alt

অপরাধ ও দুর্নীতি

মৌলভীবাজারের দুর্গম পাহাড়ে নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠন

অভিযানে ৪ পুরুষ ৬ নারী আটক ও তিন শিশু উদ্ধার

জেলা বার্তা পরিবেশক, মৌলভীবাজার : শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩

এবার মৌলভী বাজারের কুলাউরা উপজেলার পাহাড়ঘেঁষা একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। ওই অস্তানায় ‘জঙ্গি সদস্যদের’ গ্রেপ্তারে ‘অপারেশন হিলসাইড’ নাম দিয়ে অভিযান চালিয়ে ৪ পুরুষ ৬ নারীকে আটকের পাশাপাশি ৩ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও জেহাদি বইও জব্দ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ‘জঙ্গি’ সন্দেহে ঢাকায় আটক হওয়া এক যুবকের দেয়া তথ্যে নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠন সম্পর্কে জানার পর ওই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলেও পুলিশের জঙ্গি বিরোধী ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সিটিটিসি জানিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৌলভীবাজারে কুলাউড়া থানার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা পূর্ব টাট্টউলি গ্রামের টিলার উপর বাইশালী বাড়ি নামের একটি বাড়িতে ‘জঙ্গি’ আস্তানা সন্দেহে অভিযান পরিচালনা করে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ৬ থেকে অভিযান শুরু করে সিসিটিটির সদস্যরা। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা সময় ধরে বল প্রয়োগ ছাড়াই রক্তপানহীন অভিযান শেষ করে সিটিটিসি। ছাপড়া দুটি ঘর থেকে ৪ পুরুষ ও ৬ নারী ও ৩ শিশু বেরিয়ে এসে নিজেরাই ধরা দেয় সিটিটিসির সদস্যদের কাছে। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে ছাপড়া ঘর থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য, জঙ্গি কার্যক্রমে প্রশিক্ষণে থাকা সরঞ্জাম এবং নগদ টাকা উদ্ধার হয়। অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’।

সিটিটিসি জানিয়েছে, অভিযানে আটকরা হলেন, সাতক্ষীরা সদরের দক্ষিণ নলতা গ্রামের শরীফুল ইসলাম (৪০), কিশোরগঞ্জের ইটনার কানলা এলাকার হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রসুলপুর গ্রামের খায়রুল ইসলাম (২২), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার মাইজবাড়ী গ্রামের রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের শাপলা বেগম (২২), নাটোর সদরের চাঁদপুর গ্রামের মাইশা ইসলাম (২০), বগুড়ার শরিয়াকান্দি থানার নিজবলাই গ্রামের মোছা. সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরার তালা থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের আমিনা বেগম (৪০) এবং তার মেয়ে মোছা. হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০)। এছাড়া উদ্ধার হওয়া ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী মেঘনার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। একই এলাকার ১২ মাস বয়সী শিশু আবিদা এবং ১৮ মাস বয়সী শিশুর নাম জুবেদা এবং ৬ মাস বয়সী শিশুর নাম হুজাইফা।

অপারেশন শেষে সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের একটি বাড়িতে ‘জঙ্গি’ রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাত ৮টার পর থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে আইশৃঙ্খলা বাহিনী। সকালে সিটিটিসির সোয়াট ও বোম ডিস্ফোজাল ইউনিটের সদস্যরা অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে রক্তপাতহীন অভিযান চালিয়ে ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। আটক ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। ওই বাড়ি থেকে বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা অভিযানের নাম দিয়েছি ‘অপারেশন হিলসাইড’।

অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান জানান, এ অভিযানে যারা আটক হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের ওই নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠনের সদস্য। তারা এ সংগঠনের কার্যক্রম ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের এ নির্জন এলাকা বেছে নিয়েছে। পাহাড় ঘেরা ওই এলাকা যে স্থানে তারা আস্তানা তৈরি করেছিল সেটি টিলার উপর অবস্থিত। ২ মাস আগে এ আস্থানা তৈরি হয় বলে সিটিটিসির কাছে তথ্য ছিল। তারা স্থায়ীভাবে আস্থানা গেড়ে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই টিনসেটের ছাপড়া বাড়িতে থেকেই। সেখানে বিস্ফোরক, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, জিহাদি বইয়ের পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামগ্রী মজুত করেছিলেন। শুরুতেই অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা সম্ভব হয়েছে। এখন নতুন এ সংগঠনের শীর্ষ নেতা বা প্রতিষ্ঠাতা কারা তাদের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে।

যেভাবে সন্ধান মিলল নতুন এ ‘জঙ্গি’ সংগঠনের

সিটিটিসি জানিয়েছে, সম্প্রতি ঢাকাতে ‘জঙ্গি’ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে নতুন একটি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে নতুন এ জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ সম্পর্ক্যে বিস্তারিত তথ্য দেয়। তার দেয়া তথ্যে কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টিট্টিউলি গ্রামে এ সংগঠনের আস্তানা রয়েছে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই আস্তানা সম্পর্কে সিটিটিসি নিশ্চিত হয়। ওই আস্তানায় কারা থাকেন, কারা যাতায়াত করেন সে সম্পর্কে তথ্য নেয়া হয়।

সিটিটিসি জানিয়েছে, সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পর ওই ‘আস্তানায়’ এ সংগঠনের সদস্যরা তাদের পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্যের ভিত্তিত্বে গত শুক্রবার প্রথমে টিনসেটের তৈরি ছাপড়া ঘরের বাড়িটি চারদিক থেকে ঘেরাও করা হয়। সকালে ৬ টা থেকে অভিযানে যুক্ত হয় সিটিটিসির সোয়াট টিম ও বোম ডিস্ফোজাল টিম এবং স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। সিটিটিসির লক্ষ্য ছিল রক্তপাতহীন অভিযান পরিচালনা করা। সে লক্ষ্যে বাড়িতে অবস্থানকারী সবাইকে আত্মসমর্পণের অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে বল প্রয়োগ ছাড়াই নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠনের সদস্যদের আটক করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি উগ্র জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে এতদিন তারা যেসব সংগঠন পেয়েছেন, এটি তার বাইরে একেবারে নতুন একটি সংগঠন। এই উগ্রবাদী সংগঠনের মূল ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে।

অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। এ সময় সিটিটিসির যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামান, উপকমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল হক, সোয়াট কমান্ডার জাহিদ হাসান, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মনজুর রহমান, কুলাউড়া থানার ওসি মো. আবদুছ ছালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কীভাবে গড়া হলো ওই ‘ জঙ্গি আস্তানা’

সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উগ্রবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতের নামে এই সংগঠনের সদস্যরা নির্জন এলাকা হিসেবে এ এলাকায় আস্তানা গেড়ে ছিলেন। আস্তানায় জঙ্গিরা খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়েজনীয় সব সামগ্রী মজুত করে রেখেছিলেন। সেখানে অনেকেই আসা-যাওয়া করতেন। তাদের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে রাখার পর কেউ পালিয়ে যেতে পারেননি।

স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের জানান, পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামে বেশ কিছু পাহাড়ি সরকারি খাসজমি রয়েছে। স্থানটি নির্জন। এর মধ্যে বেশ কিছু জমি রফিক মিয়া নামের দুবাই প্রবাসী স্থানীয় এক বাসিন্দার দখলে রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা প্রায় দুই মাস আগে রফিক মিয়ার কাছ থেকে সাত লাখ টাকায় ৫০ শতক জমি কিনে বসতি স্থাপন করেন। রফিক মিয়া দেড়-দুই মাস আগে দুবাইয়ে চলে গেছেন।

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিদের তৎপরতার ঘটনাটা আগে আমরা জানতাম না। তারা স্থানীয় লোকজনকে বলতেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখানে এসেছেন তারা। তারা প্রায়ই গভীর জঙ্গলে ঢুকতেন। সেখানে কী করতেন, এলাকার কেউ সেটা জানতেন না।’

পূর্ব টাট্টিউলি বাজারের চা দোকানদার শফিক মিয়া জানান, ওই বাড়ির বাসিন্দারা প্রায় দুই মাস আগে এখানে এসে নতুন বাড়ি করেছে। তার দোকানে এসে অল্প বয়সের দুইজন পুরুষ মানুষ নিয়মিত চা খেতেন। ‘তারা বলেছিল, তাদের বাড়ি বগুড়ায়, নদীভাঙনে তাদের বাড়ি চলে গেছে, তাই এখানে এসে বসতি করেছে। আরও পরিবার আসবে।’

যেভাবে অভিযান

পুলিশ জানায়, কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রাম। টাট্টিউলি বাজার থেকে অদূরে জঙ্গলঘেরা নির্জন পাহাড়ি এলাকায় টিলার উপর ওই ঘরগুলো। গত শুক্রবার রাতে ঘরগুলো ঘিরে রাখে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের সদস্যরা। পরে সকালে সিটিটিসির সোয়াট টিমের সদস্যরা অভিযানের প্রক্রিয়া শুরু করেন। সতর্ক অবস্থান নিয়ে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সদস্য, সোয়াট টিম ও বোম ডিস্ফোজাল টিমের সদস্যরা পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু কোন রকম বল প্রয়োগ করতে হয়নি। ওই ঘরগুলোতে থাকা পুরুষ ও নারীরা একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে। তখন সিটিটিসির নারী ও পুরুষ সদস্যরা তাদের হেফাজতে নেয়। এরপর উদ্ধার করা শিশুদেরও হেফাজতে নেয়। জঙ্গি সন্দেহে আটক হওয়া নারী ও পুরুষদের হেফাজতে নেয়ার পর ঘরগুলোতে তল্লাসি চালায় সিটিটিসি। পরে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে তিন কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০টি ডেটোনেট, কয়েক বস্তা জিহাদি বই, নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত পুলিশ বুট ও বক্সিং ব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন সিটিটিসি।

নিখোঁজ চিকিৎসকের স্ত্রীকে পাওয়া গেলে পাহাড়ঘেরা ‘জঙ্গি আস্তানায়’

এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার ৬ নারীর একজন সিরাজগঞ্জের নিখোঁজ এক চিকিৎসকের স্ত্রী। ওই নারীর নাম মাইসা ইসলাম হাফসা। সিরাজগঞ্জের চিকিৎসক ডা. সোহেল তানজিম রানা ও তার স্ত্রী হাফসা গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ জানিয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল পরিবার।

হাফসার বড় ভাই ওমর ফারুক জানিয়েছেন, তার বোনের পুরো নাম মাইশা ইসলাম হাফসা। স্বামী সোহেল তানজিমসহ গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন তার বোন।

সিরাজগঞ্জ পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কুলাউড়ায় গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে নিখোঁজ ওই চিকিৎসকের স্ত্রী রয়েছেন বলে তাদের জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ওই ‘জঙ্গি আস্তানায়’ সিরাজগঞ্জ থেকে নিখোঁজ চিকিৎসক তানজীমও ছিলেন। তবে তিনি পালিয়ে গেছেন। তানজীম সেখানে ‘সালমান’ নাম নিয়ে ছিলেন। তানজীম সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্ব পালন করতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামে। ২৭ বছর বয়সী তানজীম স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থলের পাশেই একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার বাবা হেলালউদ্দীন এনায়েতপুর থানায় করা জিডিতে বলেন, গত ২৬ জুলাই থেকে স্ত্রীসহ নিখোঁজ তার ছেলে।ওই জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এনায়েতপুর থানার এএসআই আবদুল আলিম বলেন, এক সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ২৬ জুলাই একটি অটোরিকশায় করে তানজিম স্ত্রীকে নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন। তবে ডা. তানজিম ও তার স্ত্রীর জঙ্গি দলে ভেড়ার বিষয়ে কোন তথ্য পরিবার জানেন না।

ব্যবসার আড়ালে অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগ

ছবি

ঢাকা বাড্ডায় এক হত্যা মামলায় তিন আসামির যাবজ্জীবন

ছবি

সাগর-রুনি হত্যা: মামলার প্রতিবেদন জমা আবারও পেছালো

ছবি

আদালতের সময় নষ্ট করায় সেলিম প্রধানকে জরিমানা

খুলনা ও মৌলভীবাজারে চার জনের মৃত্যুদণ্ড

ছবি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দেড় বছরে ৮০ জন হত্যা

ছবি

উড়োজাহাজ লিজে অনিয়ম: বিমানের সাবেক এমডিসহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র

চাকরি দেওয়ার কথা বলে অর্থ আত্মসাৎ, বরখাস্ত অফিস সহায়কের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

ছবি

সার আত্মসাৎ মামলায় সাবেক এমপি পোটনসহ ৫ জন কারাগারে

ছবি

বিমানবন্দর ও টঙ্গী থেকে ৭ ছিনতাইকারী গ্রেপ্তার

ছবি

ইন্স্যুরেন্স চাকরির আড়ালে জঙ্গি সংগঠনের রিক্রুটার : ডিবি

ছবি

স্বামী-স্ত্রীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

গোবিন্দগঞ্জে নির্যাতন করে গৃহবধূর মাথার চুল কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষ, ৩জন গ্রেফতার

লাখে ১১ হাজার লাভ দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ৬৩ লাখ টাকা আত্মসাৎ

ছবি

ধর্ম অবমাননায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে জবি শিক্ষার্থীর পাঁচ বছরের কারাদণ্ড

ভারতে চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে কিডনি হাতিয়ে নিতো চক্রটি

ছবি

আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের সক্রিয় সদস্য গ্রেপ্তার

ছবি

ডিজিটাল ডিভাইসে জানানো হতো উত্তর,১০মিনিটে পরীক্ষা শেষ

সংবাদের সার্কুলেশন ম্যানেজারকে প্রাণনাশের হুমকি

ছবি

নায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা: আজিজ মোহাম্মদ ভাই ও দুইজনের যাবজ্জীবন, খালাস ৬

মাদকের তথ্য দেয়ায় হাতের রগ কর্তন, আসামীর পরিবর্তে ভুক্তভোগীকেই আটক, পরে ৫০ হাজার টাকায় মুক্তি

সাবেক এসপি সুব্রত কুমার হালদারসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের চার্জশিট

ছবি

‘টর্চার সেলে’ নিজ হাতে অপারেশনের নামে পৈশাচিক আনন্দ পেতো মিল্টন : ডিবি প্রধান

ছবি

এবার মানবপাচার মামলায় মিল্টন সমাদ্দারের ৪ দিনের রিমান্ড

ছবি

ডিবি কার্যালয়ে মিল্টন সমাদ্দারের স্ত্রী, চলছে জিজ্ঞাসাবাদ

রাবির ক্যান্টিন পরিচালকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ চেষ্টার অভিযোগ

ছবি

মিল্টন সমাদ্দার ৩ দিনের রিমান্ডে

ছবি

তিন দিন রিমান্ডে মিল্টন সমাদ্দার

ছবি

আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারকে হেফাজতে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ডিবি

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : ছাত্রলীগ নেতাকে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে মারধরের অভিযোগ

ছবি

নিঃসঙ্গ নারীদের টার্গেট, আমেরিকায় নেওয়ার স্বপ্ন দেখিয়ে প্রতারণা

আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফসহ ৩৩ আসামি অভিযুক্ত

ছবি

ফরিদপুরে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িতরা অচিরেই গ্রেফতার

