মিহির কুমার রায়
আর দিন কয়েক বাদেই ঈদুল ফিতর; কিন্তু এখনো ফুটপাতের বাজারে কেনাকাটা জমে ওঠেনি। রাজধানী ঢাকার নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ভরসাস্থল এসব মার্কেটে বলতে গেলে ঈদের বেচাকেনা শুরুই হয়নি। অথচ প্রতিবছর রমজানের অর্ধেক পেরোতে না পেরোতেই এসব বাজারে ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠে।
দোকানিরা বলছেন, ঈদ ঘনিয়ে এলেও বেচাকেনা শুরু না হওয়ায় উদ্বেগে ভুগছেন তারা। বাকি দিনগুলোতে কাঙ্কিত পরিমাণে বিক্রি না হলে রীতিমতো লোকসানে পড়বেন। আর ক্রেতারা বলছেন, সব ধরনের পণ্যের দামই আগের চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় সাধ থাকলেও সাধ্যের সঙ্গে তার সমন্বয় ঘটাতে পারছেন না।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যবসায়ীরা সারাবছর এই সময়ের জন্য মুখিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বিনিয়োগ করছেন। বিশেষ করে পাইকারি মার্কেটের পর এখন খুচরা পর্যায় থেকে ভোক্তারা সাধ্যমতো কেনাকাটা
করছেন।
ফুটপাতে দোকানিরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। কিন্তু ক্রেতার আনাগোনা খুব কম। কেউ কেউ দোকানে ঢুঁ মারছেন। তবে বেশির ভাগই দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ দরদাম করছেন, কিন্তু বিক্রেতার সঙ্গে দাম নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আর কিনতে পারছেন না। সব মিলিয়ে বেচাকেনা খুবই কম। মানুষের হাতে টাকা নেই বলেই হয়তো তারা কিনছে কম।
ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার রোজার শুরু থেকে বেচাকেনা একেবারে নেই বললেই চলে। আগের কয়েকদিনের তুলনায় গত দুই দিনে বিক্রি একটু বেড়েছে। কিন্তু তা ঈদের বাজার বিবেচনায় কিছুই নয়। গত বছর এই সময়ে দিনে যা বিক্রি হয়েছে, এবার তার পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। পোশাক কারখানাগুলোতে বেতন-বোনাস হলে বিক্রি বাড়তে পারে। গার্মেন্ট কারখানায় বেতন বা বোনাস হয়তো এখনো দেওয়া হয়নি। ফুটপাতের কাস্টমারদের বড় অংশই গার্মেন্টসের কর্মীরা। তারা বাজারে না এলে বিক্রি বাড়বে না।
মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নাই। কষ্টে আছে। ফুটপাতের কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলছের, এখন তো অনেক কাস্টমার দেখি, যাদের দেখলেই বোঝা যায় কখনো ফু টপাত থেকে জিনিসপত্র কেনে নাই। এখন বাধ্য হয়ে কিনতেছেন। আমরা তাদের চলাফেরা দেখলেই বুঝি। এই ফুটপাতে নারী-পুরুষের বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি করেন অন্তু। বিকিকিনিতে প্রভাব ফেলছে পণ্যের দামও। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় পেশাকসহ সব পণ্যের দামই কিছুটা করে বেড়েছে; কিন্তু ক্রেতারা বাড়তি খরচ করতে রাজি নন।
ঈদের বেচাকেনা না জমলে পরিবার নিয়ে ফুটপাতের অনেক ব্যবসায়ীই বিপাকে পড়বেন বলে আতঙ্কে ভুগছেন। ব্যবসা ভালো না হলেও দোকান ভাড়া ও বিভিন্ন চাঁদা তো ঠিকই দিতে হচ্ছে। ফলে তাদের খরচ থেমে নেই। এ অবস্থায় তারা বিপাকে পড়েছেন। ক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বেশি। সেই তুলনায় কাপড়ের মান খুব ভালো নয়।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও উন্নত হয়েছে। অস্থিরতা ও উদ্বেগ কেটে যাওয়ায় নতুন বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। এমনকি ভোক্তা ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে দেশে। সব মিলিয়ে ঈদে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসায়-বাণিজ্য হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতিসহ ব্যবসায়ীদের অন্যান্য সংগঠন।
