alt

সাময়িকী

শক্তিমান কবির কলমে গল্প

দিলারা মেসবাহ

: বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কবিতা যদি ধ্যান জ্ঞান হয় কবির, আরাধ্য সাধন ভজন। তথাপি তিনি কি গদ্য রচনায় মনোযোগী হতে পারেন না! কেন নয়? কবি ফারুক মাহমুদের ‘কবি লিখেছেন মেঘ’ গল্প সংকলনটি তারই সমুজ্জ্বল স্বাক্ষর। শোভন হলুদাভ মলাটে নয়টি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের গল্পের চমৎকার আয়োজন। সত্তরের দশকের বিশিষ্ট কবি গদ্য রচনায়ও সার্থক। ¯্রােতস্বিনী ভাষাভঙ্গির চঞ্চল ঢেউ। কবির গল্প পাঠ যেন বিচিত্র অনুভব। প্রাচীন সাহিত্যের ঐতিহ্যের নির্যাসে ঋদ্ধ হওয়া। সংস্কৃত সাহিত্যের অমর কবি কালিদাস, বানভট্টের কালজয়ী রচনার মূল সম্ভারের কিছু আলো ছটা অন্য বিভায়, সমকালীন জীবনবোধের কথকতায় চিত্রিত করেছেন গল্পকার। মানবাত্মার পরম মুক্তির অন্বেষণ আদি অকৃত্রিম। সেই সুখ দুঃখের হাহাস্বর, ভালোবাসা, প্রতারণার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কথাগুচ্ছ সিংহভাগ গল্পে। পৌরাণিক চরিত্রগুলো চেনা মনে হয়, আপন মনে হয়। মানবিক যাপনের চিত্র শুধু সময় থমকে আছে অতীতের প্রেক্ষাপটে। হাসি কান্না ভালোবাসা প্রতারণার মূল সুর যেন মিলে গেছে অবলীলায়। আরও আছে সমকালীন সমাজচিত্র- মুখোশ, প্রহসন, প্রেম প্রকৃতি। কখনও যাদুবাস্তবতার মিশেলে আলো ছায়ার অন্য রকম উপস্থাপনার গল্পও সমৃদ্ধ করেছে এই গ্রন্থটি। গদ্য রচনার বিবিধ শাখায় রয়েছে পর্যাপ্ত ময়দান। একজন সুধন্য কবি গল্পের সম্ভাবনা টের পেলেন। জীবনবোধের আপাত অবরুদ্ধ কপাট খোলার শব্দে সহসা সচকিত হলেন, আনন্দিত হলেন। সমাজ সংসারের নানা কাহিনি খুঁজতে রসদ জোগাতে সদর অন্দর পেরিয়ে পৌঁছে গেলেন খিড়কি দুয়ার তক। যাত্রা হলো শুরু।... কবি পুরাণ, সাহিত্যের আদি উৎস সন্ধানে ব্যাপৃত হলেন। সমকালীন জীবনবোধের সাথে মিলিয়ে দিলেন। মনে হতে পারে আম্রপালি, নিপুণিকা, গালব মাধবী, ভদ্দা কুন্তলকেশা এঁরা অচেনা সুদূরের চরিত্র নয়। এঁরাই তো ঘুরে ফিরে বিচরণ করে আজকের সংসার মঞ্চে। শুধু পরিবেশ হতে পারে প্রাচীনকালের। সবসুদ্ধ নয়টি চমৎকার গল্পের সংকলন ‘কবি লিখলেন মেঘ’।

শুরুর গল্প আম্রপালী। বৈশালী নগরে আম্রবাগানে সদ্যজাত কন্যাটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিল মালি মহামানাম। কন্যা রূপে গুণে অনন্য। তারুণ্যে ঝলমলে, বিশিষ্ট। মগদের মহা পরাক্রমশালী নৃপতি বিম্বিসারের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সুন্দরীশ্রেষ্ঠা নৃত্যপটিয়সী আম্রপালীর দিকে। নৃপতির শতেক স্ত্রী, অগুণতি উপস্ত্রী। নানা ঘটনার প্যাঁচে শেষ পর্যন্ত আম্রপালীকে হতে হবে নগরবধূ। সহস্র পুরুষের কামনার নারী সে! এ সিদ্ধান্ত বজ্রপাতের অধিক। পুষ্পকুমারের সাথে তার বিবাহের দিন তারিখ ধার্য করা ছিল। নিয়তি, রাজ রোষে পুষ্পকুমারকে হত্যা করা হয়। নারীত্বের এ অবমাননাকর বিধান মানতে আম্রপালীর মনপ্রাণ ছিন্নভিন্ন। প্রহসন এ সিদ্ধান্ত না মেনে নিলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। গল্পকার লিখেছেন, ‘আমি সামান্য নারী। আমার জীবনের সকল চাওয়া পাওয়ার বিনিময়ে হলেও দেশের কল্যাণ চাই।’ এও এক কুহেলিকা, আত্মঘাতী বিলাপ যেন। নির্জন প্রাসাদে আম্রপালি দিন কাটায়। এ শর্ত আম্রপালির নিজস্ব। ঘটনা ঘটে চলেছে নগর নটীর জীবনে। বিম্বিসার তার নির্জনবাস প্রাসাদে কিছুকাল কাটিয়ে ফিরে গেছে মগদে। মনের কামনা অপূর্ণ রয়ে গেল। আম্রপালীকে নৃপতি নিজের করে পেল না। ফিরে যেতে হলো মগদে। ঘটনার জট জটিলতর ক্রমশ।

পুত্র নিজ পিতাকে হত্যা করে। অজাতশত্রুও নৃত্যগীত পটিয়সী আম্রপালীকে একান্ত নিজের পাটরানি করে লাভ করার স্বপ্ন দেখেছিল। ব্যর্থ হতে হলো তাকেও। আম্রপালী সহজলভ্য রমনী নয়। এক সৌম্য দর্শন শ্রমণ রূপময়ী আম্রপালীর মুগ্ধ চেতনা আলোকিত করে। সন্মানিত করে। হয় না প্রলুব্ধ। যে শ্রমণ তার নারীত্বে আঘাত করেনি। দৃষ্টি রেখেছে আনত। আম্রপালি কিঞ্চিত বিস্মিতও হয়তো। শক্তিমান গদ্যকারের জবানিতে, ‘আম্রপালী- যেন সুর লুপ্ত হয়ে থাকা বাদ্যযন্ত্র।... কোমল আঘাতে যে এ যন্ত্র বাজাতে হয় সে কথা কারো মনেই পড়েনি।... প্রত্যাখ্যানের এই কোমল আঘাতে আম্রপালী নামের সুরপুঞ্জটি যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে, বেজে উঠেছে অভূতপূর্ব ধুনে, ঝালায়!’

কোথায় মগদ রাজ্য, কোথায় বৈশালী আর পৌরাণিক আম্রপালী সুন্দরীশ্রেষ্ঠা- পাঠকের চেতনায় কী সুর বাজায়। সত্য সুন্দরের অভিযাত্রায় মানবিক আলোর উদ্ভাস। ভাষার যথার্থ বুননে অসামান্য বোধের আগুন আম্রপালী। সম্ভ্রম জাগানিয়া নারী।

‘বানভট্ট’ গল্পে লেখকের মনোহর ভাষাভঙ্গির মুগ্ধতা বেড়ে যায় বটে। অতলান্ত সুরের মূর্ছনায় পুরো লেখা বিধৃত। শুরুতে বানভট্ট দেখছেন রাজ অভিযাত্রা। নির্জনে। নাচের মেয়েরা চলেছে যেন চলমান পুষ্পশোভিত বাগানের চিত্রপট। শৈশব স্মৃতি তাঁকে আপ্লুত করেছে। সপ্তম শতাব্দীর শেষে শোন নদীর পাড়ে, বিন্ধ্য পর্বতের পাদদেশে, প্রীতিকূট গ্রামে বানভট্টের জন্ম। তাঁর বিত্তবৈভব, বিদ্যাযোগ ছিল। তথাপি ভট্ট উদাসী পর্যটক। মানবপ্রকৃতির বিচিত্র কুহক সন্ধানের নেশায় ছিন্নমূল। রাজবাড়ীতে নবজাতক শিশুর জন্ম উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। বানভট্ট ব্রাহ্মণ বিধায় নবজাতককে আশীর্বাদ করতে আগ্রহী। সেই সুবাদে রাজ অন্তঃপুর দর্শনেরও স্বপ্ন। আচমকা নারীকণ্ঠের ডাক। নারীটি পান বিক্রেতা। নিপুণিকা। অতীত বলে, ওই নারীটি ভট্টের জীবনে ভালোবাসার গাঢ় চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল। ভট্ট যখন উজ্জ্বয়িনীতে নাটক দলের সূত্রধর। তাঁর দলে অনায়াসে নিয়ে নেন বালবিধবা নিপুণিকাকে। নারীটি আহা মরি সুন্দরী নয় বলে ঘোষণা দিলেন গল্পকার। তবে পেলব বর্ণনায় জানা যায়, তার গাত্রবর্ণ শেফালি ফুলের বোটার সাদৃশ্য। চোখ আর ললিত আঙুললতার অনন্য সৌন্দর্য। তবে আর নিপুণিকার সৌন্দর্যে ঘাটতি কোথায়? প্রশ্ন বটে পাঠকের মনে! যা হোক কথাশিল্পী ফারুক মাহমুদ লিখেছেন সেই কাব্যিক ভাষায়, ‘নিপুণিকা আজ আনন্দিত। তার নাচ গান, অভিনয় ভালো হয়েছে।... অনেক দিনের উড়ন্ত ইচ্ছে গুরু বানভট্টকে আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিজের হৃদয়-উত্তাপটা তাকে বোঝাবে... মন বাড়িয়ে মন ছোঁয়ার আলিঙ্গন।’ বানভট্ট নিপুণিকার বেলিফুলের মালাটি হাতে নিয়ে কায়দা করে ফিরিয়ে দিলেন। কাঠফাটা হাসিতে ফেটে পড়লেন ভট্ট। নারীটি প্রত্যাখ্যানের এই অপমান সইতে নারাজ। ছয় বছর কোন সুদূরে হারিয়ে গেল নিপুণিকা। নিখোঁজ নারীটি।

