দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত মাসে নড়াইলের লোহাগড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে নড়াইলের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ছয়টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশেও নানানভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের পর ফেইসবুকে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা অশুভ প্রবণতা দেখা দিয়েছে। কখনো কখনো প্রকাশ্যে মাইকিং করে লোক জড়ো করে হামলা চালানো হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া পোস্ট বা কমেন্টকে কেন্দ্র করে গত এক দশকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফেইসবুকে দেয়া পোস্টে ধর্মীয় অবমাননা করার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর ও বৌদ্ধবিহারে ভয়াবহ হামলা হয়। ২০১৬ সালে একই কায়দায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়। নড়াইলেও ফেইসবুকের একটি পোস্টে ধর্মীয় অবমাননা করার অভিযোগ তুলে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, হামলা-নির্যাতন বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করে না। হামলার ঘটনার পরও তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রায়ই ব্যর্থ হয়। দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার বিচার বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকে। রামুর হামলার ঘটনার এখনো বিচার হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আটক হলেও আইনের ফাঁক গলে জামিনে বের হয়ে আসে। হামলা-নির্যাতনের বিচার হয় না বলে এখন অনেকে বিচার চান না। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় মামলার হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার মানুষদের সিংহভাগই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হন না। তারা মনে করেন, থানা-পুলিশ করে কোন লাভ তো হয় নাই, বরং অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।
বড় ধরনের কোনো হামলার ঘটনা ঘটলে মামলা হয়। সমস্যা হচ্ছে, এসব মামলায় শত শত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আসামিদের বেশিরভাগই অজ্ঞাতনামা। অভিযোগ রয়েছে যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এসব মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী হিন্দু ছিল ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অভিযোগ উঠেছে যে, সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রভাবে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা না হলে, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে আগামীতে তাদের দেশত্যাগের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমরা চাই, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সব ঘটনার বিচার হোক। মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই।
সোমবার, ০১ আগস্ট ২০২২
দেশে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা-নির্যাতনের ঘটনা ঘটেই চলেছে। গত মাসে নড়াইলের লোহাগড়ায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা হয়। মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত মাসে নড়াইলের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে আরও ছয়টি সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে।
স্বাধীন বাংলাদেশেও নানানভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। দেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রসারের পর ফেইসবুকে গুজব ছড়িয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা অশুভ প্রবণতা দেখা দিয়েছে। কখনো কখনো প্রকাশ্যে মাইকিং করে লোক জড়ো করে হামলা চালানো হয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেয়া পোস্ট বা কমেন্টকে কেন্দ্র করে গত এক দশকে দেশের বিভিন্ন স্থানে অনেক সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটেছে। ফেইসবুকে দেয়া পোস্টে ধর্মীয় অবমাননা করার গুজব ছড়িয়ে ২০১২ সালে কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের বাড়িঘর ও বৌদ্ধবিহারে ভয়াবহ হামলা হয়। ২০১৬ সালে একই কায়দায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা চালানো হয়। নড়াইলেও ফেইসবুকের একটি পোস্টে ধর্মীয় অবমাননা করার অভিযোগ তুলে হিন্দুধর্মাবলম্বীদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, হামলা-নির্যাতন বন্ধে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যথাযথ ভূমিকা পালন করে না। হামলার ঘটনার পরও তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে প্রায়ই ব্যর্থ হয়। দেশে সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় প্রতিনিয়ত এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনার বিচার বছরের পর বছর ধরে ঝুলে থাকে। রামুর হামলার ঘটনার এখনো বিচার হয়নি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা আটক হলেও আইনের ফাঁক গলে জামিনে বের হয়ে আসে। হামলা-নির্যাতনের বিচার হয় না বলে এখন অনেকে বিচার চান না। এক পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, ধর্মীয় সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঘটনায় মামলার হার ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ। অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক হামলার শিকার মানুষদের সিংহভাগই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারস্থ হন না। তারা মনে করেন, থানা-পুলিশ করে কোন লাভ তো হয় নাই, বরং অত্যাচার-নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়।
বড় ধরনের কোনো হামলার ঘটনা ঘটলে মামলা হয়। সমস্যা হচ্ছে, এসব মামলায় শত শত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। আসামিদের বেশিরভাগই অজ্ঞাতনামা। অভিযোগ রয়েছে যে, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য এসব মামলা হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর জনশুমারি ও গৃহগণনার প্রাথমিক প্রতিবেদনে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে সনাতন ধর্মাবলম্বী ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ। ২০১১ সালের জনশুমারি অনুযায়ী হিন্দু ছিল ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অভিযোগ উঠেছে যে, সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রভাবে দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে দেশ ছাড়ার প্রবণতা বাড়ছে। সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ করা না হলে, সাম্প্রদায়িক অপশক্তির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না গেলে আগামীতে তাদের দেশত্যাগের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আমরা চাই, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার সব ঘটনার বিচার হোক। মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই।