বাবুল রবিদাস
বির্তক হলো একটি প্রাচীনতম শিল্প। বিশ্বের দৃঢ় অভিজাত শক্তিশালী সৃজনশীল সমাদৃত ও যৌক্তিক শিল্পসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম। ধারণা করা হয় খিস্টপূর্ব ৪৮৯ প্রাচীন গ্রীসের সোফিস্ট সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বির্তকের প্রকাশ সোফিস্ট প্রোটাগোরাসের মাধ্যমে বির্তকের গোড়াপত্তন। মহামতি দার্শনিক সক্রেটিসের মাধ্যমে বির্তক জনপ্রিয়তা এবং প্রায়োগিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
বির্তক শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ উবনধঃব। যার আবিধানিক অর্থ তর্কাতর্কি বা বাদানুবাদ, বাদ প্রতিবাদ, বাগবিত-া প্রভৃতি। বির্তক শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই বি মানে বিশেষ এবং তর্ক মানে বাদানুবাদ। অর্থাৎ বিশেষ বাদানুবাদ বা আলোচনা ও পর্যালোচনাকেই বির্তক বলে।
বির্তক হচ্ছে তর্ক ও বির্তকের খেলা। একটি নির্ধারিত বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে নিজের যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করাই বির্তকের মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে যুক্তির আয়নায় নিজের ভাব ও ভাবনাগুলোকে প্রতিফলিত করা যায়। এর ফলে বাড়ে চিন্তার পরিধি, জ্ঞান ও বুদ্ধি আর প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান। একটি বিষয়কে বৃত্তের বাইরে গিয়ে কিভাবে আর কতভাবে ভাবা যায়। তা একজন বিতার্কিকের থেকে ভালো কেউ বলতে পারবে না।
বির্তাকিকরা হচ্ছে খাল বিলের পানি, খাড়ির পানি যখন নদীতে প্রবেশ করে তখন আর শব্দ থাকে না। পদ্মা- যমুনা-মেঘনা নদীর পানি মিলিত হয়ে যখন সাগরে পৌঁছায় তখন নিজের কাছে বৈশিষ্ট হারায়। সেই পানি হয় সমুদ্রের পানি বিশাল সমুদ্র। বিতার্কিকরা তর্কে মাধ্যমে সমুদ্রের মতো হয়ে পড়ে।
একপক্ষের মতামতের সঙ্গে অন্যপক্ষের মতামত এক না-ও হতে পারে। কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা জন্য আমি জীবন দিতে পারি। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের এই উক্তির আনুষ্ঠানিক চর্চা করাই হলো বির্তক। তবে বির্তক নিয়ে আমাদের দেশের বহু মানুষের চিন্তা-ভাবনা এখনো ইতিবাচক নয়। তারা মনে করেন বিতার্কিকরা সব কিছুতেই তর্ক-বির্তক করে সামাজিক দেয়াল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন।
বির্তকবিরোধীরা বিশ্বাস করেন যুক্তি দিয়ে মুক্তি মেলে না কিংবা বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। কিন্তু এই দুটো বাক্যতেই ভুল রয়েছে। যেমনÑ কখন বিশ্বাসে আস্থা রাখতে হবে আর কখন যুক্তিতে ভর করে এগোতে হবে সেটি একজন বিতার্কিক তার বিচক্ষণতা দিয়ে বোঝাতে সক্ষম হন। কুসংস্কার অন্ধ বিশ্বাসের গলিতে আলো ফেলে যুক্তিবাদী মানুষরাই এগোতে পারেন। প্রশ্ন করে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সত্য উন্মোচন করার মতো সাহসী প্রজন্ম গড়ে তোলে এই বির্তক।
বির্তক প্রতিযোগিতায় থাকে যুক্তি পাল্টা যুক্তি কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগতভাবে মনে আঘাত বা প্রতিঘাত দিয়ে নয়। যাচাইবিহীন জ্ঞানকে বিশ্বাস বলে এটা তারা জানে না।
তর্ক-বির্তক অনুষ্ঠানে উঠে আসে গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস ও অচল কিছু মান্ধাতা সমাজের প্রথা বা রেওয়াজ।
আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে ‘বানী’ দিয়ে প্রকাশ ও মানুষের কাছে সেটিকে গ্রহণযোগ্য দিতে তর্ক-বির্তক অত্যন্ত চমৎকার একটি মাধ্যম। বির্তক ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবককে জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তিতে ও সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশিত করে তোলে। আইনের প্রয়োগ, ভুলক্রুটি অসংগতি পুথিগত বিদ্যা, সমাজ-বাস্তবতা ও নিজস্ব চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষের বক্তব্যকে তুলে ধরা হয়।
