alt

উপ-সম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে প্রবাসীদের অবদান

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

: মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া কেবলমাত্র ভৌগোলিক স্বাধীনতার মাধ্যমে কোনো দেশের স্বাধীনতা কখনো অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে না। একটি দেশের স্বাধীনতার স্বাদ প্রকৃত অর্থে ভোগ করতে হলে সবার আগে জরুরি অর্থনৈতিক মুক্তি বা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এ কথা বলতেই হয়, আমাদের দেশটির বয়স তিপ্পান্ন বছর পূর্ণ হলেও এখনো পুরোপুরি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মুখ দেখেনি। তবে এ পর্যন্ত যতটুকু অর্জিত হয়েছে তার পেছনে যে কয়টি বিশেষ শ্রেণী রয়েছে তন্মধ্যে প্রবাসীদের অবদানের কথাটি সবার আগে চলে আসে। প্রবাসীরা কেবল স্বাধীন হওয়ার পরই দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে না, বরং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তহবিল সংগ্রহ ও স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন এবং যুদ্ধ শেষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশটি যখন স্বাধীন হলো, কেবলমাত্র বিশাল জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত একটি ভূখ- ছাড়া আমরা কিছুই পাইনি। পাকিস্তানি হানাদাররা দেশটিকে আর দেশ রাখেনি। একটি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করেছিল। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট কিছুই ছিল না। সরকারি অর্থনৈতিক ভা-ার, খাদ্যশস্যের ভা-ার ছিল একেবারেই শূন্য। মোট কথা যুদ্ধের কারণে কৃষি, শিল্প, পরিবহন, বাণিজ্যসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েনি। পাকিরা শুধু আমাদের অর্থনৈতিকভাবেই শূন্য করে দেয়নি, বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের মেরে মেধাশূন্যও করে দিয়েছিল। এমন একটি চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে সিংহভাগ নিরক্ষর মানুষের একটি দেশকে পুনর্গঠন ও ভারত থেকে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ কাজ ছিল না। এমন একটি কঠিন কাজকেই ভালোবেসেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তার বুদ্ধিমত্তা, নেতৃত্ব ও ভালোবাসা দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের নজর কেড়ে যখন সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তিনি নির্মম হত্যার শিকার হন। তার হত্যা মানে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অগ্রযাত্রার হত্যা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গরিব দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। গ্রাম-গঞ্জে উন্নয়নের ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। যে অজো পাড়া গাঁ থেকে ঢাকা যেতে দুদিন লাগতো এখন একদিনেই আসা যাওয়া করা যায়। যে বাজারে কেবল বাঁশ-কাঠ বিক্রি হতো এখন সেখানে বিক্রি হয় টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোবাইলসহ আধুনিক জিনিসপত্র। মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। বেস্তত বিশ্বের অনেক দেশই এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে দেখে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা চাট্রেখানি কাজ নয়। মেট্রোরেলের মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা যেখানে ছিল কেবল স্বপ্ন তা আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এই যে দেশ এগিয়ে চলছে, উন্নয়নের পথে হাঁটছে এর পেছনে যেমন সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অবদান রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রবাসীদের অনন্য অবদান। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে ভৌগোলিক স্বাধীনতা দিয়েছে বটে কিন্তু প্রবাসীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেয়ার জন্য এখনো যুদ্ধ করে চলছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রক্ত পানি করে, স্বজনদের ছেড়ে গিয়ে বিদেশি মালিকদের অত্যাচার ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে তারা অর্থ রোজগার করেন। দেশ থেকে অনেকে মনে করেন প্রবাসীরা বেহেশতে আছে। তা মোটেও সত্য নয়। প্রবাসীদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এ কষ্টের পয়সাই তারা দেশে পাঠায়। সরকারি তথ্যানুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে প্রতি বছর গড়ে প্রবাসীরা প্রায় ১৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে যা কিনা বৈদেশিক রিজার্ভকে মজবুত এবং অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। শুধু তাই নয়, প্রবাসীরা বিভিন্ন জনহিতৈষী কর্মকা-ের পাশাপাশি ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এজন্য প্রবাসীদের রেমিট্যান্সযোদ্ধা বলা হয়ে থাকে। রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছেÑ এ যোদ্ধারা বহুলাংশেই অবহেলিত। দেশে পা রেখেই তারা হেনস্তার শিকার হন। এয়ারপোর্ট থেকেই তা শুরু হয়। বাড়িতে পৌঁছার পরও অনেককে শঙ্কিত থাকতে হয়। টাকা-পয়সা দাবি করে উড়ো চিঠি আসে। যে প্রবাসী দেশের উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ঠিকিয়ে রাখার জন্য নিজের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে বলি দিয়ে বিদেশি মালিকদের অধীনে পরাধীন জীবনযাপন করতেও কুণ্ঠিত হননা সেই প্রবাসীকে যথাযথ মূল্যায়ন বা সম্মান না দিয়ে উল্টো যখন বিভিন্ন কায়দায় নাজেহাল ও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তখন তা হৃদয়ে পীড়ন ঘটায় বৈকি। স্বাধীনতার চুয়ান্নতম দিবস পালিত হবে এবার। দেশটি প্রৌঢ়ত্বের শেষ পর্যায়ে পৌঁছালেও এ কথা আজ বলতেই হয় এখন পর্যন্ত প্রবাসীরা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। যদিও বর্তমান সরকার প্রবাসীদের সম্মানার্থে গত বছর থেকে প্রতি বছর ৩০ ডিসেম্বরকে জাতীয় প্রবাসী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এ উদারতাকে আমি স্বাগত জানাই। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই কেবল প্রবাসী অবদানের স্বীকৃতি ফোটে উঠে না। প্রবাসী অবদানকে স্বীকার করতে হলে, স্বীকৃতি দিতে হলে, সম্মান জানাতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো একটি প্রবাসী তালিকা তৈরি করতে হবে যা বছর বছর হালনাগাদের আওতাধীন থাকবে। যেসব প্রবাসী অবসর ও কষ্টকর জীবনযাপন করছে তাদেরকে ন্যূনতম ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি।

