alt

সাময়িকী

অ্যান্ড্রু মোশনের প্রোজ পোয়েট্রি

অনুবাদ ও ভূমিকা : উদয় শংকর দুর্জয়

: বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১

অ্যান্ড্রু মোশন

অ্যান্ড্রু মোশন যাঁর পুরো নাম স্যার অ্যান্ড্রু পিটার মোশন, জন্মগ্রহণ করেন ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে, ২৬শে অক্টোবর ১৯৫২ সালে। কবিতা লেখার পাশপাশি তিনি লেখেন উপন্যাস এবং বায়োগ্রাফি। তিনি মূলত গদ্যকবিতার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। পাশাপাশি বায়োগ্রাফার হিসেবেও বেশ সুনাম রয়েছে তাঁর। মোশন পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ডের র‌্যাডলে কলেজে এবং ইউনিভার্সিটি কলেজে। যেখান থেকে যথাক্রমে ১৯৭৪ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৭৭ সালে সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করেছেন। মোশনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দ্যা প্লেজার স্টিমার্স’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। তাঁর লেখার মধ্যে বিছিন্নতা এবং হারানোর দুঃখ-বেদনার বিষয়বোধগুলো উঠে আসে বারবার। লিখেছেন বেশ কিছু সমালোচনামূলক গ্রন্থ। তার মধ্যে ‘দ্য পোয়েট্রি অফ এডওয়ার্ড থমাস’ (১৯৮০) এবং ‘ফিলিপ লারকিন’ (১৯৮১) উল্লেখযোগ্য। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জন কিট্সের জীবনী নিয়ে লেখা (জন কিট্স, ১৯৭৭) এবং নিজের ‘দ্য ল্যম্বার্টস জর্জ, কন্সট্যান্ট অ্যান্ড কিট’ (১৯৮৬) নামে লিখেছেন নিজস্ব আত্মজিবনীমূলক গ্রন্থ, এর জন্য সম্মান হিসেবে পেয়েছেন ‘সমারসেট মম অ্যাওয়ার্ড’।

‘এটা হয়তো বলার প্রয়োজন নেই যে, আমি কখনও এমন কেউ হতে চাইনি যে শুধু কবিতাই লিখবো! আমি হয়তো অন্য কিছু করতে পারতাম কিন্তু যখন ভাবলাম আমার কবিতাগুলো অন্যান্য জীবনের সংস্পর্শে এসে আরও উপকৃত হবে। তখন কবিতাকে নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবতে শুরু করলাম। আমি যদি আমার মৃত্যুর সাথে অর্ধ ডজন উৎকৃষ্ট কবিতা নিয়ে শুয়ে থাকি আর চিন্তা করি যে, লোকে আমার কবিতা পড়বে তাহলে আমার বেঁচে থাকা বৃথা হয়নি।’ এমন করে একজন কবিই হয়তো ভাবতে পারেন। অনেক কবি আছেন যাঁরা একান্তই নিজের জন্য কবিতা লেখেন না, নিজের ব্যর্থতার কথা না লিখে চারপাশের উপলব্ধিগত জীবনের সকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দুঃখ-বেদনার কথা তুলে ধরেন। মোশন তেমনি একজন, তবে একেবারেই যে নিজের একান্ত অনুভূতিকে গোপন করেছেন তা কিন্তু নয়। সেসব টুকরো অনুভূতি যেন মানব মনের ঘরে একই ধ্বনির উচ্চারিত বেদনার্ঘ্য। ‘ম্যাটিনি আইডল’ এবং ‘ডিমম্ব্ড’ কবিতা তারই স্পষ্ট উদাহরণ।

প্রায় আট বছর আগে অর্থাৎ ২০১২ সালে প্রকাশ পায় ‘দ্যা কাস্টম হাউস’। এই বইয়ের অধিকাংশ কবিতাই গদ্য কবিতার ঢঙে লেখা। দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কবি এন্ড্রু মোশন বলেনÑ ‘বস্তুত লেখক সম্পর্কে বলবো যে, লেখক হিসেবে আপনার যদি আবেগের বা আসক্তির অথবা চিন্তা ধারার সীমাবদ্ধতা থাকে তাহলে সমস্যা আছে। আপনার আবেগ যদি টমেটো নিয়ে হয় তাহলে টমেটো নিয়ে যে ভালো জিনিস আপনি লিখতে পারবেন তা সম্ভবত সীমিত। কিন্তু আপনার আবেগ বা কৌতূহল যদি মৃত্যু বা স্মৃতি বিজড়িত হয় তবে সেটা খুব বড় বিষয় এবং সেটার দেখা না পাওয়া পর্যন্ত আপনাকে ব্যস্ত রাখবে।’

