মিলিনিয়াল ভয়েস ইন আমেরিকান লিটারেচার
অশোক কর
নতুন শতাব্দীর প্রারম্ভে মার্কিন শিল্পসাহিত্য পর্যালোচনায় প্রসঙ্গটি উঠে আসে; কারা হবেন “মিলিনিয়াল ভয়েস ইন আমেরিকান লিটরেচার”। “দ্য ন্যুইয়র্কার” পত্রিকা ২০ জন সম্ভাব্য সেরা ঔপন্যাসিক/গল্পকারের নাম নির্বাচন করে, যাদের বয়স চল্লিশ বছরের নিচে (১৯৯৯ সালের হিসাবে), ইতোমধ্যেই তারা মার্কিন কথাসাহিত্যে তাদের প্রতিভার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন। স্বভাবতই; এ তালিকার বাইরে, নতুন শতাব্দী শুরুর লগ্নে, ৪০ বছর বয়সের নিচে আরো অনেক কীর্তিমান মার্কিন কথাসাহিত্যিকদের তখন উদ্দীপনাময় উপস্থিতি।
একবিংশ শতাব্দীর এইসব সম্ভাবনাময় তরুণ কথাসাহিত্যিকদের প্রতিভা আর তাদের সাহিত্যকর্ম বৈচিত্র্যে, স্বকীয়তায়, আর নৈপুণ্যে বুদ্ধিদীপ্ত। প্রত্যেকেই তার মৌলিক আর প্রতিভাদীপ্ত সাহিত্যকর্ম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত, প্রতিশ্রুতিশীল, আর তাদের সাহিত্যকর্ম চলমান শিল্পধারায় ফেলে বিচার করা প্রায় দূরহ। একবিংশ শতকের সমসাময়িক সাহিত্যধারার অভুতপূর্ব বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়েছে যেন তাদের সাহিত্যকর্মে। সুতরাং নতুনমাত্রার সাহিত্যবিচারেও প্রয়োজন হয়ে উঠেছে নতুন মানদ-, নতুন সৌন্দর্য্যতত্ত্ব, শিল্পের নতুন বিশ্ববীক্ষা, প্রগতিশীল অন্তর্দৃষ্টির।
একবিংশ শতাব্দীর শুরু উত্তাল বিশ্বরাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে (যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ, ক্ষমতাধর দেশের নিয়ন্ত্রণহীন আগ্রাসন, উদ্বায়ু বিশ্বঅর্থনীতি ইত্যাদি), সেইসাথে প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন জন্ম দিয়েছে বিশ্বমাত্রিক তথ্য প্রযুক্তি আর সামাজিক তথ্যমাধ্যমের প্রবল সম্ভাব্যতা (ইনফরমেশন সুপারহাইওয়ে, ইন্টারনেট, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, সোসাল মিডিয়া, স্মার্টফোন, স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশান), বদলে গেছে বিশ্বমাত্রিক যোগাযোগ, তথ্য প্রবাহ আর সম্পর্কের পরিধি, পরিণতি! জন্ম দিচ্ছে অভূতপূর্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর মূল্যবোধ! মার্কিনিদের আভ্যন্তরীণ আর বিশ্বরাজনৈতিক-কূটনৈতিক পশ্চাৎপদতা, অস্থিতিশীল অর্থনীতির বিরূপ পরম্পরার বিপরীতে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সামাজিক সংস্কৃতির ঋণাত্মক উত্থান-; একবিংশ শতাব্দীর শুরুকে করে তুলেছে দ্বন্দ্বমুখর, অস্থির আর কল্পনাতীত দূরনির্মেয়! পরাক্রমী এইসব বিপরিতধর্মী দ্বন্দ্বের সরব-নীরব সংঘাতে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নৈতিক-অনৈতিক সামাজিক বিরোধ, মূল্যবোধ, কৃষ্টি-; প্রায়শ: তা ব্যাখ্যার অতীত। বাস্তবে, শিল্প সাহিত্য সততই প্রগতির দিকে; তাই একবিংশ শতকের তরুণ শিল্পকর্মীর একাধারে কার্ল মার্কস, ডারউইন আর মধুসূদনের দায়ভার কাঁধে নিয়ে এই নতুন শতাব্দীতে যাত্রা শুরুর প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।
এ শতকের চব্বিশটি বছর পেরিয়ে গেছে, দেখা যেতেই পারে মার্কিন কবি/কথাসাহিত্যিকেরা সেই দুরূহ দ্বায়িত্ব পালনে কতটুকু পারঙ্গম। ইতোমধ্যে মার্কিন মিলিনিয়াল শিল্পীসাহিত্যিকদের তালিকায় যোগ হয়েছে আরো নতুন নাম, নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্ফুরণ! প্রায় দুরূহ এই নতুন শতাব্দীর সাহিত্যকর্ম কোন সুনির্দিষ্ট শ্রেণিবিভাগে ফেলে বিচার করা কঠিন, কারণ তাদের লেখার প্রকরণ ও ভিন্নতা ব্যাপক, নতুনত্ব, অভিনবত্ব একেবারেই স্বতন্ত্রমাত্রার। শিল্পের বহুমাত্রিক প্রকরণ, নিরীক্ষা, ইত্যাকার বিষয় মিলেমিশে এমন এক নতুন আবহ সৃষ্টি হয়েছে যে, প্রতিটি সাহিত্যকর্ম এক স্বতন্ত্র বিশ্লেষণের দাবি রাখে, সমগোত্রীয় বা সমমনা চিন্তাধারার সম্ভাব্যতা সেখানে ক্ষীণ। নতুন শিল্প প্রকরণের মাধ্যমে মহাকাব্যিক ঘরানার ব্যবহার থেকে শুরু করে, নিখুঁতবোনা ইমপ্রেসনিস্ট প্রকাশনা, বাস্তববাদী নিরীক্ষা থেকে বস্তুবাদী বা বন্য ফ্যান্টাসি, ক্ষেপাটে কমেডি থেকে অতিরঞ্জিত ট্র্যাজেডি, পারিবারিক গল্পকথা থেকে ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী, কমিক থেকে বৈজ্ঞানিক অতিন্দ্রবিলাস-; সবকিছু যেন নিরীক্ষার বুনোনে একে অন্যকে ঘিরে প্রদক্ষিণরত।
২০০০ সাল শুরুর প্রাক্কালে “দ্য ন্যু-ইয়র্কার” প্রকাশনা ২০ জন কথাশিল্পীর নাম প্রস্তাবনা করে, যারা হবে ‘মিলিনিয়াল ভয়েস ইন আমেরিকান ফিকশান’, আমেরিকার তরুণ প্রজন্মের লেখক, জর্জ স্যন্ডার্স (এবড়ৎমব ঝধঁহফবৎং) সেই অন্যতমের একজন। ২৮ বছর বয়সে (১৯৮৬) ছোটগল্পকার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ২০০০ সালের মধ্যে সন্ডার্স প্রবন্ধ, নভেলা, শিশুসাহিত্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন নিজেকে স্বতন্ত্র ধারার লেখক হিসাবে। ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করে নিয়েছেন মার্কিনি সকল সন্মাননা আর পুরস্কার (একমাত্র পুলিৎজার বাদে)। তার লেখা গল্প চিহ্নিত করা হচ্ছে এ্যাবসার্ডিস্ট, প্রতিষ্ঠিত ফর্ম ভেঙে-মুচড়ে নতুন ধারা সৃষ্টির স্বীকৃতি আদায় করে নেয়া গল্পকার। ২০০০ সালে মাত্র ১৬ বছরের ছোটগল্পকার জীবনে তিনি সাহিত্যের প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে দিয়ে তৈরি করেছেন আমেরিকার মধ্যবিত্ত জীবনে কর্পোরেট কালচার, পণ্য-বাণিজ্যিক ভোগবাদসর্বস্ব লোকাচার আর ৯টা-৫টা অফিসজীবন-সংস্কৃতি মিলেমিশে যে নতুন জীবনাচরণের সৃষ্টি হয়েছে-, গল্পে সেই এ্যাবসার্ডিস্ট ফর্মের সূচনা এবং সুচারু উপস্থাপন করেছেন। সার্বিক স্বাতন্ত্র্য আর অভিনবত্ব মিশিয়ে প্রকাশ করেছেন CivilWarLand in Bad Decline (1996), Pastoralia (2000), The 400 Pound CEO (১৯৯৪) The Tenth of December (২০১০)-এর মতো মাস্টারপিস গল্পগ্রন্থ। তার গল্পের চরিত্ররা কেউ বাণিজ্যতন্ত্র পিষ্ট স্টিপার, পণ্য প্রতিযোগিতায় দেয়ালে পিঠ ঠেকা পরাজিত, বাঁচার শেষ চেষ্টায় আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জনে পুরুষাঙ্গ হাতে করে স্টিপার নাচ নিয়ে হাজির হয়। আরেক চরিত্র অশীতিপর এক মাসিমা, পরাজয়, বঞ্চনা ছাড়া জীবনে কোন শুভ, ভাল কিছু ঘটেনি তাঁর দীর্ঘজীবনে। তার গল্পের প্রতিটি লাইনে সন্ডার্স এই এ্যাবসার্ডিস্ট সাবকালচার তুলে ধরেন তুলনাহীন দক্ষতার সাথে, প্রতিটি লাইনই একেকবার স্বতন্ত্র গল্প হয়ে ওঠে। তার হাতে গল্পের শিরোনাম পর্যন্ত গল্পের অবতারণা করে, দৃশ্যকল্পসনা কবিতাকেও হার মানায় প্রায়শ। ১৯৯৯-তে প্রকাশিত, ও’হেনরি পুরস্কারপ্রাপ্ত গল্পগ্রন্থের “Sea Oak” শিরোনামের গল্পে সত্যিকার সমুদ্র বা ওক গাছের সারির অস্তিত্ব নেই, আছে ওই নামে ভর্তুকিতে ভাড়া দেয়া সল্প আয়ের কর্মজীবিদের শতখানেক জীর্ণ এ্যাপার্টমেন্টের সারি, যেখানে জীবনের দুঃসহতা ভেসে বেড়ায়। তেমনি আরেক গল্পগ্রন্থের নাম “The 400 Pound CEO” স্যাটায়ারে বুঝিয়ে দেয় কর্পোরেট কালচারের শোষণের অতিকায় চালচিত্র, শোষক আর শোষিতের দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রতিতুলনা।
