alt

পাঠকের চিঠি

অর্থনীতিতে প্রান্তিক নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে

: মঙ্গলবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২০

আদিকাল থেকেই নারী কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পৃথিবীতে শস্য উৎপাদনের জন্য নারীর হাত দিয়েই রোপিত হয়েছিল প্রথম বীজ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী আর শতকরা ৮৬ ভাগের বাস গ্রামে। একজন গ্রামীণ নারী প্রতিদিন ঘর গোছানো, রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জ্বালানি সংগ্রহ, পরিবারের সবার দেখাশোনা করার পাশাপাশি কৃষিকাজেও যুক্ত থাকে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ নারীর অবদান গ্রামীণ অর্থনীতিতে ৫৩ শতাংশ যেখানে পুরুষের অবদান মাত্র ৪৭ শতাংশ। যেখানে পরিবারে মজুরিবিহীন কাজে পুরুষ সময় দেয় আড়াই ঘণ্টা আর নারী সেখানে দিয়ে থাকে ৮ ঘণ্টা। যেখানে প্রতিদিন নারী পরিবারের কাজ করে ১২টি যা মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্তর্ভুক্ত হয় না, আর পুরুষ করে গড়ে ৩টিরও কম কাজ। তারপরও নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি নেই।

কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ২০টি কাজের মধ্যে ১৭টি কাজই সম্পাদন করে থাকেন নারী। বলা চলে, কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছেন নারী। কিন্তু বিপুল এ নারী শ্রমিকের কাজ তেমন কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। এখনও গ্রামীণ সমাজে কৃষি ও চাষের কাজকে নারীর প্রাত্যহিক কাজের অংশ বলে বিবেচনা করা হয়। সেখানে মজুরি প্রদানের বিষয়টি অবান্তর। কোন কোন ক্ষেত্রে নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করলেও কৃষি খাতে নারী শ্রমিকের বৈধ পরিচিতি নেই। এছাড়া অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অন্য নারী শ্রমিকের মতোই কৃষি খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকেরা তীব্রভাবে বৈষম্যের শিকার হন। নিয়মহীন নিযুক্তি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, নারীর অধিক আন্তরিকতা, অল্প মজুরি, মজুরি বৈষম্য দুর্ব্যবহার এমনকি ২০১৫ সালে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার অংশ হিসেবে যে ১ কোটি ৩৯ লাখ কৃষক কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল তার একটিও ভাগ্যে জোটেনি নারীকে কৃষকদের।

২০০৫-০৬ সালে শ্রমিক শক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট কৃষি শ্রমিকের ৭৭ শতাংশ নারী। একইভাবে মোট কৃষি শ্রমের ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ বিনামূল্যে নারীশ্রম এবং ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থের বিনিময়ে কেনা হয়। তবে নারীশ্রমকে কেনা হলেও মজুরি বৈষম্য তো লেগেই আছে। আর নারীরা পারিশ্রমিক হিসেবে যেটুকু অর্থ পেয়ে থাকে, সেটুকুও জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। তাছাড়া দেখা যায়, জমির মালিকানায় ৮১ শতাংশই পুরুষ এবং এ ক্ষেত্রে নারীর মালিকানা মাত্র ১৯ শতাংশ। আবার অনেক ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক ভূমিহীনদের যে খাসজমি প্রদান করা হয় তার সম্পূর্ণটাই থাকে স্বামীর নামে তাতে নারীর কোন অধিকার থাকে না। যে বিষয়টি সব থেকে হতাশার ব্যাপার তা হলো, যদিও সীমিত পরিমাণ জমির মালিক নারী, তবুও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি নেই তাদের। ২০১৮ সালের সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিডিপি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারী শ্রমিকের আর্থিক মূল্য আনুমানিক ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, যেটি ওই বছরের জিডিপির প্রায় ৭৮ শতাংশ তবুও অর্থনীতিতে তাদের এ নীরব অবদানটি অস্বীকৃত। কৃষক হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি না দেয়ার অন্যতম কারণ হলো সামাজিক পশ্চাৎপদতা ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাব। এ জায়গাতে আমাদের সংকট রয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয়ভাবে সংজ্ঞায়িত না করাটাও বড় সমস্যা। আর গ্রামীণ নারী যদি কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি না পায় তাহলে একজন কৃষক যে সুযোগ-সুবিধা পায়, সেই অনুযায়ী গ্রামীণ নারী যেমন সেই সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে, এভাবে ভবিষ্যতেও বঞ্চিত হয়েই থাকবে যা আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

সরকারকে জমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থ পাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংকগুলো থেকে যেন সহজেই ঋণ নিতে পারে তার সুব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণগুলো দিয়ে যাতে গ্রামীণ নারীর পাশে দাঁড়াতে পারে সেজন্য ক্ষুদ্রঋণের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা প্রসার করতে হবে। অস্বীকৃত কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। যদিও এখনই আন্তর্জাতিকভাবে জিডিপিতে এ অস্বীকৃত কাজ অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে জিডিপির মূল অ্যাকাউন্টের পাশে স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নারীর অস্বীকৃত কাজের হিসাব করা এবং এটির অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করা। যাতে আমরা বুঝতে পারি যে নারীরা অর্থনীতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখছে।

রিম্পা খাতুন

ছবি

প্লাস্টিক দূষণ প্রতিকার প্রসঙ্গে

কুষ্টিয়ায় শিক্ষক প্রশিক্ষণ মহাবিদ্যালয় চাই

এসআই ও সার্জেন্ট নিয়োগে বয়সসীমা বাড়ানো হোক

ছবি

স্কাউটে আছে আনন্দের জগৎ

সম্মাননা স্মারক কি শুধুই একটি শব্দ

মোবাইল আসক্তি

খেলাপি ঋণ আদায়ে পদক্ষেপ নিন

বই হোক প্রকৃত বন্ধু

ছবি

তীব্র তাপপ্রবাহে সচেতনতা জরুরি

ব্রিজ চাই

প্রসঙ্গ : পরিযায়ী পাখি

ছবি

পরিকল্পিতভাবে গাছ লাগাতে হবে

ছবি

গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুতের লোডশেডিং কমাতে হবে

কেন এত আত্মহত্যা

দুর্নীতি বন্ধ হবে কবে

ছবি

বজ্রপাত থেকে বাঁচতে চাই সচেতনতা

পিতা-মাতার স্থান হোক সন্তানের কাছে, বৃদ্ধাশ্রমে নয়

ছবি

ট্রেনের বিলম্বে যাত্রীদের দুর্ভোগ

অভিনব কৌশলে প্রতারণা

ট্রেনে ডাস্টবিনের ব্যবস্থা করা হোক

ঈদে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে তৎপর হতে হবে

পথশিশুদের পাশে দাঁড়ান

ছবি

অতিরিক্ত ভাড়া আদায় বন্ধ হোক

ছবি

অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে চাই সচেতনতা

ঈদযাত্রা হোক ভোগান্তিমুক্ত

আত্মহত্যা সমাধান নয়

বেকারত্ব দূর করতে ব্যবস্থা নিতে হবে

ছবি

মশার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ নগরবাসী

কোচিং ব্যবসা আর কত?

কর্মক্ষেত্রে নারীর অধিকার

ছবি

সময়সূচি মেনে চলুক ট্রেন

ছবি

উপকূলীয় বন রক্ষা করুন

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী নির্যাতন

রাবিতে মশার উপদ্রব

ছবি

চমেক হাসপাতালে নিরাপত্তা চাই

নারী-পুরুষের বৈষম্য দূর হোক

tab

পাঠকের চিঠি

অর্থনীতিতে প্রান্তিক নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দিতে হবে

মঙ্গলবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২০

আদিকাল থেকেই নারী কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত। পৃথিবীতে শস্য উৎপাদনের জন্য নারীর হাত দিয়েই রোপিত হয়েছিল প্রথম বীজ। দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী আর শতকরা ৮৬ ভাগের বাস গ্রামে। একজন গ্রামীণ নারী প্রতিদিন ঘর গোছানো, রান্না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, জ্বালানি সংগ্রহ, পরিবারের সবার দেখাশোনা করার পাশাপাশি কৃষিকাজেও যুক্ত থাকে। এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রামীণ নারীর অবদান গ্রামীণ অর্থনীতিতে ৫৩ শতাংশ যেখানে পুরুষের অবদান মাত্র ৪৭ শতাংশ। যেখানে পরিবারে মজুরিবিহীন কাজে পুরুষ সময় দেয় আড়াই ঘণ্টা আর নারী সেখানে দিয়ে থাকে ৮ ঘণ্টা। যেখানে প্রতিদিন নারী পরিবারের কাজ করে ১২টি যা মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) অন্তর্ভুক্ত হয় না, আর পুরুষ করে গড়ে ৩টিরও কম কাজ। তারপরও নারীদের কাজের রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন স্বীকৃতি নেই।