যুক্তিবাদী মানুষেরাই প্রকৃত পক্ষে পরবর্তীতে মহান ব্যক্তিরুপে স্মরনীয় হয়। যেমনÑ আজকে স্মরণ করব সন্তু গুরু রবিদাস জী, কবির দাস জী, নানক জী প্রমুখ। তারা অকাট্য ‘বানী’ দিয়েছেন। তাদের বানী আজও জ্ঞানী-গুণী, দার্শনিক ও কবিরা স্মরণ ও বরণ করেন। তখনকার সময় তাদের বানীতে রাজা-রানিরা পর্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন। যেমন চিতরের রানি মীরা বাঈ গুরু রবিদাস জীর ‘বানীতে’ মুগ্ধ হয়ে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
এ কারণেই দলিত-বঞ্চিত, অনগ্রসর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, অন্ত্যজ, মুলনিবাসী, হরিজন জাতিকে লেখাপড়া শিখতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের তথ্য-প্রযুক্তিতে জ্ঞানী হয়ে তর্কবাগিশ রূপে গড়ে উঠতে হবে।
অর্থাৎ অনগ্রসর প্রান্তিক জাতির রতœ বি আর ড. আম্বেদকর ঘরে ঘরে তৈরি করে সমাজব্যবস্থায় বিবর্তন আনতে হবে এবং বির্তক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চিন্তা-ধারা পাল্টে দিতে হবে। যেখানে থাকবে না অস্পৃশ্যতা, ভেদাভেদ, বর্ণবৈষম্য ছোট-বড়। সবাই মানুষ, সবাই সমান। পৃথিবীতে ইতোপূর্বে রাজার ছেলে রাজা হতো।
কিন্তু সেই পদ্ধতি আজ র্তক-বির্তকের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়েছে। আগে রাজা-বাদশা যা বলতেন তাই আইনরূপে গণ্য হতো। কিন্তু আধুনিক যুগে বলা হয় রাজা-ফকির, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সবাই সমান। কাউকে ইচ্ছা করলেই গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যায় না। যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে তখনই বিভিন্ন প্রশ্ন বা তর্ক-বির্তকের জন্ম দেয়। যা পক্ষ-বিপক্ষকে দুর্বল করে তোলে। এটি সম্ভব হয়েছে জনগণের সরকারের আইনের শাসন থেকে। সরকারের নীতি হলো ‘কাউকে পেছনে রেখে উন্নয়ন নয়।’
তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গরিব, শ্রমিক, দলিত-বঞ্চিতদের সঙ্গে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগোতে হবে। শিক্ষিত জাতিকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, তর্ক-বির্তকে, তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধশালী করে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মেধা বৃদ্ধিমূলক বির্তক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নি¤েœর আট দফা দাবি উল্লেখ করা যেতে পারে। দলিত জনগোষ্ঠীর ৮ দফা দাবি :
১। জাত-পাত ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধে প্রস্তাবিত বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে;
২। জাতীয় সংসদে সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে দলিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে;
৩। জাতীয় বাজেটে দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্টভাবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে;
৪। সকল মহানগরী ও পৌরসভায় দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং খাসজমি বরাদ্দের মাধ্যমে গ্রামীণ দলিতদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;
৫। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্যঝুঁকি বিশেষ বিবেচনায় এনে তাদের জন্য সুরক্ষার সকল উপকরণ সরবরাহ করতে হবে;
৬। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলিত শিক্ষার্থীদের ‘ভর্তি কোটা’ প্রবর্তন করতে হবে;
৭। সকল ধরনের সরকারি চাকরিতে দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য ‘কোটা ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করতে হবে;
