মোশারফ হোসেন
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশু পৃথিবীতে নবাগত। চারিপাশের পরিবেশ সম্পর্কে অসীম কৌতূহল। মহাসমূদ্রের নাবিকেরা যেমন ধ্রুবতারাকে লক্ষ্য করে বিশাল সমুদ্রে পাড়ি জমায়, তেমনি শৈশবেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে জীবনযুদ্ধে পাড়ি জমাতে হয়।
একটি শিশু অতি শৈশবকাল থেকে বাবা-মায়ের নিবিড় সান্নিধ্যেই শুধু নয়, শিশুটির জীবনব্যাপী দিক-নির্দেশনার নিয়ামক শক্তি হচ্ছে বাবা-মা। জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন সাধনার। প্রয়োজন একনিষ্ঠ শ্রম, সঠিক দিক নির্দেশনা, সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ। জীবনের চলার পথে চাই নির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথ রেখা সেই পথ রেখাই সফলতার দুয়ারে উপনীত করবে। সেজন্য সূচনাপর্বেই লক্ষ্য স্থির করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি পর্বে বাবা মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
পরিবারের ক্ষুদ্রতম গ-িতে একজন অপরিণত অবোধ শিশু আয়ত্ত করে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়বোধ, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য এমনকি জীবনগড়ার নিশানায়াত্ত সে নির্ধারণ করে এই সীমাবদ্ধ আলয় থেকে যুগ থেকে যুগান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে বাবা-মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং সর্বজনবিদিত। একটা শিশুর জীবনটাকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে গড়ে তুলতে তথা জীবনমুখী বাস্তববাদী হতে বাবা-মায়ের ভূমিকা বর্ণনাতীত। বাবা-মায়ের সুদূরপ্রসারি চিন্তার ঘাটতি, সজাগ দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতিতে জীবনে নেমে আসতে পারে মহাবিপদ। লক্ষ্য স্থিরহীন শিশুর জীবন বিপন্নতার দোলনায় দুলতে পারে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের বিশ্লষণে বলা হয়েছে- বিশ্বের প্রায় ৫৫ শতাংশ শিশু খেলা বা শিশুকালের নানা শিক্ষনীয় কাজে বাবা-মায়ের সঙ্গ পায় না। শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকর বিকাশ-ভালবাসা, খেলাধুলা, নিরাপত্তা এবং পুষ্টিকর খাবারের যথাযথ পরিচর্যাহীনতায় শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চতার মুখ থুবড়ে পড়ে। কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।
আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান শিশুদের স্বাস্থ্য শিক্ষাগ্রহণ ও মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা নির্ধারণ, উন্নত ভবিষ্যত লক্ষ্য অর্জনে বাবা-মায়ের সহায়ক ভূমিকা শিশুর আগামীর ভবিষ্যৎ গাঁথুনি মজবুত হয়। সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে ওঠে। শিশুরা যখন তাদের শৈশবকালে যতœ ও উদ্দীপনাময় পরিবেশে কাটায় তখন তাদের মস্তিষ্ক অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নতুন স্নায়ু সংযোগ ঘটে।
গবেষকরা এটাও বলেছেন, সহিংস পরিবেশে, যতœ-উদ্দীপনার অভাব শিশুদের মানসিক বিকাশ উন্নত ভবিষ্যৎ গঠন বাধাগ্রস্ত হয়ে শিশুরা বিপথগামীতার দিকে বাধিত হয়। নানাদিক বিবেচনায় শিশুর লক্ষ্য নির্ধারণে বাবা-মায়ের ভূমিকা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর অস্তিতের সবটুকুই আবেগ দিয়ে মোড়া। এই আবেগ ক্রমে ক্রমে বড় হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে প্রভাবিত হয়। শিশুর সব রকম আচরণ- অনুভূতি প্রকাশ সম্পর্কে শারিরীক-মানসিক বিকাশ ভাবনায় বাবা-মা অধিক সজাগি হলে শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের পথ-পরিক্রমা মসৃণ হবে। বিপথগামী না হয়ে মানবিক মানুষ হওয়ার দিশা পাবে দেশ ও দশের জন্য আর্শিরবাদ হবে। তাই বাবা-মায়ের উচিত শিশুর প্রতি যতœশীল গভীর উপলদ্ধি ও প্রজ্ঞা দিয়ে শিশুর ভবিষ্যৎ বির্নিমাণে সার্বিক দিক বিবেচনা করা। মানব সমাজকে সুস্থ সুন্দর ও কুলুষ মুক্ত রাখার জন্য শিশুর প্রতি সদয় অনুভূতিপূর্ণ ব্যবহার। শিশুর সার্বিক বিকাশে বাবা-মায়ের সঠিক ভূমিকা একান্ত জরুরি। দক্ষ মানবসম্পদ মানসিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠনে বাবা-মায়ের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক : প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান, সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা]
মোশারফ হোসেন
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। শিশু পৃথিবীতে নবাগত। চারিপাশের পরিবেশ সম্পর্কে অসীম কৌতূহল। মহাসমূদ্রের নাবিকেরা যেমন ধ্রুবতারাকে লক্ষ্য করে বিশাল সমুদ্রে পাড়ি জমায়, তেমনি শৈশবেই জীবনের লক্ষ্য স্থির করে জীবনযুদ্ধে পাড়ি জমাতে হয়।
একটি শিশু অতি শৈশবকাল থেকে বাবা-মায়ের নিবিড় সান্নিধ্যেই শুধু নয়, শিশুটির জীবনব্যাপী দিক-নির্দেশনার নিয়ামক শক্তি হচ্ছে বাবা-মা। জীবনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যকে সার্থক করে তুলতে হলে প্রয়োজন সাধনার। প্রয়োজন একনিষ্ঠ শ্রম, সঠিক দিক নির্দেশনা, সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ। জীবনের চলার পথে চাই নির্দিষ্ট এবং সুপরিকল্পিত পথ রেখা সেই পথ রেখাই সফলতার দুয়ারে উপনীত করবে। সেজন্য সূচনাপর্বেই লক্ষ্য স্থির করে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি পর্বে বাবা মায়ের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
পরিবারের ক্ষুদ্রতম গ-িতে একজন অপরিণত অবোধ শিশু আয়ত্ত করে ভালো-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়বোধ, সত্য-মিথ্যার পার্থক্য এমনকি জীবনগড়ার নিশানায়াত্ত সে নির্ধারণ করে এই সীমাবদ্ধ আলয় থেকে যুগ থেকে যুগান্তরে, দেশ থেকে দেশান্তরে বাবা-মায়ের ভূমিকা অনস্বীকার্য এবং সর্বজনবিদিত। একটা শিশুর জীবনটাকে সুস্থ স্বাভাবিকভাবে গড়ে তুলতে তথা জীবনমুখী বাস্তববাদী হতে বাবা-মায়ের ভূমিকা বর্ণনাতীত। বাবা-মায়ের সুদূরপ্রসারি চিন্তার ঘাটতি, সজাগ দৃষ্টিভঙ্গির ঘাটতিতে জীবনে নেমে আসতে পারে মহাবিপদ। লক্ষ্য স্থিরহীন শিশুর জীবন বিপন্নতার দোলনায় দুলতে পারে।
জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফের বিশ্লষণে বলা হয়েছে- বিশ্বের প্রায় ৫৫ শতাংশ শিশু খেলা বা শিশুকালের নানা শিক্ষনীয় কাজে বাবা-মায়ের সঙ্গ পায় না। শিশুদের মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যকর বিকাশ-ভালবাসা, খেলাধুলা, নিরাপত্তা এবং পুষ্টিকর খাবারের যথাযথ পরিচর্যাহীনতায় শিশুর ভবিষ্যৎ অনিশ্চতার মুখ থুবড়ে পড়ে। কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছতে পারে না।
আধুনিক স্নায়ুবিজ্ঞান শিশুদের স্বাস্থ্য শিক্ষাগ্রহণ ও মানসিক চাপ মোকাবিলার ক্ষমতা নির্ধারণ, উন্নত ভবিষ্যত লক্ষ্য অর্জনে বাবা-মায়ের সহায়ক ভূমিকা শিশুর আগামীর ভবিষ্যৎ গাঁথুনি মজবুত হয়। সে আত্মবিশ্বাসী হয়ে বেড়ে ওঠে। শিশুরা যখন তাদের শৈশবকালে যতœ ও উদ্দীপনাময় পরিবেশে কাটায় তখন তাদের মস্তিষ্ক অত্যন্ত দ্রুতগতিতে নতুন স্নায়ু সংযোগ ঘটে।
গবেষকরা এটাও বলেছেন, সহিংস পরিবেশে, যতœ-উদ্দীপনার অভাব শিশুদের মানসিক বিকাশ উন্নত ভবিষ্যৎ গঠন বাধাগ্রস্ত হয়ে শিশুরা বিপথগামীতার দিকে বাধিত হয়। নানাদিক বিবেচনায় শিশুর লক্ষ্য নির্ধারণে বাবা-মায়ের ভূমিকা সমধিক গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর অস্তিতের সবটুকুই আবেগ দিয়ে মোড়া। এই আবেগ ক্রমে ক্রমে বড় হওয়ার সাথে সাথে বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে প্রভাবিত হয়। শিশুর সব রকম আচরণ- অনুভূতি প্রকাশ সম্পর্কে শারিরীক-মানসিক বিকাশ ভাবনায় বাবা-মা অধিক সজাগি হলে শিশুর সুন্দর ভবিষ্যৎ গঠনের পথ-পরিক্রমা মসৃণ হবে। বিপথগামী না হয়ে মানবিক মানুষ হওয়ার দিশা পাবে দেশ ও দশের জন্য আর্শিরবাদ হবে। তাই বাবা-মায়ের উচিত শিশুর প্রতি যতœশীল গভীর উপলদ্ধি ও প্রজ্ঞা দিয়ে শিশুর ভবিষ্যৎ বির্নিমাণে সার্বিক দিক বিবেচনা করা। মানব সমাজকে সুস্থ সুন্দর ও কুলুষ মুক্ত রাখার জন্য শিশুর প্রতি সদয় অনুভূতিপূর্ণ ব্যবহার। শিশুর সার্বিক বিকাশে বাবা-মায়ের সঠিক ভূমিকা একান্ত জরুরি। দক্ষ মানবসম্পদ মানসিক মূল্যবোধসম্পন্ন জাতি গঠনে বাবা-মায়ের ভূমিকা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ।
[লেখক : প্রভাষক, সমাজবিজ্ঞান, সরকারি ইস্পাহানী ডিগ্রি কলেজ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা]