alt

উপ-সম্পাদকীয়

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

: সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের যে কয়েকটি জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আছে তাদের মধ্যে পাবলিক সার্ভিস কমিশন অন্যতম। পাবলিক সার্ভিস কমিশন রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগের মতো অতিস্পর্শকাতর বিষয়সহ কর্মকর্তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা মূল্যয়নের মতো যাবতীয় কর্মকা- কমিশন সম্পন্ন করে থাকে। এছাড়া পাবলিক সার্ভিস কমিশন বিভিন্ন পরামর্শ যেমন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, বিভাগীয় মামলায় গুরুদ- অন্য কোন শাস্তি, কোন কর্মকর্তার পুরস্কার, বৈদেশিক নিয়োগ এবং বিভাগীয় মামলার ট্রাইব্যুনালে পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করে থাকে। সর্বোপরি পিএসসি বিসিএস পরীক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাসমূহ বিভিন্ন স্তরে পরিচালনা করে থাকে। এই পরীক্ষাগুলোতে কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ নিয়ামক হচ্ছে সতর্কতা। অন্যান্য নিয়ামক হিসেবে স্বচ্ছতা, জাবাবদিহিতা এবং নৈতিকতার বিষয়গুলোকে উল্লেখ করা যায়।

এই পরীক্ষার কোন নিয়োগ কর্মকা-ে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কোন প্রকার অনৈতিকতার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে অথবা তাদের প্রশ্রয় দেয়া হয় তা হলে নিয়োগপ্রাপ্তির পর অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই সব কর্মকর্তা কোনভাবেই রাষ্ট্রের কাজে দায়িত্বশীল হতে পারে না। নিয়োগপ্রাপ্ত ওই সব কর্মকর্তারা সর্বদাই অনিয়মকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অন্যায় ও বেআইনি কাজে তার সহকর্মী অধীনস্তদের উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এভাবেই সব অবৈধ ও অনৈতিকতার জালের বিস্তার লাভ ঘটতে থাকে।

সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর অনৈতিকতা ও অবৈধকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাসহ অর্থের আদান-প্রদান বিষয়ে পিএসসির কর্মকর্তা কর্মচারী যোগসাজশ আছে বলে খবরে জানা যায়। এহেন অন্যায় ও গর্হিত কাজের সঙ্গে কিছু বহিরাগত মিলে একটি সিন্ডিকেট চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত আছে মর্মে জানা যায়। এ খবরটি প্রাথমিকভাবে দেশবাসীর গোচরীভূত হওয়ার ফলে তা একটি নিন্দনীয় আলোচনার ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। খবরে প্রকাশ এই সিন্ডিকেটে জড়িত পিএসসির কর্মকর্তা, ড্রাইভার, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক এবং বহিরাগত মিলে মোট ১৭ জনকে সিআইডি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

বর্তমানে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া পাবলিক সার্ভিস কমিশন মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বলে জানা যায়। পাবলিক সার্ভিস কমিশনও বিষয়টি নিয়ে বসে নেই। তারাও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে প্রকৃত চিত্র অবহিত হতে চেষ্টা করবে মর্মে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন অনিয়ম বা অভিযোগের কথা যখন জনসমক্ষে চলে আসে, জনসাধারণকে বিভিন্ন স্টাইলে আশা ও আশ্বাসের বানী শুনিয়ে ঘটনার ধামাচাপা দেয়া হয়েছে এমনও বহু নজির আছে। তারপর অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসময় গড়াতে গড়াতে জনগণের মন থেকে যখন তা মুছে যায় তখন দায়সারাভাবে একটা রিপোর্ট ফাইলবন্দি করা হয়। রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে হয়তোবা প্রমাণিত অপ্রমাণিত সাপেক্ষে পরবর্র্তী কার্যক্রম গৃহিত হয়ে থাকে। তবে আমাদের সমাজে এহেন গর্হিত কাজের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়েছে এমন নজির খুব কমই আছে। আইনের ফাঁকে অবৈধ আদান-প্রদান থাকা সত্ত্বেও নি¤œমানের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে নিষ্কৃতি প্রদান করা হয়েছে এমন নজিরের অভাব নেই।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত অর্থাৎ চেয়ারম্যান লটারি করে প্রশ্নপত্র বিতরণ করে একটি ডিফেন্সিভ পন্থার কথা উল্লেখ করেছেন এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে এমনটাতে তিনি একমত নন। এক্ষেত্রে তিনি সব প্রশ্ন এবং সব পরীক্ষায় তিনি লটারি অনুষ্ঠিত করে থাকেন এটা কিন্তু চেয়ারম্যানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট নয়। এছাড়া বিজি প্রেসে ছাপানোর কাজে যে মেকানিজম আছে সেই মেকানিজম থেকেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। অথবা বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র সরবারহের পর পিএসসির ভল্টে রক্ষণাবেক্ষণঅবধি এই মাঝামাঝি সময়ে কোন ঘটনার অবতারণা হতে পারে।

এছাড়া প্রশ্নকারকদের নিরাপত্তা, প্রশ্নকারকদের প্রশ্নপত্র জমা প্রদান ইত্যাকার সামগ্রিক বিষয়ে স্তরে স্তরে পাবলিক সার্ভিস কমিশন কি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে তা কিন্তু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট নয়। একজন চেয়ারম্যানের জনৈক ড্রাইভার আবিদ আলী কীভাবে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত হলেন এ প্রশ্ন কিন্তু জনগণকে হতচকিত করে দিচ্ছে। একজন ড্রাইভারের চলাফেরা, আচার-আচর বা মতি-গতি পিএসসির চেয়ারম্যান মহোদয় অবগত হওয়ার বিষয়ে কখনো কি চেষ্টা করে থাকেন? তার গাড়ি চালনা দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে তার পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকা-ের ইতিবৃত্তের খবরও চেয়ারম্যান রাখতে পারেন। কিন্তু শুধু একজন ড্রাইভার কেন? পিএসসির মেম্বার থেকে একেবারে সর্ব নি¤œ স্তরের সবার ব্যাপারেই একটি নজরদারি ব্যবস্থা থাকার কথা। একজন চেয়ারম্যান মনিটরিং মেকানিজমে তার অধীনস্ত প্রত্যেকেরই গতিবিধি, তার গাড়ি, বাড়ি, নারী, এমনকি হাঁড়ি এবং অন্য সব শুভ-অশুভ এমনকি আর্থিক বিষয়াদি তার গোচরিভূত থাকা উচিত।

না জানাটা ব্যর্থতা বলেই আমার কাছে তা প্রতিয়মান হয়। না জানার দায় কোন অবস্থাতেই পিএসসিপ্রধান কেন অন্য কোন প্রতিষ্ঠানপ্রধানও এড়াতে পারেন না। আর যদি এড়িয়ে যান তাহলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তিনি অযোগ্য বা অথর্ব বলে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে এটা কোন ভালো নেতার বৈশিষ্টের মধ্যে পড়ে না। কাজেই পিএসসির চেয়ারম্যান লটারি করে ২৫-৩০ মিনিট আগে প্রশ্নের সেট নির্ধারণ করে থাকেন। এ কথা বলে তিনি দুষ্টু গরুকে অন্যের গোয়ালে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বলেই মনে হয়। অথবা যত দোষ নন্দঘোষÑ আমি সাধু। এ রকম সংস্কৃতির ধারক হয়েই আমাদের সামাজের সমাজপতিরা একটি প্রভাব বলয়ের ভেতরে চলে আসেন। যদিও পিএসসির চেয়ারম্যান কোন অনিয়ম বা অন্যায় হলে তিনিও রক্ষা পাবেন নাÑ এটাই জোর দিয়ে বলেছেন। এটাতে তিনি তার নিজেকে সাফাই দিতে চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়। এটার অবশ্য একটা ভালো দিক আছে। নিজের কনফিডেন্স লেভেলকে এ প্রক্রিয়ায় সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

আকস্মিক বন্যা প্রতিরোধ ও প্রস্তুতির কৌশল

পতিতাবৃত্তি কি অপরাধ?

বন্যা-পরবর্তী কৃষকের সুরক্ষা করণীয়

নদী সংস্কার : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

নিজের চরকায় তেল দেবার নাম দেশপ্রেম

রম্যগদ্য : ডাক্তারি যখন আইসিইউতে

ডায়াবেটিস ও মুখের স্বাস্থ্য

বাঙালির ইলিশচর্চা

এসডিজি অর্জনে চ্যালেঞ্জ হতে পারে কুষ্ঠ রোগ

প্রসঙ্গ : পরিসংখ্যানের তথ্য বিকৃতি

বোরো ধান বিষয়ে কিছু সতর্কতা এবং সার ব্যবস্থাপনা

বন্যার জন্য ভারত কতটুকু দায়ী

গ্রাফিতিতে আদিবাসীদের বঞ্চনার চিত্র

স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা

পুলিশের সংস্কার হোক জনগণের কল্যাণে

জলবায়ু পরিবর্তন ও আমাদের মনস্তত্ত্ব

উন্নয়নের সুফল সবার কাছে পৌঁছাতে হবে

বন্যার বিভিন্ন ঝুঁকি ও করণীয়

প্রশ্নে জর্জরিত মানুষ ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আবির্ভাব

রম্যগদ্য : এ-পাস, না ও-পাস?

বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি, উত্তরণের উপায়

গৃহকর্মী নির্যাতনের অবসান হোক

মাঙ্কিপক্স : সতর্কতা ও সচেতনতা

সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে

শিক্ষাক্ষেত্রে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ নিতে হবে

বাদী কিংবা বিবাদীর মৃত্যুতে আইনি ফলাফল কী?

নদ-নদীর সংজ্ঞার্থ ও সংখ্যা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ

রাষ্ট্র সংস্কার ও পরিবেশ ন্যায়বিচার

আন্তঃক্যাডার বৈষম্য কি দূর হবে

আইনের শাসন, গণতন্ত্র ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা

অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তহীন কাজ

নিষ্ঠার সাথে নিজের কাজটুকু করাই দেশপ্রেম

দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে

ছবি

ইসমাইল হানিয়ের করুণ মৃত্যু

ক্যাপিটল : মার্কিনিদের গণতন্ত্রের প্রতীক

হাওর উন্নয়নে চাই সমন্বিত উদ্যোগ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

পিএসসি প্রশ্নফাঁসের দায় এড়াবে কীভাবে

ফোরকান উদ্দিন আহাম্মদ

সোমবার, ১৫ জুলাই ২০২৪

বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্রের যে কয়েকটি জনগুরুত্বসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান আছে তাদের মধ্যে পাবলিক সার্ভিস কমিশন অন্যতম। পাবলিক সার্ভিস কমিশন রাষ্ট্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়োগের মতো অতিস্পর্শকাতর বিষয়সহ কর্মকর্তাদের দক্ষতা, যোগ্যতা মূল্যয়নের মতো যাবতীয় কর্মকা- কমিশন সম্পন্ন করে থাকে। এছাড়া পাবলিক সার্ভিস কমিশন বিভিন্ন পরামর্শ যেমন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ, বিভাগীয় মামলায় গুরুদ- অন্য কোন শাস্তি, কোন কর্মকর্তার পুরস্কার, বৈদেশিক নিয়োগ এবং বিভাগীয় মামলার ট্রাইব্যুনালে পরামর্শকের দায়িত্ব পালন করে থাকে। সর্বোপরি পিএসসি বিসিএস পরীক্ষার মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাসমূহ বিভিন্ন স্তরে পরিচালনা করে থাকে। এই পরীক্ষাগুলোতে কর্তৃপক্ষের সর্বোচ্চ নিয়ামক হচ্ছে সতর্কতা। অন্যান্য নিয়ামক হিসেবে স্বচ্ছতা, জাবাবদিহিতা এবং নৈতিকতার বিষয়গুলোকে উল্লেখ করা যায়।

এই পরীক্ষার কোন নিয়োগ কর্মকা-ে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কোন প্রকার অনৈতিকতার আশ্রয় গ্রহণ করে থাকে অথবা তাদের প্রশ্রয় দেয়া হয় তা হলে নিয়োগপ্রাপ্তির পর অবৈধভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত ওই সব কর্মকর্তা কোনভাবেই রাষ্ট্রের কাজে দায়িত্বশীল হতে পারে না। নিয়োগপ্রাপ্ত ওই সব কর্মকর্তারা সর্বদাই অনিয়মকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। অন্যায় ও বেআইনি কাজে তার সহকর্মী অধীনস্তদের উৎসাহ দিয়ে থাকেন। এভাবেই সব অবৈধ ও অনৈতিকতার জালের বিস্তার লাভ ঘটতে থাকে।

সম্প্রতি প্রশ্নপত্র ফাঁসের মাধ্যমে কিছু কর্মকর্তা কর্মচারীর অনৈতিকতা ও অবৈধকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতাসহ অর্থের আদান-প্রদান বিষয়ে পিএসসির কর্মকর্তা কর্মচারী যোগসাজশ আছে বলে খবরে জানা যায়। এহেন অন্যায় ও গর্হিত কাজের সঙ্গে কিছু বহিরাগত মিলে একটি সিন্ডিকেট চক্র দীর্ঘদিন ধরে প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত আছে মর্মে জানা যায়। এ খবরটি প্রাথমিকভাবে দেশবাসীর গোচরীভূত হওয়ার ফলে তা একটি নিন্দনীয় আলোচনার ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। খবরে প্রকাশ এই সিন্ডিকেটে জড়িত পিএসসির কর্মকর্তা, ড্রাইভার, অফিস সহকারী, অফিস সহায়ক এবং বহিরাগত মিলে মোট ১৭ জনকে সিআইডি পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।

বর্তমানে অনুসন্ধান কার্যক্রম চলমান রয়েছে। এছাড়া পাবলিক সার্ভিস কমিশন মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বলে জানা যায়। পাবলিক সার্ভিস কমিশনও বিষয়টি নিয়ে বসে নেই। তারাও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে এ বিষয়ে প্রকৃত চিত্র অবহিত হতে চেষ্টা করবে মর্মে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করেছে। আমাদের সমাজে বিভিন্ন অনিয়ম বা অভিযোগের কথা যখন জনসমক্ষে চলে আসে, জনসাধারণকে বিভিন্ন স্টাইলে আশা ও আশ্বাসের বানী শুনিয়ে ঘটনার ধামাচাপা দেয়া হয়েছে এমনও বহু নজির আছে। তারপর অনুসন্ধান প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসময় গড়াতে গড়াতে জনগণের মন থেকে যখন তা মুছে যায় তখন দায়সারাভাবে একটা রিপোর্ট ফাইলবন্দি করা হয়। রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে হয়তোবা প্রমাণিত অপ্রমাণিত সাপেক্ষে পরবর্র্তী কার্যক্রম গৃহিত হয়ে থাকে। তবে আমাদের সমাজে এহেন গর্হিত কাজের জন্য দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পেয়েছে এমন নজির খুব কমই আছে। আইনের ফাঁকে অবৈধ আদান-প্রদান থাকা সত্ত্বেও নি¤œমানের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে নিষ্কৃতি প্রদান করা হয়েছে এমন নজিরের অভাব নেই।