কৃষির সঙ্গে সম্পৃক্ত ২০টি কাজের মধ্যে ১৭টি কাজই সম্পাদন করে থাকেন নারী। বলা চলে, কৃষি ও এর উপখাতের মূল চালিকা শক্তিই হচ্ছেন নারী। কিন্তু বিপুল এ নারী শ্রমিকের কাজ তেমন কোনো মূল্যায়ন করা হয় না। এখনও গ্রামীণ সমাজে কৃষি ও চাষের কাজকে নারীর প্রাত্যহিক কাজের অংশ বলে বিবেচনা করা হয়। সেখানে মজুরি প্রদানের বিষয়টি অবান্তর। কোন কোন ক্ষেত্রে নামমাত্র মজুরি দেয়া হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরুষ শ্রমিকের সমান কাজ করলেও কৃষি খাতে নারী শ্রমিকের বৈধ পরিচিতি নেই। এছাড়া অন্যান্য অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে অন্য নারী শ্রমিকের মতোই কৃষি খাতে নিয়োজিত নারী শ্রমিকেরা তীব্রভাবে বৈষম্যের শিকার হন। নিয়মহীন নিযুক্তি, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, নারীর অধিক আন্তরিকতা, অল্প মজুরি, মজুরি বৈষম্য দুর্ব্যবহার এমনকি ২০১৫ সালে রাষ্ট্রীয় প্রণোদনার অংশ হিসেবে যে ১ কোটি ৩৯ লাখ কৃষক কার্ড বিতরণ করা হয়েছিল তার একটিও ভাগ্যে জোটেনি নারীকে কৃষকদের।

২০০৫-০৬ সালে শ্রমিক শক্তি জরিপ অনুযায়ী, দেশের মোট কৃষি শ্রমিকের ৭৭ শতাংশ নারী। একইভাবে মোট কৃষি শ্রমের ৪৫ দশমিক ৬ শতাংশ বিনামূল্যে নারীশ্রম এবং ৫৪ দশমিক ৪ শতাংশ অর্থের বিনিময়ে কেনা হয়। তবে নারীশ্রমকে কেনা হলেও মজুরি বৈষম্য তো লেগেই আছে। আর নারীরা পারিশ্রমিক হিসেবে যেটুকু অর্থ পেয়ে থাকে, সেটুকুও জিডিপিতে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে না। তাছাড়া দেখা যায়, জমির মালিকানায় ৮১ শতাংশই পুরুষ এবং এ ক্ষেত্রে নারীর মালিকানা মাত্র ১৯ শতাংশ। আবার অনেক ক্ষেত্রে সরকার কর্তৃক ভূমিহীনদের যে খাসজমি প্রদান করা হয় তার সম্পূর্ণটাই থাকে স্বামীর নামে তাতে নারীর কোন অধিকার থাকে না। যে বিষয়টি সব থেকে হতাশার ব্যাপার তা হলো, যদিও সীমিত পরিমাণ জমির মালিক নারী, তবুও কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি নেই তাদের। ২০১৮ সালের সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিডিপি) এক গবেষণায় দেখা গেছে, নারী শ্রমিকের আর্থিক মূল্য আনুমানিক ১০ লাখ ৩৭ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা, যেটি ওই বছরের জিডিপির প্রায় ৭৮ শতাংশ তবুও অর্থনীতিতে তাদের এ নীরব অবদানটি অস্বীকৃত। কৃষক হিসেবে নারীকে স্বীকৃতি না দেয়ার অন্যতম কারণ হলো সামাজিক পশ্চাৎপদতা ও সামাজিক মূল্যবোধের অভাব। এ জায়গাতে আমাদের সংকট রয়েছে। এছাড়াও রাষ্ট্রীয়ভাবে সংজ্ঞায়িত না করাটাও বড় সমস্যা। আর গ্রামীণ নারী যদি কৃষক হিসেবে স্বীকৃতি না পায় তাহলে একজন কৃষক যে সুযোগ-সুবিধা পায়, সেই অনুযায়ী গ্রামীণ নারী যেমন সেই সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে যাচ্ছে, এভাবে ভবিষ্যতেও বঞ্চিত হয়েই থাকবে যা আমাদের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।

সরকারকে জমি ও অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদের ওপর নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। অর্থ পাওয়ার সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। বিভিন্ন ব্যাংকগুলো থেকে যেন সহজেই ঋণ নিতে পারে তার সুব্যবস্থা করতে হবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ঋণগুলো দিয়ে যাতে গ্রামীণ নারীর পাশে দাঁড়াতে পারে সেজন্য ক্ষুদ্রঋণের যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে তা প্রসার করতে হবে। অস্বীকৃত কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। যদিও এখনই আন্তর্জাতিকভাবে জিডিপিতে এ অস্বীকৃত কাজ অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব নয়। তবে জিডিপির মূল অ্যাকাউন্টের পাশে স্যাটেলাইট অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে নারীর অস্বীকৃত কাজের হিসাব করা এবং এটির অর্থনৈতিক মূল্যায়ন করা। যাতে আমরা বুঝতে পারি যে নারীরা অর্থনীতিতে কতটুকু ভূমিকা রাখছে।

রিম্পা খাতুন

back to top