বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী চর্চার এক অনন্য উদাহরণ হলো লালন মেলা। সাধু লালন সাঁইয়ের জীবন ও দর্শনের আলোকে এই মেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে উদারতা, মানবিকতা ও সাম্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। তবে নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা আয়োজকদের প্রতি হুমকি এবং এই আয়োজন বন্ধের প্রচেষ্টা আমাদের সমাজের সহিষ্ণুতা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর গুরুতর আঘাত হানে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সদরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রমে আয়োজিত লালন মেলা বন্ধে ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি হুমকি দিয়েছেন। এমনকি মেলার আয়োজন বন্ধ না করলে হামলার প্রস্তুতি নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। এ ঘটনায় আয়োজকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
লালন কোনো বিশেষ ধর্মীয় গ-িতে আবদ্ধ ছিলেন না। তার দর্শন সব ধর্মের মানুষকে একতার সূত্রে বাঁধতে চায়। লালনের গান শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মানুষের আত্মার মুক্তি এবং মানবিকতা চর্চার প্রতীক। তাই এমন একটি মেলার আয়োজন বন্ধের হুমকি শুধু একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত নয়, এটি সমাজে উদার ও মুক্তচিন্তার চর্চাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস।
যদিও পুলিশ মেলার স্থানে গিয়ে সম্ভাব্য হামলা ঠেকিয়েছে, তবে এ ঘটনা যে একটি বৃহত্তর সমস্যা নির্দেশ করে তা অস্বীকার করা যাবে না। যখন একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়, তখন এটি শুধু আইনশৃঙ্খলার নয়, বরং সমাজের মূল্যবোধের সংকট।
অতীতে এ ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার উদাহরণ আমরা দেখেছি। সম্প্রতি মাদারীপুরে কু-ুবাড়ির মেলা বন্ধের পর আবার অনুমতি দেয়ার ঘটনায় একই ধরনের প্রশাসনিক দোদুল্যমান অবস্থা দেখা গেছে। এ ধরনের অনিশ্চিত পদক্ষেপ স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দেয় এবং সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।
আমরা বলতে চাই, লালন মেলা যথাসময়ে যথাস্থানে অনুষ্ঠিত হতে দিতে হবে। মেলা আয়োজকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। ধর্মের নামে যে কোনো উসকানিমূলক কর্মকা- কঠোরভাবে দমন করতে হবে। প্রশাসনের উচিত স্পষ্ট ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সুরক্ষা দেয়া।
সাংস্কৃতিক চর্চার স্বাধীনতা দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি একটি মৌলিক অধিকার, যা কোনো গোষ্ঠীর উগ্র মতবাদ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের লালন মেলা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদ রক্ষায় শুধু আইন নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতন অংশগ্রহণও জরুরি। ধর্ম এবং সংস্কৃতি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সাংস্কৃতিক কর্মকা- বন্ধ নয়, বরং তা উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা একটি প্রগতিশীল, সহিষ্ণু এবং মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। লালনের মতো মরমি সাধকের দর্শন চর্চা ও প্রচার আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এই ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪
বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষ সংস্কৃতি ও বহুত্ববাদী চর্চার এক অনন্য উদাহরণ হলো লালন মেলা। সাধু লালন সাঁইয়ের জীবন ও দর্শনের আলোকে এই মেলা শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়; এটি এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে উদারতা, মানবিকতা ও সাম্যের বার্তা পৌঁছে দেয়। তবে নারায়ণগঞ্জে লালন মেলা আয়োজকদের প্রতি হুমকি এবং এই আয়োজন বন্ধের প্রচেষ্টা আমাদের সমাজের সহিষ্ণুতা ও সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপর গুরুতর আঘাত হানে।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ সদরের মধ্য নরসিংহপুর গ্রামে মুক্তিধাম আশ্রমে আয়োজিত লালন মেলা বন্ধে ‘তৌহিদী জনতা’ পরিচয়ে কিছু ব্যক্তি হুমকি দিয়েছেন। এমনকি মেলার আয়োজন বন্ধ না করলে হামলার প্রস্তুতি নেয়ার অভিযোগও উঠেছে। এ ঘটনায় আয়োজকরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন।
লালন কোনো বিশেষ ধর্মীয় গ-িতে আবদ্ধ ছিলেন না। তার দর্শন সব ধর্মের মানুষকে একতার সূত্রে বাঁধতে চায়। লালনের গান শুধু ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা মানুষের আত্মার মুক্তি এবং মানবিকতা চর্চার প্রতীক। তাই এমন একটি মেলার আয়োজন বন্ধের হুমকি শুধু একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ওপর আঘাত নয়, এটি সমাজে উদার ও মুক্তচিন্তার চর্চাকে স্তব্ধ করার অপপ্রয়াস।
যদিও পুলিশ মেলার স্থানে গিয়ে সম্ভাব্য হামলা ঠেকিয়েছে, তবে এ ঘটনা যে একটি বৃহত্তর সমস্যা নির্দেশ করে তা অস্বীকার করা যাবে না। যখন একটি সাংস্কৃতিক আয়োজন ধর্মের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে বাধাগ্রস্ত করা হয়, তখন এটি শুধু আইনশৃঙ্খলার নয়, বরং সমাজের মূল্যবোধের সংকট।
অতীতে এ ধরনের ঘটনায় প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার উদাহরণ আমরা দেখেছি। সম্প্রতি মাদারীপুরে কু-ুবাড়ির মেলা বন্ধের পর আবার অনুমতি দেয়ার ঘটনায় একই ধরনের প্রশাসনিক দোদুল্যমান অবস্থা দেখা গেছে। এ ধরনের অনিশ্চিত পদক্ষেপ স্থানীয় গোষ্ঠীগুলোকে উসকে দেয় এবং সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে।
আমরা বলতে চাই, লালন মেলা যথাসময়ে যথাস্থানে অনুষ্ঠিত হতে দিতে হবে। মেলা আয়োজকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং হুমকিদাতাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়া আবশ্যক। ধর্মের নামে যে কোনো উসকানিমূলক কর্মকা- কঠোরভাবে দমন করতে হবে। প্রশাসনের উচিত স্পষ্ট ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের সুরক্ষা দেয়া।
সাংস্কৃতিক চর্চার স্বাধীনতা দেশের সংবিধানে নিশ্চিত করা হয়েছে। এটি একটি মৌলিক অধিকার, যা কোনো গোষ্ঠীর উগ্র মতবাদ দ্বারা বাধাগ্রস্ত হতে পারে না। নারায়ণগঞ্জের লালন মেলা নিয়ে সৃষ্ট বিতর্ক আমাদের মনে করিয়ে দেয়, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও বহুত্ববাদ রক্ষায় শুধু আইন নয়, সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষের সচেতন অংশগ্রহণও জরুরি। ধর্ম এবং সংস্কৃতি নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা প্রতিরোধে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সাংস্কৃতিক কর্মকা- বন্ধ নয়, বরং তা উৎসাহিত করার মাধ্যমে আমরা একটি প্রগতিশীল, সহিষ্ণু এবং মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে পারি। লালনের মতো মরমি সাধকের দর্শন চর্চা ও প্রচার আমাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অংশ। এই ঐতিহ্য সংরক্ষণে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।