ঈদের অর্থনীতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য হলোÑ ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু আগের কয়েক বছর করোনা মহামারির ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে। এখন করোনা নেই এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও কেটে গেছে। ফলে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে। সাধারণ মানুষ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনাকাটায় শামিল হবেন এটাই স্বাভাবিক।
প্রতি বছর নতুন নতুন চাহিদা বাড়ায় বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি। ঈদকে সামনে রেখে সেজে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় সব রাস্তার ফুটপাত গুলো। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে বাড়ছে ঈদের অর্থনীতির আকার।
টাকার অঙ্কে যা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে থাকবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বোনাস। ১ কোটি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরও প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বোনাস।
এছাড়া ব্যক্তিগত অর্থ এবং সঞ্চয় থেকে সাধ্যমতো মানুষ ঈদের কেনাকাটায় শামিল হবেন। এ পরিমাণ টাকার সবই ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রবাসীরা ঈদ উৎসব পালনে আপনজনদের কাছে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করেছেন। মূলত প্রবাসীরা নিজেদের আপনজনদের কাছে ঈদ উৎসব পালনে বাড়তি টাকা পাঠাচ্ছেন। রোজার ঈদের পরই শুরু হবে কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি। সেই সময়ও প্রবাসীরা বিপুল অঙ্কের রেমিটেন্স পাঠাবেন। এর ফলে ডলার সংকট কেটে বাড়বে রিজার্ভ। দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়াতে হলে এখন ডলারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
[লেখক : ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি]
মিহির কুমার রায়
শনিবার, ০৬ এপ্রিল ২০২৪
আর দিন কয়েক বাদেই ঈদুল ফিতর; কিন্তু এখনো ফুটপাতের বাজারে কেনাকাটা জমে ওঠেনি। রাজধানী ঢাকার নিম্ন ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর ভরসাস্থল এসব মার্কেটে বলতে গেলে ঈদের বেচাকেনা শুরুই হয়নি। অথচ প্রতিবছর রমজানের অর্ধেক পেরোতে না পেরোতেই এসব বাজারে ঈদের কেনাকাটা জমে ওঠে।
দোকানিরা বলছেন, ঈদ ঘনিয়ে এলেও বেচাকেনা শুরু না হওয়ায় উদ্বেগে ভুগছেন তারা। বাকি দিনগুলোতে কাঙ্কিত পরিমাণে বিক্রি না হলে রীতিমতো লোকসানে পড়বেন। আর ক্রেতারা বলছেন, সব ধরনের পণ্যের দামই আগের চেয়ে অনেক বেশি। এ অবস্থায় সাধ থাকলেও সাধ্যের সঙ্গে তার সমন্বয় ঘটাতে পারছেন না।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ঈদ একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ব্যবসায়ীরা সারাবছর এই সময়ের জন্য মুখিয়ে থাকেন। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। ফলে ঈদকে ঘিরে ব্যবসায়ীরা নতুন নতুন বিনিয়োগ করছেন। বিশেষ করে পাইকারি মার্কেটের পর এখন খুচরা পর্যায় থেকে ভোক্তারা সাধ্যমতো কেনাকাটা
করছেন।
ফুটপাতে দোকানিরা পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসে রয়েছেন ক্রেতার অপেক্ষায়। কিন্তু ক্রেতার আনাগোনা খুব কম। কেউ কেউ দোকানে ঢুঁ মারছেন। তবে বেশির ভাগই দাম শুনে চলে যাচ্ছেন। কেউ কেউ দরদাম করছেন, কিন্তু বিক্রেতার সঙ্গে দাম নিয়ে বনিবনা না হওয়ায় আর কিনতে পারছেন না। সব মিলিয়ে বেচাকেনা খুবই কম। মানুষের হাতে টাকা নেই বলেই হয়তো তারা কিনছে কম।
ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার রোজার শুরু থেকে বেচাকেনা একেবারে নেই বললেই চলে। আগের কয়েকদিনের তুলনায় গত দুই দিনে বিক্রি একটু বেড়েছে। কিন্তু তা ঈদের বাজার বিবেচনায় কিছুই নয়। গত বছর এই সময়ে দিনে যা বিক্রি হয়েছে, এবার তার পরিমাণ অর্ধেকে নেমে এসেছে। পোশাক কারখানাগুলোতে বেতন-বোনাস হলে বিক্রি বাড়তে পারে। গার্মেন্ট কারখানায় বেতন বা বোনাস হয়তো এখনো দেওয়া হয়নি। ফুটপাতের কাস্টমারদের বড় অংশই গার্মেন্টসের কর্মীরা। তারা বাজারে না এলে বিক্রি বাড়বে না।
মানুষের হাতে টাকা-পয়সা নাই। কষ্টে আছে। ফুটপাতের কোনো কোনো ব্যবসায়ী বলছের, এখন তো অনেক কাস্টমার দেখি, যাদের দেখলেই বোঝা যায় কখনো ফু টপাত থেকে জিনিসপত্র কেনে নাই। এখন বাধ্য হয়ে কিনতেছেন। আমরা তাদের চলাফেরা দেখলেই বুঝি। এই ফুটপাতে নারী-পুরুষের বিভিন্ন ধরনের পোশাক বিক্রি করেন অন্তু। বিকিকিনিতে প্রভাব ফেলছে পণ্যের দামও। বিক্রেতারা বলছেন, গত বছরের তুলনায় পেশাকসহ সব পণ্যের দামই কিছুটা করে বেড়েছে; কিন্তু ক্রেতারা বাড়তি খরচ করতে রাজি নন।
ঈদের বেচাকেনা না জমলে পরিবার নিয়ে ফুটপাতের অনেক ব্যবসায়ীই বিপাকে পড়বেন বলে আতঙ্কে ভুগছেন। ব্যবসা ভালো না হলেও দোকান ভাড়া ও বিভিন্ন চাঁদা তো ঠিকই দিতে হচ্ছে। ফলে তাদের খরচ থেমে নেই। এ অবস্থায় তারা বিপাকে পড়েছেন। ক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বেশি। সেই তুলনায় কাপড়ের মান খুব ভালো নয়।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দেশের রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক পরিবেশ আরও উন্নত হয়েছে। অস্থিরতা ও উদ্বেগ কেটে যাওয়ায় নতুন বিনিয়োগ বাড়তে শুরু করেছে। এমনকি ভোক্তা ব্যয়ও বাড়তে শুরু করেছে দেশে। সব মিলিয়ে ঈদে প্রায় ২ থেকে আড়াই লাখ কোটি টাকার ব্যবসায়-বাণিজ্য হবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, ঢাকা মহানগর দোকান মালিক সমিতিসহ ব্যবসায়ীদের অন্যান্য সংগঠন।
ঈদের অর্থনীতি প্রসঙ্গে অর্থনীতিবিদদের বক্তব্য হলোÑ ঈদকেন্দ্রিক বেচাবিক্রি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবসময় গুরুত্বপূর্ণ; কিন্তু আগের কয়েক বছর করোনা মহামারির ধাক্কা, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচন ঘিরে এক ধরনের অস্থিরতা ছিল ব্যবসা-বাণিজ্যে। এখন করোনা নেই এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাও কেটে গেছে। ফলে ঈদকেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি ফিরবে। সাধারণ মানুষ এবার স্বতঃস্ফূর্তভাবে কেনাকাটায় শামিল হবেন এটাই স্বাভাবিক।
প্রতি বছর নতুন নতুন চাহিদা বাড়ায় বড় হচ্ছে ঈদের অর্থনীতি। ঈদকে সামনে রেখে সেজে উঠেছে রাজধানীসহ দেশের ছোট-বড় সব রাস্তার ফুটপাত গুলো। উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নবিত্ত যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী এখন কেনাকাটায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন। ফলে বাড়ছে ঈদের অর্থনীতির আকার।
টাকার অঙ্কে যা প্রায় ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি কোটি টাকার বেশি। এর মধ্যে থাকবে সাড়ে ১২ লাখ সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বোনাস। ১ কোটি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্স ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের আরও প্রায় দেড় কোটি কর্মকর্তা-কর্মচারীর বোনাস।
এছাড়া ব্যক্তিগত অর্থ এবং সঞ্চয় থেকে সাধ্যমতো মানুষ ঈদের কেনাকাটায় শামিল হবেন। এ পরিমাণ টাকার সবই ঈদ অর্থনীতিতে যুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে প্রবাসীরা ঈদ উৎসব পালনে আপনজনদের কাছে প্রবাসীরা রেমিটেন্স পাঠাতে শুরু করেছেন। মূলত প্রবাসীরা নিজেদের আপনজনদের কাছে ঈদ উৎসব পালনে বাড়তি টাকা পাঠাচ্ছেন। রোজার ঈদের পরই শুরু হবে কোরবানি ঈদের প্রস্তুতি। সেই সময়ও প্রবাসীরা বিপুল অঙ্কের রেমিটেন্স পাঠাবেন। এর ফলে ডলার সংকট কেটে বাড়বে রিজার্ভ। দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম বাড়াতে হলে এখন ডলারের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন।
[লেখক : ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি]