এস ডি সুব্রত
বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতার প্রসার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদা সমুন্নতকরণ, অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে দিবসটি জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। পথেঘাটে ভিক্ষা করতে দেখা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কারণে আমাদের ধারণা প্রতিবন্ধিতা মানে শারীরিক অসম্পূর্ণতা। প্রতিবন্ধিতার একাধিক ধরন রয়েছে। প্রতিবন্ধিতা হতে পারে শারীরিক, মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তীয়, দৃষ্টিজনিত, বাক ও শ্রবণজনিত কিংবা বহুমাত্রিক।
প্রতিবন্ধিতার কোনো প্রতিষেধক না থাকলেও আছে প্রতিরোধের উপায়। সুতরাং প্রতিরোধের জন্য প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা খুবই জরুরি। দুর্ঘটনাজনিত কারণে মানুষ বয়সের যে কোনো স্তরে প্রতিবন্ধী হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য যেসব কারণে প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নিতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কম বা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ, মায়ের অপুষ্টিজনিত সমস্যা, শিশু গর্ভে থাকাবস্থায় মা রোগাক্রান্ত বা দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, ভুল চিকিৎসা গ্রহণ, প্রসবকালীন সমস্যা কিংবা শিশু জন্মের পর রোগাক্রান্ত হওয়া বা মাথায় আঘাত পাওয়া অথবা অপুষ্টির শিকার হওয়া। অজানা অনেক কারণেও শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। জন্মের সময় মস্তিষ্কের বিন্যাসগত অসামঞ্জস্যতা অথবা জিনগত অস্বাভাবিকতাসহ জন্ম নিলে শিশু প্রতিবন্ধী হয়। প্রতিবন্ধী হওয়ার যেসব কারণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সেগুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধিতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এজন্য প্রতিবন্ধিতার কারণগুলো যেমন জানতে হবে তেমনি সবার মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বের জনসংখ্যার ১০-১৫ শতাংশ মানুষ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে ধরন অনুসারে- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩২ শতাংশ, শারীরিক প্রতিবন্ধী ২৭.৮ শতাংশ, শ্রবণ প্রতিবন্ধী ১৮.৭ শতাংশ, বাকপ্রতিবন্ধী ৩.৯ শতাংশ, বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী ৬.৮ শতাংশ এবং বহুবিধ প্রতিবন্ধী ১০.৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রতিবন্ধী। তার মধ্যে ৫২ ভাগ পুরুষ ও ৪৮ ভাগ নারী। আর শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ৪০ লাখ, মানসিক প্রতিবন্ধী ৩৮ লাখ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩৩ লাখ। আর বাক, শ্রবণ ও নানা ধরনের মিলে মোট ২৫ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দাবি করা হয়েছিল।
প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। তাদেরও সমাজের আর অন্য দশজনের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। তাই তাদের কোন সময় অবহেলা করা উচিত নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কখনো দেশ আগাবে না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তথা তাদের ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান ও অবস্থান বিবেচনাপূর্বক তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহজ ও নিরাপদ চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা প্রয়োজন। অনেকে প্রতিবন্ধীদের পরিবার ও সমাজের বোঝা বলে মনে করেন। মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। তাদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তোলতে পারলে তারাও পরিবার ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। তারা যদি সংগঠিত হয়ে তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে পারে তাহলে তারা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার দান, গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী সম্পর্কে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার না করা, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে প্রতিবন্ধী সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুয়োগ দেয়া, গণপরিবহনে মোট আসনের পাঁচ ভাগ আসন প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত করাসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমান সুযোগ ও অধিকার নিয়ে জাতীয় সংসদে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিল-২০১৩’ পাস হয়েছে। এছাড়াও ‘নিউরোডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩’, ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত শিক্ষা নীতিমালা-২০০৯’ ও ‘প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র পরিচালনা নীতিমালা-২০১১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা বলছেন, বিল পাস হলেও প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্র প্রস্তুত নয়। দেশে সবার জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত। বিলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা থাকলে প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তি হতে পারবে উল্লেখ থাকলেও সব স্কুলে তারা ভর্তি হতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, রাষ্ট্র প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নিতে বদ্ধপরিকর। তবে সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হতে রাষ্ট্রের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ বিষয়। সংগঠিত হওয়া ছাড়া অধিকার আদায় সম্ভব নয়। প্রতিটি জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের এবং সমাজের উন্নয়নে সংগঠিত হয়েছে। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও ঐক্যবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যাথলেট পিস্টোরিয়াসকে অলিম্পিকের মূলপর্বে খেলার সুযোগ লাভের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল প্রতিবন্ধিতার কারণে। আমরা এ জাতীয় বিভাজন আর চাই না। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
প্রতিবন্ধীদের অবজ্ঞা ও অবহেলার চোখে না দেখে তাদের সমাজের অন্যসব মানুষের মতো দেখতে হবে। তাদের মেধা ও মননকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করতে হবে; যাতে তারা মানসিকভাবে হীনমন্যতায় না ভোগে। প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে এবং এর প্রতিরোধে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
[লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক]
এস ডি সুব্রত
মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বিশ্বজুড়ে প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে সচেতনতার প্রসার এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের মর্যাদা সমুন্নতকরণ, অধিকার সুরক্ষা এবং উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতি বছর ৩ ডিসেম্বর বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস পালন করা হয়। ১৯৯২ সাল থেকে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে এ দিবস পালিত হয়ে আসছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশে দিবসটি জাতীয় প্রতিবন্ধী দিবস হিসেবেও পালন করা হয়। পথেঘাটে ভিক্ষা করতে দেখা শারীরিক প্রতিবন্ধীদের কারণে আমাদের ধারণা প্রতিবন্ধিতা মানে শারীরিক অসম্পূর্ণতা। প্রতিবন্ধিতার একাধিক ধরন রয়েছে। প্রতিবন্ধিতা হতে পারে শারীরিক, মানসিক বা বুদ্ধিবৃত্তীয়, দৃষ্টিজনিত, বাক ও শ্রবণজনিত কিংবা বহুমাত্রিক।
প্রতিবন্ধিতার কোনো প্রতিষেধক না থাকলেও আছে প্রতিরোধের উপায়। সুতরাং প্রতিরোধের জন্য প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকা খুবই জরুরি। দুর্ঘটনাজনিত কারণে মানুষ বয়সের যে কোনো স্তরে প্রতিবন্ধী হতে পারে। এছাড়া অন্যান্য যেসব কারণে প্রতিবন্ধী শিশু জন্ম নিতে পারে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে কম বা বেশি বয়সে সন্তান ধারণ, মায়ের অপুষ্টিজনিত সমস্যা, শিশু গর্ভে থাকাবস্থায় মা রোগাক্রান্ত বা দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, ভুল চিকিৎসা গ্রহণ, প্রসবকালীন সমস্যা কিংবা শিশু জন্মের পর রোগাক্রান্ত হওয়া বা মাথায় আঘাত পাওয়া অথবা অপুষ্টির শিকার হওয়া। অজানা অনেক কারণেও শিশু প্রতিবন্ধী হতে পারে। জন্মের সময় মস্তিষ্কের বিন্যাসগত অসামঞ্জস্যতা অথবা জিনগত অস্বাভাবিকতাসহ জন্ম নিলে শিশু প্রতিবন্ধী হয়। প্রতিবন্ধী হওয়ার যেসব কারণ আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি সেগুলো নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা প্রতিবন্ধিতা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। এজন্য প্রতিবন্ধিতার কারণগুলো যেমন জানতে হবে তেমনি সবার মধ্যে তা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক পরিসংখ্যান মতে, বিশ্বের জনসংখ্যার ১০-১৫ শতাংশ মানুষ কোন না কোনভাবে প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে ধরন অনুসারে- দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩২ শতাংশ, শারীরিক প্রতিবন্ধী ২৭.৮ শতাংশ, শ্রবণ প্রতিবন্ধী ১৮.৭ শতাংশ, বাকপ্রতিবন্ধী ৩.৯ শতাংশ, বুদ্ধি বা মানসিক প্রতিবন্ধী ৬.৮ শতাংশ এবং বহুবিধ প্রতিবন্ধী ১০.৭ শতাংশ। আর বাংলাদেশে মোট জনসংখ্যার প্রায় এক কোটি ৭০ লাখ মানুষ প্রতিবন্ধী। তার মধ্যে ৫২ ভাগ পুরুষ ও ৪৮ ভাগ নারী। আর শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী ৪০ লাখ, মানসিক প্রতিবন্ধী ৩৮ লাখ, দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ৩৩ লাখ। আর বাক, শ্রবণ ও নানা ধরনের মিলে মোট ২৫ লাখ প্রতিবন্ধী রয়েছে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক জরিপে দাবি করা হয়েছিল।
