কৃষি বিপণন অধিদপ্তর খুচরা বাজারে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কৃষি বিপণন আইন ২০১৮-এর ৪(ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে এসব পণ্য কেনাবেচার অনুরোধ করেছে অধিদপ্তর। এসব পণ্যের উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবারই প্রথম নয়। অতীতেও সরকার নির্দীষ্ট কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। সেই দাম বাস্তবে মানা হয়নি। এবারও মানা হচ্ছে না। যদিও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার কর্তৃক কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া কতা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন রয়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৮ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে দাম ১৫১ টাকা ৮১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৬২ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা। কিন্তু বাজারে এর দাম দুইশ টাকার আশেপাশে।
গরুর মাংসের উৎপাদন খরচ ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে দাম প্রতি কেজি ৬০৫ টাকা ১৩ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩১ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা।
দর বেঁধে দিয়ে তা কার্যকর না করার তিক্ত অভিজ্ঞতাই মিলছে শুধু। সরকার কঠোর হুঁশিয়ারি দিলে নিত্যপণ্যের দাম কমে না, অনুরোধ করলেও দাম কমে না। তাহলে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের পথে সমস্যাটা কোথায়? বাজার নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি কী সেটা এক প্রশ্ন।
মুক্তবাজারের অর্থনীতির নিয়ম হচ্ছেÑ চাহিদা আর জোগানের ভিত্তিতে পণ্যের দর বাড়বে-কমবে। চাহিদা-জোগানে ভারসাম্য থাকলে দর বেঁধে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। পণ্যের যথেষ্ট জোগান থাকলে আপন নিয়েমেই এর দাম কমার কথা। চাহিদা-জোগানে ভারসাম্য না থাকলে দর বেঁধে দিয়ে সুফল মিলবে না। অবশ্য সিন্ডিকেট ও ব্যাবসায়ীদের অতি মুনাফা করবার মানসিকতার কারণেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে অনেকে মনে করেন। ভোক্তার ভোগের মাত্রাও পণ্যের দাম বাড়াতে পারে। তা সত্ত্বেও বলা যায়, কোনো পণ্যের অব্যহত জোগান নিশ্চিত করা গেলে দীর্ঘদিন ধরে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে রাখা সম্ভব নয়।
বাজারে পণ্যের জোগান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটা করতে হলে প্রয়োজনয়ী পণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে হবে অথবা আমদানি করতে হবে। উৎপাদন খরচ না কমলে উৎপাদক কম মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন না। আর বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হলে বাজারে সেটা ব্যবসায়ীরা অল্প দামে বিক্রি করবে কিভাবে সেটা একটা প্রশ্ন। আমদানিকারকরাও পণ্য এনে নিশ্চয় লাভে বিক্রি করতে চাইবেন। সমস্যা হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পূর্বাপর ভেবে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। চাহিদা ও উৎপাদনে সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। উৎপাদন খরচ কমানোর পথ খুঁজতে হবে। আমদানিতে ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। পাশপাশি বাজার ব্যবস্থাপনা হতে হবে শক্তিশালী, হতে হবে কৌশলী।
মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪
কৃষি বিপণন অধিদপ্তর খুচরা বাজারে ২৯টি পণ্যের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। কৃষি বিপণন আইন ২০১৮-এর ৪(ঝ) ধারার ক্ষমতাবলে নিত্যপ্রয়োজনীয় এসব কৃষিপণ্যের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত নির্ধারিত দামে এসব পণ্য কেনাবেচার অনুরোধ করেছে অধিদপ্তর। এসব পণ্যের উৎপাদন খরচের ভিত্তিতে উৎপাদক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
এবারই প্রথম নয়। অতীতেও সরকার নির্দীষ্ট কিছু পণ্যের দাম বেঁধে দিয়েছিল। সেই দাম বাস্তবে মানা হয়নি। এবারও মানা হচ্ছে না। যদিও মুক্তবাজার অর্থনীতিতে সরকার কর্তৃক কোনো পণ্যের দাম বেঁধে দেয়া কতা যৌক্তিক সেই প্রশ্ন রয়েছে।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, ব্রয়লার মুরগির উৎপাদন খরচ ১৪৫ টাকা ৭৮ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে দাম ১৫১ টাকা ৮১ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ১৬২ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা। কিন্তু বাজারে এর দাম দুইশ টাকার আশেপাশে।
গরুর মাংসের উৎপাদন খরচ ৫৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। উৎপাদক পর্যায়ে দাম প্রতি কেজি ৬০৫ টাকা ১৩ পয়সা, পাইকারি পর্যায়ে ৬৩১ টাকা ৬৯ পয়সা এবং খুচরা পর্যায়ে ৬৬৪ টাকা ৩৯ পয়সা। কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা।
দর বেঁধে দিয়ে তা কার্যকর না করার তিক্ত অভিজ্ঞতাই মিলছে শুধু। সরকার কঠোর হুঁশিয়ারি দিলে নিত্যপণ্যের দাম কমে না, অনুরোধ করলেও দাম কমে না। তাহলে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের পথে সমস্যাটা কোথায়? বাজার নিয়ন্ত্রণের মূল চাবিকাঠি কী সেটা এক প্রশ্ন।
মুক্তবাজারের অর্থনীতির নিয়ম হচ্ছেÑ চাহিদা আর জোগানের ভিত্তিতে পণ্যের দর বাড়বে-কমবে। চাহিদা-জোগানে ভারসাম্য থাকলে দর বেঁধে দেয়ার প্রয়োজন পড়ে না। পণ্যের যথেষ্ট জোগান থাকলে আপন নিয়েমেই এর দাম কমার কথা। চাহিদা-জোগানে ভারসাম্য না থাকলে দর বেঁধে দিয়ে সুফল মিলবে না। অবশ্য সিন্ডিকেট ও ব্যাবসায়ীদের অতি মুনাফা করবার মানসিকতার কারণেও পণ্যের দাম বাড়তে পারে বলে অনেকে মনে করেন। ভোক্তার ভোগের মাত্রাও পণ্যের দাম বাড়াতে পারে। তা সত্ত্বেও বলা যায়, কোনো পণ্যের অব্যহত জোগান নিশ্চিত করা গেলে দীর্ঘদিন ধরে কৃত্রিমভাবে দাম বাড়িয়ে রাখা সম্ভব নয়।
বাজারে পণ্যের জোগান নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। এটা করতে হলে প্রয়োজনয়ী পণ্যের অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়াতে হবে অথবা আমদানি করতে হবে। উৎপাদন খরচ না কমলে উৎপাদক কম মূল্যে বিক্রি করতে পারবেন না। আর বাড়তি দামে পণ্য কিনতে হলে বাজারে সেটা ব্যবসায়ীরা অল্প দামে বিক্রি করবে কিভাবে সেটা একটা প্রশ্ন। আমদানিকারকরাও পণ্য এনে নিশ্চয় লাভে বিক্রি করতে চাইবেন। সমস্যা হচ্ছে ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়েছে।
নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পূর্বাপর ভেবে বাস্তব পদক্ষেপ নিতে হবে। চাহিদা ও উৎপাদনে সামঞ্জস্য থাকা জরুরি। উৎপাদন খরচ কমানোর পথ খুঁজতে হবে। আমদানিতে ভারসাম্য বজায় রাখা দরকার। পাশপাশি বাজার ব্যবস্থাপনা হতে হবে শক্তিশালী, হতে হবে কৌশলী।