alt

মতামত » সম্পাদকীয়

নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা আয়োজনে বাধা, কেন?

: বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী চর্চার এক অনন্য উদাহরণ হলো লালন মেলা। সাধু লালন সাঁইয়ের জীবন ও দর্শনের আলোকে এই মেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে উদারতা, মানবিকতা ও সাম্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। তবে নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা আয়োজকদের প্রতি হুমকি এবং এই আয়োজন বন্ধের প্রচেষ্টা আমাদের সমাজের সহিষ্ণুতা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর গুরুতর আঘাত হানে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সদরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রমে আয়োজিত লালন মেলা বন্ধে ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি হুমকি দিয়েছেন। এমনকি মেলার আয়োজন বন্ধ না করলে হামলার প্রস্তুতি নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। এ ঘটনায় আয়োজকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

লালন কোনো বিশেষ ধর্মীয় গ-িতে আবদ্ধ ছিলেন না। তার দর্শন সব ধর্মের মানুষকে একতার সূত্রে বাঁধতে চায়। লালনের গান শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মানুষের আত্মার মুক্তি এবং মানবিকতা চর্চার প্রতীক। তাই এমন একটি মেলার আয়োজন বন্ধের হুমকি শুধু একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত নয়, এটি সমাজে উদার ও মুক্তচিন্তার চর্চাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস।

যদিও পুলিশ মেলার স্থানে গিয়ে সম্ভাব্য হামলা ঠেকিয়েছে, তবে এ ঘটনা যে একটি বৃহত্তর সমস্যা নির্দেশ করে তা অস্বীকার করা যাবে না। যখন একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়, তখন এটি শুধু আইনশৃঙ্খলার নয়, বরং সমাজের মূল্যবোধের সংকট।

অতীতে এ ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার উদাহরণ আমরা দেখেছি। সম্প্রতি মাদারীপুরে কু-ুবাড়ির মেলা বন্ধের পর আবার অনুমতি দেয়ার ঘটনায় একই ধরনের প্রশাসনিক দোদুল্যমান অবস্থা দেখা গেছে। এ ধরনের অনিশ্চিত পদক্ষেপ স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দেয় এবং সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।

আমরা বলতে চাই, লালন মেলা যথাসময়ে যথাস্থানে অনুষ্ঠিত হতে দিতে হবে। মেলা আয়োজকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। ধর্মের নামে যে কোনো উসকানিমূলক কর্মকা- কঠোরভাবে দমন করতে হবে। প্রশাসনের উচিত স্পষ্ট ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সুরক্ষা দেয়া।

সাংস্কৃতিক চর্চার স্বাধীনতা দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি একটি মৌলিক অধিকার, যা কোনো গোষ্ঠীর উগ্র মতবাদ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের লালন মেলা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদ রক্ষায় শুধু আইন নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতন অংশগ্রহণও জরুরি। ধর্ম এবং সংস্কৃতি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

সাংস্কৃতিক কর্মকা- বন্ধ নয়, বরং তা উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা একটি প্রগতিশীল, সহিষ্ণু এবং মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। লালনের মতো মরমি সাধকের দর্শন চর্চা ও প্রচার আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এই ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

দুস্থদের জন্য নিম্নমানের চাল: দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিন

নিরাপদ সড়কের আকাঙ্ক্ষা ও বাস্তবতা

কটিয়াদীতে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে অভিযোগ আমলে নিন

ধানখেতে পোকার আক্রমণ: কৃষকের পাশে দাঁড়ান

কৃষিজমির পাশে ইউক্যালিপটাস: লাভ সাময়িক, ক্ষতি দীর্ঘমেয়াদী

খুলনা বিভাগীয় শিশু হাসপাতাল চালু হতে আর কত অপেক্ষা

সদরপুর স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের স্বাস্থ্যসেবার মান বাড়াতে ব্যবস্থা নিন

সরকারি জমি দখল: ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে

রংপুর সিটি করপোরেশনে অটোরিকশার লাইসেন্স প্রসঙ্গে

বিমানবন্দরের কার্গো ভিলেজে অগ্নিকাণ্ড প্রশ্ন অনেক, উত্তর মিলবে কি

দেবীদ্বার কলেজ মাঠ: অবহেলায় হারাতে বসেছে ঐতিহ্য

সিইপিজেডের আগুন: অবহেলা আর দায়িত্বহীনতার নজির

বায়ুদূষণ রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নিন

এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষা : ফল বিপর্যয় নাকি বাস্তবতা

কুমারভোগের বাসিন্দাদের জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি দিন

বেহাল রাজবাড়ী বিসিক শিল্পনগরী: ব্যবস্থা নিন

শিক্ষক-কর্মচারীদের দাবি: যৌক্তিক পদক্ষেপ নিন

গার্মেন্টস কারখানায় অগ্নিকাণ্ড: প্রশ্নবিদ্ধ নিরাপত্তা ব্যবস্থা

ভিডব্লিউবি কর্মসূচিতে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করুন

টিআরএম প্রকল্পের ক্ষতিপূরণ পেতে আর কত অপেক্ষা

জয়পুরহাটে ডায়রিয়ার প্রকোপ

লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করা যাচ্ছে না কেন

টাইফয়েড টিকা: ভালো উদ্যোগ

হামাস-ইসরায়েল চুক্তি: শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ সফল হোক

বকুলতলায় স্থগিত শরৎ উৎসব!

সুন্দরগঞ্জে অ্যানথ্রাক্স টিকাদান কার্যক্রমে জনবল সংকট দূর করুন

বনভূমি দখল: ব্যবস্থা নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন

নন্দীগ্রামে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংকট

জরাজীর্ণ বিদ্যালয়গুলো সংস্কার করুন

কমছেই আলুর দাম, লোকসান বাড়ছে কৃষকের

এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের দাবি কি পূরণ হলো?

সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নিতে হবে

কন্যাশিশু নিপীড়নের উদ্বেগজনক চিত্র

ট্রাম্পের পরিকল্পনা একটি সম্ভাবনাময় সূচনা, কিন্তু পথ এখনও দীর্ঘ

বিজয়া দশমী: সম্প্রীতি রক্ষার অঙ্গীকার

প্লাস্টিক দূষণের শিকার সুন্দরবন: চাই জনসচেতনতা

tab

মতামত » সম্পাদকীয়

নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা আয়োজনে বাধা, কেন?

বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪

বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী চর্চার এক অনন্য উদাহরণ হলো লালন মেলা। সাধু লালন সাঁইয়ের জীবন ও দর্শনের আলোকে এই মেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে উদারতা, মানবিকতা ও সাম্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। তবে নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা আয়োজকদের প্রতি হুমকি এবং এই আয়োজন বন্ধের প্রচেষ্টা আমাদের সমাজের সহিষ্ণুতা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর গুরুতর আঘাত হানে।

সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সদরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রমে আয়োজিত লালন মেলা বন্ধে ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি হুমকি দিয়েছেন। এমনকি মেলার আয়োজন বন্ধ না করলে হামলার প্রস্তুতি নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। এ ঘটনায় আয়োজকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।

লালন কোনো বিশেষ ধর্মীয় গ-িতে আবদ্ধ ছিলেন না। তার দর্শন সব ধর্মের মানুষকে একতার সূত্রে বাঁধতে চায়। লালনের গান শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মানুষের আত্মার মুক্তি এবং মানবিকতা চর্চার প্রতীক। তাই এমন একটি মেলার আয়োজন বন্ধের হুমকি শুধু একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত নয়, এটি সমাজে উদার ও মুক্তচিন্তার চর্চাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস।

যদিও পুলিশ মেলার স্থানে গিয়ে সম্ভাব্য হামলা ঠেকিয়েছে, তবে এ ঘটনা যে একটি বৃহত্তর সমস্যা নির্দেশ করে তা অস্বীকার করা যাবে না। যখন একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়, তখন এটি শুধু আইনশৃঙ্খলার নয়, বরং সমাজের মূল্যবোধের সংকট।

অতীতে এ ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার উদাহরণ আমরা দেখেছি। সম্প্রতি মাদারীপুরে কু-ুবাড়ির মেলা বন্ধের পর আবার অনুমতি দেয়ার ঘটনায় একই ধরনের প্রশাসনিক দোদুল্যমান অবস্থা দেখা গেছে। এ ধরনের অনিশ্চিত পদক্ষেপ স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দেয় এবং সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।

আমরা বলতে চাই, লালন মেলা যথাসময়ে যথাস্থানে অনুষ্ঠিত হতে দিতে হবে। মেলা আয়োজকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। ধর্মের নামে যে কোনো উসকানিমূলক কর্মকা- কঠোরভাবে দমন করতে হবে। প্রশাসনের উচিত স্পষ্ট ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সুরক্ষা দেয়া।

সাংস্কৃতিক চর্চার স্বাধীনতা দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি একটি মৌলিক অধিকার, যা কোনো গোষ্ঠীর উগ্র মতবাদ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের লালন মেলা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদ রক্ষায় শুধু আইন নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতন অংশগ্রহণও জরুরি। ধর্ম এবং সংস্কৃতি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

সাংস্কৃতিক কর্মকা- বন্ধ নয়, বরং তা উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা একটি প্রগতিশীল, সহিষ্ণু এবং মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। লালনের মতো মরমি সাধকের দর্শন চর্চা ও প্রচার আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এই ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।

back to top