বানভট্টের মুখস্ত বুলি ছিল, ‘নারীর শরীর দেবমন্দির।’ অনেক পরে গুরু জানিয়েছেন, এই মন্দিরে দিতে হয় অর্ঘ্য। আহা নারীজন্ম, পুরুষের ঘৃণ্য লালসার শিকার হয়েছে সে ঘাটে ঘাটে। দৃঢ় সংকল্পে নানা কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরও। কিছু কাদা লেগেছে বৈকি। এতকাল পরে বানভট্ট নিপুণিকার সাথে হাঁটছে। রাজবাড়ির শোভা- লোহার বিশাল কপাট। অশোক, পুন্নাগ, অরিষ্ট, শিরীষ গাছের সারি। পাহারায় সশস্ত্র রক্ষী। নিপুণিকা এরই অন্তঃপুরের কোণে বাস করে। মৃদঙ্গ, শাখের ধ্বনি। আনন্দে উৎসবের আমেজ। ‘ক্ষীবা’ বা মদ্যপায়ী মত্ত নারীরা গুলজার করে আছে। সারাটি পথ, চারপাশ। হাঁটতে হাঁটতে নিপুণিকা পৌঁছাল দেবী মন্দিরের পাশে জরাজীর্ণ কোঠায়। অন্ধকার কোঠায় বৃদ্ধ এক তান্ত্রিক সাধু। দ্রাবিড় সাধু মায়া বশীকরণের চূর্ণ ছিটায় তীর্থ যাত্রী নারীদের উপরে। বিকট দর্শন। নিপুণিকার রক্ষাকর্তা সেই তান্ত্রিক। লোকটি রাতকানা। অপ্সরারা আসবে এই বিশ্বাসে রাতভর এই পূজারি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখে ভাঙা মন্দিরে। নিপুণিকা সদ্যস্নাত। নিপুণিকা সফেদ গন্ধরাজ ফুলের মতো সাদা শাড়ি পরেছে। চন্দনের ফোঁটা কপালে। কয়লার ভিতর থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে পবিত্র আলো। এবার বুঝি অর্ঘ্য দেবার পালা। গল্পকার শুভ সমাপ্তির ইশারা উপস্থাপন করলেন। বানভট্টের ছিন্নমূল জীবনে উপেক্ষিতা পান বিক্রেতা নিপুণিকা হলো পরম আশ্রয়। জীবন বিচিত্র কুহকের বোধ। পৌরাণিক চরিত্র সহসা বহমান সময়েরও স্বাক্ষর। যে কারণে কুশলী গল্পকার অতীত বর্তমানের গভীর আত্মীয়তার সূত্রটা এক করে দিতে সক্ষম।

‘পাঁকে পড়া মানুষ’ গল্পটি ঘুণে ধরা সমাজ সংসারের দুজন নষ্ট মানুষের চিত্রপট। অপরাধ প্রবণতা বহু মানুষের চরিত্রের ভেতর ঘাপটি মেরে বাস করে। শুদ্ধ সাদা মনের বিবেকের মানুষ সমাজে হাতেগনা। অন্যায় মিথ্যাচার কপটতা নানা দুর্নীতির আশ্রয় বেশিরভাগ মানুষের স্বভাবের মধ্যে অবলীলায় মিশে থাকে। এই গল্পে দুজন দুরাচার লোভী প্রতারক মানুষের পরিণতি গল্পকার জাদুবস্তবতার মিশেলে উপস্থাপন করেছেন। চমৎকার আঁটোসাঁটো কাঠামো। বলা যায় মজবুত বেগবান রচনাশৈলী। বিত্তবান মানুষ তারা, কিন্তু পাঁকে ভরা যাপন। মুখোশগুলো গল্পকার ফারুক মাহমুদ সক্রোধে টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেলেছেন। ক্ষমতাবান আপদমস্তক দুর্নীতিস্ত মানুষগুলো উপরে ওঠার সিঁড়িগুলো অনায়াসে পেরিয়ে যায়। নীতির বালাই নেই, চাহিদারও অন্ত নেই। প্রকৃতির শিক্ষা দৈবাৎ ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ভরাডুবি ঘটে! নিজেদের অজান্তেই দ্বৈত সত্তার বিস্ফোরণ ঘটে। মগজ সুস্থির রাখা দায় হয়ে পড়ে। পাপ গিলে ফেলে অর্জিত ধন। ঘরের সুদৃশ্য বাহারী আয়নাগুলো ভেঙে চুরচুর হয়ে যায়। অসৎ মানুষটি বুঝে উঠতে পারে না। কে ভাঙে আয়না? সেকি তার বেইমান অবচেতন! আয়নাগুলো বিশ্বাসঘাতক হয়ে ওঠে। তার যাবতীয় কলঙ্ক আয়নায় জ্বলজ্বল করে। কোথায় লুকাবে মুখ? ঘড়িটি প্রিয়, পুরনো। মায়া পড়ে গেছে। সেও এক মহা বেঈমান। বিশাল অঙ্কের ঋণখেলাপী মানুষটিকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। নিশুতি রাতে ঘড়িটি বেজে ওঠে। টিক টিক নয়, বরং ঠিক ঠিক আওয়াজ তোলে। নিষ্ঠুর বাক্য সামান্য ঘড়িটির, ‘এই যে সিঁড়ি লিফট রেখে মই বেয়ে এত উপরে উঠেছেন, কেউ মইটা সরিয়ে নিলে নামবেন কী করে?’ ...খেলাপী বলে, ‘লাফিয়ে পড়ব’। ঘড়িটা হাসে, ‘এত উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়লে বাঁচবেন’! আরেক দোসরও পর্যুদস্ত। হাসপাতালের কেলেঙ্কারি বিষয়ে। অভিনব ভাষাভঙ্গিতে সমাজচিত্রটি হুবহু এঁকেছেন। এখানেই

লেখকের সাফল্য। আর সমাপ্তিতে পাই বাথরুমের আয়না কথা।

এই বইটির আরও উল্লেখযোগ্য দুটি গল্প বিরহবার্ষিকী, বৃষ্টি শোনার রাত। বিচিত্র স্বাদের নয়টি গল্পের মলাটবন্দী গ্রন্থ ‘কবি লিখেছেন মেঘ’। ভাষার যথার্থ বুননে পারঙ্গম গল্পকার ফারুক মাহমুদ। উপমায়, যথার্থ শব্দের নিপুণ বুননকৌশলে শিল্পগুণান্বিত গ্রন্থ এটি। প্রয়োজনে ভাষায় বিবিধ অলংকারও সংযোজন ঘটেছে। বিশেষত পৌরাণিক চরিত্রগুলোর চিত্রায়ণে। রূপক, কুহক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বর্তমান গল্পের দাবীতে। প্রচ্ছদ বাঁধাই চমৎকার। প্রকাশক বেঙ্গল পাবলিকেশনস, মূল্য ৩৫০ টাকা ধার্য করা আছে। জানুয়ারি, ২০২৪ প্রকাশকাল।

শেষে একটি মৃদু অনুযোগ, ছাপাখানার অদৃশ্য ভূত এই গুরুত্বপূর্ণ বইটিতে কয়েকটি বানান ভুলের চিহ্ন রেখে গেছে! গদ্যের ভুবনে কবি ফারুক মাহমুদকে জানাই স্বাগত। জানাই অভিনন্দন।

ছবি

সিলভিয়া প্লাথের মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা ও আত্মবিনাশ

ছবি

সমসাময়িক মার্কিনি ‘সহস্রাব্দের কণ্ঠস্বর’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

অন্য নিরিখে দেখা

ছবি

হেলাল হাফিজের চলে যাওয়া

ছবি

হেলাল হাফিজের কবিতা

ছবি

কেন এত পাঠকপ্রিয় হেলাল হাফিজ

ছবি

নারী শিক্ষাবিদ : বেগম রোকেয়া

ছবি

বাসার তাসাউফ

ছবি

‘জগদ্দল’-এর শক্তি ও সমরেশ বসু

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

রুবেন দারিও-র কবিতা

‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’

ছবি

কবিতা পড়া, কবিতা লেখা

ছবি

‘ধুলোয় সব মলিন’, পাঠকের কথা

ছবি

মহত্ত্বর কবি সিকদার আমিনুল হক

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

কয়েকটি অনুগল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

যেভাবে লেখা হলো ‘শিকিবু’

ছবি

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলোর কবিতা

ছবি

সিকদার আমিনুল হকের গদ্য

ছবি

সিকদার আমিনুল হককে লেখা অগ্রজ ও খ্যাতিমান লেখক-সম্পাদকের চিঠি

ছবি

ফিওদর দস্তয়েভস্কি: রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

একজন গফুর মল্লিক

ছবি

অগ্রবীজের ‘অনুবাদ সাহিত্য’ সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

গোপন কথা

ছবি

র’নবীর টোকাই-কথন

ছবি

শিল্পচর্চায় তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি ইনোভেটিভ

ছবি

শামসুর রাহমানের কবিতা বৈভব ও বহুমাত্রিকতা

ছবি

উইলিয়াম রাদিচের অধ্যয়নে অনন্য রবীন্দ্রনাথ

দিলারা হাফিজের কবিতা

ছবি

অবরুদ্ধ বর্ণমালার শৃঙ্খলমুক্তি

ছবি

আহমদুল কবির স্মরণে

ছবি

আহমদুল কবিরের সদাশয়তা

tab

সাময়িকী

শক্তিমান কবির কলমে গল্প

দিলারা মেসবাহ

বৃহস্পতিবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৪

কবিতা যদি ধ্যান জ্ঞান হয় কবির, আরাধ্য সাধন ভজন। তথাপি তিনি কি গদ্য রচনায় মনোযোগী হতে পারেন না! কেন নয়? কবি ফারুক মাহমুদের ‘কবি লিখেছেন মেঘ’ গল্প সংকলনটি তারই সমুজ্জ্বল স্বাক্ষর। শোভন হলুদাভ মলাটে নয়টি ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের গল্পের চমৎকার আয়োজন। সত্তরের দশকের বিশিষ্ট কবি গদ্য রচনায়ও সার্থক। ¯্রােতস্বিনী ভাষাভঙ্গির চঞ্চল ঢেউ। কবির গল্প পাঠ যেন বিচিত্র অনুভব। প্রাচীন সাহিত্যের ঐতিহ্যের নির্যাসে ঋদ্ধ হওয়া। সংস্কৃত সাহিত্যের অমর কবি কালিদাস, বানভট্টের কালজয়ী রচনার মূল সম্ভারের কিছু আলো ছটা অন্য বিভায়, সমকালীন জীবনবোধের কথকতায় চিত্রিত করেছেন গল্পকার। মানবাত্মার পরম মুক্তির অন্বেষণ আদি অকৃত্রিম। সেই সুখ দুঃখের হাহাস্বর, ভালোবাসা, প্রতারণার সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কথাগুচ্ছ সিংহভাগ গল্পে। পৌরাণিক চরিত্রগুলো চেনা মনে হয়, আপন মনে হয়। মানবিক যাপনের চিত্র শুধু সময় থমকে আছে অতীতের প্রেক্ষাপটে। হাসি কান্না ভালোবাসা প্রতারণার মূল সুর যেন মিলে গেছে অবলীলায়। আরও আছে সমকালীন সমাজচিত্র- মুখোশ, প্রহসন, প্রেম প্রকৃতি। কখনও যাদুবাস্তবতার মিশেলে আলো ছায়ার অন্য রকম উপস্থাপনার গল্পও সমৃদ্ধ করেছে এই গ্রন্থটি। গদ্য রচনার বিবিধ শাখায় রয়েছে পর্যাপ্ত ময়দান। একজন সুধন্য কবি গল্পের সম্ভাবনা টের পেলেন। জীবনবোধের আপাত অবরুদ্ধ কপাট খোলার শব্দে সহসা সচকিত হলেন, আনন্দিত হলেন। সমাজ সংসারের নানা কাহিনি খুঁজতে রসদ জোগাতে সদর অন্দর পেরিয়ে পৌঁছে গেলেন খিড়কি দুয়ার তক। যাত্রা হলো শুরু।... কবি পুরাণ, সাহিত্যের আদি উৎস সন্ধানে ব্যাপৃত হলেন। সমকালীন জীবনবোধের সাথে মিলিয়ে দিলেন। মনে হতে পারে আম্রপালি, নিপুণিকা, গালব মাধবী, ভদ্দা কুন্তলকেশা এঁরা অচেনা সুদূরের চরিত্র নয়। এঁরাই তো ঘুরে ফিরে বিচরণ করে আজকের সংসার মঞ্চে। শুধু পরিবেশ হতে পারে প্রাচীনকালের। সবসুদ্ধ নয়টি চমৎকার গল্পের সংকলন ‘কবি লিখলেন মেঘ’।

শুরুর গল্প আম্রপালী। বৈশালী নগরে আম্রবাগানে সদ্যজাত কন্যাটিকে কুড়িয়ে পেয়েছিল মালি মহামানাম। কন্যা রূপে গুণে অনন্য। তারুণ্যে ঝলমলে, বিশিষ্ট। মগদের মহা পরাক্রমশালী নৃপতি বিম্বিসারের লোলুপ দৃষ্টি পড়ে সুন্দরীশ্রেষ্ঠা নৃত্যপটিয়সী আম্রপালীর দিকে। নৃপতির শতেক স্ত্রী, অগুণতি উপস্ত্রী। নানা ঘটনার প্যাঁচে শেষ পর্যন্ত আম্রপালীকে হতে হবে নগরবধূ। সহস্র পুরুষের কামনার নারী সে! এ সিদ্ধান্ত বজ্রপাতের অধিক। পুষ্পকুমারের সাথে তার বিবাহের দিন তারিখ ধার্য করা ছিল। নিয়তি, রাজ রোষে পুষ্পকুমারকে হত্যা করা হয়। নারীত্বের এ অবমাননাকর বিধান মানতে আম্রপালীর মনপ্রাণ ছিন্নভিন্ন। প্রহসন এ সিদ্ধান্ত না মেনে নিলে দেশে অরাজকতা সৃষ্টি হবে। গল্পকার লিখেছেন, ‘আমি সামান্য নারী। আমার জীবনের সকল চাওয়া পাওয়ার বিনিময়ে হলেও দেশের কল্যাণ চাই।’ এও এক কুহেলিকা, আত্মঘাতী বিলাপ যেন। নির্জন প্রাসাদে আম্রপালি দিন কাটায়। এ শর্ত আম্রপালির নিজস্ব। ঘটনা ঘটে চলেছে নগর নটীর জীবনে। বিম্বিসার তার নির্জনবাস প্রাসাদে কিছুকাল কাটিয়ে ফিরে গেছে মগদে। মনের কামনা অপূর্ণ রয়ে গেল। আম্রপালীকে নৃপতি নিজের করে পেল না। ফিরে যেতে হলো মগদে। ঘটনার জট জটিলতর ক্রমশ।

পুত্র নিজ পিতাকে হত্যা করে। অজাতশত্রুও নৃত্যগীত পটিয়সী আম্রপালীকে একান্ত নিজের পাটরানি করে লাভ করার স্বপ্ন দেখেছিল। ব্যর্থ হতে হলো তাকেও। আম্রপালী সহজলভ্য রমনী নয়। এক সৌম্য দর্শন শ্রমণ রূপময়ী আম্রপালীর মুগ্ধ চেতনা আলোকিত করে। সন্মানিত করে। হয় না প্রলুব্ধ। যে শ্রমণ তার নারীত্বে আঘাত করেনি। দৃষ্টি রেখেছে আনত। আম্রপালি কিঞ্চিত বিস্মিতও হয়তো। শক্তিমান গদ্যকারের জবানিতে, ‘আম্রপালী- যেন সুর লুপ্ত হয়ে থাকা বাদ্যযন্ত্র।... কোমল আঘাতে যে এ যন্ত্র বাজাতে হয় সে কথা কারো মনেই পড়েনি।... প্রত্যাখ্যানের এই কোমল আঘাতে আম্রপালী নামের সুরপুঞ্জটি যেন নতুন প্রাণ পেয়েছে, বেজে উঠেছে অভূতপূর্ব ধুনে, ঝালায়!’

কোথায় মগদ রাজ্য, কোথায় বৈশালী আর পৌরাণিক আম্রপালী সুন্দরীশ্রেষ্ঠা- পাঠকের চেতনায় কী সুর বাজায়। সত্য সুন্দরের অভিযাত্রায় মানবিক আলোর উদ্ভাস। ভাষার যথার্থ বুননে অসামান্য বোধের আগুন আম্রপালী। সম্ভ্রম জাগানিয়া নারী।

