চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাথর ছোড়ার ঘটনায় প্রায়ই ট্রেনের চালক, সহকারী চালকসহ যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। এমনকি জানালা বন্ধ রেখেও রেহাই মেলে না, জানালার কাঁচ ভেঙে অনেকে আহত হন।
গত ১৫ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুরে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। চলতি মাসে পাথর ছোড়ার অন্তত তিনটি পৃথক ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এর ফলে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন, অঙ্গহানি ঘটছে অনেকের। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে ভাটিয়ারী এলাকায় চলন্ত ট্রেনে ছোড়া ঢিলে প্রীতি দাশ নামে এক প্রকৌশলী মারা যান।
রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, অনেক সময় শিশু-কিশোররা খেলার ছলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে পাথর ছোড়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে ডাকাতি ও ট্রেনের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ে। কিন্তু এদের কাউকেই সাধারণত শনাক্ত করা যায় না। যাত্রাপথে চলন্ত ট্রেন থামানো হয় না। পরে ঘটনাস্থলে গিয়েও অপরাধের সঙ্গে জড়িত কারও হদিস পাওয়া যায় না। ফলে কারা এই ঢিল ছুড়েছে, তাদের শনাক্ত করা যায় না। কারণ, বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বা রাতের অন্ধকারে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করলেও কার্যকর কোন ফল পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তাছাড়া পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী রয়েছে মৃত্যুদন্ডের বিধানও। কিন্তু এ আইনে কারও শাস্তির কোন নজির নেই। অপরাধীই যদি শনাক্ত করা না যায়, তাহলে আইনের প্রয়োগ করা হবে কীভাবে? অপরাধী ধরে যদি শাস্তি নিশ্চিত করা যেত, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো।
চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে কর্তৃপক্ষকে কৌশলী হতে হবে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় রাতের আঁধারে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসব এলাকা চিহ্নিত করে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে রেল কর্তৃপক্ষকে টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে গত রোববার সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে। কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জনবল বাড়ানো হলে ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে। এ লক্ষ্যে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীতে আরও দেড় হাজার জনবল নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
যেসব স্থানে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে সেসব স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা যেতে পারে। দুর্বৃত্তরা যাতে রাতের আঁধারে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিদ্যুৎ চলে গেছে। তাছাড়া সৌর বিদ্যুতের মতো অনেক বিকল্প আছে। কাজেই কাজগুলো কঠিন হওয়ার কথা নয়।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে অপরাধী শনাক্ত করা সাধ্যাতীত কাজ নয়। অপরাধী শনাক্তকরণে অনেক দেশই ড্রোনপ্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে পারে।
চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া যেকোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে। যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে তো বটেই, রেলওয়ের সম্পদ রক্ষার জন্যও এটা জরুরি। যাত্রী সুরক্ষা ও ট্রেনের সম্পদ রক্ষায় রেল কর্তৃপক্ষ সর্ব্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেটা আমরা দেখতে চাই।
যেসব স্থানে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।
মঙ্গলবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১
চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। পাথর ছোড়ার ঘটনায় প্রায়ই ট্রেনের চালক, সহকারী চালকসহ যাত্রীরা আহত হচ্ছেন। এমনকি জানালা বন্ধ রেখেও রেহাই মেলে না, জানালার কাঁচ ভেঙে অনেকে আহত হন।
গত ১৫ আগস্ট নীলফামারীর সৈয়দপুরে চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনায় পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর একটি চোখ নষ্ট হয়ে গেছে। চলতি মাসে পাথর ছোড়ার অন্তত তিনটি পৃথক ঘটনায় আহত হয়েছেন তিনজন। এ নিয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
ট্রেনে পাথর ছোড়ার ঘটনা প্রায়ই ঘটে। এর ফলে যাত্রীরা আহত হচ্ছেন, অঙ্গহানি ঘটছে অনেকের। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামে ভাটিয়ারী এলাকায় চলন্ত ট্রেনে ছোড়া ঢিলে প্রীতি দাশ নামে এক প্রকৌশলী মারা যান।
রেলওয়ে কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, অনেক সময় শিশু-কিশোররা খেলার ছলে বা ইচ্ছাকৃতভাবে পাথর ছোড়ে। কোন কোন ক্ষেত্রে ডাকাতি ও ট্রেনের ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে দুর্বৃত্তরা চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়ে। কিন্তু এদের কাউকেই সাধারণত শনাক্ত করা যায় না। যাত্রাপথে চলন্ত ট্রেন থামানো হয় না। পরে ঘটনাস্থলে গিয়েও অপরাধের সঙ্গে জড়িত কারও হদিস পাওয়া যায় না। ফলে কারা এই ঢিল ছুড়েছে, তাদের শনাক্ত করা যায় না। কারণ, বেশিরভাগ ঘটনাই ঘটে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে বা রাতের অন্ধকারে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময় তাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করলেও কার্যকর কোন ফল পাওয়া যায়নি।
রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী, ট্রেনে পাথর ছোড়া হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদন্ডসহ ১০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তাছাড়া পাথর নিক্ষেপে কারও মৃত্যু হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী রয়েছে মৃত্যুদন্ডের বিধানও। কিন্তু এ আইনে কারও শাস্তির কোন নজির নেই। অপরাধীই যদি শনাক্ত করা না যায়, তাহলে আইনের প্রয়োগ করা হবে কীভাবে? অপরাধী ধরে যদি শাস্তি নিশ্চিত করা যেত, তাহলে পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো।
চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে কর্তৃপক্ষকে কৌশলী হতে হবে। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় রাতের আঁধারে চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এসব এলাকা চিহ্নিত করে নজরদারির আওতায় আনতে হবে। প্রয়োজনে রেল কর্তৃপক্ষকে টহলের ব্যবস্থা করতে হবে। বিষয়টি নিয়ে গত রোববার সংসদীয় কমিটিতেও আলোচনা হয়েছে। কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, জনবল বাড়ানো হলে ট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে পদক্ষেপ নিতে সুবিধা হবে। এ লক্ষ্যে রেলওয়ের নিরাপত্তা বাহিনীতে আরও দেড় হাজার জনবল নিয়োগের প্রস্তাব করা হয়েছে।
যেসব স্থানে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে সেসব স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা যেতে পারে। দুর্বৃত্তরা যাতে রাতের আঁধারে সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করতে হবে। এখন প্রত্যন্ত অঞ্চলেও বিদ্যুৎ চলে গেছে। তাছাড়া সৌর বিদ্যুতের মতো অনেক বিকল্প আছে। কাজেই কাজগুলো কঠিন হওয়ার কথা নয়।
প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান আজ যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে অপরাধী শনাক্ত করা সাধ্যাতীত কাজ নয়। অপরাধী শনাক্তকরণে অনেক দেশই ড্রোনপ্রযুক্তি কাজে লাগাচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের মতো সক্ষমতা বাংলাদেশের আছে। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বিবেচনা করে দেখতে পারে।
চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোড়া যেকোন মূল্যে বন্ধ করতে হবে। যাত্রী নিরাপত্তার স্বার্থে তো বটেই, রেলওয়ের সম্পদ রক্ষার জন্যও এটা জরুরি। যাত্রী সুরক্ষা ও ট্রেনের সম্পদ রক্ষায় রেল কর্তৃপক্ষ সর্ব্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে সেটা আমরা দেখতে চাই।
যেসব স্থানে পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটে সেখানকার বাসিন্দাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এজন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে হবে।