ফরিদগঞ্জে মাকে জবাই করে হত্যা করলো ছেলে

সখীপুরে ছাগল চুরির মামলায় মা-ছেলেসহ কারাগারে ৩

প্রগতির ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

tab

অপরাধ ও দুর্নীতি

মৌলভীবাজারের দুর্গম পাহাড়ে নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠন

অভিযানে ৪ পুরুষ ৬ নারী আটক ও তিন শিশু উদ্ধার

জেলা বার্তা পরিবেশক, মৌলভীবাজার

শনিবার, ১২ আগস্ট ২০২৩

এবার মৌলভী বাজারের কুলাউরা উপজেলার পাহাড়ঘেঁষা একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠনের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়েছে পুলিশ। ওই অস্তানায় ‘জঙ্গি সদস্যদের’ গ্রেপ্তারে ‘অপারেশন হিলসাইড’ নাম দিয়ে অভিযান চালিয়ে ৪ পুরুষ ৬ নারীকে আটকের পাশাপাশি ৩ শিশুকে উদ্ধার করা হয়েছে। আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক ও জেহাদি বইও জব্দ করার কথা জানিয়েছে পুলিশ। ‘জঙ্গি’ সন্দেহে ঢাকায় আটক হওয়া এক যুবকের দেয়া তথ্যে নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠন সম্পর্কে জানার পর ওই অভিযান পরিচালনা করা হয় বলেও পুলিশের জঙ্গি বিরোধী ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট সিটিটিসি জানিয়েছে।

পুলিশ জানিয়েছে, মৌলভীবাজারে কুলাউড়া থানার দুর্গম পাহাড়ি এলাকা পূর্ব টাট্টউলি গ্রামের টিলার উপর বাইশালী বাড়ি নামের একটি বাড়িতে ‘জঙ্গি’ আস্তানা সন্দেহে অভিযান পরিচালনা করে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট। শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল ৬ থেকে অভিযান শুরু করে সিসিটিটির সদস্যরা। প্রায় সাড়ে ৪ ঘণ্টা সময় ধরে বল প্রয়োগ ছাড়াই রক্তপানহীন অভিযান শেষ করে সিটিটিসি। ছাপড়া দুটি ঘর থেকে ৪ পুরুষ ও ৬ নারী ও ৩ শিশু বেরিয়ে এসে নিজেরাই ধরা দেয় সিটিটিসির সদস্যদের কাছে। পরে সেখানে অভিযান চালিয়ে ছাপড়া ঘর থেকে বিস্ফোরক দ্রব্য, জঙ্গি কার্যক্রমে প্রশিক্ষণে থাকা সরঞ্জাম এবং নগদ টাকা উদ্ধার হয়। অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন হিলসাইড’।

সিটিটিসি জানিয়েছে, অভিযানে আটকরা হলেন, সাতক্ষীরা সদরের দক্ষিণ নলতা গ্রামের শরীফুল ইসলাম (৪০), কিশোরগঞ্জের ইটনার কানলা এলাকার হাফিজ উল্লাহ (২৫), নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার রসুলপুর গ্রামের খায়রুল ইসলাম (২২), সিরাজগঞ্জের কাজীপুর থানার মাইজবাড়ী গ্রামের রাফিউল ইসলাম (২২), পাবনার আটঘরিয়া থানার শ্রীপুর গ্রামের শাপলা বেগম (২২), নাটোর সদরের চাঁদপুর গ্রামের মাইশা ইসলাম (২০), বগুড়ার শরিয়াকান্দি থানার নিজবলাই গ্রামের মোছা. সানজিদা খাতুন (১৮), সাতক্ষীরার তালা থানার দক্ষিণ নলতা গ্রামের আমিনা বেগম (৪০) এবং তার মেয়ে মোছা. হাবিবা বিনতে শফিকুল (২০)। এছাড়া উদ্ধার হওয়া ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরী মেঘনার বাড়ি নারায়ণগঞ্জে। একই এলাকার ১২ মাস বয়সী শিশু আবিদা এবং ১৮ মাস বয়সী শিশুর নাম জুবেদা এবং ৬ মাস বয়সী শিশুর নাম হুজাইফা।