মোশনের কবিতার মধ্যে, তাঁর চিন্তাধারার মাঝে জীবন দর্শনের শিস দেয়া পাখিটিকে খুঁজে পাওয়া যায়। একজন কবি শুধু নিজস্ব প্রেম-বিরহ দিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারেন না। তাঁর আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বেঁচে থাকার নানা উপকরণ। এই উপকরণ তথা এই যাপনের মধ্য দিয়ে যদি অভিজ্ঞতার বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি অন্তত একজন পাঠকের ওপর না পড়ে তবে সে লেখা শুধুই অক্ষরের সমারোহ ছাড়া আর কিছু নয়। একটি কবিতার লাইন বা একটি কবিতার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বদলে দিতে পারে অনেক মানুষের আশা আকাক্সক্ষার পথে যে ব্যর্থতা দাঁড়িয়ে থাকে তার পরিণাম। আক্ষেপ এবং না পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টাগুলো মাথাচড়া দিয়ে ওঠে, যখন অনিবার্য প্রাপ্যতা নিজের সাথে থাকার কথা থাকলেও তা কোনোভাবেই ধরা দেয়নি তখনই মোশনের ভেতর জন্ম নিয়েছে বেদনার মহাকাল। পিতাকে হারানো আর মা জীবিত থেকেও নিজের কাছ থেকে দূরে থাকা যেন মোশনকে আরও নিদারুণ কষ্টের মধ্য ফেলে দেয়। অন্য কোনো বিরহ যাকে কিছুতেই টলাতে পারেনি কারণ মোশন, শৈশব থেকে উপলব্ধি করেছেন আনন্দহীন জীবনের মানে। অনেকে মনে করেন যে, বাবা-মা কাছে থাকলে বা বেঁচে থাকলে অনেক সন্তানেরা বড়ো হতে পারে না, এটা হয়তো ক্লিশে কিন্তু মোশনের বেলায় একদম ঠিক। মোশন, বাবা-মায়ের মায়া মমতা ছাড়া বেড়ে উঠেছেন আর এ জন্যই লেখার মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন সঞ্জিবনী শক্তি।

অ্যান্ড্রু মোশন ছিলেন বৃটিশ পোয়েট লোরিয়েট। ছিলেন বই প্রকাশক, ম্যাগাজিনের সম্পাদক এবং একজন নৃবিজ্ঞানী। তিনি ২০১০ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল বিষয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে ম্যালকম ব্র্যাডবারির স্থলাভিষিক্ত হন এবং তিনি জেমি অলিভার টেলিভিশন ড্রিম স্কুলের কবিতা বিষয়ের মাস্টারও ছিলেন। লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, প্রকাশিত হয়েছে কুড়িটিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ। ছয়টি উপন্যাসসহ প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য সমালোচনামূলক গ্রন্থ, বায়োগ্রাফি, স্মরণ এবং অজস্র সম্পাদিত লেখাপত্র। মুদ্রিত হলো অ্যান্ড্রু মোশনের কয়েকটি কবিতা।

অ্যান্ড্রু মোশনের কবিতা
ঘটে যাওয়া দৃশ্যপট

তোমাকে বলতে দাও, আমার ট্রেন্সেস-এ আসার আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা... গ্রামটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আর গির্জাটির উপরের অংশ ভেঙে পড়েছে; গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ি বন্দুকের গুলিতে আর বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত।

কিছুক্ষণ আগে একটি খরগোশকে মূল সড়কের উপর দেখতে পাই, তার

কানের পেছন থেকে সূর্য উঁকি দেয়া উজ্জ্বল লাল দ্যুতি আমাকে থামিয়ে দেয়।

একজন সুদর্শন রমণীমোহন অভিনেতা
হ্যালো মা তুমি স্মৃতিচারণ করলে তোমার মনে পড়বে যে, আমি সবসময় চলচ্চিত্রের একজন তারকা হতে চেয়েছিলাম। ওঁরা এখন ছায়াছবি তৈরি করার জন্য আমাদেরকে উৎসাহিত করছে এবং প্রতিজ্ঞা করছে বাড়িতে ওঁরা ব্যাপকভাবে সেসব সিনেমার মধ্যে দেখাবে; মজার বিষয়গুলো কীভাবে ঘটে।

আমি ঠিক আছি যেভাবে তুমি আমাকে দেখছো এবং তোমার কেকের জন্য কোনো ছোট্ট কোনো ধন্যবাদ নয় আরও বলবো যে বাকি সহকর্মীরা আমার সাথে সেটা ভাগাভাগি করে নিতে খুশি হয়েছিল।

বাবাকে আমার শুভেচ্ছা জানিও এবং ন্যান্সিকেও, ন্যান্সিকে বলো উদ্বিগ্ন না হতে। আমি ঠিক আছি তুমি যেভাবে দেখেছো আমাকে। এছাড়া কাকা এরিক এবং কাকিমা বেটি, স্টিভকে এবং হোয়াইট হার্টের প্রত্যেককেই আমার শুভেচ্ছা জানিও। আসলে প্রত্যেককে নিয়ে তুমি ভাবতে পারো।

তাদেরকে বলে দিও আমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে! আমি ভালো আছি তুমি যেভাবে আমায় দেখেছো এবং সবকিছু ভুলে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবো।

সেটাই আমার কাক্সিক্ষত সময়, আর তাই মুহূর্তের জন্য আমি বিদায় বলবো। এখানে কর্পোরাল ওয়াগস্টাফের সাথে তার মায়ের জন্য কোনো সংবাদ অপেক্ষা করছে।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর
প্রায় ষাট বছর পর আমার বাবা বাড়িতে ফিরে এলেন। তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশা করতে আমাকে কেউ কখনও বলেনি; এবং কাক্সিক্ষত সময় আমি বিমান বন্দরে পৌঁছুলাম, এরই-মধ্যে দেখতে পেলাম গেটের আশপাশ দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে সেঁটে আছে।

বিশেষ করে যখন একটা আনন্দধ্বনি শুনতে পেলাম তখন মনে হলো, আমাকে কেউ কিছু একটা বলছে, এটা তিনি হবেন, এবং আমি আমার গায়ের জোর খাটিয়ে ভেতরের ভিড় ঠেলে তাঁকে খুঁজে বের করলাম। আমি একশ’ ভাগ নিশ্চিত হলাম যে তিনি আমার বাবা-ই।

চওড়া কাঁধ, পেটানো শরীর এবং সুশোভিত চুল, কিন্তু বাবার গায়ে জড়ানো শহুরে স্যুট আমাকে অবাক করেছিল এবং বাবার পাশে আমার ভাই কিটকে দেখতে পেলাম। কিট অবশ্যই বুঝতে পেরেছিল যে আমি তাকে কতটা মিস্ করেছি।

যে কোনো ক্ষেত্রে, চোখের অপলক দৃষ্টি নিয়ে তারা আমার দিকে অগ্রসর হয়েছিল, তখন জনতা উল্লাস ধ্বনির মাধ্যমে প্রকাশ করছিল তাদের কৃতজ্ঞতা এবং ব্রাস ব্যান্ড দল ‘কোলোনেল বোগি সুর’ বাজিয়ে চলেছিল যতক্ষণ না আমার ভাই আলাদাভাবে হুইল চেয়ারে করে এসে পৌঁছায় এবং আমার বাবা নিজেকে লুকোবার জন্য মাথা নিচু করেছিল সেই দীর্ঘ হলুদ বেষ্টনির মধ্যে, যেখান থেকে যাত্রীদের লাগেজ পার হয়ে আসে, আমি কল্পনা করি আমার বাবা যেভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করেছিল এবং মারা গিয়েছিল।

সমস্ত পাখিদের ক্ষেত্রে
ম্যাগপাই এই ম্যাগপাই পাখিটিকে সবচেয়ে কম পছন্দ করি,

যে আমার প্রণয়ের আংটি চুরি করেছিল

আমি ভাবছি তার লুকিয়ে রাখার কথা

তার বাসায় কাচ এবং পিনের সাথে

কিংবা অন্যান্য উজ্জ্বল জিনিসের সাথে।

নাইটিংগেল পাখিরা

জনশ্রুতি আছে, পাইন বনের মধ্যে নাইটিংগেল পাখি থাকে যারা স্পেনের ‘এস গ্রাউ’ বালিয়াড়ির উপর বেড়ে ওঠে। আমরা ক্লেম্যাটিস ফুল খুঁজে পেয়েছিলাম সেখানে, মধুর মতো গাঢ় হলুদ এবং সুবর্ণ আবার ফুলে পরিণত হয়েছিল, পাশপাশি সী-হোলি ফুল আর সাদা লিলি অবিরাম আলোছায়ার মধ্যে ছিল।

তিতির পাখি

অবশেষে আমি মনস্থির করেছি শীত মৌসুমে শস্য লাগানো

জমির উপরই কাজটি করে ছাড়বো, যদি কৃষক আমাকে দেখে ফ্যালে

তবে সে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করবে।

এর সব কিছুই ছিল আমার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রয়োজনে

যেখানে আমার গ্রামে রয়েছে জায়গার স্বল্পতা,

তাছাড়া সেসব ফসলের মাঠ ছিল ভেজা এবং নরম,

এই শস্যক্ষেতের মধ্যিখানে দৌড়াদৌড়ি করাটা ছিল কষ্টসাধ্য,

ঠিক এখানেই, ভাঙা ডানা নিয়ে এবং কান্না জড়িত সুরে

একটি তিতির পাখি আমায় সঙ্গ দিয়েছিল!

আমাকে কিছুটা সহিংসতার দিকে আকৃষ্ট করে।

আমি আপত্তি করি না, যতক্ষণ তার পরিকল্পনা তার বাসাকে রক্ষা করছে

পাশাপাশি যত্নে রাখা তার তা দেয়া কমবেশি দাগপড়া ডিমগুলোকেও।

আগুন জ্বালানো সূত্রাবলী

কিছুক্ষণ আগে আমি নিচের ঘরে

কিছু একটা করবো বলে খুঁজছি

বসবার ঘরে তখন আমার বাবাকে দেখি ফায়ার প্লেসের কাছে

হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে নরম বাদামী হাতব্রাশ দিয়ে ছাই ঝাড়ছেন

চুল্লির ঝাঁঝরির তলদেশ থেকে

আবার কখনও চারপাশ থেকে।

এভাবে পরিষ্কার করার জন্য বাব ব্রাশটিকে বিশেষভাবে রেখে দেন।

আমার সাক্ষাতের জন্য

তিনি এখানেই সারা রাত ধরে অপেক্ষা করছিলেন?

যতদূর সম্ভব আমি বলতে পারি

আমি কোনো ভুল করিনি।

আমি আবার ভেবে দেখি

আমার দিকে না ঘুরেই

তিনি যখন আমার নাম ধরে ডাকেন;

তিনি অবশ্যই তাঁর মাথার পছনের চোখ দিয়েই

আমাকে দেখেছেন।

কী ব্যাপার যুবক?

ঘুমোতে পারনি?

