alt

সাময়িকী

কেন এত পাঠকপ্রিয় হেলাল হাফিজ

ওবায়েদ আকাশ

: বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

হেলাল হাফিজ / জন্ম: ৭ অক্টোবর ১৯৪৮; মৃত্যু: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

হেলাল হাফিজ : শোক ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

কবি হেলাল হাফিজ আজীবন সংগ্রামী, দেশমাতৃকার কাছে নিবেদিত এক জাত বোহেমিয়ান কবি। সংসারের কাছে আত্মসমর্পণ না করেই তিনি মানুষ ও দেশকে ভালবেসে শেষ নিশ^াস ত্যাগ করেছেন। মিছিলের হাত উচ্চে তুলে ধরতে আর যুদ্ধে যাবার আহ্বান জানিয়ে তরুণ্যকে স্বাগত জানিয়েছেন আমৃত্যু। আইয়ুববিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী অবস্থানে থেকে গেয়েছেন মানুষ ও মানবতার জয়গান। নারীর ভালবাসাকে হৃদয়ে পুষেছেন প্রেরণা আর শক্তির আধার স্বরূপ। একা একা অকৃতদার জীবন কাটিয়েছেন বেশিরভাগ সময় নানান আবাসিক হোটেলে ও জাতীয় প্রেসক্লাবে। তাঁর এই চলে যাওয়ায় বাংলা কবিতাঙ্গন হারালো বিশাল বিপুল পাঠকপ্রিয়তার এক উৎসকে। হারালো সংসারবিবাগী কবিতামগ্ন প্রেম ও দ্রোহের কবিকে।

বিশ শতকের ষাটের দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি ছিলেন হেলাল হাফিজ, সর্বস্তরের মানুষের কাছে। এই জনপ্রিয়তার ব্যাপারটা হলো- মানুষের অনুভূতিকে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়ার এক ধরনের সক্ষমতা। এটি সবার থাকে না। আবার থাকলেও তা প্রকাশ্যে আসতে অনেক ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা কাজ করে। কারো কারো এই ক্ষমতা এতটাই প্রবল হয়ে বেরিয়ে আসে যে, তিনি তখন যা-ই লিখুন না কেন, পাঠক খুব আগ্রহের সঙ্গে পাঠ করেন। এবং সেখান থেকেও তাঁর আরও কিছু কবিতা জনপ্রিয় হতে থাকে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, যে কবিতাটি সবাই বুঝতে পারে, সেই ধরনের কবিতাই জনপ্রিয় হয়। তার জন্য শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সমকালীন কাব্য সমালোচকগণ মনে করেন, এ সময়ের কবিতা পাঠ করার জন্য পাঠককেও শিক্ষিত হতে হবে। কবিদের সেই প্রাচীনপূর্ব কাল থেকে সমকাল পর্যন্ত ধারাবাহিক কবিতা পাঠের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়, এবং সেই অভিজ্ঞতা কবি তাঁর কবিতায় প্রয়োগ করেন। এজন্য পাঠককেও কবিতার এই ধারাবাহিক পাঠ না থাকলে এ সময়ের কবিতা বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু ত্রিশের দশকের শক্তিশালী কবি ও সাহিত্য সমালোচক বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, “কবিতা বোঝার জিনিস নয়”। অর্থাৎ কবিতার সরাসরি বক্তব্যকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আবার পঞ্চপা-বের আর এক তীব্র শক্তিশালী কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর “কবিতার কথা” প্রবন্ধে বলেছেন, “যে কবিতা বোঝা গেল, স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক তার পরম গৌরবময় কবর।” অর্থাৎ জীবনানন্দও বলতে চেয়েছেন, প্রকৃত কবিতার মধ্যে রহস্য, ঘোর এবং আড়াল থাকতে হবে। কবিতায় যথার্থ চিত্রকল্প, উপমা, মেটাফরের ব্যবহার প্রবলভাবে থাকতে হবে। কিন্তু হেলাল হাফিজের সব কবিতা বোঝা গেলেও কবিতার পাঠক থেকে সাধারণ পর্যন্ত প্রায় সবাই তাঁর কবিতাকে গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাশের আর একটি বক্তব্যকে আমরা স্মরণে আনতে পারি। তিনি বলেছেন, “কবিতা অনেক রকম”। অর্থাৎ সব কবিতা একরকম নয়। সে হিসাবে কবি হেলাল হাফিজ যে কবিতা আমাদের উপহার দিয়েছেন, সে কবিতা উপরে উল্লিখিত দুই কিংবদন্তি কবির বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক হলেও তাঁর কবিতা অন্য রকম। এবং সব কিছু ছাপিয়ে বাঙালি জাতি ও বাংলা কবিতার অধিকাংশ পাঠক তাঁর কবিতাকে গ্রহণ করেছেন এবং কবি হিসেবে হেলাল হাফিজকে তাঁদের হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন। কারণ এই কবি, বুঝতে পেরেছেন বাঙালির হৃদয়ের কথা। পরাধীনতার গ্লানি যখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে মানুষ তখন হেলাল হাফিজ উচ্চারণ করেছেন সমগ্র বাঙালির ইচ্ছাকে-

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা

...

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে

ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

...

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,

বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসম্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

[একটি পতাকা পেলে]

বাঙালির সে ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে। কবির ইচ্ছা

পূর্ণ হয়েছে। কবি কবিতায় একটি পতাকার আবেদন করেছেন। জনগণও তাই করেছেন। কবি ও জনতার জয় হয়েছে। আমাদের অর্জিত হয়েছে লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা।

কবি হেলাল হাফিজের কবিতায়ও আমরা রীতিবদ্ধ ব্যাকরণ মানার চিত্র লক্ষ্য করি। তবে তাঁর কবিতা সরাসরি বক্তব্যপ্রধান, বিবৃতিধর্মী তীব্র উচ্চারণ। তাই তাঁর কবিতা হতে পেরেছে মিছিলের স্লোগান। এক্ষেত্রে আমরা হেলাল হাফিজের ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতাটি থেকে কিছুটা অংশ পড়ে দেখতে পারি- “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/মিছিলের সব হাত/কণ্ঠ/পা এক নয়।/সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,/কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার।/কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার/শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে/অবশ্য আসতে হয় মাঝেমধ্যে/অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,/কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয়প্রলোভনে/কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়।”

এটি একটি বিবৃতিধর্মী কবিতা। এখানে রয়েছে কিছু উপদেশমূলক পঙ্ক্তি, আবার রয়েছে কিছুটা আহ্বানও। সর্বোপরি কবি তাঁর অভিজ্ঞতারও বর্ণনা দিয়েছেন এ কবিতায়। কিন্তু বক্তব্যের মধ্যে কোনো রহস্য নেই, ঘোর নেই, কোনো আড়াল নেই। কিন্তু এই উচ্চারণ এতটাই তীব্র যে, সকল ছাপিয়ে প্রথম দুই পঙ্ক্তি উঠে এসেছে মিছিলের স্লোগানে। এবং এটা বোঝার জন্য পাঠককে শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কবিতাটি শুনে শুনেই কবিতার শক্তি উপলব্ধি করা যায়।

হেলাল হাফিজ তাঁর কবিতায় মানুষের মৌলিক চাওয়াপাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এমন সব চিত্রকল্প, এমন সব উপমা-মেটাফোর ব্যবহার করেছেন, যা মানুষের খুব কিনার ঘেঁষে অবস্থান করে, সংসারে নিত্যকার ব্যাপার হয়ে থাকে। সুখের তুলনায় মানুষের জীবনে কষ্টের আনাগোনাই যে তীব্র, তা কবি তাঁর নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। মানুষের কষ্টকে তিনি এমন ভাষা দিয়েছেন, যা মানুষ সহজে উপলব্ধি করতে পারে। তাঁর “ফেরীঅলা” কবিতায় মানুষের কষ্টের ফেরীঅলা হয়ে তিনি কষ্টকে ফেরী করে বেড়ান- “লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট/পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,/আলোর মাঝে কালোর কষ্ট/‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট।” তিনি কষ্টকে লাল নীল হলুদ বলে যেমন নতুন চিত্রকল্প তৈরি করেছেন, আবার তা পাঠকের কাছেও পৌঁছে দিয়েছেন তার তীব্র দহনকালে।

কেউ কেউ বলেন, হেলাল হাফিজ আসলে দুঃখবাদী কবি। নিজের জীবন থেকে মানুষের জীবন পর্যন্ত তিনি দুঃখের চাষ করতে পছন্দ করেন। বিষাদাক্রান্ত মনের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা নিত্যসময়ের। তিনি মনে করেন তাঁর জীবনটা ভরা শুধু দুঃখ আর বিষাদের বিস্তার।

আমার শৈশব বলে কিছু নেই

আমার কৈশোর বলে কিছু নেই,

আছে শুধু বিষাদের গহীন বিস্তার।

দুঃখ তো আমার হাত- হাতের আঙুল- আঙুলের নখ

দুঃখের নিখুঁত চিত্র এ কবির আপাদমস্তক।

আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুখী নই,

দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয়, যে আমাকে দুঃখ দেবে।

আমার একেকটি দুঃখ একেকটি দেশলাই কাঠির মতন,

অবয়ব সাজিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দরের কালো কালো অগ্নিতিলকে,

পাঁজরের নাম করে ওসব সংগোপনে

সাজিয়ে রেখেছি আমি সেফ্টি-ম্যাচের মতো বুকে।

[আমার সকল আয়োজন]

এই দুঃখ থেকে কবিকে কিছুটা নিষ্কৃতি দেয় নারী। নারী তাঁর প্রেরণার উৎস। নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক। তাঁর দৃষ্টিতে রমণীহীন জীবন শুধু দুঃখ দিয়ে ভরা।

আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।

অলৌকিক কিছু নয়,

নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি

তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার।

আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে,

পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে।

এতোদিন নারী ও রমণীহীন ছিলাম বলেই ছিলো

দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।

[দুঃখের আরেক নাম]

তিনি বিষাদ সঙ্গীত শুনিয়ে তাঁর পাঠককে আকুল করেছেন। তাঁর কবিতার উপস্থাপনা এমন যে তাতে পাঠকের হৃদয় না ভিজে পারে না। কবির দুঃখে পাঠক ব্যথিত হন। কবি যখন প্রেম বিচ্ছিন্ন হয়ে একলা যাপন করেন; কিন্তু প্রিয়জনকে দূরে রেখে তাকে অনুভব করেন, তখন তাঁর উচ্চারণ এভাবে পাঠককে ভাবায়-

কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।

কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না

রাত কাটে তো ভোর দেখি না

কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানে না।

[যাতায়াত]

আজীবন কবিতা লিখে বোহেমিয়ান জীবনযাপন করেছেন কবি হেলাল হাফিজ। কবিতা যে তাঁর কাছে কতটা অর্থময়, তা তিনি পুরোটা জীবন কবিতার কাছে গচ্ছিত রেখে প্রমাণ করেছেন। যে কারণে তাঁর ঘর হয়নি, সংসার হয়নি। সেই কবিতাকে কীভাবে দেখেন কবি হেলাল হাফিজ। কবিতা আসলে কী। শুনি কবির ভাষায়-

কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো

চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,

তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত।

কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে

খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে

কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।

মানুষের মতো সেও সভ্যতার চাষাবাদ করে,

সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের শৈল্পিক মিলন,

তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু যার উৎপাদন।

কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,

নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,-

পথিক এ পথে নয়

‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।

[উৎসর্গ]

কবি জগৎ বোঝেন না, বিষয় বোঝেন না, ক্যারিয়ার বোঝেন না। কিন্তু তিনি বোঝেন ভালবাসা, তিনি বোঝেন মানুষ, বোঝেন মানবিকতা, বোঝেন দেশ, বোঝেন স্বাধীনতা। এর একটা কিছুর কোনো ক্ষতি তিনি মেনে নিতে পারেন না। তিনি ভালবাসতে বাসতে একটি জীবন পার করে দিলেন। মানুষ ও মুক্তির কথা ভাবতে ভাবতেই শেষ নিশ^াস ত্যাগ করলেন। যা কিছু অর্জন তা উৎসর্গ করেছেন ভালবাসা আর দেশকে। তিনি জীবনে যা কিছু ভুল বা অর্জন করেছেন তা কেবল ভালবেসেই। তিনি মনে করেন এতে যা কিছু হারাবার তাঁর নিজেরই হারিয়েছে। এর জন্য অন্য কারো উপর তাঁর কোনো ক্ষোভ নেই। অভিমান নেই।

গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?

আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,

নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে

পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?

[প্রস্থান]

এত অল্পসংখ্যক কবিতা লিখে, মূলত ‘যে জলে আগুন জ¦লে’র মতো একটামাত্র গ্রন্থ লিখে এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করার মতো ঘটনা বিরল। একই কবিতার বইয়ের ৩৩ বার মুদ্রণের ঘটনাও বিরল। কিন্তু হেলাল হাফিেেজর বেলায় এ কথাটিই সত্য প্রমাণিত। ‘কবিতা একাত্তর’, ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ নামে তাঁর আরও দুটি পুস্তিকা থাকলেও তা তাঁর প্রথম বইয়েরই সম্পূরক অনেকটা। মূলত তিনি একটিমাত্র বইয়েরই কবি। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় জন্ম নেয়া এই কবি ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর রয়েছে আরও অর্জন। তাঁর মহাপ্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

ছবি

সিলভিয়া প্লাথের মৃত্যু, নিঃসঙ্গতা ও আত্মবিনাশ

ছবি

সমসাময়িক মার্কিনি ‘সহস্রাব্দের কণ্ঠস্বর’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

অন্য নিরিখে দেখা

ছবি

হেলাল হাফিজের চলে যাওয়া

ছবি

হেলাল হাফিজের কবিতা

ছবি

নারী শিক্ষাবিদ : বেগম রোকেয়া

ছবি

বাসার তাসাউফ

ছবি

‘জগদ্দল’-এর শক্তি ও সমরেশ বসু

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

রুবেন দারিও-র কবিতা

‘অঘ্রানের অনুভূতিমালা’

ছবি

কবিতা পড়া, কবিতা লেখা

ছবি

‘ধুলোয় সব মলিন’, পাঠকের কথা

ছবি

মহত্ত্বর কবি সিকদার আমিনুল হক

ছবি

রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

ছবি

কয়েকটি অনুগল্প

সাময়িকী কবিতা

ছবি

যেভাবে লেখা হলো ‘শিকিবু’

ছবি

জাঁ জোসেফ রাবেয়ারিভেলোর কবিতা

ছবি

সিকদার আমিনুল হকের গদ্য

ছবি

সিকদার আমিনুল হককে লেখা অগ্রজ ও খ্যাতিমান লেখক-সম্পাদকের চিঠি

ছবি

ফিওদর দস্তয়েভস্কি: রুগ্ণ আত্মার কথোয়াল

একজন গফুর মল্লিক

ছবি

অগ্রবীজের ‘অনুবাদ সাহিত্য’ সংখ্যা

সাময়িকী কবিতা

ছবি

গোপন কথা

ছবি

র’নবীর টোকাই-কথন

ছবি

শিল্পচর্চায় তরুণ প্রজন্ম অনেক বেশি ইনোভেটিভ

ছবি

শামসুর রাহমানের কবিতা বৈভব ও বহুমাত্রিকতা

ছবি

উইলিয়াম রাদিচের অধ্যয়নে অনন্য রবীন্দ্রনাথ

দিলারা হাফিজের কবিতা

ছবি

অবরুদ্ধ বর্ণমালার শৃঙ্খলমুক্তি

ছবি

আহমদুল কবির স্মরণে

ছবি

আহমদুল কবিরের সদাশয়তা

ছবি

রবীন্দ্রসংগীতের অপাপভূমি

tab

সাময়িকী

কেন এত পাঠকপ্রিয় হেলাল হাফিজ

ওবায়েদ আকাশ

হেলাল হাফিজ / জন্ম: ৭ অক্টোবর ১৯৪৮; মৃত্যু: ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪

বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

হেলাল হাফিজ : শোক ও শ্রদ্ধাঞ্জলি

কবি হেলাল হাফিজ আজীবন সংগ্রামী, দেশমাতৃকার কাছে নিবেদিত এক জাত বোহেমিয়ান কবি। সংসারের কাছে আত্মসমর্পণ না করেই তিনি মানুষ ও দেশকে ভালবেসে শেষ নিশ^াস ত্যাগ করেছেন। মিছিলের হাত উচ্চে তুলে ধরতে আর যুদ্ধে যাবার আহ্বান জানিয়ে তরুণ্যকে স্বাগত জানিয়েছেন আমৃত্যু। আইয়ুববিরোধী ও স্বৈরাচারবিরোধী অবস্থানে থেকে গেয়েছেন মানুষ ও মানবতার জয়গান। নারীর ভালবাসাকে হৃদয়ে পুষেছেন প্রেরণা আর শক্তির আধার স্বরূপ। একা একা অকৃতদার জীবন কাটিয়েছেন বেশিরভাগ সময় নানান আবাসিক হোটেলে ও জাতীয় প্রেসক্লাবে। তাঁর এই চলে যাওয়ায় বাংলা কবিতাঙ্গন হারালো বিশাল বিপুল পাঠকপ্রিয়তার এক উৎসকে। হারালো সংসারবিবাগী কবিতামগ্ন প্রেম ও দ্রোহের কবিকে।

বিশ শতকের ষাটের দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় কবি ছিলেন হেলাল হাফিজ, সর্বস্তরের মানুষের কাছে। এই জনপ্রিয়তার ব্যাপারটা হলো- মানুষের অনুভূতিকে নাড়িয়ে দিয়ে যাওয়ার এক ধরনের সক্ষমতা। এটি সবার থাকে না। আবার থাকলেও তা প্রকাশ্যে আসতে অনেক ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা কাজ করে। কারো কারো এই ক্ষমতা এতটাই প্রবল হয়ে বেরিয়ে আসে যে, তিনি তখন যা-ই লিখুন না কেন, পাঠক খুব আগ্রহের সঙ্গে পাঠ করেন। এবং সেখান থেকেও তাঁর আরও কিছু কবিতা জনপ্রিয় হতে থাকে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, যে কবিতাটি সবাই বুঝতে পারে, সেই ধরনের কবিতাই জনপ্রিয় হয়। তার জন্য শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। কিন্তু সমকালীন কাব্য সমালোচকগণ মনে করেন, এ সময়ের কবিতা পাঠ করার জন্য পাঠককেও শিক্ষিত হতে হবে। কবিদের সেই প্রাচীনপূর্ব কাল থেকে সমকাল পর্যন্ত ধারাবাহিক কবিতা পাঠের অভিজ্ঞতা থাকতে হয়, এবং সেই অভিজ্ঞতা কবি তাঁর কবিতায় প্রয়োগ করেন। এজন্য পাঠককেও কবিতার এই ধারাবাহিক পাঠ না থাকলে এ সময়ের কবিতা বোঝা সম্ভব নয়। কিন্তু ত্রিশের দশকের শক্তিশালী কবি ও সাহিত্য সমালোচক বুদ্ধদেব বসু বলেছেন, “কবিতা বোঝার জিনিস নয়”। অর্থাৎ কবিতার সরাসরি বক্তব্যকে তিনি প্রত্যাখ্যান করেছেন। আবার পঞ্চপা-বের আর এক তীব্র শক্তিশালী কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর “কবিতার কথা” প্রবন্ধে বলেছেন, “যে কবিতা বোঝা গেল, স্কুল-কলেজের পাঠ্যপুস্তক তার পরম গৌরবময় কবর।” অর্থাৎ জীবনানন্দও বলতে চেয়েছেন, প্রকৃত কবিতার মধ্যে রহস্য, ঘোর এবং আড়াল থাকতে হবে। কবিতায় যথার্থ চিত্রকল্প, উপমা, মেটাফরের ব্যবহার প্রবলভাবে থাকতে হবে। কিন্তু হেলাল হাফিজের সব কবিতা বোঝা গেলেও কবিতার পাঠক থেকে সাধারণ পর্যন্ত প্রায় সবাই তাঁর কবিতাকে গ্রহণ করেছেন। এ ক্ষেত্রে জীবনানন্দ দাশের আর একটি বক্তব্যকে আমরা স্মরণে আনতে পারি। তিনি বলেছেন, “কবিতা অনেক রকম”। অর্থাৎ সব কবিতা একরকম নয়। সে হিসাবে কবি হেলাল হাফিজ যে কবিতা আমাদের উপহার দিয়েছেন, সে কবিতা উপরে উল্লিখিত দুই কিংবদন্তি কবির বক্তব্যের সঙ্গে কিছুটা সাংঘর্ষিক হলেও তাঁর কবিতা অন্য রকম। এবং সব কিছু ছাপিয়ে বাঙালি জাতি ও বাংলা কবিতার অধিকাংশ পাঠক তাঁর কবিতাকে গ্রহণ করেছেন এবং কবি হিসেবে হেলাল হাফিজকে তাঁদের হৃদয়ে স্থান দিয়েছেন। কারণ এই কবি, বুঝতে পেরেছেন বাঙালির হৃদয়ের কথা। পরাধীনতার গ্লানি যখন মর্মে মর্মে উপলব্ধি করেছে মানুষ তখন হেলাল হাফিজ উচ্চারণ করেছেন সমগ্র বাঙালির ইচ্ছাকে-

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

আমি আর লিখবো না বেদনার অঙ্কুরিত কষ্টের কবিতা

...

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

পাতা কুড়োনির মেয়ে শীতের সকালে

ওম নেবে জাতীয় সংগীত শুনে পাতার মর্মরে।

...

কথা ছিলো একটি পতাকা পেলে

ভূমিহীন মনুমিয়া গাইবে তৃপ্তির গান জ্যৈষ্ঠে-বোশেখে,

বাঁচবে যুদ্ধের শিশু সসম্মানে সাদা দুতে-ভাতে।

[একটি পতাকা পেলে]

বাঙালির সে ইচ্ছা পূর্ণ হয়েছে। কবির ইচ্ছা

পূর্ণ হয়েছে। কবি কবিতায় একটি পতাকার আবেদন করেছেন। জনগণও তাই করেছেন। কবি ও জনতার জয় হয়েছে। আমাদের অর্জিত হয়েছে লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা।

কবি হেলাল হাফিজের কবিতায়ও আমরা রীতিবদ্ধ ব্যাকরণ মানার চিত্র লক্ষ্য করি। তবে তাঁর কবিতা সরাসরি বক্তব্যপ্রধান, বিবৃতিধর্মী তীব্র উচ্চারণ। তাই তাঁর কবিতা হতে পেরেছে মিছিলের স্লোগান। এক্ষেত্রে আমরা হেলাল হাফিজের ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে রচিত সবচেয়ে জনপ্রিয় কবিতাটি থেকে কিছুটা অংশ পড়ে দেখতে পারি- “এখন যৌবন যার মিছিলে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার তার শ্রেষ্ঠ সময়/মিছিলের সব হাত/কণ্ঠ/পা এক নয়।/সেখানে সংসারী থাকে, সংসার বিরাগী থাকে,/কেউ আসে রাজপথে সাজাতে সংসার।/কেউ আসে জ্বালিয়ে বা জ্বালাতে সংসার/শাশ্বত শান্তির যারা তারাও যুদ্ধে আসে/অবশ্য আসতে হয় মাঝেমধ্যে/অস্তিত্বের প্রগাঢ় আহ্বানে,/কেউ আবার যুদ্ধবাজ হয়ে যায় মোহরের প্রিয়প্রলোভনে/কোনো কোনো প্রেম আছে প্রেমিককে খুনী হতে হয়।”

এটি একটি বিবৃতিধর্মী কবিতা। এখানে রয়েছে কিছু উপদেশমূলক পঙ্ক্তি, আবার রয়েছে কিছুটা আহ্বানও। সর্বোপরি কবি তাঁর অভিজ্ঞতারও বর্ণনা দিয়েছেন এ কবিতায়। কিন্তু বক্তব্যের মধ্যে কোনো রহস্য নেই, ঘোর নেই, কোনো আড়াল নেই। কিন্তু এই উচ্চারণ এতটাই তীব্র যে, সকল ছাপিয়ে প্রথম দুই পঙ্ক্তি উঠে এসেছে মিছিলের স্লোগানে। এবং এটা বোঝার জন্য পাঠককে শিক্ষিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। কবিতাটি শুনে শুনেই কবিতার শক্তি উপলব্ধি করা যায়।

হেলাল হাফিজ তাঁর কবিতায় মানুষের মৌলিক চাওয়াপাওয়াকে গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি এমন সব চিত্রকল্প, এমন সব উপমা-মেটাফোর ব্যবহার করেছেন, যা মানুষের খুব কিনার ঘেঁষে অবস্থান করে, সংসারে নিত্যকার ব্যাপার হয়ে থাকে। সুখের তুলনায় মানুষের জীবনে কষ্টের আনাগোনাই যে তীব্র, তা কবি তাঁর নিজের জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছেন। মানুষের কষ্টকে তিনি এমন ভাষা দিয়েছেন, যা মানুষ সহজে উপলব্ধি করতে পারে। তাঁর “ফেরীঅলা” কবিতায় মানুষের কষ্টের ফেরীঅলা হয়ে তিনি কষ্টকে ফেরী করে বেড়ান- “লাল কষ্ট নীল কষ্ট কাঁচা হলুদ রঙের কষ্ট/পাথর চাপা সবুজ ঘাসের সাদা কষ্ট,/আলোর মাঝে কালোর কষ্ট/‘মালটি-কালার’ কষ্ট আছে/কষ্ট নেবে কষ্ট।” তিনি কষ্টকে লাল নীল হলুদ বলে যেমন নতুন চিত্রকল্প তৈরি করেছেন, আবার তা পাঠকের কাছেও পৌঁছে দিয়েছেন তার তীব্র দহনকালে।

কেউ কেউ বলেন, হেলাল হাফিজ আসলে দুঃখবাদী কবি। নিজের জীবন থেকে মানুষের জীবন পর্যন্ত তিনি দুঃখের চাষ করতে পছন্দ করেন। বিষাদাক্রান্ত মনের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা নিত্যসময়ের। তিনি মনে করেন তাঁর জীবনটা ভরা শুধু দুঃখ আর বিষাদের বিস্তার।

আমার শৈশব বলে কিছু নেই

আমার কৈশোর বলে কিছু নেই,

আছে শুধু বিষাদের গহীন বিস্তার।

দুঃখ তো আমার হাত- হাতের আঙুল- আঙুলের নখ

দুঃখের নিখুঁত চিত্র এ কবির আপাদমস্তক।

আমার দুঃখ আছে কিন্তু আমি দুখী নই,

দুঃখ তো সুখের মতো নীচ নয়, যে আমাকে দুঃখ দেবে।

আমার একেকটি দুঃখ একেকটি দেশলাই কাঠির মতন,

অবয়ব সাজিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দরের কালো কালো অগ্নিতিলকে,

পাঁজরের নাম করে ওসব সংগোপনে

সাজিয়ে রেখেছি আমি সেফ্টি-ম্যাচের মতো বুকে।

[আমার সকল আয়োজন]

এই দুঃখ থেকে কবিকে কিছুটা নিষ্কৃতি দেয় নারী। নারী তাঁর প্রেরণার উৎস। নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক। তাঁর দৃষ্টিতে রমণীহীন জীবন শুধু দুঃখ দিয়ে ভরা।

আমাকে স্পর্শ করো, নিবিড় স্পর্শ করো নারী।

অলৌকিক কিছু নয়,

নিতান্তই মানবিক যাদুর মালিক তুমি

তোমার স্পর্শেই শুধু আমার উদ্ধার।

আমাকে উদ্ধার করো পাপ থেকে,

পঙ্কিলতা থেকে, নিশ্চিত পতন থেকে।

এতোদিন নারী ও রমণীহীন ছিলাম বলেই ছিলো

দুঃখের আরেক নাম হেলাল হাফিজ।

[দুঃখের আরেক নাম]

তিনি বিষাদ সঙ্গীত শুনিয়ে তাঁর পাঠককে আকুল করেছেন। তাঁর কবিতার উপস্থাপনা এমন যে তাতে পাঠকের হৃদয় না ভিজে পারে না। কবির দুঃখে পাঠক ব্যথিত হন। কবি যখন প্রেম বিচ্ছিন্ন হয়ে একলা যাপন করেন; কিন্তু প্রিয়জনকে দূরে রেখে তাকে অনুভব করেন, তখন তাঁর উচ্চারণ এভাবে পাঠককে ভাবায়-

