কামরুজ্জামান
মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে
পৃথিবীতে যতগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে ভূমিকম্প। এর কারণ হচ্ছে-ভূমিকম্প সম্পর্কে পূর্বসতর্কতা জানতে না পারা। মানুষের দ্বারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার হলেও ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা ও তত্ত্ব বিশ্লেষণ চললেও ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা সম্পর্কে এখনও মানুষ সঠিক জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়নি। আর এ কারণেই কোনো একটি অঞ্চল বা দেশে ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি হয় ভয়াবহ।
ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা খুব অল্প সময়ে সংগঠিত হয় এবং ভূ-কম্পনের কারণে ভূপৃষ্ঠের ওপরের স্থাপনার ওপর প্রভাব পড়ে। মুহূর্তে বাড়িঘর, দালানকোঠা, বড় বড় ভবন, অট্টালিকা, সেতু, কালভার্ট সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এমনকি ভূমিকম্প সমুদ্রে হলে সুনামির মতো ঘটনাও ঘটে।
ভূমিকম্প আসলে কি? পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক শক্তির কারণে আলোড়ন সৃষ্টি হলে ভূপৃষ্ঠে কম্পন অনুভূত হয়। এই কম্পনই হচ্ছে ভূমিকম্প। প্রাকৃতিক শক্তির সৃষ্টি হয় পৃথিবীর অভ্যন্তরে খনিজ পদার্থের স্থানচ্যুতির কারণে এবং পৃথিবীর প্লেটগুলোর চলমান গতি শক্তির কারণে। আমরা জানি, পৃথিবী সাতটি প্রধান মহাদেশীয় প্লেট এবং আরও ২০টি ছোট ছোট প্লেটে বিভক্ত। এই সব প্লেট সবসময়ই চলমান। আমাদের বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিসীমা ভারত, বার্মা ও ইউরেশিয়ান এই তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভূ-অভ্যন্তরে খনিজ পদার্থের স্থানচ্যুতি, প্লেটগুলোর ঘূর্ণন গতি, ভূ-অভ্যন্তরে পানির প্রবেশ, শিলাতে ভাজের সৃষ্টি, ভূ-অভ্যন্তরে উত্তাপের ফলে অতিরিক্ত বাষ্পের উপস্থিতি ভূমিকম্প সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি বাংলাদেশে প্রায়শই ছোট ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। ভৌগোলিক সময় পুঞ্জি বিশ্লেষণে দেখা যায়-কোনো একটি এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বে ছোট ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হতে থাকে। এবং ওই স্থানে প্রচুর শক্তি সঞ্চয় হতে থাকে। সম্প্রতি ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় বৃহত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট এর কাছাকাছি ভারত ও বার্মা প্লেট এর আশপাশে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। গত ২৮ মার্চ মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০০০ জনের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। থাইল্যান্ডেও এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশেও ভূকম্প অনুভূত হয়। প্রাণহানি ছাড়াও মায়ানমারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে আবারও বাংলাদেশে মৃদু আকারের আরও একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মায়ানমারের ভূমিকম্পসহ বাংলাদেশ ও তার আশপাশের এলাকায় যেভাবে ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায়, যে কোনো সময় বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণত ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এটিকে মাঝারি মাপের ভূমিকম্প বলে বিবেচনা করা হয়। ৭.৫ মাত্রার বা তার ওপরে হলে বলা হয় উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প। এই অঞ্চলে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে এর মাধ্যমে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমাদের দেশে বড় মাপের ভূমিকম্প হলে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। ঢাকা শহরসহ সিলেট, চট্টগ্রাম ও প্রধান শহরগুলোতে অনেক ভবন ও বিল্ডিং মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ভেঙে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশে ভূমিকম্প মোকাবিলায় এখনও তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। নেই প্রশিক্ষিত জনবল ও বিশেষ বাহিনী। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে ৭ মাত্রার ওপরে ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরসহ সিলেট ও চট্টগ্রামের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ভবন নিমিষেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। মারা যেতে পারে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ। ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সংগঠিত হয়ে গেলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। আমাদের দেশ একটি জনবহুল। এদেশের নগরায়নগুলো হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এবং আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ অসচেতন। ফলে ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
