মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
দার্শনিক কান্ট বলেছেন, আদর্শ মনুষ্যত্ব অর্জনই শিক্ষা। হাবার্ট রিড বলেছেন, মানুষকে মানুষ করাই হলো শিক্ষা। অথচ আজ আমাদের শিক্ষা অর্জন শুধু ভালো রেজাল্ট কিংবা চাকরিভিত্তিক হয়ে গেছে। শিক্ষা যদি পণ্য হয় তাহলে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। বস্তুত শিক্ষার মূল লক্ষ্য মানুষের আত্মশক্তি বা জ্ঞানশক্তির বিকাশের মাধ্যমে তার মনুষ্যত্ব ও বিবেককে জাগ্রত করা।
একদিকে শোনা যাচ্ছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের খুশির আমেজ, অন্যদিকে প্রত্যাশিত সেই জিপিএ-৫ না পেয়ে কেউ হতাশার জাল বুনছে। কেউ কেউ উচ্চ সিজিপিএ নিয়ে হচ্ছে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান, অপরদিকে কেউ হারিয়ে ফেলছে অশানুরূপ সিজিপিএ না পাওয়া কারণে। নব্য বিসিএস ক্যাডার স্বপ্ন দেখছে রঙিন ভবিষ্যতের, অপরদিকে কেউ আবার বিসিএসে উত্তীর্ণ হতে না পেরে শ্বাসরুদ্ধকর হতাশায় জীবনটাই শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছে। এটিই ছিল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল?
তরুণ প্রজন্মের এত কান্না, হতাশা, আত্মহত্যা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? জিপিএ-৫, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ সিজিপিএ, বিসিএস, সরকারি চাকরি- এই যে সাফল্যের গতানুগতিক চিন্তাধারা আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা সমাজে প্রচলিত, এই প্রতিযোগিতায় শিক্ষা ও জীবনের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যগুলোকে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সীমাবদ্ধতার গন্তব্য কোথায়। হয়তো এই সীমাবদ্ধতার কারণেই দেশটাও সীমাবদ্ধ রয়ে যাচ্ছে শুধু বেকারত্ব, হতাশা, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, শিশুহত্যা, অন্যায় ও অবিচারের মতো হাজারও অপকর্মের বেড়াজালে।
শিক্ষার উদ্দেশ্য তো হওয়া উচিত জ্ঞান অর্জন। যে জ্ঞান দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। যেই মূল্যবোধ বাধা দিবে অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির পথে পা বাড়াতে। যেই মূল্যবোধ বাধা দিবে নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিতে, প্রতিহত করবে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজকে। যেই মূল্যবোধ বন্ধ করবে যৌতুকের জন্য নির্যাতন, প্রতিহত করবে শিশুহত্যার মত জঘন্য কাজ। যেই মূল্যবোধ মুছে ফেলবে নারী, পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রকার বৈষম্য। তবেই তো সমাজটা ফিরে পাবে এক সুস্থ, স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবন।
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হলেই তো সুন্দর হবে সমাজ, উন্নত হবে জাতি আর বদলে যাবে দেশ। শিক্ষার মানদন্ড জিপিএ-৫, উচ্চ সিজিপিএ কিংবা চাকরি নয়; বরং তা হওয়া উচিত সততা, নিষ্ঠা, আদর্শ, ন্যায়পরায়ণতা ও দেশপ্রেম।
সাবরিনা সুলতানা তিশা
মতামতের জন্য সম্পাদক দায়ী নন
শুক্রবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২২
দার্শনিক কান্ট বলেছেন, আদর্শ মনুষ্যত্ব অর্জনই শিক্ষা। হাবার্ট রিড বলেছেন, মানুষকে মানুষ করাই হলো শিক্ষা। অথচ আজ আমাদের শিক্ষা অর্জন শুধু ভালো রেজাল্ট কিংবা চাকরিভিত্তিক হয়ে গেছে। শিক্ষা যদি পণ্য হয় তাহলে তার প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। বস্তুত শিক্ষার মূল লক্ষ্য মানুষের আত্মশক্তি বা জ্ঞানশক্তির বিকাশের মাধ্যমে তার মনুষ্যত্ব ও বিবেককে জাগ্রত করা।
একদিকে শোনা যাচ্ছে জিপিএ-৫ প্রাপ্তদের খুশির আমেজ, অন্যদিকে প্রত্যাশিত সেই জিপিএ-৫ না পেয়ে কেউ হতাশার জাল বুনছে। কেউ কেউ উচ্চ সিজিপিএ নিয়ে হচ্ছে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান, অপরদিকে কেউ হারিয়ে ফেলছে অশানুরূপ সিজিপিএ না পাওয়া কারণে। নব্য বিসিএস ক্যাডার স্বপ্ন দেখছে রঙিন ভবিষ্যতের, অপরদিকে কেউ আবার বিসিএসে উত্তীর্ণ হতে না পেরে শ্বাসরুদ্ধকর হতাশায় জীবনটাই শেষ করে দেওয়ার কথা ভাবছে। এটিই ছিল শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য ছিল?
তরুণ প্রজন্মের এত কান্না, হতাশা, আত্মহত্যা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? জিপিএ-৫, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চ সিজিপিএ, বিসিএস, সরকারি চাকরি- এই যে সাফল্যের গতানুগতিক চিন্তাধারা আর অসুস্থ প্রতিযোগিতা সমাজে প্রচলিত, এই প্রতিযোগিতায় শিক্ষা ও জীবনের মূল উদ্দেশ্য হারিয়ে যাচ্ছে। উদ্দেশ্যগুলোকে খুব ক্ষুদ্র পরিসরে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এই সীমাবদ্ধতার গন্তব্য কোথায়। হয়তো এই সীমাবদ্ধতার কারণেই দেশটাও সীমাবদ্ধ রয়ে যাচ্ছে শুধু বেকারত্ব, হতাশা, দুর্নীতি, নারী নির্যাতন, ধর্ষণ, শিশুহত্যা, অন্যায় ও অবিচারের মতো হাজারও অপকর্মের বেড়াজালে।
শিক্ষার উদ্দেশ্য তো হওয়া উচিত জ্ঞান অর্জন। যে জ্ঞান দেশ, সমাজ, রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে। শিক্ষার উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নৈতিক ও মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত করা। যেই মূল্যবোধ বাধা দিবে অন্যায়, অবিচার ও দুর্নীতির পথে পা বাড়াতে। যেই মূল্যবোধ বাধা দিবে নারীর দিকে লোলুপ দৃষ্টি দিতে, প্রতিহত করবে ধর্ষণের মতো ঘৃণ্য কাজকে। যেই মূল্যবোধ বন্ধ করবে যৌতুকের জন্য নির্যাতন, প্রতিহত করবে শিশুহত্যার মত জঘন্য কাজ। যেই মূল্যবোধ মুছে ফেলবে নারী, পুরুষ, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকল প্রকার বৈষম্য। তবেই তো সমাজটা ফিরে পাবে এক সুস্থ, স্বাভাবিক ও নিরাপদ জীবন।
শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য সফল হলেই তো সুন্দর হবে সমাজ, উন্নত হবে জাতি আর বদলে যাবে দেশ। শিক্ষার মানদন্ড জিপিএ-৫, উচ্চ সিজিপিএ কিংবা চাকরি নয়; বরং তা হওয়া উচিত সততা, নিষ্ঠা, আদর্শ, ন্যায়পরায়ণতা ও দেশপ্রেম।
সাবরিনা সুলতানা তিশা