৮। দলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া রোধকল্পে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিশেষ উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]
বাবুল রবিদাস
বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ ২০২৪
বির্তক হলো একটি প্রাচীনতম শিল্প। বিশ্বের দৃঢ় অভিজাত শক্তিশালী সৃজনশীল সমাদৃত ও যৌক্তিক শিল্পসমূহের মধ্যে একটি অন্যতম। ধারণা করা হয় খিস্টপূর্ব ৪৮৯ প্রাচীন গ্রীসের সোফিস্ট সম্প্রদায়ের মাধ্যমে বির্তকের প্রকাশ সোফিস্ট প্রোটাগোরাসের মাধ্যমে বির্তকের গোড়াপত্তন। মহামতি দার্শনিক সক্রেটিসের মাধ্যমে বির্তক জনপ্রিয়তা এবং প্রায়োগিকতা ও গ্রহণযোগ্যতা লাভ করে।
বির্তক শব্দের ইংরেজি প্রতিশব্দ উবনধঃব। যার আবিধানিক অর্থ তর্কাতর্কি বা বাদানুবাদ, বাদ প্রতিবাদ, বাগবিত-া প্রভৃতি। বির্তক শব্দটিকে বিশ্লেষণ করলে আমরা পাই বি মানে বিশেষ এবং তর্ক মানে বাদানুবাদ। অর্থাৎ বিশেষ বাদানুবাদ বা আলোচনা ও পর্যালোচনাকেই বির্তক বলে।
বির্তক হচ্ছে তর্ক ও বির্তকের খেলা। একটি নির্ধারিত বিষয়ের পক্ষে-বিপক্ষে নিজের যুক্তি উপস্থাপনের মাধ্যমে বক্তব্যকে প্রতিষ্ঠিত করাই বির্তকের মূল উদ্দেশ্য। এর মাধ্যমে যুক্তির আয়নায় নিজের ভাব ও ভাবনাগুলোকে প্রতিফলিত করা যায়। এর ফলে বাড়ে চিন্তার পরিধি, জ্ঞান ও বুদ্ধি আর প্রতিপক্ষের প্রতি সম্মান। একটি বিষয়কে বৃত্তের বাইরে গিয়ে কিভাবে আর কতভাবে ভাবা যায়। তা একজন বিতার্কিকের থেকে ভালো কেউ বলতে পারবে না।
বির্তাকিকরা হচ্ছে খাল বিলের পানি, খাড়ির পানি যখন নদীতে প্রবেশ করে তখন আর শব্দ থাকে না। পদ্মা- যমুনা-মেঘনা নদীর পানি মিলিত হয়ে যখন সাগরে পৌঁছায় তখন নিজের কাছে বৈশিষ্ট হারায়। সেই পানি হয় সমুদ্রের পানি বিশাল সমুদ্র। বিতার্কিকরা তর্কে মাধ্যমে সমুদ্রের মতো হয়ে পড়ে।
একপক্ষের মতামতের সঙ্গে অন্যপক্ষের মতামত এক না-ও হতে পারে। কিন্তু তোমার মত প্রকাশের স্বাধীনতা জন্য আমি জীবন দিতে পারি। ফরাসি দার্শনিক ভলতেয়ারের এই উক্তির আনুষ্ঠানিক চর্চা করাই হলো বির্তক। তবে বির্তক নিয়ে আমাদের দেশের বহু মানুষের চিন্তা-ভাবনা এখনো ইতিবাচক নয়। তারা মনে করেন বিতার্কিকরা সব কিছুতেই তর্ক-বির্তক করে সামাজিক দেয়াল ভেঙে ফেলার চেষ্টা করেন।
বির্তকবিরোধীরা বিশ্বাস করেন যুক্তি দিয়ে মুক্তি মেলে না কিংবা বিশ্বাসে মিলায় বস্তু তর্কে বহুদূর। কিন্তু এই দুটো বাক্যতেই ভুল রয়েছে। যেমনÑ কখন বিশ্বাসে আস্থা রাখতে হবে আর কখন যুক্তিতে ভর করে এগোতে হবে সেটি একজন বিতার্কিক তার বিচক্ষণতা দিয়ে বোঝাতে সক্ষম হন। কুসংস্কার অন্ধ বিশ্বাসের গলিতে আলো ফেলে যুক্তিবাদী মানুষরাই এগোতে পারেন। প্রশ্ন করে যুক্তিতর্কের মাধ্যমে সত্য উন্মোচন করার মতো সাহসী প্রজন্ম গড়ে তোলে এই বির্তক।
বির্তক প্রতিযোগিতায় থাকে যুক্তি পাল্টা যুক্তি কিন্তু কাউকে ব্যক্তিগতভাবে মনে আঘাত বা প্রতিঘাত দিয়ে নয়। যাচাইবিহীন জ্ঞানকে বিশ্বাস বলে এটা তারা জানে না।
তর্ক-বির্তক অনুষ্ঠানে উঠে আসে গোঁড়ামি, কুসংস্কার, অন্ধ বিশ্বাস ও অচল কিছু মান্ধাতা সমাজের প্রথা বা রেওয়াজ।
আমাদের চিন্তা-ভাবনাকে ‘বানী’ দিয়ে প্রকাশ ও মানুষের কাছে সেটিকে গ্রহণযোগ্য দিতে তর্ক-বির্তক অত্যন্ত চমৎকার একটি মাধ্যম। বির্তক ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবককে জ্ঞান-বিজ্ঞান, তথ্য-প্রযুক্তিতে ও সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশিত করে তোলে। আইনের প্রয়োগ, ভুলক্রুটি অসংগতি পুথিগত বিদ্যা, সমাজ-বাস্তবতা ও নিজস্ব চিন্তার প্রয়োগ ঘটিয়ে বিষয়টির পক্ষে-বিপক্ষের বক্তব্যকে তুলে ধরা হয়।
যুক্তিবাদী মানুষেরাই প্রকৃত পক্ষে পরবর্তীতে মহান ব্যক্তিরুপে স্মরনীয় হয়। যেমনÑ আজকে স্মরণ করব সন্তু গুরু রবিদাস জী, কবির দাস জী, নানক জী প্রমুখ। তারা অকাট্য ‘বানী’ দিয়েছেন। তাদের বানী আজও জ্ঞানী-গুণী, দার্শনিক ও কবিরা স্মরণ ও বরণ করেন। তখনকার সময় তাদের বানীতে রাজা-রানিরা পর্যন্ত মুগ্ধ হয়েছিলেন। যেমন চিতরের রানি মীরা বাঈ গুরু রবিদাস জীর ‘বানীতে’ মুগ্ধ হয়ে শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন।
এ কারণেই দলিত-বঞ্চিত, অনগ্রসর, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, অন্ত্যজ, মুলনিবাসী, হরিজন জাতিকে লেখাপড়া শিখতে হবে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের তথ্য-প্রযুক্তিতে জ্ঞানী হয়ে তর্কবাগিশ রূপে গড়ে উঠতে হবে।
অর্থাৎ অনগ্রসর প্রান্তিক জাতির রতœ বি আর ড. আম্বেদকর ঘরে ঘরে তৈরি করে সমাজব্যবস্থায় বিবর্তন আনতে হবে এবং বির্তক প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে চিন্তা-ধারা পাল্টে দিতে হবে। যেখানে থাকবে না অস্পৃশ্যতা, ভেদাভেদ, বর্ণবৈষম্য ছোট-বড়। সবাই মানুষ, সবাই সমান। পৃথিবীতে ইতোপূর্বে রাজার ছেলে রাজা হতো।
কিন্তু সেই পদ্ধতি আজ র্তক-বির্তকের মধ্য দিয়ে বিলুপ্ত হয়েছে। আগে রাজা-বাদশা যা বলতেন তাই আইনরূপে গণ্য হতো। কিন্তু আধুনিক যুগে বলা হয় রাজা-ফকির, ধনী-গরিব, উঁচু-নিচু সবাই সমান। কাউকে ইচ্ছা করলেই গ্রেপ্তার বা হয়রানি করা যায় না। যদি এর ব্যতিক্রম ঘটে তখনই বিভিন্ন প্রশ্ন বা তর্ক-বির্তকের জন্ম দেয়। যা পক্ষ-বিপক্ষকে দুর্বল করে তোলে। এটি সম্ভব হয়েছে জনগণের সরকারের আইনের শাসন থেকে। সরকারের নীতি হলো ‘কাউকে পেছনে রেখে উন্নয়ন নয়।’
তাই স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে গরিব, শ্রমিক, দলিত-বঞ্চিতদের সঙ্গে নিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এগোতে হবে। শিক্ষিত জাতিকে জ্ঞানে-বিজ্ঞানে, তর্ক-বির্তকে, তথ্য-প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধশালী করে আত্মনির্ভরশীল হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। মেধা বৃদ্ধিমূলক বির্তক প্রতিযোগিতার আয়োজন করতে হবে। স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে নি¤েœর আট দফা দাবি উল্লেখ করা যেতে পারে। দলিত জনগোষ্ঠীর ৮ দফা দাবি :
১। জাত-পাত ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য প্রতিরোধে প্রস্তাবিত বৈষম্য বিলোপ আইন দ্রুত প্রণয়ন করতে হবে;
২। জাতীয় সংসদে সাধারণ ও সংরক্ষিত আসনে দলিত জনগোষ্ঠীর সংখ্যানুপাতে প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে হবে;
৩। জাতীয় বাজেটে দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য সুনির্দিষ্টভাবে ‘সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি’র আওতায় বরাদ্দ বাড়াতে হবে;
৪। সকল মহানগরী ও পৌরসভায় দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে এবং খাসজমি বরাদ্দের মাধ্যমে গ্রামীণ দলিতদের ভূমির অধিকার নিশ্চিত করতে হবে;
৫। পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্যঝুঁকি বিশেষ বিবেচনায় এনে তাদের জন্য সুরক্ষার সকল উপকরণ সরবরাহ করতে হবে;
৬। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দলিত শিক্ষার্থীদের ‘ভর্তি কোটা’ প্রবর্তন করতে হবে;
৭। সকল ধরনের সরকারি চাকরিতে দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য ‘কোটা ব্যবস্থা’ প্রবর্তন করতে হবে;
৮। দলিত শিক্ষার্থীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ঝরে পড়া রোধকল্পে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ এবং বিশেষ উপবৃত্তির পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে।
[লেখক : আইনজীবী, জজ কোর্ট, জয়পুরহাট]