তীব্র দাবদাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখা ও বন্ধ ঘোষণা নিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করছে শিক্ষা প্রশাসন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা-বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একেকবার একেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর ফলে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিতে তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল-মাদ্রাসার আগামী বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ আদেশ দেয়।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. সাইফুজ্জামান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রেহেনা সুলতানা, সামিউল সরকার ও আশিক রুবায়েত।
যেসব স্কুলে এসি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবস্থা আছে বা পরীক্ষা চলমান আছে সেসব স্কুলের জন্য এবং ‘ও লেভেল’, ‘এ লেভেল’ পরীক্ষা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না বলে হাইকোর্ট জানিয়েছে।
চলমান তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটনা নিয়ে সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনির উদ্দিন। তিনি আদালতে বলেন, এই গরমের মধ্যে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এমন ঝুঁকির মধ্যে আছেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দেন। মনির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হিট ওয়েভে’ ইতোমধ্যে ১৮ জন মারা গেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ বিষয়গুলো তুলে ধরলে আদালত আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
দাবদাহের মধ্যে বৃস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আদালতের নিদের্শনা নিয়ে আসতে হবে?
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানান মন্ত্রী। তিনি সোমবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে চলবে, কখন বন্ধ থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের। উচ্চ আদালত কিছু-কিছু বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দেয়ার এখতিয়ার আছে।
তবে যার-যার এখতিয়ার, সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকাটা সমীচীন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখন বন্ধ হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার প্রবণতা দেশের জন্য সঠিক নয় এবং এই ধরনের চাহিদা বা অনুরোধগুলো আসলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে, যথাযথ নয়।
তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত জায়গায় এই সময়, শুষ্ক মৌসুমেই একটা পড়ালেখার সুযোগ থকে। যেমন হাওরাঞ্চল, চরাঞ্চল- যেখানে বন্যার সময় প্লাবিত হয়ে যায়, বৃষ্টির সময়- সেখানে তো পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে কেন বন্ধ থাকবে?’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়লে সেটা আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব, কিন্তু হঠাৎ করে কেউ সিদ্ধান্ত নির্বাহী বিভাগের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে কিনা, এ বিষয়টি আমরা আদালতেই সুরাহা করার চেষ্টা করব।’
রোববার (২৮ এপ্রিল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন-সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা অসুস্থ হয়েছেন তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাকি অন্যত্র ছিলেন তাও দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, ‘স্কুল গরমের জন্য বিপজ্জনক, আর মাঠ-ঘাট নয়? যেসব জেলায় তাপমাত্রা কম সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার তো কোনো কারণ নেই।’
হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুসরণ করবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কাছে যেহেতু কোনো রায় আসেনি। আমাদের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছি, সেটাতে এই মুহূর্তে আমরা স্থির আছি। অন্যকিছু দেখলে সে অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ২৭ জেলার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
তাপপ্রবাহের কারণে মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ১৮ জেলা, রংপুরের দুই জেলা এবং বরিশালের এক জেলাসহ মোট ২৭ জেলার স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের এ তথ্য জানিয়েছেন।
দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে আবুল খায়ের বলেন, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে রোববার সকালে শিক্ষামন্ত্রী রাজধানীর আগারগাঁও ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, কিছু হলেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার আলোচনা কেন? সবকিছু খোলা থাকবে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, এ প্রত্যাশা যথাযথ নয়। তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে চান।
এর পর রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সোমবার ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে এদিন ওইসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ছিল।
