঠি হতে পারে; বিশেষ করে গত বছর রিপাবলিকানরা প্রেসিডেন্ট পদে ও কংগ্রেসের উভয় কক্ষে জেতার পর।
ট্রাম্প ও তার সহকর্মীরা মূলত অভিবাসন, অপরাধ ও রক্ষণশীল সাংস্কৃতিক বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন। কিন্তু মঙ্গলবারের নির্বাচনে ভোটাররা বেশি চিন্তিত ছিলেন অর্থনীতি, চাকরি ও জীবনযাত্রার খরচ নিয়ে। এপির ভোটার জরিপ অনুসারে, নিউজার্সি, ভার্জিনিয়া, ক্যালিফোর্নিয়া ও নিউইয়র্ক সিটিতে ১৭ হাজারের বেশি ভোটার বলেছেন, বর্তমান অর্থনীতিতে তারা আর এগোতে পারছেন না। ডেমোক্র্যাটরা দলের চরম-বাম নীতির সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখেই জিতেছেন।
দুঃস্বপ্নের রাতের আশঙ্কায় ট্রাম্প আগেভাগেই মঙ্গলবারের নির্বাচনের ফলাফল থেকে নিজেকে আলাদা রাখার চেষ্টা করেছেন। তারপরও তার নীতিগুলো ভার্জিনিয়া, নিউজার্সি ও নিউইয়র্ক সিটির নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
ফল ঘোষণার পর ট্রাম্প তার দায় এড়ানোর চেষ্টা করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘আজকের নির্বাচনে রিপাবলিকানরা হেরেছে দুটি কারণে - এক, ট্রাম্পের নাম ব্যালটে ছিল না; দুই, সরকার বন্ধ (শাটডাউন) ছিল।’
মঙ্গলবার রাতে মামদানির জয়ের খবর আসার সঙ্গে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে নিউইয়র্কের কুইন্স, উচ্ছ্বাসের মাত্রা এতই বেশি ছিল যে সেই খবর সিএনএনও দিয়েছে। কুইন্সের জ্যামাইকায় অনেক বাংলাদেশিদের বাস, সেখানে রাতেই স্লোগান উঠতে থাকে- ‘আমার মেয়র-তোমার মেয়র, মামদানি-মামদানি’, ‘নিউইয়র্কের মেয়র, মামদানি-মামদানি’, ‘শ্রমিক শ্রেণির মেয়র, মামদানি-মামদানি’।
সিএনএন লিখেছে, রাস্তায় নেমে স্লোগানমুখর এই বাংলাদেশিদের হাতে ব্যানারে লেখা ছিল, ‘জ্যামাইকার বাংলাদেশি আমেরিকানরা মামদানির জন্য।’
ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা মীরা নায়ার এবং উগান্ডার শিক্ষাবিদ মাহমুদ মামদানির ছেলে জোহরান তার ভোটের প্রচার শুরুর পর থেকে বাংলাদেশিদের সমর্থন পেয়ে আসছিলেন। তার পক্ষে প্রবাসী বাংলাদেশিদের প্রচারে নামা বেশ সাড়া ফেলেছিল। মামদানি নিজেও বাংলায় কথা বলে তাদের মন জয় করে নেন।
মামদানির জয় ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রগতিশীল শাখার জন্য একটি সফলতা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে। এমন এক সময়ে এই জয় এল, যখন জাতীয় পর্যায়ের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে ডেমোক্র্যাটরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
মামদানির জন্ম উগান্ডায়। তবে শিশু মামদানি বড় হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউনে। জোহরানের বাবার নাম মাহমুদ মামদানি। তিনি ব্রিটিশ ভারতে জন্ম নেওয়া উগান্ডার শিক্ষাবিদ। তিনি নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক। মামদানির মায়ের নাম মীরা নায়ার। তিনি বিখ্যাত ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতা। সাত বছর বয়সে বাবা-মায়ের হাত ধরে তিনি নিউইয়র্কে চলে আসেন। তাঁর স্ত্রী একজন সিরীয় বংশোদ্ভূত মার্কিন শিল্পী, নাম রামা দুয়াজি। তিনি টেক্সাসে জন্মগ্রহণ করেছেন। পরে লেখাপড়ার জন্য রামা নিউইয়র্ক শহরে চলে আসেন। রামার বয়স ২৮ বছর। তিনি জেন-জি প্রজন্মের প্রথম নারী, যিনি নিউইয়র্কের ফার্স্ট লেডি হতে চলেছেন।
জোহরান মামদানি নিউইয়র্ক অঙ্গরাজ্যের আইন সভার তিনবারের নির্বাচিত সদস্য। একাধিক প্রতিযোগীর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তিনি মেয়র নির্বাচনের দৌড়ে আসেন। শুরুতে তাকে তেমন একটা গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
আগামী বছরের ১ জানুয়ারি নিউইয়র্কের মেয়র হিসেবে শপথ নেবেন জোহরান। তিনি এমন একটি শহরের দায়িত্ব নিতে চলেছেন, যেটির চরিত্র বেশ জটিল। এখানে প্রায় ৮৫ লাখ মানুষ বসবাস করেন, রয়েছে বিশাল প্রশাসন, তিন লাখ পৌরকর্মী এবং এই শহর পরিচালনার বাজেট সাড়ে ১১ হাজার কোটি ডলারের বেশি।