মিহির কুমার রায়
রমজান মাস শুরু হয়েছে। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, আবার কিছু পদক্ষেপ নিতে দেখাও যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করা হচ্ছে, তারা যেন পণ্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমনও বলা হয়েছে, মজুতের প্রমাণ পাওয়া গেলে কোনো ক্ষমা নেই, ঠিকানা হবে সরাসরি ‘শ্রীঘর’। সরকারের মন্ত্রী ও আমলারা বলছেন, রমজানের পণ্য যা দেশে আছে এবং বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছেÑ তাতে সংকট হওয়ার কারণ নেই। এরই মধ্যে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পণ্য সরবরাহ যদি ঠিক থাকে, তবে রমজানে কেন দাম বাড়বে বা বাড়ে? এটা খুবই সাধারণ প্রশ্ন। ভোক্তারা সাধারণত রমজানের বাজার একটু আগেই সেরে নিতে পছন্দ করেন। কিন্তু এবার সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কতটা সম্ভব হবে? কারণ বেশির ভাগ পণ্যের দাম তো আগেই বেড়ে মাথায় চড়ে আছে। অতি সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তর সারাদেশে মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু এতে বিশেষ কোনো ফল হয়েছে কি? অভিযানের অভিঘাতে এক টাকা, দেড় টাকা কমেছে। একে কি কমা বলে? সংযমের মাস রমজানে ভোগ না কমে বরং বেশ কিছুটা বাড়ে, এটা মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে। চাহিদা বেশি হলে বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও দাম বাড়ে। মানে বাড়ানো হয়। এটা সম্পূর্ণ আমাদের ব্যবসায়ীদের অতি লোভের মানসিকতার কারণ। তখন তাদের মনে কোনো নীতি-নৈতিকতা কাজ করছে বলে মনে হয় না। সরকার গঠনের পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এক হয়ে কাজ করছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসের আগে সব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। রমজান উপলক্ষে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে। আগে শুল্ক বেশি ছিল এখন সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ব্রাজিল ও বিভিন্ন দেশ থেকে চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য সামগ্রী আমদানি করা শুরু হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমেও রোজায় সারাদেশে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রমজানের সময় বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে ৬টি নিত্যপণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনও ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে, এর থেকে উত্তরণে অন্তত ৬টি পণ্য যেমন ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর আমদানিতে যেন পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা হয় তা চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। পণ্যগুলো হলোÑ ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর। গত বছর ৮টি পণ্যের ক্ষেত্রে এই অনুরোধ করা হয়েছিল। রমজান উপলক্ষে সাধারণ সময়ে কিছু পণ্যের যে চাহিদা থাকে, তখন সেটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। বেশির ভাগ পণ্যই দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি চাহিদা থাকে। আর সারা বছরে খেজুরের যে চাহিদা তার অর্ধেকটাই লাগে রমজানে। শুল্ক বাড়ার কারণে খেজুর আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আমদানিমূল্যের ওপর নির্ভর করে পণ্যের দাম। জাহাজে আনতে কত খরচ হয়, বীমায় কত দিতে হয় ইত্যাদি হিসাবনিকাশ করে দাম নির্ধারণ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকলে এখানেও দাম বেশি হবে, কম হলে কম হবে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল আছে। ডাল, ছোলার দামও স্থিতিশীল। রমজানের প্রথম সাত দিন ভোক্তারা একটু বেশি কেনাকাটা করেন। এ কারণে তখন দাম একটু বেশি হয়ে যায়। ভোক্তাদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ঋণ যেমন সরবরাহ ঋণ বা সায়াপায়ার্স ক্রেডিট, ট্রেড ক্রেডিট বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় রোজানির্ভর পণ্য আমদানির এলসি খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে।ওই সময়ের মধ্যে এসব পণ্য আমদানিতে ঋণনির্ভর এলসি খোলা যাবে। এছাড়া যেসব নিত্য বা রোজানির্ভর পণ্য ইতোমধ্যে আমদানি হয়েছে বা এলসির দায় পরিশোধের সময় এসেছে সেগুলোর দেনা ব্যাংক বা উদ্যোক্তারা পরিশোধের জন্য ডলারের সংস্থান করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে জোগান দিচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া মূল্যে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন না। সরকারি সংস্থাগুলো পণ্যের যে মূল্য প্রকাশ করে তার সঙ্গেও বাজারে মিল নেই। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যেও রয়েছে গরমিল। পণ্যমূল্যের তালিকা প্রতিটি বাজারে প্রতিদিন হালনাগাদ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। কেনাবেচায় লিখিত রসিদ থাকার কথা থাকলেও তার হদিস মিলছে না। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী আমদানি পণ্যের এলসি খোলা বা দেশে আনার বিষয়টিতেও নেই যথাযথভাবে তদারকি। বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে নেই সমন্বয়। এসব মিলে বাজার ব্যবস্থাপনায় চলছে বিশৃঙ্খলা। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের। পণ্য কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। এসব পরিস্থিতি থেকে ভোক্তাকে রক্ষা করতে সরকারের একাধিক বাজার তদারকি সংস্থা কাজ করছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি সেল, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, র্যাবসহ সরকারের অন্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এছাড়া এসব সংস্থা নিজস্ব আইনে বাজার তদারকি করছে। তারপরও বাজারে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ীদের মজুতের প্রবণতা যদি নিন্দনীয় হয়, তবে ভোক্তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সদাইপাতি কেনার মানসিকতাও পরিত্যাজ্য। কখনো কখনো মাসের মোটা বাজার যেমন, চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, গুঁড়া দুধ, নুডলস একবারে কেনার পরামর্শ দেয়া হয়। এটা ঠিক আছে; কারণ, এতে দাম একটু কম পড়ে। আর তা সাধারণ মানুষের পক্ষে একটু সুবিধাজনক হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, একবারে প্রয়োজনের তিন বা চারগুণ পণ্য ক্রয় করে বাসায় মজুত করে রাখেন। মাসে সয়াবিন তেল প্রয়োজন পাঁচ লিটার, তিনি হয়তো ১৫ লিটার কিনে রাখছেন, গাড়ি ভরে ভরে পণ্য কিনে নেন অনেকে। কিন্তু তারা চিন্তা করেন না, তাদের এই অতিরিক্ত ক্রয়-মানসিকতার কারণে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ দরিদ্র মানুষ, যাদের আয় বাড়েনি কানাকড়িও। এখন অতিরিক্ত ক্রয়-মানসিকতার এসব ভোক্তাকে শাস্তির আওতায় আনবে কে? বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা শুধু মুখে বললে হবে না। এর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগে সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের হাতে নিত্যপণ্য দিতে হবে। পণ্যের দামে লাগাম টানতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সেগুলো ঠিকমতো নেয়া উচিত। সরকারকে নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে।
[লেখক : ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি]
মিহির কুমার রায়
রোববার, ১৭ মার্চ ২০২৪