এত সাফল্য, সন্মাননা সত্ত্বেও সন্ডার্স নিজের কাছে সৎ, জানেন তিনি অনুসন্ধানী, অনুসন্ধিৎসু লেখক। যে লেখা নিজেকে সন্তুষ্ট করে না, তা পাঠককে তিনি দিতে রাজি নন। তার একটাই লক্ষ্য, প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম হতে হবে নান্দনিক, শিল্পিত উদ্ভাবনীময়! তাই সন্ডার্স ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি তখনো উপন্যাস লিখবার উপযুক্ত নন, কারণ উপন্যাসের যে উপকরণ আর ফর্ম তিনি ব্যবহার করতে চান তার সমার্থক মনঃসংস্কৃতিক পরিবেশ বা অন্তর্দৃষ্টি কোনটাই তার উপন্যাসের উপযুক্ত মনে হয় না। সুতরাং উপন্যাস লিখতে তিনি আরো সময় অপেক্ষা করতে রাজি। তিনি আক্ষরিক অর্থেই প্রায় ৩৫ বছর সময় নিয়ে লিখলেন প্রথম উপন্যাস “Lincoln in the Brado”, প্রকাশের সাথে সাথেই উপন্যাসটি জিতে নেয় ২০১৭-এর ম্যান বুকার পুরস্কার! উপন্যাসটি শোকাতুর আব্রাহাম লিঙ্কনের একটিমাত্র বিনিদ্র রাত্রির উপাখ্যান, উপজীব্য তাঁর পুত্রের মৃত্যুশোক আর উপন্যাসের আখ্যান হলো জীবন আর পুনর্জন্মের আন্তঃমধ্যবর্তী শূন্যস্থান (Brado)! যারা সন্ডার্সের শৈলীর সাথে পরিচিত, তারা নিমিষেই বুঝে নেবেন-, সন্ডার্স এই উপন্যাস কতটা নৈপুণ্যময় বৈচিত্র্যে পাঠকের হাতে তুলে দিতে চেয়েছেন।
আমরা এক যুগসন্ধিক্ষণের (২০০০ সাল) মার্কিনি কথাসাহিত্যের আলোচনা করছি, আর সেইক্ষণটিকে একাই আলোকিত করে রেখেছিলেন চেক বংশোদ্ভূত ডায়াস্পোরা গল্পকার, ঔপন্যাসিক মাইকেল স্যাবোন, (জন্ম ১৯৬৩ সালে), মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস The Mysteries of Pittsburgh প্রকাশ করে মার্কিন কথাসাহিত্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নেন। তার বুদ্ধিদীপ্ত জটিল বাক্যবিন্যাস, কিছুটা তার পারিবারিক চেক ভাষা ও কৃষ্টি থেকে আহৃত, সাথে মূলধারার ইংরেজি ভাষার সংমিশ্রণে নতুন মার্কিনি গদ্যভাষার জন্ম দেয়। অবশ্য প্রতিভাবান স্যাবোন সেখানেই থেমে থাকার মানুষ নন। প্রতিনিয়ত নতুনতর নিরীক্ষা, উদ্ভাবনীময় ফর্ম, বৈচিত্র্যময় প্রেক্ষাপট, কথাসাহিত্যের যাবতীয় সম্ভার তিনি উল্টেপাল্টে মার্কিনি কথাসাহিত্যকে ভিন্নতর মাত্রায় নিয়ে যান। এখানে মনে রাখতে হবে লাতিন আমেরিকার জাদুবাস্তবতা এসময়ের বিশ্বসাহিত্যকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে-; গার্সিয়া মার্কেজ, এ্যালেহো কার্পেন্তিয়ের, ভার্গাস ইয়োসা, কার্লোস ফুয়েন্তেস-এর মতো অতিমানবদের প্রভাব, প্রতিপত্তি, আকর্ষণ অতিক্রম করে স্যাবোন মার্কিনি সাহিত্যের মার্কিনি স্বতন্ত্র ধারায় আরো বিকশিত-, আরো সর্বগ্রাসী প্রবণতা নিয়ে আসেন। শিল্পসাহিত্যের এই স্বতন্ত্র পথচলা, শিল্পকর্মকে মহিমান্বিত করে তোলা মার্কিনি শিল্পসাহিত্যের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
স্যাবোন মার্কিনি কথাসাহিত্যে বহুমাত্রিক চরিত্র। তিনি হেমিংওয়ে বা ফকনারের মত ধ্রুপদী সাহিত্যের পথে হাঁটেননি, বরং বেছে নিয়েছেন উইলিয়াম বারোজ, জ্যাক কারুয়াকের মতো বিক্ষুব্ধ, অনিয়ন্ত্রত, ধাবমান পরিক্রমা, কোথাও থিতু হবার মতো মানসিকতার বদলে সমাজের চলমান বিক্ষুব্ধ ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে জীবনতৃষ্ণা খুঁজে বের করার প্রেরণার প্রতি অনুরক্ত। তবে “বিট জেনারেশান” কবি সাহিত্যিকেরা যেমন বিকল্পধর্ম আর নেশার মধ্যে জীবনবীক্ষা খুঁজেছেন, স্যাবোন তেমন কোন চোরাবালিতে পা দেননি। ইহুদি স্যাবোন জিউস মিথ ব্যবহার করেছেন মানুষের মাঝে কমিকবুক সুপারহিরোর মানবিক প্রবণতা জাগিয়ে দেবার জন্য (যেমন স্পাইডারম্যান: Great power has great responsibility)| The Amazing Adventures of Kavalier and Clay, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাগের ইহুদি নিধন কনসেনট্রাশন ক্যাম্প থেকে শিল্পী বার্নহার্ড কর্নব্লামের জিউস মিথ গোলেমের কফিন জার্মানদের দখল থেকে বের করে আনার কাহিনি, তাঁকে এনে দেয় ২০০১ সালের পুলিৎজার পুরস্কার। স্যাবোন প্রতিনিয়ত বদলে নিয়েছেন তার লেখার স্টাইল, ফর্ম; প্রতিটি বইতে রেখে যাচ্ছেন প্রতিভার সাফল্যময় দৃষ্টান্ত। সাহিত্যের বিবিধ ধারায় তার স্বাচ্ছন্দ্য পথ চলা, The Yiddish Policeman’s Union (২০০৭) অলটারনেট হিস্ট্রি ধারাতে লেখা রহস্যপোন্যাস। ধারাবাহিক সিরিয়াল Gentleman on the Road থেকে রূপান্তরিত উপন্যাস Telegraph Avenue (২০১২), স্মৃতিচারণমূলক উপন্যাস Moonglow (২০১৬); স্যাবোনের লেখার পরিপ্রেক্ষিত বিশাল, বিষয়বস্তুর বহুমাত্রিক-; বিবাহবিচ্ছেদ, নস্টালজিয়া, বিচ্ছিন্নতা, পিতৃত্ব, ইহুদি পরিচয়-সংকট, তৃতীয় লিঙ্গ, উভকামী, ইত্যাকার চরিত্রের বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা তার সৃষ্টিকর্মে। ছোটগল্প, উপন্যাস ছাড়াও স্যাবোন চিত্রনাট্য, শিশুতোষ উপন্যাস, কমিকবুক, সংবাদপত্রের সিরিয়াল-; সাহিত্যের সকল শাখায় অবাধ বিচরণ করেছেন-, আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিতি একমাত্র শুধু কবিতায়!
আশ্চর্যজনকভাবে ২০০০ সাল পরবর্তি মার্কিন মিলিনিয়াল শিল্পসাহিত্যিকদের মধ্যে বাস্তুত্যাগী ডায়াস্পোরাদের সংখ্যাধিক্য চোখে পড়ার মতো। তার সঙ্গত কারণও আছে। আমেরিকা সংবিধান স্বীকৃত “ল্যান্ড অফ ইমিগ্রান্টস্” তেমনি “মেল্টিংপট অফ ডাইভার্স কালচার”ও বটে। সেইসাথে বিশ্বসেরা অর্থনীতিপুষ্ট “ল্যান্ড অফ অপারচুনিটি”র দেশ আমেরিকা। এদেশি নাগরিকদের যে কেউ যদি নিষ্ঠা আর দৃঢসংকল্প নিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠায় নামে, নিজেই সৃষ্টি করে নিতে পারে নিজের অপারচুনিটি। আমাদের বাঙালি বংশোদ্ভূত প্রতিভাময়ী ঝুম্পা লাহিড়ী তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সাহিত্যকর্মী হিসাবে তার যাত্রার শুরুটা মোটেই সহজতর ছিলো না। তার প্রথম ছোটগল্পের বই Interpreter of Maladies বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে থাকায় ব্যর্থ মনোরথ ঝুম্পা পড়াশোনায় ফিরে আসেন। ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এ এমএফএ এবং কমপারেটিভ লিটরেচারে এমএ শেষ করে রেনেসাঁ স্টাডিজে Ph.D করেন। আবার প্রকাশনার চেষ্টায় ফিরেই ১৯৯৯ সালে Interpreter of Maladies প্রকাশের সাথে সাথে পুলিৎজার পুরস্কার পান। অন্যদের মত ঝুম্পা নিজেও অপ্রত্যাশিত এই পুরস্কারে বিস্মিত হয়েছিলেন। বুদ্ধিদীপ্ত ঝুম্পার অবাক হবার যথেষ্ট কারণও ছিলো। প্রথমত সব গল্পের স্থান কাল পাত্র মার্কিনি পাঠকের চেনাজানা সংস্কৃতি থেকে একেবারেই আলাদা, অচেনা। দ্বিতীয়ত সব গল্পের কাহিনি কেন্দ্রীভূত মূলত ভারতীয়-মার্কিনি জীবনবোধের সমন্বয় ঘটাবার অচিন্ত্যনীয় সাংস্কৃতিক-দ্বন্দ্বের আখ্যানে। ঝুম্পার লেখনীর বুদ্ধিমত্তা হলো-, কাহিনি বর্ণনায় তাঁর অকৃত্রিম সরলতা আর সহজাত মনোবিদ্যা। তার বর্ণনা মুখের ভাষার মতো সহজ সরল আর জীবনবোধ দৃষ্টিগ্রাহ্য সরলতামুগ্ধ, জটিলতাবিহীন। এত সহজ সরল জীবন বোধ করি বাস্তবে অবান্তর, জটিলতাবদ্ধ বাস্তবজীবনে তাই এই আপাতঃসরল মনোবীক্ষা ফ্যান্টাসির মতো পাঠকমনকে মোহমুগ্ধ করে রাখে। এই শান্ত-সমাহিত জীবনবোধ নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
সেই একই কথা ঝুম্পার উপন্যাস The Namesake (২০০৩) এবং The The Lowland (২০১৩) আর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ Unaccustomed Earth (২০০৮)-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তার সকল গল্প-উপন্যাসই ভারতীয়-মার্কিনি জীবনবোধের সমন্বয়ের কাহিনী। একেবারে অপরিচিত এলিয়েন কালচারে মার্কিনি পাঠকদের অভ্যস্ত করাবার দুর্বিনীত সাহস ঝুম্পা কীভাবে অর্জন করলেন, তা গবেষণার বিষয়। যদিও ঝুম্পা গোগলের প্রভাবকে স্বীকার করেছেন, তবু বলা যায় গোগলের লেখা তার লেখার বিপরীত, জটিল মনোবিজ্ঞানের দ্বান্দ্বিক উপস্থাপনা। বরং মনে হতে পারে টলস্টয়ের মৃত্তিকা সংলগ্ন সরলতা ঝুম্পাকে প্রভাবিত করেছে বেশি। তবুও কথাসাহিত্যে ঝুম্পা যতই সহজিয়া প্রবণতা সৃষ্টি করুন না কেন, ঝুম্পা একজন ধীসম্পন্ন উত্তরাধুনিক ব্যক্তিত্ব; দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ হিসাবে ইতালীয় ভাষা শিখে, সে ভাষাতেই প্রকাশ করেছেন সাম্প্রতিক উপন্যাস Dove mi Travo (২০১৮) আর ইতালীয় অনুবাদ (২০১৭) এবং Trick (২০১৮) এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর ভবিষ্যত সাহিত্যকর্ম হবে ইতালীয় ভাষাতেই।
