মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৫ বছর বাড়িয়ে ৩৫ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর নারীদের জন্য ৩৭ বছর নির্ধারিত হয়েছে। চাকরিতে বয়োবৃদ্ধির এই যৌক্তিক দাবি বেশ পুরনো। অনেক আগে থেকেই এই সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলে আসছে। বর্তমানে চাকরির বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর এবং অবসরের ক্ষেত্রে ৫৯ বছর। মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের জন্য ব্যতিক্রম বয়সসীমা চালু রয়েছে। এই প্রস্তাবটি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’, গত ৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদে আবেদন করেছে। এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারির কাজ যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে, তাই মন্ত্রিপরিষদ গত ১৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তর করে।
সাময়িকভাবে সুপারিশটি সুফলতা আনলেও দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের নানান জটিলতা করোনা মহামারী, কোটা আন্দোলন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বৈরাচারের পতন, রাষ্ট্র সংস্কার, নতুন সরকার গঠন; এসব কারণে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিটি দৃঢ় রূপ ধারণ করে। স্থায়ীভাবে সিদ্ধান্ত নিলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়বে। বেকারত্ব একটি জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনে। চাকরির বয়োবৃদ্ধির ফলে উচ্চতম গ্রেডে চাকরির আবেদনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। অনেকে হয়তো পূর্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা অনুমোদন পেতে পারে তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কর্মস্পৃহা কমে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে তরুণ প্রজন্মের মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। তাদের কর্ম দক্ষতা বয়স্কদের তুলনায় বেশি। যেকোনো গ্রেডের চাকরির ক্ষেত্রে বেশি আবেদন সংখ্যা হলে দীর্ঘমেয়াদে তা সামাল দেয়া রাষ্ট্রের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর অন্তত এক বছর লাগে সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে। অনেক সময় এর বেশি সময় লাগতে পারে। শুধু তাই নয় চাকরিতে প্রবেশের সময় বাড়ালে বাড়াতে হবে অবসেরর বয়সসীমা। এতো সময় পার করার পর পূর্বের স্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়।
গ্র্যাজুয়েশনের পর এতোটা লম্বা সময় সরকারি চাকরির পিছনে ছুটলে নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এতে মেধা ও কর্মক্ষমতা অনুযায়ী মেধাবী ব্যক্তির অভাব দেখা দিবে। যার ফলে রাষ্ট্রের চলমান কাজে অস্থিতিশীলতার দেখা মিলবে। এতো দেরীতে চাকরি জগতে প্রবেশ করার ফলে সরকারি চাকরির বাহিরে অন্য যেসব কর্মক্ষেত্র রয়েছে সেখানে যোগ্য ব্যক্তির অভাব দেখা দিবে। গ্রোতে গাঁ ভাসানোর মতো সবার সাথে তাল মিলিয়ে শুধু একমুখী হলে নিজের মেধার মুল্যায়ন হয় না। তবে এতোসবের পরেও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবটি জনসাধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষিত অনেকে দীর্ঘকালীন বেকারত্বের চক্রে আটকে পড়তে পারেন- এমন আশংকাও আছে অনেকের মধ্যে।
জান্নাতুল মাওয়া ছিমিন
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শনিবার, ০২ নভেম্বর ২০২৪
নতুন প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৫ বছর বাড়িয়ে ৩৫ নির্ধারণ করা হয়েছে। আর নারীদের জন্য ৩৭ বছর নির্ধারিত হয়েছে। চাকরিতে বয়োবৃদ্ধির এই যৌক্তিক দাবি বেশ পুরনো। অনেক আগে থেকেই এই সমসাময়িক বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলে আসছে। বর্তমানে চাকরির বয়সসীমা সর্বোচ্চ ৩০ বছর এবং অবসরের ক্ষেত্রে ৫৯ বছর। মুক্তিযোদ্ধা কোটাধারীদের জন্য ব্যতিক্রম বয়সসীমা চালু রয়েছে। এই প্রস্তাবটি প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন ‘অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন’, গত ৫ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদে আবেদন করেছে। এ ধরনের প্রজ্ঞাপন জারির কাজ যেহেতু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আওতায় পড়ে, তাই মন্ত্রিপরিষদ গত ১৮ সেপ্টেম্বর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নিকট হস্তান্তর করে।
সাময়িকভাবে সুপারিশটি সুফলতা আনলেও দীর্ঘমেয়াদি বাস্তবায়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিগত কয়েক বছরের নানান জটিলতা করোনা মহামারী, কোটা আন্দোলন, রাজনৈতিক অস্থিরতা, স্বৈরাচারের পতন, রাষ্ট্র সংস্কার, নতুন সরকার গঠন; এসব কারণে চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে বয়সসীমা বাড়ানোর দাবিটি দৃঢ় রূপ ধারণ করে। স্থায়ীভাবে সিদ্ধান্ত নিলে দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়বে। বেকারত্ব একটি জাতির জন্য অভিশাপ বয়ে আনে। চাকরির বয়োবৃদ্ধির ফলে উচ্চতম গ্রেডে চাকরির আবেদনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। অনেকে হয়তো পূর্ব অভিজ্ঞতা দ্বারা অনুমোদন পেতে পারে তবে বয়স বাড়ার সাথে সাথে কর্মস্পৃহা কমে যায়।
বিশেষজ্ঞদের মতে তরুণ প্রজন্মের মেধা, যোগ্যতা ও পরিশ্রমকে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। তাদের কর্ম দক্ষতা বয়স্কদের তুলনায় বেশি। যেকোনো গ্রেডের চাকরির ক্ষেত্রে বেশি আবেদন সংখ্যা হলে দীর্ঘমেয়াদে তা সামাল দেয়া রাষ্ট্রের পক্ষে কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পর অন্তত এক বছর লাগে সেই প্রক্রিয়া শেষ হতে। অনেক সময় এর বেশি সময় লাগতে পারে। শুধু তাই নয় চাকরিতে প্রবেশের সময় বাড়ালে বাড়াতে হবে অবসেরর বয়সসীমা। এতো সময় পার করার পর পূর্বের স্পৃহা নষ্ট হয়ে যায়।
গ্র্যাজুয়েশনের পর এতোটা লম্বা সময় সরকারি চাকরির পিছনে ছুটলে নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। এতে মেধা ও কর্মক্ষমতা অনুযায়ী মেধাবী ব্যক্তির অভাব দেখা দিবে। যার ফলে রাষ্ট্রের চলমান কাজে অস্থিতিশীলতার দেখা মিলবে। এতো দেরীতে চাকরি জগতে প্রবেশ করার ফলে সরকারি চাকরির বাহিরে অন্য যেসব কর্মক্ষেত্র রয়েছে সেখানে যোগ্য ব্যক্তির অভাব দেখা দিবে। গ্রোতে গাঁ ভাসানোর মতো সবার সাথে তাল মিলিয়ে শুধু একমুখী হলে নিজের মেধার মুল্যায়ন হয় না। তবে এতোসবের পরেও দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তাবটি জনসাধারণের ক্ষেত্রে শিক্ষিত অনেকে দীর্ঘকালীন বেকারত্বের চক্রে আটকে পড়তে পারেন- এমন আশংকাও আছে অনেকের মধ্যে।
জান্নাতুল মাওয়া ছিমিন
শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।