শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার খেলাপি ঋণ নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। দেশের ব্যাংকগুলোতে গত সেপ্টেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। নিবিড়ভাবে হিসাব করলে এর পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকা হয়ে যাবে। তাই সরকার খেলাপি ঋণের সঙ্গার পরিবর্তন করেছেন। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা কঠোর করা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞা অনুসারে কোন ঋণ বা ঋণের কিস্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না হলে বা নবায়ন করা না হলে, নির্ধারিত দিনের পর দিন থেকে ৩ মাস পর্যন্ত মেয়াদ উত্তোর্ণ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে। নির্ধারিত ৩ মাস বা নব্বই দিন পর তা হয়ে যাবে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি দীর্ঘ দিনের। এই সংস্কৃতিটা অনেকটা মজ্জাগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে, সে সময় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এই তিন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
বর্তমান সরকার খেলাপি ঋণের অনুসন্ধান চালাচ্ছেন, এই অনুসন্ধানে লুকায়িত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে চলা ঋণখেলাপি কঠোর সংজ্ঞার পরিবর্তন হবে কি। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে গত ১৬ বছর সরকার ক্ষমতা থেকে যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে তা চোখ ধাঁধানোর মতো অবস্থা। ১৬ বছরে খেলাপিঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা এটা খেলাপি সংস্কৃতি বলা চলে না, এট লুটতরাজের পর্যায়ে পরে। এই বিপুল অংকের খেলাপি ঋণের টাকা গেল কৈ? খেলাপিদের টাকা যদি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থ বাজারে ঘোরাফেরা করত বা বিরাট অংকের টাকা দেশে থাকত তাহলে বর্তমানে যে তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে, তা থাকত না। অন্তর্বর্তী সরকার এই খেলাপি আদায় করতে কতটা পারবে তা দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বর্তমানে জুন আগের বিতরণ করা ঋণগুলোর খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। এই হিসাব করলে দেখা যাবে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বিতরণ করা ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে। ব্যাংক খাতে চলেছে অবাধ লুটপাট আর লুটপাট করা ঋণের বিরাট অংশটা বিদেশ পাচার হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি বেড়েছে। এই কাজটি করেছে লুটপাটকারীরা সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো খেকে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো এই খেলাপি হওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলের চাপে ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। সরকার পতনের পর থলির বেড়াল বের হয়ে আসে। এই তিন মাসে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা আর বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রকৃত খেলাপির চিত্র ধরা পড়েছে। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো মধ্যে ইসলামিক ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামিক ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামিক ব্যাংকের ঋণ খেলাপিটা সবচেয়ে বেশি। শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলমসহ গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান এই বিপুল অংকের টাকা ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানা যায়, গত পনরো বছরে ২৪টি বড় কেলেংকারি ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুট হয়েছে। প্রকট তারল্য সংকটে ভুগছে দেশের ব্যাংকগুলো।
এই বিপুল অংকের টাকা পাচার হওয়ার কারণে। সবচেয়ে বেশি তারল্য সংকটে পড়েছে, গ্লোবাল ইসলামিক ব্যাংক, ইসলামিক ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসি ইসলামিক ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামিক ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক। ব্যাংকসমূহের তারল্য সংকট কাটানোর জন্য ২২ হাজার কোটি টাকা নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ছাপানো নোট বাজারে আসলে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাবে। মুদ্রাস্ফীতিতে ঘটবে উল্মফন।