alt

উপ-সম্পাদকীয়

বন্ধ হোক পলিথিন, সন্ধি হোক পাটের সাথে

মিনহাজুর রহমান মাহিম

: শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

একসময় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হওয়ার কারণে ‘সোনালী আঁশ’ নামে খ্যাতি পায় পাট। তবে বর্তমানে পলিথিনের অত্যাধিক ব্যবহার, পাটের উৎপাদন কমে যাওয়া, সহজলভ্য থেকে দুর্লভ হয়ে যাওয়া, দেশের অধিকাংশ পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়া, পাট ব্যবসা ও চাষ অলাভজনক হওয়াতে পাটের ব্যবহার একদমই কমে গিয়েছে। পাটের ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে মূলত মুখ্য ভূমিকা পালন করে পলিথিন। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবেশ দূষণ। পলিথিন একটি অপচনশীল এবং দীর্ঘস্থায়ী উপাদান।

বাংলাদেশে খাবার, পোশাক, ইলেকট্রিক জিনিসপত্র, প্রসাধনী ও ওষুধসহ ইত্যাদি প্যাকেজিং, পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের পাত্র, বোতল, কৃষিক্ষেত্রে বীজ রোপণ, সার প্রয়োগ, সেচ, ফসল সংরক্ষণ, গ্রিন হাউস, প্লাস্টিকের পাইপ, মালচিং, ভবন নির্মাণে পানি ধরে রাখা, ছাদ ঢাকা, মেঝে ঢাকা, পানির ট্যাংক নির্মাণ, প্লাস্টিকের দরজা-জানালা নির্মাণ, খেলনা, ফার্নিচার, জিনিসপত্র, প্লাস্টিকের মোড়কসহ ইত্যাদি নানা কাজে পলিথিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পলিথিন হলো এক প্রকার প্লাস্টিক; যাতে পেট্রোলিয়াম থাকে এবং প্লাস্টিককে নরম করে পলিথিন বানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া পলিথিনে সীসা, ক্যাডমিয়াম, পারদসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী ধাতু রয়েছে। পলিথিনে থাকা এসব উপাদান মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক বা পলিথিন তৈরিতে যেসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় তার জন্য মানুষের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, শিশুদের বিকাশে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্যও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পলিথিনের ব্যবহারের জন্য প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, জন্মগত ত্রুটি হওয়া, স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনির ক্ষতি হওয়াসহ এমনকি ক্যান্সার হওয়ার মতো বড় ধরনের ঝুঁকিও রয়েছে।

পলিথিন ব্যবহারে শুধু মানুষের জন্যই নয় বরং পরিবেশ এবং প্রাণীদের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ। পলিথিনের কারণে মাটি ও পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পলিথিন মাটিতে বছরের পর বছর থাকার পরেও পচে বা মিশে যায় না। পলিথিনের পচনকাল সাধারণত ১০০০ বছর বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর থেকেও বেশি। পলিথিন মাটির সংস্পর্শে আসার পর ছোট ছোট টুকরায় ভেঙে যায়, যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট করে, জলজ প্রাণীদের খাবারের সঙ্গে মিশে প্রাণীদের মৃত্যু হওয়া এবং খাবারের সঙ্গে মিশে গিয়ে মাছের শরীরে মিশে যাওয়া এবং সেই মাছ খেয়ে নানা ধরনের রোগব্যাধি হওয়াসহ পানি দূষণের মাধ্যমে পানিবাহিত রোগসহ নানা ক্ষতি করে পরিবেশ দূষণ করে থাকে। এছাড়া পলিথিনের টুকরো পশুপাখিদের খাদ্যের সঙ্গে মিশে পশুপাখি মারা যাওয়া, জলাশয়ে জমা হয়ে জলজ প্রাণীদের আবাসস্থল নষ্ট হওয়াসহ নানা মাধ্যমে পলিথিন জীব বৈচিত্র্য নষ্ট করছে। আবার পলিথিন পোড়ালে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, বেনজিন, টলুইনসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে, যা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ক্যান্সারসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁঁকির কারণ হতে পারে। পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করার ক্ষেত্রেও অনেক ক্ষেত্রেই পলিথিন দায়ী।

এদিকে সহজেই পচনশীল, দ্রুত মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া, সহজেই উৎপাদনযোগ্য পাট খুবই কম ব্যবহার করা হচ্ছে। একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতি যেটির ওপর নির্ভরশীল ছিলÑ যেটি ছিল অন্যতম প্রথম ও প্রধান রপ্তানির শীর্ষে থাকা পণ্য, তা আজ অবহেলিত এবং দুর্লভ হয়ে পড়েছে। পাট পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ভালো এবং উপকারী একটি জিনিস। পাটে প্রধানত সেলুলোজ, লিগনিন, হেমিসেলুলোজ, পেকটিন, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। সেলুলোজ কাগজ, কাপড় ও অন্যান্য জিনিস তৈরিতে, লিগনিন জৈব জ্বালানি তৈরিতে, হেমিসেলুলোজ খাদ্য ও পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

পাট সাধারণত ব্যাগ, বাক্স, বোতলের বিকল্প, খাবার ও ওষুধ প্যাকেজিং, বস্তা, দড়ি, সারের ব্যাগ, মালচিং, জৈব সার, ছাউনি, মেঝে ঢাকার উপাদান, দেয়ালের উপাদান, পানির ট্যাংক, জৈবভিত্তিক প্লাস্টিক, খেলনা, ফার্নিচার, জিনিসপত্র, মোড়কসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী। এছাড়া পাট খুবই টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী। এটি দ্রুত বর্ধনশীল ফসল হওয়াতে প্রতি বছর কাটা যায়। এর আরেকটি বড় উপকারী দিক হলোÑ এটি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় বায়ু থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে থাকে। পাটের চাষ জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করে থাকে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পলিথিন পাটের চেয়ে ভালো। পলিথিন কম খরচে পাওয়া যায়, এটি পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা যায়, ওজনে হালকা, বিভিন্ন আকারে ও বৈশিষ্ট্যে পাওয়া যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে পলিথিনের ব্যবহার রেখে এবং সেই সব ক্ষেত্রে পলিথিনের পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করে আমাদের উচিত বাকি সব ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে মানবদেহ, পরিবেশ, দেশ এবং জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় ও সুরক্ষায় পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি করা ও পাট যাতে সব প্রয়োজনীয় কাজে সর্বদা ব্যবহৃত হয় তা সুনিশ্চিত করা।

তাই পাট উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জনগণ ও সরকার সবাইকে একইসঙ্গে কাজ করতে হবে। পাটের তৈরি সব জিনিসপত্র ব্যবহার করে পাটের চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে। যারা পাট চাষ করে তাদের সাহায্য করার জন্য সব উপায়ে সহায়তা করতে হবে। পাটের ব্যবহার ও সুবিধা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। সরকারকে উন্নত পাটের জাত উদ্ভাবন এবং পাট উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। পাট চাষিদের জন্য ভর্তুকি, ঋণ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। পাটের বাজারজাতকরণে উন্নত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাট শিল্পের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো ও প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। দেশের যেসব পাটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেসব পাটকল পুনরায় সচল করার জন্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যবহার করা আবশ্যক সেসব ক্ষেত্রে পলিথিনের পুনর্ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার, কীটপতঙ্গ ও রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার মাধ্যমে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ গঠন এবং পাটকে অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা তৈরি করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

ছবি

ঋতুভিত্তিক চিরায়ত বাঙালি সংস্কৃতি

ছবি

স্মরণ : কাঙ্গাল হরিনাথ মজুমদার

ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস

দাবদাহে সুস্থ থাকবেন কীভাবে

কত দিন পরে এলে, একটু শোনো

রম্যগদ্য : আনন্দ, দ্বিগুণ আনন্দ...

ছবি

ইতিহাসের এক অবিস্মরণীয় নাম

বৈসাবি : ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসব

‘ইন্ডিয়া আউট’ ক্যাম্পেইন

উদার-উদ্দাম বৈশাখ চাই

ঈদ নিয়ে আসুক শান্তি ও সমৃদ্ধি, বিস্তৃত হোক সম্প্রীতি ও সৌহার্দ

প্রসঙ্গ: বিদেশি ঋণ

ছাত্ররাজনীতি কি খারাপ?

জাকাত : বিশ্বের প্রথম সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা

বাংলাদেশ স্কাউটস দিবস : শুরুর কথা

ছবি

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত

tab

উপ-সম্পাদকীয়

বন্ধ হোক পলিথিন, সন্ধি হোক পাটের সাথে

মিনহাজুর রহমান মাহিম

শনিবার, ২৩ মার্চ ২০২৪

একসময় বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য হওয়ার কারণে ‘সোনালী আঁশ’ নামে খ্যাতি পায় পাট। তবে বর্তমানে পলিথিনের অত্যাধিক ব্যবহার, পাটের উৎপাদন কমে যাওয়া, সহজলভ্য থেকে দুর্লভ হয়ে যাওয়া, দেশের অধিকাংশ পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়া, পাট ব্যবসা ও চাষ অলাভজনক হওয়াতে পাটের ব্যবহার একদমই কমে গিয়েছে। পাটের ব্যবহার কমে যাওয়ার কারণে মূলত মুখ্য ভূমিকা পালন করে পলিথিন। আমাদের দেশে প্রতিনিয়ত পলিথিনের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে পরিবেশ দূষণ। পলিথিন একটি অপচনশীল এবং দীর্ঘস্থায়ী উপাদান।

বাংলাদেশে খাবার, পোশাক, ইলেকট্রিক জিনিসপত্র, প্রসাধনী ও ওষুধসহ ইত্যাদি প্যাকেজিং, পলিথিনের ব্যাগ, প্লাস্টিকের পাত্র, বোতল, কৃষিক্ষেত্রে বীজ রোপণ, সার প্রয়োগ, সেচ, ফসল সংরক্ষণ, গ্রিন হাউস, প্লাস্টিকের পাইপ, মালচিং, ভবন নির্মাণে পানি ধরে রাখা, ছাদ ঢাকা, মেঝে ঢাকা, পানির ট্যাংক নির্মাণ, প্লাস্টিকের দরজা-জানালা নির্মাণ, খেলনা, ফার্নিচার, জিনিসপত্র, প্লাস্টিকের মোড়কসহ ইত্যাদি নানা কাজে পলিথিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। পলিথিন হলো এক প্রকার প্লাস্টিক; যাতে পেট্রোলিয়াম থাকে এবং প্লাস্টিককে নরম করে পলিথিন বানানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের মানবদেহের জন্য ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয়।

এছাড়া পলিথিনে সীসা, ক্যাডমিয়াম, পারদসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী ধাতু রয়েছে। পলিথিনে থাকা এসব উপাদান মানবদেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। প্লাস্টিক বা পলিথিন তৈরিতে যেসব রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় তার জন্য মানুষের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে, শিশুদের বিকাশে বাধা সৃষ্টি হতে পারে, এমনকি গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলাদের জন্যও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া পলিথিনের ব্যবহারের জন্য প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়া, জন্মগত ত্রুটি হওয়া, স্নায়ুতন্ত্র ও কিডনির ক্ষতি হওয়াসহ এমনকি ক্যান্সার হওয়ার মতো বড় ধরনের ঝুঁকিও রয়েছে।

পলিথিন ব্যবহারে শুধু মানুষের জন্যই নয় বরং পরিবেশ এবং প্রাণীদের জন্যও মারাত্মক ক্ষতির কারণ। পলিথিনের কারণে মাটি ও পানি মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। পলিথিন মাটিতে বছরের পর বছর থাকার পরেও পচে বা মিশে যায় না। পলিথিনের পচনকাল সাধারণত ১০০০ বছর বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে এর থেকেও বেশি। পলিথিন মাটির সংস্পর্শে আসার পর ছোট ছোট টুকরায় ভেঙে যায়, যা মাটির উর্বরতা নষ্ট করে, জমির পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট করে, জলজ প্রাণীদের খাবারের সঙ্গে মিশে প্রাণীদের মৃত্যু হওয়া এবং খাবারের সঙ্গে মিশে গিয়ে মাছের শরীরে মিশে যাওয়া এবং সেই মাছ খেয়ে নানা ধরনের রোগব্যাধি হওয়াসহ পানি দূষণের মাধ্যমে পানিবাহিত রোগসহ নানা ক্ষতি করে পরিবেশ দূষণ করে থাকে। এছাড়া পলিথিনের টুকরো পশুপাখিদের খাদ্যের সঙ্গে মিশে পশুপাখি মারা যাওয়া, জলাশয়ে জমা হয়ে জলজ প্রাণীদের আবাসস্থল নষ্ট হওয়াসহ নানা মাধ্যমে পলিথিন জীব বৈচিত্র্য নষ্ট করছে। আবার পলিথিন পোড়ালে বাতাসে কার্বন ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, বেনজিন, টলুইনসহ নানা ধরনের ক্ষতিকারক রাসায়নিক পদার্থ ছড়িয়ে পড়ে, যা শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি ও ক্যান্সারসহ নানা ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁঁকির কারণ হতে পারে। পরিবেশের সৌন্দর্য নষ্ট করার ক্ষেত্রেও অনেক ক্ষেত্রেই পলিথিন দায়ী।

এদিকে সহজেই পচনশীল, দ্রুত মাটির সঙ্গে মিশে যাওয়া, সহজেই উৎপাদনযোগ্য পাট খুবই কম ব্যবহার করা হচ্ছে। একসময় বাংলাদেশের অর্থনীতি যেটির ওপর নির্ভরশীল ছিলÑ যেটি ছিল অন্যতম প্রথম ও প্রধান রপ্তানির শীর্ষে থাকা পণ্য, তা আজ অবহেলিত এবং দুর্লভ হয়ে পড়েছে। পাট পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ভালো এবং উপকারী একটি জিনিস। পাটে প্রধানত সেলুলোজ, লিগনিন, হেমিসেলুলোজ, পেকটিন, প্রোটিন ও খনিজ পদার্থ থাকে। সেলুলোজ কাগজ, কাপড় ও অন্যান্য জিনিস তৈরিতে, লিগনিন জৈব জ্বালানি তৈরিতে, হেমিসেলুলোজ খাদ্য ও পশুখাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

পাট সাধারণত ব্যাগ, বাক্স, বোতলের বিকল্প, খাবার ও ওষুধ প্যাকেজিং, বস্তা, দড়ি, সারের ব্যাগ, মালচিং, জৈব সার, ছাউনি, মেঝে ঢাকার উপাদান, দেয়ালের উপাদান, পানির ট্যাংক, জৈবভিত্তিক প্লাস্টিক, খেলনা, ফার্নিচার, জিনিসপত্র, মোড়কসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী। এছাড়া পাট খুবই টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী। এটি দ্রুত বর্ধনশীল ফসল হওয়াতে প্রতি বছর কাটা যায়। এর আরেকটি বড় উপকারী দিক হলোÑ এটি বৃদ্ধি পাওয়ার সময় বায়ু থেকে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে থাকে। পাটের চাষ জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় সাহায্য করে থাকে।

তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পলিথিন পাটের চেয়ে ভালো। পলিথিন কম খরচে পাওয়া যায়, এটি পানি ধরে রাখার জন্য ব্যবহার করা যায়, ওজনে হালকা, বিভিন্ন আকারে ও বৈশিষ্ট্যে পাওয়া যায় এবং দীর্ঘ সময় ধরে টিকে থাকে। তাই কিছু কিছু ক্ষেত্রে পলিথিনের ব্যবহার রেখে এবং সেই সব ক্ষেত্রে পলিথিনের পুনর্ব্যবহার নিশ্চিত করে আমাদের উচিত বাকি সব ক্ষেত্রে দৈনন্দিন জীবনে মানবদেহ, পরিবেশ, দেশ এবং জীব বৈচিত্র্য রক্ষায় ও সুরক্ষায় পাটের ব্যবহার বৃদ্ধি করা ও পাট যাতে সব প্রয়োজনীয় কাজে সর্বদা ব্যবহৃত হয় তা সুনিশ্চিত করা।

তাই পাট উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য জনগণ ও সরকার সবাইকে একইসঙ্গে কাজ করতে হবে। পাটের তৈরি সব জিনিসপত্র ব্যবহার করে পাটের চাহিদা বৃদ্ধি করতে হবে। যারা পাট চাষ করে তাদের সাহায্য করার জন্য সব উপায়ে সহায়তা করতে হবে। পাটের ব্যবহার ও সুবিধা সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করতে হবে। সরকারকে উন্নত পাটের জাত উদ্ভাবন এবং পাট উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিনিয়োগ করতে হবে। পাট চাষিদের জন্য ভর্তুকি, ঋণ, প্রশিক্ষণ ইত্যাদির জন্য প্রণোদনা প্রদান করতে হবে। পাটের বাজারজাতকরণে উন্নত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। পাট শিল্পের উন্নয়নের জন্য অবকাঠামো ও প্রযুক্তি সরবরাহ করতে হবে। দেশের যেসব পাটকল বন্ধ হয়ে গিয়েছে সেসব পাটকল পুনরায় সচল করার জন্য সব পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে পলিথিনের পরিবর্তে পাটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে হবে। যেসব ক্ষেত্রে পলিথিন ব্যবহার করা আবশ্যক সেসব ক্ষেত্রে পলিথিনের পুনর্ব্যবহার সুনিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া উন্নত জাতের বীজ ব্যবহার, আধুনিক কৃষি পদ্ধতি ব্যবহার, কীটপতঙ্গ ও রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ করা, পাটের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করার মাধ্যমে পাটের উৎপাদন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

পলিথিনমুক্ত বাংলাদেশ গঠন এবং পাটকে অর্থনীতির চালিকা শক্তি হিসেবে পুনরুজ্জীবিত করার লক্ষ্যে সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা তৈরি করতে হবে।

লেখক : শিক্ষার্থী, বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়]

back to top