alt

উপ-সম্পাদকীয়

গুড সামারিটানদের সুরক্ষায় আইন চাই : প্রসঙ্গ সড়ক দুর্ঘটনা

রাইসুল সৌরভ

: শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য প্রথম ঘণ্টাটি জীবন বাঁচাতে বা শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রথম ঘণ্টাকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে গোল্ডেন আওয়ার হিসেবে অভিহিত করা হয়া। এই এক ঘণ্টার মধ্যে জরুরি চিকিৎসা সেবা পেলে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য দুর্ঘটনা পরবর্তী জরুরি চিকিৎসা সেবা সুবিধা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং কিছু ক্ষেত্রে দুষ্প্রাপ্যও বটে। দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের জরুরি চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য নয়া; বিশেষত গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সুবিধা অপর্যাপ্ত। দুর্ঘটনা পরবর্তী জরুরি চিকিৎসার অভাবের মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির শারীরিক অক্ষমতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে অপরদিকে তার পরিবারের উপর আর্থিক চাপ বৃদ্ধি করছে।

সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত স্থানীয় বাসিন্দা অথবা পথচারীরা দুর্ঘটনাস্থলে প্রথম উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেন। তারা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কোন রকম প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা ছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং দুর্ঘটনায় পতিত যাত্রীদের বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তৎক্ষণাত যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। অতঃপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য কাছের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকে নিয়ে যান। তাই সড়ক, রেল বা বিমান দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের মৃত্যু এবং বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি এড়াতে স্থানীয় অধিবাসী ও পথচারীদের ভূমিকা অপরিসীম।

ইদানীং অবশ্য কোন আহত ব্যক্তিকে রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখলে সাহায্যের পরিবর্তে পথচারীগণ তাদের সঙ্গে থাকা ফোনে ভিডিও রেকর্ড করা এবং কোন রকম সাহায্য না করে নিজ গন্তব্যে চলে যাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পথচারীরা ভুক্তভোগীদের সহায়তায় তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে না আসার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অযথা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের ভয়, ফৌজদারি মামলায় জড়ানোর আশঙ্কা, কোর্ট-কাচারির অতিরিক্ত ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার শংকা প্রভৃতি। তাছাড়া প্রায়াশই বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোন অপরিচিত পথচারী দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবার জন্য নিয়ে গেলে ফি পাওয়ার নিশ্চয়তা ব্যতীত রোগী ভর্তি করতে চান না এবং এসব ক্ষেত্রে যিনি রোগী নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন তাকে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া উদ্ধারকারীদের দ্বারা দুর্ঘটনায় পতিত ব্যক্তির কোন ক্ষতি হলে তার জন্য দেওয়ানি অথবা ফৌজদারি মামলায় জড়ানো এবং পরবর্তীতে পুলিশের দ্বারা হয়রানির আশংকা থেকে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতি জনসাধারণকে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকতে নিরুৎসাহিত করে এবং যারা স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে যেতে চায় তাদের জন্য নানাবিধ বাধা তৈরি করে।

এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির সহায়তাকারীর (এড়ড়ফ ঝধসধৎরঃধহ) সুরক্ষার জন্য একটি আইনি কাঠামো এখন অপরিহার্য। যেন গুড সামারিটানরা নির্ভয়ে ও কোন রকম হয়রানি ছাড়া জনগণের বিপদে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নির্দ্বিধায় সাহায্য করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের উৎসাহিত করা যায়। কিছু কিছু উন্নত দেশে এমনকি গুড সামারিটানদের সরকারিভাবে অনুপ্রাণিত করতে আর্থিক প্রণোদনাও দেয়া হয়। একজন গুড সামারিটান হল এমন একজন ব্যক্তি যিনি অর্থ প্রাপ্তি অথবা পুরস্কারের প্রত্যাশা ছাড়াই বা বিশেষ সম্পর্ক জনিত দায়িত্ব ছাড়াই স্বেচ্ছায় কোন দুর্ঘটনা বা দুর্ঘটনায়া আহত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়াতা বা জরুরি পরিচর্যার জন্য এগিয়ে আসেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির সহায়তাকারীর (Good Samaritan) সুরক্ষার জন্য একটি আইনি কাঠামো এখন অপরিহার্য। যেন গুড সামারিটানরা নির্ভয়ে ও কোন রকম হয়রানি ছাড়া জনগণের বিপদে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নির্দ্বিধায় সাহায্য করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের উৎসাহিত করা যায়

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে সড়ক, রেল ও বিমান দুর্ঘটনায়া ক্ষতিগ্রস্তদের নির্দ্বিধায় ও হয়রানিমুক্তভাবে সহায়তা দেয়ার জন্য এই মুহূর্তে গুড সামারিটানদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। যদিও ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৯২ ধারায় কোন ব্যক্তির মঙ্গলের জন্য তার সম্মতি ছাড়াই সরল বিশ্বাসে কিছু করলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না মর্মে বলা হয়েছে। তথাপি, দন্ডবিধির এই বিধানটি দুর্ঘটনায় সহায়তাকারীদের ফৌজদারি দায় এড়াতে কিছুটা সহায়ক হলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা দিতে অপারগ; বিশেষত এই আইনের মাধ্যমে দেওয়ানি দায় এবং অন্যান্য হয়রানি থেকে অব্যাহতি পাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, দুর্ঘটনায় সহায়তাকারীদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় প্রকার দায় থেকে রক্ষা করার জন্য এবং সুরক্ষা নিশ্চিতে ও দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ওপর বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে একটি পৃথক আইন নতুবা ন্যূনতম ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে একটি আলাদা বিধান সংযোজন করা প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাপী গুড সামারিটান আইন সেই সব স্বেচ্ছাসেবকদের সুরক্ষা প্রদান করে যারা সড়ক, রেল বা বিমান দুর্ঘটনা বা দুর্ঘটনায়া আহত, অসুস্থ, বিপদে বা অন্যথায় অক্ষম ব্যক্তিকে যুক্তিসঙ্গত সহায়তা প্রদান করে। এই আইনের লক্ষ্য হলো অসুস্থ বা আহতদের সহায়তার জন্য পার্শ্ববর্তী মানুষজন ও পথচারীদের উৎসাহিত করা এবং পুলিশ, হাসপাতাল বা অন্য কারও দ্বারা হয়রানি না হওয়া থেকে তাদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া। এ ধরনের আইন নিশ্চিত করে যে পরোপকারী উদ্ধারকারী আন্তরিকভাবে কাজ করতে যেয়ে তাদের কোন অনিচ্ছাকৃত বা অবহেলামূলক কাজ বা কার্যবিরতির কারণে কারও কোন ক্ষতি বা মৃত্যুর জন্য দায়ী হবেন না।

আদর্শ গুড সামারিটান আইন উদ্ধারকারীকে দুর্ঘটনা বিষয়ে থানায়া মামলা দায়ের করতে বা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য ফি প্রদান করতে বাধ্য করে না। এছাড়াও এ আইনানুসারে গুড সামারিটানকে হাসপাতালে বা থানায়া থাকতে বা জিজ্ঞাসাবাদে বাধ্য করা যাবে না। আইন এটাও নিশ্চিত করবে যে সহায়তাকারী তার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর বা তার কোনো ব্যক্তিগত তথ্য বা পরিচয়া অথবা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিচয় দিতে বাধ্য নন। এমনকি একজন উদ্ধারকারী পুলিশের নিকট দুর্ঘটনা বিষয়ক কোন প্রমাণ দিতেও বাধ্য নন। তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে চায়, তাহলে তার বক্তব্য একক শুনানিতে রেকর্ড করতে হবে এবং তাকে পুনঃপুনঃ হাজিরা দিতে বাধ্য করা যাবে না। তথাপি, পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদ্ধারকারীর কোন অভিযোগ থাকলে তা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট দায়ের করা যাবে।

আশার কথা হলো, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৮ সালে সৈয়াদ সাইফুদ্দিন কামাল ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য, ১৩ এসসিওবি [২০২০] মামলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ ও সহায়তাকারীর সুরক্ষা প্রদান নীতিমালা, ২০১৮ অনুমোদন করেছেন এবং উক্ত নীতিমালার বহুল প্রচারের জন্যও আদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও হাইকোর্ট সংসদে এ বিষয়ক পৃথক আইন প্রণীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নীতিমালাটি আইন হিসেবে বলবৎ থাকবে বলে আদেশ দেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালে সেভ লাইফ ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলায় অনুরূপ মতামত প্রদান করেছিলেন। হাইকোর্টের রায়ে একজন পথচারী দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পর ফি ব্যতীত তাদের জীবন রক্ষাকারী প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো যাবে না হবে মর্মে আদেশ দেন। সড়ক, রেল বা বিমান দুর্ঘটনা/দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের নিমিত্তে নীতিমালায় আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, যদি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কোন ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তবে তাকে জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করার আগে কোন রকম হয়ারানি বা আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্যে থানায় প্রেরণ করা যাবে না। আরও বলা হয়েছে যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সড়ক দুর্ঘটনায়া আহতদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া না গেলে উপযুক্ত গাড়ির ব্যবস্থা করবেন।

আলোচ্য মামলায় হাইকোর্ট আদর্শ গুড সামারিটান আইনের আলোচিত উপাদানগুলোর বেশিরভাগই অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যদিও নীতিমালায় গুড সামারিটানের দায়িত্ব সম্পর্কে তেমন কিছু বলা নেই। সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে বা মোটরযানে কোন ত্রুটি দেখা দিলে কিংবা কেউ জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে অন্যান্য গাড়ির চালক, যাত্রী এবং পথচারীদের তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দায়িত্ব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রায় প্রদানের চার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আমাদের আইনসভা অদ্যাবধি সড়ক, রেল ও বিমান দুর্ঘটনায়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তাকারীদের সুরক্ষায় অথবা তাদের জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিতে কোন আইন প্রণয়ন করেনি। উপরন্তু, হাইকোর্ট প্রদত্ত এ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী এখনও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়ানি। ফলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের ও ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। সড়কে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ জীবন ঝরছে তা নিয়ন্ত্রণে এবং এদেশের জনগণের জীবন রক্ষায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ ও দুর্ঘটনায় সহায়তাকারীদের সুরক্ষা প্রদানে দ্রুত আইন প্রণয়ন নীতিনির্ধারকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়াা উচিত। তাই অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের রায়ানুসারে সড়ক, রেল এবং বিমান দুর্ঘটনার হতাহতদের নির্দ্বিধায় সাহায্য করার জন্য জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরিতে ও হয়রানি নিরোধে দেশের আপামোর গুড সামারিটানদের সুরক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামো প্রণয়ন এখন অত্যন্ত জরুরি।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

গুড সামারিটানদের সুরক্ষায় আইন চাই : প্রসঙ্গ সড়ক দুর্ঘটনা

রাইসুল সৌরভ

শনিবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৩

সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের জন্য প্রথম ঘণ্টাটি জীবন বাঁচাতে বা শারীরিক ক্ষতির ঝুঁকি কমাতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই এই প্রথম ঘণ্টাকে সড়ক দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে গোল্ডেন আওয়ার হিসেবে অভিহিত করা হয়া। এই এক ঘণ্টার মধ্যে জরুরি চিকিৎসা সেবা পেলে দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তির বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য দুর্ঘটনা পরবর্তী জরুরি চিকিৎসা সেবা সুবিধা অত্যন্ত অপ্রতুল এবং কিছু ক্ষেত্রে দুষ্প্রাপ্যও বটে। দেশের সকল সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সড়ক দুর্ঘটনায় হতাহতদের জরুরি চিকিৎসা সেবা সহজলভ্য নয়া; বিশেষত গ্রামীণ ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই সুবিধা অপর্যাপ্ত। দুর্ঘটনা পরবর্তী জরুরি চিকিৎসার অভাবের মৃত্যু ও আহতের সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে; যা একদিকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির শারীরিক অক্ষমতার ঝুঁকি বাড়াচ্ছে অপরদিকে তার পরিবারের উপর আর্থিক চাপ বৃদ্ধি করছে।

সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সাধারণত স্থানীয় বাসিন্দা অথবা পথচারীরা দুর্ঘটনাস্থলে প্রথম উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করেন। তারা সম্পূর্ণ স্বেচ্ছায় ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কোন রকম প্রশিক্ষণ বা দক্ষতা ছাড়া স্বতঃস্ফূর্তভাবে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েন এবং দুর্ঘটনায় পতিত যাত্রীদের বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য তৎক্ষণাত যথাসাধ্য চেষ্টা করেন। অতঃপর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য কাছের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল/ক্লিনিকে নিয়ে যান। তাই সড়ক, রেল বা বিমান দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের মৃত্যু এবং বড় ধরনের শারীরিক ক্ষতি এড়াতে স্থানীয় অধিবাসী ও পথচারীদের ভূমিকা অপরিসীম।

ইদানীং অবশ্য কোন আহত ব্যক্তিকে রাস্তার ওপর পড়ে থাকতে দেখলে সাহায্যের পরিবর্তে পথচারীগণ তাদের সঙ্গে থাকা ফোনে ভিডিও রেকর্ড করা এবং কোন রকম সাহায্য না করে নিজ গন্তব্যে চলে যাওয়া খুবই সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পথচারীরা ভুক্তভোগীদের সহায়তায় তাৎক্ষণিকভাবে এগিয়ে না আসার অন্যতম প্রধান কারণ হলো অযথা পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদের ভয়, ফৌজদারি মামলায় জড়ানোর আশঙ্কা, কোর্ট-কাচারির অতিরিক্ত ঝামেলায় জড়িয়ে যাওয়ার শংকা প্রভৃতি। তাছাড়া প্রায়াশই বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ কোন অপরিচিত পথচারী দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তিকে চিকিৎসা সেবার জন্য নিয়ে গেলে ফি পাওয়ার নিশ্চয়তা ব্যতীত রোগী ভর্তি করতে চান না এবং এসব ক্ষেত্রে যিনি রোগী নিয়ে হাসপাতালে উপস্থিত হন তাকে নানা রকম হয়রানির শিকার হতে হয়। এছাড়া উদ্ধারকারীদের দ্বারা দুর্ঘটনায় পতিত ব্যক্তির কোন ক্ষতি হলে তার জন্য দেওয়ানি অথবা ফৌজদারি মামলায় জড়ানো এবং পরবর্তীতে পুলিশের দ্বারা হয়রানির আশংকা থেকে যায়। এ ধরনের পরিস্থিতি জনসাধারণকে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের সাহায্য করা থেকে বিরত থাকতে নিরুৎসাহিত করে এবং যারা স্বেচ্ছায় সাহায্য করতে যেতে চায় তাদের জন্য নানাবিধ বাধা তৈরি করে।

এসব কারণে সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির সহায়তাকারীর (এড়ড়ফ ঝধসধৎরঃধহ) সুরক্ষার জন্য একটি আইনি কাঠামো এখন অপরিহার্য। যেন গুড সামারিটানরা নির্ভয়ে ও কোন রকম হয়রানি ছাড়া জনগণের বিপদে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নির্দ্বিধায় সাহায্য করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের উৎসাহিত করা যায়। কিছু কিছু উন্নত দেশে এমনকি গুড সামারিটানদের সরকারিভাবে অনুপ্রাণিত করতে আর্থিক প্রণোদনাও দেয়া হয়। একজন গুড সামারিটান হল এমন একজন ব্যক্তি যিনি অর্থ প্রাপ্তি অথবা পুরস্কারের প্রত্যাশা ছাড়াই বা বিশেষ সম্পর্ক জনিত দায়িত্ব ছাড়াই স্বেচ্ছায় কোন দুর্ঘটনা বা দুর্ঘটনায়া আহত ব্যক্তিকে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়াতা বা জরুরি পরিচর্যার জন্য এগিয়ে আসেন।

সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির সহায়তাকারীর (Good Samaritan) সুরক্ষার জন্য একটি আইনি কাঠামো এখন অপরিহার্য। যেন গুড সামারিটানরা নির্ভয়ে ও কোন রকম হয়রানি ছাড়া জনগণের বিপদে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ হন এবং ক্ষতিগ্রস্তদের নির্দ্বিধায় সাহায্য করার জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের উৎসাহিত করা যায়

দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য বাংলাদেশে সড়ক, রেল ও বিমান দুর্ঘটনায়া ক্ষতিগ্রস্তদের নির্দ্বিধায় ও হয়রানিমুক্তভাবে সহায়তা দেয়ার জন্য এই মুহূর্তে গুড সামারিটানদের সুরক্ষায় কোনো আইন নেই। যদিও ১৮৬০ সালের দন্ডবিধির ৯২ ধারায় কোন ব্যক্তির মঙ্গলের জন্য তার সম্মতি ছাড়াই সরল বিশ্বাসে কিছু করলে তা অপরাধ বলে বিবেচিত হবে না মর্মে বলা হয়েছে। তথাপি, দন্ডবিধির এই বিধানটি দুর্ঘটনায় সহায়তাকারীদের ফৌজদারি দায় এড়াতে কিছুটা সহায়ক হলেও তাদের পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা দিতে অপারগ; বিশেষত এই আইনের মাধ্যমে দেওয়ানি দায় এবং অন্যান্য হয়রানি থেকে অব্যাহতি পাওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, দুর্ঘটনায় সহায়তাকারীদের দেওয়ানি ও ফৌজদারি উভয় প্রকার দায় থেকে রক্ষা করার জন্য এবং সুরক্ষা নিশ্চিতে ও দুর্ঘটনায় হতাহত ব্যক্তিদের জরুরি স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের লক্ষ্যে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকের ওপর বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে একটি পৃথক আইন নতুবা ন্যূনতম ২০১৮ সালের সড়ক পরিবহন আইনে একটি আলাদা বিধান সংযোজন করা প্রয়োজন।

বিশ্বব্যাপী গুড সামারিটান আইন সেই সব স্বেচ্ছাসেবকদের সুরক্ষা প্রদান করে যারা সড়ক, রেল বা বিমান দুর্ঘটনা বা দুর্ঘটনায়া আহত, অসুস্থ, বিপদে বা অন্যথায় অক্ষম ব্যক্তিকে যুক্তিসঙ্গত সহায়তা প্রদান করে। এই আইনের লক্ষ্য হলো অসুস্থ বা আহতদের সহায়তার জন্য পার্শ্ববর্তী মানুষজন ও পথচারীদের উৎসাহিত করা এবং পুলিশ, হাসপাতাল বা অন্য কারও দ্বারা হয়রানি না হওয়া থেকে তাদের সুরক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া। এ ধরনের আইন নিশ্চিত করে যে পরোপকারী উদ্ধারকারী আন্তরিকভাবে কাজ করতে যেয়ে তাদের কোন অনিচ্ছাকৃত বা অবহেলামূলক কাজ বা কার্যবিরতির কারণে কারও কোন ক্ষতি বা মৃত্যুর জন্য দায়ী হবেন না।

আদর্শ গুড সামারিটান আইন উদ্ধারকারীকে দুর্ঘটনা বিষয়ে থানায়া মামলা দায়ের করতে বা হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবার জন্য ফি প্রদান করতে বাধ্য করে না। এছাড়াও এ আইনানুসারে গুড সামারিটানকে হাসপাতালে বা থানায়া থাকতে বা জিজ্ঞাসাবাদে বাধ্য করা যাবে না। আইন এটাও নিশ্চিত করবে যে সহায়তাকারী তার নাম, ঠিকানা, ফোন নম্বর বা তার কোনো ব্যক্তিগত তথ্য বা পরিচয়া অথবা দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের পরিচয় দিতে বাধ্য নন। এমনকি একজন উদ্ধারকারী পুলিশের নিকট দুর্ঘটনা বিষয়ক কোন প্রমাণ দিতেও বাধ্য নন। তবে কেউ যদি স্বেচ্ছায় তদন্ত প্রক্রিয়ায় সহায়তা করতে চায়, তাহলে তার বক্তব্য একক শুনানিতে রেকর্ড করতে হবে এবং তাকে পুনঃপুনঃ হাজিরা দিতে বাধ্য করা যাবে না। তথাপি, পুলিশ বা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উদ্ধারকারীর কোন অভিযোগ থাকলে তা নির্ধারিত কর্তৃপক্ষের নিকট দায়ের করা যাবে।

