মিহির কুমার রায়
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক-বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ স্বাধীনতার পর প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এ প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের সার্বিক আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থে একটি স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই প্রত্যাশিত স্বাধীনতা ভোগ করছে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে বিস্তর আলোচনা রয়েছে।
বিগত সরকারগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তৈরি হয়েছে অলিগার্ক গোষ্ঠী, যারা ব্যাংক ঋণের অপব্যবহার করেছে। এই বাস্তবতায় অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করা অপরিহার্য
প্রথাগতভাবে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক হলো আর্থিক খাতের ‘মুরুব্বি’, ব্যাংকের ‘শেষ আশ্রয়স্থল’, সরকারের আর্থিক সম্পদের ‘রক্ষক’, ‘পরামর্শক’ এবং আর্থিক সম্পদ উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল দুটি কাজ-(১) বছরে দু’বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা এবং (২) তফসিলি ব্যাংকের কাজ তদারকি, পরিদর্শন ও মূল্যায়ন।
মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হলো অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ অর্থ সঠিক খাতে প্রবাহিত হয়। এর দুটি পদ্ধতি আছে-
(১) পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণ: ব্যাংক রেট, খোলা বাজারে লেনদেন (ওপেন মার্কেট অপারেশন), সিআরআর ও এসএলআর ইত্যাদি।
(২) গুণগত নিয়ন্ত্রণ: রেশনিং, নৈতিকভাবে প্ররোচনা, প্রচারনা ও সভা-আলোচনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ।
প্রচলিত নিয়মে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে তাদের আমানতের ৬.৫ শতাংশ সিআরআর ও ১৩ শতাংশ এসএলআর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় এই হার পরিবর্তন করে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নিজস্ব বিশ্লেষণ ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে এই বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করে।
কিন্তু ২০১৮ সালে সিআরআর হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর দাবির মুখে, কোনো গভীর বিশ্লেষণ ছাড়াই-অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্ষুণ্য হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত। যদি মুদ্রানীতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উপেক্ষা করে নেওয়া হয়, তাহলে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকার যৌক্তিকতা কী-সে প্রশ্নও উঠেছে।
আর্থিক খাতের গবেষকরা বলছেন, আমানতকারীদের স্বার্থেই সিআরআর ও এসএলআর হার নির্ধারণ করা হয়, কারণ ব্যাংকের মোট আমানতের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে আমানতকারীদের কাছ থেকে, মাত্র ১০ শতাংশ মালিকদের নিজের মূলধন। অথচ এই সিদ্ধান্তে ব্যাংক মালিকদের স্বার্থই বেশি রক্ষা পেয়েছে। এর ফলে বাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা প্রবেশ করেছিল, যা ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট মোকাবিলায় ব্যবহার হয়।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়-এই মূলধন সংকটের প্রকৃত কারণ কী? বিশ্লেষণে দেখা যায়-
১. খেলাপি ঋণ: বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২৪ শতাংশ-এটি এক ধরনের ‘মহাবিপদ সংকেত’।
২. এডিআর অসামঞ্জস্য: কিছু ব্যাংক নিয়ম ভেঙে ৯০-৯২ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে, যা তারল্য সংকটের মূল কারণ।
ফলে ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের নতুন ঋণ দিতে পারছে না। এর পেছনে দায়ী ভ্রান্ত রাজনীতি-রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ, খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের প্রশ্রয়, আর্থিক জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া ইত্যাদি।
বিগত সরকারগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তৈরি হয়েছে অলিগার্ক গোষ্ঠী, যারা ব্যাংক ঋণের অপব্যবহার করেছে। এই বাস্তবতায় অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করা অপরিহার্য।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বিশিষ্টজনরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা শুধু স্বায়ত্তশাসনে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না-এটি হতে হবে পূর্ণ স্বাধীনতা। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ, আর্থিক, প্রশাসনিক ও কাঠামোগত সিদ্ধান্ত-সবই স্বাধীনভাবে নিতে দিতে হবে, তবে জবাবদিহিও থাকতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকলে কৃত্রিমভাবে ডলারের দর ধরে রাখার মতো নীতিগত ভুল হতো না। বিশ্বের অনেক দেশে সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নেই; আমাদের দেশেও এটি বিলুপ্ত করা প্রয়োজন।
প্রায়শই প্রশ্ন ওঠে-বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কার কাছে দায়বদ্ধ? অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাষ্ট্রপতি নাকি জাতীয় সংসদ? এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। অথচ ভারতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ; তাই সরকার সেখানে রাজনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারে না-যা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে।
ভারত ও নেপালের অভিজ্ঞতা বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত বেশি স্বাধীন, আর্থিক শৃঙ্খলা তত মজবুত। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নজরদারিতে ঋণখেলাপি নিয়ন্ত্রণে সফল। বাংলাদেশেরও সেই পথে হাঁটা জরুরি।
অর্থনীতি আজ এক গভীর ক্রান্তিকালে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর এবং প্রশাসনিকভাবে স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ছাড়া টেকসই আর্থিক শৃঙ্খলা সম্ভব নয়।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]
ইপেপার
জাতীয়
সারাদেশ
আন্তর্জাতিক
নগর-মহানগর
খেলা
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি
শিক্ষা
অর্থ-বাণিজ্য
সংস্কৃতি
ক্যাম্পাস
মিডিয়া
অপরাধ ও দুর্নীতি
রাজনীতি
শোক ও স্মরন
প্রবাস
নারীর প্রতি সহিংসতা
বিনোদন
সম্পাদকীয়
উপ-সম্পাদকীয়
মুক্ত আলোচনা
চিঠিপত্র
পাঠকের চিঠি
মিহির কুমার রায়
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক-বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন নিয়ে নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। অথচ স্বাধীনতার পর প্রণীত বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ১৯৭২-এ প্রতিষ্ঠানটিকে দেশের সার্বিক আর্থিক উন্নয়নের স্বার্থে একটি স্বতন্ত্র ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল। কিন্তু সত্যিকার অর্থে গত চার দশকেরও বেশি সময় ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেই প্রত্যাশিত স্বাধীনতা ভোগ করছে কি না, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ মহলে বিস্তর আলোচনা রয়েছে।
বিগত সরকারগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তৈরি হয়েছে অলিগার্ক গোষ্ঠী, যারা ব্যাংক ঋণের অপব্যবহার করেছে। এই বাস্তবতায় অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করা অপরিহার্য
প্রথাগতভাবে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংক হলো আর্থিক খাতের ‘মুরুব্বি’, ব্যাংকের ‘শেষ আশ্রয়স্থল’, সরকারের আর্থিক সম্পদের ‘রক্ষক’, ‘পরামর্শক’ এবং আর্থিক সম্পদ উন্নয়নের অন্যতম চালিকা শক্তি। তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল দুটি কাজ-(১) বছরে দু’বার মুদ্রানীতি প্রণয়ন করা এবং (২) তফসিলি ব্যাংকের কাজ তদারকি, পরিদর্শন ও মূল্যায়ন।
মুদ্রানীতির মূল লক্ষ্য হলো অর্থনীতিতে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা, যাতে সঠিক সময়ে সঠিক পরিমাণ অর্থ সঠিক খাতে প্রবাহিত হয়। এর দুটি পদ্ধতি আছে-
(১) পরিমাণগত নিয়ন্ত্রণ: ব্যাংক রেট, খোলা বাজারে লেনদেন (ওপেন মার্কেট অপারেশন), সিআরআর ও এসএলআর ইত্যাদি।
(২) গুণগত নিয়ন্ত্রণ: রেশনিং, নৈতিকভাবে প্ররোচনা, প্রচারনা ও সভা-আলোচনার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ।
প্রচলিত নিয়মে তফসিলি ব্যাংকগুলোকে তাদের আমানতের ৬.৫ শতাংশ সিআরআর ও ১৩ শতাংশ এসএলআর হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে জমা রাখতে হয়। অর্থনীতির সামগ্রিক অবস্থা বিবেচনায় এই হার পরিবর্তন করে মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সাধারণত কেন্দ্রীয় ব্যাংকই নিজস্ব বিশ্লেষণ ও পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্তে এই বিষয়ে নীতি নির্ধারণ করে।
কিন্তু ২০১৮ সালে সিআরআর হার কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি)-এর দাবির মুখে, কোনো গভীর বিশ্লেষণ ছাড়াই-অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা ক্ষুণ্য হয়েছে বলে বিশ্লেষকদের মত। যদি মুদ্রানীতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে উপেক্ষা করে নেওয়া হয়, তাহলে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকার যৌক্তিকতা কী-সে প্রশ্নও উঠেছে।
আর্থিক খাতের গবেষকরা বলছেন, আমানতকারীদের স্বার্থেই সিআরআর ও এসএলআর হার নির্ধারণ করা হয়, কারণ ব্যাংকের মোট আমানতের প্রায় ৯০ শতাংশ আসে আমানতকারীদের কাছ থেকে, মাত্র ১০ শতাংশ মালিকদের নিজের মূলধন। অথচ এই সিদ্ধান্তে ব্যাংক মালিকদের স্বার্থই বেশি রক্ষা পেয়েছে। এর ফলে বাজারে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা প্রবেশ করেছিল, যা ব্যাংকগুলোর মূলধন সংকট মোকাবিলায় ব্যবহার হয়।
কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়-এই মূলধন সংকটের প্রকৃত কারণ কী? বিশ্লেষণে দেখা যায়-
১. খেলাপি ঋণ: বর্তমানে প্রায় ২ লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ২৪ শতাংশ-এটি এক ধরনের ‘মহাবিপদ সংকেত’।
২. এডিআর অসামঞ্জস্য: কিছু ব্যাংক নিয়ম ভেঙে ৯০-৯২ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ বিতরণ করেছে, যা তারল্য সংকটের মূল কারণ।
ফলে ব্যাংকগুলো উদ্যোক্তাদের নতুন ঋণ দিতে পারছে না। এর পেছনে দায়ী ভ্রান্ত রাজনীতি-রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগ, খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের প্রশ্রয়, আর্থিক জালিয়াতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়া ইত্যাদি।
বিগত সরকারগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংককে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় তৈরি হয়েছে অলিগার্ক গোষ্ঠী, যারা ব্যাংক ঋণের অপব্যবহার করেছে। এই বাস্তবতায় অর্থনৈতিক সংকট থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে প্রকৃত অর্থে স্বাধীন করা অপরিহার্য।
সম্প্রতি রাজধানীর গুলশানে ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বাধীনতার অপরিহার্যতা’ শীর্ষক এক আলোচনায় বিশিষ্টজনরা বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বাধীনতা শুধু স্বায়ত্তশাসনে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না-এটি হতে হবে পূর্ণ স্বাধীনতা। গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগ, আর্থিক, প্রশাসনিক ও কাঠামোগত সিদ্ধান্ত-সবই স্বাধীনভাবে নিতে দিতে হবে, তবে জবাবদিহিও থাকতে হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক থাকলে কৃত্রিমভাবে ডলারের দর ধরে রাখার মতো নীতিগত ভুল হতো না। বিশ্বের অনেক দেশে সরকারের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ নেই; আমাদের দেশেও এটি বিলুপ্ত করা প্রয়োজন।
প্রায়শই প্রশ্ন ওঠে-বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর কার কাছে দায়বদ্ধ? অর্থ মন্ত্রণালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, রাষ্ট্রপতি নাকি জাতীয় সংসদ? এ প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর নেই। অথচ ভারতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর লোকসভার কাছে দায়বদ্ধ; তাই সরকার সেখানে রাজনৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করতে পারে না-যা বাংলাদেশে প্রায়ই ঘটে।
ভারত ও নেপালের অভিজ্ঞতা বলছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংক যত বেশি স্বাধীন, আর্থিক শৃঙ্খলা তত মজবুত। নেপালের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কঠোর নজরদারিতে ঋণখেলাপি নিয়ন্ত্রণে সফল। বাংলাদেশেরও সেই পথে হাঁটা জরুরি।
অর্থনীতি আজ এক গভীর ক্রান্তিকালে। এই অবস্থায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত, আর্থিকভাবে স্বনির্ভর এবং প্রশাসনিকভাবে স্বাধীন কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিষ্ঠা ছাড়া টেকসই আর্থিক শৃঙ্খলা সম্ভব নয়।
(মতামত লেখকের নিজস্ব)
[লেখক: সাবেক ডিন (ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদ) ও সিন্ডিকেট সদস্য, সিটি ইউনিভার্সিটি, ঢাকা]