‘বানভট্ট’ গল্পে লেখকের মনোহর ভাষাভঙ্গির মুগ্ধতা বেড়ে যায় বটে। অতলান্ত সুরের মূর্ছনায় পুরো লেখা বিধৃত। শুরুতে বানভট্ট দেখছেন রাজ অভিযাত্রা। নির্জনে। নাচের মেয়েরা চলেছে যেন চলমান পুষ্পশোভিত বাগানের চিত্রপট। শৈশব স্মৃতি তাঁকে আপ্লুত করেছে। সপ্তম শতাব্দীর শেষে শোন নদীর পাড়ে, বিন্ধ্য পর্বতের পাদদেশে, প্রীতিকূট গ্রামে বানভট্টের জন্ম। তাঁর বিত্তবৈভব, বিদ্যাযোগ ছিল। তথাপি ভট্ট উদাসী পর্যটক। মানবপ্রকৃতির বিচিত্র কুহক সন্ধানের নেশায় ছিন্নমূল। রাজবাড়ীতে নবজাতক শিশুর জন্ম উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব। বানভট্ট ব্রাহ্মণ বিধায় নবজাতককে আশীর্বাদ করতে আগ্রহী। সেই সুবাদে রাজ অন্তঃপুর দর্শনেরও স্বপ্ন। আচমকা নারীকণ্ঠের ডাক। নারীটি পান বিক্রেতা। নিপুণিকা। অতীত বলে, ওই নারীটি ভট্টের জীবনে ভালোবাসার গাঢ় চিহ্ন এঁকে দিয়েছিল। ভট্ট যখন উজ্জ্বয়িনীতে নাটক দলের সূত্রধর। তাঁর দলে অনায়াসে নিয়ে নেন বালবিধবা নিপুণিকাকে। নারীটি আহা মরি সুন্দরী নয় বলে ঘোষণা দিলেন গল্পকার। তবে পেলব বর্ণনায় জানা যায়, তার গাত্রবর্ণ শেফালি ফুলের বোটার সাদৃশ্য। চোখ আর ললিত আঙুললতার অনন্য সৌন্দর্য। তবে আর নিপুণিকার সৌন্দর্যে ঘাটতি কোথায়? প্রশ্ন বটে পাঠকের মনে! যা হোক কথাশিল্পী ফারুক মাহমুদ লিখেছেন সেই কাব্যিক ভাষায়, ‘নিপুণিকা আজ আনন্দিত। তার নাচ গান, অভিনয় ভালো হয়েছে।... অনেক দিনের উড়ন্ত ইচ্ছে গুরু বানভট্টকে আলিঙ্গনে জড়িয়ে নিজের হৃদয়-উত্তাপটা তাকে বোঝাবে... মন বাড়িয়ে মন ছোঁয়ার আলিঙ্গন।’ বানভট্ট নিপুণিকার বেলিফুলের মালাটি হাতে নিয়ে কায়দা করে ফিরিয়ে দিলেন। কাঠফাটা হাসিতে ফেটে পড়লেন ভট্ট। নারীটি প্রত্যাখ্যানের এই অপমান সইতে নারাজ। ছয় বছর কোন সুদূরে হারিয়ে গেল নিপুণিকা। নিখোঁজ নারীটি।

বানভট্টের মুখস্ত বুলি ছিল, ‘নারীর শরীর দেবমন্দির।’ অনেক পরে গুরু জানিয়েছেন, এই মন্দিরে দিতে হয় অর্ঘ্য। আহা নারীজন্ম, পুরুষের ঘৃণ্য লালসার শিকার হয়েছে সে ঘাটে ঘাটে। দৃঢ় সংকল্পে নানা কুপ্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের পরও। কিছু কাদা লেগেছে বৈকি। এতকাল পরে বানভট্ট নিপুণিকার সাথে হাঁটছে। রাজবাড়ির শোভা- লোহার বিশাল কপাট। অশোক, পুন্নাগ, অরিষ্ট, শিরীষ গাছের সারি। পাহারায় সশস্ত্র রক্ষী। নিপুণিকা এরই অন্তঃপুরের কোণে বাস করে। মৃদঙ্গ, শাখের ধ্বনি। আনন্দে উৎসবের আমেজ। ‘ক্ষীবা’ বা মদ্যপায়ী মত্ত নারীরা গুলজার করে আছে। সারাটি পথ, চারপাশ। হাঁটতে হাঁটতে নিপুণিকা পৌঁছাল দেবী মন্দিরের পাশে জরাজীর্ণ কোঠায়। অন্ধকার কোঠায় বৃদ্ধ এক তান্ত্রিক সাধু। দ্রাবিড় সাধু মায়া বশীকরণের চূর্ণ ছিটায় তীর্থ যাত্রী নারীদের উপরে। বিকট দর্শন। নিপুণিকার রক্ষাকর্তা সেই তান্ত্রিক। লোকটি রাতকানা। অপ্সরারা আসবে এই বিশ্বাসে রাতভর এই পূজারি ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখে ভাঙা মন্দিরে। নিপুণিকা সদ্যস্নাত। নিপুণিকা সফেদ গন্ধরাজ ফুলের মতো সাদা শাড়ি পরেছে। চন্দনের ফোঁটা কপালে। কয়লার ভিতর থেকে ঠিকরে বের হচ্ছে পবিত্র আলো। এবার বুঝি অর্ঘ্য দেবার পালা। গল্পকার শুভ সমাপ্তির ইশারা উপস্থাপন করলেন। বানভট্টের ছিন্নমূল জীবনে উপেক্ষিতা পান বিক্রেতা নিপুণিকা হলো পরম আশ্রয়। জীবন বিচিত্র কুহকের বোধ। পৌরাণিক চরিত্র সহসা বহমান সময়েরও স্বাক্ষর। যে কারণে কুশলী গল্পকার অতীত বর্তমানের গভীর আত্মীয়তার সূত্রটা এক করে দিতে সক্ষম।

‘পাঁকে পড়া মানুষ’ গল্পটি ঘুণে ধরা সমাজ সংসারের দুজন নষ্ট মানুষের চিত্রপট। অপরাধ প্রবণতা বহু মানুষের চরিত্রের ভেতর ঘাপটি মেরে বাস করে। শুদ্ধ সাদা মনের বিবেকের মানুষ সমাজে হাতেগনা। অন্যায় মিথ্যাচার কপটতা নানা দুর্নীতির আশ্রয় বেশিরভাগ মানুষের স্বভাবের মধ্যে অবলীলায় মিশে থাকে। এই গল্পে দুজন দুরাচার লোভী প্রতারক মানুষের পরিণতি গল্পকার জাদুবস্তবতার মিশেলে উপস্থাপন করেছেন। চমৎকার আঁটোসাঁটো কাঠামো। বলা যায় মজবুত বেগবান রচনাশৈলী। বিত্তবান মানুষ তারা, কিন্তু পাঁকে ভরা যাপন। মুখোশগুলো গল্পকার ফারুক মাহমুদ সক্রোধে টেনে হিঁচড়ে খুলে ফেলেছেন। ক্ষমতাবান আপদমস্তক দুর্নীতিস্ত মানুষগুলো উপরে ওঠার সিঁড়িগুলো অনায়াসে পেরিয়ে যায়। নীতির বালাই নেই, চাহিদারও অন্ত নেই। প্রকৃতির শিক্ষা দৈবাৎ ভয়ংকর হয়ে ওঠে। ভরাডুবি ঘটে! নিজেদের অজান্তেই দ্বৈত সত্তার বিস্ফোরণ ঘটে। মগজ সুস্থির রাখা দায় হয়ে পড়ে। পাপ গিলে ফেলে অর্জিত ধন। ঘরের সুদৃশ্য বাহারী আয়নাগুলো ভেঙে চুরচুর হয়ে যায়। অসৎ মানুষটি বুঝে উঠতে পারে না। কে ভাঙে আয়না? সেকি তার বেইমান অবচেতন! আয়নাগুলো বিশ্বাসঘাতক হয়ে ওঠে। তার যাবতীয় কলঙ্ক আয়নায় জ্বলজ্বল করে। কোথায় লুকাবে মুখ? ঘড়িটি প্রিয়, পুরনো। মায়া পড়ে গেছে। সেও এক মহা বেঈমান। বিশাল অঙ্কের ঋণখেলাপী মানুষটিকে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। নিশুতি রাতে ঘড়িটি বেজে ওঠে। টিক টিক নয়, বরং ঠিক ঠিক আওয়াজ তোলে। নিষ্ঠুর বাক্য সামান্য ঘড়িটির, ‘এই যে সিঁড়ি লিফট রেখে মই বেয়ে এত উপরে উঠেছেন, কেউ মইটা সরিয়ে নিলে নামবেন কী করে?’ ...খেলাপী বলে, ‘লাফিয়ে পড়ব’। ঘড়িটা হাসে, ‘এত উঁচু থেকে লাফিয়ে পড়লে বাঁচবেন’! আরেক দোসরও পর্যুদস্ত। হাসপাতালের কেলেঙ্কারি বিষয়ে। অভিনব ভাষাভঙ্গিতে সমাজচিত্রটি হুবহু এঁকেছেন। এখানেই

লেখকের সাফল্য। আর সমাপ্তিতে পাই বাথরুমের আয়না কথা।

এই বইটির আরও উল্লেখযোগ্য দুটি গল্প বিরহবার্ষিকী, বৃষ্টি শোনার রাত। বিচিত্র স্বাদের নয়টি গল্পের মলাটবন্দী গ্রন্থ ‘কবি লিখেছেন মেঘ’। ভাষার যথার্থ বুননে পারঙ্গম গল্পকার ফারুক মাহমুদ। উপমায়, যথার্থ শব্দের নিপুণ বুননকৌশলে শিল্পগুণান্বিত গ্রন্থ এটি। প্রয়োজনে ভাষায় বিবিধ অলংকারও সংযোজন ঘটেছে। বিশেষত পৌরাণিক চরিত্রগুলোর চিত্রায়ণে। রূপক, কুহক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বর্তমান গল্পের দাবীতে। প্রচ্ছদ বাঁধাই চমৎকার। প্রকাশক বেঙ্গল পাবলিকেশনস, মূল্য ৩৫০ টাকা ধার্য করা আছে। জানুয়ারি, ২০২৪ প্রকাশকাল।

শেষে একটি মৃদু অনুযোগ, ছাপাখানার অদৃশ্য ভূত এই গুরুত্বপূর্ণ বইটিতে কয়েকটি বানান ভুলের চিহ্ন রেখে গেছে! গদ্যের ভুবনে কবি ফারুক মাহমুদকে জানাই স্বাগত। জানাই অভিনন্দন।

back to top