মিথুশিলাক মুরমু
গত ১২ মার্চ রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলাধীন শিমলা দিঘীপাড়া আদিবাসী গ্রামের কৃষক রমল সরেন এবং প্রতিবেশী শরিফুল ইসলামের মধ্যে রোপিত জমিতে গভীর নলকূপের পানি নেয়া নিয়ে তর্ক-বির্তক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্যা প্রায় ৭টার সময়। মাঠে তেমন লোকজন ছিল না। চল্লিশর্ধো রমল সরেনকে যুবক শরিফুল সহজেই ধরাশায়ী করে। আদিবাসী সাঁওতালরা বরাবরই বৃহত্তর সম্প্রদায় কর্তৃক নিগৃহিত ও বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। সেদিনও আদিবাসীদের জমিতে গভীর নলকূপের লাইন দেয়া হলে একটি জমিতে হওয়ার পরই পাশর্^বর্তী জমিতে শরিফুল পানি নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। রমল সরেন শরিফুলকে বোঝানোর চেষ্টা করে, একটি জমিতে পানি হয়েছে কিন্তু অপর পাশে থাকা আরো দুটি জমি বাকি রয়েছে। দুটি জমিতে পানি দেয়া হলেই শরিফুলকে পানি নেয়ার পরামর্শ দেন।
যেহেতু এখন গভীর নলকূপ থেকে পানি নেয়ার ক্ষেত্রে কার্ড সিস্টেম রয়েছে, সেক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি তার আবাদি জমিতে পানি দেয়া শেষ না হলে; অপর কোনো ব্যক্তি কার্ড প্রবেশ করাতে পারে না। কিন্তু সেদিন শরিফুল কোনো কথা তোয়াক্কা না করেই জোরপূর্বক তার নিজের জমিতে পানি নেয়ার চেষ্টা চালায়। একপ্রকার পেশিশক্তির বলেই কার্ড প্রবেশ না করেই নিজের জমিতে পানি নেয়ার পাঁয়তারা করে। ঘটনার পরই পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে এমন বিবেচনা করে রমল সরেন ওইদিনই গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। গোদাগাড়ী থানার ওসি তদন্তের নির্দেশ দেন এবং গত ১৮ মার্চ স্থানীয় গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে দুপক্ষের উপস্থিতিতে সমাধান করা হয়। দুপক্ষের মধ্যে সমাধান হয়েছে ঠিকই কিন্তু টেনশন থেকেই গেছে। এজন্য গভীর নলকূপ থেকে পানি গ্রহণে ও বণ্টনে প্রয়োজন গভীর পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা এবং ফলো-আপ করা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের যেসব জায়গায় আদিবাসীদের বসবাস রয়েছে, বিশেষ করে সে স্থানগুলোতেই সবচেয়ে বেশি পানি সংকট রয়েছে বলে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে। এই আদিবাসীরা পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে কিংবা বর্গা জমিতে ধান চাষ করে থাকে অর্থাৎ এদের জীবনচক্রটি মূলত কৃষিকেন্দ্রিক। শুধু পুরুষ নয়, নারীরাও সমান তালে মাঠে-ময়দানে ফসল উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত। তারপরও দারিদ্র্যতা তাদের পিছু ছাড়ে না। বরেন্দ্র অঞ্চলের নয়টি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের অবস্থা খুবই খারাপ, সেখানকার ৪১ ভাগ মানুষ খাবার পানি পাচ্ছে না। বিশেষ করে গোদাগাড়ী, তানোর, গোমস্তাপুর, নিয়ামতপুর, সাপাহারসহ ৯টি উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়নও অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পুরো বরেন্দ্র এলাকায় ১৭ হাজারের বেশি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে এ অঞ্চলের গড় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৮ মিটার। ওই সময়কালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও রাজশাহীর তানোর উপজেলার কিছু এলাকায় সর্বোচ্চ স্তর ছিল ২১ মিটার। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ১৫ মিটার ছেড়ে যায়। ২০২১ খ্রিস্টাব্দে বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর গড়ে ১৮ মিটারে বৃদ্ধি পায় এবং বিশেষ করে গোমস্তাপুরে ৪৬.৮৬ রেকর্ড করা হয়। পানির স্তর বৃদ্ধি বলতে ভূগর্ভস্থ পানির হ্রাসকে নির্দেশ করে। ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন, নগর উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেছেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে যারা পানি দেন, তারা অরাজকতা তৈরি করেন। টাকা নিয়েও পানি দেন না। সেখানকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কোণঠাসা করে রেখেছেন তারা। এই জায়গায় কাজ করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিকে বাদ দেয়া যাবে না, তবে ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে, ...না হলে খাদ্যনিরাপত্তার সংকট তৈরি হবে।’
১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সৃষ্টির আগে বরেন্দ্র ভূমিতে একটি ফসলই কৃষকরা চাষাবাদ করেছে। আদিবাসীরাও বরেন্দ্রের ঊষর ভূমিতে ফলিয়েছে সোনালি ফসল। নব্বইয়ের দশকের পরই বরেন্দ্র ভূমির দৃশ্য দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে, গড়ে ওঠে অসাধু চক্র, তৈরি করে প্রজেক্টের পর প্রজেক্ট। গভীর নলকূপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে দহরমমহরম ভাব জমিয়ে তোলে। এই চক্রটি বিঘার পর বিঘা চাষ করে, আর যাদের ছিটেফোঁটা জমি আছে; তাদের জমি দিতে বাধ্য করে।
এভাবেই আদিবাসীরা স্বল্প পরিমাণে জমি চাষাবাদ করলেও পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ধরণা ধরতে হয়। পানি কিনে নিয়ে কৃষককে করতে হয় ফসল চাষ, যাদের কাছ থেকে পানি কিনতে হয় তাদের কাছে জিম্মি কৃষক। যেহেতু আদিবাসী কৃষকরা সংখ্যায় কম, দারিদ্র, অল্প জমি চাষ করে; সেজন্যেই তাদের সঙ্গে পেরে ওঠে না। অন্যের জমিতে কামলা খেটে ও সামান্য জমি চাষবাদের সুযোগ আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করে থাকে। আমরা গোদাগাড়ীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।
২০২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চে অভিনাথ ও রবি মার্ডী জমিতে পানি না পাওয়ায় বিষপানে আত্মহত্যা করে। ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ এপ্রিল একই গ্রামের মুকুল সরেনও বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ লিটার পানি। যথাসময়ে জমিতে পানির সংকুলান না হলেসমস্ত শ্রমই বৃথা, না হয় ধান, না হয় পরিবারের সচ্ছলতা।
একসময় বৃষ্টির জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দারা হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, আদিবাসীরা ধর্মানুযায়ী ¯্রষ্টার কাছে দুহাত তুলে প্রার্থনা করেছেন। বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যেকার পারস্পারিক সম্প্রীতি, ভালোবাসা, দেয়া-নেয়া রীতি বিদ্যমান ছিল। প্রত্যেকেই আকুল হয়ে ¯্রষ্টার কাছে মিনতী করেছেন যাতে করে ভূপৃষ্ঠকে শীতল করেন। আজকের প্রজন্মরা ¯্রষ্টার পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিরোধ ও বৈষম্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পানি এখন একটি চিহ্নিত চক্রের হাতে বন্দি। সমবণ্টন নীতি থেকে আমরা এখন ভোগবাদী, পুঁজিবাদী, আর্থিক লাভবানের প্রচেষ্টায় মত্ত হয়ে পড়েছি। ভূগর্ভস্থ পানি প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক জনগণ, কোনো ব্যক্তি বা চক্র নয়। যা অগ্রাধিকারভিত্তিতে, ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে বণ্টন করা উচিত।