কেউ জানে না আমার কেন এমন হলো।

কেন আমার দিন কাটে না রাত কাটে না

রাত কাটে তো ভোর দেখি না

কেন আমার হাতের মাঝে হাত থাকে না কেউ জানে না।

[যাতায়াত]

আজীবন কবিতা লিখে বোহেমিয়ান জীবনযাপন করেছেন কবি হেলাল হাফিজ। কবিতা যে তাঁর কাছে কতটা অর্থময়, তা তিনি পুরোটা জীবন কবিতার কাছে গচ্ছিত রেখে প্রমাণ করেছেন। যে কারণে তাঁর ঘর হয়নি, সংসার হয়নি। সেই কবিতাকে কীভাবে দেখেন কবি হেলাল হাফিজ। কবিতা আসলে কী। শুনি কবির ভাষায়-

কবিতা তো অবিকল মানুষের মতো

চোখ-মুখ-মন আছে, সেও বিবেক শাসিত,

তারও আছে বিরহে পুষ্পিত কিছু লাল নীল ক্ষত।

কবিতা তো রূপান্তরিত শিলা, গবেষণাগারে নিয়ে

খুলে দেখো তার সব অণু-পরমাণু জুড়ে

কেবলি জড়িয়ে আছে মানুষের মৌলিক কাহিনী।

মানুষের মতো সেও সভ্যতার চাষাবাদ করে,

সেও চায় শিল্প আর স্লোগানের শৈল্পিক মিলন,

তার তা ভূমিকা চায় যতোটুকু যার উৎপাদন।

কবিতা তো কেঁদে ওঠে মানুষের যে কোনো অ-সুখে,

নষ্ট সময় এলে উঠানে দাঁড়িয়ে বলে,-

পথিক এ পথে নয়

‘ভালোবাসা এই পথে গেছে’।

[উৎসর্গ]

কবি জগৎ বোঝেন না, বিষয় বোঝেন না, ক্যারিয়ার বোঝেন না। কিন্তু তিনি বোঝেন ভালবাসা, তিনি বোঝেন মানুষ, বোঝেন মানবিকতা, বোঝেন দেশ, বোঝেন স্বাধীনতা। এর একটা কিছুর কোনো ক্ষতি তিনি মেনে নিতে পারেন না। তিনি ভালবাসতে বাসতে একটি জীবন পার করে দিলেন। মানুষ ও মুক্তির কথা ভাবতে ভাবতেই শেষ নিশ^াস ত্যাগ করলেন। যা কিছু অর্জন তা উৎসর্গ করেছেন ভালবাসা আর দেশকে। তিনি জীবনে যা কিছু ভুল বা অর্জন করেছেন তা কেবল ভালবেসেই। তিনি মনে করেন এতে যা কিছু হারাবার তাঁর নিজেরই হারিয়েছে। এর জন্য অন্য কারো উপর তাঁর কোনো ক্ষোভ নেই। অভিমান নেই।

গিয়ে থাকলে আমার গেছে, কার কী তাতে?

আমি না হয় ভালোবেসেই ভুল করেছি ভুল করেছি,

নষ্ট ফুলের পরাগ মেখে

পাঁচ দুপুরের নির্জনতা খুন করেছি, কী আসে যায়?

[প্রস্থান]

এত অল্পসংখ্যক কবিতা লিখে, মূলত ‘যে জলে আগুন জ¦লে’র মতো একটামাত্র গ্রন্থ লিখে এতটা জনপ্রিয়তা অর্জন করার মতো ঘটনা বিরল। একই কবিতার বইয়ের ৩৩ বার মুদ্রণের ঘটনাও বিরল। কিন্তু হেলাল হাফিেেজর বেলায় এ কথাটিই সত্য প্রমাণিত। ‘কবিতা একাত্তর’, ‘বেদনাকে বলেছি কেঁদো না’ নামে তাঁর আরও দুটি পুস্তিকা থাকলেও তা তাঁর প্রথম বইয়েরই সম্পূরক অনেকটা। মূলত তিনি একটিমাত্র বইয়েরই কবি। বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় জন্ম নেয়া এই কবি ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। তাঁর রয়েছে আরও অর্জন। তাঁর মহাপ্রয়াণে গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসা।

back to top