alt

opinion » editorial

স্বাধীনতা দিবস : একাত্তরের স্বপ্ন পুনর্জাগরণের প্রত্যয়

: বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক, লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত এক অমর সংগ্রামের স্মারক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে এই দিনে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। শুধু ভূখ-ের স্বাধীনতার জন্য নয়, বরং শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও সমতার সমাজ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। ৫৪ বছর পর আজ আমরা সেই স্বপ্নের পূর্ণতার পথে কতটা এগিয়েছি, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।

স্বাধীনতার এই দীর্ঘ পথচলায় আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমাদের পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। কিন্তু একাত্তরে যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলামÑবৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের স্বপ্নÑতা কি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে? দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক বৈষম্য এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের সংকট আমাদের সামনে এখনো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান আমাদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ২৪-এ গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মানুষের মনে একাত্তরের আকাক্সক্ষা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। একাত্তরের যে স্বপ্ন নিয়ে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, লাখো মানুষ প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন, লাখো নারী আত্মত্যাগ করেছিলেন সেই স্বপ্নই এবার ফিরে এসেছে। একাত্তরে মানুষ বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিল। তারা চেয়েছিল মানুষে-মানুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্ম, বর্ণ, জাতি ভেদে সবাই সমমর্যাদা পাবে। গণতান্ত্রিক অধিকার পাবে। মুক্তভাবে কথা বলতে পারবে।

গণঅভ্যুত্থানের পর আজ আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে একাত্তরের আকাক্সক্ষাকে পূর্ণ করার। আমরা চাইব সমাজ থেকে সব ধরনের বৈষম্য আক্ষরিক অর্থেই দূর হবে। নাগরিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ বা জাতি পরিচয় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছলচাতুরী কাম্য নয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে মানুষের রায় পাওয়া জরুরি। সব রাজনৈতিক দলকে মানুষের কাছেই যেতে হবে। আর সেটা যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল। মানুষের আকাক্সক্ষাকে বুঝতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। মানুষের চাওয়া আর রাজনৈতিক দলের কাজে মেলবন্ধন গড়ে তুলতে হবে। পুরোনো-নতুন সব দলের জন্যই এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য।

এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, স্বাধীনতা শুধু রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণ নয়, এটি জনগণের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতিষ্ঠা। গত ৫৪ বছরে আমরা যে ভুলগুলো করেছিÑরাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দুর্নীতি, বিচারহীনতাÑসেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার পরিবর্তে তাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

২৬ মার্চ আমাদের জন্য শুধু উৎসবের দিন নয়, এটি আত্মপর্যালোচনারও দিন। আমরা কি একাত্তরের শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি? আমরা কি তাদের স্বপ্নের প্রতি সৎ থেকেছি? আজকের এই দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবেÑএকটি নির্ভেজাল গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব। একাত্তরের আদর্শকে ধারণ করে আমাদের নতুন করে পথচলা শুরু করতে হবে। এটাই হবে আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত সার্থকতা।

একাত্তরের ওপর দাঁড়িয়েই আমাদের আগামীর পানে তাকাতে হবে। একাত্তরকে মর্মে ধারণ করেই সামনে এগোতে হবে। যে কোনো বিবেচনাতেই আমাদেরকে বারবার একাত্তরের কাছেই ফিরে যেতে হবে।

গাছে পেরক ঠোকার নিষ্ঠুরতার অবসান হোক

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি : দায় চাপানোর সংস্কৃতি নয়, ব্যবস্থা নিন

কবর থেকে লাশ তুলে আগুন: কঠোর আইনগত ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অচলাবস্থা ও নাগরিক দুর্ভোগ

ঈদে মিলাদুন্নবী : মহানবীর আদর্শ অনুসরণ করা জরুরি

নীলফামারীতে শ্রমিকের প্রাণহানি: এই মৃত্যু কি এড়ানো যেত না

বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন: নারী সহপাঠীকে ‘গণধর্ষণের’ হুমকি, নারী প্রার্থীদের সাইবার হয়রানি

নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার পর কেন এই নৈরাজ্য

খাদ্যবান্ধব কর্মসূচিতে দুর্নীতির অভিযোগ আমলে নিন

নারী ও শিশু নির্যাতনের উদ্বেগজনক চিত্র

ভবদহের জলাবদ্ধতা: শিক্ষা ও জীবনযাত্রার উপর অব্যাহত সংকট

সৈয়দপুরে মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রের দুর্দশা

জমি রেজিস্ট্রিতে ঘুষের বোঝা: সাধারণ মানুষের ভোগান্তি

মবের নামে মানুষ হত্যা : সমাজ কোথায় যাচ্ছে?

‘জুলাই জাতীয় সনদ’ : কেন প্রশ্ন তোলা যাবে না

সুন্দরবন রক্ষায় টেকসই ব্যবস্থা নিন

মামলা, গ্রেপ্তার, জামিন : প্রশ্নবিদ্ধ আইনের শাসন

শিক্ষার্থীদের স্বেচ্ছাশ্রমে সাঁকো নির্মাণ : ঐক্য ও উদ্যমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত

বন্যা ও ভাঙন : দ্রুত ব্যবস্থা নিন

অ্যান্টিভেনমের সরবরাহ নিশ্চিত করুন

ভূমি অফিসে ঘুষ বন্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন

জন্ম নিবন্ধনে জটিলতা দূর করা জরুরি

‘সাদা পাথর’ লুটের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিন

সার বিতরণে অনিয়মের অভিযোগ আমলে নিন

তরুণদের জন্য আলাদা বুথ! সিদ্ধান্ত কার? কেন?

চিকিৎসক সংকটে জীবননগরের স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত

গণপিটুনির সংস্কৃতি রুখতে হবে এখনই

সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতনের ঘটনার বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

ইউনিয়ন পরিষদে নাগরিক সেবায় ভোগান্তির অবসান ঘটান

সড়কে মৃত্যু : দুর্ঘটনা নাকি অব্যবস্থাপনার ফল?

অন্তর্বর্তী সরকারের এক বছর

নির্বাচনের ঘোষণায় স্বস্তি, তবে আছে অনেক চ্যালেঞ্জ

‘জুলাই ঘোষণাপত্র’: কিছু জিজ্ঞাসা

বয়স্ক ভাতা পেতে আর কত অপেক্ষা

ডিএনডি এলাকায় জলাবদ্ধতা নিরসনে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

গণঅভ্যুত্থানের এক বছর: প্রত্যাশায় কী প্রাপ্তি

tab

opinion » editorial

স্বাধীনতা দিবস : একাত্তরের স্বপ্ন পুনর্জাগরণের প্রত্যয়

বুধবার, ২৬ মার্চ ২০২৫

আজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস। এই দিনটি শুধু একটি তারিখ নয়, এটি আমাদের জাতীয় গৌরবের প্রতীক, লাখো শহীদের রক্তে রঞ্জিত এক অমর সংগ্রামের স্মারক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণার মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে এই দিনে শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ। শুধু ভূখ-ের স্বাধীনতার জন্য নয়, বরং শোষণমুক্ত, ন্যায়ভিত্তিক ও সমতার সমাজ গড়ার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল। ৫৪ বছর পর আজ আমরা সেই স্বপ্নের পূর্ণতার পথে কতটা এগিয়েছি, তা নিয়ে প্রশ্ন জাগে।

স্বাধীনতার এই দীর্ঘ পথচলায় আমরা অনেক কিছু অর্জন করেছি। একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে আমাদের পরিচিতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন, শিক্ষা ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি প্রশংসনীয়। কিন্তু একাত্তরে যে স্বপ্ন নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছিলামÑবৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজের স্বপ্নÑতা কি পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে? দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্থিরতা, সামাজিক বৈষম্য এবং গণতান্ত্রিক অধিকারের সংকট আমাদের সামনে এখনো চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

২০২৪ সালে ঘটে যাওয়া গণঅভ্যুত্থান আমাদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। ২৪-এ গণঅভ্যুত্থান হয়েছে। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে মানুষের মনে একাত্তরের আকাক্সক্ষা পুনরুজ্জীবিত হয়েছে। একাত্তরের যে স্বপ্ন নিয়ে দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, লাখো মানুষ প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন, লাখো নারী আত্মত্যাগ করেছিলেন সেই স্বপ্নই এবার ফিরে এসেছে। একাত্তরে মানুষ বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিল। তারা চেয়েছিল মানুষে-মানুষে কোনো বৈষম্য থাকবে না। স্বাধীন বাংলাদেশে ধর্ম, বর্ণ, জাতি ভেদে সবাই সমমর্যাদা পাবে। গণতান্ত্রিক অধিকার পাবে। মুক্তভাবে কথা বলতে পারবে।

গণঅভ্যুত্থানের পর আজ আমাদের সামনে সুযোগ এসেছে একাত্তরের আকাক্সক্ষাকে পূর্ণ করার। আমরা চাইব সমাজ থেকে সব ধরনের বৈষম্য আক্ষরিক অর্থেই দূর হবে। নাগরিক অধিকার ভোগের ক্ষেত্রে ধর্ম, বর্ণ বা জাতি পরিচয় বাধা হয়ে দাঁড়াবে না। নির্ভেজাল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে কোনো ছলচাতুরী কাম্য নয়। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রশ্নে মানুষের রায় পাওয়া জরুরি। সব রাজনৈতিক দলকে মানুষের কাছেই যেতে হবে। আর সেটা যত দ্রুত হয় ততই মঙ্গল। মানুষের আকাক্সক্ষাকে বুঝতে হবে রাজনৈতিক দলগুলোকে। মানুষের চাওয়া আর রাজনৈতিক দলের কাজে মেলবন্ধন গড়ে তুলতে হবে। পুরোনো-নতুন সব দলের জন্যই এ কথা সমানভাবে প্রযোজ্য।

এই গণঅভ্যুত্থান আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছে যে, স্বাধীনতা শুধু রাষ্ট্রের সীমানা নির্ধারণ নয়, এটি জনগণের মর্যাদা ও অধিকারের প্রতিষ্ঠা। গত ৫৪ বছরে আমরা যে ভুলগুলো করেছিÑরাজনৈতিক প্রতিহিংসা, দুর্নীতি, বিচারহীনতাÑসেগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে হবে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। জনগণের কণ্ঠকে দমিয়ে রাখার পরিবর্তে তাদের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।

২৬ মার্চ আমাদের জন্য শুধু উৎসবের দিন নয়, এটি আত্মপর্যালোচনারও দিন। আমরা কি একাত্তরের শহীদদের প্রতি আমাদের দায়িত্ব পালন করেছি? আমরা কি তাদের স্বপ্নের প্রতি সৎ থেকেছি? আজকের এই দিনে আমাদের প্রতিজ্ঞা করতে হবেÑএকটি নির্ভেজাল গণতান্ত্রিক, বৈষম্যমুক্ত ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়ে তুলব। একাত্তরের আদর্শকে ধারণ করে আমাদের নতুন করে পথচলা শুরু করতে হবে। এটাই হবে আমাদের স্বাধীনতার প্রকৃত সার্থকতা।

একাত্তরের ওপর দাঁড়িয়েই আমাদের আগামীর পানে তাকাতে হবে। একাত্তরকে মর্মে ধারণ করেই সামনে এগোতে হবে। যে কোনো বিবেচনাতেই আমাদেরকে বারবার একাত্তরের কাছেই ফিরে যেতে হবে।

back to top