রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর ৪৪টি চরে ১৬ লাখ মানুষের বাস। এর মধ্যে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী রয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার। চরে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ছয়টি। কিন্তু কোনো কলেজ নেই। ফলে প্রাথমিকের ৭০ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের (জিইউকে) দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে এ কথা।
গবেষকরা বলছেন, ব্যক্তিগত ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই সুযোগ এখন নেই। তাই সরকারি উদ্যোগেই চরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। চরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। তা না হলে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। এতে অনিশ্চিত জীবনের মুখে পড়বে শিশুরা।
অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের শিশুরা দূর-দূরান্তের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেলেও যেসব পরিবারের সামর্থ্য নেই তারা লেখাপড়া বন্ধ করে দিচ্ছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যাই নয়, শিক্ষা খাত আরও অনেক সমস্যায় জর্জরিত। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে জাতিকে স্মার্ট শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষাই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার কোনোরকমে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করলেও সে মাধ্যমিকে গিয়ে ঝরে যাচ্ছে। মাধ্যমিক পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়েও ঝরে পড়ছে। যেমনটি দেখা গেছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। সরকার দাবি করে যে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। টাকার অঙ্কে সেটা বাড়লেও দেখা যায় মোট জিডিপির তুলনায় সামান্যই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ; যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
ইউনেস্কো বলছে, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য জানাচ্ছে, জিডিপির শতাংশ হিসেবে বাংলাদেশের গড় শিক্ষা ব্যয় ভারত, ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও কম। ভুটান ২০২১ সালে জিডিপির ৭ শতাংশ, ভারত ২০২০ সালে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, পাকিস্তান ২০২১ সালে ২ দশমিক ৪ শতাংশ ও মালদ্বীপ ২০২০ সালে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিয়েছে।
চরাঞ্চলের শিক্ষা উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। তবে চরগুলোর প্রকৃত সমস্যা রয়েছে কী কী তা স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উপস্থাপন করতে হবে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে দিলেই হবে না, দুর্গম চরাঞ্চলের সমস্যার কথাও মাথায় রাখতে হবে। সেখানকার যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে যে, একটি পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রেখে দেশে শতভাগ শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন কখনও সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চরের শিক্ষার উন্নয়নে একটি টেকসই পরিকল্পনার প্রয়োজন। বিষয়টি নীতি-নির্ধারকরা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেনÑ সেটাই আমাদের আশা।
শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪
রংপুর, গাইবান্ধা ও কুড়িগ্রামের তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর ৪৪টি চরে ১৬ লাখ মানুষের বাস। এর মধ্যে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থী রয়েছে ৩ লাখ ৪৫ হাজার। চরে নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় আছে ছয়টি। কিন্তু কোনো কলেজ নেই। ফলে প্রাথমিকের ৭০ শতাংশ ও মাধ্যমিকের ৯০ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়ালেখার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা গণউন্নয়ন কেন্দ্রের (জিইউকে) দেওয়া তথ্য থেকে জানা গেছে এ কথা।
গবেষকরা বলছেন, ব্যক্তিগত ও বেসরকারি উদ্যোগে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপিত হয়েছে ঠিকই কিন্তু সেই সুযোগ এখন নেই। তাই সরকারি উদ্যোগেই চরাঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে। চরের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বিবেচনা করে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করতে হবে। তা না হলে শিক্ষার সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। এতে অনিশ্চিত জীবনের মুখে পড়বে শিশুরা।
অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের শিশুরা দূর-দূরান্তের বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া চালিয়ে গেলেও যেসব পরিবারের সামর্থ্য নেই তারা লেখাপড়া বন্ধ করে দিচ্ছে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সমস্যাই নয়, শিক্ষা খাত আরও অনেক সমস্যায় জর্জরিত। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে জাতিকে স্মার্ট শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে; কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে অনেক শিশুর জন্য প্রাথমিক শিক্ষাই নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। আবার কোনোরকমে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করলেও সে মাধ্যমিকে গিয়ে ঝরে যাচ্ছে। মাধ্যমিক পাস করে উচ্চ মাধ্যমিকে গিয়েও ঝরে পড়ছে। যেমনটি দেখা গেছে চরাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে। সরকার দাবি করে যে, শিক্ষা খাতে বিনিয়োগ বাড়ানো হয়েছে। টাকার অঙ্কে সেটা বাড়লেও দেখা যায় মোট জিডিপির তুলনায় সামান্যই বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটে শিক্ষা খাতের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৮৮ হাজার ১৬২ কোটি টাকা। এই বরাদ্দ মোট বাজেটের ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং জিডিপির ১ দশমিক ৭৬ শতাংশ; যা ২০২১-২২ অর্থবছরে ছিল ২ দশমিক ০৮ শতাংশ।
ইউনেস্কো বলছে, একটি দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। বিশ্বব্যাংকের তথ্য জানাচ্ছে, জিডিপির শতাংশ হিসেবে বাংলাদেশের গড় শিক্ষা ব্যয় ভারত, ভুটান, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার চেয়েও কম। ভুটান ২০২১ সালে জিডিপির ৭ শতাংশ, ভারত ২০২০ সালে ৪ দশমিক ৫ শতাংশ, পাকিস্তান ২০২১ সালে ২ দশমিক ৪ শতাংশ ও মালদ্বীপ ২০২০ সালে ৫ দশমিক ৮ শতাংশ শিক্ষা খাতে বরাদ্দ দিয়েছে।
চরাঞ্চলের শিক্ষা উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনা রয়েছে। তবে চরগুলোর প্রকৃত সমস্যা রয়েছে কী কী তা স্থানীয়ভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে উপস্থাপন করতে হবে। শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন করে দিলেই হবে না, দুর্গম চরাঞ্চলের সমস্যার কথাও মাথায় রাখতে হবে। সেখানকার যাতায়াত-যোগাযোগ ব্যবস্থাকেও অগ্রাধিকার দিতে হবে। এ কথাও স্মরণ রাখতে হবে যে, একটি পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত রেখে দেশে শতভাগ শিক্ষার লক্ষ্য অর্জন কখনও সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চরের শিক্ষার উন্নয়নে একটি টেকসই পরিকল্পনার প্রয়োজন। বিষয়টি নীতি-নির্ধারকরা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেনÑ সেটাই আমাদের আশা।