২০০০ সাল পরবর্তি মার্কিন মিলিনিয়াল বাস্তুত্যাগী ডায়াস্পোরা কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে হিস্পানিকদের সংখ্যাধিক্য, সেজন্য তাঁরা ‘হিস্প্যানিওলা’ নামে পরিচিত। তাদের আরেকজন জুনো দিয়েস (Junot Diaz), জন্ম ডোমানিকান রিপাবলিক, পাঁচ বছর বয়সে আমেরিকায় স্থায়ী হন। জুনো দিয়েসের গল্প-উপন্যাসের উপজীব্য সামরিকজান্তার দুঃশাসনপুষ্ট স্বদেশ। ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এ বিএ করার সময় জুনো দিয়েস সংস্পর্শে আসেন নোবেল বিজয়ী টনি মরিসন ও সন্দ্রা সিসনেরোস-এর সাথে, যা তার শিল্পসাহিত্যের ধারণা আমূল বদলে দেয়। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ Drown ১৯৯৫ তে প্রকাশিত হয়, উপন্যাসে সৃষ্টি করেন পিতৃহীন কিশোর চরিত্র “ইউনোয়া” (Yunoir)’র অস্তিত্ব-সংগ্রামের ধারাবাহিক গল্প, সামরিকজান্তার অত্যাচার, রক্তপাত, হত্যা, গৃহযুদ্ধ অতিক্রান্ত কিশোরের শেষপর্যন্ত মার্কিনমুলুকে স্থায়ী হবার গল্প। এ যেন তার নিজের জীবন, চরিত্রের উপস্থাপনা। তাঁর পরবর্তী রচনাগুলো- How to Date a Brown Girl/ Black Girl/White Girl/ Halfie (1994-2004) তাঁর সৃষ্ট চরিত্র ইউনোয়ার সামাজিক পঙ্কিলতা থেকে সংক্রামিত আত্মপীড়ন, অনভিজ্ঞ উচ্ছ্বাস ও যৌনতাড়না অতিক্রম করে, শুভবুদ্ধি অর্জনের গল্পকাহিনির সিরিজ।
জুনো দিয়েস ২০০৭ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পান তাঁর The Brief, Wondrous Life of Oscar Wao (২০০৭) উপন্যাসের জন্য। সমাজের বাস্তবতা খুঁড়ে বয়ঃসন্ধিকালীন সদ্য যুবার আত্মপরিচয় অর্জনের মনোজটিলতা, যৌনতা, পপ-কালচারে লক্ষ্যচুৎ নৈতিক অবক্ষয়ের উন্মাদনা ইত্যাকার সামাজিক সমস্যা উপন্যাসে চিত্রিত করেন নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোতে। তার দ্বিতীয় ছোটগল্প সংকলন This is How you Lose Her (২০১২) বিশ্বের পাঠককুলে নিজগুনে স্থান করে নেয়। গল্পের আখ্যানভাগ হিসাবে বেছে নিয়েছেন একদিকে মার্কিনি সংস্কৃতির মূলধারায় একাত্ম হবার প্রচেষ্টার সাথে মাতৃভূমির একনায়কতান্ত্রিক সন্ত্রাস আর নস্টালজিক নাড়ির টান, অন্যদিকে-, আত্ম-অবদমনের সরস যৌনতা, যৌবনের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার সরাসরি মানবিক-মানসিক দ্বন্দ্ব-সহবাস! দিয়েস বর্তমানে MIT’র শিক্ষক এবং সম্প্রতি (১০ মে, ২০১৮) পুলিৎজার প্রাইজ সভাপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছেন।
হিস্প্যানিওলা বাস্তুত্যাগী ডায়াস্পোরা কথাসাহিত্যিকদের মধ্য অন্যতম আরেকজন হেইতি-আমেরিকান এডউইজ ড্যাটিকা (Edwidge Danticat) ) জন্ম ১৯৬৯, হেইতি। দুই বছর বয়সে তার বাবা আমেরিকায় আসেন পরিবার দেশে রেখে, তার মা’ও আমেরিকায় চলে আসেন অভিবাসন নিতে ছেলে মেয়েকে রেখে, তখন ড্যাটিকার বয়স মাত্র চার বছর। ছোটভাইকে সাথে করে আক্ষরিক অর্থে এতিমের মতই আত্মীয়ের কাছে প্রচ- দ্রারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয় ড্যাটিকা, আতঙ্কে প্রত্যক্ষ করে একনায়ক ‘পাপাডক’ জান্তার নারকীয় অত্যাচার, উৎপীড়ন, দুর্নীতি আর অপশাসন। এমন দুঃস্বপ্নময় আবর্তের মাঝেও হেইতিতে নয় বছর বয়সেই ড্যাটিকা লেখা শুরু করে একক প্রচেষ্টায় এবং বারো বছর বয়সে ভাইবোন মিলিত হয় তাদের বাবা মায়ের সাথে, বসবাস শুরু হয় দারিদ্র্য আর হেসিয়ান অধ্যুষিত ন্যুইয়র্কের ব্রুকলিন ঘেটো (বস্তি) তে। অত্যাচার, নৃশংসতা, পরিবার বিচ্ছিন্নতা, দারিদ্র্য, অসহায়তা-, কোনকিছুই আটকাতে পারেনি ড্যাটিকা’র লেখালেখি! অনেক সময় বাস্তবও গল্পকে হার মানায়, ড্যাটিকা’র জীবনই তার উপন্যাস।
১৯৯৩ সালে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে MFA শেষ করেন ড্যাটিকা। ১৯৯৪তে প্রথম উপন্যাস Breath, Eyes, Memory প্রকাশিত হয়। নিজের জীবনের বাস্তব দুর্দশা, হেইতির জান্তার অমানবিক নৃশংসতা আর বাস্তুত্যাগী জীবনে অচেনা সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য ঘটাবার মানবেতর প্রচেষ্টা মিশিয়ে তৈরি হয় তাঁর উপন্যাসের কাহিনি। মার্কিনি বহুজাতিক পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় ড্যাটিকার উপন্যাস। ড্যাটিকার প্রায় সকল সাহিত্যকর্মের মর্মবস্তু হলো আত্মপরিচয়ের সংকট, সাংস্কৃতিক বিপর্যয়, বাসভূমির রাজনৈতিক নৃশংসতা, পারিবারিক সম্পর্ক আর বাস্তুত্যাগী জীবনের পুনর্বাসনের সামাজিক সমস্যা। মাত্র ২৭ বছর বয়সে ড্যাটিকা এৎধহঃধ জার্নালের ২০ জন উদীয়মান মার্কিন সাহিত্যিক নির্বাচিত হন। গল্প সংকলন Krik? Krak!! (১৯৯৬) আর উপন্যাস The Farming (১৯৯৮) তাঁর সাহিত্যকর্মের পরিধি বাড়াতে যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে। ইতোমধ্যে তাঁর অনেক গল্প-উপন্যাস, চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে ড্যাটিকার হাতে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর উপন্যাস Untwine (২০১৫) এবং স্মৃতিকল্প The Art of Death (২০১৭)। এ পর্যন্ত তাঁর গল্প উপন্যাসের সংখ্যা ২০টি, অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বহু ভাষায়, তাঁর লেখা চিত্রনাট্য চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে দু’টি, Poto Mitan (২০০৯) এবং Girl Rising (২০১৩)।
মিলিনিয়াল কথাসাহিত্যিকদের লেখার প্রকরণ ও ভিন্নতা ব্যাপক, নতুনত্ব, অভিনবত্ব একেবারেই স্বতন্ত্রমাত্রার; সেজন্য চাই নতুন জীবনবীক্ষা আর তার সমার্থক নন্দনতত্ত্ব। আমেরিকার আদিবাসী কথাশিল্পী শেরম্যান এ্যালিক্সি (জন্ম ১৯৬৬ সাল) সেই দাবিকে আরো একধাপ উচ্চতায় নিয়ে যান। শতাব্দীর কণ্ঠস্বর তালিকায় তিনি একমাত্র আদিবাসী কথাসাহিত্যিক; আসলে আধা-আদিবাসী, আধা-আইরিশ-; এ্যালিক্সি নিজের ভাষায়: “(মদ্যপ জন্মদাতা পিতা) who vanished like a cruel magician about two minutes after I was born.” তাঁর ছয় মাস বয়সে জটিল ব্রেন সার্জারি হয়, শতভাগ সম্ভাবনা ছিলো মৃত্যু অথবা মানসিক বিকলাঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকা-; ছয় বছর বয়সে মা মারা যান ক্যান্সারে, পরের ঘরে আশ্রিত আর জুভেনাইল ডিটেনশানে বড় হওয়া এ্যালিক্সি রাগ আর ঘৃণা সাথে নিয়ে শিল্প চর্চা শুরু করেন [পাঠককে অনুরোধ করবো এ্যালিক্সি’র জীবনবৃত্তান্ত en.m.wikiquote.org থেকে পড়ে নিতে, বাস্তব জীবনের এত সংগ্রামী-বৈচিত্র্যময় উত্থানপতনের কাহিনী হয়তো শুধু গল্প-উপন্যাসেই সম্ভব] তথাপি কথাশিল্পী এ্যালিক্সির লেখা ধীসম্পন্ন, ঘৃণাভরা, কৌতুকতার আবরণে শোকাতুর বিয়োগান্তক প্রহসন! শুধু এটুকু বলা মানে এ্যালিক্সি’র প্রতিভাকে ছোট করে দেখা, এ্যালিক্সি শিল্পসাহিত্য সম্পর্কে নিজেই মন্তব্য করেছেন: I wonder why people don’t realize that each and every word only has the power and meaning you assign to it. এ্যালিক্সি জানেন কীভাবে একটা শব্দেকে অর্থ আর শক্তিতে রূপান্তর করেতে হয় কল্পকাহিনিতে। এ্যালিক্সি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, চিত্রপরিচালক, Indigenous Nationalism-এর প্রবক্তা। ২৭ বছরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ শিকড়-ওপড়ানো এতিম সর্বহারা জীবনে প্রথম গল্পগ্রন্থ The Lone Ranger and Tonto Fishfight in Heaven (১৯৯৩ সাল) দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন, যা পরবর্তিতে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয় Smoke Signals ১৯৯৮ সালে। প্রথম উপন্যাস Reservation Blues প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে, আমেরিকান বুক অ্যাওয়ার্ড পান বইটার জন্য। পরের আধা আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস The Absolutely True Diary of a Part-Time Indian (২০০৭ সাল) অর্জন করে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ইয়ং পিপল’স লিটরেচার। এরপর অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, কবিতা, চলচ্চিত্র রচনা করে চলেছেন এ্যালিক্সি। আত্মস্মৃতি You Don’t Have to Say You Love Me (২০১৭ সাল) বের হবার সাথে সাথেই অনেক পাঠক, সমালোচক-লেখকের মর্মন্তুদ জীবন কাহিনির অতিপ্রাকৃতিক প্রতিবেদন পড়ে গভীর মর্মবেদনা এবং মানসিক অস্বস্তি বোধ করেন। সে কারণে এ্যালিক্সি তার আত্মস্মৃতি গ্রন্থের বক্তৃতামালা বাতিল করেন। পরের সংস্করণে পরিশীলিত ভাষায় উপস্থাপনা করা হয় কাহিনি।
চ্যাং-রে লি কোরিয়ান-আমেরিকান ডায়াস্পোরা মিলিনিয়াল কথাসাহিত্যিক যার উপন্যাসে সূক্ষ্ম ধ্রুপদী সুর খুঁজে পায় পাঠক, পরিচয়ের আত্তীকরণ ঘটে কাহিনির মর্মমূলে লুকানো প্রাচ্যের কৃষ্টি আর সংস্কৃতির মেলবন্ধনে। ডায়াস্পোরা মানেই নস্টালজিয়া, তাই লি’র উপন্যাস জুড়েই থাকে আত্মপরিচয় খোঁজার নিভৃত আকুলতা। বাবা-মা’র সাথে ৩বছর বয়সে লি পাড়ি জমান আমেরিকা। লি তার প্রথম উপন্যাস Native Speaker (১৯৯৬) দিয়ে মার্কিন শিল্পসাহিত্যের দরজায় কড়া নাড়েন ২৯ বছর বয়সে, হেমিংওয়ে ফাউন্ডেশন/পেন অ্যাওয়ার্ড পান উপন্যাসটির জন্য। দ্বিতীয় উপন্যাস A Gesture Life (১৯৯৯) এর জন্য পান এসিয়ান-আমেরিকান লিটারারী অ্যাওয়ার্ড। এরপর থেকে নিয়মিত প্রকাশনা চলতেই থাকে, সাথে পুরস্কারও। Aloft (২০০৪), The Surrendered (২০১০) এবং তার সর্বশেষ উপন্যাস On Such a Full Sea (২০১৪)। লি তার নিজের লেখাকে মনে করেন সম্মোহনের সমার্থক; স্বপ্নপূরণ আর স্বপ্নের অপূর্ণতার ব্যাবধান, নিজেকে নির্মাণ আর উন্মোচনের এক প্রক্রিয়া।
মিলিনিয়াল কথাসাহিত্যিক হিসাবে সম্প্রতি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জো মেনো। জন্ম ১৯৭৪, শিকাগোর কুলম্বিয়া কলেজে অধ্যয়নরত গ্র্যাজুয়েট ছাত্র, ২৪ বছর বয়সের সপ্রতিভু মেনো’র সাহিত্যে আত্মপ্রকাশ তার উপন্যাস, Tender as Hellfire (১৯৯৯ সালে) এর মাধ্যমে। তখন জীবনধারণ আর লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন ফুল বিক্রির দোকানে কাজ করে। কৈশোরউত্তীর্ণ পাঙ্ক জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতাকে তার সাহিত্যকর্মে সুচারু উপস্থাপনা করে জো মেনো বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেন Hairstyle of the Damned (২০০৪ সাল) উপন্যাসের মাধ্যমে। পরবর্তীতে মেনো তার অসাধারণ শৈলী আর চৌকস দক্ষতা মিলিয়ে উপহার দিয়েছেন ছোটগল্প সংকলন Bluebirds Used to Croon in the Choir (২০০৫ সাল), উপন্যাস Demons in the Spring (২০০৮ সাল) আর গল্পসংকলন Marvel and a Wonder (২০১৫ সাল) আরো উৎকর্ষতায় নিয়ে গেছেন। গল্পকারের অসাধারণ দক্ষতা মেনো’র সহজাত। হৃদয়বিদারক একটা গল্প The Use Of Medicine-এ দুই ভাইবোন মিলে পাড়ার ইঁদুর, কাঠবিড়ালী, আর গৃহপালিত জন্তুদের ওষুধ দিয়ে অচেতন করে জোগান দিতো মা’য়ের পুতুল নাচের প্রদর্শনীতে। মায়ের ওই প্রদর্শনীই তাদের জীবনযাপনের শেষ অবলম্বন, অভাবের তাড়ণায় তাদের বাবা আত্মহত্যা করেছে কিছুদিন আগেই! এ যেন অপু-দুর্গার আরেক উপাখ্যান। মেনো’র লেখনীতে একধরনের দৃঢ়প্রত্যয়, তিক্ষ্ণ বাস্তবতার অকল্পনীয় দৃষ্টিভঙ্গি আর স্থান-কাল-পাত্রের যথার্থ উপস্থাপনা মিলেমিশে বিশ্বাসযাগ্য উত্তরাধুনিক শিল্পসমন্বয়কে প্রকাশ করে শিল্পিতমাত্রায়। মনে হতে পারে তার লেখাগুলো যেন জয়েসের The Portrait of an Artist as a Young Man-এর আধুনিক সংস্করণ, ডাবলিনার্সের ধূসর জগৎ, বিভুতিভুষণের মায়ার সংসার, সত্যজিতের পথের পাঁচালী! গল্প-উপন্যাস ছাড়াও, নাটক, চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্র (People Are Becoming Clouds), সংগীত, সাংবাদিকতাকেও পেশা হিসাবে নিয়েছেন জো রেনো।
জেনিফার ইগ্যান, দ্য ন্যুইয়র্কার সাময়িকীর মিলিনিয়াল কথাসাহিত্যিকদের তালিকার বাইরের উপন্যাসিক ও গল্পকার, জন্ম ১৯৬২ ইলনয়েস, ন্যুইয়র্কে ভাগ্যান্বেষণে (লেখক হতে) আসেন ১৯৮৭ সালে। সাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি পাবার আগেই সংবাদমাধ্যমে ইগ্যান পরিচিতি পান ‘এ্যাপল’ প্রতিষ্ঠাতা ‘স্টিভ জব’-এর প্রেমিকা হিসাবে। তবে ইগ্যান নিজের প্রতিভা দিয়েই মার্কিনি মিলিনিয়াল সাহিত্যিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। তার প্রথম উপন্যাস The Invisible Circus (১৯৯৫) প্রকাশিত হবার সাথেসাথেই চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়। ২০০১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস Look At Me ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফাইনালিস্ট হওয়ার মাধ্যমে মার্কিনি নতুন প্রজন্মের কথাসাহিত্যিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। ২০১১ সালে TA visit from the Goon Squad প্রকাশনার জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পান। ইতোমধ্যে ইগ্যান প্রকাশ করেছেন চারটি উপন্যাস আর একটি গল্পগ্রন্থ। তার অতি সাম্প্রতিক প্রকাশনা Manhattan Beach (২০১৭)। মার্চ ২০১৮ সাল থেকে ইগ্যান চঊঘ অসবৎরপধ এর প্রেসিডন্ট পদে নিয়োজিত আছেন।
ইগ্যান নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন বিরলপ্রজ কথাসাহিত্যিক হিসেবে, উপন্যাসকে অসাধারণ লাবণ্যমাধুর্যে সাবলীলভাবে গল্পে প্রকাশ করতে পারেন। গ্রন্থ সমালোচকেরা প্রায়ই সমালোচনায় বলেন, ইগ্যানের উপন্যাস আসলে অনেক আন্তঃসংযুক্ত গল্পের সমাহার, নাকি ওটাই তার লেখার বৈশিষ্ট্য [বিষয়টি হাসান আজিজুল হকের প্রথম দিকের লেখা ছোটগল্প সংকলনের বৈশিষ্ট্যর কথা মনে করিয়ে দেয়, গ্রন্থের গল্পগুলো শুরু থেকে পড়ে শেষ করলে একটা উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া যেতো!]। প্রত্যুত্তরে ইগ্যান নিজেও নিশ্চিত নন তিনি আসলে উপন্যাস নাকি আন্তঃসংযুক্ত গল্পগুচ্ছ লেখেন, কারণ তার লেখার প্রকাশভঙ্গির মধ্যে এতই চমৎপ্রদ নতুনত্ব আছে যে সমালোচকেরা তার স্টাইলের নামকরণ করেছেন ‘Genre-bending Content.’ এত সপ্রতিভু প্রকরণ ইগ্যান তার লেখায় ব্যবহার করেন যে শেষাবধি তার প্রকাশনাকে প্রথাগত কোন প্রকরণ বা সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তার বইয়ের অনেক অনুচ্ছেদই PowerPoint Presentations ব্যবহৃত হয়। ইগ্যান তার প্রকাশনার প্রকরণ ব্যাখ্যা করেন এভাবে- I wanted to avoid centrality. I wanted polyphony. I wanted a lateral feeling, not a forward feeling. My ground rules were: every piece has to be very different, from a different point of view. I actually tried to break that rule later; if you make a rule then you also should break it! আশ্চর্য্যজনকভাবে কথাগুলো আমেরিকার প্রথিতযশা সদ্যপ্রয়াত কবি Mary Oliver এর কবিতাকে মনে করিয়ে দেয়-
As long as youÕre dancing, you can
break the rule
Sometimes breaking the rules is just
extending the rules
Sometimes there are no rules.
(Mary Oliver. Three Things to Remember)
এ আলোচনার বাইরে রয়ে গেলেন আমেরিকার সমসাময়িক আরো অনেক কথাসাহিত্যিক, যাদের নাম নিয়মিত সংযোজিত হচ্ছে মার্কিন মিলিনিয়াল ভয়েস অব আমেরিকান লিটারেচারের তালিকায়। পাঠকের অনুসন্ধিৎসু জিজ্ঞাসার উত্তরে এখানে আরো কয়েকটা নাম সংযোজন করা হলো। এরা হলেন- Donald Antrim, Ethan Canin, Tony Early, Nathan England, Jeffrey Eugeniders, Jonathan Franzen, Allegra Goodman, A M Homse, Matthew Klam, Rick Moody, Antonya Nelson, William T Vollman, David Fosrer Wallace, Lorrie Moods প্রমুখ! পাঠক এদের বিকশিত সাহিত্যকর্মের সাথে নিজেদের পরিচিত করে নেবেন- এ কামনা রইল!
মিলিনিয়াল ভয়েস ইন আমেরিকান লিটারেচার
অশোক কর
বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
নতুন শতাব্দীর প্রারম্ভে মার্কিন শিল্পসাহিত্য পর্যালোচনায় প্রসঙ্গটি উঠে আসে; কারা হবেন “মিলিনিয়াল ভয়েস ইন আমেরিকান লিটরেচার”। “দ্য ন্যুইয়র্কার” পত্রিকা ২০ জন সম্ভাব্য সেরা ঔপন্যাসিক/গল্পকারের নাম নির্বাচন করে, যাদের বয়স চল্লিশ বছরের নিচে (১৯৯৯ সালের হিসাবে), ইতোমধ্যেই তারা মার্কিন কথাসাহিত্যে তাদের প্রতিভার স্বীকৃতি আদায় করে নিয়েছেন। স্বভাবতই; এ তালিকার বাইরে, নতুন শতাব্দী শুরুর লগ্নে, ৪০ বছর বয়সের নিচে আরো অনেক কীর্তিমান মার্কিন কথাসাহিত্যিকদের তখন উদ্দীপনাময় উপস্থিতি।
একবিংশ শতাব্দীর এইসব সম্ভাবনাময় তরুণ কথাসাহিত্যিকদের প্রতিভা আর তাদের সাহিত্যকর্ম বৈচিত্র্যে, স্বকীয়তায়, আর নৈপুণ্যে বুদ্ধিদীপ্ত। প্রত্যেকেই তার মৌলিক আর প্রতিভাদীপ্ত সাহিত্যকর্ম নিয়ে প্রতিষ্ঠিত, প্রতিশ্রুতিশীল, আর তাদের সাহিত্যকর্ম চলমান শিল্পধারায় ফেলে বিচার করা প্রায় দূরহ। একবিংশ শতকের সমসাময়িক সাহিত্যধারার অভুতপূর্ব বৈশিষ্ট্য সৃষ্টি হয়েছে যেন তাদের সাহিত্যকর্মে। সুতরাং নতুনমাত্রার সাহিত্যবিচারেও প্রয়োজন হয়ে উঠেছে নতুন মানদ-, নতুন সৌন্দর্য্যতত্ত্ব, শিল্পের নতুন বিশ্ববীক্ষা, প্রগতিশীল অন্তর্দৃষ্টির।
একবিংশ শতাব্দীর শুরু উত্তাল বিশ্বরাজনৈতিক ডামাডোলের মধ্যে (যুদ্ধ, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ, ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদ, ক্ষমতাধর দেশের নিয়ন্ত্রণহীন আগ্রাসন, উদ্বায়ু বিশ্বঅর্থনীতি ইত্যাদি), সেইসাথে প্রযুক্তির নতুন উদ্ভাবন জন্ম দিয়েছে বিশ্বমাত্রিক তথ্য প্রযুক্তি আর সামাজিক তথ্যমাধ্যমের প্রবল সম্ভাব্যতা (ইনফরমেশন সুপারহাইওয়ে, ইন্টারনেট, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক, সোসাল মিডিয়া, স্মার্টফোন, স্যাটেলাইট কম্যুনিকেশান), বদলে গেছে বিশ্বমাত্রিক যোগাযোগ, তথ্য প্রবাহ আর সম্পর্কের পরিধি, পরিণতি! জন্ম দিচ্ছে অভূতপূর্ব কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর মূল্যবোধ! মার্কিনিদের আভ্যন্তরীণ আর বিশ্বরাজনৈতিক-কূটনৈতিক পশ্চাৎপদতা, অস্থিতিশীল অর্থনীতির বিরূপ পরম্পরার বিপরীতে প্রযুক্তিসমৃদ্ধ সামাজিক সংস্কৃতির ঋণাত্মক উত্থান-; একবিংশ শতাব্দীর শুরুকে করে তুলেছে দ্বন্দ্বমুখর, অস্থির আর কল্পনাতীত দূরনির্মেয়! পরাক্রমী এইসব বিপরিতধর্মী দ্বন্দ্বের সরব-নীরব সংঘাতে তৈরি হচ্ছে অসংখ্য নৈতিক-অনৈতিক সামাজিক বিরোধ, মূল্যবোধ, কৃষ্টি-; প্রায়শ: তা ব্যাখ্যার অতীত। বাস্তবে, শিল্প সাহিত্য সততই প্রগতির দিকে; তাই একবিংশ শতকের তরুণ শিল্পকর্মীর একাধারে কার্ল মার্কস, ডারউইন আর মধুসূদনের দায়ভার কাঁধে নিয়ে এই নতুন শতাব্দীতে যাত্রা শুরুর প্রয়োজন হয়ে উঠেছে।
এ শতকের চব্বিশটি বছর পেরিয়ে গেছে, দেখা যেতেই পারে মার্কিন কবি/কথাসাহিত্যিকেরা সেই দুরূহ দ্বায়িত্ব পালনে কতটুকু পারঙ্গম। ইতোমধ্যে মার্কিন মিলিনিয়াল শিল্পীসাহিত্যিকদের তালিকায় যোগ হয়েছে আরো নতুন নাম, নতুন সম্ভাবনা, নতুন স্ফুরণ! প্রায় দুরূহ এই নতুন শতাব্দীর সাহিত্যকর্ম কোন সুনির্দিষ্ট শ্রেণিবিভাগে ফেলে বিচার করা কঠিন, কারণ তাদের লেখার প্রকরণ ও ভিন্নতা ব্যাপক, নতুনত্ব, অভিনবত্ব একেবারেই স্বতন্ত্রমাত্রার। শিল্পের বহুমাত্রিক প্রকরণ, নিরীক্ষা, ইত্যাকার বিষয় মিলেমিশে এমন এক নতুন আবহ সৃষ্টি হয়েছে যে, প্রতিটি সাহিত্যকর্ম এক স্বতন্ত্র বিশ্লেষণের দাবি রাখে, সমগোত্রীয় বা সমমনা চিন্তাধারার সম্ভাব্যতা সেখানে ক্ষীণ। নতুন শিল্প প্রকরণের মাধ্যমে মহাকাব্যিক ঘরানার ব্যবহার থেকে শুরু করে, নিখুঁতবোনা ইমপ্রেসনিস্ট প্রকাশনা, বাস্তববাদী নিরীক্ষা থেকে বস্তুবাদী বা বন্য ফ্যান্টাসি, ক্ষেপাটে কমেডি থেকে অতিরঞ্জিত ট্র্যাজেডি, পারিবারিক গল্পকথা থেকে ঐতিহাসিক কল্পকাহিনী, কমিক থেকে বৈজ্ঞানিক অতিন্দ্রবিলাস-; সবকিছু যেন নিরীক্ষার বুনোনে একে অন্যকে ঘিরে প্রদক্ষিণরত।
২০০০ সাল শুরুর প্রাক্কালে “দ্য ন্যু-ইয়র্কার” প্রকাশনা ২০ জন কথাশিল্পীর নাম প্রস্তাবনা করে, যারা হবে ‘মিলিনিয়াল ভয়েস ইন আমেরিকান ফিকশান’, আমেরিকার তরুণ প্রজন্মের লেখক, জর্জ স্যন্ডার্স (এবড়ৎমব ঝধঁহফবৎং) সেই অন্যতমের একজন। ২৮ বছর বয়সে (১৯৮৬) ছোটগল্পকার হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে ২০০০ সালের মধ্যে সন্ডার্স প্রবন্ধ, নভেলা, শিশুসাহিত্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিয়েছেন নিজেকে স্বতন্ত্র ধারার লেখক হিসাবে। ইতিমধ্যেই সংগ্রহ করে নিয়েছেন মার্কিনি সকল সন্মাননা আর পুরস্কার (একমাত্র পুলিৎজার বাদে)। তার লেখা গল্প চিহ্নিত করা হচ্ছে এ্যাবসার্ডিস্ট, প্রতিষ্ঠিত ফর্ম ভেঙে-মুচড়ে নতুন ধারা সৃষ্টির স্বীকৃতি আদায় করে নেয়া গল্পকার। ২০০০ সালে মাত্র ১৬ বছরের ছোটগল্পকার জীবনে তিনি সাহিত্যের প্রচলিত ধ্যানধারণা ভেঙে দিয়ে তৈরি করেছেন আমেরিকার মধ্যবিত্ত জীবনে কর্পোরেট কালচার, পণ্য-বাণিজ্যিক ভোগবাদসর্বস্ব লোকাচার আর ৯টা-৫টা অফিসজীবন-সংস্কৃতি মিলেমিশে যে নতুন জীবনাচরণের সৃষ্টি হয়েছে-, গল্পে সেই এ্যাবসার্ডিস্ট ফর্মের সূচনা এবং সুচারু উপস্থাপন করেছেন। সার্বিক স্বাতন্ত্র্য আর অভিনবত্ব মিশিয়ে প্রকাশ করেছেন CivilWarLand in Bad Decline (1996), Pastoralia (2000), The 400 Pound CEO (১৯৯৪) The Tenth of December (২০১০)-এর মতো মাস্টারপিস গল্পগ্রন্থ। তার গল্পের চরিত্ররা কেউ বাণিজ্যতন্ত্র পিষ্ট স্টিপার, পণ্য প্রতিযোগিতায় দেয়ালে পিঠ ঠেকা পরাজিত, বাঁচার শেষ চেষ্টায় আত্মসম্মান বিসর্জন দিয়ে দর্শকদের মনোরঞ্জনে পুরুষাঙ্গ হাতে করে স্টিপার নাচ নিয়ে হাজির হয়। আরেক চরিত্র অশীতিপর এক মাসিমা, পরাজয়, বঞ্চনা ছাড়া জীবনে কোন শুভ, ভাল কিছু ঘটেনি তাঁর দীর্ঘজীবনে। তার গল্পের প্রতিটি লাইনে সন্ডার্স এই এ্যাবসার্ডিস্ট সাবকালচার তুলে ধরেন তুলনাহীন দক্ষতার সাথে, প্রতিটি লাইনই একেকবার স্বতন্ত্র গল্প হয়ে ওঠে। তার হাতে গল্পের শিরোনাম পর্যন্ত গল্পের অবতারণা করে, দৃশ্যকল্পসনা কবিতাকেও হার মানায় প্রায়শ। ১৯৯৯-তে প্রকাশিত, ও’হেনরি পুরস্কারপ্রাপ্ত গল্পগ্রন্থের “Sea Oak” শিরোনামের গল্পে সত্যিকার সমুদ্র বা ওক গাছের সারির অস্তিত্ব নেই, আছে ওই নামে ভর্তুকিতে ভাড়া দেয়া সল্প আয়ের কর্মজীবিদের শতখানেক জীর্ণ এ্যাপার্টমেন্টের সারি, যেখানে জীবনের দুঃসহতা ভেসে বেড়ায়। তেমনি আরেক গল্পগ্রন্থের নাম “The 400 Pound CEO” স্যাটায়ারে বুঝিয়ে দেয় কর্পোরেট কালচারের শোষণের অতিকায় চালচিত্র, শোষক আর শোষিতের দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রতিতুলনা।
এত সাফল্য, সন্মাননা সত্ত্বেও সন্ডার্স নিজের কাছে সৎ, জানেন তিনি অনুসন্ধানী, অনুসন্ধিৎসু লেখক। যে লেখা নিজেকে সন্তুষ্ট করে না, তা পাঠককে তিনি দিতে রাজি নন। তার একটাই লক্ষ্য, প্রতিটি সৃষ্টিকর্ম হতে হবে নান্দনিক, শিল্পিত উদ্ভাবনীময়! তাই সন্ডার্স ঘোষণা দিয়েছিলেন তিনি তখনো উপন্যাস লিখবার উপযুক্ত নন, কারণ উপন্যাসের যে উপকরণ আর ফর্ম তিনি ব্যবহার করতে চান তার সমার্থক মনঃসংস্কৃতিক পরিবেশ বা অন্তর্দৃষ্টি কোনটাই তার উপন্যাসের উপযুক্ত মনে হয় না। সুতরাং উপন্যাস লিখতে তিনি আরো সময় অপেক্ষা করতে রাজি। তিনি আক্ষরিক অর্থেই প্রায় ৩৫ বছর সময় নিয়ে লিখলেন প্রথম উপন্যাস “Lincoln in the Brado”, প্রকাশের সাথে সাথেই উপন্যাসটি জিতে নেয় ২০১৭-এর ম্যান বুকার পুরস্কার! উপন্যাসটি শোকাতুর আব্রাহাম লিঙ্কনের একটিমাত্র বিনিদ্র রাত্রির উপাখ্যান, উপজীব্য তাঁর পুত্রের মৃত্যুশোক আর উপন্যাসের আখ্যান হলো জীবন আর পুনর্জন্মের আন্তঃমধ্যবর্তী শূন্যস্থান (Brado)! যারা সন্ডার্সের শৈলীর সাথে পরিচিত, তারা নিমিষেই বুঝে নেবেন-, সন্ডার্স এই উপন্যাস কতটা নৈপুণ্যময় বৈচিত্র্যে পাঠকের হাতে তুলে দিতে চেয়েছেন।
আমরা এক যুগসন্ধিক্ষণের (২০০০ সাল) মার্কিনি কথাসাহিত্যের আলোচনা করছি, আর সেইক্ষণটিকে একাই আলোকিত করে রেখেছিলেন চেক বংশোদ্ভূত ডায়াস্পোরা গল্পকার, ঔপন্যাসিক মাইকেল স্যাবোন, (জন্ম ১৯৬৩ সালে), মাত্র পঁচিশ বছর বয়সে প্রথম উপন্যাস The Mysteries of Pittsburgh প্রকাশ করে মার্কিন কথাসাহিত্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নেন। তার বুদ্ধিদীপ্ত জটিল বাক্যবিন্যাস, কিছুটা তার পারিবারিক চেক ভাষা ও কৃষ্টি থেকে আহৃত, সাথে মূলধারার ইংরেজি ভাষার সংমিশ্রণে নতুন মার্কিনি গদ্যভাষার জন্ম দেয়। অবশ্য প্রতিভাবান স্যাবোন সেখানেই থেমে থাকার মানুষ নন। প্রতিনিয়ত নতুনতর নিরীক্ষা, উদ্ভাবনীময় ফর্ম, বৈচিত্র্যময় প্রেক্ষাপট, কথাসাহিত্যের যাবতীয় সম্ভার তিনি উল্টেপাল্টে মার্কিনি কথাসাহিত্যকে ভিন্নতর মাত্রায় নিয়ে যান। এখানে মনে রাখতে হবে লাতিন আমেরিকার জাদুবাস্তবতা এসময়ের বিশ্বসাহিত্যকে আচ্ছন্ন করে রেখেছে-; গার্সিয়া মার্কেজ, এ্যালেহো কার্পেন্তিয়ের, ভার্গাস ইয়োসা, কার্লোস ফুয়েন্তেস-এর মতো অতিমানবদের প্রভাব, প্রতিপত্তি, আকর্ষণ অতিক্রম করে স্যাবোন মার্কিনি সাহিত্যের মার্কিনি স্বতন্ত্র ধারায় আরো বিকশিত-, আরো সর্বগ্রাসী প্রবণতা নিয়ে আসেন। শিল্পসাহিত্যের এই স্বতন্ত্র পথচলা, শিল্পকর্মকে মহিমান্বিত করে তোলা মার্কিনি শিল্পসাহিত্যের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য।
স্যাবোন মার্কিনি কথাসাহিত্যে বহুমাত্রিক চরিত্র। তিনি হেমিংওয়ে বা ফকনারের মত ধ্রুপদী সাহিত্যের পথে হাঁটেননি, বরং বেছে নিয়েছেন উইলিয়াম বারোজ, জ্যাক কারুয়াকের মতো বিক্ষুব্ধ, অনিয়ন্ত্রত, ধাবমান পরিক্রমা, কোথাও থিতু হবার মতো মানসিকতার বদলে সমাজের চলমান বিক্ষুব্ধ ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে জীবনতৃষ্ণা খুঁজে বের করার প্রেরণার প্রতি অনুরক্ত। তবে “বিট জেনারেশান” কবি সাহিত্যিকেরা যেমন বিকল্পধর্ম আর নেশার মধ্যে জীবনবীক্ষা খুঁজেছেন, স্যাবোন তেমন কোন চোরাবালিতে পা দেননি। ইহুদি স্যাবোন জিউস মিথ ব্যবহার করেছেন মানুষের মাঝে কমিকবুক সুপারহিরোর মানবিক প্রবণতা জাগিয়ে দেবার জন্য (যেমন স্পাইডারম্যান: Great power has great responsibility)| The Amazing Adventures of Kavalier and Clay, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাগের ইহুদি নিধন কনসেনট্রাশন ক্যাম্প থেকে শিল্পী বার্নহার্ড কর্নব্লামের জিউস মিথ গোলেমের কফিন জার্মানদের দখল থেকে বের করে আনার কাহিনি, তাঁকে এনে দেয় ২০০১ সালের পুলিৎজার পুরস্কার। স্যাবোন প্রতিনিয়ত বদলে নিয়েছেন তার লেখার স্টাইল, ফর্ম; প্রতিটি বইতে রেখে যাচ্ছেন প্রতিভার সাফল্যময় দৃষ্টান্ত। সাহিত্যের বিবিধ ধারায় তার স্বাচ্ছন্দ্য পথ চলা, The Yiddish Policeman’s Union (২০০৭) অলটারনেট হিস্ট্রি ধারাতে লেখা রহস্যপোন্যাস। ধারাবাহিক সিরিয়াল Gentleman on the Road থেকে রূপান্তরিত উপন্যাস Telegraph Avenue (২০১২), স্মৃতিচারণমূলক উপন্যাস Moonglow (২০১৬); স্যাবোনের লেখার পরিপ্রেক্ষিত বিশাল, বিষয়বস্তুর বহুমাত্রিক-; বিবাহবিচ্ছেদ, নস্টালজিয়া, বিচ্ছিন্নতা, পিতৃত্ব, ইহুদি পরিচয়-সংকট, তৃতীয় লিঙ্গ, উভকামী, ইত্যাকার চরিত্রের বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা তার সৃষ্টিকর্মে। ছোটগল্প, উপন্যাস ছাড়াও স্যাবোন চিত্রনাট্য, শিশুতোষ উপন্যাস, কমিকবুক, সংবাদপত্রের সিরিয়াল-; সাহিত্যের সকল শাখায় অবাধ বিচরণ করেছেন-, আশ্চর্যজনকভাবে অনুপস্থিতি একমাত্র শুধু কবিতায়!
আশ্চর্যজনকভাবে ২০০০ সাল পরবর্তি মার্কিন মিলিনিয়াল শিল্পসাহিত্যিকদের মধ্যে বাস্তুত্যাগী ডায়াস্পোরাদের সংখ্যাধিক্য চোখে পড়ার মতো। তার সঙ্গত কারণও আছে। আমেরিকা সংবিধান স্বীকৃত “ল্যান্ড অফ ইমিগ্রান্টস্” তেমনি “মেল্টিংপট অফ ডাইভার্স কালচার”ও বটে। সেইসাথে বিশ্বসেরা অর্থনীতিপুষ্ট “ল্যান্ড অফ অপারচুনিটি”র দেশ আমেরিকা। এদেশি নাগরিকদের যে কেউ যদি নিষ্ঠা আর দৃঢসংকল্প নিয়ে আত্মপ্রতিষ্ঠায় নামে, নিজেই সৃষ্টি করে নিতে পারে নিজের অপারচুনিটি। আমাদের বাঙালি বংশোদ্ভূত প্রতিভাময়ী ঝুম্পা লাহিড়ী তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। সাহিত্যকর্মী হিসাবে তার যাত্রার শুরুটা মোটেই সহজতর ছিলো না। তার প্রথম ছোটগল্পের বই Interpreter of Maladies বিভিন্ন প্রকাশনা সংস্থা থেকে প্রত্যাখ্যাত হতে থাকায় ব্যর্থ মনোরথ ঝুম্পা পড়াশোনায় ফিরে আসেন। ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এ এমএফএ এবং কমপারেটিভ লিটরেচারে এমএ শেষ করে রেনেসাঁ স্টাডিজে Ph.D করেন। আবার প্রকাশনার চেষ্টায় ফিরেই ১৯৯৯ সালে Interpreter of Maladies প্রকাশের সাথে সাথে পুলিৎজার পুরস্কার পান। অন্যদের মত ঝুম্পা নিজেও অপ্রত্যাশিত এই পুরস্কারে বিস্মিত হয়েছিলেন। বুদ্ধিদীপ্ত ঝুম্পার অবাক হবার যথেষ্ট কারণও ছিলো। প্রথমত সব গল্পের স্থান কাল পাত্র মার্কিনি পাঠকের চেনাজানা সংস্কৃতি থেকে একেবারেই আলাদা, অচেনা। দ্বিতীয়ত সব গল্পের কাহিনি কেন্দ্রীভূত মূলত ভারতীয়-মার্কিনি জীবনবোধের সমন্বয় ঘটাবার অচিন্ত্যনীয় সাংস্কৃতিক-দ্বন্দ্বের আখ্যানে। ঝুম্পার লেখনীর বুদ্ধিমত্তা হলো-, কাহিনি বর্ণনায় তাঁর অকৃত্রিম সরলতা আর সহজাত মনোবিদ্যা। তার বর্ণনা মুখের ভাষার মতো সহজ সরল আর জীবনবোধ দৃষ্টিগ্রাহ্য সরলতামুগ্ধ, জটিলতাবিহীন। এত সহজ সরল জীবন বোধ করি বাস্তবে অবান্তর, জটিলতাবদ্ধ বাস্তবজীবনে তাই এই আপাতঃসরল মনোবীক্ষা ফ্যান্টাসির মতো পাঠকমনকে মোহমুগ্ধ করে রাখে। এই শান্ত-সমাহিত জীবনবোধ নতুন করে বাঁচতে শেখায়।
সেই একই কথা ঝুম্পার উপন্যাস The Namesake (২০০৩) এবং The The Lowland (২০১৩) আর দ্বিতীয় গল্পগ্রন্থ Unaccustomed Earth (২০০৮)-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। তার সকল গল্প-উপন্যাসই ভারতীয়-মার্কিনি জীবনবোধের সমন্বয়ের কাহিনী। একেবারে অপরিচিত এলিয়েন কালচারে মার্কিনি পাঠকদের অভ্যস্ত করাবার দুর্বিনীত সাহস ঝুম্পা কীভাবে অর্জন করলেন, তা গবেষণার বিষয়। যদিও ঝুম্পা গোগলের প্রভাবকে স্বীকার করেছেন, তবু বলা যায় গোগলের লেখা তার লেখার বিপরীত, জটিল মনোবিজ্ঞানের দ্বান্দ্বিক উপস্থাপনা। বরং মনে হতে পারে টলস্টয়ের মৃত্তিকা সংলগ্ন সরলতা ঝুম্পাকে প্রভাবিত করেছে বেশি। তবুও কথাসাহিত্যে ঝুম্পা যতই সহজিয়া প্রবণতা সৃষ্টি করুন না কেন, ঝুম্পা একজন ধীসম্পন্ন উত্তরাধুনিক ব্যক্তিত্ব; দুঃসাহসিক চ্যালেঞ্জ হিসাবে ইতালীয় ভাষা শিখে, সে ভাষাতেই প্রকাশ করেছেন সাম্প্রতিক উপন্যাস Dove mi Travo (২০১৮) আর ইতালীয় অনুবাদ (২০১৭) এবং Trick (২০১৮) এবং সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁর ভবিষ্যত সাহিত্যকর্ম হবে ইতালীয় ভাষাতেই।
২০০০ সাল পরবর্তি মার্কিন মিলিনিয়াল বাস্তুত্যাগী ডায়াস্পোরা কথাসাহিত্যিকদের মধ্যে হিস্পানিকদের সংখ্যাধিক্য, সেজন্য তাঁরা ‘হিস্প্যানিওলা’ নামে পরিচিত। তাদের আরেকজন জুনো দিয়েস (Junot Diaz), জন্ম ডোমানিকান রিপাবলিক, পাঁচ বছর বয়সে আমেরিকায় স্থায়ী হন। জুনো দিয়েসের গল্প-উপন্যাসের উপজীব্য সামরিকজান্তার দুঃশাসনপুষ্ট স্বদেশ। ক্রিয়েটিভ রাইটিং-এ বিএ করার সময় জুনো দিয়েস সংস্পর্শে আসেন নোবেল বিজয়ী টনি মরিসন ও সন্দ্রা সিসনেরোস-এর সাথে, যা তার শিল্পসাহিত্যের ধারণা আমূল বদলে দেয়। তাঁর প্রথম গল্পগ্রন্থ Drown ১৯৯৫ তে প্রকাশিত হয়, উপন্যাসে সৃষ্টি করেন পিতৃহীন কিশোর চরিত্র “ইউনোয়া” (Yunoir)’র অস্তিত্ব-সংগ্রামের ধারাবাহিক গল্প, সামরিকজান্তার অত্যাচার, রক্তপাত, হত্যা, গৃহযুদ্ধ অতিক্রান্ত কিশোরের শেষপর্যন্ত মার্কিনমুলুকে স্থায়ী হবার গল্প। এ যেন তার নিজের জীবন, চরিত্রের উপস্থাপনা। তাঁর পরবর্তী রচনাগুলো- How to Date a Brown Girl/ Black Girl/White Girl/ Halfie (1994-2004) তাঁর সৃষ্ট চরিত্র ইউনোয়ার সামাজিক পঙ্কিলতা থেকে সংক্রামিত আত্মপীড়ন, অনভিজ্ঞ উচ্ছ্বাস ও যৌনতাড়না অতিক্রম করে, শুভবুদ্ধি অর্জনের গল্পকাহিনির সিরিজ।
জুনো দিয়েস ২০০৭ সালে পুলিৎজার পুরস্কার পান তাঁর The Brief, Wondrous Life of Oscar Wao (২০০৭) উপন্যাসের জন্য। সমাজের বাস্তবতা খুঁড়ে বয়ঃসন্ধিকালীন সদ্য যুবার আত্মপরিচয় অর্জনের মনোজটিলতা, যৌনতা, পপ-কালচারে লক্ষ্যচুৎ নৈতিক অবক্ষয়ের উন্মাদনা ইত্যাকার সামাজিক সমস্যা উপন্যাসে চিত্রিত করেন নিজের বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোতে। তার দ্বিতীয় ছোটগল্প সংকলন This is How you Lose Her (২০১২) বিশ্বের পাঠককুলে নিজগুনে স্থান করে নেয়। গল্পের আখ্যানভাগ হিসাবে বেছে নিয়েছেন একদিকে মার্কিনি সংস্কৃতির মূলধারায় একাত্ম হবার প্রচেষ্টার সাথে মাতৃভূমির একনায়কতান্ত্রিক সন্ত্রাস আর নস্টালজিক নাড়ির টান, অন্যদিকে-, আত্ম-অবদমনের সরস যৌনতা, যৌবনের উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনার সরাসরি মানবিক-মানসিক দ্বন্দ্ব-সহবাস! দিয়েস বর্তমানে MIT’র শিক্ষক এবং সম্প্রতি (১০ মে, ২০১৮) পুলিৎজার প্রাইজ সভাপতির পদ থেকে অবসর নিয়েছেন।
হিস্প্যানিওলা বাস্তুত্যাগী ডায়াস্পোরা কথাসাহিত্যিকদের মধ্য অন্যতম আরেকজন হেইতি-আমেরিকান এডউইজ ড্যাটিকা (Edwidge Danticat) ) জন্ম ১৯৬৯, হেইতি। দুই বছর বয়সে তার বাবা আমেরিকায় আসেন পরিবার দেশে রেখে, তার মা’ও আমেরিকায় চলে আসেন অভিবাসন নিতে ছেলে মেয়েকে রেখে, তখন ড্যাটিকার বয়স মাত্র চার বছর। ছোটভাইকে সাথে করে আক্ষরিক অর্থে এতিমের মতই আত্মীয়ের কাছে প্রচ- দ্রারিদ্র্যের মধ্যে বড় হয় ড্যাটিকা, আতঙ্কে প্রত্যক্ষ করে একনায়ক ‘পাপাডক’ জান্তার নারকীয় অত্যাচার, উৎপীড়ন, দুর্নীতি আর অপশাসন। এমন দুঃস্বপ্নময় আবর্তের মাঝেও হেইতিতে নয় বছর বয়সেই ড্যাটিকা লেখা শুরু করে একক প্রচেষ্টায় এবং বারো বছর বয়সে ভাইবোন মিলিত হয় তাদের বাবা মায়ের সাথে, বসবাস শুরু হয় দারিদ্র্য আর হেসিয়ান অধ্যুষিত ন্যুইয়র্কের ব্রুকলিন ঘেটো (বস্তি) তে। অত্যাচার, নৃশংসতা, পরিবার বিচ্ছিন্নতা, দারিদ্র্য, অসহায়তা-, কোনকিছুই আটকাতে পারেনি ড্যাটিকা’র লেখালেখি! অনেক সময় বাস্তবও গল্পকে হার মানায়, ড্যাটিকা’র জীবনই তার উপন্যাস।
১৯৯৩ সালে ক্রিয়েটিভ রাইটিংয়ে MFA শেষ করেন ড্যাটিকা। ১৯৯৪তে প্রথম উপন্যাস Breath, Eyes, Memory প্রকাশিত হয়। নিজের জীবনের বাস্তব দুর্দশা, হেইতির জান্তার অমানবিক নৃশংসতা আর বাস্তুত্যাগী জীবনে অচেনা সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্য ঘটাবার মানবেতর প্রচেষ্টা মিশিয়ে তৈরি হয় তাঁর উপন্যাসের কাহিনি। মার্কিনি বহুজাতিক পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয় ড্যাটিকার উপন্যাস। ড্যাটিকার প্রায় সকল সাহিত্যকর্মের মর্মবস্তু হলো আত্মপরিচয়ের সংকট, সাংস্কৃতিক বিপর্যয়, বাসভূমির রাজনৈতিক নৃশংসতা, পারিবারিক সম্পর্ক আর বাস্তুত্যাগী জীবনের পুনর্বাসনের সামাজিক সমস্যা। মাত্র ২৭ বছর বয়সে ড্যাটিকা এৎধহঃধ জার্নালের ২০ জন উদীয়মান মার্কিন সাহিত্যিক নির্বাচিত হন। গল্প সংকলন Krik? Krak!! (১৯৯৬) আর উপন্যাস The Farming (১৯৯৮) তাঁর সাহিত্যকর্মের পরিধি বাড়াতে যথেষ্ট সহায়তা দিয়েছে। ইতোমধ্যে তাঁর অনেক গল্প-উপন্যাস, চিত্রনাট্য লেখা হয়েছে ড্যাটিকার হাতে। সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে তাঁর উপন্যাস Untwine (২০১৫) এবং স্মৃতিকল্প The Art of Death (২০১৭)। এ পর্যন্ত তাঁর গল্প উপন্যাসের সংখ্যা ২০টি, অনূদিত হয়েছে বিশ্বের বহু ভাষায়, তাঁর লেখা চিত্রনাট্য চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে দু’টি, Poto Mitan (২০০৯) এবং Girl Rising (২০১৩)।
মিলিনিয়াল কথাসাহিত্যিকদের লেখার প্রকরণ ও ভিন্নতা ব্যাপক, নতুনত্ব, অভিনবত্ব একেবারেই স্বতন্ত্রমাত্রার; সেজন্য চাই নতুন জীবনবীক্ষা আর তার সমার্থক নন্দনতত্ত্ব। আমেরিকার আদিবাসী কথাশিল্পী শেরম্যান এ্যালিক্সি (জন্ম ১৯৬৬ সাল) সেই দাবিকে আরো একধাপ উচ্চতায় নিয়ে যান। শতাব্দীর কণ্ঠস্বর তালিকায় তিনি একমাত্র আদিবাসী কথাসাহিত্যিক; আসলে আধা-আদিবাসী, আধা-আইরিশ-; এ্যালিক্সি নিজের ভাষায়: “(মদ্যপ জন্মদাতা পিতা) who vanished like a cruel magician about two minutes after I was born.” তাঁর ছয় মাস বয়সে জটিল ব্রেন সার্জারি হয়, শতভাগ সম্ভাবনা ছিলো মৃত্যু অথবা মানসিক বিকলাঙ্গ হয়ে বেঁচে থাকা-; ছয় বছর বয়সে মা মারা যান ক্যান্সারে, পরের ঘরে আশ্রিত আর জুভেনাইল ডিটেনশানে বড় হওয়া এ্যালিক্সি রাগ আর ঘৃণা সাথে নিয়ে শিল্প চর্চা শুরু করেন [পাঠককে অনুরোধ করবো এ্যালিক্সি’র জীবনবৃত্তান্ত en.m.wikiquote.org থেকে পড়ে নিতে, বাস্তব জীবনের এত সংগ্রামী-বৈচিত্র্যময় উত্থানপতনের কাহিনী হয়তো শুধু গল্প-উপন্যাসেই সম্ভব] তথাপি কথাশিল্পী এ্যালিক্সির লেখা ধীসম্পন্ন, ঘৃণাভরা, কৌতুকতার আবরণে শোকাতুর বিয়োগান্তক প্রহসন! শুধু এটুকু বলা মানে এ্যালিক্সি’র প্রতিভাকে ছোট করে দেখা, এ্যালিক্সি শিল্পসাহিত্য সম্পর্কে নিজেই মন্তব্য করেছেন: I wonder why people don’t realize that each and every word only has the power and meaning you assign to it. এ্যালিক্সি জানেন কীভাবে একটা শব্দেকে অর্থ আর শক্তিতে রূপান্তর করেতে হয় কল্পকাহিনিতে। এ্যালিক্সি একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, গল্পকার, চিত্রপরিচালক, Indigenous Nationalism-এর প্রবক্তা। ২৭ বছরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ শিকড়-ওপড়ানো এতিম সর্বহারা জীবনে প্রথম গল্পগ্রন্থ The Lone Ranger and Tonto Fishfight in Heaven (১৯৯৩ সাল) দিয়ে আত্মপ্রকাশ করেন, যা পরবর্তিতে চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয় Smoke Signals ১৯৯৮ সালে। প্রথম উপন্যাস Reservation Blues প্রকাশিত হয় ১৯৯৬ সালে, আমেরিকান বুক অ্যাওয়ার্ড পান বইটার জন্য। পরের আধা আত্মজীবনীমূলক উপন্যাস The Absolutely True Diary of a Part-Time Indian (২০০৭ সাল) অর্জন করে ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফর ইয়ং পিপল’স লিটরেচার। এরপর অসংখ্য গল্প, উপন্যাস, কবিতা, চলচ্চিত্র রচনা করে চলেছেন এ্যালিক্সি। আত্মস্মৃতি You Don’t Have to Say You Love Me (২০১৭ সাল) বের হবার সাথে সাথেই অনেক পাঠক, সমালোচক-লেখকের মর্মন্তুদ জীবন কাহিনির অতিপ্রাকৃতিক প্রতিবেদন পড়ে গভীর মর্মবেদনা এবং মানসিক অস্বস্তি বোধ করেন। সে কারণে এ্যালিক্সি তার আত্মস্মৃতি গ্রন্থের বক্তৃতামালা বাতিল করেন। পরের সংস্করণে পরিশীলিত ভাষায় উপস্থাপনা করা হয় কাহিনি।
