কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উচিতারবিল এলাকায় রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এলাকাটি হাতির অভয়ারণ্য। এ অভয়ারণ্যের উঁচু একটি পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ইটভাটা। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও কক্সবাজারে ঘটেছে ঠিক উল্টো। একটি দুটি নয়, এভাবে ত্রিশটিরও বেশি ইটভাটা রয়েছে সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের পাদদেশে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় শাতাধিত ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে অর্ধশতাধিকের কোন বৈধ কাগজপত্র কিংবা অনুমোদন নেই। অথচ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এসব ভাটায় চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এ নিয়ে গতকাল বুধবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কম করে হলেও পাঁচটি নিয়ম ভঙ্গ করেছে কক্সবাজারের ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইটভাটা খোলা হয়েছে। ভাটা খোলার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়, সেটাও অনেকের নেই। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা খোলার শাস্তি অনধিক এক বছরের কারাদ- বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-। ইটভাটা খোলা বা চালু রাখার আরেকটা আবশ্যিক শর্ত হলো এর প্রযুক্তি হতে হবে পরিবেশবান্ধব, থাকতে হবে উন্নত চিমনি; কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নিষিদ্ধ ঘোষিত চিমনিতে কাঠ পুড়িয়েই ইট তৈরি করে চলছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না; সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। কিন্তু কক্সবাজারে আবাসিক এলাকা এমনকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে ইটভাটা। বিভিন্ন এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য ইটভাটা।
যেভাবে একাধিক নিয়ম ভঙ্গ করে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে সেভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতিও করছে একাধিক। ইটভাটায় অবাধেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, দূষণকারী টায়ার। কাঠের জোগান দেওয়ার জন্য অবাধে কাটা হচ্ছে বনের গাছ। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে চারদিকের পরিবেশ। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন জটিল রোগে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ফলজ, বনজ, ঔষধি বৃক্ষ ধ্বংস হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। প্রভাব পড়ছে বনের বিভিন্ন পশু-পাখির ওপর। প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে।
এটি শুধু দেশের একটি জেলার চিত্র। এর মাধ্যমে সারা দেশের চিত্র সহজেই অনুমান করা যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-এসব দেখার যেন কেউ নেই। এসব ইটভাটার অধিকাংশের মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতির ব্যক্তিরা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন আর বন বিভাগের সঙ্গে আঁতাত করে তারা ইটভাটা চালাচ্ছে।
কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাহাড়ের কাছে স্থাপিত ৩১টি ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে, কিন্তু উচ্ছেদ হচ্ছে না। এতে বনাঞ্চল উজাড়, হাতি চলাচলের করিডোর বিলুপ্ত ও প্রাকৃতিক জলাশয় ধ্বংস হচ্ছে। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদে অভিযান চলছে। লোকবল সংকটের কারণে দুর্গম এলাকার ভাটাগুলো নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বন বিভাগ, পরিববেশ অধিদপ্তর বা স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর কোন ভূমিকা না রাখার অভিযোগ পুরোনো। শুধু গণমাধ্যমে কোন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে কিংবা জানতে চাইলে তারা গতানুগতি কিছু উত্তর দিয়ে থাকেন। পূর্বের অভিযানের বা কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। প্রায়ই অভিযান হয়, জরিমানা হয়, বন্ধ হয় ইটভাটা। কিন্তু কয়েক দিন পর আবার যেই সেই, আগের মতো চলতে থাকে ইট পোড়ানো। কার্যকর বা টেকসই কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বিশেষ করে, দ্বিতীয়বার আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।
আমরা বলতে চাই, এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। আয়োজন করে নয়, বরং যখনই যেখানে কোন ঘটনা ঘটে সেখানেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এর সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়বার আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে কর্তৃপক্ষকে তা খতিয়ে দেখতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে।
বৃহস্পতিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২২
কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার উচিতারবিল এলাকায় রয়েছে সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এলাকাটি হাতির অভয়ারণ্য। এ অভয়ারণ্যের উঁচু একটি পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ইটভাটা। পরিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপনের নিয়ম না থাকলেও কক্সবাজারে ঘটেছে ঠিক উল্টো। একটি দুটি নয়, এভাবে ত্রিশটিরও বেশি ইটভাটা রয়েছে সংরক্ষিত বন ও পাহাড়ের পাদদেশে। পরিবেশ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় শাতাধিত ইটভাটা রয়েছে। এসব ইটভাটার মধ্যে অর্ধশতাধিকের কোন বৈধ কাগজপত্র কিংবা অনুমোদন নেই। অথচ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে এসব ভাটায় চলছে ইট পোড়ানোর কাজ। এ নিয়ে গতকাল বুধবার সংবাদ-এ বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
কম করে হলেও পাঁচটি নিয়ম ভঙ্গ করেছে কক্সবাজারের ইটভাটাগুলো। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই ইটভাটা খোলা হয়েছে। ভাটা খোলার জন্য জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হয়, সেটাও অনেকের নেই। ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইনে লাইসেন্স ছাড়া ইটভাটা খোলার শাস্তি অনধিক এক বছরের কারাদ- বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দ-। ইটভাটা খোলা বা চালু রাখার আরেকটা আবশ্যিক শর্ত হলো এর প্রযুক্তি হতে হবে পরিবেশবান্ধব, থাকতে হবে উন্নত চিমনি; কিন্তু পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর নিষিদ্ধ ঘোষিত চিমনিতে কাঠ পুড়িয়েই ইট তৈরি করে চলছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইন অনুযায়ী বসতির এক কিলোমিটারের মধ্যে ইটভাটা করা যাবে না; সংরক্ষিত বনাঞ্চলের সীমারেখা থেকে দুই কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ। কিন্তু কক্সবাজারে আবাসিক এলাকা এমনকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশেই রয়েছে ইটভাটা। বিভিন্ন এলাকায় সংরক্ষিত বনাঞ্চলে রয়েছে অসংখ্য ইটভাটা।
যেভাবে একাধিক নিয়ম ভঙ্গ করে ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে সেভাবে পরিবেশ, প্রতিবেশ ও প্রাণ-প্রকৃতির ক্ষতিও করছে একাধিক। ইটভাটায় অবাধেই পোড়ানো হচ্ছে কাঠ, দূষণকারী টায়ার। কাঠের জোগান দেওয়ার জন্য অবাধে কাটা হচ্ছে বনের গাছ। ইটভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় দূষিত হচ্ছে চারদিকের পরিবেশ। শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যাসহ স্থানীয়রা আক্রান্ত হচ্ছেন বিভিন্ন জটিল রোগে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ফলজ, বনজ, ঔষধি বৃক্ষ ধ্বংস হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। প্রভাব পড়ছে বনের বিভিন্ন পশু-পাখির ওপর। প্রাকৃতিক খাদ্যশৃঙ্খলা বিনষ্ট হচ্ছে।
এটি শুধু দেশের একটি জেলার চিত্র। এর মাধ্যমে সারা দেশের চিত্র সহজেই অনুমান করা যায়। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়-এসব দেখার যেন কেউ নেই। এসব ইটভাটার অধিকাংশের মালিক স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতির ব্যক্তিরা। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন আর বন বিভাগের সঙ্গে আঁতাত করে তারা ইটভাটা চালাচ্ছে।
কক্সবাজার (উত্তর) বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংরক্ষিত বনাঞ্চল ও পাহাড়ের কাছে স্থাপিত ৩১টি ইটভাটা উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে, কিন্তু উচ্ছেদ হচ্ছে না। এতে বনাঞ্চল উজাড়, হাতি চলাচলের করিডোর বিলুপ্ত ও প্রাকৃতিক জলাশয় ধ্বংস হচ্ছে। আর পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, অবৈধ ইটভাটাগুলো উচ্ছেদে অভিযান চলছে। লোকবল সংকটের কারণে দুর্গম এলাকার ভাটাগুলো নিয়মিত তদারকি করা সম্ভব হচ্ছে না।
বন বিভাগ, পরিববেশ অধিদপ্তর বা স্থানীয় প্রশাসন অবৈধ ইটভাটা বন্ধে কার্যকর কোন ভূমিকা না রাখার অভিযোগ পুরোনো। শুধু গণমাধ্যমে কোন প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে কিংবা জানতে চাইলে তারা গতানুগতি কিছু উত্তর দিয়ে থাকেন। পূর্বের অভিযানের বা কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরেন। প্রায়ই অভিযান হয়, জরিমানা হয়, বন্ধ হয় ইটভাটা। কিন্তু কয়েক দিন পর আবার যেই সেই, আগের মতো চলতে থাকে ইট পোড়ানো। কার্যকর বা টেকসই কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। বিশেষ করে, দ্বিতীয়বার আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর কোন পদক্ষেপ নিতে দেখা যায় না।
আমরা বলতে চাই, এসব ইটভাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। আয়োজন করে নয়, বরং যখনই যেখানে কোন ঘটনা ঘটে সেখানেই তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এর সাথে যারা জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। দ্বিতীয়বার আইন ভঙ্গকারীর বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। বনবিভাগ ও পরিবেশ অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ পাওয়া গেছে কর্তৃপক্ষকে তা খতিয়ে দেখতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে।