alt

উপ-সম্পাদকীয়

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

: মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

বিশ্বে প্রায় ৪৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশেরই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস। এ রোগে বছরে মারা যাচ্ছে ১৫ লাখ মানুষ। বেশিভাগ লোক জানে না যে, তার ডায়াবেটিস রোগ আছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ৮৪ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম ছিল; কিন্তু আরো ভয়াবহ হলো ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে। পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে উচ্চহারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, নগরায়ণ ও পরিবর্তিত জীবনধারণের কারণে যেমন ডায়াবেটিস বাড়ছে, তেমনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের অর্ধেকেরও বেশি পরে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এমনকি অপরিকল্পিত গর্ভধারনের কারণে শিশু অপুষ্টির শিকার হয় এবং সেই শিশু পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর অতিরিক্ত ওজন হলে তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেশি থাকে।

গর্ভবতী নারীদের দেহে স্বাভাবিক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। কারণ ইনসুলিন মানবদেহে আরো বেশ কিছু কাজে নিয়োজিত। এখন মাতৃদেহ যদি পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে, তাহলে দেহে স্বভাবতই গ্লুকোজ বেড়ে যাবে। গর্ভবতী নারীদের প্লাসেন্টা থেকেও কিছু হরমোন ক্ষরিত হয় যা মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী। এসব নারীদের সন্তান প্রসবের পর আর ডায়াবেটিস থাকে না।এছাড়া জেনেটিক কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। অটিজম বা ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মানুষের এজন্য ডায়াবেটিসে ভোগার সম্ভাবনা বেশি।

পাশাপাশি অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে; যেমন- যদি অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার হয় কিংবা সংক্রমণ হয়, তবে ডায়াবেটিস হতে পারে। হরমোন সমস্যার কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে। কুশিং সিন্ড্রোম বা এক্রোমেগালি, যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের কারণে হয়ে থাকে, এদের ডায়েবেটিসের ওপর প্রভাব আছে। কিছু ওষুধও ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ গ্লুকোকর্টিকয়েড, থায়াজাইড কিংবা ফেনাইটইন জাতীয় ঔষধগুলোর ডায়াবেটিসের কারণ হিসেবে ভূমিকা থাকতে পারে। সাইটো-মেগালো-ভাইরাস, জন্মগত রুবেলা ভাইরাস কিংবা কক্সস্যাকি ভাইরাসগুলোর সংক্রমণ ডায়াবেটিসে প্রভাব পড়ে।

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ওজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওজন বেশি থাকলে তা খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে কমানো আবশ্যক। চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে। একটি খাদ্যতালিকা মেনে চললে সব থেকে ভালো হয়। কোনো ব্যক্তি যদি ইনসুলিন কিংবা অন্যান্য ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করতে থাকে, তাহলে খাবার নিয়মিত খেতে হবে। কেননা কোনো বেলার খাবার বাদ দিলে তার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে।

সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বর্তমানে ডায়াবেটিস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এজন্য সবার মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ সচেতনতাই আমাদের এই বিভীষিকা থেকে দূরে রাখতে পারে।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

লোকসান কমাতে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও আগামী বাজেট

স্মার্ট দেশ গড়তে চাই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন ও সন্ত্রাস সৃষ্টির দায় কার

ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কাছে দোষ স্বীকারে সাক্ষ্যগত মূল্য ও বাস্তবতা

সমস্যায় জর্জরিত সড়ক, প্রতিকার কী

বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস

শিক্ষক নিয়োগ : পর্বতসম দুর্নীতির সামান্য প্রকাশ

সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে

ছবি

চৌবাচ্চার ফুটো এবং আমাদের উন্নয়ন

কিশোর গ্যাং : নষ্ট রাজনীতির বিনষ্ট সংস্কৃতি

মন্ত্রণালয় ভাগ করে লাভবান হলো কারা?

রম্যগদ্য : মর্জিনার কলঙ্কিত দাগ

সোমালিয়ার গরিব জেলেরা কীভাবে জলদস্যু হলো

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপনে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে

মাহতাব হোসাইন মাজেদ

মঙ্গলবার, ১৫ নভেম্বর ২০২২

বিশ্বে প্রায় ৪৬ কোটি ৩০ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ৭৯ শতাংশেরই নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে বসবাস। এ রোগে বছরে মারা যাচ্ছে ১৫ লাখ মানুষ। বেশিভাগ লোক জানে না যে, তার ডায়াবেটিস রোগ আছে। আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিক ফেডারেশনের (আইডিএফ) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ৮৪ লাখ মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। আর প্রতি বছর লক্ষাধিক মানুষ ডায়াবেটিস-সংক্রান্ত জটিলতায় মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে যেমন ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বেশি, তেমনি ডায়াবেটিস বৃদ্ধির হারও বেশি। ২০১৯ সালে বাংলাদেশ শীর্ষ ১০ ডায়াবেটিস সংখ্যাধিক্য দেশের মধ্যে দশম ছিল; কিন্তু আরো ভয়াবহ হলো ২০৩০ ও ২০৪৫ সালে বাংলাদেশ নবম অবস্থানে থাকবে। পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে উচ্চহারে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে বাংলাদেশ, ভারত ও চীনে।

অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে, নগরায়ণ ও পরিবর্তিত জীবনধারণের কারণে যেমন ডায়াবেটিস বাড়ছে, তেমনি গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের সংখ্যাও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, গর্ভকালীন ডায়াবেটিসে আক্রান্ত নারীদের অর্ধেকেরও বেশি পরে টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়। এমনকি অপরিকল্পিত গর্ভধারনের কারণে শিশু অপুষ্টির শিকার হয় এবং সেই শিশু পূর্ণবয়স্ক হওয়ার পর অতিরিক্ত ওজন হলে তার ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি বহুগুণ বেশি থাকে।

গর্ভবতী নারীদের দেহে স্বাভাবিক প্রয়োজনের তুলনায় বেশি ইনসুলিন প্রয়োজন হয়। কারণ ইনসুলিন মানবদেহে আরো বেশ কিছু কাজে নিয়োজিত। এখন মাতৃদেহ যদি পর্যাপ্ত ইনসুলিন উৎপাদনে অক্ষম হয়ে পড়ে, তাহলে দেহে স্বভাবতই গ্লুকোজ বেড়ে যাবে। গর্ভবতী নারীদের প্লাসেন্টা থেকেও কিছু হরমোন ক্ষরিত হয় যা মাতৃত্বকালীন ডায়াবেটিসের জন্য দায়ী। এসব নারীদের সন্তান প্রসবের পর আর ডায়াবেটিস থাকে না।এছাড়া জেনেটিক কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে। অটিজম বা ক্লাইনফেল্টার সিন্ড্রোমে আক্রান্ত মানুষের এজন্য ডায়াবেটিসে ভোগার সম্ভাবনা বেশি।

পাশাপাশি অগ্ন্যাশয়ের সমস্যার কারণে ডায়াবেটিস হতে পারে; যেমন- যদি অগ্ন্যাশয়ে ক্যান্সার হয় কিংবা সংক্রমণ হয়, তবে ডায়াবেটিস হতে পারে। হরমোন সমস্যার কারণেও ডায়াবেটিস হতে পারে। কুশিং সিন্ড্রোম বা এক্রোমেগালি, যা থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হরমোনের কারণে হয়ে থাকে, এদের ডায়েবেটিসের ওপর প্রভাব আছে। কিছু ওষুধও ডায়াবেটিসের কারণ হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ গ্লুকোকর্টিকয়েড, থায়াজাইড কিংবা ফেনাইটইন জাতীয় ঔষধগুলোর ডায়াবেটিসের কারণ হিসেবে ভূমিকা থাকতে পারে। সাইটো-মেগালো-ভাইরাস, জন্মগত রুবেলা ভাইরাস কিংবা কক্সস্যাকি ভাইরাসগুলোর সংক্রমণ ডায়াবেটিসে প্রভাব পড়ে।

ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে ওজন খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ওজন বেশি থাকলে তা খাদ্যাভ্যাস ও ব্যায়ামের মাধ্যমে কমানো আবশ্যক। চিনি এবং মিষ্টি জাতীয় খাবার বাদ দিতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার খাদ্যতালিকায় যুক্ত করতে হবে। একটি খাদ্যতালিকা মেনে চললে সব থেকে ভালো হয়। কোনো ব্যক্তি যদি ইনসুলিন কিংবা অন্যান্য ওষুধ নিয়মিত গ্রহণ করতে থাকে, তাহলে খাবার নিয়মিত খেতে হবে। কেননা কোনো বেলার খাবার বাদ দিলে তার প্রতিক্রিয়া মারাত্মক হতে পারে।

সুষ্ঠু এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। বর্তমানে ডায়াবেটিস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এজন্য সবার মাঝে সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ সচেতনতাই আমাদের এই বিভীষিকা থেকে দূরে রাখতে পারে।

[লেখক : প্রতিষ্ঠাতা, জাতীয় রোগী কল্যাণ সোসাইটি]

back to top