চ্যাং-রে লি কোরিয়ান-আমেরিকান ডায়াস্পোরা মিলিনিয়াল কথাসাহিত্যিক যার উপন্যাসে সূক্ষ্ম ধ্রুপদী সুর খুঁজে পায় পাঠক, পরিচয়ের আত্তীকরণ ঘটে কাহিনির মর্মমূলে লুকানো প্রাচ্যের কৃষ্টি আর সংস্কৃতির মেলবন্ধনে। ডায়াস্পোরা মানেই নস্টালজিয়া, তাই লি’র উপন্যাস জুড়েই থাকে আত্মপরিচয় খোঁজার নিভৃত আকুলতা। বাবা-মা’র সাথে ৩বছর বয়সে লি পাড়ি জমান আমেরিকা। লি তার প্রথম উপন্যাস Native Speaker (১৯৯৬) দিয়ে মার্কিন শিল্পসাহিত্যের দরজায় কড়া নাড়েন ২৯ বছর বয়সে, হেমিংওয়ে ফাউন্ডেশন/পেন অ্যাওয়ার্ড পান উপন্যাসটির জন্য। দ্বিতীয় উপন্যাস A Gesture Life (১৯৯৯) এর জন্য পান এসিয়ান-আমেরিকান লিটারারী অ্যাওয়ার্ড। এরপর থেকে নিয়মিত প্রকাশনা চলতেই থাকে, সাথে পুরস্কারও। Aloft (২০০৪), The Surrendered (২০১০) এবং তার সর্বশেষ উপন্যাস On Such a Full Sea (২০১৪)। লি তার নিজের লেখাকে মনে করেন সম্মোহনের সমার্থক; স্বপ্নপূরণ আর স্বপ্নের অপূর্ণতার ব্যাবধান, নিজেকে নির্মাণ আর উন্মোচনের এক প্রক্রিয়া।
মিলিনিয়াল কথাসাহিত্যিক হিসাবে সম্প্রতি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন জো মেনো। জন্ম ১৯৭৪, শিকাগোর কুলম্বিয়া কলেজে অধ্যয়নরত গ্র্যাজুয়েট ছাত্র, ২৪ বছর বয়সের সপ্রতিভু মেনো’র সাহিত্যে আত্মপ্রকাশ তার উপন্যাস, Tender as Hellfire (১৯৯৯ সালে) এর মাধ্যমে। তখন জীবনধারণ আর লেখাপড়ার খরচ যোগাতেন ফুল বিক্রির দোকানে কাজ করে। কৈশোরউত্তীর্ণ পাঙ্ক জীবনযাত্রার অভিজ্ঞতাকে তার সাহিত্যকর্মে সুচারু উপস্থাপনা করে জো মেনো বিশ্বখ্যাতি অর্জন করেন Hairstyle of the Damned (২০০৪ সাল) উপন্যাসের মাধ্যমে। পরবর্তীতে মেনো তার অসাধারণ শৈলী আর চৌকস দক্ষতা মিলিয়ে উপহার দিয়েছেন ছোটগল্প সংকলন Bluebirds Used to Croon in the Choir (২০০৫ সাল), উপন্যাস Demons in the Spring (২০০৮ সাল) আর গল্পসংকলন Marvel and a Wonder (২০১৫ সাল) আরো উৎকর্ষতায় নিয়ে গেছেন। গল্পকারের অসাধারণ দক্ষতা মেনো’র সহজাত। হৃদয়বিদারক একটা গল্প The Use Of Medicine-এ দুই ভাইবোন মিলে পাড়ার ইঁদুর, কাঠবিড়ালী, আর গৃহপালিত জন্তুদের ওষুধ দিয়ে অচেতন করে জোগান দিতো মা’য়ের পুতুল নাচের প্রদর্শনীতে। মায়ের ওই প্রদর্শনীই তাদের জীবনযাপনের শেষ অবলম্বন, অভাবের তাড়ণায় তাদের বাবা আত্মহত্যা করেছে কিছুদিন আগেই! এ যেন অপু-দুর্গার আরেক উপাখ্যান। মেনো’র লেখনীতে একধরনের দৃঢ়প্রত্যয়, তিক্ষ্ণ বাস্তবতার অকল্পনীয় দৃষ্টিভঙ্গি আর স্থান-কাল-পাত্রের যথার্থ উপস্থাপনা মিলেমিশে বিশ্বাসযাগ্য উত্তরাধুনিক শিল্পসমন্বয়কে প্রকাশ করে শিল্পিতমাত্রায়। মনে হতে পারে তার লেখাগুলো যেন জয়েসের The Portrait of an Artist as a Young Man-এর আধুনিক সংস্করণ, ডাবলিনার্সের ধূসর জগৎ, বিভুতিভুষণের মায়ার সংসার, সত্যজিতের পথের পাঁচালী! গল্প-উপন্যাস ছাড়াও, নাটক, চিত্রনাট্য, চলচ্চিত্র (People Are Becoming Clouds), সংগীত, সাংবাদিকতাকেও পেশা হিসাবে নিয়েছেন জো রেনো।
জেনিফার ইগ্যান, দ্য ন্যুইয়র্কার সাময়িকীর মিলিনিয়াল কথাসাহিত্যিকদের তালিকার বাইরের উপন্যাসিক ও গল্পকার, জন্ম ১৯৬২ ইলনয়েস, ন্যুইয়র্কে ভাগ্যান্বেষণে (লেখক হতে) আসেন ১৯৮৭ সালে। সাহিত্যিক হিসাবে পরিচিতি পাবার আগেই সংবাদমাধ্যমে ইগ্যান পরিচিতি পান ‘এ্যাপল’ প্রতিষ্ঠাতা ‘স্টিভ জব’-এর প্রেমিকা হিসাবে। তবে ইগ্যান নিজের প্রতিভা দিয়েই মার্কিনি মিলিনিয়াল সাহিত্যিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। তার প্রথম উপন্যাস The Invisible Circus (১৯৯৫) প্রকাশিত হবার সাথেসাথেই চলচ্চিত্রে রূপান্তরিত হয়। ২০০১ সালে তার দ্বিতীয় উপন্যাস Look At Me ন্যাশনাল বুক অ্যাওয়ার্ড ফাইনালিস্ট হওয়ার মাধ্যমে মার্কিনি নতুন প্রজন্মের কথাসাহিত্যিক হিসাবে প্রতিষ্ঠা পান। ২০১১ সালে TA visit from the Goon Squad প্রকাশনার জন্য পুলিৎজার পুরস্কার পান। ইতোমধ্যে ইগ্যান প্রকাশ করেছেন চারটি উপন্যাস আর একটি গল্পগ্রন্থ। তার অতি সাম্প্রতিক প্রকাশনা Manhattan Beach (২০১৭)। মার্চ ২০১৮ সাল থেকে ইগ্যান চঊঘ অসবৎরপধ এর প্রেসিডন্ট পদে নিয়োজিত আছেন।
ইগ্যান নিজেকে প্রমাণ করতে পেরেছেন বিরলপ্রজ কথাসাহিত্যিক হিসেবে, উপন্যাসকে অসাধারণ লাবণ্যমাধুর্যে সাবলীলভাবে গল্পে প্রকাশ করতে পারেন। গ্রন্থ সমালোচকেরা প্রায়ই সমালোচনায় বলেন, ইগ্যানের উপন্যাস আসলে অনেক আন্তঃসংযুক্ত গল্পের সমাহার, নাকি ওটাই তার লেখার বৈশিষ্ট্য [বিষয়টি হাসান আজিজুল হকের প্রথম দিকের লেখা ছোটগল্প সংকলনের বৈশিষ্ট্যর কথা মনে করিয়ে দেয়, গ্রন্থের গল্পগুলো শুরু থেকে পড়ে শেষ করলে একটা উপন্যাসের স্বাদ পাওয়া যেতো!]। প্রত্যুত্তরে ইগ্যান নিজেও নিশ্চিত নন তিনি আসলে উপন্যাস নাকি আন্তঃসংযুক্ত গল্পগুচ্ছ লেখেন, কারণ তার লেখার প্রকাশভঙ্গির মধ্যে এতই চমৎপ্রদ নতুনত্ব আছে যে সমালোচকেরা তার স্টাইলের নামকরণ করেছেন ‘Genre-bending Content.’ এত সপ্রতিভু প্রকরণ ইগ্যান তার লেখায় ব্যবহার করেন যে শেষাবধি তার প্রকাশনাকে প্রথাগত কোন প্রকরণ বা সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তার বইয়ের অনেক অনুচ্ছেদই PowerPoint Presentations ব্যবহৃত হয়। ইগ্যান তার প্রকাশনার প্রকরণ ব্যাখ্যা করেন এভাবে- I wanted to avoid centrality. I wanted polyphony. I wanted a lateral feeling, not a forward feeling. My ground rules were: every piece has to be very different, from a different point of view. I actually tried to break that rule later; if you make a rule then you also should break it! আশ্চর্য্যজনকভাবে কথাগুলো আমেরিকার প্রথিতযশা সদ্যপ্রয়াত কবি Mary Oliver এর কবিতাকে মনে করিয়ে দেয়-
As long as youÕre dancing, you can
break the rule
Sometimes breaking the rules is just
extending the rules
Sometimes there are no rules.
(Mary Oliver. Three Things to Remember)
এ আলোচনার বাইরে রয়ে গেলেন আমেরিকার সমসাময়িক আরো অনেক কথাসাহিত্যিক, যাদের নাম নিয়মিত সংযোজিত হচ্ছে মার্কিন মিলিনিয়াল ভয়েস অব আমেরিকান লিটারেচারের তালিকায়। পাঠকের অনুসন্ধিৎসু জিজ্ঞাসার উত্তরে এখানে আরো কয়েকটা নাম সংযোজন করা হলো। এরা হলেন- Donald Antrim, Ethan Canin, Tony Early, Nathan England, Jeffrey Eugeniders, Jonathan Franzen, Allegra Goodman, A M Homse, Matthew Klam, Rick Moody, Antonya Nelson, William T Vollman, David Fosrer Wallace, Lorrie Moods প্রমুখ! পাঠক এদের বিকশিত সাহিত্যকর্মের সাথে নিজেদের পরিচিত করে নেবেন- এ কামনা রইল!