alt

সাময়িকী

‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’

: বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

এই শীতে আমি হই তোমার উদ্ভিদ
মহাদেব সাহা

শীত খুব তোমার পছন্দ, কিন্তু আমি

শীত-গ্রীষ্ম-বসন্তের চেয়ে তোমাকেই বেশি ভালোবাসি;

যে-কোনো ঋতু ও মাস, বৃষ্টি কিংবা বরফের চেয়ে

মনোরম তোমার সান্নিধ্য, আমি তাই

কার্ডিগান নয় বুকের উষ্ণতা দিয়ে ঢেকে দেই

তোমার শরীর-

আমি হই তোমার শীতের যোগ্য গরম পোশাক;

কোল্ড ক্রিম আর এই তুচ্ছ প্রসাধনী রেখে

আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করতে চাই

আরো হই শীত, হই শীতের উদ্ভিদ;

আমি হই সবচেয়ে বেশি তোমার শীতের উষ্ণ কাঁথা,

হই সকালের উপাদেয় রোদ, সারো শুভ্র সানবাথ।

আমিজানি নগ্নতাই শীতের স্বভাব, আমি তাই

তোমার নগ্ন গায়ে দিব্য শীতের কামিজ;

তুমি অবহেলা ভরে যাও আমি

শীতের শিশির হই ঘাসে-

দুপায়ে মাড়িয়ে যাও, তবু তোমার পায়ের রাঙা আলতা

হই আমি

এই শীতে তোমার নিবিড় উষ্ণতা ছাড়া নিউ ইয়ার্স গিফট

কী আর চাওয়ার বলো আছে!

অঘ্রানের শেষে
মহীবুল আজিজ

অঘ্রানের শেষে দেখতে গিয়েছিলাম ধানসিড়ি নদী,

এই ঠাণ্ডা হাওয়াই বয়ে গিয়েছিল রূপসী বাংলায়।

সন্তর্পণে হাঁটি, দাশ কবির বাড়ি দেখা যায় যদি,

ধানের সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগে আজও শীতসন্ধ্যায়।

পতিত পাতারা দেখা দেবে ফের নতুন পোশাকে,

অঘ্রাণ-ই অন্তিম নয়, বসন্ত তো থাকে কাছাকাছি।

ভাবি, কেন সেই বসন্ত ততটা টানলো না তাঁকে,

অথচ পাশ্চাত্য-স্নাতক অন্তরে কেন্দ্র ছিল প্রাচী।

মৃত সব পত্র যেরকম জৈব সার হয়ে যায়,

সেরকম মৃত পৃথিবীর গল্প জাগে তাঁর মনে।

অণু-পরমাণু রোদও উপস্থিত ঘন অরণ্য-ছায়ায়,

ছিলেন নীরব ধ্যানী কবিবর শব্দ-তপোবনে।

অঘ্রানে দাঁড়াই, কবির নিবাস অনেকটাই দূর,

গায়ে খুদ মেখে অদূরে দৌড়ায় মাঠের ইঁদুর।

অপ্রিয় স্মৃতির কাব্য
খালেদ হামিদী

বেঁচে থাকার মানেই যদি আয়-ব্যয়ের অঙ্ক

ক্রোধ কারোর দেখেই তবে মুষড়ে পড়া ত্রাসে

কেন, বলুন প্রভু, নিরব যদিও চারপাশে।

আহারকালে মার খেয়েও নির্বিকার কে সে?

এমন কত আহত আছে সবার জানা নেই।

ভাতের পাতে ছিন্ন মাথা কাকে চমকে দেয়?

এরইমধ্যে হাওয়া আনলে অঘ্রানের স্মৃতি

হারানো ক্ষেতে মু-ু রেখে বাসনে চোখ খোলে।

কীভাবে সম্ভব হয়েছে জানার আগে, দেখো,

কাছে ভিখারি, তবুও ভিড় ভাপা পিঠার ভ্যানে।

হেমন্তের কাকতাড়–য়া
হাসান কল্লোল

হেমন্তের ঘ্রাণ নিতে চলো যাই

হাওরের ঢালে!

ডালে ডালে শোকের মোড়কে বিষণœতা

ঝুলছে! আর তোমরা বলছো চলো গাই ফসলের গান।

প্রাণ না পেলে কী করে এত বিশাল

কাকতাড়–য়াকে রেখে নরম শীতের রাতে আমি যাব!

চলে যাবার যে সে তো গেছে শরতের কাশের ধারায়

আমি আর তুমি হেমন্তের বন্ধু

এই খড়ের গাদায় কাটাই সকাল দুপুর সন্ধ্যা

রাত্রিকালে আমি থেকে যাব কাকতাড়–য়ার পাশে!

মটরশুটির সেদ্ধ তাপে সময় কাটাব একা।

তুমি চলে যেও শীতের আগাম শিশিরে।

হেমন্তের রাতে একাকীত্ব

সোনালি খড়ে ভরা কাকতাড়–য়ার বুক থেকে

চকচকে বেদনার শস্য বিলায়!

অঘ্রাণের শেষে
আব্দুল্লাহ জামিল

কাশফুল ঝরে গেছে অনেক আগেই

পাতা-ঝরা বাতাস নূপুরের বাজনা বাজায়

পাকা ধানের ছরাগুলো আনন্দে নেচে ওঠে

গ্রাম-বাংলা নবান্নের হাসিতে উদ্ভাসিত।

এমন ক্রান্তিকালে এই উৎসবের সময়

বড়ই বেমানান লাগে যেনো সব কিছু

হে প্রভু, ধৈর্য-ধারণের শক্তি দাও আমাদের

আগামী শীতের পরে বসন্তে পৌঁছানোর।

মরমি সবুজ
মুজিব ইরম

চারপাশ এতটা সবুজ চোখ পুড়ে যায়

আমার

মন পুড়ে যায়...

তোমার বাড়ির পথ

শীতে ভেজা

শুয়ে থাকে ঘাসে ভেজা অলস দুপুর...

তোমার উঠানে রোজ

নৃত্য করে চাঁদ

গাছেরা বিছিয়ে রাখে পুষ্পফোটা ফাঁদ

বিষণœ নূপুর...

এতই মরমি হাওয়া

সুরেলা চলন

চোখ পুড়ে যায় আমার মন পুড়ে যায়, হায়!

যতটা দূরত্ব পোহায় অঘ্রান
ওবায়েদ আকাশ

প্রতিদিন ঘুম ভেঙে সুলতানপুরে আসি

প্রযতœ ভালবাসা ঘিরে

বসে থাকেন নৌকোর অসুখ

পারাপার জুড়ে থাকে স্বাস্থ্যগত হাঁটা...

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক প্রণম্য মীমাংসা ছিল

ভোরের শিশিরে শুধু পথ্য লিখে দিত-

¯েœহলতা প্রাপ্তবয়স্ক হলো

ভোরবেলা অথৈই শিশিরে হাঁটে

নারকেল পাতারা বলে

নকশাকাটা শুশ্রƒষা গড়ায় হেমন্ত সন্ধ্যায়...

নিরিবিলি ছাদে- সুলতানপুর

এতটা দূরত্ব পোহায় অঘ্রানে-

কালো চিতাবাঘ
মাসুদার রহমান

কুয়াশার মাঠে কালো বেড়াল গুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে

ঘুমিয়ে পড়েছে তাবু সিপাহীরা; বাইরে

মশাল আলো

কুয়াশা থাবার নিচে ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে

হয়তো কিছুই নয়; ষড়ঋতুর এক চক্র- শিশিরের টুপটাপ

যেন কারা ফিসফাস কথা বলছে ঘোর ষড়যন্ত্রের

কেটে নেওয়া অগ্রহায়ণ ধানমাঠের মধ্যে যাকে কালো বেড়াল

বলেই জেনেছি-

আসলে সে হিমাঙ্কের নিচে ধীরে থাবা নামিয়ে ফেলা

ক্ষিপ্র গতির এক চিতাবাঘ

তার ছায়া কাঁপছে দূর দিগন্তে; জানালার শার্সিতে

ঘুম ভেঙে আমাদের মধ্যরাতের ঠোঁট ভিজে নেয় জল ভরা গ্লাস

অঘ্রানঘটিত
পিয়াস মজিদ

বারান্দারও তো ঘুম আছে

আমার মতো সেও

জাগল সকালসকাল

তার সঙ্গে দেখা হলো

সামনে আকাশ বিছানো

কিছু হেমন্তের পাখি

উড়তে উড়তে

গান ছিটিয়ে চলল

বসে থাকা

আমাদের দিকে

পুরনো অক্ষর
জুনান নাশিত

তোমাকে ভালোবাসি না

তবু তোমার কথাই ভাবি

মহুয়া জমিন আগেও যেমন ছিল

এখনও তে¤িœ আছে

খুব দূরে কোথাও নীরব গন্ধ কুসুমের চাঁদ

আরো কাছে নেমে এলে

আবছা আলোয় তোমাকেই খুঁজি।

শ্বাসকষ্টে জলবিন্দুও পাহাড়সম

উপেক্ষিত তারার কথনে

সময়ের ভার চিড়েচ্যাপ্টা হলে

জাগতিক শব্দভূমি চোখের তারায় পোড়ে।

আমি তোমাকে ভালোবাসি না

তবুও তাকিয়ে দেখি

তোমার কষ্টের মাঠ কতোটা রঙিন হলো আজ?

কতোটুকু মায়া ঠোঁটের কার্নিশ বেয়ে

উড়ে গেলো ভিন্নতর হাওয়ায়।

আগুনে সঙ্গীতধ্বনি পোড়ে

রক্তশূন্য দিনে তাই

ঘুরে ঘুরে পুরনো অক্ষরগুলো আঁকি।

রং
পরিতোষ হালদার

এক.

যেতে যেতে ধানফল, ছায়াদের কিচিরমিচির...

কাল এলে তুমিও বিরাম, স্পর্শে খুলে যাবে ছল। খোঁজ নাও- ডানায় ডানায় যার জন্মের জুন।

যেন নির্জন আজ শিশিরের ট্রেন...

দুই.

প্রাণের ’পরে দেহ; যাকে ভাই বলে ডাকি। দুই হাতে অন্ধকার আনো, তুমি-আমি একটাই ফুল।

আমাদের অন্ধকার রাতভর ফোটে।

তিন.

চকোলেট খুলে দেখো, সমূহ সকাল; ঘুম পাহারা দিতে দিতে কেমন কুয়াশা-

হাওয়াদের চিৎকার ধ্বনি।

যাকে লাল বলো, চোখে চোখে সেও রং।

চার.