প্রতিবন্ধীরাও মানুষ। তাদেরও সমাজের আর অন্য দশজনের মতো বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। তাই তাদের কোন সময় অবহেলা করা উচিত নয়। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে সম্পৃক্ত করতে না পারলে কখনো দেশ আগাবে না। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের শিক্ষা ও কর্মসংস্থান নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে তথা তাদের ও দেশের উন্নয়ন সম্ভব। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অবস্থান ও অবস্থান বিবেচনাপূর্বক তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহজ ও নিরাপদ চলাচলের সুযোগ সৃষ্টি করার পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা প্রয়োজন। অনেকে প্রতিবন্ধীদের পরিবার ও সমাজের বোঝা বলে মনে করেন। মনে রাখতে হবে যে, প্রতিবন্ধীরা সমাজের বোঝা নয়। তাদের যথাযথ শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দিয়ে যোগ্য করে গড়ে তোলতে পারলে তারাও পরিবার ও সমাজের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারবে। তারা যদি সংগঠিত হয়ে তাদের মেধাকে কাজে লাগাতে পারে তাহলে তারা নিজেরা নিজেদের পায়ে দাঁড়াতে পারবে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিকে উত্তরাধিকার সম্পত্তির অধিকার দান, গণমাধ্যমে প্রতিবন্ধী সম্পর্কে নেতিবাচক শব্দ ব্যবহার না করা, প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকলে প্রতিবন্ধী সাধারণ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুয়োগ দেয়া, গণপরিবহনে মোট আসনের পাঁচ ভাগ আসন প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত করাসহ প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সমান সুযোগ ও অধিকার নিয়ে জাতীয় সংসদে ‘প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার ও সুরক্ষা বিল-২০১৩’ পাস হয়েছে। এছাড়াও ‘নিউরোডেভেলপমেন্টাল প্রতিবন্ধী সুরক্ষা ট্রাস্ট আইন-২০১৩’, ‘প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত শিক্ষা নীতিমালা-২০০৯’ ও ‘প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্র পরিচালনা নীতিমালা-২০১১’ প্রণয়ন করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট বিজ্ঞজনেরা বলছেন, বিল পাস হলেও প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষার জন্য রাষ্ট্র প্রস্তুত নয়। দেশে সবার জন্য শিক্ষা বাধ্যতামূলক হলেও প্রতিবন্ধীদের শিক্ষার সুযোগ সীমিত। বিলে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যোগ্যতা থাকলে প্রতিবন্ধী শিশু ভর্তি হতে পারবে উল্লেখ থাকলেও সব স্কুলে তারা ভর্তি হতে পারছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, রাষ্ট্র প্রতিবন্ধীদের দায়িত্ব নিতে বদ্ধপরিকর। তবে সর্বক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের অধিকার সুরক্ষা করার জন্য প্রস্তুত হতে রাষ্ট্রের কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সময়সাপেক্ষ বিষয়। সংগঠিত হওয়া ছাড়া অধিকার আদায় সম্ভব নয়। প্রতিটি জনগোষ্ঠী তাদের নিজেদের এবং সমাজের উন্নয়নে সংগঠিত হয়েছে। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রেও ঐক্যবদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়।
দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যাথলেট পিস্টোরিয়াসকে অলিম্পিকের মূলপর্বে খেলার সুযোগ লাভের জন্য আদালতের দ্বারস্থ হতে হয়েছিল প্রতিবন্ধিতার কারণে। আমরা এ জাতীয় বিভাজন আর চাই না। তাই প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের উন্নয়নে এবং তাদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায় থেকে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সহযোগিতা করা প্রয়োজন।
প্রতিবন্ধীদের অবজ্ঞা ও অবহেলার চোখে না দেখে তাদের সমাজের অন্যসব মানুষের মতো দেখতে হবে। তাদের মেধা ও মননকে কাজে লাগাতে হবে। তাদের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি প্রদর্শন করতে হবে; যাতে তারা মানসিকভাবে হীনমন্যতায় না ভোগে। প্রতিবন্ধীদের সম্পর্কে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে হবে এবং এর প্রতিরোধে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে।
[লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক]