alt

উপ-সম্পাদকীয়

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে চাই বিকেন্দ্রীকরণ

মোতাহার হোসেন

: শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল নগরীর অন্যমত। আধুনিক নগর ব্যবস্থায় যে সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার তার অনেকটাই অনুপস্থিত এখানে। মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অধিকাংশ অফিস, আদালত, কর্মসংস্থানসহ মানুষের অপরিহার্য প্রায় সব সেবা ও সুযোগের ব্যবস্থা ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত রাজধানীমুখী হচ্ছে। তাছাড়া অনুরূপ সেবা ও সুযোগের আশায় মানুষ ঠাঁই নিচ্ছে শহর ছেড়ে নিকটস্থ বিভাগীয় ও জেলা শহরেও।

একই সঙ্গে নগরায়ণের ফলে দেশের অন্য নগরগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। নগরায়ণও হচ্ছে দ্রুতগতিতে। সেই সঙ্গে নগরীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিবিধ সমস্যা। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, যানবাহন সংকট, জলাবদ্ধতা, দূষণ ও যানজট, জলজট, মানবজটের পাশাপাশি নতুন নতুন অসংখ্য সংকট নগরবাসীর ঘাড়ে চেপে বসছে। এর বিপরীতে নগরীর বাসযোগ্যতা রক্ষার জন্য যেসব পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছেÑ তা সময় উপযোগী নয়, আবার তা বাস্তবায়নেও রয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। ফলে নগরগুলো দিন দিন আরও বাসযোগ্যহীন হয়ে পড়ছে।

নগরীর এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা নিরসনে ঢাকাকে বৃত্তাকার সড়ক, নৌ, রেল যোগাযোগের আওতায় আনা, রাজধানীর নিকটস্থ জেলা, উপজেলায় পরিকল্পিত উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, অফিস, আদালত স্থানান্তর ও নতুন করে গড়ে তোলা, দেশের জেলা শহরগুলোকে হাব হিসেবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। জেলা পর্যায়েই তৈরি করতে হবে কর্মসংস্থান। জেলার সঙ্গে গ্রামকে যুক্ত করে সুষম উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। টেকসই ও বাসযোগ্য নগরায়ণে এ সবের বিকল্প নেই।

১৯৭৪ সালে দেশে নগরায়ণের হার ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ১৯৮১ সালে হয় ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০০১ সালে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১২ সালে ৩১ শতাংশ এবং ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশে। নগরায়ণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিভাগ সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট বিভাগ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যত বেশি নগরায়ণ হবে তত বেশি বিপদ ডেকে আনা হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে তার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। ভূমিকম্পের দিক থেকে দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঝুঁকিতে থাকলেও আশার কথা হলো, নিকট ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিশেষজ্ঞ মত হচ্ছে, বাসযোগ্য নগরীতে ১২ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান ও ১৫ শতাংশ এলাকায় সবুজের আচ্ছাদন থাকার কথা কিন্তু আছে সামান্য। ঢাকা শহরের সঙ্গে যুক্ত আটটি নদী ঘিরে সার্কুলার নৌপথ চালু করতে না পারাটা আমাদের ব্যর্থতা। যানজটের ভারেও ন্যুব্জ হয়ে আছে ঢাকা ।

ঢাকা মাঝে মাঝেই বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষস্থান করে নেয়। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের সব মানুষের গড় আয়ু কমছে দুই বছর চার মাস। তবে বাংলাদেশে কমছে ছয় বছর আট মাস। এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, গত ৩৩ বছওে রাজধানীতে থেকে বিলুপ্ত অথবা উধাও হয়েছে ১৯০০ পুকুর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখলদারিত্বও বিপুল পরিমাণ আবাসন চাহিদার কারণে ১৯৮৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত গত ৩৩ বছরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঢাকার এক হাজার ৯০০ সরকারি-বেসরকারি পুকুর ও জলাধার। এসব পুকুরের মোট জমির পরিমাণ ৭০ হাজার হেক্টর। এই পুকুরগুলো একসময় ছিল পানি ধরে রাখার অন্যতম মাধ্যম। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন, অগ্নি নির্বাপণ, পানীয় জলের সংকট নিরসনে এগুলোর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৮৫ সালের দিকে ঢাকায় মোট পুকুর ছিল দুই হাজার। বেসরকারি হিসাবমতে, এ বছর পর্যন্ত তা এসে ঠেকেছে এক শতে। যদিও ঢাকায় পুকুরের প্রকৃত সংখ্যা কত সে হিসাব নেই দুই সিটি করপোরেশনের কাছে। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের এক সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত সাড়ে তিন দশকে হারিয়ে গেছে ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নি¤œাঞ্চল।

এ ভাবে জলাশয় ভরাটের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকায় জলাশয় ও নি¤œভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭৮ সালে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯৫২ হেক্টর এবং নি¤œভূমি ১৩ হাজার ৫২৮ হেক্টর। একই সময়ে খাল ও নদী ছিল দুই হাজার ৯০০ হেক্টর। রাজধানীর বৃষ্টির পানি এসব খাল দিয়েই পড়েছে নদীতে। ২০১৪ সালে ঢাকা ও আশপাশে জলাভূমি কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৩৫ হেক্টর, নি¤œভূমি ছয় হাজার ১৯৮ হেক্টর এবং নদী-খাল এক হাজার দুই হেক্টর।

অর্থাৎ ৩৫ বছরে জলাশয় কমেছে ৩৪.৪৫ শতাংশ। এ সময়ের ব্যবধানে নি¤œভূমি কমেছে ৫৪.১৮ এবং নদী-খাল ৬৫.৪৫ শতাংশ। ২০১৮ সালেও রাজধানীতে ১০০টি পুকুর জলাশয় ছিল। গেল পাঁচ বছরে নানান উন্নয়ন কাজের জন্য ভরাট হয়েছে একের পর এক পুকুর। কমতে কমতে তা এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৯টিতে। যার ফলে রাজধানীতে কোনো অগ্নিকা-ের ঘটনায় পানির জোগান পেতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে। এ অবস্থায় জলাশয়গুলো রক্ষা করার তাগিদ সংশ্লিষ্ট মহলের। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরে বড় বড় ভবন গড়ে উঠছে; কিন্তু এগুলো নির্মাণের পেছনে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা নেই। ফলে পুকুর-খাল-বিল-জলাধার একের পর এক বিলীন হচ্ছে। জলাধার রক্ষায় আইন থাকলেও সেগুলো না মানায় একের পর এক ভরাট হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে আবাসন।

শুধু ঢাকা শহর নয়, ঢাকার বাইরেও পুকুরগুলো একের পর এক দখল হয়ে যাচ্ছে, ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী বসিলা, কেরানীগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার, টঙ্গীর এসব এলাকার পুকুরগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ ঢাকার ইতিহাস বলছে, একসময় ঢাকার খালগুলোর সঙ্গে আশপাশের চারটি নদীর মিলন ছিল। এখন এসবের অধিকাংশই বিলীন ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে নগরীর পাশাপাশি শহরতলী এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গ্রামীণ এলাকায় পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার। শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ, পয়োঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দূষণমুক্ত করা জরুরি।

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম]

লোকসান কমাতে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো কতটা যৌক্তিক?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ ও আগামী বাজেট

স্মার্ট দেশ গড়তে চাই স্মার্ট বিশ্ববিদ্যালয়

নিরাপদ সড়ক কেন চাই

মধ্যপ্রাচ্যে আগ্রাসন ও সন্ত্রাস সৃষ্টির দায় কার

ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের কাছে দোষ স্বীকারে সাক্ষ্যগত মূল্য ও বাস্তবতা

সমস্যায় জর্জরিত সড়ক, প্রতিকার কী

বিশ্ব ভেটেরিনারি দিবস

শিক্ষক নিয়োগ : পর্বতসম দুর্নীতির সামান্য প্রকাশ

সব মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত খাবার নিশ্চিত করতে হবে

ছবি

চৌবাচ্চার ফুটো এবং আমাদের উন্নয়ন

কিশোর গ্যাং : নষ্ট রাজনীতির বিনষ্ট সংস্কৃতি

মন্ত্রণালয় ভাগ করে লাভবান হলো কারা?

রম্যগদ্য : মর্জিনার কলঙ্কিত দাগ

সোমালিয়ার গরিব জেলেরা কীভাবে জলদস্যু হলো

চিকিৎসা জগতের বাতিঘর জন হপকিনস বিশ^বিদ্যালয়

জলবায়ু পরিবর্তনের দৃশ্যমান প্রভাব

দুর্নীতির বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান ও আজকের বাংলাদেশ

আবিষ্কারমূলক শিখন পদ্ধতি

টেকসই কৃষিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানির সম্ভাবনা

ছবি

জয়নুলের সাঁওতাল দম্পতি এবং সুমনের সৌন্দর্যপ্রিয়তা

এরপরও কি গাছ লাগাবেন না, বন রক্ষা করবেন না?

বিশ্ব ধরিত্রী দিবস

সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলের শেষ কোথায়

খুব জানতে ইচ্ছে করে

কোন দিকে মোড় নিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের সংকট?

কৃষিগুচ্ছ : ভর্তির আবেদনের নূ্যূনতম যোগ্যতা ও ফলাফল প্রস্তুতিতে বৈষম্য

ছবি

গণপরিবহনে নৈরাজ্যের শেষ কোথায়

ছাত্র রাজনীতি : পক্ষে-বিপক্ষে

ছবি

বি আর আম্বেদকর : নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি

চেকের মামলায় আসামির মুক্তির পথ কী

রাম-নবমী : হিন্দুত্বের নয়া গবেষণাগার

‘একটি গ্রাম একটি পণ্য’ উদ্যোগ কি সফল হবে

কিশোর গ্যাং : সমস্যার মূলে যেতে হবে

গীতি চলচ্চিত্র ‘কাজল রেখা’ : সুস্থধারার চলচ্চিত্র বিকাশ ঘটুক

tab

উপ-সম্পাদকীয়

ঢাকাকে বাসযোগ্য করতে চাই বিকেন্দ্রীকরণ

মোতাহার হোসেন

শনিবার, ৩০ মার্চ ২০২৪

রাজধানী ঢাকা বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল নগরীর অন্যমত। আধুনিক নগর ব্যবস্থায় যে সুযোগ-সুবিধা থাকা দরকার তার অনেকটাই অনুপস্থিত এখানে। মূলত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অধিকাংশ অফিস, আদালত, কর্মসংস্থানসহ মানুষের অপরিহার্য প্রায় সব সেবা ও সুযোগের ব্যবস্থা ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে মানুষ প্রতিনিয়ত রাজধানীমুখী হচ্ছে। তাছাড়া অনুরূপ সেবা ও সুযোগের আশায় মানুষ ঠাঁই নিচ্ছে শহর ছেড়ে নিকটস্থ বিভাগীয় ও জেলা শহরেও।

একই সঙ্গে নগরায়ণের ফলে দেশের অন্য নগরগুলোতে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। নগরায়ণও হচ্ছে দ্রুতগতিতে। সেই সঙ্গে নগরীতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বিবিধ সমস্যা। গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকট, যানবাহন সংকট, জলাবদ্ধতা, দূষণ ও যানজট, জলজট, মানবজটের পাশাপাশি নতুন নতুন অসংখ্য সংকট নগরবাসীর ঘাড়ে চেপে বসছে। এর বিপরীতে নগরীর বাসযোগ্যতা রক্ষার জন্য যেসব পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছেÑ তা সময় উপযোগী নয়, আবার তা বাস্তবায়নেও রয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা। ফলে নগরগুলো দিন দিন আরও বাসযোগ্যহীন হয়ে পড়ছে।

নগরীর এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা নিরসনে ঢাকাকে বৃত্তাকার সড়ক, নৌ, রেল যোগাযোগের আওতায় আনা, রাজধানীর নিকটস্থ জেলা, উপজেলায় পরিকল্পিত উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, অফিস, আদালত স্থানান্তর ও নতুন করে গড়ে তোলা, দেশের জেলা শহরগুলোকে হাব হিসেবে ধরে নিয়ে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। জেলা পর্যায়েই তৈরি করতে হবে কর্মসংস্থান। জেলার সঙ্গে গ্রামকে যুক্ত করে সুষম উন্নয়ন জরুরি হয়ে পড়েছে। টেকসই ও বাসযোগ্য নগরায়ণে এ সবের বিকল্প নেই।

১৯৭৪ সালে দেশে নগরায়ণের হার ছিল মাত্র ৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ। ১৯৮১ সালে হয় ১৫ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ১৯৯১ সালে ২০ দশমিক ১৫ শতাংশ, ২০০১ সালে ২৩ দশমিক ৪ শতাংশ, ২০১২ সালে ৩১ শতাংশ এবং ২০২২ সালে দাঁড়িয়েছে ৩৯ দশমিক ৭১ শতাংশে। নগরায়ণের ক্ষেত্রে ঢাকা বিভাগ সবচেয়ে বেশি এগিয়ে আছে। সবচেয়ে পিছিয়ে আছে সিলেট বিভাগ।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, যত বেশি নগরায়ণ হবে তত বেশি বিপদ ডেকে আনা হবে। বড় ধরনের ভূমিকম্প হলে তার ক্ষয়ক্ষতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো সক্ষমতা আমাদের নেই। ভূমিকম্পের দিক থেকে দেশের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চল ঝুঁকিতে থাকলেও আশার কথা হলো, নিকট ভবিষ্যতে বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হওয়ার আশঙ্কা নেই।

বিশেষজ্ঞ মত হচ্ছে, বাসযোগ্য নগরীতে ১২ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান ও ১৫ শতাংশ এলাকায় সবুজের আচ্ছাদন থাকার কথা কিন্তু আছে সামান্য। ঢাকা শহরের সঙ্গে যুক্ত আটটি নদী ঘিরে সার্কুলার নৌপথ চালু করতে না পারাটা আমাদের ব্যর্থতা। যানজটের ভারেও ন্যুব্জ হয়ে আছে ঢাকা ।

ঢাকা মাঝে মাঝেই বায়ুদূষণে বিশ্বে শীর্ষস্থান করে নেয়। বায়ুদূষণের কারণে বিশ্বের সব মানুষের গড় আয়ু কমছে দুই বছর চার মাস। তবে বাংলাদেশে কমছে ছয় বছর আট মাস। এক পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়, গত ৩৩ বছওে রাজধানীতে থেকে বিলুপ্ত অথবা উধাও হয়েছে ১৯০০ পুকুর। অপরিকল্পিত নগরায়ণ, দখলদারিত্বও বিপুল পরিমাণ আবাসন চাহিদার কারণে ১৯৮৫ সাল থেকে এই পর্যন্ত গত ৩৩ বছরে নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে ঢাকার এক হাজার ৯০০ সরকারি-বেসরকারি পুকুর ও জলাধার। এসব পুকুরের মোট জমির পরিমাণ ৭০ হাজার হেক্টর। এই পুকুরগুলো একসময় ছিল পানি ধরে রাখার অন্যতম মাধ্যম। ফলে জলাবদ্ধতা নিরসন, অগ্নি নির্বাপণ, পানীয় জলের সংকট নিরসনে এগুলোর ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