প্রথম আমি... দ্বিতীয় আমিদের আমি... তৃতীয় বোধ নিয়ে হেঁটে যাব ঘাসের দিকে।

দাদরা পার হলে তুমিতুমি সরাইখানা।

তারপর বিশ্রাম... অনন্ত বিজ্ঞানমেলা।

শুরু আসলে নশ্বরতা
জাফর সাদেক

সব শুরুই কিন্তু শুরু নয়

ওদিকে সব জন্ম কিন্তু জন্ম নয়

যেমন ভ্রƒণ-আতঙ্কে বাধা নয়

উল্টোতরীর শীৎকারে কম্পিত আঁধার

যাযাবরের কাছে যেমন হনন-প্রভাত রক্তাক্ত নয়

দেবী যদি পুনশ্চ বলে শুরু করে আবার

সে শুরু আদৌ শুরু নয়

বরং স্বর্গের ক্লান্তিহীন ভোগের অর্থ দাঁড়ায়

শুরুতেই পড়ে থাকা- শুরুর কাছে পুনরায় শুরু

স্বর্গের দেবীয় আখ্যান রেখে বরং চলো যাই

অঘ্রানের রুহুল বিলের নাড়ার শয্যায়

ওখানে শুরুর গোধূলি আজও খুনি হয়ে মধুর খুন

সন্ধের কাননে শরীরে দু’ফোঁটা শিশির ঝরলে

বলবো, এইতো শুরু- যে শুরুর জখমে নামে ভোর

হৃৎকুসুম
আফরোজা সোমা

মানুষ এমন হয়, ‘ভালোবাসি’ বলে নামায় পথে,

তারপর একদিন আচম্বিতে ছেড়ে দেয় হাত।

মানুষের দিও না দোষ, ঋতুও থাকে না বছর ভর

কারো কারো হৃদয়ও যদিবা ঋতুর মতন হয়

একদিন হয়তোবা সে তোমার ছেড়ে দেবে হাত।

মানুষ এমন হয়, ‘ভালোবাসি’ বলে নামিয়ে পথে

একদিন মাখো-মাখো প্রেমে তার হাঁসফাঁস লাগে;

প্রেম সে আঁটোসাঁটো জামার মতন খুলে রেখে দেয়।

মানুষের দিও না দোষ, তোমার হৃদয়েরে

যদি না দিতে পারো সঙ্গ তুমি

তোমার প্রেমের মানুষ

সকল প্রেম নিয়ে

দূরে সরে যাবে।

পৃথিবী কঠোর দেশ

এইখানে প্রেমিকের বেশে প্রতারক

সাধুর বেশে শয়তান

আর ভক্তের বেশে থাকে গুপ্তঘাতক।

নিজেকে বাজি রেখে যারে দেবে তোমার হৃদয়

‘ভালোবাসি’ বলে তোমাকে নামিয়ে পথে

তার যদি একদিন তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হয়

সেদিন হৃদি-আকুল-রাতে

আপন প্রেমের নামে

বিরহের ভার আরো প্রেমে বয়ে নিতে নিতে

নিজেকে বলো, মানুষ এমন হয়

‘ভালোবাসি’ বলে নামায় পথে।

মৃগশীর্ষ নক্ষত্রের চোখে
চন্দন চৌধুরী

কোনো এককালে আমি ধানই ছিলাম

আজ আল হয়ে পড়ে আছি বেদনার মতো

আমি আমাকে দেখার জন্য আরও একবার

সবুজ রোদের মতো ধানের কাছে যাই

আর ভাবি

এই প্রিয়পাঠ

নিজের কাছে যেতে যেতে

নিজেকে আরাধ্য করে মাটি ও মনের যোগ

খুব সন্তর্পণে ক্ষেতের আলের মতো

সুন্দরের পাশে শুয়ে শুয়ে

মৃগশীর্ষ নক্ষত্রের চোখে নিজেকে মুখস্থ করা

শিহরনের গোপনীয়তা
শারদুল সজল

এই দিলাম স্পর্শ, তুলে রাখো-

না রাখলে পৃথিবী জানবে;

গাছ হয়ে রোপণ হবে হাইওয়ের দুপাশে

ভারি জোছনাস্নাত রাতে

এই স্পর্শটুকু তুলে রাখো

বুকে, ঠোঁটের মধ্যভাঁজে, কোষে

নরম বাতাসে

নয়তো ভূমিধস হবে নিশ্বাসে

কিছু জিজ্ঞেস করো না

খয়েরি রঙের শিহরনগুলো

অলৌকিক ডুবুরি হয়ে তুলে আনছে

তোমার লাজুক চড়–ইয়ের বৈমানিক ভ্রমণ

ভয় নেই প্রিয়তমা- মিশে যাও রক্তে

আমার শরীর সংগীতে

প্রদক্ষিণ করো- দিন রাতে

এই দিলাম স্পর্শ, তুলে রাখো-

না রাখলে পৃথিবী জানবে

এই হেমন্তে
নাইমুল করিম

এই হেমন্তে

প্রতিদিন ভোরভ্রমণে তোমার হাসিঠাট্টা খুঁটিনাটি

আরও কত কী, দেখতে দেখতে

আমার ¯œায়ু উত্তেজিত হয়, রক্তচাপ বাড়ে

হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে

ও বাদামি রঙের চোখ সুগঠিত রমণী

তোমার কি কোনোভাবেই বুঝে আসে না?

সাম্প্রতিক আখ্যান
চামেলী বসু

তোমাদের মুখের ভাঁজে জমে আছে

প্রাগৈতিহাসিক পাপ, অযাচিত বঞ্চনা,

খুটে খাওয়া পাখির স্বভাব-

সরল রেখার মতো যাপিত জীবন

অনিবার্য পতনে উন্মুখ-

যেন প্রতিবেশির স্নেহের কাছে পরজিত হতে হতে

বদলে যাওয়া অঘ্রানের সোনালি ফসল।

নিয়ম ও নিয়তির কাছে নতজানু

নিত্য বুকে পোষো দ্রোহের আগুন

হাতের রেখায় লুকাও আপোসের দাগ!

অথচ

বিরান জমিনের শূন্যতায়

অসাড় জীবন জ্বালিয়ে জানা যাবে একদিন-

পিঠ ঠেকে যাবার মতো কোন দেওয়াল

আর অবশিষ্ট নেই।

রুলি পরা হেমন্ত
রিক্তা রিচি

দুয়ারে হেমন্ত দাঁড়িয়ে আছে। হাতে পরেছে কারুকাজ করা সোনালি রুলি। শিশিরে ভেজা ঘাস মাড়িয়ে দূরের স্টেশনের ট্রেন ধরে, ঝকঝক ঝকঝক শব্দের তরঙ্গ পেরিয়ে, হকারের হাঁকডাক, স্টেশন ভিক্ষুকের গজল, যাত্রীদের ভিড় ঠেলে কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমেছে। অগ্রহায়ণের অফ হোয়াইট রঙের ভোরে যখন আকাশে কুসুমের মতো আলোরা চিকচিক করছে, তখন রিকশার ক্রিংক্রিং, গাড়ির হর্ন, সাইরেনকে পাশ কাটিয়ে কেবল দরজায় দাঁড়িয়েছে।

আমাকে ডাকছে। ধানি রঙের শাড়ির সঙ্গে সে পরেছে সবুজ ব্লাউজ ফুল ও ফসলের ক্ষেতে কোমল দোলা লাগলো। শীতের শরীর থেকে আধো আধো ঠা-া ঝরে পড়তেই, আমার চুল থেকে নখে অদ্ভুত শিহরন অনুভব করলাম।

তাকে শহর দেখাতে নিয়ে গেলাম। হাতিরঝিল, রমনা, বোটানিক্যাল গার্ডেনে সে দিব্যি মন খুলে নাচলো। থই থই জলের মতো তার দেহসৌষ্ঠবে অনুভব করলাম রমণীর যৌবন। জলপাইয়ের পাতা চুয়ে চুয়ে যে প্রেম ঝরে পড়ছে, যে বাঁশিতে বেজেছে শহরের ক্ষত সারানোর সুখ তা স্থায়ী হয়নি। চোখে এলাচ পাতার অন্ধকার নেমে এলে সে বিদায় নিলো।

বলে গেল- ‘তোমাদের ভীষণ অসুখ। এই ধুলা ও দূষণের রাজ্যে তোমরা হাসো কী করে?’

আফটারনুন স্যাডনেস
চাঁদনী মাহরুবা

ওশেনিয়ায় কোনো বর্ষাকাল নেই। বাগানের কাঠ

আলুর গাছটা কেউ চুরি করে নিতে পারে,এমনি অগুরুত্বপূর্ণ

ভাবনা থেকে তারে একটা মাচা করে দিতে পারো!

দূর আলাপনে জানাবার মতো, এর অধিক কোন কথা থাকে না আমাদের।

বিগত শনিবারকে মনে হয় বিকেলের পাশে ফুটে থাকা মেরুন কার্নেশন।

পুরানো সকল ছুরিকাঘাত হাঁটু গেড়ে বসে থাকে, অ্যাসিরিয়ান চার্চের সামনে।

আমরা রেডিও শুনতে শুনতে যে যার মতো বাড়ি ফিরি একা-

দূরবর্তী কোনো শহরের খবর ভেসে আসে অস্পষ্ট উচ্চারণে...

“সাঁতার কাটতে গিয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু। ধারণা করা যায়,

কিশোরীটি হাঙ্গরকে ডলফিন মাছ ভেবে ঝাপ দিয়েছিলো”।

ছবি

সিলভিয়া প্লাথের মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা ও আত্মবিনাশ

ছবি

সমসাময়িক মার্কিনি ‘সহস্রাব্দের কণ্ঠস্বর’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

অন্য নিরিখে দেখা

ছবি

হেলাল হাফিজের চলে যাওয়া

ছবি

হেলাল হাফিজের কবিতা

ছবি

কেন এত পাঠকপ্রিয় হেলাল হাফিজ

ছবি

নারী শিক্ষাবিদ : বেগম রোকেয়া

ছবি

বাসার তাসাউফ

ছবি

‘জগদ্দল’-এর শক্তি ও সমরেশ বসু

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

রুবেন দারিও-র কবিতা

ছবি

কবিতা পড়া, কবিতা লেখা

ছবি

‘ধুলোয় সব মলিন’, পাঠকের কথা

ছবি

মহত্ত্বর কবি সিকদার আমিনুল হক

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

কয়েকটি অনুগল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

যেভাবে লেখা হলো ‘শিকিবু’

ছবি

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলোর কবিতা

ছবি

সিকদার আমিনুল হকের গদ্য

ছবি

সিকদার আমিনুল হককে লেখা অগ্রজ ও খ্যাতিমান লেখক-সম্পাদকের চিঠি

ছবি

ফিওদর দস্তয়েভস্কি: রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

একজন গফুর মল্লিক

ছবি

অগ্রবীজের ‘অনুবাদ সাহিত্য’ সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

