খালিদ মোশারফ
কোনো কিছু করে শেখা বা কাজ করে শেখা হচ্ছে আবিষ্কারমূলক শিখন তত্ত্বের মূল কথা। কাজ করে শিখে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শিক্ষার্থীদের শিখন স্থায়ী হয়। তারা মনে রাখতে পারে। শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের কাজ করে শেখার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা কোনো কিছু করবে এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিখবে। আপনি যদি শ্রেণীকক্ষের শিক্ষক হন তবে মনে রাখতে হবে কোন পাঠে কোন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য উত্তম। আমেরিকার মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ জেরম ব্রুনারের আবিষ্কারমূলক তত্ত্ব অনুসারে শিক্ষার্থীরা কাজ করে শেখার মাধ্যমে বা সমস্যা সমাধানের নতুন জ্ঞান বা ধারণা সৃষ্টি করতে পারে। শিক্ষকরা প্রত্যক্ষভাবে কোনো কিছু উপস্থাপন করেন না বরং শিক্ষার্থীদের কাজ করে শিখতে দেন। ব্রুনারের মতে শিক্ষণের বিষয়বস্তুর সঙ্গে শিক্ষার্থীর বাস্তব পরিচয় থাকতে হবে। ব্রুনার তার তত্ত্বে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের তিনটি ধাপের কথা বলেছেন। যথাÑ সক্রিয়তার স্তর, মূর্ততার স্তর ও সাংকেতিক স্তর। সক্রিয়তার স্তরের সময়সীমা শিশুর তিন বছর পর্যন্ত। এই সময় শিশুরা কোনো কিছু নেড়ে, স্পর্শ করে শেখতে চায়।
মূর্ততার স্তরের সময়সীমা তিন থেকে সাত বা আট বছর। এই স্তরে শিশুর কাছে দৃশ্যমান বা মূর্ত বস্তু প্রাধান্য পায়। সাংকেতিক স্তরে শিশুরা যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায়, তারা সংকেত বুঝতে পারে। তারা বিমূর্ত চিন্তন করতে পারে। শিক্ষাবিদ ডেভিড কোল্ব আবিষ্কামূলক শিখন তত্ত্বের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন। ডেভিড কোল্ব ১৯৮৪ সালে আবিষ্কারমূলক শিখনের একটি মডেল প্রকাশ করেন। কোল্ব এই মডেলে তুলে ধরেন যে শিক্ষার্থীরা শেখে চারটি ধাপে, যথাÑ মূর্ত শিখন, প্রতিফলিত পর্যবেক্ষণ, বিমূর্ত ধারণা ও সক্রিয় পর্যবেক্ষণ। প্রথম দুটি ধাপে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং শেষ দুটি ধাপে অভিজ্ঞতাকে রূপান্তরিত করতে পারবে। কোল্ব মনে করতেন যে, শিক্ষার্থীদের এই চারটি ধাপে কার্যকর শিখন হয়।
মূর্ত শিখন তখনি ঘটবে যখন শিক্ষার্থীরা নতুন একটি অভিজ্ঞতার সঙ্গে পুরানো অভিজ্ঞতার সংযোগ করতে পারবে বা মেলাতে পারবে। প্রতিফলিত পর্যবেক্ষণের এই ধাপে শিক্ষার্থীরা একা একা চিন্তা করে এবং এক ধরনের অন্যান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করে। বিমূর্ত ধারণার ধাপে শিক্ষার্থীরা নতুন ধারণা তৈরি করতে পারে। সক্রিয় ধারণার ধাপে শিক্ষার্থীরা তাদের ধারণার পরিবর্তন করতে পারে। তারা ইচ্ছেমতো সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে পারে। ডেভিড কোল্বের মতে শিক্ষার্থীরা বই পড়ে শেখার চেয়ে কোনো কিছু দেখে দেখে বা আলোচনা করে অনেক বেশি শেখে।
আবিষ্কারমূলক শিক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা হলো শিক্ষার্থীরা একটি সমস্যা খুঁজে বের করে। তারা পূর্বে যা শিখেছে সেই আলোকে সমস্যার সমাধান করে। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ধারণা তৈরি হয়। তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। তারা সমস্যা সমাধানে বারবার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে। শ্রেণীকক্ষে গণিত, জ্যামিতি , বিজ্ঞান শেখার সময় শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা সমাধানের পূর্ব ধারণা দিতে হবে। তারপর তাদের সমস্যা সমাধান করতে দিলে সমজাতীয় আরো সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
