মমিনুর রহমান
বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন আত্মহত্যার মিছিল শুরু হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদ্রিতা গত রোববার আত্মহত্যা করল। পরীক্ষায় নকলের ভুল স্বীকার করার পরও ক্ষমা না পাওয়ায়, লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে সাবিহা নামে কলেজছাত্রী। মিডিয়াগুলো দেখাচ্ছে, এক দিনে ৩ জনের আত্মহত্যা। কয়েক মাস আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী বিবাহের কয়েকদিন পরেই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ রকম অসংখ্য খবর পত্রিকার পাতায় ভেসে আসে আমাদের সম্মুখে। যারা আত্মহত্যা করছে সবাই শিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত। আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, অধিকাংশ আত্মহত্যা অভিমান কিংবা আবেগ থেকে হয়। মনে মনে ভাবি, নিজের জীবনের থেকে কী আবেগের মূল্য বেশি!
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা শিক্ষার আতুরঘর হিসেবে জানি ও মানি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটি শিক্ষার্থীকে ‘ফুল’ হিসেবে গড়ে তোলার পবিত্র স্থান। যেই ফুলের সুবাস দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে প্রস্ফুটিত ও সুভোশিত হবে কিন্তু পাপড়ি ফোটার আগেই অগণিত প্রাণ অকালেই ঝরে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সাদা-কালো, ঠিক-বেঠিকের ব্যবধান জানায় ও শেখায়। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন নৈতিকতার বড় অভাব। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, যে যারা এসব ঘৃণিত কাজ করছে তাদের কিছুই হচ্ছে না। বেশি জোর হলে ৬ মাস কিংবা ২ বছরের জন্য সাময়িক বহিষ্কার হচ্ছে। আমি এটাকে শাস্তি বলতে নারাজ। তবে আরাম দ- বলা যেতে পারে। এখানে শুধু শিক্ষকদের দোষ দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের সঙ্গে চাকরির সিলেবাসের সম্পূর্ণ অমিল রয়েছে। চার কিংবা পাঁচ বছর পড়াশোনা করে চাকরির জন্য একদম নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। ফলে অনিশ্চিত ভবিষ্যত, অর্থনৈতিক কলহের জন্য হতাশায় ভুগতে হচ্ছে। আত্মহত্যা রোধ কিংবা সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সভা বা সেমিনার চোখে পড়ে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তত দুই তিন মাসের মধ্যে একটি সেমিনার করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদেরও দায় রয়েছে। সহপাঠী হিসেবে আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে সময় দিতে কুণ্ঠিতবোধ করছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইরুজ অবন্তিকার পোস্টটি পড়লে সহপাঠী আম্মানের কথা বলা হয়েছে। আমরা আমাদের বন্ধুদের তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। বন্ধুর হতাশার কথা শোনার যেন সময় নেই আমাদের। হাই হ্যালোর মধ্যে বন্দী হয়ে আছি। সবমিলে একজন শিক্ষার্থী হতাশার খাঁচায় নিমজ্জিত হচ্ছে। হতাশার খাঁচাকে ছিন্নভিন্ন করে যে বেরিয়ে আসতে পারবে সে আসল বিজয়ী। জীবন সকাল বেলার সূর্য নয় যে নিয়ম করে উঠবে। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে চলতে হয়। জীবনে দুঃখ-কষ্ট, মান-অভিমান থাকবেই, তাই বলে আত্মহত্যার মতো ঘৃণিত কাজ করা ঠিক নয়।
যে জায়গা থেকে আত্মহত্যার প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা, সচেতনতা বৃদ্ধি করার কথা সেই জায়গায় যেন নৈতিক শিক্ষার বড্ড অভাব। বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিকশিত করে তোলে। গাছ যেমন ডালপালা ছড়িয়ে বিশাল আকার ধারণ করে নিজের অস্তিত্বকে জানান দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের অস্তিত্বকে জাগিয়ে তোলে। আর নৈতিকতা এই শিক্ষাকে উঁচু স্তরে নিয়ে যায়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করে। আত্মহত্যাকে বুড়ো আঙুলি দেখায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আত্মহত্যা রোধে নৈতিক বা ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে আরও সোচ্চার হওয়া উচিত।
[লেখক : শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়]
মমিনুর রহমান
বুধবার, ০৩ এপ্রিল ২০২৪
বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন আত্মহত্যার মিছিল শুরু হয়েছে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেশ কাটতে না কাটতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদ্রিতা গত রোববার আত্মহত্যা করল। পরীক্ষায় নকলের ভুল স্বীকার করার পরও ক্ষমা না পাওয়ায়, লজ্জায় আত্মহত্যা করেছে সাবিহা নামে কলেজছাত্রী। মিডিয়াগুলো দেখাচ্ছে, এক দিনে ৩ জনের আত্মহত্যা। কয়েক মাস আগে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী বিবাহের কয়েকদিন পরেই ছাদ থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ রকম অসংখ্য খবর পত্রিকার পাতায় ভেসে আসে আমাদের সম্মুখে। যারা আত্মহত্যা করছে সবাই শিক্ষিত বা উচ্চ শিক্ষিত। আঁচল ফাউন্ডেশন বলছে, অধিকাংশ আত্মহত্যা অভিমান কিংবা আবেগ থেকে হয়। মনে মনে ভাবি, নিজের জীবনের থেকে কী আবেগের মূল্য বেশি!