[লেখক : কলামিস্ট]
মিথুশিলাক মুরমু
শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪
গত ১২ মার্চ রাজশাহী গোদাগাড়ী উপজেলাধীন শিমলা দিঘীপাড়া আদিবাসী গ্রামের কৃষক রমল সরেন এবং প্রতিবেশী শরিফুল ইসলামের মধ্যে রোপিত জমিতে গভীর নলকূপের পানি নেয়া নিয়ে তর্ক-বির্তক ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। ঘটনাটি ঘটে সন্ধ্যা প্রায় ৭টার সময়। মাঠে তেমন লোকজন ছিল না। চল্লিশর্ধো রমল সরেনকে যুবক শরিফুল সহজেই ধরাশায়ী করে। আদিবাসী সাঁওতালরা বরাবরই বৃহত্তর সম্প্রদায় কর্তৃক নিগৃহিত ও বৈষম্যের শিকার হয়ে থাকে। সেদিনও আদিবাসীদের জমিতে গভীর নলকূপের লাইন দেয়া হলে একটি জমিতে হওয়ার পরই পাশর্^বর্তী জমিতে শরিফুল পানি নেওয়ার প্রচেষ্টা চালায়। রমল সরেন শরিফুলকে বোঝানোর চেষ্টা করে, একটি জমিতে পানি হয়েছে কিন্তু অপর পাশে থাকা আরো দুটি জমি বাকি রয়েছে। দুটি জমিতে পানি দেয়া হলেই শরিফুলকে পানি নেয়ার পরামর্শ দেন।
যেহেতু এখন গভীর নলকূপ থেকে পানি নেয়ার ক্ষেত্রে কার্ড সিস্টেম রয়েছে, সেক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি তার আবাদি জমিতে পানি দেয়া শেষ না হলে; অপর কোনো ব্যক্তি কার্ড প্রবেশ করাতে পারে না। কিন্তু সেদিন শরিফুল কোনো কথা তোয়াক্কা না করেই জোরপূর্বক তার নিজের জমিতে পানি নেয়ার চেষ্টা চালায়। একপ্রকার পেশিশক্তির বলেই কার্ড প্রবেশ না করেই নিজের জমিতে পানি নেয়ার পাঁয়তারা করে। ঘটনার পরই পরিস্থিতি অবনতি হতে পারে এমন বিবেচনা করে রমল সরেন ওইদিনই গোদাগাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। গোদাগাড়ী থানার ওসি তদন্তের নির্দেশ দেন এবং গত ১৮ মার্চ স্থানীয় গোদাগাড়ী ইউনিয়ন পরিষদে দুপক্ষের উপস্থিতিতে সমাধান করা হয়। দুপক্ষের মধ্যে সমাধান হয়েছে ঠিকই কিন্তু টেনশন থেকেই গেছে। এজন্য গভীর নলকূপ থেকে পানি গ্রহণে ও বণ্টনে প্রয়োজন গভীর পর্যবেক্ষণ, নীতিমালা এবং ফলো-আপ করা।
বরেন্দ্র অঞ্চলের যেসব জায়গায় আদিবাসীদের বসবাস রয়েছে, বিশেষ করে সে স্থানগুলোতেই সবচেয়ে বেশি পানি সংকট রয়েছে বলে গবেষণায় দেখা যাচ্ছে। এই আদিবাসীরা পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত জমিতে কিংবা বর্গা জমিতে ধান চাষ করে থাকে অর্থাৎ এদের জীবনচক্রটি মূলত কৃষিকেন্দ্রিক। শুধু পুরুষ নয়, নারীরাও সমান তালে মাঠে-ময়দানে ফসল উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত। তারপরও দারিদ্র্যতা তাদের পিছু ছাড়ে না। বরেন্দ্র অঞ্চলের নয়টি উপজেলায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তরের অবস্থা খুবই খারাপ, সেখানকার ৪১ ভাগ মানুষ খাবার পানি পাচ্ছে না। বিশেষ করে গোদাগাড়ী, তানোর, গোমস্তাপুর, নিয়ামতপুর, সাপাহারসহ ৯টি উপজেলার ৩৭টি ইউনিয়নও অতি উচ্চ পানি সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