অপারেশন শেষে সিটিটিসির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান সাংবাদিকদের জানান, কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের একটি বাড়িতে ‘জঙ্গি’ রয়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাত ৮টার পর থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে আইশৃঙ্খলা বাহিনী। সকালে সিটিটিসির সোয়াট ও বোম ডিস্ফোজাল ইউনিটের সদস্যরা অভিযান শুরু করে। এক পর্যায়ে রক্তপাতহীন অভিযান চালিয়ে ৪ জন পুরুষ ও ৬ জন নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের সঙ্গে তিন শিশুও রয়েছে। আটক ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের নতুন একটি জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। ওই বাড়ি থেকে বিস্ফোরক ও জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা অভিযানের নাম দিয়েছি ‘অপারেশন হিলসাইড’।

অতিরিক্ত কমিশনার আসাদুজ্জামান জানান, এ অভিযানে যারা আটক হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের ওই নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠনের সদস্য। তারা এ সংগঠনের কার্যক্রম ও সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামের এ নির্জন এলাকা বেছে নিয়েছে। পাহাড় ঘেরা ওই এলাকা যে স্থানে তারা আস্তানা তৈরি করেছিল সেটি টিলার উপর অবস্থিত। ২ মাস আগে এ আস্থানা তৈরি হয় বলে সিটিটিসির কাছে তথ্য ছিল। তারা স্থায়ীভাবে আস্থানা গেড়ে প্রশিক্ষণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওই টিনসেটের ছাপড়া বাড়িতে থেকেই। সেখানে বিস্ফোরক, প্রশিক্ষণ সামগ্রী, জিহাদি বইয়ের পাশাপাশি খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় সব সামগ্রী মজুত করেছিলেন। শুরুতেই অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা সম্ভব হয়েছে। এখন নতুন এ সংগঠনের শীর্ষ নেতা বা প্রতিষ্ঠাতা কারা তাদের কাছে পৌঁছানো সহজ হবে।

যেভাবে সন্ধান মিলল নতুন এ ‘জঙ্গি’ সংগঠনের

সিটিটিসি জানিয়েছে, সম্প্রতি ঢাকাতে ‘জঙ্গি’ কার্যক্রমে সম্পৃক্ত একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় সে নতুন একটি সংগঠন ইমাম মাহমুদের কাফেলার সদস্য। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে সে নতুন এ জঙ্গি সংগঠন ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ সম্পর্ক্যে বিস্তারিত তথ্য দেয়। তার দেয়া তথ্যে কুলাউড়ার কর্মদা ইউনিয়নের পূর্ব টিট্টিউলি গ্রামে এ সংগঠনের আস্তানা রয়েছে বলে জানা যায়। পরবর্তীতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই আস্তানা সম্পর্কে সিটিটিসি নিশ্চিত হয়। ওই আস্তানায় কারা থাকেন, কারা যাতায়াত করেন সে সম্পর্কে তথ্য নেয়া হয়।

সিটিটিসি জানিয়েছে, সবকিছু নিশ্চিত হওয়ার পর ওই ‘আস্তানায়’ এ সংগঠনের সদস্যরা তাদের পরিবার নিয়ে অবস্থান করছেন এমন তথ্য পাওয়া যায়। ওই তথ্যের ভিত্তিত্বে গত শুক্রবার প্রথমে টিনসেটের তৈরি ছাপড়া ঘরের বাড়িটি চারদিক থেকে ঘেরাও করা হয়। সকালে ৬ টা থেকে অভিযানে যুক্ত হয় সিটিটিসির সোয়াট টিম ও বোম ডিস্ফোজাল টিম এবং স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপ। সিটিটিসির লক্ষ্য ছিল রক্তপাতহীন অভিযান পরিচালনা করা। সে লক্ষ্যে বাড়িতে অবস্থানকারী সবাইকে আত্মসমর্পণের অনুরোধ করা হয়। একপর্যায়ে বল প্রয়োগ ছাড়াই নতুন ‘জঙ্গি’ সংগঠনের সদস্যদের আটক করা সম্ভব হয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’ নামের একটি উগ্র জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে জড়িত। জঙ্গিবাদ নিয়ে কাজ করে এতদিন তারা যেসব সংগঠন পেয়েছেন, এটি তার বাইরে একেবারে নতুন একটি সংগঠন। এই উগ্রবাদী সংগঠনের মূল ব্যক্তিকে ইতিমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে।

অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছে সিটিটিসির প্রধান অতিরিক্ত কমিশনার মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। এ সময় সিটিটিসির যুগ্ম কমিশনার কামরুজ্জামান, উপকমিশনার মোহাম্মদ নাজমুল হক, সোয়াট কমান্ডার জাহিদ হাসান, মৌলভীবাজারের পুলিশ সুপার মনজুর রহমান, কুলাউড়া থানার ওসি মো. আবদুছ ছালেক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কীভাবে গড়া হলো ওই ‘ জঙ্গি আস্তানা’

সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেন, উগ্রবাদী মতাদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরতের নামে এই সংগঠনের সদস্যরা নির্জন এলাকা হিসেবে এ এলাকায় আস্তানা গেড়ে ছিলেন। আস্তানায় জঙ্গিরা খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়েজনীয় সব সামগ্রী মজুত করে রেখেছিলেন। সেখানে অনেকেই আসা-যাওয়া করতেন। তাদের পরিচয়ও পাওয়া গেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা বাড়িটি ঘিরে রাখার পর কেউ পালিয়ে যেতে পারেননি।

স্থানীয় লোকজন সাংবাদিকদের জানান, পূর্ব টাট্টিউলি গ্রামে বেশ কিছু পাহাড়ি সরকারি খাসজমি রয়েছে। স্থানটি নির্জন। এর মধ্যে বেশ কিছু জমি রফিক মিয়া নামের দুবাই প্রবাসী স্থানীয় এক বাসিন্দার দখলে রয়েছে। গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা প্রায় দুই মাস আগে রফিক মিয়ার কাছ থেকে সাত লাখ টাকায় ৫০ শতক জমি কিনে বসতি স্থাপন করেন। রফিক মিয়া দেড়-দুই মাস আগে দুবাইয়ে চলে গেছেন।

কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুহিবুল ইসলাম বলেন, ‘জঙ্গিদের তৎপরতার ঘটনাটা আগে আমরা জানতাম না। তারা স্থানীয় লোকজনকে বলতেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখানে এসেছেন তারা। তারা প্রায়ই গভীর জঙ্গলে ঢুকতেন। সেখানে কী করতেন, এলাকার কেউ সেটা জানতেন না।’

পূর্ব টাট্টিউলি বাজারের চা দোকানদার শফিক মিয়া জানান, ওই বাড়ির বাসিন্দারা প্রায় দুই মাস আগে এখানে এসে নতুন বাড়ি করেছে। তার দোকানে এসে অল্প বয়সের দুইজন পুরুষ মানুষ নিয়মিত চা খেতেন। ‘তারা বলেছিল, তাদের বাড়ি বগুড়ায়, নদীভাঙনে তাদের বাড়ি চলে গেছে, তাই এখানে এসে বসতি করেছে। আরও পরিবার আসবে।’

যেভাবে অভিযান

পুলিশ জানায়, কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের পূর্ব টাট্টিউলি গ্রাম। টাট্টিউলি বাজার থেকে অদূরে জঙ্গলঘেরা নির্জন পাহাড়ি এলাকায় টিলার উপর ওই ঘরগুলো। গত শুক্রবার রাতে ঘরগুলো ঘিরে রাখে মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের সদস্যরা। পরে সকালে সিটিটিসির সোয়াট টিমের সদস্যরা অভিযানের প্রক্রিয়া শুরু করেন। সতর্ক অবস্থান নিয়ে সিটিটিসির স্পেশাল অ্যাকশন গ্রুপের সদস্য, সোয়াট টিম ও বোম ডিস্ফোজাল টিমের সদস্যরা পূর্ণ প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু কোন রকম বল প্রয়োগ করতে হয়নি। ওই ঘরগুলোতে থাকা পুরুষ ও নারীরা একে একে বেরিয়ে আসতে থাকে। তখন সিটিটিসির নারী ও পুরুষ সদস্যরা তাদের হেফাজতে নেয়। এরপর উদ্ধার করা শিশুদেরও হেফাজতে নেয়। জঙ্গি সন্দেহে আটক হওয়া নারী ও পুরুষদের হেফাজতে নেয়ার পর ঘরগুলোতে তল্লাসি চালায় সিটিটিসি। পরে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে তিন কেজি পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য, ৫০টি ডেটোনেট, কয়েক বস্তা জিহাদি বই, নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা, প্রশিক্ষণের জন্য ব্যবহৃত পুলিশ বুট ও বক্সিং ব্যাগসহ বিভিন্ন সামগ্রী উদ্ধারের কথা জানিয়েছেন সিটিটিসি।

নিখোঁজ চিকিৎসকের স্ত্রীকে পাওয়া গেলে পাহাড়ঘেরা ‘জঙ্গি আস্তানায়’

এদিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা থেকে গ্রেপ্তার ৬ নারীর একজন সিরাজগঞ্জের নিখোঁজ এক চিকিৎসকের স্ত্রী। ওই নারীর নাম মাইসা ইসলাম হাফসা। সিরাজগঞ্জের চিকিৎসক ডা. সোহেল তানজিম রানা ও তার স্ত্রী হাফসা গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ জানিয়ে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছিল পরিবার।

হাফসার বড় ভাই ওমর ফারুক জানিয়েছেন, তার বোনের পুরো নাম মাইশা ইসলাম হাফসা। স্বামী সোহেল তানজিমসহ গত ২৬ জুলাই থেকে নিখোঁজ ছিলেন তার বোন।

সিরাজগঞ্জ পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেন, কুলাউড়ায় গ্রেপ্তার ১০ জনের মধ্যে নিখোঁজ ওই চিকিৎসকের স্ত্রী রয়েছেন বলে তাদের জানিয়েছে কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট।

ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, ওই ‘জঙ্গি আস্তানায়’ সিরাজগঞ্জ থেকে নিখোঁজ চিকিৎসক তানজীমও ছিলেন। তবে তিনি পালিয়ে গেছেন। তানজীম সেখানে ‘সালমান’ নাম নিয়ে ছিলেন। তানজীম সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরের খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) দায়িত্ব পালন করতেন। তার বাড়ি সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ ইউনিয়নের পোড়াবাড়ি গ্রামে। ২৭ বছর বয়সী তানজীম স্ত্রীকে নিয়ে কর্মস্থলের পাশেই একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। তার বাবা হেলালউদ্দীন এনায়েতপুর থানায় করা জিডিতে বলেন, গত ২৬ জুলাই থেকে স্ত্রীসহ নিখোঁজ তার ছেলে।ওই জিডির তদন্ত কর্মকর্তা এনায়েতপুর থানার এএসআই আবদুল আলিম বলেন, এক সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, ২৬ জুলাই একটি অটোরিকশায় করে তানজিম স্ত্রীকে নিয়ে এলাকা ছাড়ছেন। তবে ডা. তানজিম ও তার স্ত্রীর জঙ্গি দলে ভেড়ার বিষয়ে কোন তথ্য পরিবার জানেন না।

back to top