রোববার শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০-এর পর্যায়ে আছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বাংলাদেশে নতুন নয়। এ কারণে পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০-এর ওপরে যাওয়ার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়।
যদিও ওইদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একমাসেরও বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর ওইদিনই (২৮ এপ্রিল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হয়।
টানা পাঁচ বারের মতো রোববার হিট অ্যালার্ট (আবহাওয়া সতর্কবার্তা) জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার চুয়াডাঙ্গায় দেশে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড হয়। এদিন ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে ছিল।
সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ
চলমান তীব্র তাপদাহের কারণে বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সোমবার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, দেশে বহমান তীব্র দাবদাহের কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় ২ মে পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
দাবদাহের কারণে সোমবার ঢাকাসহ পাঁচ জেলার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। তবে শুধু এক শিফটে অর্থাৎ মর্নিং ক্লাস দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখা হয়েছিল।
রমজান, ঈদুল ফিতর ও তীব্র দাবদাহের কারণে সাত দিনসহ মোট একমাস তিন দিনের ছুটি শেষে ২৮ এপ্রিল রোববার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি জায়গায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়।
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
তীব্র দাবদাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চালু রাখা ও বন্ধ ঘোষণা নিয়ে বারবার সিদ্ধান্ত বদল করছে শিক্ষা প্রশাসন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা-বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে লেজেগোবরে অবস্থা তৈরি হয়েছে। শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় একেকবার একেক সিদ্ধান্ত নিচ্ছে। এর ফলে বিভ্রান্তিতে পড়ছেন শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।
এই পরিস্থিতিতে তাপপ্রবাহের মধ্যে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে স্কুল-মাদ্রাসার আগামী বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বপ্রণোদিত হয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে এ আদেশ দেয়।
এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মো. সাইফুজ্জামান, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল রেহেনা সুলতানা, সামিউল সরকার ও আশিক রুবায়েত।
যেসব স্কুলে এসি বা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবস্থা আছে বা পরীক্ষা চলমান আছে সেসব স্কুলের জন্য এবং ‘ও লেভেল’, ‘এ লেভেল’ পরীক্ষা ও কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য এই আদেশ প্রযোজ্য হবে না বলে হাইকোর্ট জানিয়েছে।
চলমান তাপপ্রবাহে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১৮ জনের মৃত্যু ঘটনা নিয়ে সোমবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মনির উদ্দিন। তিনি আদালতে বলেন, এই গরমের মধ্যে স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও এমন ঝুঁকির মধ্যে আছেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দেন। মনির উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘হিট ওয়েভে’ ইতোমধ্যে ১৮ জন মারা গেছেন। প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসার কোমলমতি শিক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়ার পথে অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এ বিষয়গুলো তুলে ধরলে আদালত আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত দিয়েছে।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
দাবদাহের মধ্যে বৃস্পতিবার পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করা নিয়ে হাইকোর্টের আদেশের বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে এক ধরনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আদালতের নিদের্শনা নিয়ে আসতে হবে?
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে প্রয়োজনে আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানান মন্ত্রী। তিনি সোমবার বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ কথা বলেন।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কীভাবে চলবে, কখন বন্ধ থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের। উচ্চ আদালত কিছু-কিছু বিষয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে নির্দেশ দেয়ার এখতিয়ার আছে।
তবে যার-যার এখতিয়ার, সেখানেই সীমাবদ্ধ থাকাটা সমীচীন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সংবিধান অনুসারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কখন বন্ধ হবে, কীভাবে পরিচালিত হবে।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার প্রবণতা দেশের জন্য সঠিক নয় এবং এই ধরনের চাহিদা বা অনুরোধগুলো আসলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে, যথাযথ নয়।
তিনি বলেন, ‘যে সমস্ত জায়গায় এই সময়, শুষ্ক মৌসুমেই একটা পড়ালেখার সুযোগ থকে। যেমন হাওরাঞ্চল, চরাঞ্চল- যেখানে বন্যার সময় প্লাবিত হয়ে যায়, বৃষ্টির সময়- সেখানে তো পড়াশোনা বিঘ্নিত হয়। সেখানে শুষ্ক মৌসুমে কেন বন্ধ থাকবে?’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘তাপমাত্রা বাড়লে সেটা আমরা আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেব, কিন্তু হঠাৎ করে কেউ সিদ্ধান্ত নির্বাহী বিভাগের ওপর চাপিয়ে দিতে পারে কিনা, এ বিষয়টি আমরা আদালতেই সুরাহা করার চেষ্টা করব।’
রোববার (২৮ এপ্রিল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়েছেন-সোমবার গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন খবর নিয়ে প্রশ্ন তোলেন শিক্ষামন্ত্রী বলেন, যারা অসুস্থ হয়েছেন তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নাকি অন্যত্র ছিলেন তাও দেখার বিষয়।
তিনি বলেন, ‘স্কুল গরমের জন্য বিপজ্জনক, আর মাঠ-ঘাট নয়? যেসব জেলায় তাপমাত্রা কম সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার তো কোনো কারণ নেই।’
হাইকোর্টের দেয়া নির্দেশনা শিক্ষা মন্ত্রণালয় অনুসরণ করবে কিনা জানতে চাইলে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের কাছে যেহেতু কোনো রায় আসেনি। আমাদের যে সিদ্ধান্ত দিয়েছি, সেটাতে এই মুহূর্তে আমরা স্থির আছি। অন্যকিছু দেখলে সে অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব।’
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ২৭ জেলার স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
তাপপ্রবাহের কারণে মঙ্গলবার ঢাকা বিভাগের ছয় জেলা, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের ১৮ জেলা, রংপুরের দুই জেলা এবং বরিশালের এক জেলাসহ মোট ২৭ জেলার স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ জনসংযোগ কর্মকর্তা আবুল খায়ের এ তথ্য জানিয়েছেন।
দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে জানিয়ে আবুল খায়ের বলেন, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ৩০ এপ্রিল (মঙ্গলবার) বন্ধ থাকবে বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এর আগে রোববার সকালে শিক্ষামন্ত্রী রাজধানীর আগারগাঁও ঢাকা মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, কিছু হলেই স্কুল বন্ধ করে দেওয়ার আলোচনা কেন? সবকিছু খোলা থাকবে আর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, এ প্রত্যাশা যথাযথ নয়। তারা শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখতে চান।
এর পর রাতেই শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, চলমান তাপপ্রবাহের কারণে সোমবার ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। তবে এদিন ওইসব এলাকায় প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা ছিল।
রোববার শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০-এর পর্যায়ে আছে। তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি বাংলাদেশে নতুন নয়। এ কারণে পাঁচটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০-এর ওপরে যাওয়ার পূর্বাভাসের ভিত্তিতে সারাদেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াটা যুক্তিযুক্ত নয়।
যদিও ওইদিন ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৩৭ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। একমাসেরও বেশি সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর ওইদিনই (২৮ এপ্রিল) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু হয়।
টানা পাঁচ বারের মতো রোববার হিট অ্যালার্ট (আবহাওয়া সতর্কবার্তা) জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সোমবার চুয়াডাঙ্গায় দেশে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার রেকর্ড হয়। এদিন ঢাকাসহ কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে ছিল।
সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ
চলমান তীব্র তাপদাহের কারণে বৃহস্পতিবার (২ মে) পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
সোমবার গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান তুহিন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, দেশে বহমান তীব্র দাবদাহের কারণে শিশু শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও সুরক্ষা বিবেচনায় ২ মে পর্যন্ত দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শিশু কল্যাণ ট্রাস্টের বিদ্যালয় ও উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর লার্নিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
দাবদাহের কারণে সোমবার ঢাকাসহ পাঁচ জেলার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়। তবে শুধু এক শিফটে অর্থাৎ মর্নিং ক্লাস দিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখা হয়েছিল।
রমজান, ঈদুল ফিতর ও তীব্র দাবদাহের কারণে সাত দিনসহ মোট একমাস তিন দিনের ছুটি শেষে ২৮ এপ্রিল রোববার দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলেছিল। কিন্তু বেশ কয়েকটি জায়গায় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা অসুস্থ হয়ে পড়ার খবর পাওয়া যায়।