নিষ্ঠুরতার শিকার হাতি

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর সরল ইউনিয়নের জঙ্গল পাইরাংয়ের দমদমার পাহাড়ে গত বুধবার একটি বন্যহাতির মরদেহ উদ্ধারের ঘটনা প্রথমে স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মনে হলেও, এখন তা একটি নৃশংস হত্যাকা- হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। বন বিভাগের প্রাথমিক দাবি ছিল, হাতিটি বয়সজনিত কারণে মারা গেছে। কিন্তু ময়নাতদন্তে উঠে এসেছে ভয়াবহ সত্যÑহাতিটিকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে, এবং এর দাঁত ও পায়ের নখ কেটে নেয়া হয়েছে।

গত ১০ বছরে বাঁশখালীতে অন্তত ১৬টি হাতির মৃত্যুর রেকর্ড রয়েছে। খাদ্যে বিষক্রিয়া, বৈদ্যুতিক ফাঁদ, পাহাড় থেকে পড়ে যাওয়া, রোগাক্রান্ত হওয়াÑ নানা কারণে এই মৃত্যুগুলো ঘটেছে। তবে সাম্প্রতিক ঘটনাটি সংঘবদ্ধ পাচারকারীদের দ্বারা পরিকল্পিত হত্যাকা- হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, হাতিটির বয়স ছিল মাত্র ছয়-সাত বছর, অথচ প্রাথমিকভাবে বলা হয়েছিল ৬০-৭০ বছর। এই ভুল তথ্য প্রকাশ ও পরবর্তী সমালোচনা বন বিভাগের দায়িত্বশীলতা ও পেশাদারিত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

বাঁশখালীর কালীপুর ও জলদি রেঞ্জের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল একসময় বন্য হাতির নিরাপদ আবাসস্থল ছিল। কিন্তু বন ধ্বংস, অবৈধ দখল, এবং মানুষের বসতি বৃদ্ধির কারণে হাতিরা তাদের প্রাকৃতিক আবাস হারাচ্ছে। ফলে, তারা মানুষের বসতির কাছাকাছি চলে আসছে, যা মানুষ-হাতির সংঘাত বাড়াচ্ছে। এই সংঘাতের ফলশ্রুতিতে হাতিরা প্রাণ হারাচ্ছেÑ কখনো দুর্ঘটনায়, কখনো পরিকল্পিতভাবে।

বন বিভাগের পক্ষ থেকে মামলা দায়ের এবং দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও ১৫-১৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ। তবে, শুধু মামলা দায়েরই যথেষ্ট নয়। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, বন বিভাগের অভ্যন্তরীণ ত্রুটিগুলোÑ যেমন ভুল তথ্য প্রকাশ বা ঘটনার গুরুত্ব বোঝার ব্যর্থতাÑ সংশোধন করা প্রয়োজন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে স্থানীয় জনগণের সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বনাঞ্চল পুনরুদ্ধার ও পাচার প্রতিরোধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

সম্প্রতি