[লেখক : ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ), পিটিআই, সোনাতলা, বগুড়া]
খালিদ মোশারফ
বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪
কোনো কিছু করে শেখা বা কাজ করে শেখা হচ্ছে আবিষ্কারমূলক শিখন তত্ত্বের মূল কথা। কাজ করে শিখে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জন করে। শিক্ষার্থীদের শিখন স্থায়ী হয়। তারা মনে রাখতে পারে। শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের কাজ করে শেখার সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে যাতে শিক্ষার্থীরা কোনো কিছু করবে এবং অভিজ্ঞতা অর্জনের মাধ্যমে শিখবে। আপনি যদি শ্রেণীকক্ষের শিক্ষক হন তবে মনে রাখতে হবে কোন পাঠে কোন পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের জন্য উত্তম। আমেরিকার মনোবিজ্ঞানী ও শিক্ষাবিদ জেরম ব্রুনারের আবিষ্কারমূলক তত্ত্ব অনুসারে শিক্ষার্থীরা কাজ করে শেখার মাধ্যমে বা সমস্যা সমাধানের নতুন জ্ঞান বা ধারণা সৃষ্টি করতে পারে। শিক্ষকরা প্রত্যক্ষভাবে কোনো কিছু উপস্থাপন করেন না বরং শিক্ষার্থীদের কাজ করে শিখতে দেন। ব্রুনারের মতে শিক্ষণের বিষয়বস্তুর সঙ্গে শিক্ষার্থীর বাস্তব পরিচয় থাকতে হবে। ব্রুনার তার তত্ত্বে শিক্ষার্থীর বৌদ্ধিক বিকাশের তিনটি ধাপের কথা বলেছেন। যথাÑ সক্রিয়তার স্তর, মূর্ততার স্তর ও সাংকেতিক স্তর। সক্রিয়তার স্তরের সময়সীমা শিশুর তিন বছর পর্যন্ত। এই সময় শিশুরা কোনো কিছু নেড়ে, স্পর্শ করে শেখতে চায়।
মূর্ততার স্তরের সময়সীমা তিন থেকে সাত বা আট বছর। এই স্তরে শিশুর কাছে দৃশ্যমান বা মূর্ত বস্তু প্রাধান্য পায়। সাংকেতিক স্তরে শিশুরা যুক্তি দিয়ে বুঝতে চায়, তারা সংকেত বুঝতে পারে। তারা বিমূর্ত চিন্তন করতে পারে। শিক্ষাবিদ ডেভিড কোল্ব আবিষ্কামূলক শিখন তত্ত্বের জন্য অত্যন্ত বিখ্যাত হয়ে রয়েছেন। ডেভিড কোল্ব ১৯৮৪ সালে আবিষ্কারমূলক শিখনের একটি মডেল প্রকাশ করেন। কোল্ব এই মডেলে তুলে ধরেন যে শিক্ষার্থীরা শেখে চারটি ধাপে, যথাÑ মূর্ত শিখন, প্রতিফলিত পর্যবেক্ষণ, বিমূর্ত ধারণা ও সক্রিয় পর্যবেক্ষণ। প্রথম দুটি ধাপে শিক্ষার্থীরা অভিজ্ঞতা অর্জন করবে এবং শেষ দুটি ধাপে অভিজ্ঞতাকে রূপান্তরিত করতে পারবে। কোল্ব মনে করতেন যে, শিক্ষার্থীদের এই চারটি ধাপে কার্যকর শিখন হয়।
মূর্ত শিখন তখনি ঘটবে যখন শিক্ষার্থীরা নতুন একটি অভিজ্ঞতার সঙ্গে পুরানো অভিজ্ঞতার সংযোগ করতে পারবে বা মেলাতে পারবে। প্রতিফলিত পর্যবেক্ষণের এই ধাপে শিক্ষার্থীরা একা একা চিন্তা করে এবং এক ধরনের অন্যান্য অভিজ্ঞতা নিয়ে চিন্তা করে। বিমূর্ত ধারণার ধাপে শিক্ষার্থীরা নতুন ধারণা তৈরি করতে পারে। সক্রিয় ধারণার ধাপে শিক্ষার্থীরা তাদের ধারণার পরিবর্তন করতে পারে। তারা ইচ্ছেমতো সমস্যা সমাধানে কাজে লাগাতে পারে। ডেভিড কোল্বের মতে শিক্ষার্থীরা বই পড়ে শেখার চেয়ে কোনো কিছু দেখে দেখে বা আলোচনা করে অনেক বেশি শেখে।
আবিষ্কারমূলক শিক্ষণ পদ্ধতির সুবিধা হলো শিক্ষার্থীরা একটি সমস্যা খুঁজে বের করে। তারা পূর্বে যা শিখেছে সেই আলোকে সমস্যার সমাধান করে। শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ধারণা তৈরি হয়। তারা আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠে। তারা সমস্যা সমাধানে বারবার পূর্ব অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে পারে। শ্রেণীকক্ষে গণিত, জ্যামিতি , বিজ্ঞান শেখার সময় শিক্ষার্থীদের কোনো সমস্যা সমাধানের পূর্ব ধারণা দিতে হবে। তারপর তাদের সমস্যা সমাধান করতে দিলে সমজাতীয় আরো সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
[লেখক : ইন্সট্রাক্টর (সাধারণ), পিটিআই, সোনাতলা, বগুড়া]