মৎস্য বিভাগের পরিসংখ্যান মতে, ১৯৮৫ সালের দিকে ঢাকায় মোট পুকুর ছিল দুই হাজার। বেসরকারি হিসাবমতে, এ বছর পর্যন্ত তা এসে ঠেকেছে এক শতে। যদিও ঢাকায় পুকুরের প্রকৃত সংখ্যা কত সে হিসাব নেই দুই সিটি করপোরেশনের কাছে। ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের এক সমীক্ষা রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, গত সাড়ে তিন দশকে হারিয়ে গেছে ঢাকার ১০ হাজার হেক্টরের বেশি জলাভূমি, খাল ও নি¤œাঞ্চল।

এ ভাবে জলাশয় ভরাটের এ প্রবণতা অব্যাহত থাকলে ২০৩১ সাল নাগাদ ঢাকায় জলাশয় ও নি¤œভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ১০ শতাংশের নিচে নেমে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে বলা হয়েছে, ১৯৭৮ সালে ঢাকা ও আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমির পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৯৫২ হেক্টর এবং নি¤œভূমি ১৩ হাজার ৫২৮ হেক্টর। একই সময়ে খাল ও নদী ছিল দুই হাজার ৯০০ হেক্টর। রাজধানীর বৃষ্টির পানি এসব খাল দিয়েই পড়েছে নদীতে। ২০১৪ সালে ঢাকা ও আশপাশে জলাভূমি কমে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৯৩৫ হেক্টর, নি¤œভূমি ছয় হাজার ১৯৮ হেক্টর এবং নদী-খাল এক হাজার দুই হেক্টর।

অর্থাৎ ৩৫ বছরে জলাশয় কমেছে ৩৪.৪৫ শতাংশ। এ সময়ের ব্যবধানে নি¤œভূমি কমেছে ৫৪.১৮ এবং নদী-খাল ৬৫.৪৫ শতাংশ। ২০১৮ সালেও রাজধানীতে ১০০টি পুকুর জলাশয় ছিল। গেল পাঁচ বছরে নানান উন্নয়ন কাজের জন্য ভরাট হয়েছে একের পর এক পুকুর। কমতে কমতে তা এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৯টিতে। যার ফলে রাজধানীতে কোনো অগ্নিকা-ের ঘটনায় পানির জোগান পেতে বেগ পেতে হচ্ছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সকে। এ অবস্থায় জলাশয়গুলো রক্ষা করার তাগিদ সংশ্লিষ্ট মহলের। নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগরে বড় বড় ভবন গড়ে উঠছে; কিন্তু এগুলো নির্মাণের পেছনে পরিবেশবান্ধব পরিকল্পনা নেই। ফলে পুকুর-খাল-বিল-জলাধার একের পর এক বিলীন হচ্ছে। জলাধার রক্ষায় আইন থাকলেও সেগুলো না মানায় একের পর এক ভরাট হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে আবাসন।

শুধু ঢাকা শহর নয়, ঢাকার বাইরেও পুকুরগুলো একের পর এক দখল হয়ে যাচ্ছে, ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ঢাকার পার্শ্ববর্তী বসিলা, কেরানীগঞ্জ, আশুলিয়া, সাভার, টঙ্গীর এসব এলাকার পুকুরগুলোও হারিয়ে যাচ্ছে। অথচ ঢাকার ইতিহাস বলছে, একসময় ঢাকার খালগুলোর সঙ্গে আশপাশের চারটি নদীর মিলন ছিল। এখন এসবের অধিকাংশই বিলীন ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

রাজধানীকে বাসযোগ্য করতে নগরীর পাশাপাশি শহরতলী এবং জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে গ্রামীণ এলাকায় পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা দরকার। শব্দ ও বায়ুদূষণ রোধে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ, পয়োঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকার দিয়ে দূষণমুক্ত করা জরুরি।

[লেখক : সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ জার্নালিস্ট ফোরাম]

back to top