পাবলিক সার্ভিস কমিশনের সর্বোচ্চ পদে অধিষ্ঠিত অর্থাৎ চেয়ারম্যান লটারি করে প্রশ্নপত্র বিতরণ করে একটি ডিফেন্সিভ পন্থার কথা উল্লেখ করেছেন এবং এই প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে এমনটাতে তিনি একমত নন। এক্ষেত্রে তিনি সব প্রশ্ন এবং সব পরীক্ষায় তিনি লটারি অনুষ্ঠিত করে থাকেন এটা কিন্তু চেয়ারম্যানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট নয়। এছাড়া বিজি প্রেসে ছাপানোর কাজে যে মেকানিজম আছে সেই মেকানিজম থেকেও প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। অথবা বিজি প্রেস থেকে প্রশ্নপত্র সরবারহের পর পিএসসির ভল্টে রক্ষণাবেক্ষণঅবধি এই মাঝামাঝি সময়ে কোন ঘটনার অবতারণা হতে পারে।

এছাড়া প্রশ্নকারকদের নিরাপত্তা, প্রশ্নকারকদের প্রশ্নপত্র জমা প্রদান ইত্যাকার সামগ্রিক বিষয়ে স্তরে স্তরে পাবলিক সার্ভিস কমিশন কি মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা আছে তা কিন্তু পাবলিক সার্ভিস কমিশনের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট নয়। একজন চেয়ারম্যানের জনৈক ড্রাইভার আবিদ আলী কীভাবে এ চক্রের সঙ্গে জড়িত হলেন এ প্রশ্ন কিন্তু জনগণকে হতচকিত করে দিচ্ছে। একজন ড্রাইভারের চলাফেরা, আচার-আচর বা মতি-গতি পিএসসির চেয়ারম্যান মহোদয় অবগত হওয়ার বিষয়ে কখনো কি চেষ্টা করে থাকেন? তার গাড়ি চালনা দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে তার পারিবারিক ও সামাজিক কর্মকা-ের ইতিবৃত্তের খবরও চেয়ারম্যান রাখতে পারেন। কিন্তু শুধু একজন ড্রাইভার কেন? পিএসসির মেম্বার থেকে একেবারে সর্ব নি¤œ স্তরের সবার ব্যাপারেই একটি নজরদারি ব্যবস্থা থাকার কথা। একজন চেয়ারম্যান মনিটরিং মেকানিজমে তার অধীনস্ত প্রত্যেকেরই গতিবিধি, তার গাড়ি, বাড়ি, নারী, এমনকি হাঁড়ি এবং অন্য সব শুভ-অশুভ এমনকি আর্থিক বিষয়াদি তার গোচরিভূত থাকা উচিত।

না জানাটা ব্যর্থতা বলেই আমার কাছে তা প্রতিয়মান হয়। না জানার দায় কোন অবস্থাতেই পিএসসিপ্রধান কেন অন্য কোন প্রতিষ্ঠানপ্রধানও এড়াতে পারেন না। আর যদি এড়িয়ে যান তাহলে প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় তিনি অযোগ্য বা অথর্ব বলে বিবেচিত হবেন। অন্যদিকে এটা কোন ভালো নেতার বৈশিষ্টের মধ্যে পড়ে না। কাজেই পিএসসির চেয়ারম্যান লটারি করে ২৫-৩০ মিনিট আগে প্রশ্নের সেট নির্ধারণ করে থাকেন। এ কথা বলে তিনি দুষ্টু গরুকে অন্যের গোয়ালে নিয়ে যাওয়ার প্রবণতা বলেই মনে হয়। অথবা যত দোষ নন্দঘোষÑ আমি সাধু। এ রকম সংস্কৃতির ধারক হয়েই আমাদের সামাজের সমাজপতিরা একটি প্রভাব বলয়ের ভেতরে চলে আসেন। যদিও পিএসসির চেয়ারম্যান কোন অনিয়ম বা অন্যায় হলে তিনিও রক্ষা পাবেন নাÑ এটাই জোর দিয়ে বলেছেন। এটাতে তিনি তার নিজেকে সাফাই দিতে চেষ্টা করেছেন বলে মনে হয়। এটার অবশ্য একটা ভালো দিক আছে। নিজের কনফিডেন্স লেভেলকে এ প্রক্রিয়ায় সুন্দরভাবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হয়।

[লেখক : সাবেক উপ-মহাপরিচালক, বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি]

back to top