alt

উপ-সম্পাদকীয়

শিশুরও হতে পারে ক্যান্সার, প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

মূলত জেনেটিক কারণেই শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও শিশুদের ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বাড়ছে দিনে দিনে। শিশুদেরও ক্যান্সার হতে পারে, এই ধারণাটাই অনেক অভিভাবকের জন্য নির্মম সত্য হিসেবে প্রকাশ পায়। মায়ের পেটে ভ্রƒণ অবস্থায় শিশুরা ক্যান্সার হবে এ ধরনের জিন নিয়ে তৈরি হয়। পরবর্তীকালে সেটা প্রকট আকার ধারণ করে।

১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস ২০২৪। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।

ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেমন বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর অন্তত চার লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। নিম্নআয়ের দেশগুলোয় আক্রান্ত শিশুদের ৯০ শতাংশই চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।

সংস্থাটির তথ্যমতে, বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু রয়েছে। ২০০৫ সালেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সালে এ হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে। ‘প্রতি বছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগির মাংস, কচু শাক, কলা, মিষ্টি আলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদামের মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।’

শিশুর ক্যান্সারের লক্ষণ :

নাক থেকে রক্ত পড়া : শিশুর নাকের সম্মুখভাগে সুক্ষ্ম রক্তনালি থেকে রক্তপাত হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি কমে যায়। কিন্তু যদি না কমে, বরং ঘন ঘন রক্তপাত হতে থাকে, তাহলে সচেতন হতে হবে।

ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া : শিশুর শরীরের কোথাও কেটে গেলে খেয়াল রাখুন, ক্ষত সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে কিনা। সময় বেশি লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া : ব্যায়াম বা ওজন হ্রাসের কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া যদি শিশুর ওজন কমে যেতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া : চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া। এটি চোখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ।

শ্বাসকষ্ট : শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা ছোট ছোট শ্বাস নেয়া শিশুর ক্যান্সারের ঝুঁকির অন্যতম উপসর্গ।

ঘন ঘন জ্বর : অকারণে ঘন ঘন জ্বর শিশুর লিউকেমিয়ার লক্ষণ হতে পারে।

চাকা বা মাংসপি- : পেটের যে কোনো পাশে চাকা বা টিউমার অনুভূত হলে কিডনির ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।

মাথাব্যথা : শিশুর অস্বাভাবিক মাথাব্যথা মস্তিষ্কের ক্যান্সারের লক্ষণ।

অচেতন হওয়া : তীব্র জ্বর বা যথাযথ কারণ ছাড়া শিশু যদি হুটহাট অচেতন হতে থাকে, তাহলে তা ব্রেন টিউমারের উপসর্গ হতে পারে।

হাড়ে ব্যথা : কোনো আঘাত ছাড়াই হাড়ে তীব্র ব্যথা, খুঁড়িয়ে হাঁটা প্রভৃতি লক্ষণগুলো হাড়ের ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

দুর্বলতা : অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা শিশুদের লিম্ফোমা নামক ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ।

শিশুর ক্যান্সারের কারণঃ-

শিশুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বংশগত কারণকেই প্রধান মনে করা হয়। এছাড়া নিম্নোক্ত কারণগুলোও রয়েছেÑ

বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ

অভিভাবকের ধূমপানের অভ্যাস

গর্ভকালে মায়ের ভুল খাদ্যাভ্যাস

শিশুর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভাইরাসও শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

শিশুরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ

জন্ম থেকে প্রথম পাঁচ বছর : নিউরোব্লাস্টোমা, উইল্মস টিউমার, রেটিনেব্লাস্টোমা, লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, গ্লায়োমা এবং অন্যান্য মস্তিষ্কর টিউমার।

পাঁচ থেকে দশ বছর : লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, গ্লায়োমা, সারকোমা (হাড়, মাংসের), জনন কোষের ক্যান্সার।

দশ বছরের ঊর্ধ্বে : লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, হজকিন্স ডিজিজ, অষ্টিওসারকোমা, ইউইং সারকোমা, অন্যান্য টিস্যু সারকোমা, জনন কোষের ক্যান্সার। আর চোখের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, স্নায়ু ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ও ব্রেইন ক্যান্সার। এছাড়া ব্লাড ক্যান্সার ও হাড়ের ক্যান্সারও হতে পারে।

শিশুদের চোখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হলো চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া, যা রাতে বিড়ালের চোখের মতো দেখা যায়।

কিডনিতে ক্যান্সার হলে পেটের যে কোনো পাশে একটি চাকা বা টিউমার অনুভূত হয়। এটি বেশি বড় হলে পেট ফুলে যায়।