রমজান মাস শুরু হয়েছে। রমজানে নিত্যপণ্যের দাম যাতে না বাড়ে সেজন্য সরকারের কিছু পদক্ষেপ নেয়ার কথা শোনা যাচ্ছে, আবার কিছু পদক্ষেপ নিতে দেখাও যাচ্ছে। ব্যবসায়ীদেরও সতর্ক করা হচ্ছে, তারা যেন পণ্য মজুত করে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি না করেন। সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমনও বলা হয়েছে, মজুতের প্রমাণ পাওয়া গেলে কোনো ক্ষমা নেই, ঠিকানা হবে সরাসরি ‘শ্রীঘর’। সরকারের মন্ত্রী ও আমলারা বলছেন, রমজানের পণ্য যা দেশে আছে এবং বিদেশ থেকে আমদানি হয়ে খালাসের অপেক্ষায় রয়েছেÑ তাতে সংকট হওয়ার কারণ নেই। এরই মধ্যে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি ও খেজুরের ওপর আমদানি শুল্ক কমানোর পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পণ্য সরবরাহ যদি ঠিক থাকে, তবে রমজানে কেন দাম বাড়বে বা বাড়ে? এটা খুবই সাধারণ প্রশ্ন। ভোক্তারা সাধারণত রমজানের বাজার একটু আগেই সেরে নিতে পছন্দ করেন। কিন্তু এবার সাধারণ মানুষের পক্ষে তা কতটা সম্ভব হবে? কারণ বেশির ভাগ পণ্যের দাম তো আগেই বেড়ে মাথায় চড়ে আছে। অতি সম্প্রতি খাদ্য অধিদপ্তর সারাদেশে মজুতবিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছে। কিন্তু এতে বিশেষ কোনো ফল হয়েছে কি? অভিযানের অভিঘাতে এক টাকা, দেড় টাকা কমেছে। একে কি কমা বলে? সংযমের মাস রমজানে ভোগ না কমে বরং বেশ কিছুটা বাড়ে, এটা মূল্যবৃদ্ধির একটি কারণ হতে পারে। চাহিদা বেশি হলে বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার পরও দাম বাড়ে। মানে বাড়ানো হয়। এটা সম্পূর্ণ আমাদের ব্যবসায়ীদের অতি লোভের মানসিকতার কারণ। তখন তাদের মনে কোনো নীতি-নৈতিকতা কাজ করছে বলে মনে হয় না। সরকার গঠনের পরই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়সহ একাধিক মন্ত্রণালয় পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে এক হয়ে কাজ করছে। বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, আসন্ন রমজান মাসের আগে সব নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। রমজান উপলক্ষে যথেষ্ট পরিমাণ খাদ্য মজুত আছে। আগে শুল্ক বেশি ছিল এখন সেটা কমিয়ে আনা হয়েছে। এছাড়া ব্রাজিল ও বিভিন্ন দেশ থেকে চিনিসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য সামগ্রী আমদানি করা শুরু হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমেও রোজায় সারাদেশে খাদ্যপণ্য বিতরণ করা হচ্ছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের মজুত ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে রমজানের সময় বাড়তি চাহিদাকে সামনে রেখে ৬টি নিত্যপণ্য আমদানিতে পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু এখনও ডলার সংকটের কারণে এলসি খুলতে সমস্যা হচ্ছে, এর থেকে উত্তরণে অন্তত ৬টি পণ্য যেমন ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর আমদানিতে যেন পর্যাপ্ত ডলার সরবরাহ করা হয় তা চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। পণ্যগুলো হলোÑ ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা ও খেজুর। গত বছর ৮টি পণ্যের ক্ষেত্রে এই অনুরোধ করা হয়েছিল। রমজান উপলক্ষে সাধারণ সময়ে কিছু পণ্যের যে চাহিদা থাকে, তখন সেটা দ্বিগুণ হয়ে যায়। বেশির ভাগ পণ্যই দেড় থেকে দ্বিগুণ বেশি চাহিদা থাকে। আর সারা বছরে খেজুরের যে চাহিদা তার অর্ধেকটাই লাগে রমজানে। শুল্ক বাড়ার কারণে খেজুর আমদানিতে সমস্যা হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। আমদানিমূল্যের ওপর নির্ভর করে পণ্যের দাম। জাহাজে আনতে কত খরচ হয়, বীমায় কত দিতে হয় ইত্যাদি হিসাবনিকাশ করে দাম নির্ধারণ হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেশি থাকলে এখানেও দাম বেশি হবে, কম হলে কম হবে। পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভোজ্যতেল ও চিনির দাম আন্তর্জাতিক বাজারে স্থিতিশীল আছে। ডাল, ছোলার দামও স্থিতিশীল। রমজানের প্রথম সাত দিন ভোক্তারা একটু বেশি কেনাকাটা করেন। এ কারণে তখন দাম একটু বেশি হয়ে যায়। ভোক্তাদেরও এ বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে। বিভিন্ন ধরনের ঋণ যেমন সরবরাহ ঋণ বা সায়াপায়ার্স ক্রেডিট, ট্রেড ক্রেডিট বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় রোজানির্ভর পণ্য আমদানির এলসি খোলার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগামী মার্চ পর্যন্ত সময় দিয়েছে।ওই সময়ের মধ্যে এসব পণ্য আমদানিতে ঋণনির্ভর এলসি খোলা যাবে। এছাড়া যেসব নিত্য বা রোজানির্ভর পণ্য ইতোমধ্যে আমদানি হয়েছে বা এলসির দায় পরিশোধের সময় এসেছে সেগুলোর দেনা ব্যাংক বা উদ্যোক্তারা পরিশোধের জন্য ডলারের সংস্থান করতে না পারলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ থেকে জোগান দিচ্ছে। বাজার বিশ্লেষকরা বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের বেঁধে দেয়া মূল্যে ব্যবসায়ীরা পণ্য বিক্রি করছেন না। সরকারি সংস্থাগুলো পণ্যের যে মূল্য প্রকাশ করে তার সঙ্গেও বাজারে মিল নেই। চাহিদা ও সরবরাহের তথ্যেও রয়েছে গরমিল। পণ্যমূল্যের তালিকা প্রতিটি বাজারে প্রতিদিন হালনাগাদ করার কথা থাকলেও তা করা হচ্ছে না। কেনাবেচায় লিখিত রসিদ থাকার কথা থাকলেও তার হদিস মিলছে না। এছাড়া চাহিদা অনুযায়ী আমদানি পণ্যের এলসি খোলা বা দেশে আনার বিষয়টিতেও নেই যথাযথভাবে তদারকি। বাজার মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে নেই সমন্বয়। এসব মিলে বাজার ব্যবস্থাপনায় চলছে বিশৃঙ্খলা। ফলে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে ভোক্তাদের। পণ্য কিনতে হচ্ছে চড়া দামে। এসব পরিস্থিতি থেকে ভোক্তাকে রক্ষা করতে সরকারের একাধিক বাজার তদারকি সংস্থা কাজ করছে। এর মধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদারকি সেল, মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, কৃষি মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তর, বিএসটিআই, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নিরাপদ খাদ্য অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, জেলা প্রশাসন, র্যাবসহ সরকারের অন্য সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। এছাড়া এসব সংস্থা নিজস্ব আইনে বাজার তদারকি করছে। তারপরও বাজারে কোনো ধরনের শৃঙ্খলা আনা সম্ভব হয়নি। ব্যবসায়ীদের মজুতের প্রবণতা যদি নিন্দনীয় হয়, তবে ভোক্তাদের প্রয়োজনের অতিরিক্ত সদাইপাতি কেনার মানসিকতাও পরিত্যাজ্য। কখনো কখনো মাসের মোটা বাজার যেমন, চাল, আটা, ডাল, তেল, চিনি, গুঁড়া দুধ, নুডলস একবারে কেনার পরামর্শ দেয়া হয়। এটা ঠিক আছে; কারণ, এতে দাম একটু কম পড়ে। আর তা সাধারণ মানুষের পক্ষে একটু সুবিধাজনক হয়। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, একবারে প্রয়োজনের তিন বা চারগুণ পণ্য ক্রয় করে বাসায় মজুত করে রাখেন। মাসে সয়াবিন তেল প্রয়োজন পাঁচ লিটার, তিনি হয়তো ১৫ লিটার কিনে রাখছেন, গাড়ি ভরে ভরে পণ্য কিনে নেন অনেকে। কিন্তু তারা চিন্তা করেন না, তাদের এই অতিরিক্ত ক্রয়-মানসিকতার কারণে অতিরিক্ত চাহিদা তৈরি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। এর ভুক্তভোগী হচ্ছেন সাধারণ দরিদ্র মানুষ, যাদের আয় বাড়েনি কানাকড়িও। এখন অতিরিক্ত ক্রয়-মানসিকতার এসব ভোক্তাকে শাস্তির আওতায় আনবে কে? বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা শুধু মুখে বললে হবে না। এর জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগে সাশ্রয়ী মূল্যে মানুষের হাতে নিত্যপণ্য দিতে হবে। পণ্যের দামে লাগাম টানতে যেসব পদক্ষেপ নেয়া দরকার, সেগুলো ঠিকমতো নেয়া উচিত। সরকারকে নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখিত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হতে হবে।
[লেখক : ডিন, সিটি ইউনিভার্সিটি]