প্রবাসী পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির ক্ষেত্রে অন্যান্য শ্রেণী-গোষ্ঠীর মতো কোটার ব্যবস্থা নির্ধারণ করা আবশ্যক। প্রবাসী কর্মকা-ের ওপর ভিত্তি করে সম্মাননাসূচক বিভিন্ন পুরস্কার বা অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। আশা করি এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে প্রবাসীবান্ধব এ সরকার উপরোক্ত বিষয়গুলো আমলে নেবেন।

[লেখক : কবি, আয়ারল্যান্ড প্রবাসী]

বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস

শিক্ষক নিয়োগ : পর্বতসম দুর্নীতির সামান্য প্রকাশ

সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে

ছবি

চৌবাচ্চার ফুটো এবং আমাদের উন্নয়ন

কিশোর গ্যাং : নষ্ট রাজনীতির বিনষ্ট সংস্কৃতি

মন্ত্রণালয় ভাগ করে লাভবান হলো কারা?

রম্যগদ্য : মর্জিনার কলঙ্কিত দাগ

সোমালিয়ার গরিব জেলেরা কীভাবে জলদস্যু হলো

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

tab

উপ-সম্পাদকীয়

মুক্তিযুদ্ধের আগে ও পরে প্রবাসীদের অবদান

সাজেদুল চৌধুরী রুবেল

মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ ২০২৪

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া কেবলমাত্র ভৌগোলিক স্বাধীনতার মাধ্যমে কোনো দেশের স্বাধীনতা কখনো অর্থবহ হয়ে উঠতে পারে না। একটি দেশের স্বাধীনতার স্বাদ প্রকৃত অর্থে ভোগ করতে হলে সবার আগে জরুরি অর্থনৈতিক মুক্তি বা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এ কথা বলতেই হয়, আমাদের দেশটির বয়স তিপ্পান্ন বছর পূর্ণ হলেও এখনো পুরোপুরি অর্থনৈতিক স্বাধীনতার মুখ দেখেনি। তবে এ পর্যন্ত যতটুকু অর্জিত হয়েছে তার পেছনে যে কয়টি বিশেষ শ্রেণী রয়েছে তন্মধ্যে প্রবাসীদের অবদানের কথাটি সবার আগে চলে আসে। প্রবাসীরা কেবল স্বাধীন হওয়ার পরই দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছে না, বরং ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তহবিল সংগ্রহ ও স্বাধীনতার পক্ষে জনমত গঠন এবং যুদ্ধ শেষে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর দেশটি যখন স্বাধীন হলো, কেবলমাত্র বিশাল জনগোষ্ঠী অধ্যুষিত একটি ভূখ- ছাড়া আমরা কিছুই পাইনি। পাকিস্তানি হানাদাররা দেশটিকে আর দেশ রাখেনি। একটি ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত করেছিল। রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট কিছুই ছিল না। সরকারি অর্থনৈতিক ভা-ার, খাদ্যশস্যের ভা-ার ছিল একেবারেই শূন্য। মোট কথা যুদ্ধের কারণে কৃষি, শিল্প, পরিবহন, বাণিজ্যসহ এমন কোনো খাত নেই যেখানে এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েনি। পাকিরা শুধু আমাদের অর্থনৈতিকভাবেই শূন্য করে দেয়নি, বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের মেরে মেধাশূন্যও করে দিয়েছিল। এমন একটি চ্যালেঞ্জিং মুহূর্তে সিংহভাগ নিরক্ষর মানুষের একটি দেশকে পুনর্গঠন ও ভারত থেকে ফিরে আসা এক কোটি শরণার্থীর পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মোটেই সহজ কাজ ছিল না। এমন একটি কঠিন কাজকেই ভালোবেসেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধু তার বুদ্ধিমত্তা, নেতৃত্ব ও ভালোবাসা দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের নজর কেড়ে যখন সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন তখনই তিনি নির্মম হত্যার শিকার হন। তার হত্যা মানে বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অগ্রযাত্রার হত্যা। অনেক চড়াই-উতরাই পেরিয়ে গরিব দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। গ্রাম-গঞ্জে উন্নয়নের ছোঁয়া ছড়িয়ে পড়েছে। যে অজো পাড়া গাঁ থেকে ঢাকা যেতে দুদিন লাগতো এখন একদিনেই আসা যাওয়া করা যায়। যে বাজারে কেবল বাঁশ-কাঠ বিক্রি হতো এখন সেখানে বিক্রি হয় টিভি, ফ্রিজ, এসি, মোবাইলসহ আধুনিক জিনিসপত্র। মানুষের জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে। বেস্তত বিশ্বের অনেক দেশই এখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোলমডেল হিসেবে দেখে। হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করা চাট্রেখানি কাজ নয়। মেট্রোরেলের মতো আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা যেখানে ছিল কেবল স্বপ্ন তা আজ আর স্বপ্ন নয়, বাস্তব। এই যে দেশ এগিয়ে চলছে, উন্নয়নের পথে হাঁটছে এর পেছনে যেমন সরকার বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বের অবদান রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রবাসীদের অনন্য অবদান। মুক্তিযোদ্ধারা অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করে দেশকে ভৌগোলিক স্বাধীনতা দিয়েছে বটে কিন্তু প্রবাসীরা অর্থনৈতিক স্বাধীনতা দেয়ার জন্য এখনো যুদ্ধ করে চলছে। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে, রক্ত পানি করে, স্বজনদের ছেড়ে গিয়ে বিদেশি মালিকদের অত্যাচার ও মানসিক নির্যাতন সহ্য করে তারা অর্থ রোজগার করেন। দেশ থেকে অনেকে মনে করেন প্রবাসীরা বেহেশতে আছে। তা মোটেও সত্য নয়। প্রবাসীদের অনেক কষ্ট করতে হয়। এ কষ্টের পয়সাই তারা দেশে পাঠায়। সরকারি তথ্যানুযায়ী, বিগত বছরগুলোতে প্রতি বছর গড়ে প্রবাসীরা প্রায় ১৭.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স দেশে পাঠাচ্ছে যা কিনা বৈদেশিক রিজার্ভকে মজবুত এবং অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। শুধু তাই নয়, প্রবাসীরা বিভিন্ন জনহিতৈষী কর্মকা-ের পাশাপাশি ব্যবসায়িক উন্নয়ন এবং বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ অবদান রাখতে সক্ষম হচ্ছেন। এজন্য প্রবাসীদের রেমিট্যান্সযোদ্ধা বলা হয়ে থাকে। রূঢ় বাস্তবতা হচ্ছেÑ এ যোদ্ধারা বহুলাংশেই অবহেলিত। দেশে পা রেখেই তারা হেনস্তার শিকার হন। এয়ারপোর্ট থেকেই তা শুরু হয়। বাড়িতে পৌঁছার পরও অনেককে শঙ্কিত থাকতে হয়। টাকা-পয়সা দাবি করে উড়ো চিঠি আসে। যে প্রবাসী দেশের উন্নয়নের জন্য, অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ঠিকিয়ে রাখার জন্য নিজের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে বলি দিয়ে বিদেশি মালিকদের অধীনে পরাধীন জীবনযাপন করতেও কুণ্ঠিত হননা সেই প্রবাসীকে যথাযথ মূল্যায়ন বা সম্মান না দিয়ে উল্টো যখন বিভিন্ন কায়দায় নাজেহাল ও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয় তখন তা হৃদয়ে পীড়ন ঘটায় বৈকি। স্বাধীনতার চুয়ান্নতম দিবস পালিত হবে এবার। দেশটি প্রৌঢ়ত্বের শেষ পর্যায়ে পৌঁছালেও এ কথা আজ বলতেই হয় এখন পর্যন্ত প্রবাসীরা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হচ্ছে না। যদিও বর্তমান সরকার প্রবাসীদের সম্মানার্থে গত বছর থেকে প্রতি বছর ৩০ ডিসেম্বরকে জাতীয় প্রবাসী দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারের এ উদারতাকে আমি স্বাগত জানাই। কিন্তু এর মধ্য দিয়েই কেবল প্রবাসী অবদানের স্বীকৃতি ফোটে উঠে না। প্রবাসী অবদানকে স্বীকার করতে হলে, স্বীকৃতি দিতে হলে, সম্মান জানাতে হলে মুক্তিযোদ্ধাদের মতো একটি প্রবাসী তালিকা তৈরি করতে হবে যা বছর বছর হালনাগাদের আওতাধীন থাকবে। যেসব প্রবাসী অবসর ও কষ্টকর জীবনযাপন করছে তাদেরকে ন্যূনতম ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা সময়ের দাবি।

প্রবাসী পরিবারের ছেলেমেয়েদের স্কুল-কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও চাকরির ক্ষেত্রে অন্যান্য শ্রেণী-গোষ্ঠীর মতো কোটার ব্যবস্থা নির্ধারণ করা আবশ্যক। প্রবাসী কর্মকা-ের ওপর ভিত্তি করে সম্মাননাসূচক বিভিন্ন পুরস্কার বা অ্যাওয়ার্ড প্রদানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা জরুরি। আশা করি এবারের স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের প্রাক্কালে দাঁড়িয়ে প্রবাসীবান্ধব এ সরকার উপরোক্ত বিষয়গুলো আমলে নেবেন।

[লেখক : কবি, আয়ারল্যান্ড প্রবাসী]

back to top