alt

opinion » mail

শিশুর হাতে মোবাইল নয়, চাই জীবনের মাঠে ফেরার ডাক

: রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

একসময় বিকেলবেলা মানেই ছিল শিশুদের মাঠে ছুটে চলা, পাড়ায় পাড়ায় কানামাছি, দড়িছোঁয়া, লুডু কিংবা ক্রিকেটের আনন্দময় দৃশ্য। আজ সেই দৃশ্য যেন স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। এখন শিশুরা মাঠে যায় না, খেলেও না; তারা ঘরে বসে স্ক্রিনে ডুবে থাকে। মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারÑএসব ডিভাইসই হয়ে উঠেছে তাদের নতুন খেলাঘর। বাস্তবে তারা গেম খেলছে না, বরং গেমই যেন খেলছে তাদের মন ও মস্তিষ্ক নিয়ে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ভিডিও গেম খেলে। এদের বড় অংশই শিশু-কিশোর। এই গেমিং বাজার এখন ১০৮.৯০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল শিল্প। এর মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক খাত হচ্ছে মোবাইল গেম। মনোবিজ্ঞানীরা এই আসক্তিকে ‘ডিজিটাল মাদক’ বলে অভিহিত করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) ভিডিও গেমে তীব্র আসক্তিকে ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’ নামে একটি মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

গেমে আসক্তি শুধু সময়ের অপচয় নয়, এটি চোখের ক্ষতি, ঘুমের সমস্যা ও একাকীত্বের জন্ম দেয়। এর পেছনে রয়েছে নানা সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক কারণÑনিরাপদ খেলার মাঠের অভাব, ব্যস্ত ও অনুপস্থিত অভিভাবক, মোবাইলের চটকদার জগৎ এবং সহপাঠীদের চাপ। যেখানে সবাই গেম খেলছে, সেখানে একজন না খেললে নিজেকে যেন বঞ্চিত বা ‘পিছিয়ে পড়া’ মনে করে।

এই পরিস্থিতি শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে মুক্তির পথ হতে পারে পরিবার। সন্তানকে সময় দেওয়া, গল্প শোনানো, একসঙ্গে খেলা, প্রকৃতির সংস্পর্শে আনাÑএসব উদ্যোগ শিশুদের আসক্তি থেকে দূরে রাখতে পারে। অভিভাবকদেরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।

এছাড়া রাষ্ট্রকেও এগিয়ে আসতে হবে। শিশু উপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন, বয়সভিত্তিক কনটেন্ট ফিল্টার, গঠনমূলক ও শিক্ষামূলক দেশীয় গেম তৈরি, খেলার মাঠ নিশ্চিতকরণ এবং সহপাঠ কার্যক্রম বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে গেমে আসক্ত শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পরামর্শ সেবাও সহজলভ্য করা প্রয়োজন।

শিশুদের হাতে মোবাইল যেন খেলার উপকরণ না হয়ে ওঠে ভবিষ্যৎ ধ্বংসের হাতিয়ার, এ ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে, গেমও থাকবে, কিন্তু তা যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। উল্টোটা হলে ক্ষতিটা হবে দীর্ঘমেয়াদিÑব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজÑসবার জন্য।

এসো, আবার ফিরিয়ে দিই শিশুদের সেই জীবন্ত শৈশব, মাঠের স্নিগ্ধতা, বিকেলের রোদ্দুর আর বন্ধুদের হাসির শব্দ। ওরা খেলুক, তবে গেম নয়Ñখেলুক জীবন নামক সেই রঙিন বাস্তবতার খেলায়।

সায়মা সুলতানা

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

মতিঝিল-গুলিস্তান রুটে চক্রাকার বাস সার্ভিস : শৃঙ্খল ও স্বস্তির সম্ভাবনা

ভাঙ্গা-খুলনা সড়ক দ্রুত চার লেনে উন্নীত করুন

ডিজিটাল উপনিবেশ : অদৃশ্য শৃঙ্খলের শাসন

বাউফল থেকে লোহালিয়া ব্রিজ পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশা

পরিবেশ বিপর্যয়ের অজানা মুখ

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধের শেষ কোথায়?

টেকসই উন্নয়ন ও আদিবাসীদের অধিকার

শব্দদূষণ বন্ধ হবে কবে?

চট্টগ্রাম দোহাজারী অংশে রেল চালু হোক

দেশের প্রথম শহীদ মিনারের উপেক্ষিত ইতিহাস

তরুণদের হীনমন্যতা ও মত প্রকাশে অনীহা

বন সংরক্ষণ ও উন্নয়ন

শুধু ফেব্রুয়ারিতে ভাষার দরদ?

ভাষা ও সাহিত্যের মিলনমেলা

জমি দখলের ক্ষতিপূরণ চাই

পুরান ঢাকায় মশার উৎপাত

গুইমারায় স্বাস্থ্যসেবা সংকট : অবিলম্বে সমাধান প্রয়োজন

মশার উপদ্রব : জনস্বাস্থ্য ও নগর ব্যবস্থাপনার চরম ব্যর্থতা

পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু : একটি জাতীয় সংকট

নাম পাল্টে গেলে কত কী যে হয়

অনুপ্রেরণা হোক তুলনাহীন

দূষণ রোধে জীবাশ্ম জ্বালানি নির্ভরতা হ্রাস জরুরি

পাবলিক টয়লেটের সংখ্যা বাড়ান

গণরুম প্রথার বিলুপ্তি কবে?

রেলসেবার মান বাড়ান

নওগাঁ সরকারি কলেজের সংকট

টিকিটের দাম আকাশচুম্বী

জকিগঞ্জে গ্রামীণ সড়কের দুরবস্থা

রেলে দুর্নীতি

নবায়নযোগ্য শক্তির বিকল্প নেই

পথশিশুদের ভয়ঙ্কর নেশাদ্রব্য থেকে রক্ষা করুন

ঢাকা-ময়মনসিংহ ননস্টপ ট্রেন ও ডাবল লাইন নির্মাণের দাবি

শিশুদের প্রতি প্রতিহিংসা বন্ধ করুন

চরবাসীর নদী পারাপারে নিরাপত্তার প্রয়োজন

জন্মনিবন্ধন সেবায় অতিরিক্ত অর্থ আদায় : ব্যবস্থা নিন

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে স্পিডব্রেকার চাই

tab

opinion » mail

শিশুর হাতে মোবাইল নয়, চাই জীবনের মাঠে ফেরার ডাক

মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন

রোববার, ১৭ আগস্ট ২০২৫

একসময় বিকেলবেলা মানেই ছিল শিশুদের মাঠে ছুটে চলা, পাড়ায় পাড়ায় কানামাছি, দড়িছোঁয়া, লুডু কিংবা ক্রিকেটের আনন্দময় দৃশ্য। আজ সেই দৃশ্য যেন স্মৃতির পাতায় ঠাঁই নিয়েছে। এখন শিশুরা মাঠে যায় না, খেলেও না; তারা ঘরে বসে স্ক্রিনে ডুবে থাকে। মোবাইল, ট্যাব বা কম্পিউটারÑএসব ডিভাইসই হয়ে উঠেছে তাদের নতুন খেলাঘর। বাস্তবে তারা গেম খেলছে না, বরং গেমই যেন খেলছে তাদের মন ও মস্তিষ্ক নিয়ে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে প্রায় ২২০ কোটি মানুষ নিয়মিত বা অনিয়মিতভাবে ভিডিও গেম খেলে। এদের বড় অংশই শিশু-কিশোর। এই গেমিং বাজার এখন ১০৮.৯০ মিলিয়ন ডলারের বিশাল শিল্প। এর মধ্যে সবচেয়ে লাভজনক খাত হচ্ছে মোবাইল গেম। মনোবিজ্ঞানীরা এই আসক্তিকে ‘ডিজিটাল মাদক’ বলে অভিহিত করেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডঐঙ) ভিডিও গেমে তীব্র আসক্তিকে ‘গেমিং ডিসঅর্ডার’ নামে একটি মানসিক রোগ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

গেমে আসক্তি শুধু সময়ের অপচয় নয়, এটি চোখের ক্ষতি, ঘুমের সমস্যা ও একাকীত্বের জন্ম দেয়। এর পেছনে রয়েছে নানা সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক কারণÑনিরাপদ খেলার মাঠের অভাব, ব্যস্ত ও অনুপস্থিত অভিভাবক, মোবাইলের চটকদার জগৎ এবং সহপাঠীদের চাপ। যেখানে সবাই গেম খেলছে, সেখানে একজন না খেললে নিজেকে যেন বঞ্চিত বা ‘পিছিয়ে পড়া’ মনে করে।

এই পরিস্থিতি শিশুদের মানসিক ও সামাজিক বিকাশের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ থেকে মুক্তির পথ হতে পারে পরিবার। সন্তানকে সময় দেওয়া, গল্প শোনানো, একসঙ্গে খেলা, প্রকৃতির সংস্পর্শে আনাÑএসব উদ্যোগ শিশুদের আসক্তি থেকে দূরে রাখতে পারে। অভিভাবকদেরও সচেতন ও দায়িত্বশীল হতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।

এছাড়া রাষ্ট্রকেও এগিয়ে আসতে হবে। শিশু উপযোগী নীতিমালা প্রণয়ন, বয়সভিত্তিক কনটেন্ট ফিল্টার, গঠনমূলক ও শিক্ষামূলক দেশীয় গেম তৈরি, খেলার মাঠ নিশ্চিতকরণ এবং সহপাঠ কার্যক্রম বাড়াতে হবে। একই সঙ্গে গেমে আসক্ত শিশুদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা ও পরামর্শ সেবাও সহজলভ্য করা প্রয়োজন।

শিশুদের হাতে মোবাইল যেন খেলার উপকরণ না হয়ে ওঠে ভবিষ্যৎ ধ্বংসের হাতিয়ার, এ ব্যাপারে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে, গেমও থাকবে, কিন্তু তা যেন আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। উল্টোটা হলে ক্ষতিটা হবে দীর্ঘমেয়াদিÑব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজÑসবার জন্য।

এসো, আবার ফিরিয়ে দিই শিশুদের সেই জীবন্ত শৈশব, মাঠের স্নিগ্ধতা, বিকেলের রোদ্দুর আর বন্ধুদের হাসির শব্দ। ওরা খেলুক, তবে গেম নয়Ñখেলুক জীবন নামক সেই রঙিন বাস্তবতার খেলায়।

সায়মা সুলতানা

গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়

back to top