alt

সাময়িকী

মার্কিন চলচ্চিত্র জগতের প্রাণকেন্দ্র লস এঞ্জেলেস

লিটু আনাম

: বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এর আগেও দুইবার লস এঞ্জেলেস এসেছি। প্রতিবারই কোনো না কোনো কাজে আসা হয়েছে। কাজের ফাঁকে কিছু কিছু জায়গা ঘুরে দেখলেও এবারই প্রথম ঘোরার উদ্দেশ্যে আসা। তিন দিনের সফরে কতটুকু আবিষ্কার করতে পারবো জানি না তবে, যতটুকু কভার করা যায়। আমরা যাত্রা শুরু করি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে গাড়ি ড্রাইভ করে। সকাল ১০টার মধ্যে নাস্তা শেষ করে গাড়ি স্টার্ট দেই। প্রায় ৫০০ মাইল যেতে হবে। অবাক করা বিষয় হলো, প্রায় পুরোটা পথ যেতে হবে গিরিপথ বেয়ে মরুভূমির মাঝ দিয়ে। আই ৪০ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশত মাইল রাস্তা ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত মোজাভে মরুভূমির কোল ঘেঁষে ছুটে চলেছে। দুচোখ যতদূর যায়, সামনে-পেছনে, ডানে-বামে শুধুই ধু ধু মরুভূমি। কোথাও কোনো জনবসতি নেই। সামনে যদি কোনো গাড়ি না থাকে তাহলে চোখে পড়ে মরিচীকা! দূরে সারি সারি পাহাড়। তার মাঝ বরাবর হাইওয়ে দিয়ে আমরা ছুটে চলেছি।

আমার পাশের সিটে বসে থাকা বাংলাদেশের ডেবনিয়ার গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব আইয়ুব খান হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করলেন, লিটু আনাম সাহেব, আপনি কখনও মক্কা থেকে মদিনা ড্রাইভ করে গিয়েছেন?

আমি জবাব দিলাম, না।

তিনি তখন বললেন- এই মোজাভে মরুভূমি আর মক্কা ও মদিনার মাঝে যে মরুভূমি, সেটা দেখতে হুবহু একই রকম।

পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ জায়গা জুড়ে আছে মরুভূমি, যেখানে সাধারণত বছরে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সে.মি. বা তার চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত, তুষারপাতের পরিমাণ বাষ্পীভবনের চেয়ে কম হয়। মরুভূমি বলতে শুধু বালুর সাগরকেই বুঝায় না; পাথর ও পাহাড় নিয়েও মরুভূমির সৃষ্টি হয়। গরম, শুষ্ক পাথুরে আর বালুময় মরুভূমি গাছপালা জন্মানোর জন্য সহায়ক নয়। মধ্য অনুর্বর মরুভূমিতে কিছু গাছ, গুল্ম, ঘাস ও ঝোপঝাড় জন্মায়। সেখানকার গাছের বীজগুলো বছরের পর বছর বালুতে ভালো অবস্থায় থাকে। বৃষ্টির পানি পেলে এসব বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে; মূল অনেক গভীরে পৌঁছায়। গাছগুলো কণ্টকময় হওয়ায়, একটি কারণ হিসেবে বলা যায় এগুলো প্রাণিদের হাত থেকে সঞ্চিত পানি ও নিজেদের রক্ষা করার সুরক্ষাঅস্ত্র। পাতাগুলো মোমের মতো প্রলেপবিশিষ্ট হয়- যা পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। মরুভূমির প্রাণি ও পোকামাকড়গুলো আকারে ছোট হয়, যা তাদেরকে দিনে লুকিয়ে থাকতে ও রাতের ঠা-া আবহাওয়ায় বের হতে সহায়তা করে। আমেরিকার মরুভূমি হচ্ছে শুষ্ক পাথুরে মরুভূমি। মরুজ উদ্ভিদের গঠনগত বৈশিষ্ট্য (মরফোলজি) এবং মৌলিক রাসায়নিক প্রক্রিয়া (ফিজিওলজি)-র প্রায় সবই হলো মূলত জল সংরক্ষণের জন্য বিভিন্নভাবে অভিযোজিত হওয়া, এবং শুকনো মৌসুমের জন্য প্রচুর পরিমাণে জল সঞ্চয় করা। কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ দীর্ঘমেয়াদী প্রচ- শুষ্কতায় বা তাদের কলাসমষ্টির বিশুষ্কীকরণ-এও বেঁচে থাকে। সেসময়ে তারা তাদের বিপাকীয় কার্যাবলিকে কার্যত বন্ধ করে দেয়। উদ্ভিদের এই রকম গঠনগত ও শরীরবৃত্তীয় অভিযোজনকে বলা হয় জেরোমরফিক। ক্যাকটাসের মতো মরুজ উদ্ভিদ, মাটির গভীরে তাদের শিকড় প্রসারিত করে জল সঞ্চয় করার ক্ষমতা রাখে এবং শুষ্ক পরিবেশে তা সামাল দেয়। কাঁটাযুক্ত পাতাগুলোতে মোমের মতো আস্তরণ থাকায়, জল এবং আর্দ্রতা হ্রাস ও রোধ করে। এমনকি, তাদের মাংসল কা- জল সঞ্চয়ও করতে পারে।

আমাদের জন্য লস এঞ্জেলেসের ডাউনটাউনে কোনার্ড হোটেল বুক করাই ছিল। হোটেলে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমাদের সমগ্র ট্যুরের পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন আইয়ুব খানের স্ত্রী নায়ারা ভাবি। ভাবির পছন্দের প্রশংসা না করলেই নয়। কোথাও কোনো কমতি রাখেননি তিনি। তার সবসময় সেরাটাই চাই। সবই ঠিক ছিলো কিন্তু, আমি একটু গ-গোল পাকিয়ে ফেললাম। রাতের খাবার খেতে বাঙালি এলাকায় একটি বাঙালি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম। অনেকদিন হয়েছে দেশি খাবার খাই না। গুগলে সুন্দর সুন্দর খাবারের ছবি দেখে গেলেও যেয়ে খুবই হতাশ হলাম। খাবারের মান, পরিবেশ, পরিবেশনা এতো জঘন্য হতে পারে সেটা আমার ধারণায় ছিলো না। যাই হোক, পরদিন আমাদের প্রথম পরিকল্পনা হলো ইউনিভার্সাল স্টুডিও।

দেশের সর্বাধিক বিখ্যাত পার্ক ইউনিভার্সাল স্টুডিওজ হলিউডে ব্যয় না করলে কী হয়? আমাদের সাথে একজন চার বছর এবং একজন পনের বছর বয়সী বাচ্চা আছে। কী নেই এখানে! হলিউডের পসরা সাজিয়ে রাখা প্রতি পদক্ষেপে। রয়েছে সর্বাধিক আধুনিক ক্যারোসেল, রোলার কোস্টার, হাসির এবং ভয় পাওয়ার জায়গা এবং সেই সাথে সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স। এখানে রয়েছে আপনার প্রিয় সিনেমা এবং টিভি শোগুলোর পূর্ণ-স্কেল দৃশ্যাবলি দেখার সুযোগ। আপনি দেখতে পাবেন কোথায় ‘চেলস্টি’, ‘হ্যারি পটার’, ‘টাইটানিক’ এবং অন্যান্য চিত্রায়িত হয়েছে। সবকিছু দেখতে এতটাই বাস্তব যে, এটি বাস্তব নয় তা বিশ্বাস করা কষ্টকর। স্টুডিও ট্যুর ট্রামে চড়ার সময় আউটডোর দৃশ্যাবলি দেখে মন জুরিয়ে গেলো। ইউনিভার্সাল পিকচার্সের বিখ্যাত সকল সিনেমার শুটিং কিংবা বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। আমি চলে গেলাম আমার প্রিয় ওয়াকার্সদের সাথে দেখা করতে। বলতে চাচ্ছি আমার প্রিয় টিভি সিরিজ ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’-এর কথা। প্রিয় চরিত্র নিগেন আর ড্যারল এর প্রতিটি সংলাপ ও স্টাইল দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। ইউনিভার্সাল স্টুডিও শুধু শিশু নয়, নারী-পুরুষ, জোয়ান-বৃদ্ধ, সকলের জন্য রয়েছে চিত্তবিনোদনের মহা আয়োজন।

আমাদের দ্বিতীয় দিন বাচ্চাদের জন্য নির্ধারিত ছিলো। বুঝতেই পারছেন কোথায় যাবো আজ? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। আজ যাচ্ছি ডিজনিল্যান্ড। ডিজনি সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা সবাই ডিজনির মুভি দেখে শৈশব পার করেছি। আজ চোখের সামনে দেখছি সকল আয়োজন। ফিরে গেলাম সেই শৈশবে। প্রতি বছর প্রায় কয়েক কোটি মানুষের পা পরে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় থিম পার্ক ডিজনি ওয়ার্ল্ডে। ছোটবেলায় যাদের দেখে বড় হওয়া, সেসব কাল্পনিক চরিত্রদের একসঙ্গে পাওয়ার একমাত্র স্থান ডিজনিওয়ার্ল্ড। ছোট-বড় সব বয়সীদের জন্য স্বর্গরাজ্য এই থিমপার্ক। যেখানে মিকি মাউস, মিনি মাউস, স্নো হোয়াইট, বিউটি এন্ড দ্য বিস্ট, সিনড্রেলা, মোয়ানা, এরিয়েলসহ ডিজনির সব জনপ্রিয় চরিত্র আপনার সামনে থাকবে। ডোনাল্ড ডাক, গুফি, এলসাও এমন ভাবে মাতিয়ে রাখবে, যেন সবাই আপনার বহুদিনের পরিচিত বন্ধু! ডিজনি ওয়ার্ল্ডের বড় আকর্ষণ হচ্ছে ‘ম্যাজিক কিংডম’। আর ডিজনিল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণ হলো ‘টয় স্টোরি ল্যান্ড’। অনেকের মতে, ডিজনিতে একদিন থেকে মন ভরে না। তাদের কথা ও একই সাথে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা মাথায় রেখেই ডিজনিতে রয়েছে বিলাসবহুল রিসোর্ট ও ভিলা। এছাড়া বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট ও শপিং সেন্টারও রয়েছে ডিজনির স্বপ্নের পৃথিবীতে।

তৃতীয় দিন আজ। আর আজই শেষ দিন। কাল সকালে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে উড়াল দিবো। আজ তাই পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশন দেওয়ার মতো কিছু পরিকল্পনা আছে আমাদের। সকালে নাস্তা শেষ করে চড়ে বসলাম ছাদ খোলা বাসে। আমাদের ঘুরিয়ে দেখানো হলো হলিউড এবং লস এঞ্জেলেসের সমগ্র এলাকা। হলিউড ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস এঞ্জেলেস শহরের একটি এলাকা। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র জগতের প্রাণকেন্দ্র। ১৯০০ সালের শুরুর দিকে বর্তমানের স্বপ্নের হলিউডে বাস করতো মাত্র শ’খানেক লোক। পুরো হলিউড জুড়ে মোটে দুটি মাত্র মার্কেট। কিছু কিনতে হলে এই দুই মার্কেটের বাইরে কোথাও দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগও নেই। অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে একটি পোস্ট অফিস ও একটি হোটেল। তাও যা কিনা সেই সময়ে নির্মাণাধীন। সত্যি কথা হলো, প্রায় একশ বছর আগে হলিউডের অবস্থা এরকম শোচনীয়ই ছিলো। সেখান থেকে মাত্র দুই দশকের মধ্যে গড়ে ওঠে আজকের আধুনিক হলিউড। সেই সময়ে হলিউডের কাছাকাছি আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো লস এঞ্জেলেসে। সাত মাইলের একটি রাস্তা এবং বিশালাকার কমলার বাগান এই দুটি স্থানকে আলাদা করে রেখেছিলো। কিন্তু, মাত্র দুই দশকের মধ্যেই হলিউডও লস এঞ্জেলেসের মতো করে হয়ে ওঠে আরাধ্য জায়গা এবং সিনেমা জগতের আঁতুড়ঘর। হলিউডের এই আচমকা উন্নতির পেছনে দুটি ফ্যাক্টর কাজ করেছিলো। প্রথমত, চলচ্চিত্র শিল্পের কলাকুশলীদের পশ্চিমে তাঁবু গাড়ার ইচ্ছা এবং দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত অবস্থা। প্রথম স্থাপত্যশৈলী হিসেবে হলিউডে তৈরি হয় নির্মাণাধীন সেই হোটেলটি। সম্পূর্ণ কাঠের প্রাসাদের মতো হোটেলটি চালু হয় ১৯০২ সাল থেকে। এর ঠিক দুই বছর পর যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ১৯০৪ সালে যোগাযোগের সুবিধার্থে তৈরি করা হয় প্রসপেক্ট এভিনিউ, যেটি পরে পরিবর্তিত হলিউডে বুলভার্ড নামে পরিচিতি লাভ করে। ততদিনে সিনেমা তৈরির কলাকুশলীরা হলিউডের ওপর আকৃষ্ট হতে শুরু করেন। পূর্ব থেকে সরে এসে পশ্চিমের হলিউডে তাঁবু গাড়া শুরু করেন অনেকেই। এর প্রধান কারণ ছিলো তৎকালীন সময়ে অন্যান্য জায়গার তুলনায় হলিউডে কর ছিলো খুবই সামান্য। পাশাপাশি কর্মজীবী মানুষ পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং বাসস্থানের জন্যও যথার্থ ছিলো জায়গাটি। ১৯১০ সালে ডিডব্লিউ গ্রিফিথ তাঁর মুভি ‘ইন ওল্ড ক্যালিফোর্নিয়া’-এর সেট ঠিক করেন হলিউডে। এটিই হলিউডে বানানো সর্বপ্রথম সিনেমা। এর ৪ বছর পর সেসিল বি ডেমাইল তাঁর মুভি তৈরির যাত্রা শুরু করেন হলিউডেই; ‘দ্য স্কোয়াও ম্যান’ মুভি দিয়ে। হলিউডে প্রবেশের আগে সিনেমা তৈরির প্রধান স্থান ছিলো নিউ জার্সি। কিন্তু, সেই সময় থমাস এডিসন মোশন পিকচার থেকেই প্রযোজনা করা হতো সিংহভাগ ছবি। অনেকটা মনোপলি ব্যবসা ছিলো তাদের। এই প্রযোজনা সংস্থার কড়াকড়ি নিয়মে স্বস্তি পেতেন না পরিচালকেরা। তাই সিনেমা স্টুডিও ও চলচ্চিত্র নির্মাতারাও আস্তে আস্তে নিউ জার্সি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। পাড়ি জমান হলিউডে। ধীরে ধীরে হলিউড হয়ে ওঠে আধুনিক আমেরিকান সিনেমা তৈরির আঁতুড়ঘর।

বাস থেকে নেমে আমরা গেলাম হলিউড ভিউ পয়েন্টে। আমরা বিভিন্ন সিনেমায় দেখি মাউন্ট লী পর্বতের গা ঘেঁষে লেখা বিশাল আকৃতির ‘HOLLYWOOD’। এটিই সেই জায়গা। সামনে দাড়িয়ে ছবি তুললাম আমরা। এখানে করনীয় এটুকুই। সন্ধ্যা হতে চললো। তাই, আমরা ছুটে চললাম সান্টা মনিকার দিকে। সান্টা মনিকা (স্পেনীয় ‘সেন্টমনিকা’) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিম লস এঞ্জেলেস কাউন্টির একটি সৈকত ফ্রন্ট শহর। সান্টা মনিকা উপসাগর বরাবর অবস্থিত, এটি লস এঞ্জেলেস শহরের বিভিন্ন মহল্লার পাঁচ পাশের সীমানা: উত্তরে প্যাসিফিক প্যালিসেডস, উত্তর-পূর্বের ব্রেন্টউড, পূর্ব-পশ্চিমে লস এঞ্জেলেস, দক্ষিণ-পূর্বে মার ভিস্তা এবং দক্ষিণে ভেনিস। ২০১০ সালের মার্কিন আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিলো ৮৯,৭৩৬ জন। অনুকূল জলবায়ু এবং লস এঞ্জেলেসের ঘনিষ্ঠতার কারণে, ২০তম শতাব্দীর প্রথম দিকে প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়েতে (পিসিএইচ) জমকালো সৈকতের সামনের ঘরগুলো তৈরির জন্য মেরিয়ান ডেভিসের মতো অনেক সেলিব্রিটি দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে সান্টা মনিকা একটি বিখ্যাত রিসর্ট শহরে পরিণত হয়েছিলো। শহরটি ১৯১০-এর দশকের শেষের দিক থেকে তার শহরতলির মূল পুনর্জীবন, উল্লেখযোগ্য চাকরির বৃদ্ধি এবং পর্যটন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে এক গম্ভীর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। জনপ্রিয় পর্যটকদের সাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে সান্তা মনিকা পাইয়ারের প্যাসিফিক পার্ক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারে প্যালিসেড পার্ক। সান্টা মনিকার পরিবেশগত ও স্থায়িত্ব কৌশলগুলো ২০৫০ বা ততোধিক সময়ের মধ্যে কমিউনিটি-বিস্তৃত কার্বন নিরপেক্ষতার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সান্টা মনিকা বিচ থেকে ভেনিস বোর্ডওয়াক পর্যন্ত হাঁটা সফর আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে।

সময় করে গিয়েছিলাম ওয়াক অফ ফেম দেখতে। বেশিরভাগই এক থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে ওয়াক অফ ফেম ব্রাউজিং শেষ করতে চায়। আপনি চাইলে এই ল্যান্ডমার্কে একটি পুরো দিন সহজেই কাটাতে পারেন। আপনি কতটি তারা দেখতে চান এবং প্রতিটি তারা দেখতে কতক্ষণ ব্যয় করেন তার উপর নির্ভর করবে আপনি এখানে কতটা সময় ব্যয় করবেন।

এক টিকিটে তিনটি মিউজিয়াম দেখার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। মাদাম তুসো মিউজিয়াম, হলিউড মিউজিয়াম আর রিপ্লিস দেখতে দেখতে আমাদের সারা বিকেল কেটেছে। দুই বছর আগে যখন এসেছিলাম, তখন আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্টু নামের এক বড় ভাই ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিওতে চাকরি করতেন। তার সুবাদে তখন ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিও ঘুরে দেখা হয়েছিলো। তখন ফ্রী দেখেছিলাম, এখন মন্টু ভাই ডিজনিল্যান্ডে জয়েন করেছেন তাই এবারও আমরা ফ্রিতে ডিজনিল্যান্ড ঘুরে দেখেছি। এমন একজন মন্টু ভাই যদি সবগুলো দর্শনীয় স্থানে থাকতো!

একদিনের বাঙালি রেস্টুরেন্ট ছাড়া খাবারের অভিজ্ঞতা আমাদের ভালোই ছিল। ইন্ডিয়ান, টার্কিশ, থাই আর চাইনিজ খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কিছু বাঙালি মালিকের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট রয়েছে- যা স্বাদে এবং মানে অনন্য। পরদিন সকাল ১০টায় ফ্লাইট। তাই, আজ একটু তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে আমাদের হলিউড ভ্রমণের পরিসমাপ্তি টানতে হলো। তবে, লস এঞ্জেলেস দেখার এখনও অনেক বাকি। কাউন্টি মিউজিয়াম, গেট্টি সেন্টার, দ্য গ্রুভ, গ্রিফিথ অবজারভেটরিসহ আরও অনেক কিছু দেখা বাকি। ওয়াল্ট ডিজনি কনসার্ট হল আমাদের হোটেলের ঠিক উল্টো পাশে। তাই হোটেলের ব্যালকনি থেকে রোজ তা দেখা হয়েছে। যদিও কোনো কনসার্ট কিংবা ভেতরে ঢুকে দেখা হয়নি। ক্যালিফোর্নিয়ায় যে কাজটি করতে হলেও আমি আবার ফিরে আসব, তা হলো রুট ১৫ এবং রুট ৬৬। কোনো একদিন গন্তব্যহীনভাবে রুট ৬৬ ধরে ছুটে চলতে চাই। রুক্ষ-শুষ্ক প্রকৃতির মাঝে গন্তব্যহীনভাবে ছুটে চলতে অবশ্যই আমার ভ্রমণপ্রেমী প্রাণবন্ত প্রকৃতিকে পাশের সিটে চাইব।

ছবি

সিলভিয়া প্লাথের মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা ও আত্মবিনাশ

ছবি

সমসাময়িক মার্কিনি ‘সহস্রাব্দের কণ্ঠস্বর’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

অন্য নিরিখে দেখা

ছবি

হেলাল হাফিজের চলে যাওয়া

ছবি

হেলাল হাফিজের কবিতা

ছবি

কেন এত পাঠকপ্রিয় হেলাল হাফিজ

ছবি

নারী শিক্ষাবিদ : বেগম রোকেয়া

ছবি

বাসার তাসাউফ

ছবি

‘জগদ্দল’-এর শক্তি ও সমরেশ বসু

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

রুবেন দারিও-র কবিতা

‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’

ছবি

কবিতা পড়া, কবিতা লেখা

ছবি

‘ধুলোয় সব মলিন’, পাঠকের কথা

ছবি

মহত্ত্বর কবি সিকদার আমিনুল হক

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

কয়েকটি অনুগল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

যেভাবে লেখা হলো ‘শিকিবু’

ছবি

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলোর কবিতা

ছবি

সিকদার আমিনুল হকের গদ্য

ছবি

সিকদার আমিনুল হককে লেখা অগ্রজ ও খ্যাতিমান লেখক-সম্পাদকের চিঠি

ছবি

ফিওদর দস্তয়েভস্কি: রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

একজন গফুর মল্লিক

ছবি

অগ্রবীজের ‘অনুবাদ সাহিত্য’ সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

গোপন কথা

ছবি

র’নবীর টোকাই-কথন

ছবি

শিল্পচর্চায় তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি ইনোভেটিভ

ছবি

শামসুর রাহমানের কবিতা বৈভব ও বহুমাত্রিকতা

ছবি

উইলিয়াম রাদিচের অধ্যয়নে অনন্য রবীন্দ্রনাথ

দিলারা হাফিজের কবিতা

ছবি

অবরুদ্ধ বর্ণমালার শৃঙ্খলমুক্তি

ছবি

আহমদুল কবির স্মরণে

ছবি

আহমদুল কবিরের সদাশয়তা

tab

সাময়িকী

মার্কিন চলচ্চিত্র জগতের প্রাণকেন্দ্র লস এঞ্জেলেস

লিটু আনাম

বৃহস্পতিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪

এর আগেও দুইবার লস এঞ্জেলেস এসেছি। প্রতিবারই কোনো না কোনো কাজে আসা হয়েছে। কাজের ফাঁকে কিছু কিছু জায়গা ঘুরে দেখলেও এবারই প্রথম ঘোরার উদ্দেশ্যে আসা। তিন দিনের সফরে কতটুকু আবিষ্কার করতে পারবো জানি না তবে, যতটুকু কভার করা যায়। আমরা যাত্রা শুরু করি গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে গাড়ি ড্রাইভ করে। সকাল ১০টার মধ্যে নাস্তা শেষ করে গাড়ি স্টার্ট দেই। প্রায় ৫০০ মাইল যেতে হবে। অবাক করা বিষয় হলো, প্রায় পুরোটা পথ যেতে হবে গিরিপথ বেয়ে মরুভূমির মাঝ দিয়ে। আই ৪০ দিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশত মাইল রাস্তা ক্যালিফোর্নিয়ার বিখ্যাত মোজাভে মরুভূমির কোল ঘেঁষে ছুটে চলেছে। দুচোখ যতদূর যায়, সামনে-পেছনে, ডানে-বামে শুধুই ধু ধু মরুভূমি। কোথাও কোনো জনবসতি নেই। সামনে যদি কোনো গাড়ি না থাকে তাহলে চোখে পড়ে মরিচীকা! দূরে সারি সারি পাহাড়। তার মাঝ বরাবর হাইওয়ে দিয়ে আমরা ছুটে চলেছি।

আমার পাশের সিটে বসে থাকা বাংলাদেশের ডেবনিয়ার গ্রুপের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব আইয়ুব খান হঠাৎ করে জিজ্ঞাসা করলেন, লিটু আনাম সাহেব, আপনি কখনও মক্কা থেকে মদিনা ড্রাইভ করে গিয়েছেন?

আমি জবাব দিলাম, না।

তিনি তখন বললেন- এই মোজাভে মরুভূমি আর মক্কা ও মদিনার মাঝে যে মরুভূমি, সেটা দেখতে হুবহু একই রকম।

পৃথিবীর পাঁচ ভাগের এক ভাগ জায়গা জুড়ে আছে মরুভূমি, যেখানে সাধারণত বছরে ১০ ইঞ্চি বা ২৫ সে.মি. বা তার চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। মরুভূমিতে বৃষ্টিপাত, তুষারপাতের পরিমাণ বাষ্পীভবনের চেয়ে কম হয়। মরুভূমি বলতে শুধু বালুর সাগরকেই বুঝায় না; পাথর ও পাহাড় নিয়েও মরুভূমির সৃষ্টি হয়। গরম, শুষ্ক পাথুরে আর বালুময় মরুভূমি গাছপালা জন্মানোর জন্য সহায়ক নয়। মধ্য অনুর্বর মরুভূমিতে কিছু গাছ, গুল্ম, ঘাস ও ঝোপঝাড় জন্মায়। সেখানকার গাছের বীজগুলো বছরের পর বছর বালুতে ভালো অবস্থায় থাকে। বৃষ্টির পানি পেলে এসব বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে; মূল অনেক গভীরে পৌঁছায়। গাছগুলো কণ্টকময় হওয়ায়, একটি কারণ হিসেবে বলা যায় এগুলো প্রাণিদের হাত থেকে সঞ্চিত পানি ও নিজেদের রক্ষা করার সুরক্ষাঅস্ত্র। পাতাগুলো মোমের মতো প্রলেপবিশিষ্ট হয়- যা পানি ধরে রাখতে সাহায্য করে। মরুভূমির প্রাণি ও পোকামাকড়গুলো আকারে ছোট হয়, যা তাদেরকে দিনে লুকিয়ে থাকতে ও রাতের ঠা-া আবহাওয়ায় বের হতে সহায়তা করে। আমেরিকার মরুভূমি হচ্ছে শুষ্ক পাথুরে মরুভূমি। মরুজ উদ্ভিদের গঠনগত বৈশিষ্ট্য (মরফোলজি) এবং মৌলিক রাসায়নিক প্রক্রিয়া (ফিজিওলজি)-র প্রায় সবই হলো মূলত জল সংরক্ষণের জন্য বিভিন্নভাবে অভিযোজিত হওয়া, এবং শুকনো মৌসুমের জন্য প্রচুর পরিমাণে জল সঞ্চয় করা। কিছু প্রজাতির উদ্ভিদ দীর্ঘমেয়াদী প্রচ- শুষ্কতায় বা তাদের কলাসমষ্টির বিশুষ্কীকরণ-এও বেঁচে থাকে। সেসময়ে তারা তাদের বিপাকীয় কার্যাবলিকে কার্যত বন্ধ করে দেয়। উদ্ভিদের এই রকম গঠনগত ও শরীরবৃত্তীয় অভিযোজনকে বলা হয় জেরোমরফিক। ক্যাকটাসের মতো মরুজ উদ্ভিদ, মাটির গভীরে তাদের শিকড় প্রসারিত করে জল সঞ্চয় করার ক্ষমতা রাখে এবং শুষ্ক পরিবেশে তা সামাল দেয়। কাঁটাযুক্ত পাতাগুলোতে মোমের মতো আস্তরণ থাকায়, জল এবং আর্দ্রতা হ্রাস ও রোধ করে। এমনকি, তাদের মাংসল কা- জল সঞ্চয়ও করতে পারে।

আমাদের জন্য লস এঞ্জেলেসের ডাউনটাউনে কোনার্ড হোটেল বুক করাই ছিল। হোটেলে পৌঁছাতে সন্ধ্যা হয়ে গেলো। আমাদের সমগ্র ট্যুরের পরিকল্পনার দায়িত্বে ছিলেন আইয়ুব খানের স্ত্রী নায়ারা ভাবি। ভাবির পছন্দের প্রশংসা না করলেই নয়। কোথাও কোনো কমতি রাখেননি তিনি। তার সবসময় সেরাটাই চাই। সবই ঠিক ছিলো কিন্তু, আমি একটু গ-গোল পাকিয়ে ফেললাম। রাতের খাবার খেতে বাঙালি এলাকায় একটি বাঙালি রেস্টুরেন্টে নিয়ে গেলাম। অনেকদিন হয়েছে দেশি খাবার খাই না। গুগলে সুন্দর সুন্দর খাবারের ছবি দেখে গেলেও যেয়ে খুবই হতাশ হলাম। খাবারের মান, পরিবেশ, পরিবেশনা এতো জঘন্য হতে পারে সেটা আমার ধারণায় ছিলো না। যাই হোক, পরদিন আমাদের প্রথম পরিকল্পনা হলো ইউনিভার্সাল স্টুডিও।

দেশের সর্বাধিক বিখ্যাত পার্ক ইউনিভার্সাল স্টুডিওজ হলিউডে ব্যয় না করলে কী হয়? আমাদের সাথে একজন চার বছর এবং একজন পনের বছর বয়সী বাচ্চা আছে। কী নেই এখানে! হলিউডের পসরা সাজিয়ে রাখা প্রতি পদক্ষেপে। রয়েছে সর্বাধিক আধুনিক ক্যারোসেল, রোলার কোস্টার, হাসির এবং ভয় পাওয়ার জায়গা এবং সেই সাথে সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স। এখানে রয়েছে আপনার প্রিয় সিনেমা এবং টিভি শোগুলোর পূর্ণ-স্কেল দৃশ্যাবলি দেখার সুযোগ। আপনি দেখতে পাবেন কোথায় ‘চেলস্টি’, ‘হ্যারি পটার’, ‘টাইটানিক’ এবং অন্যান্য চিত্রায়িত হয়েছে। সবকিছু দেখতে এতটাই বাস্তব যে, এটি বাস্তব নয় তা বিশ্বাস করা কষ্টকর। স্টুডিও ট্যুর ট্রামে চড়ার সময় আউটডোর দৃশ্যাবলি দেখে মন জুরিয়ে গেলো। ইউনিভার্সাল পিকচার্সের বিখ্যাত সকল সিনেমার শুটিং কিংবা বাস্তব অভিজ্ঞতা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে এখানে। আমি চলে গেলাম আমার প্রিয় ওয়াকার্সদের সাথে দেখা করতে। বলতে চাচ্ছি আমার প্রিয় টিভি সিরিজ ‘দ্য ওয়াকিং ডেড’-এর কথা। প্রিয় চরিত্র নিগেন আর ড্যারল এর প্রতিটি সংলাপ ও স্টাইল দেখে মুগ্ধ না হয়ে উপায় নেই। ইউনিভার্সাল স্টুডিও শুধু শিশু নয়, নারী-পুরুষ, জোয়ান-বৃদ্ধ, সকলের জন্য রয়েছে চিত্তবিনোদনের মহা আয়োজন।

আমাদের দ্বিতীয় দিন বাচ্চাদের জন্য নির্ধারিত ছিলো। বুঝতেই পারছেন কোথায় যাবো আজ? হ্যাঁ, ঠিক ধরেছেন। আজ যাচ্ছি ডিজনিল্যান্ড। ডিজনি সম্পর্কে নতুন করে বলার কিছু নেই। আমরা সবাই ডিজনির মুভি দেখে শৈশব পার করেছি। আজ চোখের সামনে দেখছি সকল আয়োজন। ফিরে গেলাম সেই শৈশবে। প্রতি বছর প্রায় কয়েক কোটি মানুষের পা পরে বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় থিম পার্ক ডিজনি ওয়ার্ল্ডে। ছোটবেলায় যাদের দেখে বড় হওয়া, সেসব কাল্পনিক চরিত্রদের একসঙ্গে পাওয়ার একমাত্র স্থান ডিজনিওয়ার্ল্ড। ছোট-বড় সব বয়সীদের জন্য স্বর্গরাজ্য এই থিমপার্ক। যেখানে মিকি মাউস, মিনি মাউস, স্নো হোয়াইট, বিউটি এন্ড দ্য বিস্ট, সিনড্রেলা, মোয়ানা, এরিয়েলসহ ডিজনির সব জনপ্রিয় চরিত্র আপনার সামনে থাকবে। ডোনাল্ড ডাক, গুফি, এলসাও এমন ভাবে মাতিয়ে রাখবে, যেন সবাই আপনার বহুদিনের পরিচিত বন্ধু! ডিজনি ওয়ার্ল্ডের বড় আকর্ষণ হচ্ছে ‘ম্যাজিক কিংডম’। আর ডিজনিল্যান্ডের অন্যতম আকর্ষণ হলো ‘টয় স্টোরি ল্যান্ড’। অনেকের মতে, ডিজনিতে একদিন থেকে মন ভরে না। তাদের কথা ও একই সাথে ব্যবসা সম্প্রসারণের কথা মাথায় রেখেই ডিজনিতে রয়েছে বিলাসবহুল রিসোর্ট ও ভিলা। এছাড়া বিলাসবহুল রেস্টুরেন্ট ও শপিং সেন্টারও রয়েছে ডিজনির স্বপ্নের পৃথিবীতে।

তৃতীয় দিন আজ। আর আজই শেষ দিন। কাল সকালে নিউ ইয়র্কের উদ্দেশ্যে উড়াল দিবো। আজ তাই পরীক্ষার আগের রাতে রিভিশন দেওয়ার মতো কিছু পরিকল্পনা আছে আমাদের। সকালে নাস্তা শেষ করে চড়ে বসলাম ছাদ খোলা বাসে। আমাদের ঘুরিয়ে দেখানো হলো হলিউড এবং লস এঞ্জেলেসের সমগ্র এলাকা। হলিউড ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস এঞ্জেলেস শহরের একটি এলাকা। এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র জগতের প্রাণকেন্দ্র। ১৯০০ সালের শুরুর দিকে বর্তমানের স্বপ্নের হলিউডে বাস করতো মাত্র শ’খানেক লোক। পুরো হলিউড জুড়ে মোটে দুটি মাত্র মার্কেট। কিছু কিনতে হলে এই দুই মার্কেটের বাইরে কোথাও দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগও নেই। অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে একটি পোস্ট অফিস ও একটি হোটেল। তাও যা কিনা সেই সময়ে নির্মাণাধীন। সত্যি কথা হলো, প্রায় একশ বছর আগে হলিউডের অবস্থা এরকম শোচনীয়ই ছিলো। সেখান থেকে মাত্র দুই দশকের মধ্যে গড়ে ওঠে আজকের আধুনিক হলিউড। সেই সময়ে হলিউডের কাছাকাছি আধুনিক সভ্যতা গড়ে উঠেছিলো লস এঞ্জেলেসে। সাত মাইলের একটি রাস্তা এবং বিশালাকার কমলার বাগান এই দুটি স্থানকে আলাদা করে রেখেছিলো। কিন্তু, মাত্র দুই দশকের মধ্যেই হলিউডও লস এঞ্জেলেসের মতো করে হয়ে ওঠে আরাধ্য জায়গা এবং সিনেমা জগতের আঁতুড়ঘর। হলিউডের এই আচমকা উন্নতির পেছনে দুটি ফ্যাক্টর কাজ করেছিলো। প্রথমত, চলচ্চিত্র শিল্পের কলাকুশলীদের পশ্চিমে তাঁবু গাড়ার ইচ্ছা এবং দ্বিতীয়ত, অবকাঠামোগত অবস্থা। প্রথম স্থাপত্যশৈলী হিসেবে হলিউডে তৈরি হয় নির্মাণাধীন সেই হোটেলটি। সম্পূর্ণ কাঠের প্রাসাদের মতো হোটেলটি চালু হয় ১৯০২ সাল থেকে। এর ঠিক দুই বছর পর যোগাযোগ ব্যবস্থার পরিবর্তন ঘটে। ১৯০৪ সালে যোগাযোগের সুবিধার্থে তৈরি করা হয় প্রসপেক্ট এভিনিউ, যেটি পরে পরিবর্তিত হলিউডে বুলভার্ড নামে পরিচিতি লাভ করে। ততদিনে সিনেমা তৈরির কলাকুশলীরা হলিউডের ওপর আকৃষ্ট হতে শুরু করেন। পূর্ব থেকে সরে এসে পশ্চিমের হলিউডে তাঁবু গাড়া শুরু করেন অনেকেই। এর প্রধান কারণ ছিলো তৎকালীন সময়ে অন্যান্য জায়গার তুলনায় হলিউডে কর ছিলো খুবই সামান্য। পাশাপাশি কর্মজীবী মানুষ পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং বাসস্থানের জন্যও যথার্থ ছিলো জায়গাটি। ১৯১০ সালে ডিডব্লিউ গ্রিফিথ তাঁর মুভি ‘ইন ওল্ড ক্যালিফোর্নিয়া’-এর সেট ঠিক করেন হলিউডে। এটিই হলিউডে বানানো সর্বপ্রথম সিনেমা। এর ৪ বছর পর সেসিল বি ডেমাইল তাঁর মুভি তৈরির যাত্রা শুরু করেন হলিউডেই; ‘দ্য স্কোয়াও ম্যান’ মুভি দিয়ে। হলিউডে প্রবেশের আগে সিনেমা তৈরির প্রধান স্থান ছিলো নিউ জার্সি। কিন্তু, সেই সময় থমাস এডিসন মোশন পিকচার থেকেই প্রযোজনা করা হতো সিংহভাগ ছবি। অনেকটা মনোপলি ব্যবসা ছিলো তাদের। এই প্রযোজনা সংস্থার কড়াকড়ি নিয়মে স্বস্তি পেতেন না পরিচালকেরা। তাই সিনেমা স্টুডিও ও চলচ্চিত্র নির্মাতারাও আস্তে আস্তে নিউ জার্সি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেন। পাড়ি জমান হলিউডে। ধীরে ধীরে হলিউড হয়ে ওঠে আধুনিক আমেরিকান সিনেমা তৈরির আঁতুড়ঘর।

বাস থেকে নেমে আমরা গেলাম হলিউড ভিউ পয়েন্টে। আমরা বিভিন্ন সিনেমায় দেখি মাউন্ট লী পর্বতের গা ঘেঁষে লেখা বিশাল আকৃতির ‘HOLLYWOOD’। এটিই সেই জায়গা। সামনে দাড়িয়ে ছবি তুললাম আমরা। এখানে করনীয় এটুকুই। সন্ধ্যা হতে চললো। তাই, আমরা ছুটে চললাম সান্টা মনিকার দিকে। সান্টা মনিকা (স্পেনীয় ‘সেন্টমনিকা’) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার পশ্চিম লস এঞ্জেলেস কাউন্টির একটি সৈকত ফ্রন্ট শহর। সান্টা মনিকা উপসাগর বরাবর অবস্থিত, এটি লস এঞ্জেলেস শহরের বিভিন্ন মহল্লার পাঁচ পাশের সীমানা: উত্তরে প্যাসিফিক প্যালিসেডস, উত্তর-পূর্বের ব্রেন্টউড, পূর্ব-পশ্চিমে লস এঞ্জেলেস, দক্ষিণ-পূর্বে মার ভিস্তা এবং দক্ষিণে ভেনিস। ২০১০ সালের মার্কিন আদমশুমারী অনুযায়ী জনসংখ্যা ছিলো ৮৯,৭৩৬ জন। অনুকূল জলবায়ু এবং লস এঞ্জেলেসের ঘনিষ্ঠতার কারণে, ২০তম শতাব্দীর প্রথম দিকে প্যাসিফিক কোস্ট হাইওয়েতে (পিসিএইচ) জমকালো সৈকতের সামনের ঘরগুলো তৈরির জন্য মেরিয়ান ডেভিসের মতো অনেক সেলিব্রিটি দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে সান্টা মনিকা একটি বিখ্যাত রিসর্ট শহরে পরিণত হয়েছিলো। শহরটি ১৯১০-এর দশকের শেষের দিক থেকে তার শহরতলির মূল পুনর্জীবন, উল্লেখযোগ্য চাকরির বৃদ্ধি এবং পর্যটন বৃদ্ধি করার মাধ্যমে এক গম্ভীর অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। জনপ্রিয় পর্যটকদের সাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে সান্তা মনিকা পাইয়ারের প্যাসিফিক পার্ক এবং প্রশান্ত মহাসাগরের ওপারে প্যালিসেড পার্ক। সান্টা মনিকার পরিবেশগত ও স্থায়িত্ব কৌশলগুলো ২০৫০ বা ততোধিক সময়ের মধ্যে কমিউনিটি-বিস্তৃত কার্বন নিরপেক্ষতার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। সান্টা মনিকা বিচ থেকে ভেনিস বোর্ডওয়াক পর্যন্ত হাঁটা সফর আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে।

সময় করে গিয়েছিলাম ওয়াক অফ ফেম দেখতে। বেশিরভাগই এক থেকে তিন ঘণ্টার মধ্যে ওয়াক অফ ফেম ব্রাউজিং শেষ করতে চায়। আপনি চাইলে এই ল্যান্ডমার্কে একটি পুরো দিন সহজেই কাটাতে পারেন। আপনি কতটি তারা দেখতে চান এবং প্রতিটি তারা দেখতে কতক্ষণ ব্যয় করেন তার উপর নির্ভর করবে আপনি এখানে কতটা সময় ব্যয় করবেন।

এক টিকিটে তিনটি মিউজিয়াম দেখার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না। মাদাম তুসো মিউজিয়াম, হলিউড মিউজিয়াম আর রিপ্লিস দেখতে দেখতে আমাদের সারা বিকেল কেটেছে। দুই বছর আগে যখন এসেছিলাম, তখন আমার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মন্টু নামের এক বড় ভাই ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিওতে চাকরি করতেন। তার সুবাদে তখন ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিও ঘুরে দেখা হয়েছিলো। তখন ফ্রী দেখেছিলাম, এখন মন্টু ভাই ডিজনিল্যান্ডে জয়েন করেছেন তাই এবারও আমরা ফ্রিতে ডিজনিল্যান্ড ঘুরে দেখেছি। এমন একজন মন্টু ভাই যদি সবগুলো দর্শনীয় স্থানে থাকতো!

একদিনের বাঙালি রেস্টুরেন্ট ছাড়া খাবারের অভিজ্ঞতা আমাদের ভালোই ছিল। ইন্ডিয়ান, টার্কিশ, থাই আর চাইনিজ খাবারের স্বাদ নেওয়ার সুযোগ হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, কিছু বাঙালি মালিকের ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট রয়েছে- যা স্বাদে এবং মানে অনন্য। পরদিন সকাল ১০টায় ফ্লাইট। তাই, আজ একটু তাড়াতাড়ি হোটেলে ফিরে আমাদের হলিউড ভ্রমণের পরিসমাপ্তি টানতে হলো। তবে, লস এঞ্জেলেস দেখার এখনও অনেক বাকি। কাউন্টি মিউজিয়াম, গেট্টি সেন্টার, দ্য গ্রুভ, গ্রিফিথ অবজারভেটরিসহ আরও অনেক কিছু দেখা বাকি। ওয়াল্ট ডিজনি কনসার্ট হল আমাদের হোটেলের ঠিক উল্টো পাশে। তাই হোটেলের ব্যালকনি থেকে রোজ তা দেখা হয়েছে। যদিও কোনো কনসার্ট কিংবা ভেতরে ঢুকে দেখা হয়নি। ক্যালিফোর্নিয়ায় যে কাজটি করতে হলেও আমি আবার ফিরে আসব, তা হলো রুট ১৫ এবং রুট ৬৬। কোনো একদিন গন্তব্যহীনভাবে রুট ৬৬ ধরে ছুটে চলতে চাই। রুক্ষ-শুষ্ক প্রকৃতির মাঝে গন্তব্যহীনভাবে ছুটে চলতে অবশ্যই আমার ভ্রমণপ্রেমী প্রাণবন্ত প্রকৃতিকে পাশের সিটে চাইব।

back to top