স্নায়ু ক্যান্সার হলে স্থানটি ফুলে যাবে ও ব্যথা অনুভূত হবে। এই ক্যান্সার ঘাড়ে, প্যারান্যাজাল সাইনাসে বা পেটে হয়ে থাকে।

লিভার ক্যান্সার হলে পেটের ডানদিকে পাঁজরের নিচে ফুলে যাবে ও ব্যথা হবে।

ব্রেইন ক্যান্সার হলে মাথাব্যথা, হাঁটাচলায় অসুবিধা, বমি হওয়া, দুর্বল হয়ে পড়া, জ্বর হওয়া, বিনা কারণে রক্ত পড়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

হাড়ের ক্যান্সার হলে শরীরের নির্দিষ্ট স্থানটি ফুলে যাবে ও ব্যথা হবে। আর ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শিশু লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। লিউকেমিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রায়ই জ্বর, ক্লান্তি, ম্লানতা, ত্বকে র‌্যাস, ঘাড়ের গ্রন্থিগুলোর ফোলাভাবসহ ত্বকের ফুসকুড়ি ইত্যাদি। কারো কারো কোন লক্ষণ নাও থাকতে পারে। পরে রক্ত পরীক্ষায় লিউকেমিয়া ধরা পড়ে। লিউকেমিয়া সন্দেহ হলে তবে তা দ্রুত পরীক্ষা করা দরকার। যা লিউকেমিয়া নির্ধারণের পাশাপাশি লিউকিমিয়ার ধরনের বিষয়টিও নিশ্চিত করবে। শিশুদের মধ্যে সাধারণত লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া এবং মাইলয়েড লিউকেমিয়া হয়। এসব রোগ সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের জন্য বিস্তারিত বিবরণসহ বংশগত কোনো কারণ আছে কিনা, তা জানতে হবে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে তাহলে ৮০ শতাংশ শিশুর ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।

বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশু ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। তবে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়লেই শিশু ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে, সঠিক চিকিৎসা পেলে ক্যান্সার থেকে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের মূল কারণ জিনগত পরিবর্তন। এছাড়া ভেজাল খাদ্য, খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার, বায়ুদূষণ ও বিকিরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে শিশুদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। আর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মাত্র ৫ শতাংশ বংশগত সূত্রে জিন মারফত আক্রান্ত হয়। বাকি প্রায় ৯৫ শতাংশ কিন্তু জন্ম পরবর্তীকালে পারিপার্শ্বিক কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিভিন্ন ক্ষতিকরণ রাসায়নিক নানা খাবার ও বাতাসবাহিত ভাইরাস ক্যান্সারের পথ প্রশস্ত করে। জিনগত ছাড়াও প্রতিদিন শিশুরা যে খাবার খাচ্ছে বা শ্বাস নিচ্ছে তা থেকেও শরীরে ক্যান্সারের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। মেয়েদের গর্ভাবস্থায় লাইফ স্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসের কারণেও শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেককেই প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে

বন্যার বিভিন্ন ঝুঁকি ও করণীয়

প্রশ্নে জর্জরিত মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব

রম্যগদ্য : এ-পাস, না ও-পাস?

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি, উত্তরণের উপায়

গৃহকর্মী নির্যাতনের অবসান হোক

মাঙ্কিপক্স : সতর্কতা ও সচেতনতা

সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

বাদী কিংবা বিবাদীর মৃত্যুতে আইনি ফলাফল কী?

নদ-নদীর সংজ্ঞার্থ ও সংখ্যা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

রাষ্ট্র সংস্কার ও পরিবেশ ন্যায়বিচার

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য কি দূর হবে

আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তহীন কাজ

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

ছবি

ইসমাইল হানিয়ের করুণ মৃত্যু

ক্যাপিটল : মার্কিনিদের গণতন্ত্রের প্রতীক

হাওর উন্নয়নে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

শিশুরও হতে পারে ক্যান্সার, প্রতিরোধে প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

মূলত জেনেটিক কারণেই শিশুরা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর সারা বিশ্বের মতো আমাদের দেশেও শিশুদের ক্যান্সার রোগের প্রকোপ বাড়ছে দিনে দিনে। শিশুদেরও ক্যান্সার হতে পারে, এই ধারণাটাই অনেক অভিভাবকের জন্য নির্মম সত্য হিসেবে প্রকাশ পায়। মায়ের পেটে ভ্রƒণ অবস্থায় শিশুরা ক্যান্সার হবে এ ধরনের জিন নিয়ে তৈরি হয়। পরবর্তীকালে সেটা প্রকট আকার ধারণ করে।

১৫ ফেব্রুয়ারি ছিল বিশ্ব শিশু ক্যান্সার দিবস ২০২৪। বিশেষজ্ঞদের দাবি, বেশির ভাগ শিশুর ক্যান্সার নিরাময়যোগ্য। শনাক্ত করা গেলে ও উন্নত চিকিৎসা পেলে ৭০ শতাংশ রোগী সেরে ওঠেন। কিন্তু মাত্র ২০ শতাংশ রোগী উন্নত চিকিৎসার সুযোগ পান।

ওয়ার্ল্ড চাইল্ড ক্যান্সারের হিসাব অনুযায়ী, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা যেমন বলছে, বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর অন্তত চার লাখ শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। নিম্নআয়ের দেশগুলোয় আক্রান্ত শিশুদের ৯০ শতাংশই চিকিৎসার অভাবে মারা যায়।

সংস্থাটির তথ্যমতে, বর্তমানে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ১৩ থেকে ১৫ লাখ ক্যান্সার আক্রান্ত শিশু রয়েছে। ২০০৫ সালেই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে শিশুমৃত্যুর হার ছিল ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। আর সচেতন না হলে ২০৩০ সালে এ হার দাঁড়াবে ১৩ শতাংশে। ‘প্রতি বছরই ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা বাড়ছে। তাই শিশুদের সঠিক চিকিৎসার পাশাপাশি পুষ্টিকর খাবার যেমন পালং শাক, ব্রুকলি, ডিমের কুসুম, মটরশুটি, কলিজা, মুরগির মাংস, কচু শাক, কলা, মিষ্টি আলু, কমলা, শালগম, দুধ, বাঁধাকপি, বরবটি, কাঠবাদামের মতো ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম এবং আয়রনসমৃদ্ধ খাবার খাওয়াতে হবে।’

শিশুর ক্যান্সারের লক্ষণ :

নাক থেকে রক্ত পড়া : শিশুর নাকের সম্মুখভাগে সুক্ষ্ম রক্তনালি থেকে রক্তপাত হতে পারে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি কমে যায়। কিন্তু যদি না কমে, বরং ঘন ঘন রক্তপাত হতে থাকে, তাহলে সচেতন হতে হবে।

ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া : শিশুর শরীরের কোথাও কেটে গেলে খেয়াল রাখুন, ক্ষত সারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় লাগছে কিনা। সময় বেশি লাগলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

অস্বাভাবিকভাবে ওজন কমে যাওয়া : ব্যায়াম বা ওজন হ্রাসের কোনো যৌক্তিক কারণ ছাড়া যদি শিশুর ওজন কমে যেতে থাকে, তাহলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।

চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া : চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া। এটি চোখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ।

শ্বাসকষ্ট : শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া কিংবা ছোট ছোট শ্বাস নেয়া শিশুর ক্যান্সারের ঝুঁকির অন্যতম উপসর্গ।

ঘন ঘন জ্বর : অকারণে ঘন ঘন জ্বর শিশুর লিউকেমিয়ার লক্ষণ হতে পারে।

চাকা বা মাংসপি- : পেটের যে কোনো পাশে চাকা বা টিউমার অনুভূত হলে কিডনির ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে।

মাথাব্যথা : শিশুর অস্বাভাবিক মাথাব্যথা মস্তিষ্কের ক্যান্সারের লক্ষণ।

অচেতন হওয়া : তীব্র জ্বর বা যথাযথ কারণ ছাড়া শিশু যদি হুটহাট অচেতন হতে থাকে, তাহলে তা ব্রেন টিউমারের উপসর্গ হতে পারে।

হাড়ে ব্যথা : কোনো আঘাত ছাড়াই হাড়ে তীব্র ব্যথা, খুঁড়িয়ে হাঁটা প্রভৃতি লক্ষণগুলো হাড়ের ক্যান্সারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

দুর্বলতা : অতিরিক্ত শারীরিক দুর্বলতা শিশুদের লিম্ফোমা নামক ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণ।

শিশুর ক্যান্সারের কারণঃ-

শিশুর ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে বংশগত কারণকেই প্রধান মনে করা হয়। এছাড়া নিম্নোক্ত কারণগুলোও রয়েছেÑ

বিরূপ প্রাকৃতিক পরিবেশ

অভিভাবকের ধূমপানের অভ্যাস

গর্ভকালে মায়ের ভুল খাদ্যাভ্যাস

শিশুর অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস

হেপাটাইটিস বি, হিউম্যান হার্পিস এবং এইচআইভি ভাইরাসও শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায়।

শিশুরা সাধারণত যে ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলোÑ

জন্ম থেকে প্রথম পাঁচ বছর : নিউরোব্লাস্টোমা, উইল্মস টিউমার, রেটিনেব্লাস্টোমা, লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, গ্লায়োমা এবং অন্যান্য মস্তিষ্কর টিউমার।