গোপন কথা

ছবি

র’নবীর টোকাই-কথন

ছবি

শিল্পচর্চায় তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি ইনোভেটিভ

ছবি

শামসুর রাহমানের কবিতা বৈভব ও বহুমাত্রিকতা

ছবি

উইলিয়াম রাদিচের অধ্যয়নে অনন্য রবীন্দ্রনাথ

দিলারা হাফিজের কবিতা

ছবি

অবরুদ্ধ বর্ণমালার শৃঙ্খলমুক্তি

ছবি

আহমদুল কবির স্মরণে

ছবি

আহমদুল কবিরের সদাশয়তা

ছবি

রবীন্দ্রসংগীতের অপাপভূমি

tab

সাময়িকী

‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’

বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪

এই শীতে আমি হই তোমার উদ্ভিদ
মহাদেব সাহা

শীত খুব তোমার পছন্দ, কিন্তু আমি

শীত-গ্রীষ্ম-বসন্তের চেয়ে তোমাকেই বেশি ভালোবাসি;

যে-কোনো ঋতু ও মাস, বৃষ্টি কিংবা বরফের চেয়ে

মনোরম তোমার সান্নিধ্য, আমি তাই

কার্ডিগান নয় বুকের উষ্ণতা দিয়ে ঢেকে দেই

তোমার শরীর-

আমি হই তোমার শীতের যোগ্য গরম পোশাক;

কোল্ড ক্রিম আর এই তুচ্ছ প্রসাধনী রেখে

আমি তোমাকে বিচ্ছিন্ন করতে চাই

আরো হই শীত, হই শীতের উদ্ভিদ;

আমি হই সবচেয়ে বেশি তোমার শীতের উষ্ণ কাঁথা,

হই সকালের উপাদেয় রোদ, সারো শুভ্র সানবাথ।

আমিজানি নগ্নতাই শীতের স্বভাব, আমি তাই

তোমার নগ্ন গায়ে দিব্য শীতের কামিজ;

তুমি অবহেলা ভরে যাও আমি

শীতের শিশির হই ঘাসে-

দুপায়ে মাড়িয়ে যাও, তবু তোমার পায়ের রাঙা আলতা

হই আমি

এই শীতে তোমার নিবিড় উষ্ণতা ছাড়া নিউ ইয়ার্স গিফট

কী আর চাওয়ার বলো আছে!

অঘ্রানের শেষে
মহীবুল আজিজ

অঘ্রানের শেষে দেখতে গিয়েছিলাম ধানসিড়ি নদী,

এই ঠাণ্ডা হাওয়াই বয়ে গিয়েছিল রূপসী বাংলায়।

সন্তর্পণে হাঁটি, দাশ কবির বাড়ি দেখা যায় যদি,

ধানের সুঘ্রাণ নাকে এসে লাগে আজও শীতসন্ধ্যায়।

পতিত পাতারা দেখা দেবে ফের নতুন পোশাকে,

অঘ্রাণ-ই অন্তিম নয়, বসন্ত তো থাকে কাছাকাছি।

ভাবি, কেন সেই বসন্ত ততটা টানলো না তাঁকে,

অথচ পাশ্চাত্য-স্নাতক অন্তরে কেন্দ্র ছিল প্রাচী।

মৃত সব পত্র যেরকম জৈব সার হয়ে যায়,

সেরকম মৃত পৃথিবীর গল্প জাগে তাঁর মনে।

অণু-পরমাণু রোদও উপস্থিত ঘন অরণ্য-ছায়ায়,

ছিলেন নীরব ধ্যানী কবিবর শব্দ-তপোবনে।

অঘ্রানে দাঁড়াই, কবির নিবাস অনেকটাই দূর,

গায়ে খুদ মেখে অদূরে দৌড়ায় মাঠের ইঁদুর।

অপ্রিয় স্মৃতির কাব্য
খালেদ হামিদী

বেঁচে থাকার মানেই যদি আয়-ব্যয়ের অঙ্ক

ক্রোধ কারোর দেখেই তবে মুষড়ে পড়া ত্রাসে

কেন, বলুন প্রভু, নিরব যদিও চারপাশে।

আহারকালে মার খেয়েও নির্বিকার কে সে?

এমন কত আহত আছে সবার জানা নেই।

ভাতের পাতে ছিন্ন মাথা কাকে চমকে দেয়?

এরইমধ্যে হাওয়া আনলে অঘ্রানের স্মৃতি

হারানো ক্ষেতে মু-ু রেখে বাসনে চোখ খোলে।

কীভাবে সম্ভব হয়েছে জানার আগে, দেখো,

কাছে ভিখারি, তবুও ভিড় ভাপা পিঠার ভ্যানে।

হেমন্তের কাকতাড়–য়া
হাসান কল্লোল

হেমন্তের ঘ্রাণ নিতে চলো যাই

হাওরের ঢালে!

ডালে ডালে শোকের মোড়কে বিষণœতা

ঝুলছে! আর তোমরা বলছো চলো গাই ফসলের গান।

প্রাণ না পেলে কী করে এত বিশাল

কাকতাড়–য়াকে রেখে নরম শীতের রাতে আমি যাব!

চলে যাবার যে সে তো গেছে শরতের কাশের ধারায়

আমি আর তুমি হেমন্তের বন্ধু

এই খড়ের গাদায় কাটাই সকাল দুপুর সন্ধ্যা

রাত্রিকালে আমি থেকে যাব কাকতাড়–য়ার পাশে!

মটরশুটির সেদ্ধ তাপে সময় কাটাব একা।

তুমি চলে যেও শীতের আগাম শিশিরে।

হেমন্তের রাতে একাকীত্ব

সোনালি খড়ে ভরা কাকতাড়–য়ার বুক থেকে

চকচকে বেদনার শস্য বিলায়!

অঘ্রাণের শেষে
আব্দুল্লাহ জামিল

কাশফুল ঝরে গেছে অনেক আগেই

পাতা-ঝরা বাতাস নূপুরের বাজনা বাজায়

পাকা ধানের ছরাগুলো আনন্দে নেচে ওঠে

গ্রাম-বাংলা নবান্নের হাসিতে উদ্ভাসিত।

এমন ক্রান্তিকালে এই উৎসবের সময়

বড়ই বেমানান লাগে যেনো সব কিছু

হে প্রভু, ধৈর্য-ধারণের শক্তি দাও আমাদের

আগামী শীতের পরে বসন্তে পৌঁছানোর।

মরমি সবুজ
মুজিব ইরম

চারপাশ এতটা সবুজ চোখ পুড়ে যায়

আমার

মন পুড়ে যায়...

তোমার বাড়ির পথ

শীতে ভেজা

শুয়ে থাকে ঘাসে ভেজা অলস দুপুর...

তোমার উঠানে রোজ

নৃত্য করে চাঁদ

গাছেরা বিছিয়ে রাখে পুষ্পফোটা ফাঁদ

বিষণœ নূপুর...

এতই মরমি হাওয়া

সুরেলা চলন

চোখ পুড়ে যায় আমার মন পুড়ে যায়, হায়!

যতটা দূরত্ব পোহায় অঘ্রান
ওবায়েদ আকাশ

প্রতিদিন ঘুম ভেঙে সুলতানপুরে আসি

প্রযতœ ভালবাসা ঘিরে

বসে থাকেন নৌকোর অসুখ

পারাপার জুড়ে থাকে স্বাস্থ্যগত হাঁটা...

চিকিৎসা বিজ্ঞানে এক প্রণম্য মীমাংসা ছিল

ভোরের শিশিরে শুধু পথ্য লিখে দিত-

¯েœহলতা প্রাপ্তবয়স্ক হলো

ভোরবেলা অথৈই শিশিরে হাঁটে

নারকেল পাতারা বলে

নকশাকাটা শুশ্রƒষা গড়ায় হেমন্ত সন্ধ্যায়...

নিরিবিলি ছাদে- সুলতানপুর

এতটা দূরত্ব পোহায় অঘ্রানে-

কালো চিতাবাঘ
মাসুদার রহমান

কুয়াশার মাঠে কালো বেড়াল গুড়ি দিয়ে এগিয়ে আসছে

ঘুমিয়ে পড়েছে তাবু সিপাহীরা; বাইরে

মশাল আলো

কুয়াশা থাবার নিচে ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসে

হয়তো কিছুই নয়; ষড়ঋতুর এক চক্র- শিশিরের টুপটাপ

যেন কারা ফিসফাস কথা বলছে ঘোর ষড়যন্ত্রের

কেটে নেওয়া অগ্রহায়ণ ধানমাঠের মধ্যে যাকে কালো বেড়াল

বলেই জেনেছি-

আসলে সে হিমাঙ্কের নিচে ধীরে থাবা নামিয়ে ফেলা

ক্ষিপ্র গতির এক চিতাবাঘ

তার ছায়া কাঁপছে দূর দিগন্তে; জানালার শার্সিতে

ঘুম ভেঙে আমাদের মধ্যরাতের ঠোঁট ভিজে নেয় জল ভরা গ্লাস

অঘ্রানঘটিত
পিয়াস মজিদ

বারান্দারও তো ঘুম আছে

আমার মতো সেও

জাগল সকালসকাল

তার সঙ্গে দেখা হলো

সামনে আকাশ বিছানো

কিছু হেমন্তের পাখি

উড়তে উড়তে

গান ছিটিয়ে চলল

বসে থাকা

আমাদের দিকে

পুরনো অক্ষর
জুনান নাশিত

তোমাকে ভালোবাসি না

তবু তোমার কথাই ভাবি

মহুয়া জমিন আগেও যেমন ছিল

এখনও তে¤িœ আছে

খুব দূরে কোথাও নীরব গন্ধ কুসুমের চাঁদ

আরো কাছে নেমে এলে

আবছা আলোয় তোমাকেই খুঁজি।

শ্বাসকষ্টে জলবিন্দুও পাহাড়সম

উপেক্ষিত তারার কথনে

সময়ের ভার চিড়েচ্যাপ্টা হলে

জাগতিক শব্দভূমি চোখের তারায় পোড়ে।

আমি তোমাকে ভালোবাসি না

তবুও তাকিয়ে দেখি

তোমার কষ্টের মাঠ কতোটা রঙিন হলো আজ?

কতোটুকু মায়া ঠোঁটের কার্নিশ বেয়ে

উড়ে গেলো ভিন্নতর হাওয়ায়।

আগুনে সঙ্গীতধ্বনি পোড়ে

রক্তশূন্য দিনে তাই

ঘুরে ঘুরে পুরনো অক্ষরগুলো আঁকি।

রং
পরিতোষ হালদার

এক.

যেতে যেতে ধানফল, ছায়াদের কিচিরমিচির...

কাল এলে তুমিও বিরাম, স্পর্শে খুলে যাবে ছল। খোঁজ নাও- ডানায় ডানায় যার জন্মের জুন।

যেন নির্জন আজ শিশিরের ট্রেন...

দুই.

প্রাণের ’পরে দেহ; যাকে ভাই বলে ডাকি। দুই হাতে অন্ধকার আনো, তুমি-আমি একটাই ফুল।

আমাদের অন্ধকার রাতভর ফোটে।

তিন.

চকোলেট খুলে দেখো, সমূহ সকাল; ঘুম পাহারা দিতে দিতে কেমন কুয়াশা-

হাওয়াদের চিৎকার ধ্বনি।

যাকে লাল বলো, চোখে চোখে সেও রং।

চার.

প্রথম আমি... দ্বিতীয় আমিদের আমি... তৃতীয় বোধ নিয়ে হেঁটে যাব ঘাসের দিকে।

দাদরা পার হলে তুমিতুমি সরাইখানা।

তারপর বিশ্রাম... অনন্ত বিজ্ঞানমেলা।

শুরু আসলে নশ্বরতা
জাফর সাদেক

সব শুরুই কিন্তু শুরু নয়

ওদিকে সব জন্ম কিন্তু জন্ম নয়

যেমন ভ্রƒণ-আতঙ্কে বাধা নয়

উল্টোতরীর শীৎকারে কম্পিত আঁধার

যাযাবরের কাছে যেমন হনন-প্রভাত রক্তাক্ত নয়

দেবী যদি পুনশ্চ বলে শুরু করে আবার

সে শুরু আদৌ শুরু নয়

বরং স্বর্গের ক্লান্তিহীন ভোগের অর্থ দাঁড়ায়

শুরুতেই পড়ে থাকা- শুরুর কাছে পুনরায় শুরু

স্বর্গের দেবীয় আখ্যান রেখে বরং চলো যাই

অঘ্রানের রুহুল বিলের নাড়ার শয্যায়

ওখানে শুরুর গোধূলি আজও খুনি হয়ে মধুর খুন

সন্ধের কাননে শরীরে দু’ফোঁটা শিশির ঝরলে

বলবো, এইতো শুরু- যে শুরুর জখমে নামে ভোর

হৃৎকুসুম
আফরোজা সোমা

মানুষ এমন হয়, ‘ভালোবাসি’ বলে নামায় পথে,

তারপর একদিন আচম্বিতে ছেড়ে দেয় হাত।

মানুষের দিও না দোষ, ঋতুও থাকে না বছর ভর

কারো কারো হৃদয়ও যদিবা ঋতুর মতন হয়

একদিন হয়তোবা সে তোমার ছেড়ে দেবে হাত।

মানুষ এমন হয়, ‘ভালোবাসি’ বলে নামিয়ে পথে

একদিন মাখো-মাখো প্রেমে তার হাঁসফাঁস লাগে;

প্রেম সে আঁটোসাঁটো জামার মতন খুলে রেখে দেয়।

মানুষের দিও না দোষ, তোমার হৃদয়েরে

যদি না দিতে পারো সঙ্গ তুমি

তোমার প্রেমের মানুষ

সকল প্রেম নিয়ে

দূরে সরে যাবে।

পৃথিবী কঠোর দেশ

এইখানে প্রেমিকের বেশে প্রতারক

সাধুর বেশে শয়তান

আর ভক্তের বেশে থাকে গুপ্তঘাতক।

নিজেকে বাজি রেখে যারে দেবে তোমার হৃদয়

‘ভালোবাসি’ বলে তোমাকে নামিয়ে পথে

তার যদি একদিন তোমাকে ছেড়ে যেতে ইচ্ছে হয়

সেদিন হৃদি-আকুল-রাতে

আপন প্রেমের নামে

বিরহের ভার আরো প্রেমে বয়ে নিতে নিতে

নিজেকে বলো, মানুষ এমন হয়

‘ভালোবাসি’ বলে নামায় পথে।

মৃগশীর্ষ নক্ষত্রের চোখে
চন্দন চৌধুরী

কোনো এককালে আমি ধানই ছিলাম

আজ আল হয়ে পড়ে আছি বেদনার মতো

আমি আমাকে দেখার জন্য আরও একবার

সবুজ রোদের মতো ধানের কাছে যাই

আর ভাবি

এই প্রিয়পাঠ

নিজের কাছে যেতে যেতে

নিজেকে আরাধ্য করে মাটি ও মনের যোগ

খুব সন্তর্পণে ক্ষেতের আলের মতো

সুন্দরের পাশে শুয়ে শুয়ে

মৃগশীর্ষ নক্ষত্রের চোখে নিজেকে মুখস্থ করা

শিহরনের গোপনীয়তা
শারদুল সজল

এই দিলাম স্পর্শ, তুলে রাখো-

না রাখলে পৃথিবী জানবে;

গাছ হয়ে রোপণ হবে হাইওয়ের দুপাশে

ভারি জোছনাস্নাত রাতে

এই স্পর্শটুকু তুলে রাখো

বুকে, ঠোঁটের মধ্যভাঁজে, কোষে

নরম বাতাসে

নয়তো ভূমিধস হবে নিশ্বাসে

কিছু জিজ্ঞেস করো না

খয়েরি রঙের শিহরনগুলো

অলৌকিক ডুবুরি হয়ে তুলে আনছে

তোমার লাজুক চড়–ইয়ের বৈমানিক ভ্রমণ

ভয় নেই প্রিয়তমা- মিশে যাও রক্তে

আমার শরীর সংগীতে

প্রদক্ষিণ করো- দিন রাতে

এই দিলাম স্পর্শ, তুলে রাখো-

না রাখলে পৃথিবী জানবে

এই হেমন্তে
নাইমুল করিম

এই হেমন্তে

প্রতিদিন ভোরভ্রমণে তোমার হাসিঠাট্টা খুঁটিনাটি

আরও কত কী, দেখতে দেখতে

আমার ¯œায়ু উত্তেজিত হয়, রক্তচাপ বাড়ে

হৃদযন্ত্রের উপর চাপ পড়ে

ও বাদামি রঙের চোখ সুগঠিত রমণী

তোমার কি কোনোভাবেই বুঝে আসে না?

সাম্প্রতিক আখ্যান
চামেলী বসু

তোমাদের মুখের ভাঁজে জমে আছে

প্রাগৈতিহাসিক পাপ, অযাচিত বঞ্চনা,

খুটে খাওয়া পাখির স্বভাব-

সরল রেখার মতো যাপিত জীবন

অনিবার্য পতনে উন্মুখ-

যেন প্রতিবেশির স্নেহের কাছে পরজিত হতে হতে

বদলে যাওয়া অঘ্রানের সোনালি ফসল।

নিয়ম ও নিয়তির কাছে নতজানু

নিত্য বুকে পোষো দ্রোহের আগুন

হাতের রেখায় লুকাও আপোসের দাগ!

অথচ

বিরান জমিনের শূন্যতায়

অসাড় জীবন জ্বালিয়ে জানা যাবে একদিন-

পিঠ ঠেকে যাবার মতো কোন দেওয়াল

আর অবশিষ্ট নেই।

রুলি পরা হেমন্ত
রিক্তা রিচি

দুয়ারে হেমন্ত দাঁড়িয়ে আছে। হাতে পরেছে কারুকাজ করা সোনালি রুলি। শিশিরে ভেজা ঘাস মাড়িয়ে দূরের স্টেশনের ট্রেন ধরে, ঝকঝক ঝকঝক শব্দের তরঙ্গ পেরিয়ে, হকারের হাঁকডাক, স্টেশন ভিক্ষুকের গজল, যাত্রীদের ভিড় ঠেলে কমলাপুর রেলস্টেশনে নেমেছে। অগ্রহায়ণের অফ হোয়াইট রঙের ভোরে যখন আকাশে কুসুমের মতো আলোরা চিকচিক করছে, তখন রিকশার ক্রিংক্রিং, গাড়ির হর্ন, সাইরেনকে পাশ কাটিয়ে কেবল দরজায় দাঁড়িয়েছে।

আমাকে ডাকছে। ধানি রঙের শাড়ির সঙ্গে সে পরেছে সবুজ ব্লাউজ ফুল ও ফসলের ক্ষেতে কোমল দোলা লাগলো। শীতের শরীর থেকে আধো আধো ঠা-া ঝরে পড়তেই, আমার চুল থেকে নখে অদ্ভুত শিহরন অনুভব করলাম।

তাকে শহর দেখাতে নিয়ে গেলাম। হাতিরঝিল, রমনা, বোটানিক্যাল গার্ডেনে সে দিব্যি মন খুলে নাচলো। থই থই জলের মতো তার দেহসৌষ্ঠবে অনুভব করলাম রমণীর যৌবন। জলপাইয়ের পাতা চুয়ে চুয়ে যে প্রেম ঝরে পড়ছে, যে বাঁশিতে বেজেছে শহরের ক্ষত সারানোর সুখ তা স্থায়ী হয়নি। চোখে এলাচ পাতার অন্ধকার নেমে এলে সে বিদায় নিলো।

বলে গেল- ‘তোমাদের ভীষণ অসুখ। এই ধুলা ও দূষণের রাজ্যে তোমরা হাসো কী করে?’

আফটারনুন স্যাডনেস
চাঁদনী মাহরুবা

ওশেনিয়ায় কোনো বর্ষাকাল নেই। বাগানের কাঠ

আলুর গাছটা কেউ চুরি করে নিতে পারে,এমনি অগুরুত্বপূর্ণ

ভাবনা থেকে তারে একটা মাচা করে দিতে পারো!

দূর আলাপনে জানাবার মতো, এর অধিক কোন কথা থাকে না আমাদের।

বিগত শনিবারকে মনে হয় বিকেলের পাশে ফুটে থাকা মেরুন কার্নেশন।

পুরানো সকল ছুরিকাঘাত হাঁটু গেড়ে বসে থাকে, অ্যাসিরিয়ান চার্চের সামনে।

আমরা রেডিও শুনতে শুনতে যে যার মতো বাড়ি ফিরি একা-

দূরবর্তী কোনো শহরের খবর ভেসে আসে অস্পষ্ট উচ্চারণে...

“সাঁতার কাটতে গিয়ে এক কিশোরীর মৃত্যু। ধারণা করা যায়,

কিশোরীটি হাঙ্গরকে ডলফিন মাছ ভেবে ঝাপ দিয়েছিলো”।

back to top