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আমরা শিক্ষার আতুরঘর হিসেবে জানি ও মানি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একটি শিক্ষার্থীকে ‘ফুল’ হিসেবে গড়ে তোলার পবিত্র স্থান। যেই ফুলের সুবাস দেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে প্রস্ফুটিত ও সুভোশিত হবে কিন্তু পাপড়ি ফোটার আগেই অগণিত প্রাণ অকালেই ঝরে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের সাদা-কালো, ঠিক-বেঠিকের ব্যবধান জানায় ও শেখায়। কিন্তু বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চিত্র অনেকটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে যেন নৈতিকতার বড় অভাব। সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হচ্ছে, যে যারা এসব ঘৃণিত কাজ করছে তাদের কিছুই হচ্ছে না। বেশি জোর হলে ৬ মাস কিংবা ২ বছরের জন্য সাময়িক বহিষ্কার হচ্ছে। আমি এটাকে শাস্তি বলতে নারাজ। তবে আরাম দ- বলা যেতে পারে। এখানে শুধু শিক্ষকদের দোষ দিয়ে সমস্যা সমাধান হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিলেবাসের সঙ্গে চাকরির সিলেবাসের সম্পূর্ণ অমিল রয়েছে। চার কিংবা পাঁচ বছর পড়াশোনা করে চাকরির জন্য একদম নতুন করে শুরু করতে হচ্ছে। ফলে অনিশ্চিত ভবিষ্যত, অর্থনৈতিক কলহের জন্য হতাশায় ভুগতে হচ্ছে। আত্মহত্যা রোধ কিংবা সচেতনতা বৃদ্ধি করার জন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সভা বা সেমিনার চোখে পড়ে না। বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তত দুই তিন মাসের মধ্যে একটি সেমিনার করা উচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে আমাদেরও দায় রয়েছে। সহপাঠী হিসেবে আমাদের বন্ধুদের সঙ্গে সময় দিতে কুণ্ঠিতবোধ করছি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইরুজ অবন্তিকার পোস্টটি পড়লে সহপাঠী আম্মানের কথা বলা হয়েছে। আমরা আমাদের বন্ধুদের তেমন গুরুত্ব দিচ্ছি না। বন্ধুর হতাশার কথা শোনার যেন সময় নেই আমাদের। হাই হ্যালোর মধ্যে বন্দী হয়ে আছি। সবমিলে একজন শিক্ষার্থী হতাশার খাঁচায় নিমজ্জিত হচ্ছে। হতাশার খাঁচাকে ছিন্নভিন্ন করে যে বেরিয়ে আসতে পারবে সে আসল বিজয়ী। জীবন সকাল বেলার সূর্য নয় যে নিয়ম করে উঠবে। অনেক চড়াই-উতরাই পার করে চলতে হয়। জীবনে দুঃখ-কষ্ট, মান-অভিমান থাকবেই, তাই বলে আত্মহত্যার মতো ঘৃণিত কাজ করা ঠিক নয়।
যে জায়গা থেকে আত্মহত্যার প্রতিরোধ গড়ে তোলার কথা, সচেতনতা বৃদ্ধি করার কথা সেই জায়গায় যেন নৈতিক শিক্ষার বড্ড অভাব। বাস্তবে বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের বিকশিত করে তোলে। গাছ যেমন ডালপালা ছড়িয়ে বিশাল আকার ধারণ করে নিজের অস্তিত্বকে জানান দেয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা আমাদের অস্তিত্বকে জাগিয়ে তোলে। আর নৈতিকতা এই শিক্ষাকে উঁচু স্তরে নিয়ে যায়। সৃষ্টির শ্রেষ্ঠত্বের আসনে অধিষ্ঠিত করে। আত্মহত্যাকে বুড়ো আঙুলি দেখায়। তাই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে আত্মহত্যা রোধে নৈতিক বা ধর্মীয় শিক্ষা প্রসারে আরও সোচ্চার হওয়া উচিত।
[লেখক : শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়]