সচেতন পথিকের কথা
জাহিদ হায়দার
(“গুপ্ত কথা, গুপ্ত লিপি, গুপ্ত কাণ্ড, গুপ্ত প্রেম, ক্রমে সকলই ব্যক্ত হইয়াছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত মনে কথা মনেই রহিয়াছে।” উদাসীন পথিকের মনের কথা, মীর মশাররফ হোসেন।)
নিজের প্রেমের খোঁজে
বারোটি বায়ুর স্রোতে
আকাশপ্রহরে
কম্পাসবিহীন আমি
ভেসে গেছি বিদ্যুতের ঝড়ে।
হৃদয়চিত্রে পড়ছে নীরবে বৃষ্টি,
পড়ছে ধুলোর অধিকাররীতি আনন্দে।
মীর সাহেবের সঙ্গ পায়নি লাহিনি পাড়ায়,
কোথাও ব্যস্ত ছিলেন কাঙাল হরিনাথ,
শিলাইদহের ঘাটে বজড়া ছিলো না সেদিন।
কে দেবে উত্তর,
লাশ ছাড়া কে আর গুপ্ত লিপিতে উদাসীন?
নিরন্তর ক্ষয়। পর্যন্ত আপাত এক রেখা
একবিংশতে সিন্ধুবিষাদ ধাবমান রক্তধ্বনি।
তোমার সঙ্গে প্রকাশ্যে যদি হতো দেখা,
ক্রমাগতের ভালোমন্দ বুননবীথি বুঝে
দাঁড়াতো পথিক দিগন্তের স্মৃতিসত্য বলে।
মৃত পাতা
হাসান কল্লোল
একদিন তোমাকে ভুলে যাব দেখো ঠিক
অচেনা রাস্তায় হাঁটার এই মুমূর্ষু দেহমনে
মানা আছে জেনেওনীরব অভিমানের নীল জামা পরে
চলে যাব নীল খেয়া চড়ে! আমি তোমার কালে
জন্মিনি বলে যেই ট্রেন সামনে পেয়েছি
তাতেই অমবস্যার রাতে উঠে পড়েছিলাম! আর
মোলহেডের মাথায় এসে যখন গেখি প্রমত্তা নদী তার
ইলিশের গন্ধ পিঠে নিয়ে চলে যাচ্ছে আহত মাঝির
সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে
রঙে ও রসে কেন তুমি উঠে এলে প্রাচীন স্টিমারের
কাঠের সিঁড়ি বেয়ে আমারি কেবিনে!
আর শাদা পোশাকের টিকেট চেকার এসে বলল:
কী হে বাপু ট্রেনের টিকিট নিয়ে
দিব্যি এই জলযানে এলেন কীভাবে?
নামুন
নামুন নেমে যাবেন সামনের ঘাটে!
আমি অপেক্ষায় থাকি
আর মাঝ দুপুরে যার জন্য আমার নেমে যাওয়া
তিনি শারীর আঁচলে মৃদু ঘাম মুছতে মুছতে বলেন:
আপনার নামার প্রয়োজন নেই
আমিই একটু পরে নেমে যাবো আমার মতো!
তিনি নেমে গেলে দেখি যে পথে গেলেন তিনি
সেইখানে বাদাবনের বিকেলের রোদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে!
নীল জামার পকেটে কয়েকটি মায়াবী গাছের মৃত পাতা!
নগর বাউল
হাবিবা রোজী
প্রবল জলোচ্ছ্বাসেও বরফাচ্ছন্ন এই নৈঃশব্দ্যের শহর,
সাত-সকাল, সন্ধ্যা-দুপুর, রাত-বিরেত আটপ্রহর।
শ্রমক্লান্ত, ব্যথাহত নিরাশ্রয় শ্বেতবসনা বাউল,
পরমাত্মা খুঁজে খুঁজে হয়রান পথ, মঠ, মসজিদ, দেউল।
শব্দগুলো মুখথুবড়ে পড়েছে জনহীন হ্রদে,
বিরতিহীন আহ্নিক ধর্মঘট, বাক্যের জনপদে।
শহরের বিলবোর্ডে থাকবে না বিজ্ঞাপন স্তুতি।
সাদা খড়িতে টেনে দেয়া হবে দীর্ঘ এক যতি।
হাতকড়া পরেছে আজ-কাল-পরশুর কবিতার হাতে,
তনু মনে অনুক্ষণ কেবলই ক্ষরণ, ক্ষরণ যাতে।
তুষার জমে জমে উঁচু হয় ঢিবি, বরফ-নদী,
শীত শহরে প্লাবন হতো বরফ গলতে পারতো যদি।
দিনমান দীর্ণ হতে হতেই এমন থাকা না থাকা,
তরুছায়া, হাওয়াহীন এই শহরটার মানচিত্র আঁকা।
অব্যক্ত কথামালা
মাহমুদুজ্জামান জামী
আমার কিছু বলার ছিলো।
ভেবেছিলাম কয়েকটা কথা
রোদের মতো
তোমাকে আমি দেবো উপহার।
অনেক রাতের জোছনায়
দারুণ অবকাশেÑ
হৃদয়ের সব কষ্ট ঝেড়ে
গোলাপ রঙিন চেতনায়
তোমাকে আমি বলবো সব
নিবিড় ভালোলাগায়।
ভেবেছিলাম
সব প্রতিবন্ধকতা
দুমড়ে মুচড়ে
আকাশ রঙিন কথাগুলো সব
ফুলের মতো
বিলাবো তোমাকে!
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪
সচেতন পথিকের কথা
জাহিদ হায়দার
(“গুপ্ত কথা, গুপ্ত লিপি, গুপ্ত কাণ্ড, গুপ্ত প্রেম, ক্রমে সকলই ব্যক্ত হইয়াছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত মনে কথা মনেই রহিয়াছে।” উদাসীন পথিকের মনের কথা, মীর মশাররফ হোসেন।)
নিজের প্রেমের খোঁজে
বারোটি বায়ুর স্রোতে
আকাশপ্রহরে
কম্পাসবিহীন আমি
ভেসে গেছি বিদ্যুতের ঝড়ে।
হৃদয়চিত্রে পড়ছে নীরবে বৃষ্টি,
পড়ছে ধুলোর অধিকাররীতি আনন্দে।
মীর সাহেবের সঙ্গ পায়নি লাহিনি পাড়ায়,
কোথাও ব্যস্ত ছিলেন কাঙাল হরিনাথ,
শিলাইদহের ঘাটে বজড়া ছিলো না সেদিন।
কে দেবে উত্তর,
লাশ ছাড়া কে আর গুপ্ত লিপিতে উদাসীন?
নিরন্তর ক্ষয়। পর্যন্ত আপাত এক রেখা
একবিংশতে সিন্ধুবিষাদ ধাবমান রক্তধ্বনি।
তোমার সঙ্গে প্রকাশ্যে যদি হতো দেখা,
ক্রমাগতের ভালোমন্দ বুননবীথি বুঝে
দাঁড়াতো পথিক দিগন্তের স্মৃতিসত্য বলে।
মৃত পাতা
হাসান কল্লোল
একদিন তোমাকে ভুলে যাব দেখো ঠিক
অচেনা রাস্তায় হাঁটার এই মুমূর্ষু দেহমনে
মানা আছে জেনেওনীরব অভিমানের নীল জামা পরে
চলে যাব নীল খেয়া চড়ে! আমি তোমার কালে
জন্মিনি বলে যেই ট্রেন সামনে পেয়েছি
তাতেই অমবস্যার রাতে উঠে পড়েছিলাম! আর
মোলহেডের মাথায় এসে যখন গেখি প্রমত্তা নদী তার
ইলিশের গন্ধ পিঠে নিয়ে চলে যাচ্ছে আহত মাঝির
সমস্ত স্বপ্ন ভেঙে
রঙে ও রসে কেন তুমি উঠে এলে প্রাচীন স্টিমারের
কাঠের সিঁড়ি বেয়ে আমারি কেবিনে!
আর শাদা পোশাকের টিকেট চেকার এসে বলল:
কী হে বাপু ট্রেনের টিকিট নিয়ে
দিব্যি এই জলযানে এলেন কীভাবে?
নামুন
নামুন নেমে যাবেন সামনের ঘাটে!
আমি অপেক্ষায় থাকি
আর মাঝ দুপুরে যার জন্য আমার নেমে যাওয়া
তিনি শারীর আঁচলে মৃদু ঘাম মুছতে মুছতে বলেন:
আপনার নামার প্রয়োজন নেই
আমিই একটু পরে নেমে যাবো আমার মতো!
তিনি নেমে গেলে দেখি যে পথে গেলেন তিনি
সেইখানে বাদাবনের বিকেলের রোদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে!
নীল জামার পকেটে কয়েকটি মায়াবী গাছের মৃত পাতা!
নগর বাউল
হাবিবা রোজী
প্রবল জলোচ্ছ্বাসেও বরফাচ্ছন্ন এই নৈঃশব্দ্যের শহর,
সাত-সকাল, সন্ধ্যা-দুপুর, রাত-বিরেত আটপ্রহর।
শ্রমক্লান্ত, ব্যথাহত নিরাশ্রয় শ্বেতবসনা বাউল,
পরমাত্মা খুঁজে খুঁজে হয়রান পথ, মঠ, মসজিদ, দেউল।
শব্দগুলো মুখথুবড়ে পড়েছে জনহীন হ্রদে,
বিরতিহীন আহ্নিক ধর্মঘট, বাক্যের জনপদে।
শহরের বিলবোর্ডে থাকবে না বিজ্ঞাপন স্তুতি।
সাদা খড়িতে টেনে দেয়া হবে দীর্ঘ এক যতি।
হাতকড়া পরেছে আজ-কাল-পরশুর কবিতার হাতে,
তনু মনে অনুক্ষণ কেবলই ক্ষরণ, ক্ষরণ যাতে।
তুষার জমে জমে উঁচু হয় ঢিবি, বরফ-নদী,
শীত শহরে প্লাবন হতো বরফ গলতে পারতো যদি।
দিনমান দীর্ণ হতে হতেই এমন থাকা না থাকা,
তরুছায়া, হাওয়াহীন এই শহরটার মানচিত্র আঁকা।
অব্যক্ত কথামালা
মাহমুদুজ্জামান জামী
আমার কিছু বলার ছিলো।
ভেবেছিলাম কয়েকটা কথা
রোদের মতো
তোমাকে আমি দেবো উপহার।
অনেক রাতের জোছনায়
দারুণ অবকাশেÑ
হৃদয়ের সব কষ্ট ঝেড়ে
গোলাপ রঙিন চেতনায়
তোমাকে আমি বলবো সব
নিবিড় ভালোলাগায়।
ভেবেছিলাম
সব প্রতিবন্ধকতা
দুমড়ে মুচড়ে
আকাশ রঙিন কথাগুলো সব
ফুলের মতো
বিলাবো তোমাকে!