alt

উপ-সম্পাদকীয়

স্মার্ট দেশ গড়তে চাই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়

দিদার আলী সরকার

: সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি ধারণা নয়, বরং শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব। স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় বলতে বোঝায় এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদান, গবেষণা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে উন্নত করা। এটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সাথে মিশ্রিত করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত ও ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত অভিজ্ঞতা তৈরি করে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিজস্ব উদ্ভাবন, গবেষণা ও প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন কোর্স, ভার্চুয়াল ল্যাব, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে শিক্ষাদান ও শিক্ষণকে আরও কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। ডেটা বিশ্লেষণ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা এবং তাদের প্রয়োজন অনুসারে সহায়তা প্রদান করতে হবে।

গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করতে হবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সহযোগিতা প্রচার করতে হবে যাতে বৈশ্বিক শ্রমবাজারের জন্য শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত হয়।

শিক্ষার্থীদের শেখার অগ্রগতি ট্র্যাক করার জন্য এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি উন্নত করার জন্য ডেটা ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুসারে শিক্ষাদান করতে হবে। প্রকল্প, গবেষণা এবং ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা প্রদান করতে হবে। নতুন ধারণা তৈরি এবং বাস্তবায়নের জন্য সহায়তা প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রচার করা এবং গবেষণা ফলাফল এবং ডেটা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

গবেষণা করতে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রয়োজন জ্ঞানের সৃজন আর গবেষণা ছাড়া জ্ঞানের সৃজন সম্ভব না। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৫৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু আছে। এর মধ্যে চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হলোÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এই চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাকেন্দ্র সংখ্যা রযেছে ঢাবিতে ৫৮টি, চবিতে ৫টি, জাবিতে ১টি এবং রাবিতে শূন্যটি। (তথ্যসূত্র : ইউজিসি)।

এছাড়াও ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন (৪৯তম) অনুযায়ী, ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে ২০৩টি। সর্বাধিক ১২১টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে তিনটি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে তিনটি এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে দুটি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি এবং ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোন গবেষণা কেন্দ্র। ইউজিসি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণরূপে তৈরি করতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।

গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা পোস্ট তৈরি করা খুবই প্রয়োজন এবং সেখানে শিক্ষকদের প্রধান কাজ হবে শুধু গবেষণা করা। এরই ধারায় এই তত্ত্বাবধানে পিএইচডি এবং পোস্ট ডক গবেষকরা কাজ করবে। এতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হবেন। এখানে অনেক শিক্ষক গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করবে; যা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

সেখানে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার জন্য সুযোগ পায় সেই ধারায় শিক্ষকদের মননশীল হতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। বিভিন্ন গবেষণার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে দিতে হবে। গবেষণার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের গবেষণায় লিপ্ত করার প্রয়াসে প্রতি বছর যেনো বড় পরিসরে সেমিনার আয়োজন করে। যেখানে গবেষণার মূল লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত শেখা-শেখানোর পরিবেশ তৈরি করা, শিক্ষকদের গবেষণা ও জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও কার্যকর ও দক্ষ করে তোলা।

একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে। এটি জ্ঞান অর্জন, উদ্ভাবন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে দেয়। স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান অর্জন এবং বিদ্যমান জ্ঞানের প্রসার ঘটে। গবেষণার ফলে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন উদ্ভাবনের জন্ম দেয়।

সেই সাথে একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার লক্ষ্যে, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ আবাসিক ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন। আবাসিক ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ প্রদান করতে হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, একাগ্রতা এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। একইরূপে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিকীকরণ, সহমর্মিতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হবে। আবাসিক ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে। যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য বন্ধন সৃষ্টি হবে। অবশেষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ বৃদ্ধি হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে এবং গবেষণার জন্য প্রণোদনা প্রদান দিতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।

প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে, ল্যাবরেটরি এবং ক্লাসরুমে আধুনিক সরঞ্জাম স্থাপন করতে হবে। শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণে সংযুক্ত থাকতে হবে। ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের পরামর্শের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নত ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সংখ্যক সুরক্ষা কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। ক্যাম্পাসের উন্নয়নে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।

একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গরূপে ধারণ করতে হলে মানব সম্পদের কোন বিকল্প নেই। মানব সম্পদ একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। দক্ষ ও অনুপ্রাণিত কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান উন্নতি ও সাফল্য অর্জন করতে পারে। মানব সম্পদ পরিকল্পনা হলো একটি পদ্ধতি; যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সঠিক সংখ্যক উপযুক্ত কর্মী সঠিক সময়ে ও সঠিক কাজে স্থাপন করে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য মানব সম্পদ পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য মানব সম্পদের বিকল্প নেই। গবেষণাকে হাতে নিয়ে বাংলাদেশে স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই স্মার্ট ক্যাম্পাস তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। তাই সঠিক পরিকল্পনায় আগামী দিনের স্মার্ট উন্নত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে গবেষণার কোন বিকল্প নেই; আর সেই গবেষণাই হবে একমাত্র হাতিয়ার।

[লেখক : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]

পরিবার : বিশ্বের প্রাচীন প্রতিষ্ঠান

তাপপ্রবাহে ঝুঁকি এড়াতে করণীয়

ডলারের মূল্যবৃদ্ধি : দীর্ঘমেয়াদে সুফল মিলতে পারে

ছবি

কী আছে ট্রাম্পের ভাগ্যে?

ছবি

বাংলার ‘ভাশুর কথাশিল্পী’ শওকত ওসমান

রাজধানীকে বসবাসযোগ্য করুন

সাধারণ মানুষ যাবে কোথায়

মুখপাত্রদের তৈরি নয়, ‘তলাপাত্র’দের তৈরি জোট প্রসঙ্গে

চেকের মামলায় সাফাই সাক্ষী বনাম আসামি

ছবি

ডারউইনের খোঁজে নিউইয়র্কের জাদুঘরে

আদিবাসী হত্যার বিচার কোন পথে

কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করুন

রম্যগদ্য : গলায় বেঁধা বড়শি

খেলার চেয়ে ‘ধুলা’ বেশি

জেগে উঠুক সুকুমার বৃত্তি

প্রসঙ্গ : লোকসভা নির্বাচন

ছবি

বারবার পুড়ছে বাংলাদেশের ফুসফুস

শিশুমৃত্যু রোধে দক্ষ মিডওয়াইফদের ভূমিকা

বিসিএস জ্বরে পুড়ছে তারুণ্য

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বদলে যাওয়া পৃথিবী

নমিনির অনুপস্থিতিতে মৃত ব্যক্তির গচ্ছিত টাকা পাবে কে

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা

হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে প্রয়োজন সচেতনতা

যদি শুধু বিনোদন সংস্কৃতি হয় তাহলে বাকি সব কী?

নতুন কারিকুলামে ইংরেজি শিক্ষা

বন্ধ হোক প্রশ্ন ফাঁস

ইরান-ইসরায়েলের যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা

লোকসান কমাতে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও আগামী বাজেট

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন ও সন্ত্রাস সৃষ্টির দায় কার

ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কাছে দোষ স্বীকারে সাক্ষ্যগত মূল্য ও বাস্তবতা

সমস্যায় জর্জরিত সড়ক, প্রতিকার কী

বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস

শিক্ষক নিয়োগ : পর্বতসম দুর্নীতির সামান্য প্রকাশ

tab

উপ-সম্পাদকীয়

স্মার্ট দেশ গড়তে চাই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়

দিদার আলী সরকার

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪

স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি ধারণা নয়, বরং শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি বিপ্লব। স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় বলতে বোঝায় এমন একটি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাদান, গবেষণা এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমকে উন্নত করা। এটি ঐতিহ্যবাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণাকে প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনের সাথে মিশ্রিত করে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি উন্নত ও ভবিষ্যৎ-প্রস্তুত অভিজ্ঞতা তৈরি করে। আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিজিটাল প্রশাসন ব্যবস্থা চালু করতে হবে এবং স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় ধারণা প্রতিষ্ঠা করতে হলে নিজস্ব উদ্ভাবন, গবেষণা ও প্রযুক্তিতে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন কোর্স, ভার্চুয়াল ল্যাব, মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ইত্যাদি ব্যবহার করে শিক্ষাদান ও শিক্ষণকে আরও কার্যকর ও আকর্ষণীয় করে তুলতে হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে শিক্ষা প্রদান করতে হবে। ডেটা বিশ্লেষণ ব্যবহার করে শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করা এবং তাদের প্রয়োজন অনুসারে সহায়তা প্রদান করতে হবে।

গবেষণা ও উদ্ভাবনের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। সমস্যা সমাধানের জন্য সৃজনশীল চিন্তাভাবনা ও সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনাকে উৎসাহিত করতে হবে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। আন্তর্জাতিক গবেষণা ও সহযোগিতা প্রচার করতে হবে যাতে বৈশ্বিক শ্রমবাজারের জন্য শিক্ষার্থীরা প্রস্তুত হয়।

শিক্ষার্থীদের শেখার অগ্রগতি ট্র্যাক করার জন্য এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি উন্নত করার জন্য ডেটা ব্যবহার করতে হবে। প্রতিটি শিক্ষার্থীর চাহিদা অনুসারে শিক্ষাদান করতে হবে। প্রকল্প, গবেষণা এবং ইন্টার্নশিপের মাধ্যমে ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা প্রদান করতে হবে। নতুন ধারণা তৈরি এবং বাস্তবায়নের জন্য সহায়তা প্রদান করতে হবে। বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে সহযোগিতামূলক গবেষণা প্রচার করা এবং গবেষণা ফলাফল এবং ডেটা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে হবে।

গবেষণা করতে প্রয়োজন দক্ষ জনশক্তি। দক্ষ জনশক্তি তৈরিতে প্রয়োজন জ্ঞানের সৃজন আর গবেষণা ছাড়া জ্ঞানের সৃজন সম্ভব না। বর্তমানে বাংলাদেশে মোট ৫৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনিক কার্যক্রম চালু আছে। এর মধ্যে চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় হলোÑ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। এই চারটি স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে গবেষণাকেন্দ্র সংখ্যা রযেছে ঢাবিতে ৫৮টি, চবিতে ৫টি, জাবিতে ১টি এবং রাবিতে শূন্যটি। (তথ্যসূত্র : ইউজিসি)।

এছাড়াও ইউজিসির সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন (৪৯তম) অনুযায়ী, ৫৩টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে ২০৩টি। সর্বাধিক ১২১টি গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে তিনটি। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে তিনটি এবং শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে দুটি।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি, গোপালগঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা কেন্দ্র রয়েছে একটি এবং ৩৬টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই কোন গবেষণা কেন্দ্র। ইউজিসি সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূর্ণরূপে তৈরি করতে গবেষণার কোনো বিকল্প নেই।

গবেষণার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাদা পোস্ট তৈরি করা খুবই প্রয়োজন এবং সেখানে শিক্ষকদের প্রধান কাজ হবে শুধু গবেষণা করা। এরই ধারায় এই তত্ত্বাবধানে পিএইচডি এবং পোস্ট ডক গবেষকরা কাজ করবে। এতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গবেষণার সঙ্গে যুক্ত হবেন। এখানে অনেক শিক্ষক গবেষণার কাজে মনোনিবেশ করবে; যা পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে গবেষণার পরিবেশ সৃষ্টি হবে।

সেখানে যেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা গবেষণার জন্য সুযোগ পায় সেই ধারায় শিক্ষকদের মননশীল হতে হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের গবেষণার জন্য সুযোগ তৈরি করে দিতে হবে। বিভিন্ন গবেষণার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে দিতে হবে। গবেষণার মান উন্নয়নের জন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের গবেষণায় লিপ্ত করার প্রয়াসে প্রতি বছর যেনো বড় পরিসরে সেমিনার আয়োজন করে। যেখানে গবেষণার মূল লক্ষ্য হবে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্নত শেখা-শেখানোর পরিবেশ তৈরি করা, শিক্ষকদের গবেষণা ও জ্ঞান ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ বৃদ্ধি করা এবং প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আরও কার্যকর ও দক্ষ করে তোলা।

একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে পরিবর্তন করে। এটি জ্ঞান অর্জন, উদ্ভাবন এবং সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করে দেয়। স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণা বাংলাদেশকে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে। বিশ্ববিদ্যালয় গবেষণার মাধ্যমে নতুন জ্ঞান অর্জন এবং বিদ্যমান জ্ঞানের প্রসার ঘটে। গবেষণার ফলে সমাজের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য নতুন উদ্ভাবনের জন্ম দেয়।

সেই সাথে একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করার লক্ষ্যে, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শতভাগ আবাসিক ব্যবস্থা খুবই প্রয়োজন। আবাসিক ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত পরিবেশ প্রদান করতে হবে। ফলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগ, একাগ্রতা এবং শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে। একইরূপে শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিকীকরণ, সহমর্মিতা এবং নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হবে। আবাসিক ব্যবস্থার ফলে শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের সময় ও খরচ সাশ্রয় হবে। যেখানে বিভিন্ন জাতি, ধর্ম, বর্ণের শিক্ষার্থীদের মধ্যে সম্প্রীতি ও ঐক্য বন্ধন সৃষ্টি হবে। অবশেষে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা ও জ্ঞান বিনিময়ের সুযোগ বৃদ্ধি হবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে গবেষণা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে এবং গবেষণার জন্য প্রণোদনা প্রদান দিতে হবে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধি আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে।

প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করে, ল্যাবরেটরি এবং ক্লাসরুমে আধুনিক সরঞ্জাম স্থাপন করতে হবে। শিক্ষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও কর্মশালায় অংশগ্রহণে সংযুক্ত থাকতে হবে। ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যকর ও সাশ্রয়ী মূল্যের খাবার নিশ্চিত করতে হবে। ক্যাম্পাসে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র স্থাপন করে এবং শিক্ষার্থীদের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যের পরামর্শের ব্যবস্থা করতে হবে। ক্যাম্পাস পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য নিয়মিত অভিযান চালাতে হবে। ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ করে পরিবেশবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নত ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিতে হবে। ক্যাম্পাসে পর্যাপ্ত সংখ্যক সুরক্ষা কর্মী নিয়োগ দিতে হবে। ক্যাম্পাসের উন্নয়নে শিক্ষার্থী, শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের মতামত গ্রহণ করতে হবে।

একটি স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণাঙ্গরূপে ধারণ করতে হলে মানব সম্পদের কোন বিকল্প নেই। মানব সম্পদ একটি প্রতিষ্ঠানের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ। দক্ষ ও অনুপ্রাণিত কর্মীদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান উন্নতি ও সাফল্য অর্জন করতে পারে। মানব সম্পদ পরিকল্পনা হলো একটি পদ্ধতি; যার মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানের সঠিক সংখ্যক উপযুক্ত কর্মী সঠিক সময়ে ও সঠিক কাজে স্থাপন করে। প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানের জন্য মানব সম্পদ পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিষ্ঠানের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করে প্রতিষ্ঠানকে টিকিয়ে রাখার জন্য মানব সম্পদের বিকল্প নেই। গবেষণাকে হাতে নিয়ে বাংলাদেশে স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ধারণা ক্রমশ জনপ্রিয়তা বাড়ছে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যেই স্মার্ট ক্যাম্পাস তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারও ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ প্রকল্পের অংশ হিসেবে স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার জন্য কাজ করছে। তাই সঠিক পরিকল্পনায় আগামী দিনের স্মার্ট উন্নত রাষ্ট্র গড়ে তুলতে গবেষণার কোন বিকল্প নেই; আর সেই গবেষণাই হবে একমাত্র হাতিয়ার।

[লেখক : শিক্ষার্থী, শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top