কেবলমাত্র দলিত সম্প্রদায় হওয়ার কারণে হোটেলে বসে খাবার খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক মানুষ। আবার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় কারও কারও জায়গা মেলে না সরকারি ত্রাণ নেয়ার লাইনে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়, সমাজের নানা স্তরের মানুষের কাছ থেকে শুনতে হয় কটূ কথা।
সমাজে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ যেমন অনেক লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, তেমনি রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘সরকারি সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা : জবাবদিহি ব্যবস্থার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনই চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নানাবিধ সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কেন? সেটা একটা প্রশ্ন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প আছে কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের পরিবর্তন হচ্ছে না। এ থেকে বোঝা যায়, তারা এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না। সরকার ত্রাণ দিচ্ছে, মানুষ লাইন ধরে তা নিচ্ছেও। কিন্তু সে ত্রাণের লাইনে যদি তৃতীয় লিঙ্গের কেউ দাঁড়াতে না পারে, তাহলে সে উপকৃত হবে কীভাবে? রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সুফল ভোগ করবে কীভাবে?
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া এমন অনেক কার্যক্রম রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে তারা জানেই না। তারা যদি সেবা সম্পর্কে না-ই জানে তাহলে সেবা নেবে কীভাবে? কাজের সুফল যদি পৌঁছানো না যায় তাহলে উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন কী। যাদের জন্য কোন প্রকল্প নেয়া হয় তাদের তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির কথাও জানা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, তথ্য-উপাত্ত ছাড়া প্রকল্প নেয়া হয় কীভাবে। এরকম গাছাড়াভাবে কাজ করলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করা যাবে না।
জাতিসংঘ ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গ্রহণ করে। বলা হচ্ছে, কাউকে পেছনে না ফেলে এসডিজি অর্জন করতে হবে। আমরা চাই, ‘কাউকে পেছনে না ফেলার’ লক্ষ্য অর্জিত হোক। দেশ উন্নত থেকে আরও উন্নত হোক। আর সে উন্নয়নের অংশীদার হোক দেশের প্রতিটি মানুষ। সরকারকে শুধু ত্রাণ দিলেই হবে না। সেই লাইনে যেন ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে সব মানুষ দাঁড়াতে পারে এবং সরকারি সহায়তা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভিন্ন সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিতে বাধা দূর করা এবং বৈষম্যহীন ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করতে বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত প্রণয়নসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সব প্রান্তিক গোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও নিয়মিত হালনাগাদ করা। সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ কাঠামো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী-বান্ধব করার জন্য সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী থেকে মৌখিক অভিযোগ গ্রহণ ও তা লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করা ও সমাধানে নিয়মিত ফলোআপ করা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের গণশুনানিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়ে আলাদা সময় বরাদ্দ এবং সমস্যা প্রকাশে উৎসাহিত করা ইত্যাদি। নীতিনির্ধারকরা সুপারিশগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে পারে।
শনিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২১
কেবলমাত্র দলিত সম্প্রদায় হওয়ার কারণে হোটেলে বসে খাবার খাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে অনেক মানুষ। আবার তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় কারও কারও জায়গা মেলে না সরকারি ত্রাণ নেয়ার লাইনে। প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষকে প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে হয়, সমাজের নানা স্তরের মানুষের কাছ থেকে শুনতে হয় কটূ কথা।
সমাজে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মানুষ যেমন অনেক লাঞ্ছনা-বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, তেমনি রাষ্ট্রীয় অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ‘সরকারি সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অভিগম্যতা : জবাবদিহি ব্যবস্থার বিশ্লেষণ’ শীর্ষক এক গবেষণা প্রতিবেদনে এমনই চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) গত বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেখানে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর নানাবিধ সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়। এ নিয়ে গতকাল শুক্রবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নে সরকার অনেক পদক্ষেপ নিয়েছে। তা সত্ত্বেও তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে কেন? সেটা একটা প্রশ্ন। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প আছে কিন্তু প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমানের পরিবর্তন হচ্ছে না। এ থেকে বোঝা যায়, তারা এসব প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না। সরকার ত্রাণ দিচ্ছে, মানুষ লাইন ধরে তা নিচ্ছেও। কিন্তু সে ত্রাণের লাইনে যদি তৃতীয় লিঙ্গের কেউ দাঁড়াতে না পারে, তাহলে সে উপকৃত হবে কীভাবে? রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের সুফল ভোগ করবে কীভাবে?
প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য নেয়া এমন অনেক কার্যক্রম রয়েছে যেগুলো সম্পর্কে তারা জানেই না। তারা যদি সেবা সম্পর্কে না-ই জানে তাহলে সেবা নেবে কীভাবে? কাজের সুফল যদি পৌঁছানো না যায় তাহলে উদ্যোগ নেয়ার প্রয়োজন কী। যাদের জন্য কোন প্রকল্প নেয়া হয় তাদের তথ্য-উপাত্তের ঘাটতির কথাও জানা যায়। প্রশ্ন হচ্ছে, তথ্য-উপাত্ত ছাড়া প্রকল্প নেয়া হয় কীভাবে। এরকম গাছাড়াভাবে কাজ করলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন করা যাবে না।
জাতিসংঘ ২০১৫ সালে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) গ্রহণ করে। বলা হচ্ছে, কাউকে পেছনে না ফেলে এসডিজি অর্জন করতে হবে। আমরা চাই, ‘কাউকে পেছনে না ফেলার’ লক্ষ্য অর্জিত হোক। দেশ উন্নত থেকে আরও উন্নত হোক। আর সে উন্নয়নের অংশীদার হোক দেশের প্রতিটি মানুষ। সরকারকে শুধু ত্রাণ দিলেই হবে না। সেই লাইনে যেন ধর্ম-বর্ণ-শ্রেণী নির্বিশেষে সব মানুষ দাঁড়াতে পারে এবং সরকারি সহায়তা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
বিভিন্ন সেবায় প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তিতে বাধা দূর করা এবং বৈষম্যহীন ও জবাবদিহিমূলক সেবা নিশ্চিত করতে বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত প্রণয়নসহ ১০টি সুপারিশ করা হয়েছে টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদনে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, সব প্রান্তিক গোষ্ঠীর ভৌগোলিক অবস্থান ও জনসংখ্যা সম্পর্কে সঠিক তথ্য সংগ্রহ ও নিয়মিত হালনাগাদ করা। সেবা সংক্রান্ত অভিযোগ কাঠামো প্রান্তিক জনগোষ্ঠী-বান্ধব করার জন্য সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী থেকে মৌখিক অভিযোগ গ্রহণ ও তা লিপিবদ্ধ করার ব্যবস্থা করা ও সমাধানে নিয়মিত ফলোআপ করা, সরকারি প্রতিষ্ঠানের গণশুনানিতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর সমস্যা নিয়ে আলাদা সময় বরাদ্দ এবং সমস্যা প্রকাশে উৎসাহিত করা ইত্যাদি। নীতিনির্ধারকরা সুপারিশগুলো ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করতে পারে।