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, এই তিন চারটি প্রতিষ্ঠান কি জামানত রেখে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তাদের দেয়া জামানত বিক্রি করে কি তাদের নেয়া ঋণ পরিশোধ হচ্ছে না? অথচ কৃষি ব্যাংকে এক একর জমি জামানত হিসেবে দেখিয়ে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ঋণ পায় একজন কৃষক। বর্তমান বাজার মূল্যে এক একর জমির দাম এক কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের ঋণ ব্যাবস্থায় কেন এত বৈষম্য? কৃষি ঋণ পেতে একজন কৃষককে জমা দিতে হয় নানা ধরনের কাগজপত্র। সিএস আরএস, হালনাগাদ খাজনা, জমির মালিকানার তিন স্তরের দলিল। এত কিছু জমা দেয়ার পর কৃষককে ১ কোটির ঊর্ধেŸ দামের জমি বন্ধক রেখে ঋণ পায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা। তারপর তাকে এ অফিস ও অফিসসহ ব্যাংকে কমপক্ষে ৩০ বার যেতে হয়। এতে প্রায় তার ৩০ দিনের কাজের ক্ষতি হয় তার। তাছাড়া কৃষি ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজাদের রুষ্ট চরণ সহ্য করতে হয় একজন কৃষি ঋণ গ্রহিতাকে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এক কর্মকর্র্তা বলেন, কৃষকের জন্য দীর্ঘ (মানে দুই থেকে পাঁচ বছর) মেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা নেই। কৃষি ঋণ নিতে গেলে তাদের দেখানো হয় নানা ধরনের অজুহাত। অথচ ছোট ছোট কৃষি ঋণের ব্যবস্থা হলে গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।
দেশের সামগ্রিক ঋণ ব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে, তেলা মাথায় ঢালো তেল, ন্যাড়া মাথায় ভাঙো বেল। তা না হলে যারা লাখো কোটি টাকা ঋণ নিয়ে টাকা বিদেশে পাচার করছে তারা সহজেই ঋণ পেয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের কোষাগারে অর্থের জোগান দিচ্ছে তাদের ঋণ পেতে সাত ঘাট পারি দিতে হয়। এই যে লাখো কোটি টাকা পাচার হলো রাজকোষ থেকে তা পূরণ হবে এই দেশের কৃষক শ্রমিকের দেয়া রাজস্ব থেকেই। অথচ তাদের প্রতি সরকারি কর্মীদের চলে বৈরী আচরণ। তাই সরকারের উচিত দেশে ঋণ ব্যবস্থার এ বৈষম্য দূর করা।
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]
শাহ মো. জিয়াউদ্দিন
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার খেলাপি ঋণ নিয়ে মারাত্মক সমস্যায় পড়েছেন। দেশের ব্যাংকগুলোতে গত সেপ্টেম্বরের শেষে খেলাপি ঋণ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। নিবিড়ভাবে হিসাব করলে এর পরিমাণ তিন লাখ কোটি টাকা হয়ে যাবে। তাই সরকার খেলাপি ঋণের সঙ্গার পরিবর্তন করেছেন। খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা কঠোর করা হয়েছে। নতুন সংজ্ঞা অনুসারে কোন ঋণ বা ঋণের কিস্তি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পরিশোধ না হলে বা নবায়ন করা না হলে, নির্ধারিত দিনের পর দিন থেকে ৩ মাস পর্যন্ত মেয়াদ উত্তোর্ণ ঋণ হিসেবে বিবেচিত হবে। নির্ধারিত ৩ মাস বা নব্বই দিন পর তা হয়ে যাবে খেলাপি ঋণ। বাংলাদেশে ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি দীর্ঘ দিনের। এই সংস্কৃতিটা অনেকটা মজ্জাগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে যখন ক্ষমতায় আসে, সে সময় ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮১ কোটি টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশের খেলাপি ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ৬৩ হাজার কোটি টাকা। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দেশের ব্যাংকগুলোতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ এসে দাঁড়ায় ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা। জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস এই তিন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৭৩ হাজার ৫৮৬ কোটি টাকা।
বর্তমান সরকার খেলাপি ঋণের অনুসন্ধান চালাচ্ছেন, এই অনুসন্ধানে লুকায়িত খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরো বেড়ে যাবে। তাই দীর্ঘ সময় ধরে চলা ঋণখেলাপি কঠোর সংজ্ঞার পরিবর্তন হবে কি। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসে গত ১৬ বছর সরকার ক্ষমতা থেকে যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ বাড়িয়েছে তা চোখ ধাঁধানোর মতো অবস্থা। ১৬ বছরে খেলাপিঋণ বেড়েছে ২ লাখ ৭৮ হাজার কোটি টাকা এটা খেলাপি সংস্কৃতি বলা চলে না, এট লুটতরাজের পর্যায়ে পরে। এই বিপুল অংকের খেলাপি ঋণের টাকা গেল কৈ? খেলাপিদের টাকা যদি দেশের অভ্যন্তরীণ অর্থ বাজারে ঘোরাফেরা করত বা বিরাট অংকের টাকা দেশে থাকত তাহলে বর্তমানে যে তারল্য সংকট দেখা যাচ্ছে, তা থাকত না। অন্তর্বর্তী সরকার এই খেলাপি আদায় করতে কতটা পারবে তা দেখার বিষয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই মাসে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ১১ হাজার ৩৯১ কোটি টাকা; যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ। বর্তমানে জুন আগের বিতরণ করা ঋণগুলোর খেলাপির পরিমাণ বাড়ছে। এই হিসাব করলে দেখা যাবে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ বিতরণ করা ঋণই খেলাপি হয়ে গেছে। ব্যাংক খাতে চলেছে অবাধ লুটপাট আর লুটপাট করা ঋণের বিরাট অংশটা বিদেশ পাচার হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তিন মাসে সবচেয়ে বেশি ঋণ খেলাপি বেড়েছে। এই কাজটি করেছে লুটপাটকারীরা সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো খেকে। সরকারি ও বেসরকারি ব্যাংকগুলো এই খেলাপি হওয়ার বিষয়টি সরকারের উচ্চ মহলের চাপে ধামাচাপা দেয়া হয়েছিল। সরকার পতনের পর থলির বেড়াল বের হয়ে আসে। এই তিন মাসে সরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ২৩ হাজার ৬২৮ কোটি টাকা আর বেসরকারি ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বেড়েছে ৪৯ হাজার ৮৮৫ কোটি টাকা।
বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণমুক্ত হওয়ায় ব্যাংকগুলোর প্রকৃত খেলাপির চিত্র ধরা পড়েছে। এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রিত ব্যাংকগুলো মধ্যে ইসলামিক ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামিক ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামিক ব্যাংকের ঋণ খেলাপিটা সবচেয়ে বেশি। শেখ হাসিনার বেসরকারি বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নিয়ন্ত্রণাধীন বেক্সিমকো গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, এস আলমসহ গুটিকয়েক প্রতিষ্ঠান এই বিপুল অংকের টাকা ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নিয়েছে।
বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্র থেকে জানা যায়, গত পনরো বছরে ২৪টি বড় কেলেংকারি ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটি টাকা লুট হয়েছে। প্রকট তারল্য সংকটে ভুগছে দেশের ব্যাংকগুলো।
এই বিপুল অংকের টাকা পাচার হওয়ার কারণে। সবচেয়ে বেশি তারল্য সংকটে পড়েছে, গ্লোবাল ইসলামিক ব্যাংক, ইসলামিক ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, আইসি ইসলামিক ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামিক ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক। ব্যাংকসমূহের তারল্য সংকট কাটানোর জন্য ২২ হাজার কোটি টাকা নোট ছাপানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ছাপানো নোট বাজারে আসলে জিনিসপত্রের দাম আরও বেড়ে যাবে। মুদ্রাস্ফীতিতে ঘটবে উল্মফন।
এখানে প্রশ্ন হচ্ছে, এই তিন চারটি প্রতিষ্ঠান কি জামানত রেখে কোটি কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। তাদের দেয়া জামানত বিক্রি করে কি তাদের নেয়া ঋণ পরিশোধ হচ্ছে না? অথচ কৃষি ব্যাংকে এক একর জমি জামানত হিসেবে দেখিয়ে মাত্র ৫০ হাজার টাকা ঋণ পায় একজন কৃষক। বর্তমান বাজার মূল্যে এক একর জমির দাম এক কোটি টাকার বেশি। বাংলাদেশের ঋণ ব্যাবস্থায় কেন এত বৈষম্য? কৃষি ঋণ পেতে একজন কৃষককে জমা দিতে হয় নানা ধরনের কাগজপত্র। সিএস আরএস, হালনাগাদ খাজনা, জমির মালিকানার তিন স্তরের দলিল। এত কিছু জমা দেয়ার পর কৃষককে ১ কোটির ঊর্ধেŸ দামের জমি বন্ধক রেখে ঋণ পায় মাত্র ৫০ হাজার টাকা। তারপর তাকে এ অফিস ও অফিসসহ ব্যাংকে কমপক্ষে ৩০ বার যেতে হয়। এতে প্রায় তার ৩০ দিনের কাজের ক্ষতি হয় তার। তাছাড়া কৃষি ঋণ দেয়া ব্যাংকগুলোর সংশ্লিষ্ট সুপারভাইজাদের রুষ্ট চরণ সহ্য করতে হয় একজন কৃষি ঋণ গ্রহিতাকে। রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের এক কর্মকর্র্তা বলেন, কৃষকের জন্য দীর্ঘ (মানে দুই থেকে পাঁচ বছর) মেয়াদি ঋণের ব্যবস্থা নেই। কৃষি ঋণ নিতে গেলে তাদের দেখানো হয় নানা ধরনের অজুহাত। অথচ ছোট ছোট কৃষি ঋণের ব্যবস্থা হলে গ্রামে কর্মসংস্থান বাড়বে এবং গ্রামীণ কৃষি অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পাবে।
দেশের সামগ্রিক ঋণ ব্যবস্থায় দেখা যাচ্ছে, তেলা মাথায় ঢালো তেল, ন্যাড়া মাথায় ভাঙো বেল। তা না হলে যারা লাখো কোটি টাকা ঋণ নিয়ে টাকা বিদেশে পাচার করছে তারা সহজেই ঋণ পেয়ে যাচ্ছে। অপরদিকে যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের কোষাগারে অর্থের জোগান দিচ্ছে তাদের ঋণ পেতে সাত ঘাট পারি দিতে হয়। এই যে লাখো কোটি টাকা পাচার হলো রাজকোষ থেকে তা পূরণ হবে এই দেশের কৃষক শ্রমিকের দেয়া রাজস্ব থেকেই। অথচ তাদের প্রতি সরকারি কর্মীদের চলে বৈরী আচরণ। তাই সরকারের উচিত দেশে ঋণ ব্যবস্থার এ বৈষম্য দূর করা।
[লেখক : উন্নয়নকর্মী]