মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা আবদুল হাই দেশে-বিদেশে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণসহ বোমা হামলার নানা কাহিনী স্বীকার করেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) এই প্রতিষ্ঠাতাকে বুধবার (২৫ মে) রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, ২টি মামলায় মৃত্যুদন্ড ও ২টি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা রয়েছে।
র্যাব হেডকোয়াটার্সের মিডিয়া শাখা থেকে বলা হয়েছে, র্যাব ফোর্সের জঙ্গি সেল দেশে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার বিভিন্ন মামলা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তারা জঙ্গি হামলার ঘটনায় কয়েকজন পলাতক জঙ্গি নেতার খোঁজ-খবর নিচ্ছিল।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক জঙ্গি মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক অন্য জঙ্গিদের সম্পর্কে তারা খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার র্যাব-২ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রেখে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এবং একাধিক মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল হাইকে (৫৭) গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ জঙ্গি বলেছে, সে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদ্রাসায় ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করে। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধভাবে পার্শ¦বর্তী দেশে গিয়ে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেওবন্দে পড়ালেখা করে মাস্টার্স সমতুল্য দাওয়াতে হাদিস সম্পন্ন করে। এরপর দেওবন্দ থেকে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে আসে।
১৯৮৬ সালে পুনরায় ওই দেশে (ভারত) প্রত্যাবর্তন করে। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পাকিস্তানি ভিসা নিয়ে ট্রেনযোগে পাকিস্তানের করাচিতে যায়। সেখানে একটি মাদ্রাসা থেকে ২ বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে।
১৯৮৯ সালে সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০ থেকে ৩৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি এক হুজি নেতা এবং বাংলাদেশি এক জঙ্গির নেতৃত্বে অত্যাধুনিক অস্ত্র একে-৪৭ রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে। ১৯৯১ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
দেশে ফিরে হুজি-বি (হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। ওই সময় আমির হিসেবে নির্বাচিত হয় গ্রেপ্তারকৃত এই মুফতি আবদুল হাই। এরপর মুফতি আবদুল হাই বাংলাদেশে আমির হিসেবে আসে। ১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করে।
১৯৯২ সালের প্রথম দিকে গ্রেপ্তারকৃত আবদুল হাই কক্সবাজারের উখিয়ায় একটি মাদ্রাসায় যায়। সেখানে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করত। আবদুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ দিত। টানা ৪ বছর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে। ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে উক্ত ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মুফতি আবদুল হাই জাগো মুজাহিদ নামে মাসিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয়। তার অফিস রাজধানীর খিলগাঁও থানার তালতলায় ছিল। ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। তাকে ২০০০ সালে উক্ত পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই মাস কারাভোগ শেষে সে জামিনে মুক্তি পায়। জঙ্গি আবদুল হাই ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ স্থলে বোমা পুতে রেখে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলাসহ নানা অপকর্মে জড়িত।
২০০৬ সালে মুফতি আবদুল হাই আত্মগোপনে যায়। আর পরিবার নারায়ণগঞ্জের বসবাস করত। আর সে কুমিল্লায় গৌরীপুরে তার শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখানে কিছুদিন কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা করে। আর রাতে দোকানে কাটাত। মাঝে মধ্যে নারায়ণগঞ্জের যাতায়াত করত। সে তার সব ঠিকনা পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস করত। সর্বশেষ র্যাব-২ গত রাতে ফতুল্লা থানার হাজীগঞ্জ এলাকার বর্তমান ঠিকানা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব হেডকোয়াটার্সের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তারা বলেন, তারা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
বৃহস্পতিবার, ২৬ মে ২০২২
মৃত্যুদন্ড ও যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জঙ্গি নেতা আবদুল হাই দেশে-বিদেশে জঙ্গিবাদের প্রশিক্ষণসহ বোমা হামলার নানা কাহিনী স্বীকার করেছে। নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) এই প্রতিষ্ঠাতাকে বুধবার (২৫ মে) রাতে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তার বিরুদ্ধে ৭টি মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা, ২টি মামলায় মৃত্যুদন্ড ও ২টি মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তার বিরুদ্ধে মোট ১৩টি মামলা রয়েছে।
র্যাব হেডকোয়াটার্সের মিডিয়া শাখা থেকে বলা হয়েছে, র্যাব ফোর্সের জঙ্গি সেল দেশে বিভিন্ন সময় ঘটে যাওয়া জঙ্গি হামলার বিভিন্ন মামলা নিয়ে পর্যালোচনা করা হয়। তারা জঙ্গি হামলার ঘটনায় কয়েকজন পলাতক জঙ্গি নেতার খোঁজ-খবর নিচ্ছিল।
২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মামলার পলাতক আসামি জঙ্গি ইকবাল রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত পলাতক জঙ্গি মুফতি শফিকুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে পলাতক অন্য জঙ্গিদের সম্পর্কে তারা খোঁজ-খবর নেয়া শুরু করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার র্যাব-২ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে ২০০০ সালে গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুতে রেখে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা ও রমনা বটমূলে বোমা হামলা মামলার মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত এবং একাধিক মামলার যাবজ্জীবন দন্ডপ্রাপ্ত আসামি আবদুল হাইকে (৫৭) গ্রেপ্তার করে।
র্যাবের জিজ্ঞাসাবাদে এ জঙ্গি বলেছে, সে নারায়ণগঞ্জের দেওভোগ মাদ্রাসায় ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত হেফজ বিভাগে পড়ালেখা করে। এরপর ১৯৮১ সালে অবৈধভাবে পার্শ¦বর্তী দেশে গিয়ে দেওবন্দ দারুল উলুম মাদ্রাসায় লেখাপড়ার জন্য ভর্তি হয়। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত দেওবন্দে পড়ালেখা করে মাস্টার্স সমতুল্য দাওয়াতে হাদিস সম্পন্ন করে। এরপর দেওবন্দ থেকে ১৯৮৫ সালের শেষের দিকে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে একটি পাসপোর্ট তৈরি করে ওই দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশে আসে।
১৯৮৬ সালে পুনরায় ওই দেশে (ভারত) প্রত্যাবর্তন করে। পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী দেশ থেকে পাকিস্তানি ভিসা নিয়ে ট্রেনযোগে পাকিস্তানের করাচিতে যায়। সেখানে একটি মাদ্রাসা থেকে ২ বছরের ইফতা কোর্স সম্পন্ন করে মুফতি টাইটেল অর্জন করে।
১৯৮৯ সালে সেখানে বাংলাদেশের কয়েকজন জঙ্গি সদস্য ও ৩০ থেকে ৩৫ জন পাকিস্তানি নাগরিক একত্রিত হয়ে একটি ক্যাম্পে অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানি এক হুজি নেতা এবং বাংলাদেশি এক জঙ্গির নেতৃত্বে অত্যাধুনিক অস্ত্র একে-৪৭ রাইফেল ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল চালানোর প্রশিক্ষণ নেয়। এরপর আফগানিস্তানে গিয়ে তালেবানদের পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে। ১৯৯১ সালে সে বাংলাদেশে ফিরে আসে।
দেশে ফিরে হুজি-বি (হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করে। ওই সময় আমির হিসেবে নির্বাচিত হয় গ্রেপ্তারকৃত এই মুফতি আবদুল হাই। এরপর মুফতি আবদুল হাই বাংলাদেশে আমির হিসেবে আসে। ১৯৯১ সালে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে হরকাতুল জিহাদ নামে প্রচারণা শুরু করে।
১৯৯২ সালের প্রথম দিকে গ্রেপ্তারকৃত আবদুল হাই কক্সবাজারের উখিয়ায় একটি মাদ্রাসায় যায়। সেখানে একটি ট্রেনিং ক্যাম্প চালু করে। পার্শ্ববর্তী দেশের এক জঙ্গি নেতা ওই ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ করত। আবদুল হাই ও তার দুই সহযোগী সেখানে প্রশিক্ষণ দিত। টানা ৪ বছর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলে। ১৯৯৬ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানে উক্ত ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে ৪১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মুফতি আবদুল হাই জাগো মুজাহিদ নামে মাসিক পত্রিকার সম্পাদকও ছিলেন। পত্রিকাটি ১৯৯১ সালে চালু হয়। তার অফিস রাজধানীর খিলগাঁও থানার তালতলায় ছিল। ২০০০ সালে সরকার পত্রিকাটি নিষিদ্ধ করে। তাকে ২০০০ সালে উক্ত পত্রিকা অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। দুই মাস কারাভোগ শেষে সে জামিনে মুক্তি পায়। জঙ্গি আবদুল হাই ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশ স্থলে বোমা পুতে রেখে তাকে হত্যার চেষ্টা করে। ২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, ২০০৫ সালে ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে গ্রেনেড হামলাসহ নানা অপকর্মে জড়িত।
২০০৬ সালে মুফতি আবদুল হাই আত্মগোপনে যায়। আর পরিবার নারায়ণগঞ্জের বসবাস করত। আর সে কুমিল্লায় গৌরীপুরে তার শ্বশুরবাড়িতে আত্মগোপন করে। সেখানে কিছুদিন কেরোসিন ও সয়াবিন তেলের ডিলারশিপের ব্যবসা করে। আর রাতে দোকানে কাটাত। মাঝে মধ্যে নারায়ণগঞ্জের যাতায়াত করত। সে তার সব ঠিকনা পরিবর্তন করে নারায়ণগঞ্জে স্থায়ীভাবে বসবাস করত। সর্বশেষ র্যাব-২ গত রাতে ফতুল্লা থানার হাজীগঞ্জ এলাকার বর্তমান ঠিকানা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
র্যাব হেডকোয়াটার্সের মিডিয়া শাখার কর্মকর্তারা বলেন, তারা প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বৃহস্পতিবার (২৬ মে) পর্যন্ত ২ হাজার ৮০০ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছে। পলাতক অন্যদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।