alt

উপ-সম্পাদকীয়

আর কত অবন্তিকা আত্মহত্যা করবে

ইমরান ইমন

: বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪
image

ফাইরুজ অবন্তিকা

সম্প্রতি ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তার আত্মহত্যার জন্য দুইজন মানুষকে দায়ী করেছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আরেকজন তার ব্যাচমেট আম্মান সিদ্দিকীকে।

ওই লেখায় অবন্তিকা উল্লেখ করেন, তার ব্যাচমেট আম্মান সিদ্দিকী তাকে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করে। আর প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আম্মানের হয়ে তাকে বিভিন্ন সময়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে এবং বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে তার ছাত্রত্ব খেয়ে ফেলার হুমকি দেয় প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন দৃশ্য দেখারও কি বাকি ছিল! অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় প্রক্টর দ্বীন ইসলাম কী করে দায় এড়াবেন? যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মকা-ে অবন্তিকা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে দ্বীন ইসলাম যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন তা কি তিনি করতে পারেন? একটি সম্ভাবনাময় জীবনকে অপমৃত্যুর কোলে ঠেলে দিলেন! এজন্য কি শেষপর্যন্ত তার কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে বড়া একটা ‘ফাঁদ’। যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এসে নানামুখী যন্ত্রণা আর সহিংসতার শিকার হয়ে নিজেকে বলি দিতে হয়। অবন্তিকা যার জ্বলন্ত উদাহরণ। এরকম হাজারও অবন্তিকার প্রতিনিয়ত অপমৃত্যু ঘটে এমন ফাঁদে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আর শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শুধু শিক্ষার পরিবেশই নয়, ঠিকভাবে বেঁচে থাকারও পরিবেশ নেই। নানা অনিয়ম, সংকট আর সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নষ্ট রাজনীতি ও নৈতিক স্খলন এখন প্রকট আকারে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় তার আদর্শ ও উদ্দেশ্যের জায়গায় আর নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন এখন চরম পর্যায়ে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বীন ইসলাম যার প্রমাণ। মেয়ে শিক্ষার্থীদের তারা নানাভাবে হেনস্থা ও যৌন হয়রানি করে থাকেন। যেগুলো ওপেন-সিক্রেট, সবার জানা; কিন্তু ভুক্তভোগী অনেক মেয়ে নিজের ভবিষ্যত আর সামাজিকতার কথা ভেবে নিশ্চুপ থাকেন। একে ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ বলে মেনে নিয়ে মানিয়ে চলেন। কঠিন এক মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করতে হয়। তবে কেউ কেউ এ যাত্রায় টিকে থাকতে পারেন না। যেমনটা পারেননি ফাইরুজ অবন্তিকা। নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

অবন্তিকার আত্মহত্যা এক নীরব প্রতিবাদ। তার এই আত্মহত্যা আমাদের জন্য বড় এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। তার আত্মবিসর্জন এ সমাজ আর রাষ্ট্রের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শিক্ষাঙ্গনে মেয়েরা কতটা সহিংসতার শিকার হয়, তারা কতটা অনিরাপদ। অবন্তিকার আত্মহত্যা আরেকটি বার্তা দিল, যাতে শিক্ষাঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মতো আর কেউ যাতে এমন সহিংসতার শিকার হয়ে চিরমুক্তির পথ বেছে না নেয়।

আমরা তো এক অবন্তিকাকে হারালাম। আর কোনো অবন্তিকা যাতে সেই পথে না যায়, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবো তো? আর অবন্তিকার অভিযুক্ত ঘাতকদের কি কিছু হবে? বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ‘কিছু না হলেও’ অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস

শিক্ষক নিয়োগ : পর্বতসম দুর্নীতির সামান্য প্রকাশ

সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে

ছবি

চৌবাচ্চার ফুটো এবং আমাদের উন্নয়ন

কিশোর গ্যাং : নষ্ট রাজনীতির বিনষ্ট সংস্কৃতি

মন্ত্রণালয় ভাগ করে লাভবান হলো কারা?

রম্যগদ্য : মর্জিনার কলঙ্কিত দাগ

সোমালিয়ার গরিব জেলেরা কীভাবে জলদস্যু হলো

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

tab

উপ-সম্পাদকীয়

আর কত অবন্তিকা আত্মহত্যা করবে

ইমরান ইমন

image

ফাইরুজ অবন্তিকা

বুধবার, ২০ মার্চ ২০২৪

সম্প্রতি ফাইরুজ অবন্তিকা নামের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। আত্মহত্যার আগে নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে তার আত্মহত্যার জন্য দুইজন মানুষকে দায়ী করেছেন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও আরেকজন তার ব্যাচমেট আম্মান সিদ্দিকীকে।

ওই লেখায় অবন্তিকা উল্লেখ করেন, তার ব্যাচমেট আম্মান সিদ্দিকী তাকে যৌন হয়রানিমূলক মন্তব্য করে। আর প্রক্টর দ্বীন ইসলাম আম্মানের হয়ে তাকে বিভিন্ন সময়ে ডেকে নিয়ে গিয়ে এবং বিভিন্নভাবে হেনস্তা করা শুরু করে। একপর্যায়ে তাকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে তার ছাত্রত্ব খেয়ে ফেলার হুমকি দেয় প্রক্টর দ্বীন ইসলাম।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো জায়গায় এমন দৃশ্য দেখারও কি বাকি ছিল! অবন্তিকার আত্মহত্যার ঘটনায় প্রক্টর দ্বীন ইসলাম কী করে দায় এড়াবেন? যার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর্মকা-ে অবন্তিকা শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হয়ে প্রশাসনিক দায়িত্বে থেকে দ্বীন ইসলাম যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছেন তা কি তিনি করতে পারেন? একটি সম্ভাবনাময় জীবনকে অপমৃত্যুর কোলে ঠেলে দিলেন! এজন্য কি শেষপর্যন্ত তার কোনো দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে?

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বর্তমানে বড়া একটা ‘ফাঁদ’। যেখানে শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে এসে নানামুখী যন্ত্রণা আর সহিংসতার শিকার হয়ে নিজেকে বলি দিতে হয়। অবন্তিকা যার জ্বলন্ত উদাহরণ। এরকম হাজারও অবন্তিকার প্রতিনিয়ত অপমৃত্যু ঘটে এমন ফাঁদে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখন আর শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নেই। শুধু শিক্ষার পরিবেশই নয়, ঠিকভাবে বেঁচে থাকারও পরিবেশ নেই। নানা অনিয়ম, সংকট আর সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নষ্ট রাজনীতি ও নৈতিক স্খলন এখন প্রকট আকারে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয় তার আদর্শ ও উদ্দেশ্যের জায়গায় আর নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নৈতিক ও চারিত্রিক অধঃপতন এখন চরম পর্যায়ে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বীন ইসলাম যার প্রমাণ। মেয়ে শিক্ষার্থীদের তারা নানাভাবে হেনস্থা ও যৌন হয়রানি করে থাকেন। যেগুলো ওপেন-সিক্রেট, সবার জানা; কিন্তু ভুক্তভোগী অনেক মেয়ে নিজের ভবিষ্যত আর সামাজিকতার কথা ভেবে নিশ্চুপ থাকেন। একে ‘স্বাভাবিক প্রক্রিয়া’ বলে মেনে নিয়ে মানিয়ে চলেন। কঠিন এক মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করতে হয়। তবে কেউ কেউ এ যাত্রায় টিকে থাকতে পারেন না। যেমনটা পারেননি ফাইরুজ অবন্তিকা। নিজেকে বিসর্জন দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন তিনি।

অবন্তিকার আত্মহত্যা এক নীরব প্রতিবাদ। তার এই আত্মহত্যা আমাদের জন্য বড় এক দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে। তার আত্মবিসর্জন এ সমাজ আর রাষ্ট্রের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে শিক্ষাঙ্গনে মেয়েরা কতটা সহিংসতার শিকার হয়, তারা কতটা অনিরাপদ। অবন্তিকার আত্মহত্যা আরেকটি বার্তা দিল, যাতে শিক্ষাঙ্গনে বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মতো আর কেউ যাতে এমন সহিংসতার শিকার হয়ে চিরমুক্তির পথ বেছে না নেয়।

আমরা তো এক অবন্তিকাকে হারালাম। আর কোনো অবন্তিকা যাতে সেই পথে না যায়, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারবো তো? আর অবন্তিকার অভিযুক্ত ঘাতকদের কি কিছু হবে? বিচারহীনতার সংস্কৃতিতে ‘কিছু না হলেও’ অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

[লেখক : প্রাবন্ধিক]

back to top