আশার কথা হলো, মহামান্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ২০১৮ সালে সৈয়াদ সাইফুদ্দিন কামাল ও অন্যান্য বনাম বাংলাদেশ ও অন্যান্য, ১৩ এসসিওবি [২০২০] মামলায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত ব্যক্তির জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ ও সহায়তাকারীর সুরক্ষা প্রদান নীতিমালা, ২০১৮ অনুমোদন করেছেন এবং উক্ত নীতিমালার বহুল প্রচারের জন্যও আদেশ দিয়েছেন। এছাড়াও হাইকোর্ট সংসদে এ বিষয়ক পৃথক আইন প্রণীত হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত নীতিমালাটি আইন হিসেবে বলবৎ থাকবে বলে আদেশ দেন। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালে সেভ লাইফ ফাউন্ডেশন ও অন্যান্য বনাম ইউনিয়ন অব ইন্ডিয়া মামলায় অনুরূপ মতামত প্রদান করেছিলেন। হাইকোর্টের রায়ে একজন পথচারী দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের জীবন বাঁচাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়। তাছাড়া দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতাল অথবা ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পর ফি ব্যতীত তাদের জীবন রক্ষাকারী প্রাথমিক চিকিৎসা প্রদানে অস্বীকৃতি জানানো যাবে না হবে মর্মে আদেশ দেন। সড়ক, রেল বা বিমান দুর্ঘটনা/দুর্ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের নিমিত্তে নীতিমালায় আইনশৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার ওপর দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। নীতিমালায় বলা হয়েছে, যদি সড়ক দুর্ঘটনায় আহত কোন ব্যক্তি সড়ক দুর্ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকেন, তবে তাকে জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদান করার আগে কোন রকম হয়ারানি বা আইনি ব্যবস্থা নেয়ার উদ্দেশ্যে থানায় প্রেরণ করা যাবে না। আরও বলা হয়েছে যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সড়ক দুর্ঘটনায়া আহতদের জরুরি চিকিৎসা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে ঘটনাস্থলে অ্যাম্বুলেন্স পাওয়া না গেলে উপযুক্ত গাড়ির ব্যবস্থা করবেন।

আলোচ্য মামলায় হাইকোর্ট আদর্শ গুড সামারিটান আইনের আলোচিত উপাদানগুলোর বেশিরভাগই অন্তর্ভুক্ত করেছেন। যদিও নীতিমালায় গুড সামারিটানের দায়িত্ব সম্পর্কে তেমন কিছু বলা নেই। সড়ক দুর্ঘটনা সংঘটিত হলে বা মোটরযানে কোন ত্রুটি দেখা দিলে কিংবা কেউ জরুরি পরিস্থিতির সম্মুখীন হলে অন্যান্য গাড়ির চালক, যাত্রী এবং পথচারীদের তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসা দায়িত্ব। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রায় প্রদানের চার বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেলেও আমাদের আইনসভা অদ্যাবধি সড়ক, রেল ও বিমান দুর্ঘটনায়া ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তাকারীদের সুরক্ষায় অথবা তাদের জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা নিশ্চিতে কোন আইন প্রণয়ন করেনি। উপরন্তু, হাইকোর্ট প্রদত্ত এ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী এখনও সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়িত হয়ানি। ফলে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃতের ও ক্ষতিগ্রস্তের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। সড়কে প্রতিনিয়ত যে পরিমাণ জীবন ঝরছে তা নিয়ন্ত্রণে এবং এদেশের জনগণের জীবন রক্ষায় জরুরি স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণ ও দুর্ঘটনায় সহায়তাকারীদের সুরক্ষা প্রদানে দ্রুত আইন প্রণয়ন নীতিনির্ধারকদের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়াা উচিত। তাই অনতিবিলম্বে হাইকোর্টের রায়ানুসারে সড়ক, রেল এবং বিমান দুর্ঘটনার হতাহতদের নির্দ্বিধায় সাহায্য করার জন্য জনগণের মধ্যে আস্থা তৈরিতে ও হয়রানি নিরোধে দেশের আপামোর গুড সামারিটানদের সুরক্ষায় একটি পূর্ণাঙ্গ আইনি কাঠামো প্রণয়ন এখন অত্যন্ত জরুরি।

[লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, আইন বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি]

back to top