পুরো বরেন্দ্র এলাকায় ১৭ হাজারের বেশি গভীর নলকূপ বসানো হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৮৫ থেকে ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে এ অঞ্চলের গড় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ছিল ৮ মিটার। ওই সময়কালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর ও রাজশাহীর তানোর উপজেলার কিছু এলাকায় সর্বোচ্চ স্তর ছিল ২১ মিটার। ২০১০ খ্রিস্টাব্দে ভূগর্ভস্থ পানির গড় স্তর ১৫ মিটার ছেড়ে যায়। ২০২১ খ্রিস্টাব্দে বরেন্দ্র এলাকায় পানির স্তর গড়ে ১৮ মিটারে বৃদ্ধি পায় এবং বিশেষ করে গোমস্তাপুরে ৪৬.৮৬ রেকর্ড করা হয়। পানির স্তর বৃদ্ধি বলতে ভূগর্ভস্থ পানির হ্রাসকে নির্দেশ করে। ব্র্যাকের জলবায়ু পরিবর্তন, নগর উন্নয়ন ও দুর্যোগ ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কর্মসূচির পরিচালক মো. লিয়াকত আলী বলেছেন, ‘বরেন্দ্র অঞ্চলে যারা পানি দেন, তারা অরাজকতা তৈরি করেন। টাকা নিয়েও পানি দেন না। সেখানকার ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কোণঠাসা করে রেখেছেন তারা। এই জায়গায় কাজ করতে হবে। বরেন্দ্র অঞ্চলে কৃষিকে বাদ দেয়া যাবে না, তবে ধরনে পরিবর্তন আনতে হবে, ...না হলে খাদ্যনিরাপত্তার সংকট তৈরি হবে।’
১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) সৃষ্টির আগে বরেন্দ্র ভূমিতে একটি ফসলই কৃষকরা চাষাবাদ করেছে। আদিবাসীরাও বরেন্দ্রের ঊষর ভূমিতে ফলিয়েছে সোনালি ফসল। নব্বইয়ের দশকের পরই বরেন্দ্র ভূমির দৃশ্য দ্রুত পাল্টাতে শুরু করে, গড়ে ওঠে অসাধু চক্র, তৈরি করে প্রজেক্টের পর প্রজেক্ট। গভীর নলকূপের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের সঙ্গে দহরমমহরম ভাব জমিয়ে তোলে। এই চক্রটি বিঘার পর বিঘা চাষ করে, আর যাদের ছিটেফোঁটা জমি আছে; তাদের জমি দিতে বাধ্য করে।
এভাবেই আদিবাসীরা স্বল্প পরিমাণে জমি চাষাবাদ করলেও পানি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের ধরণা ধরতে হয়। পানি কিনে নিয়ে কৃষককে করতে হয় ফসল চাষ, যাদের কাছ থেকে পানি কিনতে হয় তাদের কাছে জিম্মি কৃষক। যেহেতু আদিবাসী কৃষকরা সংখ্যায় কম, দারিদ্র, অল্প জমি চাষ করে; সেজন্যেই তাদের সঙ্গে পেরে ওঠে না। অন্যের জমিতে কামলা খেটে ও সামান্য জমি চাষবাদের সুযোগ আর্থিকভাবে সচ্ছল হওয়ার প্রাণান্ত প্রচেষ্টা করে থাকে। আমরা গোদাগাড়ীর ঘটনার পুনরাবৃত্তি চাই না।
২০২২ খ্রিস্টাব্দের মার্চে অভিনাথ ও রবি মার্ডী জমিতে পানি না পাওয়ায় বিষপানে আত্মহত্যা করে। ২০২৩ খ্রিস্টাব্দের ৯ এপ্রিল একই গ্রামের মুকুল সরেনও বিষপানে আত্মহত্যার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এক কেজি ধান উৎপাদন করতে খরচ হয়েছে ১ হাজার ২০০ লিটার পানি। যথাসময়ে জমিতে পানির সংকুলান না হলেসমস্ত শ্রমই বৃথা, না হয় ধান, না হয় পরিবারের সচ্ছলতা।
একসময় বৃষ্টির জন্য বরেন্দ্র অঞ্চলের বাসিন্দারা হিন্দু, মুসলমান, খ্রিস্টান, আদিবাসীরা ধর্মানুযায়ী ¯্রষ্টার কাছে দুহাত তুলে প্রার্থনা করেছেন। বৃষ্টিকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যেকার পারস্পারিক সম্প্রীতি, ভালোবাসা, দেয়া-নেয়া রীতি বিদ্যমান ছিল। প্রত্যেকেই আকুল হয়ে ¯্রষ্টার কাছে মিনতী করেছেন যাতে করে ভূপৃষ্ঠকে শীতল করেন। আজকের প্রজন্মরা ¯্রষ্টার পানি নিয়ে দ্বন্দ্ব-বিরোধ ও বৈষম্যের দিকে ধাবিত হচ্ছে। পানি এখন একটি চিহ্নিত চক্রের হাতে বন্দি। সমবণ্টন নীতি থেকে আমরা এখন ভোগবাদী, পুঁজিবাদী, আর্থিক লাভবানের প্রচেষ্টায় মত্ত হয়ে পড়েছি। ভূগর্ভস্থ পানি প্রাকৃতিক সম্পদের মালিক জনগণ, কোনো ব্যক্তি বা চক্র নয়। যা অগ্রাধিকারভিত্তিতে, ভালোবাসা, সম্প্রীতি ও ন্যায্যতার ভিত্তিতে বণ্টন করা উচিত।
[লেখক : কলামিস্ট]