মহান বিজয় দিবসের ৫৩ বছর পূর্তি হলো আজ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এই বিজয় আমাদের জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করেছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির ঐক্য ছিল দৃঢ় এবং অবিচ্ছেদ্য। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ বিজয়ের মাধ্যমে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা এনে দেয়নি; এটি আমাদের সাম্য, মানবিকতা এবং অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে একটি নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা, এবং গণতন্ত্রের চর্চার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য সংহত করার পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যই ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু স্বাধীনতার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের কারণে এই চেতনাকে অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতি করা হয়েছে।
বিজয়ের ৫৩ বছর পর আমরা একটি বিশেষ পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ও সহিষ্ণুতা বজায় রাখতে আমাদের ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক বিভক্তি জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং অসহিষ্ণুতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
যদিও গত কয়েক দশকে আমাদের আর্থিক উন্নয়ন প্রশংসনীয়, কিন্তু এই উন্নয়ন সমগ্র জাতির মধ্যে সুষমভাবে বিতরণ করতে না পারা একটি বড় সীমাবদ্ধতা। একইভাবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এসব ক্ষেত্রে উন্নতি ছাড়া স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ পূর্ণতা পাবে না।
জাতীয় অগ্রগতির জন্য আমাদের সব শ্রেণী, পেশা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এখন সময়ের দাবি। গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতাই নিশ্চিত করব না; এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথও সুগম করবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, বিজয় দিবস শুধু উদ্যাপনের দিন নয়; এটি আত্মসমীক্ষা ও প্রতিশ্রুতির দিন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধগুলো জাতিকে পথ দেখিয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নই আমাদের প্রধান কাজ।
সমাজের প্রতিটি স্তরে মানবিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রসার ঘটাতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ গঠনে আমাদের সচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয় ঐক্য, এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সমন্বয় ঘটাতে হবে।
এই মহান বিজয় দিবসে আমরা জাতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে একটি উন্নত, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে শপথ গ্রহণ করি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই সম্ভব হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। একাত্তরকে খ-িতভাবে দেখলে হবে না। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ই আমাদের অস্তিত্ব। সেখান থেকেই আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বারবার সেখানেই ফিরে যেতে হবে। ৫৩ বছরে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে ভবিষ্যতে যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হলে একাত্তরকেই স্মরণ করতে হবে আমাদের।
সোমবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৪
মহান বিজয় দিবসের ৫৩ বছর পূর্তি হলো আজ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর গৌরবময় বিজয়ের মাধ্যমে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ। এই বিজয় আমাদের জাতীয় চেতনাকে জাগ্রত করেছিল।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতির ঐক্য ছিল দৃঢ় এবং অবিচ্ছেদ্য। ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণী নির্বিশেষে সবাই একসঙ্গে জাতীয় মুক্তির লক্ষ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। এ বিজয়ের মাধ্যমে আমরা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম একটি গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার।
মুক্তিযুদ্ধ আমাদের জন্য শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা এনে দেয়নি; এটি আমাদের সাম্য, মানবিকতা এবং অসাম্প্রদায়িকতার ভিত্তিতে একটি নতুন রাষ্ট্র নির্মাণের দিকনির্দেশনা দিয়েছিল। ধর্মনিরপেক্ষতার মাধ্যমে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ গড়ার অঙ্গীকার, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল রাষ্ট্রব্যবস্থা, এবং গণতন্ত্রের চর্চার মধ্য দিয়ে জাতীয় ঐক্য সংহত করার পথে অগ্রসর হওয়ার লক্ষ্যই ছিল আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। কিন্তু স্বাধীনতার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের কারণে এই চেতনাকে অনেক ক্ষেত্রেই ক্ষতি করা হয়েছে।
বিজয়ের ৫৩ বছর পর আমরা একটি বিশেষ পরিস্থিতির মুখোমুখি। দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ও সহিষ্ণুতা বজায় রাখতে আমাদের ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক বিভক্তি জাতীয় উন্নয়নের পথে বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর পরস্পরবিরোধী অবস্থান এবং অসহিষ্ণুতা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
যদিও গত কয়েক দশকে আমাদের আর্থিক উন্নয়ন প্রশংসনীয়, কিন্তু এই উন্নয়ন সমগ্র জাতির মধ্যে সুষমভাবে বিতরণ করতে না পারা একটি বড় সীমাবদ্ধতা। একইভাবে, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে কাক্সিক্ষত অগ্রগতি অর্জিত হয়নি। এসব ক্ষেত্রে উন্নতি ছাড়া স্বাধীনতার প্রকৃত অর্থ পূর্ণতা পাবে না।
জাতীয় অগ্রগতির জন্য আমাদের সব শ্রেণী, পেশা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শের মানুষের ঐক্যবদ্ধ হওয়া প্রয়োজন। একটি অবাধ, সুষ্ঠু এবং গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এখন সময়ের দাবি। গণতন্ত্রের মাধ্যমে আমরা শুধু মতপ্রকাশের স্বাধীনতাই নিশ্চিত করব না; এটি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথও সুগম করবে।
আমাদের মনে রাখতে হবে, বিজয় দিবস শুধু উদ্যাপনের দিন নয়; এটি আত্মসমীক্ষা ও প্রতিশ্রুতির দিন। মুক্তিযুদ্ধের যে মূল্যবোধগুলো জাতিকে পথ দেখিয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়নই আমাদের প্রধান কাজ।
সমাজের প্রতিটি স্তরে মানবিক মূল্যবোধ, অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং মুক্তবুদ্ধি চর্চার প্রসার ঘটাতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যৎ গঠনে আমাদের সচেতন পদক্ষেপ নিতে হবে। রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে ধর্মনিরপেক্ষতা, জাতীয় ঐক্য, এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের সমন্বয় ঘটাতে হবে।
এই মহান বিজয় দিবসে আমরা জাতীয় ঐতিহ্য, সংস্কৃতি এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে একটি উন্নত, গণতান্ত্রিক ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয়ে শপথ গ্রহণ করি। আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায়ই সম্ভব হবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলা। একাত্তরকে খ-িতভাবে দেখলে হবে না। মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ই আমাদের অস্তিত্ব। সেখান থেকেই আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। বারবার সেখানেই ফিরে যেতে হবে। ৫৩ বছরে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়েছে ভবিষ্যতে যেন তার পুনরাবৃত্তি না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হলে একাত্তরকেই স্মরণ করতে হবে আমাদের।