তাঁর কণ্ঠস্বর স্নেহমিশ্রিত যা আমার আশাতীত

তিনি যেন জানেন যে আমাদের একই বিষণœতা ঘিরে আছে

তবুও আমি কিছু অনুভব করি না।

বসবার ঘরের পালিশ করা বোর্ডের উপর দিয়ে ধূসর মোজা নিয়ে

আমি তাঁর দিকে এগিয়ে যাই,

মেঝের শতরঞ্জি নিয়ে তাঁর সাথে মধ্যস্থতা করি

তাদের ড্রাগন খচিত কারুকাজ নিয়ে।

তিনি এখনও আমার আশেপাশে নেই।

তিনি এখন তাঁর মনোযোগ ঢেলে দিয়েছেন

আগুন জ্বালাবার উপকরণীয় স্তূপ এবং

আগুনের ঝুড়ির মধ্যকার স্তূপকৃত কাগজের উপর,

লাঠিগুলোরে মাঝখানে কয়লার দলাগুলোকে

এমন ভাবে সতর্কতার সাথে চাপ দিচ্ছেন

যেন তিনি একটা কেইককে সুসজ্জিত করছে।

তারপর তিনি একটা দেয়াশলাইয়ের কাঠি ছুড়ে দেন

যেভাবে একজন বৃদ্ধ ছুড়ে দিতে পারেন।

ফায়ার প্লেসের সম্পূর্ণ মুখের উপর খবরের কাগজের

সজীব পাতাগুলোকে ছড়িয়ে দেয়ার আগে

তিনি আগুনের শিখাকে উজ্জীবিত রাখেন।

আমি ভাবতে পারি না

কেন এই খবরের কাগজের সজীব পাতাও

আলো ধরতে পারে না।

আগুনের শিখাগুলো খুব কাছাকাছি।

আমি তাদেরকে দেখতে পারি

এবং তাদের ছিন্ন পতনের সুর শুনতে পারি

প্রেসিডেন্ট কেনেডির গতকালকের ব্যাঙ্গচিত্রের মাধ্যমে

এবং প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ

তাঁরা তাঁদের মোটর গাড়িতে একে অপরের দিকে ছুটছেন

তাঁরা দু’জনেই চিৎকার করছেন

আমি নিশ্চিত তিনি প্রথম থামতে যাচ্ছেন।

কিন্তু উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

সবকিছু

শুধু যেভাবে আমার বাবা চেয়েছিলেন ঠিক তেমনি,

এবং যথাসময়ে

যখন আগুন ভালো ভাবে জ্বলছে,

তিনি দ্রুত খবরের কাগজ পরিষ্কার করেন,

এটা তাঁর বাহুর নিচে ভাঁজ করেন,

এবং ধুলো সরানো পাত্রটি (ডাস্ট প্যান)

রাত্রির ধ্বংসাবশেষের আগে।

তিনি কি এইমাত্র আমার সাথে আবার কথা বলেছেন?

আমার মনে হয় না। আমি

জানি না।

আমি ভাবছিলাম এখনও তিনি কতটা ঝরঝরে।

নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম:

আমি কি এরকম হবো? আমি কীভাবে ম্যানেজ করব?

তারপর কয়লার উপর ভারসাম্য বজায় রাখা

উইকার কাঠের ঝুড়ি থেকে

তিনি একটি কাঠের লগ বেছে নেন,

এবং তিনি তাঁর হাতের কাজের প্রশংসা করেন।

সময় যখন তাঁকে অনুসরণ করে,

পিচ্ছিল, পালিশ করা পিচ্ছিল মেঝের উপর,

তিনি ডাস্টবিনের দিকে নিয়ে যান।

ছাইয়ের একটি নিঃশ্বাস

ক্রমাগত তার কাঁধের উপর উপুড় হয়ে পড়ে

ডাস্টপ্যান থেকে, যা তিনি আগে বয়ে আনেন

যেমন একজন মানুষ উপহার বহন করে

ছবিতে যেমন একজন মানুষ উপহার বহন করে।

ছবি

ওবায়েদ আকাশের বাছাই ৩২ কবিতা

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

দেহাবশেষ

ছবি

যাদুবাস্তবতা ও ইলিয়াসের যোগাযোগ

ছবি

বাংলার স্বাধীনতা আমার কবিতা

ছবি

মিহির মুসাকীর কবিতা

ছবি

শুশ্রƒষার আশ্রয়ঘর

ছবি

সময়োত্তরের কবি

ছবি

নাট্যকার অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ৭৪

ছবি

মহত্ত্বম অনুভবে রবিউল হুসাইন

‘লাল গহনা’ উপন্যাসে বিষয়ের গভীরতা

ছবি

‘শৃঙ্খল মুক্তির জন্য কবিতা’

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

মোহিত কামাল

ছবি

আশরাফ আহমদের কবিতা

ছবি

‘আমাদের সাহিত্যের আন্তর্জাতিকীকরণে আমাদেরই আগ্রহ নেই’

ছবি

ছোটগল্পের অনন্যস্বর হাসান আজিজুল হক

‘দীপান্বিত গুরুকুল’

ছবি

নাসির আহমেদের কবিতা

ছবি

শেষ থেকে শুরু

সাময়িকী কবিতা

ছবি

স্মৃতির অতল তলে

ছবি

রবীন্দ্রবোধন

ছবি

বাঙালির ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি হয়ে ওঠার দীর্ঘ সংগ্রাম

ছবি

হাফিজ রশিদ খানের নির্বাচিত কবিতা আদিবাসীপর্ব

ছবি

আনন্দধাম

ছবি

কান্নার কুসুমে চিত্রিত ‘ধূসরযাত্রা’

সাময়িকী কবিতা

ছবি

ফারুক মাহমুদের কবিতা

ছবি

পল্লীকবি জসীম উদ্দীন ও তাঁর অমর সৃষ্টি ‘আসমানী’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

ছবি

পরিবেশ-সাহিত্যের নিরলস কলমযোদ্ধা

ছবি

আব্দুলরাজাক গুনরাহর সাহিত্যচিন্তা

ছবি

অমিতাভ ঘোষের ‘গান আইল্যান্ড’

ছবি

‘অঞ্জলি লহ মোর সঙ্গীতে’

tab

সাময়িকী

অ্যান্ড্রু মোশনের প্রোজ পোয়েট্রি

অনুবাদ ও ভূমিকা : উদয় শংকর দুর্জয়

অ্যান্ড্রু মোশন

বৃহস্পতিবার, ০৮ জুলাই ২০২১

অ্যান্ড্রু মোশন যাঁর পুরো নাম স্যার অ্যান্ড্রু পিটার মোশন, জন্মগ্রহণ করেন ইংল্যান্ডের রাজধানী লন্ডনে, ২৬শে অক্টোবর ১৯৫২ সালে। কবিতা লেখার পাশপাশি তিনি লেখেন উপন্যাস এবং বায়োগ্রাফি। তিনি মূলত গদ্যকবিতার জন্য খ্যাতি অর্জন করেছেন। পাশাপাশি বায়োগ্রাফার হিসেবেও বেশ সুনাম রয়েছে তাঁর। মোশন পড়াশোনা করেছেন অক্সফোর্ডের র‌্যাডলে কলেজে এবং ইউনিভার্সিটি কলেজে। যেখান থেকে যথাক্রমে ১৯৭৪ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৭৭ সালে সাহিত্যে মাস্টার্স শেষ করেছেন। মোশনের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দ্যা প্লেজার স্টিমার্স’ প্রকাশিত হয় ১৯৭৮ সালে। তাঁর লেখার মধ্যে বিছিন্নতা এবং হারানোর দুঃখ-বেদনার বিষয়বোধগুলো উঠে আসে বারবার। লিখেছেন বেশ কিছু সমালোচনামূলক গ্রন্থ। তার মধ্যে ‘দ্য পোয়েট্রি অফ এডওয়ার্ড থমাস’ (১৯৮০) এবং ‘ফিলিপ লারকিন’ (১৯৮১) উল্লেখযোগ্য। আত্মজীবনীমূলক গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে জন কিট্সের জীবনী নিয়ে লেখা (জন কিট্স, ১৯৭৭) এবং নিজের ‘দ্য ল্যম্বার্টস জর্জ, কন্সট্যান্ট অ্যান্ড কিট’ (১৯৮৬) নামে লিখেছেন নিজস্ব আত্মজিবনীমূলক গ্রন্থ, এর জন্য সম্মান হিসেবে পেয়েছেন ‘সমারসেট মম অ্যাওয়ার্ড’।

‘এটা হয়তো বলার প্রয়োজন নেই যে, আমি কখনও এমন কেউ হতে চাইনি যে শুধু কবিতাই লিখবো! আমি হয়তো অন্য কিছু করতে পারতাম কিন্তু যখন ভাবলাম আমার কবিতাগুলো অন্যান্য জীবনের সংস্পর্শে এসে আরও উপকৃত হবে। তখন কবিতাকে নিয়ে আরও গভীরভাবে ভাবতে শুরু করলাম। আমি যদি আমার মৃত্যুর সাথে অর্ধ ডজন উৎকৃষ্ট কবিতা নিয়ে শুয়ে থাকি আর চিন্তা করি যে, লোকে আমার কবিতা পড়বে তাহলে আমার বেঁচে থাকা বৃথা হয়নি।’ এমন করে একজন কবিই হয়তো ভাবতে পারেন। অনেক কবি আছেন যাঁরা একান্তই নিজের জন্য কবিতা লেখেন না, নিজের ব্যর্থতার কথা না লিখে চারপাশের উপলব্ধিগত জীবনের সকল ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র দুঃখ-বেদনার কথা তুলে ধরেন। মোশন তেমনি একজন, তবে একেবারেই যে নিজের একান্ত অনুভূতিকে গোপন করেছেন তা কিন্তু নয়। সেসব টুকরো অনুভূতি যেন মানব মনের ঘরে একই ধ্বনির উচ্চারিত বেদনার্ঘ্য। ‘ম্যাটিনি আইডল’ এবং ‘ডিমম্ব্ড’ কবিতা তারই স্পষ্ট উদাহরণ।

প্রায় আট বছর আগে অর্থাৎ ২০১২ সালে প্রকাশ পায় ‘দ্যা কাস্টম হাউস’। এই বইয়ের অধিকাংশ কবিতাই গদ্য কবিতার ঢঙে লেখা। দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কবি এন্ড্রু মোশন বলেনÑ ‘বস্তুত লেখক সম্পর্কে বলবো যে, লেখক হিসেবে আপনার যদি আবেগের বা আসক্তির অথবা চিন্তা ধারার সীমাবদ্ধতা থাকে তাহলে সমস্যা আছে। আপনার আবেগ যদি টমেটো নিয়ে হয় তাহলে টমেটো নিয়ে যে ভালো জিনিস আপনি লিখতে পারবেন তা সম্ভবত সীমিত। কিন্তু আপনার আবেগ বা কৌতূহল যদি মৃত্যু বা স্মৃতি বিজড়িত হয় তবে সেটা খুব বড় বিষয় এবং সেটার দেখা না পাওয়া পর্যন্ত আপনাকে ব্যস্ত রাখবে।’

মোশনের কবিতার মধ্যে, তাঁর চিন্তাধারার মাঝে জীবন দর্শনের শিস দেয়া পাখিটিকে খুঁজে পাওয়া যায়। একজন কবি শুধু নিজস্ব প্রেম-বিরহ দিয়ে সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারেন না। তাঁর আশেপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে বেঁচে থাকার নানা উপকরণ। এই উপকরণ তথা এই যাপনের মধ্য দিয়ে যদি অভিজ্ঞতার বিচ্ছুরিত আলোকরশ্মি অন্তত একজন পাঠকের ওপর না পড়ে তবে সে লেখা শুধুই অক্ষরের সমারোহ ছাড়া আর কিছু নয়। একটি কবিতার লাইন বা একটি কবিতার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বদলে দিতে পারে অনেক মানুষের আশা আকাক্সক্ষার পথে যে ব্যর্থতা দাঁড়িয়ে থাকে তার পরিণাম। আক্ষেপ এবং না পাওয়ার ব্যর্থ চেষ্টাগুলো মাথাচড়া দিয়ে ওঠে, যখন অনিবার্য প্রাপ্যতা নিজের সাথে থাকার কথা থাকলেও তা কোনোভাবেই ধরা দেয়নি তখনই মোশনের ভেতর জন্ম নিয়েছে বেদনার মহাকাল। পিতাকে হারানো আর মা জীবিত থেকেও নিজের কাছ থেকে দূরে থাকা যেন মোশনকে আরও নিদারুণ কষ্টের মধ্য ফেলে দেয়। অন্য কোনো বিরহ যাকে কিছুতেই টলাতে পারেনি কারণ মোশন, শৈশব থেকে উপলব্ধি করেছেন আনন্দহীন জীবনের মানে। অনেকে মনে করেন যে, বাবা-মা কাছে থাকলে বা বেঁচে থাকলে অনেক সন্তানেরা বড়ো হতে পারে না, এটা হয়তো ক্লিশে কিন্তু মোশনের বেলায় একদম ঠিক। মোশন, বাবা-মায়ের মায়া মমতা ছাড়া বেড়ে উঠেছেন আর এ জন্যই লেখার মধ্যে খুঁজে পেয়েছেন সঞ্জিবনী শক্তি।

অ্যান্ড্রু মোশন ছিলেন বৃটিশ পোয়েট লোরিয়েট। ছিলেন বই প্রকাশক, ম্যাগাজিনের সম্পাদক এবং একজন নৃবিজ্ঞানী। তিনি ২০১০ সালে ম্যান বুকার পুরস্কার কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ইস্ট অ্যাঙ্গলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল বিষয়ের একজন শিক্ষক হিসেবে ম্যালকম ব্র্যাডবারির স্থলাভিষিক্ত হন এবং তিনি জেমি অলিভার টেলিভিশন ড্রিম স্কুলের কবিতা বিষয়ের মাস্টারও ছিলেন। লিখেছেন অসংখ্য কবিতা, প্রকাশিত হয়েছে কুড়িটিরও বেশি কাব্যগ্রন্থ। ছয়টি উপন্যাসসহ প্রকাশিত হয়েছে অসংখ্য সমালোচনামূলক গ্রন্থ, বায়োগ্রাফি, স্মরণ এবং অজস্র সম্পাদিত লেখাপত্র। মুদ্রিত হলো অ্যান্ড্রু মোশনের কয়েকটি কবিতা।

অ্যান্ড্রু মোশনের কবিতা
ঘটে যাওয়া দৃশ্যপট

তোমাকে বলতে দাও, আমার ট্রেন্সেস-এ আসার আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা... গ্রামটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে আর গির্জাটির উপরের অংশ ভেঙে পড়েছে; গ্রামের প্রত্যেকটি বাড়ি বন্দুকের গুলিতে আর বোমা বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত।

কিছুক্ষণ আগে একটি খরগোশকে মূল সড়কের উপর দেখতে পাই, তার

কানের পেছন থেকে সূর্য উঁকি দেয়া উজ্জ্বল লাল দ্যুতি আমাকে থামিয়ে দেয়।

একজন সুদর্শন রমণীমোহন অভিনেতা
হ্যালো মা তুমি স্মৃতিচারণ করলে তোমার মনে পড়বে যে, আমি সবসময় চলচ্চিত্রের একজন তারকা হতে চেয়েছিলাম। ওঁরা এখন ছায়াছবি তৈরি করার জন্য আমাদেরকে উৎসাহিত করছে এবং প্রতিজ্ঞা করছে বাড়িতে ওঁরা ব্যাপকভাবে সেসব সিনেমার মধ্যে দেখাবে; মজার বিষয়গুলো কীভাবে ঘটে।

আমি ঠিক আছি যেভাবে তুমি আমাকে দেখছো এবং তোমার কেকের জন্য কোনো ছোট্ট কোনো ধন্যবাদ নয় আরও বলবো যে বাকি সহকর্মীরা আমার সাথে সেটা ভাগাভাগি করে নিতে খুশি হয়েছিল।

বাবাকে আমার শুভেচ্ছা জানিও এবং ন্যান্সিকেও, ন্যান্সিকে বলো উদ্বিগ্ন না হতে। আমি ঠিক আছি তুমি যেভাবে দেখেছো আমাকে। এছাড়া কাকা এরিক এবং কাকিমা বেটি, স্টিভকে এবং হোয়াইট হার্টের প্রত্যেককেই আমার শুভেচ্ছা জানিও। আসলে প্রত্যেককে নিয়ে তুমি ভাবতে পারো।

তাদেরকে বলে দিও আমাকে নিয়ে উদ্বিগ্ন না হতে! আমি ভালো আছি তুমি যেভাবে আমায় দেখেছো এবং সবকিছু ভুলে খুব তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবো।

সেটাই আমার কাক্সিক্ষত সময়, আর তাই মুহূর্তের জন্য আমি বিদায় বলবো। এখানে কর্পোরাল ওয়াগস্টাফের সাথে তার মায়ের জন্য কোনো সংবাদ অপেক্ষা করছে।

যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর
প্রায় ষাট বছর পর আমার বাবা বাড়িতে ফিরে এলেন। তাঁকে নিয়ে প্রত্যাশা করতে আমাকে কেউ কখনও বলেনি; এবং কাক্সিক্ষত সময় আমি বিমান বন্দরে পৌঁছুলাম, এরই-মধ্যে দেখতে পেলাম গেটের আশপাশ দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়ে সেঁটে আছে।

বিশেষ করে যখন একটা আনন্দধ্বনি শুনতে পেলাম তখন মনে হলো, আমাকে কেউ কিছু একটা বলছে, এটা তিনি হবেন, এবং আমি আমার গায়ের জোর খাটিয়ে ভেতরের ভিড় ঠেলে তাঁকে খুঁজে বের করলাম। আমি একশ’ ভাগ নিশ্চিত হলাম যে তিনি আমার বাবা-ই।

চওড়া কাঁধ, পেটানো শরীর এবং সুশোভিত চুল, কিন্তু বাবার গায়ে জড়ানো শহুরে স্যুট আমাকে অবাক করেছিল এবং বাবার পাশে আমার ভাই কিটকে দেখতে পেলাম। কিট অবশ্যই বুঝতে পেরেছিল যে আমি তাকে কতটা মিস্ করেছি।

যে কোনো ক্ষেত্রে, চোখের অপলক দৃষ্টি নিয়ে তারা আমার দিকে অগ্রসর হয়েছিল, তখন জনতা উল্লাস ধ্বনির মাধ্যমে প্রকাশ করছিল তাদের কৃতজ্ঞতা এবং ব্রাস ব্যান্ড দল ‘কোলোনেল বোগি সুর’ বাজিয়ে চলেছিল যতক্ষণ না আমার ভাই আলাদাভাবে হুইল চেয়ারে করে এসে পৌঁছায় এবং আমার বাবা নিজেকে লুকোবার জন্য মাথা নিচু করেছিল সেই দীর্ঘ হলুদ বেষ্টনির মধ্যে, যেখান থেকে যাত্রীদের লাগেজ পার হয়ে আসে, আমি কল্পনা করি আমার বাবা যেভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করেছিল এবং মারা গিয়েছিল।

সমস্ত পাখিদের ক্ষেত্রে
ম্যাগপাই এই ম্যাগপাই পাখিটিকে সবচেয়ে কম পছন্দ করি,

যে আমার প্রণয়ের আংটি চুরি করেছিল

আমি ভাবছি তার লুকিয়ে রাখার কথা

তার বাসায় কাচ এবং পিনের সাথে

কিংবা অন্যান্য উজ্জ্বল জিনিসের সাথে।

নাইটিংগেল পাখিরা

জনশ্রুতি আছে, পাইন বনের মধ্যে নাইটিংগেল পাখি থাকে যারা স্পেনের ‘এস গ্রাউ’ বালিয়াড়ির উপর বেড়ে ওঠে। আমরা ক্লেম্যাটিস ফুল খুঁজে পেয়েছিলাম সেখানে, মধুর মতো গাঢ় হলুদ এবং সুবর্ণ আবার ফুলে পরিণত হয়েছিল, পাশপাশি সী-হোলি ফুল আর সাদা লিলি অবিরাম আলোছায়ার মধ্যে ছিল।

তিতির পাখি

অবশেষে আমি মনস্থির করেছি শীত মৌসুমে শস্য লাগানো

জমির উপরই কাজটি করে ছাড়বো, যদি কৃষক আমাকে দেখে ফ্যালে

তবে সে ক্রুশে বিদ্ধ করে হত্যা করবে।

এর সব কিছুই ছিল আমার ঘুড়ি ওড়ানোর প্রয়োজনে

যেখানে আমার গ্রামে রয়েছে জায়গার স্বল্পতা,

তাছাড়া সেসব ফসলের মাঠ ছিল ভেজা এবং নরম,

এই শস্যক্ষেতের মধ্যিখানে দৌড়াদৌড়ি করাটা ছিল কষ্টসাধ্য,

ঠিক এখানেই, ভাঙা ডানা নিয়ে এবং কান্না জড়িত সুরে

একটি তিতির পাখি আমায় সঙ্গ দিয়েছিল!

আমাকে কিছুটা সহিংসতার দিকে আকৃষ্ট করে।

আমি আপত্তি করি না, যতক্ষণ তার পরিকল্পনা তার বাসাকে রক্ষা করছে

পাশাপাশি যত্নে রাখা তার তা দেয়া কমবেশি দাগপড়া ডিমগুলোকেও।

আগুন জ্বালানো সূত্রাবলী

কিছুক্ষণ আগে আমি নিচের ঘরে

কিছু একটা করবো বলে খুঁজছি

বসবার ঘরে তখন আমার বাবাকে দেখি ফায়ার প্লেসের কাছে

হাঁটুতে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে নরম বাদামী হাতব্রাশ দিয়ে ছাই ঝাড়ছেন

চুল্লির ঝাঁঝরির তলদেশ থেকে

আবার কখনও চারপাশ থেকে।

এভাবে পরিষ্কার করার জন্য বাব ব্রাশটিকে বিশেষভাবে রেখে দেন।

আমার সাক্ষাতের জন্য

তিনি এখানেই সারা রাত ধরে অপেক্ষা করছিলেন?

যতদূর সম্ভব আমি বলতে পারি

আমি কোনো ভুল করিনি।

আমি আবার ভেবে দেখি

আমার দিকে না ঘুরেই

তিনি যখন আমার নাম ধরে ডাকেন;

তিনি অবশ্যই তাঁর মাথার পছনের চোখ দিয়েই

আমাকে দেখেছেন।

কী ব্যাপার যুবক?

ঘুমোতে পারনি?

তাঁর কণ্ঠস্বর স্নেহমিশ্রিত যা আমার আশাতীত

তিনি যেন জানেন যে আমাদের একই বিষণœতা ঘিরে আছে

তবুও আমি কিছু অনুভব করি না।

বসবার ঘরের পালিশ করা বোর্ডের উপর দিয়ে ধূসর মোজা নিয়ে

আমি তাঁর দিকে এগিয়ে যাই,

মেঝের শতরঞ্জি নিয়ে তাঁর সাথে মধ্যস্থতা করি

তাদের ড্রাগন খচিত কারুকাজ নিয়ে।

তিনি এখনও আমার আশেপাশে নেই।

তিনি এখন তাঁর মনোযোগ ঢেলে দিয়েছেন

আগুন জ্বালাবার উপকরণীয় স্তূপ এবং

আগুনের ঝুড়ির মধ্যকার স্তূপকৃত কাগজের উপর,

লাঠিগুলোরে মাঝখানে কয়লার দলাগুলোকে

এমন ভাবে সতর্কতার সাথে চাপ দিচ্ছেন

যেন তিনি একটা কেইককে সুসজ্জিত করছে।

তারপর তিনি একটা দেয়াশলাইয়ের কাঠি ছুড়ে দেন

যেভাবে একজন বৃদ্ধ ছুড়ে দিতে পারেন।

ফায়ার প্লেসের সম্পূর্ণ মুখের উপর খবরের কাগজের

সজীব পাতাগুলোকে ছড়িয়ে দেয়ার আগে

তিনি আগুনের শিখাকে উজ্জীবিত রাখেন।

আমি ভাবতে পারি না

কেন এই খবরের কাগজের সজীব পাতাও

আলো ধরতে পারে না।

আগুনের শিখাগুলো খুব কাছাকাছি।

আমি তাদেরকে দেখতে পারি

এবং তাদের ছিন্ন পতনের সুর শুনতে পারি

প্রেসিডেন্ট কেনেডির গতকালকের ব্যাঙ্গচিত্রের মাধ্যমে

এবং প্রেসিডেন্ট ক্রুশ্চেভ

তাঁরা তাঁদের মোটর গাড়িতে একে অপরের দিকে ছুটছেন

তাঁরা দু’জনেই চিৎকার করছেন

আমি নিশ্চিত তিনি প্রথম থামতে যাচ্ছেন।

কিন্তু উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

সবকিছু

শুধু যেভাবে আমার বাবা চেয়েছিলেন ঠিক তেমনি,

এবং যথাসময়ে

যখন আগুন ভালো ভাবে জ্বলছে,

তিনি দ্রুত খবরের কাগজ পরিষ্কার করেন,

এটা তাঁর বাহুর নিচে ভাঁজ করেন,

এবং ধুলো সরানো পাত্রটি (ডাস্ট প্যান)

রাত্রির ধ্বংসাবশেষের আগে।

তিনি কি এইমাত্র আমার সাথে আবার কথা বলেছেন?

আমার মনে হয় না। আমি

জানি না।

আমি ভাবছিলাম এখনও তিনি কতটা ঝরঝরে।

নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম:

আমি কি এরকম হবো? আমি কীভাবে ম্যানেজ করব?

তারপর কয়লার উপর ভারসাম্য বজায় রাখা

উইকার কাঠের ঝুড়ি থেকে

তিনি একটি কাঠের লগ বেছে নেন,

এবং তিনি তাঁর হাতের কাজের প্রশংসা করেন।

সময় যখন তাঁকে অনুসরণ করে,

পিচ্ছিল, পালিশ করা পিচ্ছিল মেঝের উপর,

তিনি ডাস্টবিনের দিকে নিয়ে যান।

ছাইয়ের একটি নিঃশ্বাস

ক্রমাগত তার কাঁধের উপর উপুড় হয়ে পড়ে

ডাস্টপ্যান থেকে, যা তিনি আগে বয়ে আনেন

যেমন একজন মানুষ উপহার বহন করে

ছবিতে যেমন একজন মানুষ উপহার বহন করে।

back to top