ভূমিকম্প অনুভূত হলে করণীয় হচ্ছে-উচ্চ ভবন বা বিল্ডিং এ থাকলে দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া যাবে না। ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু (কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কু-লি) ধরে রাখতে হবে। ঘরের গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করতে হবে এবং এসব থেকে দূরে অবস্থান নিতে হবে। উঁচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করা যাবে না। বাসাবাড়ি বিল্ডিং উঁচু ভবন থেকে ঠা-া মাথায় ধৈর্য নিয়ে খোলা জায়গায় বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই তাড়াহুড়ো করা যাবে না। টিনশেড বাসাবাড়ি, আধাপাকা বাড়ি, টিনশেড বিল্ডিং এই জাতীয় বাড়িঘরে অবস্থান করলে ভূমিকম্প অনুভূত হলে তাৎক্ষণিক খোলা জায়গায় বের হয়ে আসতে হবে। তাহলেই হয়তো শারীরিক ক্ষতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি প্রয়োজন। ঢাকা শহরসহ সিলেট ও চট্টগ্রাম শহরের পুরাতন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ভবন চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। এটা ভবন মালিক করতে পারে অথবা সরকারিভাবে হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে আর্থিক একটা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। নতুন বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। শহরের আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মুখ ও পার্শ্ব রাস্তা প্রশস্ত করা প্রয়োজন। বিশেষ রেসকিউ টিম তৈরি করা অতিব জরুরি যারা ভূমিকম্প সংগঠিত হলে দ্রুত উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। উদ্ধার অভিযানে ব্যবহৃত আধুনিক টেকনোলজি ও সরঞ্জাম সংগ্রহে রাখা প্রয়োজন। এবং এসবের ব্যবহারে পারদর্শিতা প্রদর্শন প্রয়োজন। ভূমিকম্প হতে থাকলে করণীয় কি হবে সে সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতনতা করা প্রয়োজন। মোট কথা ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন, প্রয়োজন দিকনির্দেশনা। ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার আগেই সতর্ক হতে হবে। অন্যথায় হালে পানি পাওয়া যাবে না।
[ লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর ]
কামরুজ্জামান
মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে
সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫
পৃথিবীতে যতগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ রয়েছে তারমধ্যে সবচেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে ভূমিকম্প। এর কারণ হচ্ছে-ভূমিকম্প সম্পর্কে পূর্বসতর্কতা জানতে না পারা। মানুষের দ্বারা জ্ঞান-বিজ্ঞানের বড় বড় আবিষ্কার হলেও ভূমিকম্প সম্পর্কে বিস্তর গবেষণা ও তত্ত্ব বিশ্লেষণ চললেও ভূমিকম্পের আগাম সতর্কতা সম্পর্কে এখনও মানুষ সঠিক জ্ঞান লাভ করতে সক্ষম হয়নি। আর এ কারণেই কোনো একটি অঞ্চল বা দেশে ভূমিকম্প হলে ক্ষয়ক্ষতি হয় ভয়াবহ।
ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ যা খুব অল্প সময়ে সংগঠিত হয় এবং ভূ-কম্পনের কারণে ভূপৃষ্ঠের ওপরের স্থাপনার ওপর প্রভাব পড়ে। মুহূর্তে বাড়িঘর, দালানকোঠা, বড় বড় ভবন, অট্টালিকা, সেতু, কালভার্ট সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। এমনকি ভূমিকম্প সমুদ্রে হলে সুনামির মতো ঘটনাও ঘটে।
ভূমিকম্প আসলে কি? পৃথিবীর ভূ-অভ্যন্তরে প্রাকৃতিক শক্তির কারণে আলোড়ন সৃষ্টি হলে ভূপৃষ্ঠে কম্পন অনুভূত হয়। এই কম্পনই হচ্ছে ভূমিকম্প। প্রাকৃতিক শক্তির সৃষ্টি হয় পৃথিবীর অভ্যন্তরে খনিজ পদার্থের স্থানচ্যুতির কারণে এবং পৃথিবীর প্লেটগুলোর চলমান গতি শক্তির কারণে। আমরা জানি, পৃথিবী সাতটি প্রধান মহাদেশীয় প্লেট এবং আরও ২০টি ছোট ছোট প্লেটে বিভক্ত। এই সব প্লেট সবসময়ই চলমান। আমাদের বাংলাদেশের ভৌগোলিক পরিসীমা ভারত, বার্মা ও ইউরেশিয়ান এই তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। ভূ-অভ্যন্তরে খনিজ পদার্থের স্থানচ্যুতি, প্লেটগুলোর ঘূর্ণন গতি, ভূ-অভ্যন্তরে পানির প্রবেশ, শিলাতে ভাজের সৃষ্টি, ভূ-অভ্যন্তরে উত্তাপের ফলে অতিরিক্ত বাষ্পের উপস্থিতি ভূমিকম্প সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
আমরা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি বাংলাদেশে প্রায়শই ছোট ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে। ভৌগোলিক সময় পুঞ্জি বিশ্লেষণে দেখা যায়-কোনো একটি এলাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প হওয়ার পূর্বে ছোট ছোট ভূমিকম্প অনুভূত হতে থাকে। এবং ওই স্থানে প্রচুর শক্তি সঞ্চয় হতে থাকে। সম্প্রতি ভূতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা যায় বৃহত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় প্লেট এর কাছাকাছি ভারত ও বার্মা প্লেট এর আশপাশে প্রচুর শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। গত ২৮ মার্চ মায়ানমারে ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভূত হয়। মৃতের সংখ্যা প্রায় ৫০০০ জনের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। থাইল্যান্ডেও এর প্রভাব পড়ে। বাংলাদেশেও ভূকম্প অনুভূত হয়। প্রাণহানি ছাড়াও মায়ানমারের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এরই মধ্যে আবারও বাংলাদেশে মৃদু আকারের আরও একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে। মায়ানমারের ভূমিকম্পসহ বাংলাদেশ ও তার আশপাশের এলাকায় যেভাবে ভূমিকম্প অনুভূত হচ্ছে এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায়, যে কোনো সময় বাংলাদেশে বড় মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণত ৬ থেকে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হলে এটিকে মাঝারি মাপের ভূমিকম্প বলে বিবেচনা করা হয়। ৭.৫ মাত্রার বা তার ওপরে হলে বলা হয় উচ্চ মাত্রার ভূমিকম্প। এই অঞ্চলে যে পরিমাণ শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে এর মাধ্যমে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। আমাদের দেশে বড় মাপের ভূমিকম্প হলে খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে। ঢাকা শহরসহ সিলেট, চট্টগ্রাম ও প্রধান শহরগুলোতে অনেক ভবন ও বিল্ডিং মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে যেগুলো মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হলেই ভেঙে পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
বাংলাদেশে ভূমিকম্প মোকাবিলায় এখনও তেমন কোনো প্রস্তুতি নেই। নেই প্রশিক্ষিত জনবল ও বিশেষ বাহিনী। ধারণা করা হয়, বাংলাদেশে ৭ মাত্রার ওপরে ভূমিকম্প হলে ঢাকা শহরসহ সিলেট ও চট্টগ্রামের প্রায় ৫০ থেকে ৬০ ভাগ ভবন নিমিষেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে। মারা যেতে পারে অন্তত ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ। ভূমিকম্প এমন একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ-সংগঠিত হয়ে গেলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করা ছাড়া তেমন কিছু করার থাকে না। আমাদের দেশ একটি জনবহুল। এদেশের নগরায়নগুলো হয়েছে অপরিকল্পিতভাবে। এবং আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ অসচেতন। ফলে ভূমিকম্প হলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
ভূমিকম্প অনুভূত হলে করণীয় হচ্ছে-উচ্চ ভবন বা বিল্ডিং এ থাকলে দ্রুত নামার জন্য ভবন থেকে লাফিয়ে পড়া যাবে না। ভূমিকম্পের সময় সম্ভব হলে মাথার ওপর শক্তকরে বালিশ অথবা অন্য কোনো শক্ত বস্তু (কাঠবোর্ড, নরম কাপড় চোপড়ের কু-লি) ধরে রাখতে হবে। ঘরের গ্যাস এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করতে হবে এবং এসব থেকে দূরে অবস্থান নিতে হবে। উঁচু ভবন থেকে দ্রুত নামার জন্য লিফট ব্যবহার করা যাবে না। বাসাবাড়ি বিল্ডিং উঁচু ভবন থেকে ঠা-া মাথায় ধৈর্য নিয়ে খোলা জায়গায় বের হয়ে আসার চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই তাড়াহুড়ো করা যাবে না। টিনশেড বাসাবাড়ি, আধাপাকা বাড়ি, টিনশেড বিল্ডিং এই জাতীয় বাড়িঘরে অবস্থান করলে ভূমিকম্প অনুভূত হলে তাৎক্ষণিক খোলা জায়গায় বের হয়ে আসতে হবে। তাহলেই হয়তো শারীরিক ক্ষতি মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
ভূমিকম্প ঝুঁকি মোকাবিলায় এখনই প্রস্তুতি প্রয়োজন। ঢাকা শহরসহ সিলেট ও চট্টগ্রাম শহরের পুরাতন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ভবন চিহ্নিত করে ভেঙে ফেলা প্রয়োজন। এটা ভবন মালিক করতে পারে অথবা সরকারিভাবে হতে পারে। এই ক্ষেত্রে সরকারের উচিত হবে আর্থিক একটা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা। নতুন বিল্ডিং নির্মাণের ক্ষেত্রে বিল্ডিং কোড বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন। শহরের আবাসিক ভবন ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সম্মুখ ও পার্শ্ব রাস্তা প্রশস্ত করা প্রয়োজন। বিশেষ রেসকিউ টিম তৈরি করা অতিব জরুরি যারা ভূমিকম্প সংগঠিত হলে দ্রুত উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করতে পারবে। উদ্ধার অভিযানে ব্যবহৃত আধুনিক টেকনোলজি ও সরঞ্জাম সংগ্রহে রাখা প্রয়োজন। এবং এসবের ব্যবহারে পারদর্শিতা প্রদর্শন প্রয়োজন। ভূমিকম্প হতে থাকলে করণীয় কি হবে সে সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতনতা করা প্রয়োজন। মোট কথা ভূমিকম্প মোকাবিলায় সরকারীভাবে উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন, প্রয়োজন দিকনির্দেশনা। ভূমিকম্প সংগঠিত হওয়ার আগেই সতর্ক হতে হবে। অন্যথায় হালে পানি পাওয়া যাবে না।
[ লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ভূগোল বিভাগ, মুক্তিযোদ্ধা কলেজ, গাজীপুর ]