পাঁচ থেকে দশ বছর : লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, গ্লায়োমা, সারকোমা (হাড়, মাংসের), জনন কোষের ক্যান্সার।

দশ বছরের ঊর্ধ্বে : লিউকেমিয়া, নন-হজকিন্স লিম্ফোমা, হজকিন্স ডিজিজ, অষ্টিওসারকোমা, ইউইং সারকোমা, অন্যান্য টিস্যু সারকোমা, জনন কোষের ক্যান্সার। আর চোখের ক্যান্সার, কিডনি ক্যান্সার, স্নায়ু ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ও ব্রেইন ক্যান্সার। এছাড়া ব্লাড ক্যান্সার ও হাড়ের ক্যান্সারও হতে পারে।

শিশুদের চোখের ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ হলো চোখের মণি সাদা হয়ে যাওয়া, যা রাতে বিড়ালের চোখের মতো দেখা যায়।

কিডনিতে ক্যান্সার হলে পেটের যে কোনো পাশে একটি চাকা বা টিউমার অনুভূত হয়। এটি বেশি বড় হলে পেট ফুলে যায়।

স্নায়ু ক্যান্সার হলে স্থানটি ফুলে যাবে ও ব্যথা অনুভূত হবে। এই ক্যান্সার ঘাড়ে, প্যারান্যাজাল সাইনাসে বা পেটে হয়ে থাকে।

লিভার ক্যান্সার হলে পেটের ডানদিকে পাঁজরের নিচে ফুলে যাবে ও ব্যথা হবে।

ব্রেইন ক্যান্সার হলে মাথাব্যথা, হাঁটাচলায় অসুবিধা, বমি হওয়া, দুর্বল হয়ে পড়া, জ্বর হওয়া, বিনা কারণে রক্ত পড়াসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দিতে পারে।

হাড়ের ক্যান্সার হলে শরীরের নির্দিষ্ট স্থানটি ফুলে যাবে ও ব্যথা হবে। আর ক্যান্সারে আক্রান্ত প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ শিশু লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। লিউকেমিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রায়ই জ্বর, ক্লান্তি, ম্লানতা, ত্বকে র‌্যাস, ঘাড়ের গ্রন্থিগুলোর ফোলাভাবসহ ত্বকের ফুসকুড়ি ইত্যাদি। কারো কারো কোন লক্ষণ নাও থাকতে পারে। পরে রক্ত পরীক্ষায় লিউকেমিয়া ধরা পড়ে। লিউকেমিয়া সন্দেহ হলে তবে তা দ্রুত পরীক্ষা করা দরকার। যা লিউকেমিয়া নির্ধারণের পাশাপাশি লিউকিমিয়ার ধরনের বিষয়টিও নিশ্চিত করবে। শিশুদের মধ্যে সাধারণত লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া এবং মাইলয়েড লিউকেমিয়া হয়। এসব রোগ সাধারণত ছয় মাস বয়স থেকে ১৫ বছরের মধ্যে হয়ে থাকে। রোগ নির্ণয়ের জন্য বিস্তারিত বিবরণসহ বংশগত কোনো কারণ আছে কিনা, তা জানতে হবে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে তাহলে ৮০ শতাংশ শিশুর ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব।

বড়দের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে শিশু ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। তবে জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা বাড়লেই শিশু ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে, সঠিক চিকিৎসা পেলে ক্যান্সার থেকে রোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ক্যান্সারের মূল কারণ জিনগত পরিবর্তন। এছাড়া ভেজাল খাদ্য, খাদ্যে বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার, বায়ুদূষণ ও বিকিরণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে শিশুদের ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ছে। আর ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুদের মাত্র ৫ শতাংশ বংশগত সূত্রে জিন মারফত আক্রান্ত হয়। বাকি প্রায় ৯৫ শতাংশ কিন্তু জন্ম পরবর্তীকালে পারিপার্শ্বিক কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে।

বিভিন্ন ক্ষতিকরণ রাসায়নিক নানা খাবার ও বাতাসবাহিত ভাইরাস ক্যান্সারের পথ প্রশস্ত করে। জিনগত ছাড়াও প্রতিদিন শিশুরা যে খাবার খাচ্ছে বা শ্বাস নিচ্ছে তা থেকেও শরীরে ক্যান্সারের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে। মেয়েদের গর্ভাবস্থায় লাইফ স্টাইল ও খাদ্যাভ্যাসের কারণেও শিশু ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়। আর ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণে প্রত্যেককেই প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতি গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

back to top